সর্বনাশিনী – সায়ন্তনী পূততুন্ড

›› উপন্যাসের অংশ বিশেষ  

…..ঠিক তেমনই কিছু শব্দ এখন এই ঘর থেকে ভেসে আসছে। নরম সাদা ধবধবে বিছানাটা থেকে-থেকে যেন শিউরে-শিউরে উঠছে। মাঝে-মধ্যেই একটা প্রবল শীকার বিপজ্জনকভাবে কর্ণেন্দ্রিয়কে উত্তেজিত করে তুলছে। ঘন নিঃশ্বাসের শব্দ এতটাই আক্রমণাত্মক যে মনে হয়, দুটো কালান্তক প্রাগৈতিহাসিক সরীসৃপ বুঝি পরস্পরকে আক্রমণ করেছে। পারলে গিলেই খাবে! দুটো নগ্ন শরীর নীল আলাের আভায়  মিলেমিশে যাচ্ছে প্রেমে কিংবা যুদ্ধে! ……ওদিকে বিছানায় রাজা প্রায় রানিকে আদরে আদরে বিধ্বস্ত করে তুলছে। রানিও হার মানবে না। একের পর এক লাভ বাইটে অস্থির পুরুষ। দাবার মতােন এই খেলাটাও এখনও অমীমাংসিত। কে জিতবে বােঝা মুশকিল! পুরুষটি যতই নারীর ওপরে কজা করতে চাইছে, নারীটি মােহিনী অথচ কামাতুর হাসি হেসে অধরা রহস্যের মতাে পিছলে যাচ্ছে। তার শীৎকারের শব্দ, খিলখিল হাসি ঘনিয়ে আসা সর্বনাশের অশনি সঙ্কেত দেয়। পুরুষটি সবলে তাকে দমন করার চেষ্টা করে। কিন্তু এ নারী অবদমিত হতে জানে না! সে সপাটে একটা মােচড় দিয়ে উঠে বসেছে পুরুষের ওপর! রাজা নয়, রানিই এ খেলার চালিকাশক্তি! সেটা এই বুভুক্ষু পুরুষটাকে বােঝানাে দরকার।
নারীটি শাণিত দৃষ্টিতে অপলকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে পুরুষটির দিকে! এই মুহূর্তে কী অসহায় লাগছে লােকটাকে! একটা বেঢপ ভুড়িওয়ালা থলথলে মাংসপিণ্ড ছাড়া ওকে আর কিছু বলা যায় না। বিবস্ত্র পুরুষ এত কুৎসিতও হতে পারে! এখন কুতকুতে চোখে ভীষণ কামনার আর্তি নিয়ে
তাকিয়ে আছে তার দিকে। দেখলেই ঘেন্না করে! চেহারার মতাে লােকটার স্বভাবটাও অত্যন্ত কুৎসিত! মেয়ে দেখলেই কামড়াতে আসে। মেয়ে মানেই যেন মাংস! ভােগ্যবস্তু! এরা এমনই হয়! এরা চিরকালই এমন!
– “প্লিজ বে-বি!” । লােকটা কাতরে উঠল। মেয়েটি জানে ও আর বেশিক্ষণ নিজেকে ধরে রাখতে পারবে না। ওর সে ক্ষমতাই নেই। চাইলে এখনই পরিতৃপ্ত করতে পারে পুরুষটিকে। বৃষ্টির মতাে ঝরে পড়ে মিটিয়ে দিতে পারে সব তৃষ্ণা। কিন্তু করবে না। ওকে বুঝতে হবে যে দাবার ছকে কালাে রানি চিরদিনই সাদা রাজার চেয়ে শক্তিশালী! গায়ে অসুরের মতাে জোর থাকলেই সব যুদ্ধ জেতা যায় না।
