অন্ধকারের অবয়ব – বিপ্লব মজুমদার

›› সম্পুর্ণ গল্প  

(১)
বলিস কী! বিয়ে হল না তোর, অথচ বলছিস কাল থেকে তুই বরের বাড়ি ‘থাকবি!’ নাতনির কথায় বিস্ময়ে কপালে চোখ ওঠে অশীতিপর বৃদ্ধা বিনোদবালার, এমন কথা কেউ শুনেছে কোনও কালে?”
জিনিসপত্র গোছগাছ করতে করতে রূপান জবাব দেয়, ‘হ্যাঁ গো দিদু হ্যাঁ, তোমাদের কালে না হলেও এখনকার কালে হচ্ছে। সে আদর করে দিদুর গালটা একটু টিপে দেয়, ফের ব্যস্ত হয়ে পড়ে ব্যাগ গোছাতে।
বিনোদবালা খানিকক্ষণ হাঁ করে চেয়ে থাকেন। আপ্রাণ চেষ্টা করেন বোঝার, নাতনি রূপানের কথার সত্যতা কতটা বা আদৌ সত্য কিনা। তারপর পায়ে বাতের মলম ডলতে ডলতে বলেন, ‘কী যে বলিস দিদিভাই, তোর কথার মাথামুণ্ডু বুঝিনে। বিয়ে হল না, অথচ ওই ছেলেটা আর তুই বর-বউ হয়ে গেলি?’
দিদিমার কথা বলার ভঙ্গি শুনে হো হো করে হেসে ওঠে রূপান। তারপর বলে, ‘যুগ পালটেছে দিদু। তুমি কি টিভি-ফিভিও দ্যাখো না?’
“দেখি তো টিভি। তবে সবই কি আর বুঝি ? আমার ফোর কেলাস বিদ্যে। তোদের মতো অত পাশ কি আর দিয়েছি যে সব জানতে-বুঝতে পারব? তা ওই ছেলেটার বাড়ি কোথায়? ওর বাবা-মা আসবে না এ বাড়ি?’ ‘না দিদু, ও-ই কেবল আসবে আমাকে নিতে,’ জবাব দেয় রূপান, তাছাড়া রাজ আর আমি তো এখন ওদের বাড়ি যাব না। ওদের বাড়ি মুম্বই। আমি এখন যাব ওর সল্টলেকের ফ্ল্যাটে। এখন থেকে আমরা দুজন ওখানেই থাকব।”
‘একদম স্বামী-স্ত্রীর মতন?’
‘হু-উ’ সামান্য সলজ্জ ভঙ্গি উকি দিয়ে যায় রূপানের চোখে-মুখে। ও জিন্‌স আর টপগুলো আলাদা করে গোছাতে থাকে। তারপর বলে, ‘আচ্ছা দিদু, রাজকে কি তোমার জামাই হিসাবে পছন্দ নয় ?’
“না, সেরকম কথা নয়। ছেলেটা দেখতে- শুনতে ভালো, উঁচু-লম্বাও আছে। কিন্তু ও তো একদম বাংলায় কথা বলতে পারে না, বলেন বিনোদবালা।
“তাতে কী হয়েছে? হিন্দি আর ইংরেজি তো বলতে পারে। আর তাছাড়া হিন্দি বলতে আমার মোটেও অসুবিধা হয় না। দ্যাখো না দিদু, কিছুদিনের মধ্যেই রাজকে কেমন বাংলা বলা শিখিয়ে দিই,’ খুশিতে টগবগ করতে করতে রূপান ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়।
বৃদ্ধা বিনোদবালা ভাবতে বসেন, তার নাতনি যা বলছে তা যদি সত্যি হয় তাহলে তো সাংঘাতিক ব্যাপার। বিয়ে না করে দুটি বয়স্কা ছেলেমেয়ে একসঙ্গে স্বামী-স্ত্রী হিসাবে থাকা মানে তো অন্যায়, সমাজ মেনে নেবে এসব? মোটেও মানবে না কেউ, বরং সবাই দুর্নাম দেবে। এমনিতেই নাতনির চলন-বলন তার একদম পছন্দ হয় না। যখনই দ্যাখো, সঙ্গে একজন করে ছেলে। জিজ্ঞাসা করলে বলবে, ‘ও আমার বন্ধু।’ কেন রে বাবা, ছেলেদের সঙ্গে তোর এত বন্ধুত্ব পাতাবার দরকার কী? মেয়েদের সঙ্গে মেয়েদের বন্ধুত্ব হয় না ? বিনোদবালা এ নিয়ে বেশ কয়েকবার বকাবকি করেছেন নাতনিকে। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। বরং নাতনি হেসে জবাব দিয়েছে, ‘কেন গো দিদু, ছেলে বলে কি মানুষ নয়?” কী যে সব জটিল কথাবার্তা, বিনোদবালা খেই হারিয়ে ফেলেন আধুনিকা নাতনি রূপানের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে। নাঃ, মেয়েটা মনে হচ্ছে এবার একদম গোল্লায় যাবে। যাই, একবার খোকার সঙ্গে কথা বলে আসি।
