রতি রঙ্গিনী – টমাস মান

›› অনুবাদ  ›› সম্পুর্ণ গল্প  ›› ১৮+  

বিশ্বের শ্রেষ্ঠ আদি-রসের গল্প

অনুবাদঃ জীমত কান্তি বন্দ্যোপাধ্যায়
উৎসঃ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ আদি-রসের গল্প
সম্পাদনাঃ সুকান্ত সেনগুপ্ত

লিফট চালানাে খুবই সহজ ব্যাপার। চেষ্টা করলে অল্প সময়েই শিখে নেওয়া যায়। আমার সুন্দর ইউনিফর্মটা আমার খুবই পছন্দ এবং যে মহিলা আমার লিফটে ওঠানামা করে, তাদের চাউনির ধরণ থেকে বুকি তাদের পছন্দ। তাছাড়া নতুন নামটা আমার পছন্দ হয়েছিল। কাজের ধরণটাও মজার মনে হয়েছিল। কিন্তু যদিও ব্যাপারটা ছেলেখেলা, সামান্য বিরতির সময় বাদ দিয়ে সকাল সাতটা থেকে রাত বারােটা অবধি কাজ করা খুবই ক্লান্তিকর। এমন একটা দিনের শেষে লােকে দেহমনে ক্লান্ত হয়ে কোনোমতে বিছানায় উঠে শুয়ে পড়ে। একনাগাড়ে ষােল ঘন্টা। মধ্যে সংক্ষিপ্ত বিরতি সময়। লিফটম্যানরা তখন পালা করে রান্নাঘর ও ডাইনিং হলের মাঝামাঝি একটা খাওয়ার ঘরে ঢোকে। জঘন্য খাবার। বাসি পচা, পাতকুরানো হাবিজাবি রান্না। জেল ছাড়া অন্য কোথাও এতাে জঘন্য খাবার আমি খাইনি।

কাজের সময় তো ছোট বদ্ধ ঘরের ভেতরে, যেখানে হাওয়া লাফটযাত্রিনীদের ব্যবহুত সেন্টের গন্ধে ভারী, সেই বদ্ধ আবহাওয়ায় কন্টোল চালু রাখতে হবে, ইনডিকেটর দেখতে হবে, নির্দেশমত থামতে হবে, তাদের জায়গামত নামিয়ে দিতে হবে। এরই মধ্যে ভদ্রলােক ও মহিলাদের নির্বোধ অসহিষ্ণুতা দেখে আমার অবাক লাগতো। যখন লবিতে ওরা অনর্গল ঘন্টি বাজাতেন, ওরা খেয়ালও করতেন না যে আমি চারতলা থেকে একলাফে একতলায় নামতে পারিনা, আমাকে প্রত্যেক তলায় থামতে হবে, যাঁরা নামতে চান তাদের অভিবাদন জানিয়ে হাসি মুখে যেতে দিতে হবে।

আমি একটু বেশী হাসতাম, বলতাম, মসিয় ও মাদাম, সাবধানে পা ফেলবেন। যদিও ওসব বলা নিতান্তই নিষ্প্রয়োজন ছিল। কারণ প্রথম দিনেই শুধু লিফট থামাতে একটু ঝাকি দিয়েছি। তারপর আর কোন ভুল হয়নি। প্রৌঢ়া ও বৃদ্ধ মহিলাদের হাত ধরে সাহায্য করতাম। ভাবটা এমনই যেন লিফট থেকে বের হতে ওদের কষ্ট হচ্ছে। বিনিময়ে পেতাম ঘাবড়ে-যাওয়া চাউনিতে ধন্যবাদের ইঙ্গিত কখনাে বা বিষন্নতা মেশানাে এক ধরণের ছেনালি, বয়ঙ্কা মহিলাদের যুবকেরা ভদ্রতা দেখালে ওরা যে রকম ভাব দেখান, সেই রকম আর কি কেউ কেউ আবার খুশী হয়েছেন বলে মনে হত না। তাদের হৃদয় শীতল ও শুন্য। শ্রেণীগত অহংকার ছাড়া আর কোন অনুভতি নেই। যুবতীদেরও আমি সাহায্য করতাম। তারা লজ্জায় লাল হয়ে উঠে ধন্যবাদ জানালে আমার দৈনন্দিন কাজের একঘেয়েমি কেটে যেতাে। আসলে আমার এইসব ভদ্রতার লক্ষ্য ছিল এমন একজন যুবতী, যার জুয়েল-কেসটা কিছুদিন আগে আমি চুরি করেছি এবং যার জুয়েলারী চোরাই মালের দোকানে বেচে সেই পয়সায় আমি কিনেছি আমার বােতাম লাগানাে নতুন জুতােজোড়া, আমার ছাতা, আমার পোষাক। যুবতীর জন্যে আমাকে বেশীদিন অপেক্ষা করতে হয়নি।

