….জীবন রহস্য বােঝার বয়স হয়েছে তখন আমার। যৌবনের ঢল নেমেছে দেহে। দিন দিন সুন্দর হচ্ছি দেখতে। দর্পনের সামনে দাঁড়ালে চোখ ফেরাতে পারি না। নেশার মতাে চেয়ে থাকি। বড় বিস্ময়ে লাগে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে! কত সব অদ্ভুত প্রশ্ন, কৌতুহল, আকাঙক্ষা আগুনের ফুলকির মতাে রােমকূপের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়ে। কজ্জলিত দুই আঁখির তারায়, দৃষ্টিতে যৌবনের চলপতা, অধরে উচ্ছলিত হাসির নিঝর। উদ্ধত দুটি পয়োধর মদগর্বিত যৌবনের দুটি দুর্গ যেন। আমার পল্লবিত যৌবনের গর্ব। আমার নারীত্বের শােভা। দেহবলীর সুগন্ধে আমার প্রাণমন আকুল। এ যেন নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করছি আর প্রতিমুহূর্ত নতুন হয়ে উঠছি। দেহের সৌন্দর্য নারীকে বিকশিত করে। তার সব রূপই দেহে পােশাকে, আভরণে, অলঙ্করণে, খুশিতে ভালােলাগায়, আনন্দে মাখামাখি হয়ে আছে যেন। প্রকৃতির রূপ পাহাড়, অরণ্য, প্রান্তর, দিগন্তবিস্তৃত নীল আকাশ, নদীনালা বিধৌত পল্লীর শােভা দেখলে যেমন খুশি হয় তেমনি আমাকে দেখে দুর্বাসার যে ধরনের খুশি হয় তার গভীরতর অর্থ বুঝতে ভুল হল না কোন মেয়ের সে যে বয়েসেরই হােক না কেন। খুশিতে আমার বুক ফুলে ওঠে। তখন সারা শরীর গান গেয়ে ওঠে। মম যৌবন নিকুঞ্জ গাহে পাখি গান।…..
….তড়াক করে দুর্বাসা বিছানায় উঠে বসল। আমার খুব কাছে সরে এল। নিমেষে হাতটি তুলে নিল তার হাতে। বাধা দেয়ার শক্তি ছিল না আমার। হাতটি খুলে ধরলাম তার করপদ্মে। ঋষি হাতের উপর গাল রাখল, চুম্বন করল। বুকে চেপে ধরে আদর করল। আমার সারা শরীরে সিরসিরানি উঠল। আঙুলের আঙুলের উষ্ণতায় মিলন হলাে। কতক্ষণ জানি না-হাতটা ঋষির হাত থেকে টেনে নিলাম। এক অজ্ঞাত রহস্যলােকের পর্দাটা সরে গেল। আমি অনুভব করলাম, পুরুষের অনেক কিছুই নারীর শরীরে ঘুমিয়ে থাকে। ছোঁয়া লাগলে সমস্ত শরীর গলে যেতে চায়।…..
কথায় যাদুকর ও। কথা দিয়েই আকাশে মেঘ জড়াে করে অলকানন্দ নামাতে পারে। আমার বুকের ভেতরর বর্ষণ শুরু হয়েছে। ওর মুখ আমার কানের কাছে, গালের উপরে, ও আ…..মার কানে ফিসফিস করে বলছে আমার প্রাণের ভেতরে সুধা আছে চাও কি? ওর তৃষ্ণার্ত ঠোট আমার অধর স্পর্শ করে রইল। নরম মধুর স্পর্শে আমার মুখটা খুলে গেল। আমি মুখে ওর মুখের স্পর্শ পেলাম। আমার সারা শরীর গান গেয়ে উঠল। আমিও ওর গলা বেষ্টন করে আমার অনাবৃত বুকের উপর মুখখানা চেপে ধরলাম। শৃঙ্গারমােহিত নারীর মত আসঙ্গের আনন্দঘন অশ্লেষে তাকে সম্পূর্ণ করে পাওয়ার অতৃপ্ত উল্লাসে অঙ্গে অঙ্গে অঙ্গাঙ্গী হয়ে সঙ্গমে প্ররােচিত করি তাকে। এক আশ্চর্য স্থবিরতার শিকার হয়ে শায়িত দেহের উপর উপুড় হয়ে অক্ষমতার অপমানে শিশুর মতাে কাদতে লাগল। কুন্তী, আমি পারছি না। সত্যি আমি পারছি না। আমি অক্ষম। আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও।….