বৃদ্ধা পা টিপে-টিপে তেতলা থেকে রেলিং ধরে ধীরে ধীরে নামতে থাকেন। ভারী শরীর, হাঁটুতে দীর্ঘদিনের বাতের ব্যথা। অমাবস্যা-পূর্ণিমায় ব্যথা বাড়ে, তখন নড়াচড়া প্রায় বন্ধ। কোনও ওষুধেই বুঝি তেমন কাজ দেয় না। তখন তিনি ঈশ্বরকে ডাকেন, “ঠাকুর আর কেন, এবার তুলে নাও। তোমার শ্রীচরণে ঠাঁই দাও ঠাকুর।”
বিনোদবালার ছেলে অর্থাৎ সুশোভন চট্টোপাধ্যায় পেশায় অধ্যাপক। বন্ধু তার হাতে গোনা, মাত্র জনা তিনেক। তাও তাদের সঙ্গে নিয়মিত আড্ডা মারার সময় কিংবা ইচ্ছা তার বড়ো একটা হয় না। সঙ্গী বলতে বই। বই পড়তে অসম্ভব ভালোবাসেন তিনি। দিন নেই, রাত নেই এই অক্ষরের সমুদ্রে বুঁদ হয়ে থাকতেই পছন্দ করেন তিনি। সুশোভনের এই বই-প্রীতি নিয়ে বিয়ের পর প্রথম প্রথম বহু অনুযোগ করেছেন তাঁর স্ত্রী ঝিলাম। কিন্তু তাতে তাঁর চরিত্রের বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হয়নি। শেষে হাল ছেড়ে দিয়েছেন।
কোথাও কোনও অনুষ্ঠানে গেলে সুশোভন বড়ো অস্বস্তি অনুভব করেন। কারও সঙ্গে আগ বাড়িয়ে আলাপ করা দূরে থাক, কেউ যেচে আলাপ করতে এলেও বেশিক্ষণ তার সঙ্গে কথাবার্তা চালাতে পারেন না তিনি। বরাবরই কম কথা বলার মানুষ, অত্যন্ত ধীর, স্থির এবং সমাহিত।
অথচ তাঁর স্ত্রী ঝিলাম সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির। কনভেন্টে পড়া উচ্চশিক্ষিতা ধনী ঘরের কন্যা তিনি। খুব চটপটে, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন, খুব মিশুকে এবং কথা বলেন বড্ড বেশি। নিজের পছন্দ অনুযায়ী বিয়ে করার পক্ষপাতী ছিলেন। কিন্তু বাবা- মা’র মনে দুঃখ দিতে চাননি। বাবার পছন্দের পাত্র সুশোভনকে স্বামী হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন হাসিমুখে। তবে তাঁর স্বপ্ন ছিল, তাঁর স্বামী হবেন একজন ঝলমলে প্রাণবন্ত পুরুষ এবং তাঁরই মতো হুল্লোড় প্রিয়।
বিয়ের পরপরই রূপান চলে আসে। আর বছর দুয়েকের মধ্যেই ঝিলাম সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি এভাবে চার দেয়ালের মধ্যে বসে বসে নিজের জীবন নষ্ট করবেন না। চাকরি করবেন, নিজের যোগ্যতায় পায়ের তলায়
তৈরি করবেন শক্ত জমি। সুশোভনকে তাঁর মনের ইচ্ছা জানাতে তিনি বিন্দুমাত্র আপত্তি করেন না। বস্তুত সেরকম প্রকৃতির মানুষই তিনি নন। বরং বলেন, ‘সে তো খুব ভালো কথা। বাড়ির বাইরে বেরোলে, কাজের মধ্যে থাকলে তোমার মনটা ভালো থাকবে।’
আশ্চর্য! মাসখানেকের চেষ্টায় এক মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে রিসেপশনিস্টের কাজও জুটিয়ে ফেলেন ঝিলাম। আর তারপর থেকেই স্বামী-স্ত্রী দুজন দু’মেরুর বাসিন্দা। কেউ কারও ব্যাপারে বেশি উৎসাহ প্রকাশ করেন না, পাছে তা ব্যক্তিগত গোপনতাকে আচমকা আঘাত করে ফেলে।
বিনোদবালা ছেলের পড়ার ঘরে উকি মারেন। দেখেন, যথারীতি টেবিলে পাহাড় প্রমাণ বইয়ের আড়ালে টেবিল ল্যাম্প জ্বেলে নাকের ওপর হাই-পাওয়ারের চশমা ঝুলিয়ে উজ্জ্বলকান্তি টাকমাথা সুশোভন বইয়ে মুখ গুঁজে রয়েছেন।
নিচু স্বরে তিনি ডাক দেন, “খোকা।” মাকে পড়ার ঘরে দেখে সুশোভন দারুণ বিস্মিত হন। তিনি উঠে দাঁড়িয়ে এগিয়ে এসে মা’র হাত ধরে চেয়ারে বসাতে বসাতে বলেন, ‘তুমি আবার কষ্ট করে নেমে এলে কেন মা? আমাকে ডেকে পাঠালেই তো পারতে। বসো, বসো।’ তারপর নিজে চেয়ারে বসেন।
বিনোদবালা বলেন, ‘আরে একটু হাঁটাচলা করা ভালো, ডাক্তার বলেছে। তা এসব কী শুনছিরে বাবা, রূপান নাকি কাল থেকে ওর কোন এক বন্ধুর বাড়ি গিয়ে থাকবে?”