দ্বিতীয় দিনে বিকেলে পাঁচটা নাগাদ ও আর একটা লিফটের লিফটম্যান ওহস্টাশ-ও লিফট থামিয়েছে একতলায়, ঠিক তখনই মাথায় হ্যাট ও কার্স্ফ পরা সেই যুবতী এল। আমার সহকর্মীর চেহারাটা একেবারেই সাধারণ। তাই বড় বড় চোখে আমাকে দেখলাে যুবতী, হাসলাে, কোন, লিফটে উঠবে তাই নিয়ে একটু দ্বিধা দেখালাে এবং ওহষ্টাশ হাত নাড়ছে দেখে এবার ও লিফটের পালা ভেবে ও লিফটে চড়ার সময় আমার দিকে তাকালাে, চোখ দুটো আবার বড় বড় হলাে। পরে ওহষ্টাশের কাছে জানা গেল, মহিলা বিবাহিতা, ওর নাম মাদাম হুপফোহ্ । 

পরেরদিন একই সময় অন্য দুটো লিফট ওপরে উঠে গেছে, নীচের তলায় লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি আমি। যুবতী এল। ওর পরনে লম্বাজুল পশুলােমের তৈরী দামী ও সুন্দর জ্যাকেট এবং একই রং এর পশুলােমের টুপি। আমাকে দেখে ও খুসী হয়ে মাথা নাড়লাে। আমি অভিবাদন জানিয়ে এমন গলায় মাদাম’ বললাম, যেন নাচের আসরে ওকে পার্টনার হতে বলছি। আমার সঙ্গে আলােজলা বন্ধ ঝুলন্ত ঘরে ঢুকলাে মাদাম। ইতিমধ্যে চারতলা থেকে ভেসে এল ঘণ্টির শব্দ।

তুমি তাে নতুন, নাম আমার্দ, তাই না?
আপনার সেবক, মাদাম।
‘তােমার গলার স্বরটা ভারী সুন্দর।

চারতলার ঘন্টি বেজেই চলেছে। আমরা দোতলায় উঠেছি। আমি বিনীত ভাবে মহিলার কনুই ধরে লিফট থেকে বের হতে সাহায্য করলাম, যদিও সত্যিই তার কোন দরকার ছিল না।

‘মাদাম, আপনার অনুমতি পেলে প্যাকেটগুলাে আপনার ঘরে বয়ে নিয়ে যেতে পারি।

লিফট ছেড়ে প্যাকেটগুলাে বয়ে নিয়ে করিডর বেয়ে মহিলার পেছনে পেছনে বিশ কদম বা দিকের তেইশ নম্বর সুইটে ঢুকলাম আমি। আমাকে বেডরুমে ঢুকতে বলা হয়। সাজানাে গােছানাে বেডরুম-হাড়-উডের মেঝেতে পারস্যগালিচা, চেরীকাঠের ফার্নিচার, টয়লেট টেবিলে অনেক ঝকঝকে জিনিষ, সাটিনের চাদরে ঢাকা পেতলের তৈরী চওড়া খাট, সিকের পদ। কাঁচটাকা টেবিলে প্যাকেটগুলাে রাখলাম অমি। পশুলােমের তৈরী জ্যাকেট খুলে যুবতী বলে–

‘আমার ঝি এখানে নেই। ও ওপর তলার ঘরে থাকে। তুমি আমার কোট খুলতে সাহায্য করবে ?

‘আনন্দের সঙ্গে।

আমি বললাম। রেশমের লাইনিং দেওয়া পশুলোমের কোটটা ওর কাধ থেকে খুলছি, যুবতী আমার দিকে তাকালো। ওর মাথার চুল পুরু রং বাদামী, কিন্তু সামনে চুলের কোকড়ানাে একটা বলয়ের রং সাদা। চোখ দুটো একবার বড় হল, আবার ছোট। যেন ও স্বপ্ন দেখছে। যেন ও জলে ভেসে যাচ্ছে। ও বললো–

“সামান্য চাকর হয়ে তােমার এতাে সাহস যে তুমি আমায় উলঙ্গ করছাে?”

