…..ক্লান্তি এসেছে চোখে। কিন্তু ঘুমোবার কোনো উপায় নেই তাঁর। অধিরথ গেছে কৃষ্ণদ্বৈপায়নকে আনতে। তিনি জানেন সে আসবেই। মাতৃ আজ্ঞা অবহেলা করার লোক নয় সে। তাছাড়া তারও দায় আছে বইকি। তিনি একা একা সে দায় বহন করবেন কেন? মনটা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। যেন সে দায় সে অস্বীকার করেছে বলে তাঁর মনে হতে থাকে। ফেনিয়ে ওঠা ভাবনাগুলো তাঁর মধ্যে একটা ঝড় দাঁড় করায়। কেউ নেই তাঁর জন্য। তিনি একা। অনেককাল একা! না না, অনেককাল নয়, আসলে চিরকাল একা। জেলেবস্তির মেয়ে তিনি। অপূর্ব শরীর তাঁর এখনো। ত্বকের টান এখনো নষ্ট হয়নি। যেন খুব যত্নে কেউ পালিশ করেছে শ্বেত পাথরে। ছন্দে ছন্দে বানিয়েছে তাঁর শরীর। বর্তুল উরুদ্বয়, এখনো ক্ষীণকটি। গুরু নিতম্বে এখনো আঁট হয়ে বসে হারটি। তিনি চললে শুধু চাবির গোছা দুলতে থাকে অবিরল। তার সঙ্গে সঙ্গত করে গলার চন্দ্রহার। দুটি স্তনের মধ্যে কোনো রকমে পরে থাকে। এখনো তাঁর দুই স্তনের মধ্যে খুব একটা ফাঁক তৈরী হয়নি। কম বয়সে যখন পুরুষ স্পর্শে স্তনের উপরে থাকা হালকা রোম দাঁড়িয়ে যেত তখনতো আরো কম ছিল ফাঁক। পদ্মের ডাঁটি তার মধ্য দিয়ে গলতে পারতো না। শুধু পরাশর নাকি, কত কত পুরুষ মরেছে ওই ফাঁদে।…..
……পিতা বা মাতার কেউ একজন এদেশীয় বাদামী চামড়ার অধিবাসী। কিন্তু সে সব কিছু ছাপিয়ে প্রখর হয়ে উঠছে মুনির ব্যাক্তিত্ব। এই শীতের সকালে অনাবৃত উর্ধাঙ্গ নিয়ে সুঠাম মুনি তার কাছে কী চান?
-প্রণাম মুনে! কী আদেশ?
খুব ধীর চোখে তাকে দেখে নিলেন মুনি। দেহের প্রতিটি অংশ স্পর্শ করে গেল তাঁর দৃষ্টি। সত্যবতী দেখলেন দৃষ্টিতে স্পষ্টতই কামনার আভাস আছে, কিন্তু লালসা নেই। যেন কোনো মূর্তি দর্শন করছেন মুনি। একসময় সেই দৃষ্টি থামলো তার নাভিতে। নিটোল গোল নাভি তার। গভীরও বটে।
উত্তর দিলেন না মুনি। ধীরে কিন্তু নিশ্চিত পদক্ষেপে তার নৌকার গলুই-এর দিকে এগিয়ে এলেন। নৌকায় চড়লেন। তারপরে বললেন,
-আমি একা যাত্রী হব!
সত্যবতী কিছু বলার আগেই শান্ত স্বরে তিনি বললেন,
-তোমাকে আমি কামনা করি যুবতি! আমি বাশিষ্ঠ্য পরাশর।
নামটা সত্যবতীর জানা যে খুব এমন নয়। মুনি-ঋষিদের নিয়ে তার আলাদা কৌতুহল নেই। এমনকি রাজা-রাজরা নিয়েও পিতারা যে আলোচনা মাঝে মাঝে করেন তা সে আলস্যভরেই শোনে। মনে থাকেনা খুব একটা। পরাশর নামটা তার চেনা না হলেও বুঝতে অসুবিধা হল না ইনি নিশ্চই বেশ কেউকেটা কেউ একজন। নাহলে এত নিশ্চিত স্বরে কেউ নিজের পরিচয়জ্ঞাপন করেনা। কিন্তু কামনা শব্দটা তার কাছে খুব ভারী লাগছে। কিছু কিছু গল্প সে শুনেছে এর আগে। গ্রামের দিদিদের কাছে, মাসী বা বৌদিদের কাছে। এরা সব সাঙ্ঘাতিক শক্তিশালী হন। দেশের রাজারাও এদের সমীহ করে চলে। জঙ্গলে আশ্রম করে থাকেন, আর মাঝে মাঝে লোকালয়ে আসেন। কখনো খাবার, কখনো নারী, কখনো রাজার দরবারে যাবার জন্য। তখন অনেক সময়েই পথের কোনো নারীকে এদের পছন্দ হয়, তার সঙ্গ করেন। কেউ বাঁধা দেবার নেই এতে। এ হল প্রথা। মুনি সংসর্গ করলে পরে সেই নারীর সন্মান