‘হ্যাঁ, সেরকমই তো শুনলাম!’ স্বভাবসিদ্ধ ধীরকণ্ঠে জবাব দেন সুশোভন। ‘বলছে যে ওরা নাকি স্বামী-স্ত্রীর মতন…’ কথা সম্পূর্ণ করতে পারেন না বিনোদবালা, কোথায় যেন বাধে।
“হ্যাঁ, একে লিভ-টুগেদার বলে মা, ওসব তুমি বুঝবে না,’ জবাব দেন সুশোভন। তুই, তুই এসবে রূপুকে মত দিলি?”
সুশোভন চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ান, এগিয়ে যান জানলার দিকে। জানলার গ্রিল ধরে দৃষ্টি মেলে দেন নীল আকাশের বিস্তারে, তারপর ধীরে ধীরে বলেন, ‘এ বাড়িতে আমার মত অমতের কী দাম আছে মা? তোমার বউমা, রূপানের প্রস্তাবে অমত করেনি।”
“তুই না রূপুর বাবা, মেয়ের ওপর তোর কোনও অধিকার নেই?’ বিনোদবালা যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। “তোমাকে মিথ্যা বলব না মা, মন থেকে আমি মোটেও এসব মেনে নিতে পারিনি,’ ব্যথিত কণ্ঠে জবাব দেন সুশোভন, ‘এ নিয়ে তোমার বউমার সঙ্গে যে একেবারেই কথা হয়নি তা নয়।”
“সব শুনে বউমা কী বলল ?’
‘বলল, রূপান বড়ো হয়েছে, লেখাপড়া শিখেছে, চাকরি করছে, নিজের ভালোমন্দ বোঝার মতন বয়স ওর যথেষ্ট হয়েছে। ও যখন ডিসিশন নিয়েছে রাজের সঙ্গে লিভ-টুগেদার করবে— সেখানে আমি বাধা দেবার কে?’
রূপানের বিষয়ে ঝিলামের সঙ্গে সুশোভনের যে প্রকৃত কথোপকথন হয়েছিল তা অনেক বিস্ফোরক। সেসব বলে সুশোভন তার বৃদ্ধা মায়ের হৃদয় ভারাক্রান্ত করতে চান না। “বাচ্চা মেয়ে, এভাবে অন্য বাড়ির ছেলের সঙ্গে গিয়ে থাকলে লোকে কী বলবে?
একবার ভেবে দেখেছিস?’ গলায় উদ্বেগ স্পষ্ট। “মা, আইন বলছে, মেয়েরা আঠারোতে অ্যাডাল্ট হয়। রূপানের এখন একুশ। ও যদি নিজে থেকে ঘর ছেড়ে ওই ছেলেটির সঙ্গে থাকতে চায়, আমাদের বাধা দেবার অধিকার নেই। তাছাড়া ওর মা বরাবরই নারীস্বাধীনতায় বিশ্বাসী। ছোটোবেলা থেকে রূপানকে ও নিজের মতন করে গড়েছে। মেয়ের ভাবনাচিন্তাকে ও প্রশ্রয় দেবে সেটাই স্বাভাবিক। আমার মতামতের মূল্য সেখানে কতটুকু?’ “না বাবা না, এসব আমার মোটেই ভালো ঠেকছে না। তুই রূপুকে বোঝাবার চেষ্টা কর। আমরা বোকাসোকা মুখ্যু মানুষ, তবু মনে হচ্ছে এতে ওর ভালো হবে না, হতে পারে না।’
“আমি বুঝিয়েছি মা, অনেক বুঝিয়েছি রূপুকে— এসব কালচার আমাদের নয়।
এসব তুমি করতে যেও না মা, এতে তোমার বিপদ হতে পারে। কিন্তু ওর সেই এক গোঁ— বাবা, নিজের ভালো নিজে বোঝার মতন বয়স আমার হয়েছে। তুমি অহেতুক চিন্তা করছ। রাজের সঙ্গে থেকে যদি ভালোলাগে তবে হয়তো একদিন আমি ওকেই বিয়ে করব।
কিন্তু বিয়ের আগে ছেলেটাকে একবার বাজিয়ে দেখে নেব না? আর তার জন্য, এক ছাদের তলায় এক সঙ্গে থাকা খুব প্রয়োজন। দুজন-দুজনকে ভালো করে জানতে-চিনতে হলে এর থেকে ভালো উপায় নাকি আর নেই।’ সব শুনে বিনোদবালা হতভম্ব হয়ে পড়েন। এরকমটা যে হতে পারে এ তিনি স্বপ্নেও ভাবতে পারেন না। শেষ অস্ত্র হিসাবে তিনি বলেন, ‘তোদের কাগজপত্রে কী সব বিয়ে-টিয়ে হয়, ওগুলো অন্তত ওদের করতে বল, একটু বোঝা।” দীর্ঘশ্বাস ফেলে সুশোভন বলেন, ‘বলে দেখব। তুমি এখন একটু বিশ্রাম নাও মা, ওসব নিয়ে দুশ্চিন্তা কোরো না। যা হবার তা হবে, চলো তোমাকে এগিয়ে দিই,’ বলে তিনি মায়ের হাত ধরে এগিয়ে যান।

(২)
খাবার টেবিলে বসে খেতে খেতে সুশোভন প্রশ্ন করেন, “মামনি, তোর জিনিসপত্র গোছগাছ হয়ে গেছে?”