মাদাম, আপনার বর্ণনামাফিক কাজটা সম্পুর্ণ করার সময় আমার থাকলে কতাে ভালাে হত, ঈশ্বর জানেন-

‘আমার সঙ্গে কাটাবার মত সময় তোমার নেই ?

এই মুহুর্তে নেই, মাদাম। আমার লিফট অপেক্ষা করছে। ওপর-তলায় ও নীচতলায় অনেক লােক লিফটের জন্যে ঘন্টি বাজাচ্ছে। হয়তাে নীচের তলায় ভীড় জমে গেছে। আর দেরী করলে আমার চাকরী যাবে ?

‘ কিন্তু আমার সঙ্গে কাটাবার মত সময় তোমার হবে?

‘অন্তহীন সময় মাদাম।

কখন সময় হবে?

কথা বলতে বলতে মহিলার চোখ বড় হয়, চোখের তারায় সেই স্বপ্নদেখা ভেসে-যাওয়া দুটি, নীচের ধুসর সুটপরা রমনী শরীর কাছে আসে।

‘রাত এগাবােটায় আমার ডিউটি শেষ হবে।

‘আমি তােমার জন্যে অপেক্ষা করবাে, কথা দিলাম।

ও কি করতে যাচ্ছে বুঝতে পারার আগেই আমার মাথাটা ওর হাতে বাধা পড়লাে এবং আমার ঠোঁটে ঠোঁট রেখে চুমু খেলো মহিলা। প্রতিশ্রুতি দেওয়ার ধরণটা একটু অস্বাভাবিক বলা যেতে পারে।

ওর জ্যাকেটটা রেখে যখন আমি ওর ঘর ছেড়ে এলাম, আমাকে নিশ্চয়ই খুব ফ্যাকাসে দেখাচ্ছিল। লিফটের খােলা দরজার সামনে তিনজন লােক অবাক হয়ে অপেক্ষা করছে। অপ্রত্যাশিত একটা কাজে ডাক আসায় দেরী হয়েছে বলে ক্ষমা চাইলাম, ওদের নীচে নামাবার আগে চারতলায় লিফট তুলতে হল। কিন্তু চারতলায় যে ঘন্টি বাজিয়েছিল তাকে পেলাম না। নীচে লিফট নামাতে কাজে গাফিলতির জন্যে কথা শুনতে হল। বললাম, একজন মহিলার মাথা ধরেছিল বলে তাকে ঘর অবধি পৌছে দিতে হয়েছে।

মাদাম হপফেহর মাথা ঘুরবে। কি সাহস মহিলার। আমার চেয়ে বয়স বেশী বলে এবং সমাজের উচুতলার বাসিন্দা বলে আমার থেকে বেশী সাহস। ‘সামান্য চাকর হয়ে এতাে সাহস…’ -কি সুন্দর কথাটা বললাে, যেন আমার কবিতার তুমি আমায় উলঙ্গ করছো?”

উত্তেজনাজাগানাে কথাগুলাে সারা সন্ধ্যে আমার মনে জেগে রইলাে। দুঘণ্টা ধরে। যতােক্ষণ না আবার ওর সঙ্গে দেখা হল। চাকর’ কথাটা আমাকে একট, আঘাত দিল, “কিন্তু উলঙ্গ করা যে কথাটা ভাবিনি, আমার যে উদ্দেশ্য ছিল বলে মহিলা ভেবেছে, কথাটা ভেবেই আমার গর্ব হল। তাছাড়া প্রতিশ্রতি দেওয়ার বহরটা যেরকম-সন্ধ্যে সাতটায় আমার লিফটে চড়ে ডিনার খেতে নামলো মহিলা। তখন লিফটে অন্য লােকও ছিল। মহিলার পরণে এখন সাদা রেশমের অদ্ভুত সুন্দর পােষাক, লেস লাগানাে, জামার এম্রডারী, কোমরে কালো সাটিনের বেল্ট এবং গলায় ঝকঝকে উজ্জল দুধসাদা সাচ্চা মুক্তোর নেকলেস। (ভাগ্য, জুয়েল-কেসটা চুরি করার সময় মুক্তোর হারটা ওর মধ্যে পাইনি)। একটু আগে অতাে জোরে চুমু খাওয়ার পর এখন আর আমার দিকে তাকালেই না মহিলা। আমার একটু খারাপ লাগলাে। প্রতিশােধ হিসেবে আমি ওর বদলে এক বিচ্ছিরি চেহারার বুড়ীকে হাত ধরে লিফট থেকে বের হতে সাহায্য করি। ও হাসে।