কমেনা। তাছাড়া নারী সংসর্গের পরে এঁরা কিছু না কিছু এমন দান করে যান যাতে তার প্রভুত উপকার। এমনিতেই তাদের সমাজে যৌন সংসর্গ নিয়ে খুব একটা ছুত-মার্গ নেই। তবে সন্তান না হওয়াই বাঞ্ছনীয়। হলে সমস্যা হল তখন কন্যাকে বিয়ে দিয়ে যে পণ পাওয়া যায় তার পরিমাণ কমে যায়। সেই কারণেই সন্তান সম্ভাবনা সকলে এড়িয়ে চলে। তাই তাদের গ্রামের ধাই বা বয়স্থা মহিলারা শিখিয়ে দেয় কিভাবে এবং কোন সময়ে সন্তান সম্ভাবনা থাকে। সত্যবতীর এখন সন্তান সম্ভাবনার সময়। সেটা ছাড়াও আরেকটা অসুবিধা আছে। মুনি কি কিছুই টের পাচ্ছেন না? তার শরীরে সারাক্ষণ লেগে আছে মাছের গন্ধ। রসিকেরা দূর থেকেই রসিকতা করে চলে যায়, কারণ এই গন্ধ নিয়ে সহবাস করা তাদের পক্ষে সম্ভব না। একমাত্র জেলের ঘরের ছেলে পারবে। কিন্তু জেলের ঘরের ছেলে তার নৌকায় আসবেনা। সকলেই জানে সে, সত্যবতী জেলের ঘরে যাবেনা। বাকী চাষা-ভুষো, কুমোর-কামার বা ছোট ব্যবসায়ীরা দূর থেকে নজরের সুখ করে, চাট্টি যৌনতা মেশানো রসিকতা করে, কিন্তু ছুঁতে চায়না। সেটাও কি মুনির নজরে পড়ছে না?
মুনির নজরে সবই ছিল। ছিল তার প্রতিষেধকও। মহর্ষি চ্যবনের এই আবিষ্কারটি তাঁর বংশেও রয়েছে। তিনি নিজে ভেষজ-র রহস্য সন্ধানে ব্যাপৃত। সুতরাং, সত্যবতীর মৎস্যগন্ধ কেটে গেছিল। কিন্তু তাতে বিপদও ঘনিয়েছিল। প্রথমত, গর্ভধারণ করেছিল সে। দ্বিতীয়ত তার কাছে পুরুষের আসাটা অনেক সহজ হয়ে গেছিল। জেলেরাজ জানতেন এই কন্যা এমনই কিছু ঘটাবে একদিন। এ তাঁর কুড়িয়ে পাওয়া কন্যা। কিন্তু জন্মলক্ষণ বলছে এ মেয়ে যে সে ঘরের নয়। কাজেই জেলের সমাজে একে ঘর দেওয়া যায়না। কিন্তু অন্য সমাজের সঙ্গে তাঁর বিশেষ চলাচলও নেই। এই নৌকার পারানীগিরির ভাবনা সেই কারণেই। কেউ যদি কোনোদিন দেখে ফেলে একে, কোনোদিন দেখে বোঝে এ এখানকার জন্য নয়, তাহলেই এর গতি হবে। কিন্তু তা বলে মুনি পরাশর? হ্যঁ¡, খোঁজ তিনি নিয়েছেন। ইনি মুনিশ্রেষ্ঠ, বেদ বিভাজনও করেছেন। তাছাড়া মহর্ষি বশিষ্ঠ্যের বংশ বলে কথা। রাজা রাজরাও এঁকে দেখলে আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে বাধ্য, নইলে রাজার আসন নিয়েও টানাটানি পরে যেতে পারে। তবু সংসার ইনি করবেন কেমন করে? আজ এখানে তো কাল সেখানে, কোনো ঠিক নেই গতিবিধির। সমগ্র দেবখন্ড থেকে এই দোয়াব সর্বত্র এঁর গমনাগমন। অনেক শিষ্য, অনেকানেক স্থানে শাখা-আশ্রম রয়েছে। মন মানে না। এই হাতে কি মেয়ে দেওয়া যায়? যদি মেয়ে নিজেও কুশল হত ধর্ম-কর্মে তাহলেও কথা ছিল। মনুর চতুর্বর্ণ বিভাজন সমাজে যতই দুর্বল হোক, সংস্কৃত জ্ঞান বিহীন কন্যা ঋষি পরাশরের ঘর করবে এতটাও সম্ভব না। আচরণ থেকে দর্শন কিছুই জানেনা এ মেয়ে। তাহলে?
সমাধান পরাশরই করে গেলেন। পুত্র জন্মানোর আগে জেলেরাজকে জানিয়ে দিলেন দায় তাঁর। এই কন্যা তাঁর মনোহরণ করেছে। কামকুশল শুধু নয়, এর মধ্যে রয়েছে জানার আকাঙ্খা। যতবার মুনি এসেছেন ততবার নতুন নতুন প্রশ্নের ভাঁড়ার খুলে বসেছে মেয়ে। পরাশর ন্যুনতম সংস্কার দিয়েছেন একে।…..