“হ্যাঁ, পাপান, তা ছাড়া আমি তোমাদের ছেড়ে বেশি দূর তো আর যাচ্ছি না। আনোয়ার শাহ্ থেকে সল্টলেক আর কতটুকু? আমি যখন খুশি চলে আসব।’ “দ্যাখো, তুমি নিজে ড্রাইভ করতে যেও না আবার, তোমার হাত মোটেও ভালো নয়, সুশোভনের স্ত্রী সাবধান করেন।
‘ও আমি একমাসের মধ্যে সেট করে নেব, তোমরা চিন্তা কোরো না। আর লাইসেন্স তো আমাকে এমনি এমনি দেয়নি। রীতিমতন পরীক্ষা নিয়েই দিয়েছে। সল্টলেকে প্রচুর ফাঁকা রাস্তা, হাত সেট করার যথেষ্ট সুযোগ। ভোরের দিকে বেরোব ‘খন’, বলে রূপান।
‘হ্যাঁরে মা, তুই আর রাজ যে লিভ-টুগেদার করতে চলেছিস— একথা রাজের বাড়ির লোকজন জানে?” প্রশ্ন করেন সুশোভন।
‘এ প্রশ্ন আমি ওকে কখনও করিনি পাপান। ইন ফ্যাক্ট ও নিয়ে আমি বিশেষ ইন্টারেস্টেডও নই। আমরা দুজনেই অ্যাডাল্ট, দুজনেই আর্ন করি। স্ব-ইচ্ছায় লিভ-টুগেদারে আগ্রহী হয়েছি, এর মধ্যে গার্জেনরা আসছে কোথায় ?”
‘ও তুই বুঝবি না মা, সময় এলে বুঝবি। যাক গে যা বলছিলাম, আমার মনে হয় তোরা কাগজে-কলমে রেজিস্ট্রিটা অন্তত করে রাখতে পারতিস।
“সুশোভন, মাঝেমধ্যে তুমি এমন ব্যাকডেটেড কথাবার্তা বলো না,’ ধমকে ওঠেন ঝিলাম, ‘রেজিস্ট্রি ম্যারেজ ইজ দ্য রিয়েল ম্যারেজ, সেটা যদি হয়েই গেল তা হলে আর বাকি থাকল কী? আর তাতে রূপান রাজি থাকলেও রাজও যে রাজি থাকবে তার কোনও নিশ্চয়তা আছে?
ছেলেটা হয়তো এসব শুনে লিভ-টুগেদারেই বেঁকে বসবে।”
“কিন্তু তুমি যতই বলো, এ ব্যাপারে আমার মন মোটেও সায় দিচ্ছে না,’ বলেন সুশোভন।
“তা সায় দেবে কেন? যা কিছু প্রগ্রেসিভ, যা কিছু অ্যাডভান্‌সড— এসব কোনওদিন তোমার পছন্দ হয়েছে? যত্ত সব সেকেলে ধ্যানধারণা, ‘ বিরক্ত হন ঝিলাম। সুশোভন কথা বাড়াতে চান না, তবু কেন কে জানে বলেন, ‘একবার ভেবে দেখতে পারতে তোমরা দুজনেই।’ “ব্যাপারটা তুমি বরং আরও একবার ভেবে
দেখার চেষ্টা করো— অমন ভালো ছেলে, সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। চব্বিশ বছর বয়সেই ওর কোম্পানি ওকে বছরে আঠারো লাখ টাকা স্যালারি দিচ্ছে, একবার ওর ভবিষ্যৎটা ভাবো। ছেলেটাকে ঠিকমতো সাইজ করতে পারলে মেয়ে তোমার রানির হালে থাকবে। আর ওর বাড়ির ব্যাকগ্রাউন্ড যা শুনেছি তা যদি সত্যি হয়, উফ্, আমি ভাবতে পারছি না, বলে ওঠেন ঝিলাম। ‘ওদের বাড়ি সম্পর্কে কী শুনেছ?” সুশোভন আগ্রহ দেখান।
“ওরা ইনফ্যাক্ট মাল্টি মিলিওনেয়ার, বিলিওনেয়ার হওয়াও অস্বাভাবিক নয়। শুনেছি ওদের আট-দশটা ইনডাস্ট্রি আছে।
‘কী রে মা, তুই কি এসব দেখেই ছেলেটির সঙ্গে লিভ-টুগেদারে যাচ্ছিস?” মৃদু হেসে প্রশ্ন করেন সুশোভন।
‘পাপান, প্লিজ তুমি অন্তত মায়ের ভিউজ নিও না,’ বলে রূপান, ‘আমি আর রাজ দুজন-দুজনকে পছন্দ করি, ব্যস। এর বেশি কিছু না। মানি ডাজন্‌ট প্লে আ ভাইটাল রোল টু মি, ইন-ফ্যাক্ট ওসব নিয়ে মায়ের মতো অত গভীর ভাবনাচিন্তাও আমি করিনি।
এখনও পর্যন্ত যা দেখেছি, রাজ খুব কেয়ারিং, অন্তত আমার ব্যাপারে। *আচ্ছা, একটু ভেবে বল তো, তোদের আলাপ ঠিক কত দিনের ?” সুশোভন জানতে চান।
মাটনের টুকরো মুখে পুরে চিবোতে চিবোতে রূপান সামান্য ভেবে বলে, ‘ইউ, তা মাস ছয়েক হবে। এক ডিসকোথেকে আলাপ ওর সঙ্গে।
‘একজন মানুষকে চেনার পক্ষে ছয় মাস সময় কি তোর যথেষ্ট বলে মনে হয়? তুমি কী বলো ঝিলাম?”