ও কখন নিজের ঘরে ফিরেছে আমি জানি না। এগারােটার সময় আমার ছুটি হল। বাথরুমে ঢুকে সাফসুৎরাে হয়ে নিলাম, তারপর সিড়ি বেয়ে দোতলায় নামলাম। করিডরের লাল কার্পেটে পায়ের শব্দ হয়না। ৩৫ নম্বরে বসবার ঘরের দরজায় ঘা দিয়ে শব্দ না পেয়ে আমি ২৩ নম্বরের বাইরে দরজা খুলে ভেতরের দরজায় আলতাে টোকা দিলাম। একটু যেন অবাক হয়ে ভেতর থেকে ও বললাে-“এসাে। অবাক হওয়ার ধরণটাকে পাত্তা না দিয়ে আমি ঢুকি। সিকের শেড দেয়া ল্যাম্প থেকে ম্লান লালচে আলাে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রকাণ্ড ঝকমকে পেতলের খাটে লাল সাটিনের চাদরের নীচে সুন্দরী হাত দুটো মাথার পেছনে জড়াে করা, পরণে খাটো ঝুল লেস-লাগানাে ক্যাবিজের নাইটগাউন। রাতে শোবার আগে চুল খুলে মাথার চারপাশে টায়রার মত বেধেছে রুপসী। আমি ভেতরে ঢুকতেই দরজা বন্ধ হয়। বিছানা থেকে একটা তার টেনে দরজার ছিটকিণি খোলা বন্ধ করা যায়।

সােনালী চোখদুটো একটু বিস্ফারিত হয়। এক লহমার জন্যে। যেন একটু নার্ভাস হয়ে বলে মহিলা

‘একি, হােটেলের কর্মচারী, সাধারণ লােক আমি, শােয়র পর আমার বডরুমে ঢুকছে ?

‘আপনি তাই চেয়েছিলেন, মাদাম। আপনার ইচ্ছে মেতাে

আমি খাটের কাছে যাই।

‘আমার ইচ্ছে? মানে কোন মহিলা যেমন লিফটম্যানকে অডার দেন ? আসলে তুমি বলতে চাইছো আমার নির্লজ্জ প্রতীক্ষা, তপ্ত কামনা, মন্দ বাসনার কথা। তুমি দেখতে সুন্দর, বয়সে যুবক, স্বভাবে উদ্ধত। আমার ইচ্ছে ? বলতাে, তােমার ইচেছ কি আমারই ইচেছর মতাে?

তারপর সে আমার হাত ধরে বিছানার ধারে বসায়। ব্যালান্স রাখার জন্যে আমাকে হাত বাড়িয়ে বিছানার মাথার দিকটা ধরতে হয়। ফলে আমি লিনেন ও লেসে হালকাভাবে ঢাকা তার নগ্ন শরীরের ওপর ঝকে পড়ি। ও বারবার আমার সামান্য জীবিকার কথা বলছে কেন আমি বুঝিনা। আমি বুকে পড়ে ওর ঠোটে ঠোট মিশাই, ওর দিক থেকে সহযােগিতার অভাব হয় না। ও আমার হাত ধরে হাতটা ওর পােষাকের ভেতর বুকের ওপরে নিয়ে যায়। স্তন – আমার হাত-চমৎকার মিশে যায়। ও আমার হাতটা মনিবন্ধের কাছ ধরে এমনভাবে নাড়ায় যে, পৌরুষ জেগে ওঠে। আমার পুরুষাঙ্গের দিকে তাকিয়ে খুসী হয়ে ও বলে সুন্দর যুবক, যে শরীর তােমার কামনা জাগিয়েছে, তার থেকে তুমি সুন্দর।’ তারপর সে দুহাতে আমার জ্যাকেটের কলার খােলে, আমার জামার বােতাম খুলতে খুলতে বলে—

‘খুলে ফেলল। সব বাধা দুরে যাক। যেন আমি দেবতার শরীর দেখতে পারি। তােমাকে প্রথম দেখার পর থেকে নগ্ন দেবতার বাহু আমি দেখতে চেয়েছি। এই তাে ? দেবতার মত বুক, কাঁধ, হাত। এবার প্যান্টটা খােলাে। বীরের মতাে। এবার আমার কাছে এসাে-‘

কোনাে মহিলাকে এতো সুন্দর কথা বলতে আমি কখনাে শুনিনি। ওর কথা কবিতার মত। এবং আমি যখন ওর সঙ্গে রতিক্রিয়ায় মেতেছি, তখন ও কথা বলে এটা ওর স্বভাব। সব কিছু কথায় প্রকাশ করা।

