উৎসঃ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ আদি-রসের গল্প
সম্পাদনাঃ সুকান্ত সেনগুপ্ত
॥ বিষ্ণু পর্ব ॥
॥ ত্রি পঞ্চাশদধিকং শতম অধ্যায় ॥
॥বর্ষা ॥
ভাদ্রমাস। সারা আকাশ মেঘে ছেয়ে গেছে। মদন প্রভাবতীকে বললেন -তােমার মুখের মতাে সুঁন্দর চাঁদকে আর দেখা যাচ্ছে না। তােমার নিবিড় কালাে কেশের মতাে কৃষ্ণ মেঘ চাঁদকে ঢেকে দিয়েছে। বিদ্যুৎ তোমার ফর্সা
শরীরের মতাে চোখ বাঁধিয়ে দিচ্ছে। বলাকা যেন তােমার শুভ্র দন্তরাজি। সরোবরের জল এখন কানায় কানায়। পদ্ম ডুবে গেছে। জলাশয় তাই শ্রীহীন হয়ে পড়েছে। আকাশে মেঘের ঘনঘটা—মনে হচেছ সেখানে যেন মত্ত হাতীর যশ চলছে। ইন্দ্রধনু যেন তােমার কটাক্ষের অনুকরণ করছে।
কামনামদির নরনারীর চিত্তমেঘের পটভূমিকায় ইন্দ্রধনুর রঙে আন্দোলিত। ময়ুরেরা উদ্দাম উল্লাসে পেখম তুলে নাচছে। কদম, অর্জুন, চন্দনের প্রাণে চারিদিক সুরভিত। আসঙ্গ-লিপ্সায় চঞ্চল হচ্ছে মন। রতি শ্ৰম শ্রান্ত স্বেদসিক্ত শরীরে সঞ্জীবনী পরশ বুলিয়ে দেয়। সজল হাওয়া। বর্ষণ-ক্লিন্ট ভরা ভাদরে সারস আর হাঁসের ঝাঁক মানস সরােবরের পবনে চলে গেছে। নারায়ণ এখন অনন্ত শয্যায় শায়িত। লক্ষীদেবীকে ত্যাগ করে সম্প্রতি তিনি যেন নিদ্রার সংসাগিক সুখ অনুভব করছেন। তিনি তাই সুপ্ত। কৃষ্ণের মনে পুলক সঞ্চারের অভিপ্রায়ে ষড় ঋতু তাদের মঞ্জরিত, গন্ধ-বিধুর ফুলের ডালি উজাড় করে দেয়। সেইসব ফুলে ঘুরে ফেরে যাযাবর ভ্রমর। কানে আসে মধুর গুঞ্জন। প্রিয়ে, ভাবছ তুমি এখন আকাশটাই বুঝি ভেঙে পড়বে তাই কি শঙ্কায় তোমার মুখশ্রী পান্ডূর হয়েছে ? তােমার ফুল্ল স্তন-কমল আর ঐ উষ্ণ উরু শিথিল হয়েছে ? না, তা নয়। বলাকামালায় শােভিত আকাশটা দেখে তােমার চিত্তচাঞ্চল্য জেগেছে তাই এই বিষন্নতা, উদাসীনতা। চাতকেরা আজ তৃপ্ত! ব্যাঙেরা ডাকছে—মনে হচ্ছে বাধ্যায় কোন আচার্য তাঁর প্রিয় শিষ্যদের সঙ্গে সমবেত কণ্ঠে সামগান করছেন। সুন্দরী বর্ষার আরেকটি সৌন্দর্য কোথায় জান? কামার্ত যুবতী অন্যসময়ের চেয়ে এ সময়ে আগেই শুতে যায় আর মেঘ গর্জনে ভীত হয়ে স্তনভারনত শরীরে প্রিয়তমকে জড়িয়ে ধরে।
॥ বিষ্ণুপর্ব ॥
পঞ্চসপ্তাধিকং শতম অধ্যায় ॥
॥ ধর্ষিত উষা॥
বৈশাখী শুক্ল দ্বাদশীর নির্জন রাতে বাণ-তনয়া মনােমােহিনী অনাঘ্রাত কুমারী উষা মনােহর সৌধতলে শুভ্র শয্যায় সুপ্তিমগ্না। তার সখীরাও নিদ্রায় আচ্ছন্ন। সহসা স্বপ্নাবিষ্টা উষা কান্তিমান এক পুরুষের দৃঢ় আলিঙ্গনে আবদ্ধ হলাে। অনুভব করলাে সে প্রথম সম্ভােগের সোনালী ব্যাথা আর অনির্বচনীয় শিহরণ। স্বপ্নোখিতা উষা বিস্মিত চোখ মেলে দেখে তার পরিচ্ছদে রক্তের দাগ। অক্ষত যােনির গৌরব আর তার রইল না, ধুলায় লুটায় তার সতীত্ব বলপূর্বক তার কোমার্য হরণ করে চলে গেল যে, সে তাকে মৌন অপমানে কাঁদিয়ে গেল ।……..
এই হরিবংশ পুরান সহ বেশ কিছু পুরান বিকৃত হয়েছে।।বেদব্যাসের রচিত ১৮ পুরানে এধরণের অশ্লীল কাহিনী ছিলো না।।এসব অশ্লীল কাহিনি যুক্ত হয়েছে,, কারণ বহু বছরে বহু লেখক আর বহু অনুবাদক নিজের কল্পনীয় অনেক কিছুই যুক্ত হয়েছে।।তাই এমন হয়েছে।।আর হরিবংশের মতো ব্রহ্মবৈবর্ত সহ বেশ কিছু কল্পকাহিনী তুর্কি ও মোগল শাসন আমলে পুরান হিসেবে স্বার্থপর কিছু মানুষের দ্বারা রচিত হয়েছিল। এগুলো বেদব্যাসের বলে পরে চালিয়ে দেয়া হয়।।।কিন্তু আসলে এগুলে বেদব্যাসের রচিত নয়।।।