‘তুমি থামো তো,’ ঝটকা মারেন ঝিলাম, ‘চেনা-জানার জন্যই তো এই ব্যবস্থা। প্রথমেই কি লোকে এসে বিয়ের জন্য প্রপোজ করবে তোমার মেয়েকে? দুজন-দুজনের কাছে আসবে, পরস্পর পরস্পরকে জানবে-বুঝবে, তবে না বিয়ে। এখনকার নতুন প্রজন্মের ভাবনাচিন্তা তোমাদের সঙ্গে মিলবে না। যা জানো না তা নিয়ে কথা বলতে এসো না।’
“মাম, তুমি পাপানকে অমনভাবে বোলো না,’ রূপান বাধা দেয়, ‘পাপান তো বলবেই। বিকজ হি লাভ্স মি, দ্যাট্স হোয়াই হি ইজ অ্যাংশাস অ্যাবাউট মি।’
খাওয়া শেষ করে উঠে দাঁড়ায় রূপান, সুশোভনকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে গালে গাল রাখে। তারপর হেসে বলে, ‘মাই সুইট পাপান। হাত ধুতে যায় বেসিনে।
ঝিলাম তবু নিরস্ত হন না, বলেন, ‘পাপান তোমাকে ভালোবাসে বুঝলাম। কিন্তু হি মাস্ট বি প্র্যাকটিকাল অলসো। আজকের জেনারেশন কী চাইছে, কী ভাবছে— হি মাস্ট নো অল দিজ থিংগস। তাছাড়া
যে-কোনও বড়ো ব্যাপারে স্টেপ বাই স্টেপ এগোনো উচিত— সেটা অন্তত ওর জানা উচিত।
“তাহলে, মেয়ের বিয়ের প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে এটা তোমাদের সুচিন্তিত যৌথপ্রয়াস, তাই তো?” খাওয়া শেষ করে উঠে দাঁড়ান সুশোভন।
“ইস্যু ইজ সিম্পলি ডিসগাসটিং,’ বলে ওঠেন ঝিলাম। মুখে অদ্ভুত বিকৃতি জেগে ওঠে।

(৩)
“হ্যালো রাজ, তুমি ক’টায় ফ্রি হচ্ছ? এখন ঘড়িতে কিন্তু পাকা ছ’টা চল্লিশ,’ রূপান ফোনে
বলে।
“সাড়ে সাতটার আগে নয়, জবাব দেয় রাজ। তুমহে এক খুশ খবরি দেনা হ্যায় মুঝে। কাহা খানা খাওগি বোলো,’ বলে রাজ।
‘বহুত খুশ লগ রহে হো আজ,’ বলে রূপান, ‘ব্যাপার কী? সারপ্রাইজ ইনক্রিমেন্ট?’