…..বেশ ঝকঝকে রােদ উঠেছিল। ভােরের স্নিগ্ধতা গায়ে মেখে আমি পান্ডুর ঘরের দরজার সামনে এসে দাঁড়ালাম। মৃদু টোকা দিলাম দরজার কপাটে। একবার। দুবার। তিনবার। ঘরের ভেতর থেকে কোন সাড়া এল না। তবু ফিরে যেতে পা উঠল না। কল্পনায় দেখছিলাম মাদ্রীর গভীর আলিঙ্গনের মধ্যে পাণ্ডু নিশ্চিন্তে সুখে ঘুমােচ্ছ। মাদ্রীর সুকোমল উন্নত বক্ষযুগলের মধ্যে মুখ ডুবিয়ে যৌবনের ঘ্রাণ নিতে নিতে গাঢ় ঘুমে আচ্ছন্ন হয়তাে পাড়ুও। অথবা শরীরী আনন্দের আকর্ষণ ছেড়ে শয্যাত্যাগ করতে ইচ্ছে করছে না তার। তাই হয়তাে দরজায় বারংবার টোকার শব্দ শুনেও সাড়া দিচ্ছে না। খুব ইচ্ছে করছিল জড়াজড়ি অবস্থায় তাদের ঘুমের দৃশ্য দেখতে। শান্ত সকালের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এক আশ্চর্য শরীরী দহনের তাপ উষ্ণতায় আমাকে ভরে দিচ্ছিল যেন। বুক থেকে এক গভীর শ্বাস পড়ল।….
…..হঠাৎ বিদুর আমার হাতখানা তার হাতের উপর রাখল। আস্তে আস্তে ওর মুখটা নেমে এল তামার হাতের উপর। ওর অধরের উষ্ণ স্পর্শ পেলাম হাতে। লালা নিঃসৃত ভিজে ঠোট দিয়ে আমার ভেতরের সব উত্তাপ শুষে নিতে লাগল। মনে হলাে দীর্ঘ উত্তপ্ত নিদাঘের পর প্রথম বৃষ্টি নামল। এক সুখকর অনুভূতির আবেশ আমাকে আচ্ছন্ন করে দিল। অভিভূত গলায় বললাম আমার পেটে তােমার ছেলে এসেছে; কেমন করে জানলে? | আমার সমস্ত অনুভূতি দিয়ে। ফুলে আলাে পড়লে যেমন পাপড়িগুলি মেলে ধরে তেমনি মাতৃত্বের শ্ৰী তােমার পয়ােধরে, উদরে, নিতম্বে, অঙ্গে অঙ্গে এক অন্য নারী করে তুলেছে তােমাকে। কাউকে বলে দিতে হয় না সে কথা। তাই তাে শতশৃঙ্গ পর্বতে তােমার যাওয়ার প্রয়ােজন আরাে বেড়ে গেছে। সেখানে কোন বাধা নিষেধ নেই। নিজের মতাে করে বাঁচতে পারার সুখ কী কম! এখন তাে আমাদের আর নিজের জন্যে বাঁচা নয়, তােমার পেটে যে এসেছে তার জন্যে বাঁচা।……
….এখানে আসার অল্পকাল পরে যুধিষ্ঠির ভূমিষ্ঠ হলাে। তারপর আরাে দুটি পুত্র জন্মাল। এরা সকলেই বিদুরের ছেলে। পাছে সে কথাটা জানাজানি হয়ে যায়, তাই বিদুরকে আড়াল করতে এক অলৌকিক গল্পের অবতারণা করতে হলাে। ক্ষ্যাপা দুর্বাসার মন্ত্রদানের সেই পুরনাে গল্পটাই কাজে লাগাতে হলাে। এক অলীক অলৌকিক দেব মাহাত্মের মােড়কে পুত্রদের জন্মরহস্য ঢেকে রাখা হলাে। লােকে জানল তারা ধর্মের পুত্র পবনের পুত্র, ইন্দ্রের পুত্র।…..