আলবার্তো মােরাভিয়ার শ্রেষ্ঠ গল্প

›› অনুবাদ  ›› গল্পের অংশ বিশেষ  

অনুবাদক: দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়

 

বিভ্রান্তি

….কিন্তু অবস্থাটা এখন আগের চাইতেও ঘোরালো হয়ে উঠলো। তিন- চারটে মেয়ে বোধহয় খদ্দেরের অপেক্ষাতেই লুকিয়ে ছিলে৷, আচমকা তারা যেন কোত্থেকে হাজির হয়ে আমাকে ঘিরে ধরলো। ওরা সকলেই মোটামুটি আমার বয়সী, পোশাক পরিচ্ছদ ( যদি আদৌ সেগুলোকে পোশাক বলা যায় ) এমন যাতে দেখাবার মতো সব কিছু এবং তাব চাইতেও খানিকটা বেশি কিছু দেখানো যায়। খাটো ঝুলের স্কার্ট আর ওপরের দিকে তোলা, গভীর করে কাটা জামার গলা আরও নিচের দিকে টেনে নামানো—পা আর বুক খোলা। কিন্তু এসবের কোথাও যেন সত্যিকারের ছেনালিপনা নেই, সবই এত স্বাভাবিক যে মনে হবে যেন দোকানের জানলায় জিনিসপত্তর সাজিয়ে রাখা হয়েছে। …..

 

নন্দনকানন

……ধারাযন্ত্র বন্ধ করে, গা মুছে, নগ্ন অবস্থাতেই বিছানায় গিয়ে বসলাম । তারপর প্রসাধনী পেন্সিলের বাক্সটা নিয়ে পেটের ওপরে নকশাটা আঁকতে শুরু করলাম। নাভিটাকে আঁকলাম একটা চোখের মতো, তাতে নীল মণি আর কালো ভুরু। তারপর আস্তে আস্তে সমস্ত পেট জুড়ে চোখটাকে ঘিরে দিলাম লাল নীল সবুজ আর হলুদ রঙের সম-কেন্দ্রিক ঢেউ-দোলানো আরবীয় নকশা দিয়ে। আরবীয় নকশাটার পেছনে, যেন সমুদ্র-ঢেউয়ের পেছনে, আঁকলাম একজন ভারতীয় ঋষির মুখ । ঋষির চোখ একটা—যেটা আমার নাভি, বাঁকা নাকে দুটো বিশাল গর্ত—য৷ আমার পেটের ভাঁজ, এবং বিশাল একজোড়া কালো গোঁফ ও সরু দাড়ি—যা আমার যৌনকেশের গোপন ত্রিভুজ। পেট শেষ করে এবারে আমি বুকের দিকে এগুলাম। কালো পেন্সিল দিয়ে পাঁজরের ওপরে কতকগুলো দাগ টেনে দিলাম, ঠিক মধ্যযুগীয় প্রলয়- নৃত্যে মৃত্যুর চেহারার মতো। তারপর বুক । যদিও আমি সাপের মতো নরম ও ছিপছিপে, কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে আমার স্তনদুটি মাই-খাওয়ানো আয়াদের মতো বিশাল । এ ধারে একটা, ও ধারে একটা—দুটো লম্বাটে নিটোল স্তন যেন বিশাল দুটো কুমড়ো। ইচ্ছে ছিলো ওদের ওপরে বেশ কয়েকটা হাত এবং পা সহ দুটো নৃত্যবত বিষ্ণুমূৰ্তি আঁকবো, স্তন- বৃত্ত দুটি হবে হাত-পাগুলোর কেন্দ্রভূমি । কিন্তু চিন্তা করে স্থির করলাম, এখন অতশত আঁকার সময় নেই ৷ তাই খানিকটা সংক্ষিপ্ত প্রক্রিয়ায় স্তন দুটোর একটাতে সবুজ অন্যটাতে লাল বঙ চড়িয়ে দিলাম, সেই সঙ্গে স্তনবৃন্ত দুটির একটি হলো লাল অন্যটি সবুজ। গোটাকতক নীল এবং লাল রঙের গ্রন্থি এঁকে হাত দুটোর কাজ ঝটিতি সেরে নিলাম । তারপর বাঁ হাতে আঁকলাম একটা হলদে বড়ের বিস্ময়বোধক চিহ্ন আর ডান হাতে রক্তবর্ণের জিজ্ঞাসা চিহ্ন। এবারে মুখের দিকে এগুলাম। পাউডার মাখলাম প্রায় ধূসর রঙের, বিনা রুজে। কয়েকটা কালো রঙের বলয় এঁকে চোখ দুটোকে করে তুললাম কোটরাগত। ভাগ্যিস আমার চুল- গুলো লম্বা, এবং খোলাই থাকে । তাই শুধু দু-একবার ব্রাশ চালাবার প্রয়োজন ছিলো।…ড্যাশুন্‌ড্ টা এতক্ষণ যেন ভাবাবেশভরে আমার দিকে তাকিয়েছিলো। আমি ওকে যে শেকলটা পরিয়ে বেড়াতে নিয়ে যাই, এবারে বেচারী জন্তুটা সেটা মুখে নিয়ে আমার কাছে এসে হাজির হলো। শেকলটা ওর মুখ থেকে খুলে নিয়ে আমি ওকে একটু আদর করে চাপড়ে দিলাম, তারপর পোশাক পরতে শুরু করলাম।….