‘এখন বলব না, বলব রাতে। তোমাকে পৌনে আটটায় পিক আপ করব অ্যাজ ইউজুয়াল, বাই।’ ফোন কেটে দেয় রাজ।
রূপান ভাবতে থাকে, কী এমন আনন্দের খবর দিতে চায় রাজ? গলায় তো খুশি উপছে উঠছে ওর। আজ আমারও বলার কিছু আছে। কিন্তু বলব কীভাবে? তাছাড়া বিষয়টা ও কীভাবে নেবে তাও ভাবার ব্যাপার।
গত কয়েক মাস রূপান আর রাজ আক্ষরিক অর্থেই কেবল উড়েছে। আজ এর বাড়ি পার্টি, তো কাল ওর। আজ বেড়াতে যাচ্ছে তো কাল ডিসকোথেক-এ। আজ এ ক্লাব, তো কাল ও ক্লাব। শপিং, শপিং আর শপিং।
রাজের এক অভ্যাস হল, লেট নাইট অবধি ক্লাবে সময় কাটানো। অবশ্য প্রায় সব সময়ই রূপান ওর সঙ্গে থাকে। সব জায়গায় একে অপরকে পরিচয় করিয়ে দেয় বন্ধু হিসাবে। ক্রমাগত বন্ধুর সংখ্যা বাড়ে। পরিচিতি বাড়ে। বন্ধুদের ফ্ল্যাটে ডেকে পার্টি থ্রো করতে হয়।
সকালে দুজন একসঙ্গে ব্রেকফাস্ট সেরে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। রূপানকে ওর অফিসে ড্রপ করে রাজ গাড়ি নিয়ে চলে যায়। দুজনেরই অফিস সল্টলেকে। ফলে খুব একটা অসুবিধা হয় না। কখনও কখনও রূপান রাজের অন্য গাড়িটা নিয়ে নিজেই ড্রাইভ করে অফিসে যায়। দুপুরে অফিসে লাঞ্চ। রাত্রে বাইরে খেয়ে এক সঙ্গে বাড়ি ফেরে। দুজন তখন প্রায়ই মত্ত অবস্থায় থাকে।
সামান্য ফ্রেশ হয়ে ঝাপ দেয় বিছানায়। এই একটা ব্যাপারে রাজ খুব রেগুলার এবং বেপরোয়া। বেশিরভাগ সময়ই ও স্বাভাবিকতাকে ক্রস করে যায়। রূপান এ ব্যাপারে ওকে প্রশ্ন করায় রাজ জবাব দিয়েছিল, ‘কলেজ মে মেরা কমপালসারি অ্যাডিশনাল থা অ্যাপ্লায়েড বিএফ।
রূপানও যে ব্যাপারটা এনজয় করে না তা নয়। মাঝেমধ্যে রূপান ভাবে, রাজ কি পারভার্ট? মায়ের সঙ্গেও বিষয়টা নিয়ে রূপান আলোচনা করেছে একদিন। মায়ের জবাব, “ভ্যারাইটি ইজ দ্য স্পাইস অফ লাইফ মাই বেবি, এনজয় ইয়োরসেলফ। যেভাবেই হোক ওকে তোমার মুঠোয় নাও।
চেষ্টার কসুর করে না রূপান ওকে নানান স্বপ্ন দেখাবার। নিজের স্বভাবের বিরুদ্ধে গিয়ে ওর সেবাযত্নে আগ্রহী হয়, যাতে রাজ বুঝতে পারে ও কতটা কেয়ারিং। ভবিষ্যতের জন্য সেভিংস কতটা জরুরি তা বারবার বোঝায়। কিন্তু রাজ ওসবে খুব একটা ইন্টারেস্টেড বলে মনে হয় না। ওর যাবতীয় ইন্টারেস্ট কেবল জীবন যৌবন উপভোগে। ক্লাব, বার, ডিসকোথেক-এ ওর বেপরোয়া খরচাপাতির অভ্যাস দেখে, ওর কেরিয়ার এবং ফ্যামিলি সম্বন্ধে জেনে সোসাইটির অন্যান্য বাটারফ্লাইরা ওকে কবজা করার ধান্ধায় লেগে পড়েছে। রূপান আর কত সামলাবে? ইদানীং নীতা পুরি নামে একটা মেয়ে তো রীতিমতো হাত ধুয়ে পিছনে পড়ে গেছে। ব্যাপারটা রাজও প্রশ্রয় দেয়। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার কথা কাটাকাটি হয়েছে দু’জনের মধ্যে। রূপান জানতে পেরেছে, নীতা ওকে প্রায়ই ফোন করে।
রূপানের মনে হয় ও হাফিয়ে উঠেছে। এভাবে তার পক্ষে রাজকে আগলে রাখা অসম্ভব। ও যে ক্রমশ নানা দিক থেকে চাপের মধ্যে পড়ে যাচ্ছে সেটা অনুভব করতে পারে।
আচমকা মোবাইলে রিং হয়। রূপান ঘড়ির দিকে তাকায়, পৌনে আটটা। ও অফিসের কাজ আগেই সেরে রেখেছিল। ফোন আসাতে সামনের কলিগ দু’একজনকে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে পড়ে। গাড়ি নিয়ে রাজ অপেক্ষা করছিল। দরজা খুলে দিলে রূপান ওর পাশে এসে বসে।
মিষ্টি হেসে রূপান রাজকে বলে, “অব খুশ খবরি সুনাও।’
রাজও মৃদু হেসে বলে, ‘অভি নেহি, বাদ মে। পহলে বোলো কাঁহা খানা খাওগি?’