‘ওঃ, প্রিয়তম. প্রেমের দেবতা, বাসনার সন্তান, যুবক শয়তান, নগ্ন বালক, কাজটা তুমি কি সুন্দর করতে পারাে। আমার স্বামী কিন্তু পারে না। ও, আমি মরে যাবাে। আনন্দে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমার হৃদয় ভেঙে যাচেছ। তােমার ভালোবাসা আমায় মেরে ফেলছে। আমার কানে, আমার ঘাড়ে, আমার ঠোটের ওর কামনার দংশন, চরম পুলকের মহতে কাছে আসতে ও হঠাৎ চীৎকার করে ওঠে—

‘আমাকে তুই বলাে। আমাকে আপন করে নাও, আমাকে নীচে নামাও। আমাকে অপমান করাে বােকা চাকর।

আমি আমার সুখ পেয়েছি, আমার যথাসাধ্য  দিয়েছি। কিন্তু চরম সুখের মুহুর্তে নীচে নামানোর কথাবার্তা বা আমাকে ‘বােকা চাকর’ বলা আমার ঠিক পছন্দ হয় না। আমার শরীরে চুমু খেয়ে নরম হাতে আলতাে আদর করে ও বলে আমাকে তুই বল। আমি এখানে শুয়ে সামান্য একটা চাকরকে আমার শরীর দিয়েছি। কি সুন্দরভাবে আমি নীচে নেমেছি। আমার নাম ডায়ানে। তুমি আমায় ও নামে ডেকো না। তুমি স্পষ্ট করে বলো “মিষ্টি বেশ্যা” ।

‘মিষ্টি ডায়ানে।

‘না, বেশ্যা বলো। আমি নীচে নেমেছি, সেটা কথায় শুনতে চাই। না, ডায়ানে, ওসব খারাপ কথা আমি বলতে পারবাে না। আমার ভালােবাসা তােমায় নীচে নামিয়েছে বলছ বলে আমার খারাপ লাগছে।’

“তােমায় না, আমার। তুচ্ছ একটা ছেলে তুমি, নির্বোধ, সুন্দর, তােমার জন্যে আমার ভালােবাসা নীচে নামিয়েছে। আমি লেখিকা, বুদ্ধিজীবি। আমার নাম ডায়ানে ফিলবার্ট। আমার স্বামীর নাম হপফেহ। হাস্যকর নাম। আমি আমার কুমারী নামেই লিখি। উপন্যাস, মনস্তত্বভিত্তিক, কামনাবাসনা নিয়ে… হ্যা, ডালিং, ডায়ানে বুদ্ধিমতী। এবং কিভাবে তােমাকে বােঝাই যে বুদ্ধিমতী সব সময় কামনা করে নির্বোধের সঙ্গ। জীবন্ত, সুন্দর কিন্তু নির্বোধ তাকেই নির্বোধের মত ভালােবেসে আত্মনিগ্রহ এবং নিজের সঙ্গে বিশ্বাসঘাকতা। যে দেবতার মত সুন্দর কিন্তু বুদ্ধিহীন, তারই সামনে হাঁটু গেড়ে বসে নিজেকে নীচে নামানাের, নিজেকে অপমান করার এই আনন্দে এমনই নেশা…’

কিন্তু দেখতে ভালাে হওয়ার কথাটা বাদ দিলেও…ডীয়ার চাইল্ড, আমি ততােটা বােকা নই, অবশ্য আমি তােমার লেখা উপন্যাস বা কবিতা পড়িনি

“কি বললে? ডীয়ার চাইল্ড। ঝড়ের মতাে আমায় আকড়ে ধরে চুমু খায় ডায়ানে। পাগলের মত পরষাঙ্গ ও অণ্ডকোষ মথিত করে।

কি সুন্দর। মিষ্টি বেশ্যা’ বলার থেকেও ভালাে। প্রেমের শিল্পী, তুমি যা কিছু করেছো তার থেকে তােমার এই কথাটা আমায় বেশী আনন্দ দিয়েছে। আমি ডায়ানে ফিলবাট, লেখিকা বুদ্ধিজীবি—আমার পাশে উলঙ্গ হয়ে শুয়ে ছােট্ট একটা লিফটবয় বলছে, ‘ডীয়ার চাইল্ড’। সুন্দর আশ্চর্য সুন্দর। তুমি বলছো তুমি বােকা নও। তাই কখনও হয়। যেখানে সৌন্দর্য সেখানেই বুদ্ধির অভাব। কারণ মানুষের মনের দ্বারা মহিমান্বিত হয়ে উঠবে বলেই সৌন্দর্যের সষ্টি। এসাে, আমি তােমাকে দুচোখ ভরে দেখি। মসৃণ, পেশীবহুল বুক, সিল্ম হাত দুটো, সুদৃর পাঁজরাগুলো, সরু কোমর, পা দুটো হারমিসের পায়ের মতাে