…..প্রথমে পরলাম কালো মখমলের একটা পাতলুন। পাতলুনের পায়ের ঘের দুটো বিশাল চওড়া, কিন্তু কোমরটা নিচু—ফলে আমার ছবি আঁকা পেটটা খোলাই রইলো। লাল রঙের বিরাট বগলস্ লাগানো হলদে চামড়ার একটা কোমরবন্ধনীও পরলাম। তারপর সোনালী তারা- বসানো স্বচ্ছ একটা কালো ব্লাউজ বেঁধে নিলাম বুক দুটোর নিচে। ফলে অর্ধেক সবুজ আর অর্ধেক লাল স্তন দুটো যেন প্রাচুর্যে আরও উপচে উঠলো ।…..

 

ঈর্ষার চাতুরি

…..বস্তুত, সমুদ্র সৈকতে এমন অদ্ভুত মাত্রায় সংক্ষিপ্ত প্রতিকী বিকিনি কোথাও দেখা যায় না । বক্ষ-আবরণীর বিস্তৃতি ছোট হয়ে সাধারণ এক- ফালি ফিতেয় এসে ঠেকেছে, যার জন্যে ওর পুরুষ্টু স্তন ছুটির দুই- তৃতীয়াংশই সীমানা ছাড়িয়ে বাইরে বেরিয়ে এসেছে। বুক থেকে তলপেট অব্দি অবারিত স্বর্ণাভ নরম মাংসপেশীর হিন্দোলিত আর আমন্ত্রণের পথ পেরিয়ে গিয়ে চোখে পড়ে, ফুল আঁকা কাপড়ের ত্রিভুজাকৃতি ফালি- টুকু—এক পাশ থেকে দেখলে ওর উদ্বেলিত উরুর বৃত্তরেখায় আড়াল হয়ে যাওয়ায় সেটুকুও দেখা যাবে না, মনে হবে ও বুঝি সম্পূর্ণ নগ্ন । সত্যি বলতে কি স্ত্রীকে এরনেস্তোর মনে হচ্ছিলো, হান্স অ্যানডারসনের গল্পের সেই সম্রাটের মতো—যেন আসলে ও সত্যিই সম্পূর্ণ নগ্ন, কিন্তু ও ভাবছে ওর পরনে পোশাক রয়েছে, তাই পোশাক পরা সপ্রতিভ মানুষের মতো ওর আচরণেও অকৃত্রিম স্বাভাবিকতা।…..

…..বললো, “শোনো, দয়া করে গিয়ে তুমি নিজেকে আর একটু ঢাকাঢুকি দিয়ে নাও—এটা সত্যিই বড়ো বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে ৷’
‘কিন্তু এ বছরে এ ধরনের বিকিনিই তো চলছে !’
‘তার চাইতে বরং একটা রুমাল পরে নাও…এটা সত্যিই জঘন্য । তুমি কি বুঝতে পারছো না যে, তুমি একেবারে ন্যাংটো হয়ে রয়েছো ? “হলেই বা, কি হয়েছে ?’
‘খুপরিতে গিয়ে কিছু পরে নাও ।”
“ওহ,, তুমি যা জ্বালাও না!’ ওর স্ত্রী ঘুরে দাঁড়ালো এবং পেছন দিক থেকে ও যে কতটা নগ্ন, নিজের অজান্তে যেন বিদ্রূপ করেই এরনেস্তোকে সেটা দেখিয়ে, খুপরির দিকে এগুতে শুরু করলো ।…..

 

মাঝারিয়ানা

…..এবারে আমি কিছুই বললাম না। মেয়েটি গিয়ে সোফায় বসলো। তারপর পা দুটো আড়াআড়ি করে রেখে, বিশাল বুক থেকে কোটের বোতামগুলো খুলতে লাগলো। ওকে খুবই খুশি খুশি দেখাচ্ছিলো এবং এটা স্পষ্ট যে ও আশা করছিলো, আমি ওর সঙ্গে দেহলীলা শুরু করে দেবো।…..

 

শপথ

…..আমি একটা শিস দিতেই তিলদে ওর ভিকোলো দেল সিনিক- এর বাড়ির জানলায় এসে হাজির হলো। ওর নিটোল বাহু ছুটি নগ্ন, থোকা থোকা হলদে রঙের কোঁকড়ানো চুলগুলো ছড়িয়ে পড়েছে কাঁধের ওপরে, নিচু করে কাটা ব্লাউজের গলা থেকে বুক দুটি একেবারে সুস্পষ্ট…..

 

ইংরেজ অফিসার

……মেয়েটি লক্ষ্য করলো, আচমকা ওব ফেটে পড়া দেখে মানুষটা অবাক হয়ে বালিশে মাথা ঘুরিয়ে নিলো…কিন্তু চাদরের বাইরে আধখানা খোলা বুক নিয়ে চিৎ হয়েই শুয়ে রইলে। আগেকার মতো। ও যখন সব চাইতে বেঢপ পরিস্থিতিতে রয়েছে—ওর একটা হাঁটু বিছানায় আর একটা পা মেঝেতে, সামনের দিকে ঝুঁকে রয়েছে ওর শরীরটা, স্তনদুটো আর চুল- গুলো ঝুলছে নিরালম্বের মতো—ঠিক তখনই অধৈর্য অথবা কৌতূহলী হয়ে ফের মাথা ঘোরালো মানুষটা। বিরক্তি বেড়ে উঠলো মেয়েটির। তবু মানুষটার শরীরের ওপরে ঝুঁকে, নিজের বাহুসন্ধির কবোষ্ণ অন্ধকারে ওর চোখ দুটো ঢেকে দিয়ে, টেবিলের ওপরে রাখা আলোটা নিভিয়ে দিলো । পরে সুতোর কাজ করা অমসৃণ চাদরের নিচে নগ্ন শরীরে একে অন্যের বাহুবন্ধনে শুয়ে রইলো ওরা। মেয়েটি অনুভব করলো, অন্ধকারে মানুষটার হাত ওর কপালে আবার সেই দীর্ঘ মালিশ শুরু করেছে—…..