“আপনা ফ্ল্যাট মে,’ জবাব দেয় রূপান। বিস্ময়ে ভ্রূ কুঁচকে ওঠে রাজের, ‘মতলব’! “হ্যাঁ, আজ আমরা বাইরে থেকে খাবার কিনে নিয়ে যাব। ঘরে তো ড্রিংক্‌স আছেই। দুজনে ড্রিংক্‌স নেব, নাচব, দারুণ এনজয় করব— সব করব, তবে আমাদের ফ্ল্যাটে। বাইরে কোথাও নয়। আই প্রমিস ইউ উইল লাইক ইট।
কী মনে হতে রাজ বলে, ‘ওকে দেন, অ্যাজ ইউ ডিজায়ার পরিকল্পনামাফিক ওরা ভালো রেস্তোরাঁ
থেকে বেশ কিছু খাবারদাবার কিনে নিজেদের ফ্ল্যাটে ফেরে। বাথরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়। জামাকাপড় বদলায়।
রাজ দুজনের ড্রিংক্স বানায়। মিউজিক সিস্টেমটা অন করতে গিয়ে কী মনে হয়, অন না করেই সোফায় বসে পড়ে। বড়ো লাইট নেভায়, সবুজ রাতবাতি জ্বালে। পাশের রুমে রূপান হালকা প্রসাধন সারে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের নাইটড্রেস খুলে গোটা দেহের দিকে একবার তাকায়। রাজ রঙিন অন্তর্বাস পছন্দ করে। লাল ব্রা ফেটে বেরিয়ে আসতে চাইছে। বক্ষসৌন্দর্য, কার্ভড কোমর, লাল প্যান্টি থেকে নেমে গেছে দিঘল সুঠাম দুটি পা। তলপেটের দিকে চোখ পড়তেই দৃষ্টি আটকে যায় ওর। শরীরে কেমন শিরশিরানি জাগে। ও ‘ঘর থেকে রাজ চ্যাচায়, ‘ক্যায়া হুয়া। ইতনি দের করতি হো কিউ?’
উফ্, এই একটা ছেলে, একটু তর সয় না কিছুতে, নিজের মনে বলে রূপান।
‘আতি হু” জবাব দেয় জোরে। দ্রুত শরীরে সুগন্ধি স্প্রে করে রূপান। মনে পড়ে, রাজ বলে, ‘এক বাত ইয়াদ রখ না রূপান, আ গাল ইজ নট জাজুড বাই হার বডি, বাট বাই হার সেনসুয়ালিটি।’ মৃদু হাসে রূপান, দুষ্টু ছেলে, আজ বোঝাব তোমাকে মজা।
পাশের ঘরে ঢুকে ড্রিংকসের গ্লাস তুলে সোফায় বসে রূপান। ততক্ষণে রাজের দুপৈগ শেষ। সবুজ আলোতে বেশ একটা মোহময়ী পরিবেশ। রাজ প্লাজমা টিভিতে ব্রিটনি স্পিয়ার্স চালিয়েছে। সোফায় বসে পা নাচাতে নাচাতে বলল, “শি ইজ সো সেনসুয়াস।
‘গ্রেটার দ্যান ম্যাডোনা?’ প্রশ্ন করে রূপান।
‘অফকোর্স, ম্যাডোনা ইজ টু ওল্ড নাও,’ উত্তর দেয় রাজ।
“কিন্তু এই সেদিনও তুমি ম্যাডোনার ফ্যান ছিলে।
‘ছোড়ো ইয়ার, কাম অন, লেট আস ডান্স,’ বলে রাজ উঠে এসে হাত ধরে রূপানকে দাঁড় করায়। মিউজিকের সঙ্গে নিজস্ব ভঙ্গিতে ছন্দ মেলাতে চেষ্টা। খানিক নাচার পর হাঁফ ধরে। দ্রুত ড্রিংক্‌স নেয় ওরা গলা ভেজাতে। রূপান বলে, ‘একটু দাঁড়াও, খাবার নিয়ে আসি।’ মাইক্রোআভেনে ফ্রায়েড আইটেমগুলো রাখা ছিল। সস্ প্লেটে ঢেলে ওগুলো নিয়ে আসে রূপান, এগিয়ে দেয় রাজের দিকে।
রাজ এক টুকরো কাবাব মুখে পুরে ওর গাল টিপে আদর করে, ‘ওহ্ ডার্লিং, ইউ আর সো সুইট্।’
‘কী করে জানলে যে আমি সুইট?’ হেসে প্রশ্ন করে রূপান।
‘টেস্ট কিয়া না,’ অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে জবাব দেয় রাজ। রূপানের দ্বিতীয় পেগ শেষ হলে রাজ জোর করে ওকে টেনে নেয়। তবে এবারের মিউজিক সফ্টট। নাচের তালে তালে ক্রমশ ঘনিষ্ট হয় ওরা। একসময় রিমোট টিপে টিভি বন্ধ করে রাজ, রূপানকে ডিভানে ঠেলে দেয়। রূপানের মনে পড়ে মায়ের ইনস্ট্রাকশনস— ‘রূপান, যা কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথাবার্তা সব বিছানাতেই বলবে। কারণ তখন ছেলেদের মন নরম থাকে। রূপান বুঝতে পারে না, এক্ষেত্রে কথাটা এক্ষুনি বলা ঠিক হবে কি না। বললেও কীভাবে বলা উচিত। নাহ্, নাইট বাল্বটাও নিভিয়ে দেওয়া যাক। রাজ মৃদু প্রতিবাদ করতে যায়। নিজের ঠোঁট দিয়ে ওর ঠোঁট বন্ধ করে রূপান।
একটা সময় শান্ত হয় শরীর। রূপান রাজের বুকের ওপর শুয়ে বলে, ‘আজ তোমাকে আমার বলার কিছু ছিল। তবে আগে তোমার খুশির খবরটা বলো।”
রাজ ওর নগ্ন পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে বলে, “মুঝে প্রোমোশন মিলা। সিনিয়র এক্সিকিউটিভ কন গিয়া ম্যায়। মাই স্যালারি উইল বি ডাবল। পরসো মুম্বই জয়েন করনা হ্যায় মুঝে।”
চমকে উঠে বসে রূপান, “তার মানে ! আমি, আমি কী করব?’