……সে ছিল পান্ডুর আমল। তার মৃগয়ার লোভ সুবিদিত। আসলে হস্তিনাপুর নগরে প্রজাপুঞ্জের সামনে আড়ম্বরে ভোগের একটা সীমা ছিল। বাড়বাড়ি করলে কৌরব গণের সভা সমালোচনা করতে পারত। গণের শক্তি তখনো খর্ব হয়নি ততটা। কিন্তু এই নির্ঝঞ্ঝাট অরণ্যভোগ আরো রোমাঞ্চের উপকরণ যোগাতো। শবর, পুলিন্দ, কিরাত রমণীরা শারীরিকভাবে বেশ আকর্ষণীয়। সংস্কৃতভাষী সমাজের মধ্যে রমণীর রমণীয়তা যত আছে ততটা বন্যতা নেই। এখানে আছে। এরা বাঘিনীর মত। আসলে নারী-পুরুষের বিভাজন এখানে ততটা প্রভাব ফেলেনি বলেই সম্ভবত এরা অনেক বেশী স্বছন্দ কামকলাতে। নগরে কিম্বা গ্রামে সংস্কৃতভাষী সমাজে নারীকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হয়। তার আচরণ সর্বদাই খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে। কাজেই তার মধ্যে জড়তা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। এখানে সেই জড়তাহীনতার টানেই আসত পান্ডু। কৌরবদের দখলে যতগুলো অরণ্য আছে সবেতেই তার প্রমোদকানন ছিল।…..
…..মহারাজ শান্তনুর ভোগলিপ্সু স্বভাব প্রবল ভাবেই প্রভাব ফেলেছিল বিচিত্রবীর্য্যের উপরে। কুমার বয়সে প্রভূত ভোগ তাকে যৌনরোগবিশিষ্ট করে তোলে। মাতা সত্যবতী সেদিন ব্যাসকে ডেকেছিলেন বংশরক্ষার খাতিরে। গাঙ্গেয় তাঁর শপথ বজায় রাখার জন্য নিজেকে নিয়োগে রাজী হননি। কিন্তু তিনিই পরামর্শ দিয়েছেন মাতাকে সেদিন ব্যাসকে আহ্বান করার জন্য। ব্যাস এসেছিলেন। এর আগে তাঁর নারী সংসর্গের অভিজ্ঞতা ছিল না। তিনি ব্রহ্মচর্য্য পালন করেছেন চিরকাল। কিন্তু মাতৃআজ্ঞা পালন করতে বাধ্য তিনি। তখন তিনি জেনেছিলেন সংস্কৃতভাষী সমাজের নারীর অবস্থা। দুই কন্যাই তাদের চরিত্র এবং সুনাম অক্ষুণ্ন রাখা একদিকে,অন্যদিকে কৌরব বংশের কঠিন শাসনে বাধ্য হয়েছিলেন তাঁর সঙ্গে রমণে,কিন্তু সে অবশ্যই স্বচ্ছন্দ ছিল না। তাদের দুর্ভাগ্য এই যে তাদের সন্তান ধৃতরাষ্ট্র এবং পান্ডুর জন্মকালীন অসুস্থতা তাদের কলঙ্কিত করেছে। কিন্তু এ তাদের অপরাধ নয়। ব্যাস পরে অনেক ভেবে দেখেছেন এ হতে পারে একমাত্র বিচিত্রবীর্য্যের থেকে রোগ সংক্রমণের কারণে। কিন্তু মাতা একথা জানতেন কিনা তা তিনি এখনো বোঝেন নি। তবে সন্তানদ্বয়ের জন্মের পরে তিনি মহর্ষি চ্যবনের গোষ্ঠীর সহায়তা নিয়েছিলেন আত্মচিকিৎসায়। সংক্রমণ তাঁকে বয়ে যেতে যেন না হয় এই কারণে। কিন্তু হস্তিনাপুরের প্রতাপ এমনই যে এই সন্তানদ্বয়ের অক্ষমতার দোষ গিয়ে পরলো ওই রাজকন্যাদ্বয়ের স্কন্ধে। সত্যি, কী মহিমা প্রচারের! তবে তিনি সেই কালে একবারই প্রকৃত সঙ্গমের স্বাদ পেয়েছিলেন এক দাসীর কাছ থেকে, যার গর্ভে জন্মেছে তাঁর সেই সন্তান যাঁকে নিয়ে তিনি কিছুটা গর্ব বোধ করতেই পারেন। বিদুর তাঁর মন কেড়েছে গুণে-বিনয়ে-স্বভাবে।…..