‘থামাে, ডায়ানে। আমারই উচিত তােমার রুপের প্রশংসা করা ।

“ননসেন্স’ পুরুষদের এই একটা ভুল ধারণা। আমাদের মানে মেয়েদের শরীরের বাঁকগুলাে তােমাদের চোখে ভালাে লাগে বলে আমরা খুসী হই। কিন্তু দেবতার মত সুন্দর, সৃষ্টির সুন্দরতম মাষ্টার পীস, সৌন্দর্যের আদর্শ হল পুরুষের শরীর। তুমি, যুবক, হারমিসের মত পা। তুমি কি জাননা, হারমিস কে?

সত্যি কথা বলতে কি সুন্দরী ডায়ানে ফিলবার্ট এমন একজনকে শরীর দিয়েছে যে গ্রীক উপকথার চরিত্রের সঙ্গে পরিচিত নয়। কতাে নীচে নেমেছি আমি। হারমিস ছিল চোরেদের দেবতা।

আমি লজ্জা পাই। আমার মুখ লাল হয়ে ওঠে। তবে কি ও বুঝতে পেরেছে-

‘তুমি কি বিশ্বাস করবে যে আমি শুধু তােমাকে অর্থাৎ তুমি নামের একটা আইডিয়াকে, একটা সুন্দর জীবন্ত আইডিয়াকে ভালােবেসেছি। তুমি এটাকে ব্যাভিচার বলতে পারো, যৌনবিকার বলতে পারাে, অবক্ষয় বলতে পারে। কিন্তু আমি বয়স্ক দাঁড়িওলা, বুকে-লোম-ওলা পুরুষ, যাদের গুরুত্ব আছে, সেই সব পুরুষকে ভালােবাসিনা। আমার নিজের গুরুত্ব আছে। সুতরাং ওইসব পুরুষের সঙ্গে শােয়াই হবে যৌনবিকারের চিহ্ন। প্রথম থেকেই আমি তােমার মত কমবয়সী ছেলেদের পছন্দ করি। যখন আমার তেরাে বছর বয়স ছিল, তখন আমি চোদ্দ বা পনেরাে বছরের ছেলেদের ভালােবাসতাম। আঠারাের চেয়ে বেশী বয়সের ছেলেদের আমি ভালােবাসিনী। তােমার বয়স কত?

‘কুড়ি।

‘তােমাকে আরও ছােট দেখায়। আমার পক্ষে তােমার বয়স বড্ড বেশী।

বড্ড বেশী?

‘শােন, আমার এই ইচ্ছের সঙ্গে যে ব্যাপারটা জড়িয়ে আছে, তা হল, আমি মা হইনি, আমার ছেলে হয়নি। আমার ছেলে হলে, মানে মসিয়ে হপফোহ যদি ছেলের বাবা হতাে, ছেলেটা সুন্দর হত কিনা সন্দেহ। তােমার জন্যে আমার কামনা আমার সন্তান কামনার একটা পরবর্তিত রূপ। যৌনবিকার ? তুমি তাে তাই বলবে? কিন্তু রমনীয় স্তন তােমার তৃষ্ণা মিটিয়েছে, রমনীর গর্ভ তোমাকে আশ্রয় দিয়েছে। তুমি কি তােমার অবচেতনে মাতৃস্তনের কাছে মাতৃগর্ভের কাছে ফিরে যেতে চাওনা? কিন্তু কি তোমার স্ত্রীর মধ্যে তােমার মাকেই খোঁজা। যৌনবিকার! প্রেম মানেই যৌনবিকার, খুজে দেখাে, গভীরে যাও, প্রেমের আর কোন রুপ নেই। বয়স্কা রমণীর পক্ষে অল্পবয়সী ছেলেদের পছন্দ করার ব্যাপারটা ট্র্যাজিক, বেদনাদায়ক। বাস্তবে সম্ভব নয়, অন্তত বিয়ে করা। আমি ধনী ব্যবসায়ী মসিয় হপফেহকে বিয়ে করেছি। ওর ধনদৌলতের আশ্রয়ে আমি নিশ্চিন্তে উপন্যাস লিখতে পারি। তুমি আমার সঙ্গে যা সব করলে, মসিয় হপফিহে, ও সব পারেন না। অবশ্য থিয়েটারের একটা মেয়ের সঙ্গে ওসব করেন। ভালােমত পারেন কিনা, আমার সন্দেহ আছে। তবে ও ব্যাপাবে আমি উদাসীন। এই পৃথিবী, মেয়ে, পুরুষ, বিবাহ, ব্যাভিচার এসব ব্যাপারে আমি উদাসীন। আমি থাকি আমার তথাকথিত যৌবনবিকারের জগতে। আমার এই ভালােবাসার সুখ, দুঃখ, অভিশাপ নিয়ে। এই দৃশ্য পথিবীতে অল্পবয়সী পুরুষের শরীরের মত সুন্দর আর কিছু নেই। তােমার সুন্দর শরীর আমার কামনা জাগায়। আমি আমার বুদ্ধি ও বিবেক ভুলে তােমাকে চুমু খাই। তােমার সাদা দাঁতের ওপরে উধ্বত ঠোঁট দুটো হাসে। আমি চুমু খাই। তােমার পুরুষ বুকের বৃন্ত তারার মত। সেখানে ঠোট রাখি। তােমার বগলের কালাে চামড়ার ওপরে সােনালী লোম। সেখানে চুমু খাই। এসব কি করে হয়। নীল চোখ, ব্লণ্ড চুল, তুমি কোথা থেকে পেলে চামড়ার এই ব্রোঞ্জ রং? এই নেশার শেষ নেই। আমি মরে যাবাে কিন্তু আমার আত্মা তার পিপাসা নিয়ে চিরদিন তােমায় ভালােবাসবে। তুমিও বুড়ো হবে কিন্তু আমার মনে এই শান্তি থাকবে, তােমার প্রথম যৌবনের এই রুপ সৌন্দর্যের এই সংক্ষিপ্ত আনন্দ, এই সুন্দর চঞ্চলতা, এই চিরতন মহতে চিরদিন বেচে থাকবে।

তােমার কথাগুলাে কি অদ্ভুত ?

‘কেন? যাকে ভালােবেসো তাকে কবিতার প্রশংসা করলে তোমার অবাক লাগে?

আমি ছােট ছেলের মত মাথা নাড়ি। এতাে প্রশংসা এতাে আদর, এতাে কবিতা—আমি উত্তেজিত হয়ে উঠি। যদিও প্রথম আলিঙ্গনে আমি আমার সবকিছু দিয়েছি, আমার পৌরুষ আবার জেগে ওঠে। আমরা আবার শরীরে শরীর মেশাই। কিন্তু তা বলে আমি যে হীন, নীচ, সামান্য এবং ডায়ানে যে নীচে নামছে, সে কথা ভােলেনা আমার প্রেমিকা।

আমদি, আমাকে পিষে ফেলো। আমি তােমার দাসী। সামান্য একটা ঝিকে যেভাবে ব্যবহার করবে, সেইভাবে আমায় ব্যবহার করো। তাই আমার বগ।…আমাদ, আমাকে মারাে খুব মারাে, বেল্ট খােললা, চাবুক মারে, রক্ত ঝড়াও…

‘আমি সে রকম প্রেমিক নই, ডায়ানে

“কি লজ্জা! তুমি মহিলাকে সম্মান দেখাচ্ছো

‘শােনাে, ডায়ানে, একটি কথা স্বীকার করছি। তুমি যা চাইছো, তার বদলে কিছুটা ক্ষতিপূরণ হিসেবে। তােমার ব্যাগে একটা জুয়েল কেস ছিল। কাসটমসে তুমি আর আমি পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমি তােমার ব্যস্ততার সুযোগে তােমার জুয়েলারী চুরি করেছি।’

‘তুমি চুরি করেছে? তুমি চোর। কি আনন্দ, কি আনন্দ। আমি চোরের সঙ্গে শুয়ে আছি। শুধু সাধারণ একটা লিফটবয়েয় সঙ্গে না, একটা চোরের সঙ্গে।

‘আমি জানতাম, তুমি খুসী হবে। কিন্তু তখন আমি এতটা জানতাম না। জানতাম না যে আমরা একদিন পরস্পরকে ভালবাসবাে। নাহলে আমি তােমার টোপাজ-বসানাে জুয়েলারীয় হীরাগুলাে চুরি করে তােমায় দুঃখ দিতাম না।

“দুঃখ? আমার ঝি ওটা খুজেছিল বটে। আমি সেকেণ্ডের জন্যেও ওগুলাের কথা ভাবিনি। আমার স্বামী কাল আসছে। সে দারুণ বড়লোক। ওর কোম্পানী বাথপুলের টয়লেট তৈরী করে। সবারই দরকার হয় ওটা। হপফোর টয়লেট খুব চালু সারা পৃথিবীতে রপ্তানী হয়। বিবেকের দংশন এড়াতে স্বামী আমাকে এইসব জুয়েলারী দেয়। তুমি যা চুরি করেছ, তার থেকে তিনগুণ সুন্দর জিনিষ ও আমার দেবে। ওগুলাের চেয়ে অনেক বেশী দামী সেই চোর যে চুরি করেছে। চোরের দেবতা হারমিস! আমাদ?