“তুমি চাকরি ছেড়ে দাও, আমার সঙ্গে চলো,’ বলে রাজ, ‘আদারওয়াইজ, ইউ ক্যান স্টে হিয়ার। আমি মাঝেমধ্যে আসব, তুমিও যাবে ওখানে। রূপানের মুখে কথা সরে না, অন্ধকারে বসে থাকে পাথরের মতন। কী বলা উচিত ভেবে পায় না।
রাজ বলে, ‘মেরা তরক্কিসে তুম খুশ নেহি হো?”
রূপান বলে, “ঠিক তা নয়, তবে ভেবে পাচ্ছি না আমার চাকরি ছাড়াটা ঠিক হবে কি না?’
রাজ বলে, ‘ও কথা পরে ভাববে, এখন বলো তোমার কী বলার আছে আমাকে?”
রূপান চুপ করে থাকে। অন্ধকারেও কথাটা বলতে কোথায় যেন বাধোবাধো ঠেকে। রাজ ওকে ধাক্কা দেয়, ‘ক্যায়া হুয়া ? বাতাও।’
রূপান বলে, ‘রাজ, রাজ আয়াম ক্যারিং।
তড়াক করে লাফিয়ে উঠে বসে রাজ। বলে, ‘মতলব? আর ইউ শিওর?’ “ইয়া, সেন্ট পার্সেন্ট,’ জবাব দেয় রূপান।
“আই থট ইউ ওয়ার স্মার্ট, উত্তেজনা দমন করতে সিগারেট ঠোঁটে লাগায় রাজ, ‘বাট….’ কথা শেষ করে না।
রূপানের দিকে পিঠ রেখে বসে ঘনঘন সিগারেট টানতে থাকে রাজ। একটু পরে ঠোটে সিগারেট চেপে কঠোর স্বরে বলে, *দেন গেট ইট অ্যাবর্টেড।’ ‘রাজ’ শিউরে ওঠে রূপান, ‘শুড আই কিল মাই চাইল্ড ?’
রাজ এবার দাঁতে দাঁত চেপে রূপানের দিকে ফিরে বলে, “আওয়ার ফাস্ট কন্ডিশন ফর লিভ-টুগেদার ওয়াজ টু অ্যাভয়েড অ্যান ইস্যু। ইয়াদ হ্যায়? ওয়াকিল-কে সামনে হমনে পেপার্স ভি তইয়ার কিয়ে থে।
“বাট আয়াম নট অ্যালোন রেসপনসেল ফর ইট,’ চেঁচিয়ে বলে রূপান।
‘ইউ আর টকিং লাইক আ গার্ল অফ এইটিথ সেঞ্চুরি,’ পালটা চ্যাচায় রাজ।
‘ইউ, ইউ কান্‌ট ডু দিস,’ রূপান ওর একটা হাত ধরে বলে। এক ঝটকায় রূপানের হাত সরিয়ে দেয়
রাজ। সিগারেট হাতে উঠে যায় উত্তর না দিয়ে। খোলা দরজার উপর এক হাত তুলে সামান্য হেলান দিয়ে দাঁড়ায়, ওপাশে ব্যালকনি। সিগারেটে জোরে টান মেরে কেটে কেটে বলে, ইট্স ইয়োর প্রবলেম বেবি, ফেস ইট ইয়োরসেলফ। টুমরো আই শ্যাল বি লিভিং ক্যালকাটা।”
রূপান কোনও কথা বলতে পারে না, কেমন যেন অসহায় বোধ করে সে।
সম্পূর্ণ নগ্ন রূপান, এক ঘর অন্ধকারে ডিভানে বসে, ব্যালকনির দরজার দিকে চেয়ে। দরজায় রাজের দেহ সিল্যুয়েটে হিমায়িত। রূপানের মনে হয়, ঘরের যাবতীয় অন্ধকার ঘনীভূত হয়ে রাজের অবয়ব নিয়েছে। ওই পুরুষ শরীরে, এই ঘরের প্রাত্যহিক একত্র বেঁচে থাকায় এতটা অন্ধকার জমাট বেঁধে ছিল।

Please follow and like us: