সুনীলের সেরা ১০১ – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

›› গল্পের অংশ বিশেষ  ›› বই এর অংশ / সংক্ষেপিত  

ভূমি ও আকাশ

……….শাড়ি খুলল সরিতা। বুকের জামা, কোমরের শায়া সব খুলতে হল। সারা গায়ে আর একটুও সুতাে নেই। তার, ছাড়া-পােশাক নিয়ে চলে গেল অন্য মেয়ে দুটি। ওরা পৌঁছে গেলে সবাই মিলে কয়েকবার উলু দেবে, তারপর সরিতার একলা যাত্রা শুরু।………

……..মেয়েমানুষ নিজের স্বামীর সামনেও নিভৃতে সব বস্ত্র খােলে না, স্নানের সময়ও কাপড় পরে  থাকে, অর্থাৎ জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই সারা শরীর ঢাকাটুকি দিয়ে রাখাই অভ্যেস হয়ে গেছে। এই প্রথম সে পুরােপুরি নগ্ন, কেউ না দেখলেও হাঁটতে গেলে জড়তা এসে যায়। কিন্তু ইন্দ্রপূজার যে এটাই রীতি।……

…….লজ্জা নিবারণের জন্য এত হাত বুক ও অন্য হাতে যােনিদেশ চাপা দিয়ে সে বলল, আরে বেওকুফ কহিকা! তু ইধার আয়া? মরনেকা ডর নেহি তুহার?……

……..খানিকবাদে দুজন শুয়ে রইল পাশাপাশি। দুজনেরই শরীরে বিন্দু বিন্দু ঘাম। আকাশে বিদ্যুৎচমক এখন ঘনঘন। বৃষ্টি একেবারে আসন্ন। কাকতালীয়। আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি, বৃষ্টি একদিন-একদিন তাে আসবেই। তবু আজই, এখনই বৃষ্টি নেমে সরিতাকে পুণ্যবতী করে দিল।

জুইফুলের মতন এক-একটা বৃষ্টিবিন্দু ঝরে পড়তে লাগল ওদের শরীরে।……….

জঙ্গলের মধ্যে মন্দির

……….অতসী আয়নার সামনে নিজের মুখটা ভালাে করে দেখল। রুক্ষ চুল, কাজল লেপা ভুরু, ক্ষীণ সুরমা, অল্প লাল ঠোট। কৃত্রিমতায় তার মুখখানি সত্যিই ঢলােঢলে দেখাচ্ছে। অতসী পরপর দেবতা ও মহাপুরুষদের ছবিগুলিকে অনেকক্ষণ প্রণাম করল। গিরিশবাবুর ছবির মালা থেকে একটা গাঁদা ফুল ছিড়ে ব্লাউজের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে বুকের মধ্যে ফেলে দিল। ওর ব্লাউজটা এত ছােট যে আধবাটি বুক দেখা যাচ্ছে, আবার পেটেরও খানিকটা। অথচ ফুলটা কোথায় আটকে গেল কে জানে!…….

গােপন

…….রেলিং-এর ফাঁক দিয়ে সিঁড়ির নীচের জায়গাটা দেখা যাচ্ছে। শঙ্করীর বুকে শাড়ি নেই। ব্লাউজ খােলা, এক হাত দিয়ে ধরে আছে সে নিজের একটি খােলা স্তন।

রজত প্রথমে নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারেনি। এটা কী ব্যাপার হচ্ছে নিজেই নিজেকে আদর করছে শঙ্করী? ওই স্তন, অমন সুগােল, মসৃণ, ঘুঘু পাখির মতাে স্তন সত্যিকারের কোন নারীর হয় ?

রজতের সমস্ত শরীর ঝিমঝিম করে উঠল! এই প্রথম সে যেন কোনও নারীর নগ্ন বুক দেখছে। তা ঠিক নয়। আগে সে দেখেছে কয়েকবার, কিন্তু আগেকার সব অভিজ্ঞতা এই বুকের কাছে তুচ্ছ।

শঙ্করী একহাতে নিজের একটি স্তন চেপে ধরেছে, তারপর সে অন্য হাতে একটি পেতলের বাটি এনে তার নীচে রাখল।…….

……রজত দাঁড়িয়ে আছে প্রায় দু-মিনিট, তার সারা শরীর ঝাঁঝাঁ করছে, আজ সে দেখছে পুরােপুরি লােভীর মতন। ওই অপরূপ স্তনের দিকে তাকিয়ে শুধু সৌন্দর্য দর্শন নয়, সে ভােগ করছে যৌন রােমাঞ্চ। তার একবার মনে পড়ল জয়ার কথা। তবু সে সরে যেতে পারছে না। সে হেরে গেছে।

মুখখানা নীচু করে আছে শঙ্করী। তার একদিকে গাল, চিবুক, তার স্তনের ওপর আঙুল, সব মিলিয়ে একটা অবর্ণনীয় চিত্র, কোনও ছবিতেও এরকম আঁকা দেখেনি রজত।……

……জয়াকে যে ভালােবাসে, সেই রজত মােটেই হীরালালের স্ত্রীর স্তনে মুখ দিতে চায় না।

শঙ্করী পাথরের ওপর এক মনে ঘষতে লাগল সেই স্তন্য মেশানাে শেকড়, সেদিকে চুম্বকের মতন দৃষ্টি আটকে গেছে রজতের। প্রায় জোর করেই যেন নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সে উঠে গেল ওপরে।…….

…….এক ছাতার নীচে দুজনে বেশ ঘনিষ্ঠ হওয়া যায়। একটা ল্যাম্প পােস্টের আলাে তির্যক হয়ে এসে পড়েছে জয়ার শরীরে। রজতের ডান বাহু ছুঁয়ে রইল জয়ার বুক, জয়া সরে গেল না।

রজতের হঠাৎ মনে পড়ল, সে আজও জয়ার নগ্ন বুক দেখেনি, কিন্তু অন্য একজনের দেখেছে। সে জয়ার বুকের দিকে তাকাল। একটুখানি আভাস। সে যদি জয়াকে বলে, তােমার ব্লাউজটা খুলে একবার দেখাবে? জয়া অসম্ভব রাগ করবে। জয়ার সমবােধ খুব বেশি। এ পর্যন্ত মাত্র গােটাপাঁচেক চুমু খেয়েছে রজত। কিন্তু জয়া তার সঙ্গে কোনও নির্জন ঘরে বেশিক্ষণ থাকতে চায় না।

শঙ্করীর বুকের সঙ্গে জয়ার বুকের তুলনা করতে চায় কেন রজত? এটা তার পাগলামি নয়? আর ঠিক পাঁচদিন বাদে সে নতুন ফ্ল্যাটে চলে যাবে, শঙ্করীকে সে আর কোনওদিন দেখবে । সিঁড়ির ওপরে দাঁড়িয়ে ওইরকম দৃশ্য জীবনে এক আধবারই মানুষ দেখে। কেউ-কেউ দেখেই । শেকড়টা বাটছিল শঙ্করী, তার নাম জানা হবে না। কোনওদিন।

তবু, শঙ্করীর সেই নিজের বুকে হাত রাখা, সেই দৃশ্য অন্ধকার নদীর ওপর দুলছে। রজত দাঁড়িয়ে আছে জয়ার পাশে। সে দেখেছে সেই দৃশ্য, এটা যেন সহ্য করা যায় না। এখন জয়া নিজের বুক খুলে দেখালে।…কিন্তু তা সম্ভব নয়।……..

Leave a Reply