…..ঋষি দুর্বাসার প্রতি তাঁর প্রেম ছিলনা। কিন্তু সমাজ গঠন এমন যে দুর্বাসাকে নিবৃত্ত করা তাঁর পক্ষেও সম্ভব ছিল না। শরীরের টান ছিল। দুর্বাসা বহুনারী সঙ্গে অভ্যস্ত এবং কুশলী পুরুষ। তাঁর শরীরি টান পৃথার কাছে কমও ছিল না। তার থেকেও বড় ছিল বাধ্যতা। দুর্বাসার শর্তই ছিল তিনি যতদিন কুন্তিভোজের আশ্রয়ে আছেন ততদিন তাঁকে কোনো কিছুতেই অপারগ বলা যাবে না। সেই শর্তের মধ্যে পৃথার শরীর অবগাহন পড়ে কিনা তা পৃথা স্বাভাবিক সঙ্কোচের বসে রাজা কুন্তিভোজের কাছে জানতে চাইতে পারেন নি। অন্যান্যরা শরীরকে ছুঁয়েছে, কিন্তু এভাবে ছানতে সাহস করেনি। তারা তো আর কেউ দুর্বাসার মত মহাশক্তিশালী নয়।…..
…..রাত্রির প্রথম প্রহর অতিক্রান্ত হতেই পৃথা এসে দাঁড়ালেন বিদুরের সামনে। অন্ত:পুর থেকে ঘোমটা দিয়ে দাসীর ছদ্মবেশে এসেছিলেন বিদুরের কাছে এই মন্দিরেই। পাণ্ডুও যৌন-রোগগ্রস্ত। কোনো উপায় নেই তার উপশমের। কোনো না কোনো বনাঞ্চলে কোনো না কোনো অসতর্ক সঙ্গমে এ রোগ তাঁকে ধরেছে। মুক্তি নেই। রাজ্যে থেকে যদি এই রোগগ্রস্ত হয়ে দেহত্যাগ করেন তাহলে পাণ্ডুর অসন্মানের শেষ থাকবেনা, শেষ থাকবেনা কুরু কূলের অগৌরবের। বারেবারে একই কারণে যদি সিংহাসন রাজশূন্য হয় তাহলে কুরুসভাও তাকে অনুমোদন করবেন না। বিচিত্রবীর্য্যের ক্ষেত্রে নিয়োগ প্রথার সাহায্য নেওয়া হয়েছিল বটে, কিন্তু সে সময় ছিল আলাদা। তাছাড়া তার সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন স্বয়ং গাঙ্গেয় এবং পিতা মহাঋষি ব্যাস। এবারে? ব্যাসকে আর আমন্ত্রণ জানানো যাবেনা, পুত্রবধুদের সঙ্গে সঙ্গমের জন্য। অন্য কেই বা হতে পারে? মাতা সত্যবতীর সঙ্গে ব্যাসের রক্তের সম্পর্কের জন্য তবু মেনে নেওয়া গেছে এই ব্যবস্থা। এবারে কে? ওই উচ্চ অবস্থান আছে এবং বংশের সঙ্গে জড়িত এমন কেউই নেই। সেক্ষেত্রে কী হবে? এই দোয়াবের অন্যত্র রাজার শাসন নিয়ে বেশ সমস্যা চলছে। বহু জনপদই চাইছেনা রাজার শাসন। তারা চায় গণের হাতে ক্ষমতা। তাদের ইন্ধন যোগাচ্ছে শ্রমণরা। তারাও মনে করে গণই একমাত্র প্রজাপুঞ্জের স্বার্থরক্ষা করতে সক্ষম। কুরুসভাও যে সেই দাবী তুলবেনা তার নিশ্চয়তা কোথায়? এই সব ভেবে চিন্তেই গাঙ্গেয় এবং পিতা অনুমোদন করেছেন এই অবস্থান। কিন্তু এই কি সব?
না, এই সব নয়। এর বাইরেও আছে আরেকটি জটিল কারণ। সেই কারণ ওই নারী। আর বিদুর নিজেও জড়িয়ে আছেন সেই কারণের সঙ্গে। ওই নারীর শরীরে রয়েছে তাঁর বীজ। সদ্য জানা গেছে সেকথা। মহারাজ পাণ্ডু জানেন কি না তা জানা হয়নি বিদুরের! …..
……তার ব্যাখ্যায় আর যান নি পরাশর।স্থানীয় আসব পান করে ততক্ষণে তাঁর রক্তচক্ষু।তিনি সত্যবতীকে নিজের বুকে টেনে নিয়েছিলেন আচমকা।সবলে পিষে দিয়েছিলেন তাঁর সুউন্নত স্তন।ঠোঁটে কেটে বসেছিল তাঁর দংশন।সত্যবতী প্রস্তুত ছিলেন না।দ্বৈপায়ণের জন্মের এক বছর অতিক্রান্ত হয়ে গ্যাছে।এই এক বছর তাঁদের মধ্যে দেহজ সম্পর্ক ক্বচ্চিৎ ঘটেছে।প্রাথমিক বিহ্বলতা কাটিয়ে সত্যবতীর রক্তেও বেজেছিল রণদামামা।বাঘ ও বাঘিনীর সঙ্গমের শব্দে জেগে উঠেছিল দিগ্বিদিক।কুটিরের অন্য প্রান্তে শুয়ে থাকা দ্বৈপায়ন সেই শব্দে জেগে ওঠার আগেই তাকে নিয়ে চলে গিয়েছিল সত্যবতীর দাসী।সে দিকে তাকানোর ফুরসতও ছিল না তাঁদের তখন।পরাশর যখন নিজেকে স্থাপন করলেন সত্যবতীর মধ্যে ততক্ষণে নারীর পাপের প্রশ্ন হারিয়ে গ্যাছে মহাশূন্যে।…..