মেয়েটি হেসে উঠে তার নরম ঠোট লােকটির পুরু ঠোটের ওপরে নামিয়ে আনল। একটা সুদীর্ঘ চুম্বন! তার সাপের মতাে বিস্রস্ত কোকড়া। কোকড়া সুগন্ধী চুল কিছুক্ষণের জন্য ঢেকে দিল লােকটার মুখ। রােমশ হাত দুটো খেলে বেড়াচ্ছে পেলব, মসৃণ দেহের বিপজ্জনক ভাজগুলােয়। কোমল পিঠের ওপরে প্রবল চাপ অনুভব করল মেয়ে। সে একটুও বিচলিত না হয়ে আস্তে আস্তে গ্রাস করতে লাগল কঠিন পৌরুষকে। অদ্ভুত একটা দুলুনি! যেন একটা বেসামাল জাহাজ সমুদ্রের দুরন্ত ধাক্কায় থেকে থেকে দুলে উঠছে। একটা জ্বালা শরীর থেকে ক্রমাগত মনের দিকে যাচ্ছে। নারী অগ্নিগর্ভা! পুরুষ অধৈর্য! এখন তার রিক্ত হওয়ার সময় হয়ে। গিয়েছে। ক্রমাগতই দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হচ্ছে সে!
অথচ মেয়েটি তাকে কিছুতেই সম্পূর্ণ গ্রহণ করছে না। অজগর যেমন শিকারকে সযত্নে পাকে পাকে জড়িয়ে ধরে একটু একটু করে তার জীবনীশক্তি ও সমস্ত লড়াই শেষ করতে থাকে এবং অবশেষে শিকার যখন চরম যন্ত্রণায় মৃত্যু প্রার্থনা করছে, তখন অল্প অল্প করে গিলতে শুরু করে, অবিকল ঠিক তেমনই করছে সে! রমণের সৌন্দর্যের পাশাপাশি প্রতিটা পদক্ষেপের যন্ত্রণাও বুঝিয়ে দিচ্ছে।
– “কাম অন হানি!” অধৈর্য মানুষটা স্থলিত স্বরে বলে, “এবার তাে। এসাে।”
মেয়েটা ফের হেসে উঠল। মেঝের ওপর ঝনঝনিয়ে বুঝি আছড়ে পড়ল বেলােয়ারি ঝাড়। হাসির মধ্যে সুর আর মাদকতার মাত্রা প্রবল।
আবার দুলুনিটা ফিরে এল। আরও প্রবলভাবে। আবেগে, অসহায়তায় চোখ বুজল পুরুষ। দুলছে সে! সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে পড়া জাহাজের মতাে কাপছে। আস্তে আস্তে সব কিছু ঝাপসা হয়ে আসছে একটু একটু করে। চেতনা প্রায় শেষ বিন্দুতে গিয়ে ঠেকেছে। আর নিয়ন্ত্রণে নেই সে। বেসামাল ঘােড়ার মতাে হৃৎপিণ্ডটা দামাল হয়ে উঠেছে! সমস্ত সংসার লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে একটু একটু করে!
পুরুষটি লক্ষ্যও করেনি মেয়েটির ঠোটে একটা তীক্ষ্ণ হাসি ভেসে উঠল। কী ভীষণ নিষ্ঠুর সে হাসি! যে কথাটা অসমাপ্ত খেলার শেষে বলা উচিত ছিল, এই মুহূর্তে সেটাই বলল সে। আস্তে আস্তে নাগিনীর মতাে হিসহিসিয়ে উচ্চারণ করল,
– “চেকমেট!”……

…..লাল ঠোট গুলমােহরের পাপড়ি খসে পড়েছে। আঁটোসাঁটো পােষাক পরে থাকার দরুণ দেহের গড়নটাও বােঝা গেল পীনপয়ােধরা ও মধ্যক্ষামা! নিম্ননাভী এবং সুগভীর শ্রোণীর অধিকারিণীও বটে।…..

……নীল সুইমিংপুলে তখনও সুইমিং স্যুট পরে সাঁতার দিচ্ছে কয়েকজন সুন্দরী জলপরী! সুন্দরীদের মসৃণ রেশমের মতাে ত্বকের ওপরে অভ্রের গুঁড়াের মতাে জলবিন্দু চিকমিক করে উঠছে। সুইমিং স্যুট পরা অর্ধনগ্ন দেহ জলের সঙ্গে রতিক্রিয়ায় উল্লাসে মেতেছে যেন।……

Leave a Reply