মানুষ হিশেবে আমার অপরাধসমূহ – হুমায়ুন আজাদ

›› উপন্যাসের অংশ বিশেষ  ›› ১৮+  

…..আমার চোখ আবার দেলোয়ারের বউর চিবুক বা কাঁধের ওপর গিয়ে পড়বে? বা পড়বে আরো ভয়ঙ্কর কোনো জায়গায়;–নতুন বিয়ের পর বউদের ভয়ঙ্কর জায়গাগুলো থেকে মাঝেমাঝেই কাতান বেনারসি জর্জেট খসে পড়ে, খসে পড়লেই তাদের আরো সুন্দর দেখায়–এবং আমি আবার কাঁপন আর ঈর্ষা বোধ করবো?…..

…..বিয়ের পর বউদের মাংস আর চামড়ায় অদ্ভুত রঙ লাগে; তারা ঢলঢল করতে থাকে–এটা আমার ছেলেবেলায় দেখা, পরে আর আমি কোনো নতুন বউর দিকে ভালো করে তাকাতে পারি নি; দেলোয়ারের বউর চামড়ায়, আমি দেখতে পাই, সোনার হাল্কা প্রলেপ লেগেছে; তার কোমল আদুরে চর্বি চামড়া ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে।……

……মেয়েটি আমাকে টেনে তার ঘরে ঢুকোয়।

আমার বেশ ভালোই লাগছিলো, যদিও মেয়েটি আমার পকেটে হাত দিয়ে আরো পাঁচটি টাকা নিয়ে নিয়েছিলো; এবং কিছুতেই ব্লাউজ খোলে নি, যদিও আমি বারবার খুলতে বলছিলাম; যদিও মেয়েটি আমাকে তাড়াতাড়ি করতে বলছিলো, কিন্তু আমি তাড়াতাড়ির উপযুক্ত হয়ে উঠতে পারছিলাম না; এবং যদিও আমি ভালোভাবে পারি নি, আমি বাইরে পড়ে গিয়েছিলাম; তবু ভালো লাগার অনুভূতিটি আমার অনেকক্ষণ ছিলো। আমি একটি অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি বলে সুখ লাগছিলো;…..

…..একটি মেয়ের নাভি দেখে আমি ওই অতল গহ্বরে ঝাঁপিয়ে পড়তে চাই;–আমি দাঁড়িয়ে পড়ি। একটু দূরেই রবীন্দ্রনাথ ঝুলছে, দেখে আমার হাসি পায়;–মহৎ হওয়ার কী কষ্ট; আমি এভাবে কখনো ঝুলবো না। নাভির মেয়েটির পাশে ওই ছবিটিকে অশ্লীল মনে হয়; আমি ওদিকে আর তাকাতে পারি না; কিন্তু নাভি আমাকে টানতে থাকে। নাভি, নাভি, নাভি। ….

…..কিন্তু নাভিই আমাকে টানছে, নাভিই ডাকছে আমাকে। আমি নাভিটি কিনে ফেলি; লোকটি সুন্দরভাবে গুটিয়ে নাভিটি আমার হাতে তুলে দেয়।

ছার, নাবিডা বড় সোন্দর, একনম্বর মাল, লোকটি হাসে আর বলে, শোঅনের ঘরে টাঙ্গাইয়েন। আমি একটা টাঙ্গাইছি।…..

…..লোকটি বলে, নাবির নিচের দিকটা দ্যাহেন, চাইলেই পাগল অইয়া যাইতে ইচ্ছা অয়।

আমি নাভিটি নিয়ে হাঁটতে শুরু করি; নাভিটি ভয়ঙ্করভাবে নড়ে উঠছে, আমার হাত থেকে লাফিয়ে পড়ে যাচ্ছে; আমি নাভিটিকে বুকের সাথে জড়িয়ে হাঁটতে থাকি, এবং তার প্রচণ্ড আন্দোলন অনুভব করি। আমি কি নাভির নিচের দিকে চেয়েছি, আমি কি পাগল হয়ে গেছি? বোধ হয় নাভিটিকে আমি ধরে রাখতে পারবো না; নাভিটি আমার বাহু ভেঙে রাস্তায় উপচে পড়তে চাচ্ছে; আমি জোরে নাভিটিকে ধরে রাখি, কিন্তু নাভিটি আমার বাহুর ভেতরে ঢেউয়ের মতো আন্দোলিত হতে থাকে। নারায়ণগঞ্জের মেয়েটি তো এমনভাবে দোলে নি; সে তো আমার বাহু ভেঙে বেরিয়ে পড়তে চায় নি;–সে বারবার চেষ্টা করছিলো যাতে আমি বোতাম খুলতে না পারি। সে আরো দশ টাকা চাচ্ছিলো; আমি তাকে আরেকটি দশ টাকা দিয়েছিলাম, তারপরও সে বোতাম খোলে নি; আমাকে খুলতে দেয় নি। এই মেয়েটির নাভির নিচে কী আছে?……