……নিয়োগ প্রথার পক্ষে বলছিলেন দেবব্রত।ঋষি দীর্ঘ্যতমার উপাখ্যান বয়ান করছিলেন।সেই উপাখ্যানই আবার একই প্রশ্ন নিয়ে এসেছিল তাঁর সামনে।উতথ্য দেবগুরু বৃহষ্পতির ভ্রাতা।তাঁর স্ত্রী মমতা।একদিন বৃহস্পতি কামতাড়িত দশায় গর্ভিণী মমতাকে আশ্রমে প্রবেশ করে দেখেন এবং সঙ্গম প্রার্থনা করেন।স্ত্রীজাতি সেই আমলে কারোর অধীন ছিল না।তবুও মমতা গর্ভাবস্থায় সঙ্গমে অসম্মত হলেন।বৃহষ্পতি ধর্ষণ করেন তাঁকে।গর্ভস্থ পুত্র অন্ধ অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেন।সেই পুত্র বেদবিদ্ দীর্ঘ্যতমা।…….
…..প্রদ্বেষীকেই ভার নিতে হয়েছিল সংসার এবং পুত্রদের।তিনি দীর্ঘ্যতমাকে অমান্য করতে থাকেন।তখন দীর্ঘ্যতমাই বেদজ্ঞদের মধ্যে এই নিয়ম আনতে চাইলেন যে স্ত্রী এক পুরুষের অধীন থাকবে।সেই পুরুষের জীবিত অবস্থায় বা মৃত্যুর পরেও অন্য পুরুষ সহবাস করতে পারবেন না।কোনো সম্পদের অধিকার স্ত্রী-র নয়।বেদবিদ্ দীর্ঘ্যতমা ঋক্বেদের নারীর অধিকারকেই বাতিল করে দিলেন ক্রোধে।অপস্তম সুক্তকে নস্যাৎ করে দিলেন।কিন্তু দীর্ঘ্যতমা তত ক্ষমতাবানও ছিলেন না।তাঁর বিধান গুরুত্ব পেলো না তখন।বরং প্রদ্বেষী তাঁর পুত্রদের সহায়তায় এই ঋষিকে হত্যার উদ্দেশ্যে ভাসিয়ে দিলেন নদীর জলে।রাজা বলি তাঁকে উদ্ধার করলেন।নিঃসন্তান রাজা নিজ রাণী সুদেষ্ণার গর্ভে সন্তান উৎপাদনের জন্য নিয়োগ করলেন দীর্ঘ্যতমাকে।সুদেষ্ণা প্রথমে পাঠিয়েছিলেন নিজের দাই-কে।তাঁর গর্ভে পুত্র উৎপাদনের পর বলিকে ঋষি জানালেন এ পুত্র তাঁর।বলির নয়।কারণ সুদেষ্ণা ছলনা করেছেন তাঁর সঙ্গে।তখন আবার বলি সুদেষ্ণাকে পাঠালেন ঋষির কাছে।সুদেষ্ণার গর্ভে ঋষি অঙ্গ,বঙ্গ,কলিঙ্গ,পুন্ড্র,সুহ্ম নামের সন্তান উৎপাদন করলেন।সেই সন্তানরাই পরবর্তীকালে এতদ অঞ্চলের অধিপতি হলেন এবং এই নামের দেশ স্থাপন করলেন।…..
….উদ্দালকপুত্র শ্বেতকেতুর আখ্যান।বালক শ্বেতকেতুর সামনে দিয়েই মা-কে নিয়ে চলে গিয়েছিল আরেক ব্রাহ্মণ সঙ্গমের জন্য।উদাসীন পিতা বলেছিলেন এই গো ধর্মই আচরণীয়,তাই দোষের কিছু নেই।শ্বেতকেতু মানেন নি।সারাজীবন গো সম্পদের অধিকারী ব্রাহ্মণ এবং রাজাদের একত্রিত করেছিলেন এর বিরুদ্ধে।স্ত্রী এবং সম্পদের উপর পুরুষের বংশানুক্রমিক অধিকার তিনি সুনিশ্চিত করেছিলেন।…..