‘বলো।

‘ভালো একটা আইডিয়া মাথায় এসেছে। তুমি এই ঘরে আমার গয়না চুরি করবে। আমার আরও গয়না আছে। কাপবােডের ডানদিকের ড্রয়ারে বুরাের চাবি। আমার নাইটড্রেসের নীচে গয়না। টাকাও আছে। বেড়ালের মত চুপি চুপি পা ফেলে ইদুর ধরাে। এইটুকু করবে না? তােমার ডায়ানের জন্যে?

‘ডীয়ার চাইন্ড কাজটা ঠিক ভদ্রলােকের মত হবে না। তােমার সঙ্গে এইসবের পর-

‘বােকা। এই হবে আমাদের ভালােবাসার অপুর্ব সমাপ্তি।

‘কাল যখন মসিয় হলফেহ, আসবেন—’

আমার স্বামী ? ও কি বলবে? আমি উদাসীন ভঙ্গীতে জানাবাে, ওখানে আসার সময় রাস্তায় সব চুরি হয়ে গেছে। বড়লােকের বউরা অসাবধান হলে ওসব হয়।’

চোর তাে সরে পড়েছে। স্বামীর ব্যাপারটা আমার ওপরেই ছেড়ে দাও-

‘ কিন্তু ডায়ানে, তােমার চোখের সামনে-

‘বেশ, আলো নিভিয়ে দিচ্ছি। এখন আমি তােমায় দেখতে পাচ্ছি না। শুধু শুনতে পাবো চোরের আস্তে পা ফেলার শব্দ, চোরের নিশ্বাসের শব্দ, চোরের হাতে গয়নার ঝনঝন আওয়াজ। যাও, ওঠো, আস্তে আস্তে খুজে নাও চুরি করো। এই আমার ইচেছ।

এবং আমি ওর আদেশই মানলাম। সাবধানে উঠে আমি সব নিলাম। চুরির কাজটা খুবই সােজা হল। টেবিলের ওপর ছোট্ট ডিশে ওর আংটি এবং মুক্তোর নেকলেস। অন্ধকারেও কাপবাের্ডে বুরাের চারি খুজে পেতে কোন ঝামেলা হল না আমার।

আমি প্রায় নিঃশব্দে ড্রয়ার খুললাম। কয়েকটা নাইটড্রেসের নীচে জুয়েলারী, পেনড্যান্ট, ব্রেসলেট, ব্রচ, বেশ কিছু টাকা। সব নিয়ে আমি ওর বিছানার পাশে এলাম। যেন ভদ্রতার খাতিরে। যেন ওর জন্যেই এইসব এনেছি।

‘বােকা, তুমি কি করছো ? এই তােমার ভালােবাসা ও তােমার চুরির লাভ। সব পকেটে পােরো, পােষাক পােরে পালিয়ে যাও। তাড়াতাড়ি পালাও, পালাও। আমি সব শুনেছি, চুরির সময় তােমার নিশ্বাসের শব্দ শুনেছি। এইবার আমি পুলিশে ফোন করবাে। কিম্বা না করাই ভালাে। তােমার কি মনে হয়? তুমি কতো দুরে ? কাজ শেষ ? প্রেমিক ও চোরের শরীর তখন লিফটবয়ের ইউনির্ফম, তাই না? তুমি আমার বাটন-হুক চুরি করােনিতাে?

না, এইতাে রয়েছে। বিদায়, আমদি। বিদায়, বিদায়, চিরদিনের জন্যে বিদায়। তােমার ডায়ানেকে ভুলাে না! স্মৃতিতেই তুমি বেচে থাকবে। অনেক বছর পরে, যখন তুমি-আমি দুজনেই কবরের আড়ালে, তখনও জেগে থাকবে স্মৃতি…তোমার ঠোট আমায় চুমু খেয়েছিল, পথিবীর কেউ জানবে না…বিদায়,

বিদায় প্রিয়তম…

Leave a Reply