……একটি পাতা খুলেই আবার দেখতে পাই–উর্বরতার দেবীরাই তখন ছিলো প্রধান দেবী, তাদের হটিয়ে আসে পুরুষ দেবতারা; বিশাল কালো পাথরটি ছিলো উর্বরতার দেবী আফ্রোদিতির মূর্তি, যার যোনিদেশে চুমো খেতে ভক্তরা, কেননা মাটি যেমন জন্ম দেয় শস্য তেমনি নারীর ওই প্রত্যঙ্গ থেকে বেরিয়ে আসে রহস্যময় সন্তান। …..

…..ডলি আমার বউ; আমি টান দিয়ে ডলির লাল শাড়িটি খুলে মেঝের দিকে ছুঁড়ে ফেলি, আমার মনে হয় অন্য কেউ শাড়িটি ছুঁড়ে ফেললো, নোংরা হয়ে গেলো শাড়িটি; তার ব্লাউজ খুলতে গিয়ে অন্য কারো হাতের সাথে আমার আঙুলের ঘর্ষণ লাগে; ওই হাত অনেক আগে থেকেই খুলছে ডলির ব্লাউজ; সে-হাত বারবার আমার আঙুলগুলোকে ফিরিয়ে দিতে থাকে; আমি ডলির ব্লাউজ টেনে চারপাঁচ টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলি, ছেঁড়ার শব্দ মধুর লাগে আমার; ডলির কম্পমান চাঁদের আলোয় আমার চোখ অন্ধকার হয়ে আসে; ওই অন্ধকারে ঝাঁপিয়ে পড়তে গিয়ে দেখি অন্ধকারের ভেতরে বসে আছে অন্য কেউ; আমার চোখে আরো গাঢ় অন্ধকার নামে; ডলিকে আর ডলি মনে হয় না, নদীর ওপর দীর্ঘ চর মনে হয়; ওই চরে আমি যেখানেই যেতে থাকি, সেখানেই দেখি দেলোয়ার ঘর বানিয়েছে, চাষ করেছে, লাঙ্গল চালিয়েছে, ধান পাট সরষে তিল যব কাউন কুমড়ো শিম বুনেছে; দিঘি কেটেছে, জল টলমল করছে; এ-জমি থেকে আমন তুলেছে, ওই জমি থেকে আউশ; পুবের জমি থেকে মশুর, পশ্চিমের জমি থেকে কলই; আমি ডলির বাহু থেকে বগল থেকে নাভিতে ছুটতে থাকি; লাল তিল থেকে ধূসর তিলে দৌড়োতে থাকি-প্রত্যেকটিই দেলোয়ারের; হেঁটে হেঁটে। বাহুতে গিয়ে ডলিকে জিজ্ঞেস করি, দেলোয়ার কি এখানে ছিলো;–হ্যাঁ; হেঁটে হেঁটে বগলে গিয়ে জিজ্ঞেস করি, দেলোয়ার কি এখানে ছিলো;–হ্যাঁ; গড়াতে গড়াতে নাভিতে গিয়ে ডলিকে জিজ্ঞেস করি, দেলোয়ার কি এখানে ছিলো;–হ্যাঁ; হামাগুড়ি দিয়ে জংঘায় গিয়ে জিজ্ঞেস করি, দেলোয়ার কি এখানে ছিলো;–হ্যাঁ; পায়ের তালুতে গিয়ে ডলিকে জিজ্ঞেস করি, দেলোয়ার কি এখানে ছিলো;–হ্যাঁ; শত শত মাইল পেরিয়ে সোনার খনিতে গিয়ে ডলিকে জিজ্ঞেস করি, দেলোয়ার কি এখানে ছিলো;–হ্যাঁ; আমি অন্ধ হয়ে যেতে থাকি, অন্ধত্বের ওপারে এক অদ্ভুত জ্যোৎস্নাই শুধু আমার চোখ দুটিকে। ম্লানালোকিত করে রাখে; ওই অন্ধ আলোর ভেতরে আমি ডলিকে দেখার চেষ্টা করি, দেখতে পাই না; আমার মনে হয় ডলি আমার স্ত্রী নয়, এ-শরীর যার সে আমার স্ত্রী নয়; অন্য কারো; আমি নিঃশব্দে ডলির শরীর থেকে খসে পড়ি।…..

Leave a Reply