…..শান্তনু সটান তাকিয়ে ছিলেন তাঁর এই হবু মাতার দিকে। সুঠাম, ঋজু, ব্যাক্তিত্বশালিনী এই কন্যার দিকে। কতই বা বয়স? তাঁর চেয়ে একটুই বড় হবেন বোধহয়! সর্বাঙ্গে একটা মুক্ত প্রবাহ খেলা করে যাচ্ছে। অনম্র স্তন, ক্ষীণ কটি, ভারাক্রান্ত জঘন ও নিতম্ব। মুখের মধ্যে সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য নাসিকা। তাঁদের মত খাড়া নয়, কিন্তু উচ্চ ভাব আছে। তার সঙ্গেই আছে ধারালো অস্ত্রের মত ভাব। চোখদুটি টানা টানা। আঁখিপল্লবে ভারাক্রান্ত যেন। ভাস্করের হাতে তৈরী কন্যা। কন্যাও সপাটে তাকিয়ে ছিলেন তাঁর দিকে। দৃষ্টিতে কিছুটা কৌতুহল, আর কিছুটা ঔদ্ধত্য। কে হে ছোকরা আমাকে দেখ?…..
….অসুরগুরু বৃহস্পতির শিক্ষা কুন্তী পেয়েছিলেন ঋষি দুর্বাসার কাছ থেকে। দুর্বাসা তাঁর প্রথম যৌবনেই বলেছিলেন তাঁর স্বাধীনচিত্ততা বজায় রাখতে গেলে তাঁকে জানতে হবে রাজনীতি। যে কদিন ছিলেন সঙ্গমের পরবর্তী কাজ ছিল তাঁকে অসুরনীতির শিক্ষা দেওয়া।….
……এই জন্যেই তো কুন্তীও কুমারীদশাতেই তাঁর পালক পিতার প্রতি প্রতিশোধ নেবার আশায় তাঁর সঙ্গে শয্যায় গমন করছেন! তিনি তো জানেন যে কন্যাকে ঋষি দুর্বাসা শয্যায় গ্রহণ করবে সেই কন্যাকে অন্য ব্রাহ্মণে ভবিষ্যৎ-এ কামনা করা থেকে বিরত থাকবে? ……
…..হস্তিনাপুর প্রাসাদের কাহিনী হল এক ঋষিকে হরিণ ভেবে তাঁর স্ত্রী-র সঙ্গে সঙ্গমকালে পাণ্ডু হত্যা করেন। জনশ্রুতি হল ঋষিকে হত্যা করে অমিতাচারী পাণ্ডু চেয়েছিলেন ঋষিপত্নীর দখল। ঋষিপত্নী তার শোধ নিয়েছিলেন পাণ্ডুকে যৌনব্যাধিগ্রস্ত করে। সত্যবতী জানেন যে ঋষিপত্নী যদি নিজে রোগগ্রস্ত আগে থেকেই না হয়ে থাকেন তাহলে একাজ সম্ভব না। আগে থেকে রোগ থাকলে তিনি ঋষির আশ্রয়ে পালিত হতেন না। যা হতে পারে, অমিতচারের ফলে কোনো না কোনো রমণীর দ্বারা পাণ্ডুর মধ্যেও রোগসংক্রমণ ঘটে। দীর্ঘ্যকাল ধরেই নিশ্চই রোগগ্রস্ত থাকায় তিনি ঋষিপত্নীতেও সঙ্গত হতে পারেননি। অন্যদিকে কুন্তীর সঙ্গে বিদুরের সম্পর্ক যেভাবে বেড়েছে তাতে পাণ্ডুর সঙ্গে কুন্তীর যৌন সম্পর্ক অবশ্যই অনেকদিন ধরেই নেই এও ধরে নেওয়া যায়। থাকলে একটি নখক্ষতও কি পাণ্ডুর চোখে পড়তো না কখনো? না, এ হওয়ার নয়। অন্য নারী বা পুরুষ সংসর্গ করলে শরীরে এবং আচরণে কিছু না কিছু পরিবর্তন ঘটবেই, যা নারী ও পুরুষ চিরকাল পরস্পরের থেকে গোপন রাখতে পারে না। তার উপরে কুন্তীর শরীর অবশ্যই সম্পৃক্ত হয়েছিল বিদুরের বীজে। সেই চিহ্নকেও পাণ্ডু অনুধাবন করেননি তাই বা কি করে হয়!
একমাত্র সম্ভব যদি কুন্তী পাণ্ডুকে বনবাসের শুরুতেই বোঝাতে সক্ষম হয় যে এছাড়া মহারাজ পাণ্ডুর বংশধারা রক্ষার সম্ভাবনা নেই। এ কাজে কুন্তী অবশ্যই মুনি-ঋষিদের সাহায্য পেতে সক্ষম-ও। ঋষি দুর্বাসার অঙ্কশায়িনী খুব মূর্খ হবার কথা না। তিনি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানেন যে উচ্চ বুদ্ধির সংস্পর্শে এলে কিছু না কিছু বিকাশ অবশ্যই হয় মানব মস্তিষ্কের। কুন্তীরও হয়েছে। হয়েছে যে তার জ্বলজ্যান্ত পাঁচ পাঁচটি প্রমাণ নিয়েই তো সে ফিরেছে হস্তিনাপুরে। ……
…..মাদ্রী এই খেলাতেই মেতেছিল একদিন। রোগগ্রস্ত পাণ্ডুকে নিয়ে কুন্তীর সঙ্গে সেই খেলাতে সে জিততে চেয়েছিল। পাণ্ডুকে বশ করে কুন্তী ক্রমাগত পুরুষসঙ্গ করে চলেছে। জন্ম দিয়ে চলেছে সন্তানের। কুন্তীর সন্তান জ্যেষ্ঠ। রাজ্যাধিকারের প্রশ্নটি মীমাংসিত। কিন্তু কেন? বারেবারে কেন হার হবে মাদ্রীর? ঋষি বা রাজন্যের আতিথ্য করা এক পালিতা রাজকুমারী তাঁর চেয়েও সুখী হবে? তিনি শল্যাধিপতির ভগ্নী, তাঁকে বিয়ে করতে রীতিমত পণ দিতে হয়েছিল পাণ্ডুকে, গাঙ্গেয় সে পণ মেনে নিয়েই বিয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন, সেই মাদ্রী, মদ্রসুন্দরী পরাজিত হবে কেন বারেবারে? শোধ নেবার খেলায় মেতেছিলেন তিনি। এক পুরুষের সাহচর্য্য পেয়েছিলেন। সেও কুন্তীই আয়োজন করেছিল পাণ্ডুর আদেশে। তাতে কি শরীর শান্ত হয়? কুন্তী বহু সংসর্গ করবে আর তিনি এক?
মাদ্রী বলতে পারেননি শরীর চায় বলে তিনি পুরুষ চান। পাণ্ডুকে সে কথা বলা যায় না। কুন্তীকেও না। একটি বার মাত্র সঙ্গমেই তো গর্ভ নিশ্চিত হওয়া অতি দুষ্কর কার্য্য। বারংবার সঙ্গমের মাধ্যমে সে হয়ে থাকে। যতবার সঙ্গম ততবার শরীরে জল পড়বে। শরীর বড় কাঁদে যে! একজনের সংসর্গ তো গর্ভ ধারণ করার পরেই ফুরিয়ে গিয়েছে। সন্তানের জন্মের কিছুকাল পর থেকে শরীর যে আবার কথা শুনছে না। কুন্তী মানবে না জেনেও মহারাজ পাণ্ডুকেই লালায়িত করেছেন শরীর দিয়ে। তাঁর যৌবন দিয়ে উত্তপ্ত করেছেন। রাজবৈদ্যের আদেশ ছিল মহারাজের উত্তেজনা নিষিদ্ধ। তা মৃত্যুর দরজার দিকে ঠেলে দেবে তাঁকে। জেনেও মাদ্রী তাঁকে স্তন, জঘন, নিতম্ব দিয়ে আঘাত করেছেন। পাণ্ডু যখন উত্থিতলিঙ্গ তখন সরে গিয়েছেন অসুখের দোহাই দিয়ে। অনেক কাকুতি-মিনতিতে রাজী হয়েছেন অঙ্কশায়িনী হতে। কিন্তু রমণে রাজী হননি। তার সঙ্গে শর্ত রেখেছেন আগে করে দিতে হবে তাঁর কাজ। তাঁর আরো পুরুষ চাই। চাই আরো সন্তান। তাঁর সন্তান সংখ্যা বাড়ুক কুরুকূলে। কুন্তীকে ছাপিয়ে যেতে চান তিনি। পাণ্ডু, কামতাড়িত রাজা গিয়েছিলেন কুন্তীর কাছে এই কর্মে। আবারো আদেশ করেছিলেন কুন্তীকে। কিন্তু কঠোর হয়েছিলেন কুন্তী। বংশরক্ষা হয়ে গিয়েছে। তার জন্য আছে যুধিষ্ঠির। রাজ্যাধিকারেও সে থাকবে। তাকে রক্ষা করার জন্য বলবীর্য্য সম্পন্ন দুই কুমার ভীমার্জুন রয়েছে। মাদ্রীর সান্তনার জন্য ফুটফুটে দুই কুমারের আগমন ঘটেছে। নকুল-সহদেব। তবে আর কেন? অধিক সন্তানের জন্ম হলে কূলে সম্প্রীতি হানি হতে পারে। এমনিতেই যুধিষ্ঠিরের অধিকার নিয়ে সমস্যা তৈরী করতেই পারেন ধৃতরাষ্ট্র। এর উপরে নিজের ঘরে অশান্তি ডাকা কেন? তাছাড়া এই সংবাদ কি সন্মান বাড়াবে মহারাজ পাণ্ডুর? স্ত্রী-র কামেচ্ছাকে সন্তুষ্ট করতে নিয়োগ? ধিক্কারের শেষ থাকবে হস্তিনাপুরে? কি ব্যাখ্যা দেবেন এতবার নিয়োগের? শাস্ত্র কি সমর্থন করবে এ কাজ? কাম বড় বিচিত্র! ততোধিক বিচিত্র যৌনতার ইচ্ছা। পাণ্ডু, ভোগে আসক্ত আজ-ও। কিন্তু অপরের ভোগ নিবৃত্তিতে অক্ষম। ব্যাধিগ্রস্ত। তবু মাদ্রী তাঁকে শরীর দিয়ে জ্বালাচ্ছে। তিনি মাদ্রীর কাছে অসহায়। নিজের কাছেও। আবার এই নারীর যুক্তির সম্মুখে দাঁড়াবার কোনো পথ নেই তাঁর। নতমস্তকে ফিরে গিয়েছিলেন মাদ্রীর কাছে। কুন্তী অনুমতি দিচ্ছেন না।
অনুমতি? রাজা চাইছে রাণীর অনুমতি? পুরুষ চাইছে নারীর অনুমতি? ধিক্ পুরুষ! ধিক্কার মাদ্রী নিজেকেও দিয়েছেন। দিয়েছেন নিজের ভাগ্যকে। পাণ্ডুকে ক্লীব বলে গালাগালিও দিয়েছেন। বিফল মনোরথ পাণ্ডু, সামরিক শক্তিহীন পাণ্ডু, রাজসিংহাসন ত্যাগী পাণ্ডু ক্রমান্বয়ে সন্তপ্ত, হতাশ এবং শেষে ক্রুদ্ধ হয়েছেন। মাদ্রী যখন তাঁর শরীরের নিকটে এসে তাঁকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে শুইয়ে দিয়েছে তখন সকল কিছু রূপান্তরিত হয়েছে রমণেচ্ছায়। মাদ্রীর নেশাসক্তি বেড়েছে রাজধানী ত্যাগের পর থেকে আরো। যত নিজেকে নিয়ে হতাশ হয়েছেন তত বেড়েছে নেশা। তত বেড়েছে তাঁর বিভিন্ন বিক্ষেপ। এমনকি যে দুই সন্তানের জন্ম হয়েছে সেই দুই সন্তানকেও ভাল করে দেখভাল করেন না। বেশীরভাগ সময়েই ফলের থেকে তৈরী আসব পান করে থাকেন। সেই মত্ততা তাঁকে যেন আরো বেশী করে ক্ষিপ্ত করেছিল সেই দিন। পাণ্ডু, যে পেশীশক্তিতে একদিন কোদণ্ডে জ্যা রোপণ করতেন, মত্ত হস্তীর মাথায় এমন বাণ মারতেন যে সেই বাণ তার মস্তিষ্ক ভেদ করে চলে যেত নরমতম অংশে, তার মৃত্যুর কারণ হত, সেই পেশীশক্তিকে আবার অনুভব করলেন। গদাযুদ্ধে যেমন বিরোধীকে নতজানু করতে গিয়েও মহাবল বহু সময়ে গদা ফেলে দিয়ে খালি হাতে তাকে মাটিতে ফেলে নিষ্পেষণ করেছেন তার গোটা শরীর, তেমনই এক শক্তির স্রোত জেগেছিল তাঁর ভিতরে। নরম রমণীর শরীরকে নিষ্পেষণ করে তাকে বিছিয়ে নিয়েছিলেন শোবার জন্য। তার অন্তর্গত হবার জন্য। মাদ্রীর তখন ছুটে গিয়েছে নেশা। কিন্তু কামতাড়িত পুরুষ আর হস্তীর মধ্যে ফারাক কি? অনুরোধ-কাকুতি-মিনতি কিছুই শোনেননি পাণ্ডু। প্রবেশ করেছিলেন মাদ্রীর গর্ভে। কোনো সন্তান উৎপাদন করেননি পাণ্ডু, যদিও প্রচুর ভোগ করেছেন শরীর। সকল ভোগ তাঁর বয়ে গিয়েছে সময়ের ধারায়। চিহ্ন নেই তার আর কোনো। সন্তান নেই তাঁর। মাদ্রীকে গর্ভবতী করেই এর শোধ নেবেন। বিধিই হোক, কি মানুষ, যেই তাঁর দুর্দশার কারণ হোক, সকলকেই তিনি দেখিয়ে দেবেন কেন তিনি মহারাজ পাণ্ডু! রাজবৈদ্য কি ঈশ্বর নাকি? মাদ্রীর শিৎকার তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে যখন তখনই যেন এক বিষ্ফোরণ ঘটে গেল তাঁর ভিতরে। ঋষি সৌকল, অথর্বাচার্য্য বলেছিলেন মৃতদেহ পরীক্ষা করে যে আক্রান্ত হয়েছিল পাণ্ডুর হৃৎপেশী। মাদ্রীর শরীরেই লুটিয়ে পড়েছিলেন পাণ্ডু। না, বীর্য্যবদ্ধ করতে পারেননি গর্ভ। তাঁর শুক্র শুকিয়ে গিয়েছে রোগের প্রকোপে। রাজবৈদ্য বলেছিলেন এ কথা। পাণ্ডু বিস্মৃত হলেও তাঁর শরীরের বিষ্মরণের উপায় ছিল না। ভোলেনি মাদ্রীর শরীরও। রোগ প্রবেশ করেছিল সে শরীরেও।…..
সূত্রঃ মহাভারত – শুদ্ধসত্ত্ব ঘোষ