………..পিকু এক টানে কিশাকে খাটে ওর পাশে শশাওয়ালাে। তারপর উঠে, বস। মৃতদেহের উপর মাংসলােলুপ দুর্গন্ধ হায়নার মত। চাদের স্পষ্ট আলােয় জানালার শিকের ছায়াগুলাে খাটের উপর এসে ” পড়েছিলাে। সাদা বিছানার উপরে, মেঝেতে ; কালাে লম্বা লম্বা ছায়াগুলােকে দেখে কিশার মনে হল, ঘরটা, খাটটা; যেন একটা গরাদ দেওয়া মস্ত খাঁচা। আর সেই খাঁচার মধ্যে ও আর পিকু। একজন শরীর সর্বস্ব লােক, যে ওকে খেতে-পরতে দেওয়ার বিনিময়ে, লাইফ ইন্সিওরেন্সের মােটা প্রিমিয়াম দিয়ে ওর ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করে কিশাকে এ জীবনের মত বন্দী করে ফেলেছে নিজের হারেমে।
অদ্ভুত এই হারেম !
এক-বেগমের হারেম। অনাড়ম্বরের; বড় হেলাফেল্লার। এখানে ফুলের কিংবা আতরের গন্ধ নেই, ধুপ জ্বলে না, নৃত্য গীত বাদ্যকাব্য সাহিত্য সবই এখানে মানা। | মন বিবর্জিত একটা শরীর, শুধুই একটা শক্ত-সমর্থ শরীর, বিযুক্তম একটি নারী শরীরের নরম নিভৃত গহ্বরে কী যেন খুঁজে চলেছে। একই যন্ত্রের মত। ক্রমাগত।………খাটটা থেকে একটা অস্বস্তিকর কিচ কিচু, আওয়াজ, উঠছিল। অরিদা জেগে থাকলে নিশ্চই শুনতে পাচ্ছে ; বুঝতে পাচ্ছে ।কী লজ্জা! ঠোটটা বিরক্তিতে কামড়ে ধরল কিশা। শরীরটাকে যথা সম্ভব আলগা করে এলিয়ে দিল। খাজনা দিচ্ছে বগীকে। মিষ্টি কথা, একটু ফুল, একটু | হাসি, দুগাছি সস্তা চুড়ির বিনিময়ে মেয়েরা সর্বস্ব দিতে পারে একথা জানে . না এই বােক। বর্গী। কেবলই শাসায় কেবলই চোখ রাঙায় ; ধান ফুরালেও ক্ষমা নেই।………
………..অরি বলল, বােস। কিশা গিয়ে পাশের চেয়ারে বসল।
কিশার গায়ের সাবান আর পাউডারের গন্ধে বারান্দা ভয়ে গেল। অরি ভাবল, কিশার নিজের গন্ধটা কেমন জানা হলাে না; হবে না। বাইরের রাতের নিমফুল, করোঞ্জ আর মহুয়ার গন্ধ কিশার গায়ের সঙ্গে মিশে রইল। নাইটিটা গােড়ালির দু ইঞ্চি উপরে এসে থেমে গেছে। নীচে : আর কিছুই পরেনি কিশা। তবু সুডৌল স্তনের দুধলী মসৃণ আভাস সেই কাশফুলের মত উজ্জ্বল স্নিগ্ধ আলােতে স্নিগ্ধতর হয়ে ফুটে উঠেছে দুটি স্বপ্নিল : ম্যাগনােলিয়া গ্ল্যাণ্ডিফোর ফুলের মতন।…..
……..অরি ভাবল, তাহলে ও কিশাকে চায়। কিশার সম্পূর্ণ শরীরকেই।
কিশা বলল, আপনি হাসলেন যে!
অরি বলল, এমনিই। তারপরই বলল, দেখি, এদিকে তাকাও তো, বলেই হঠাৎ দুহাতে ওর মুখ ধরে আবার ওর দুচোখে চুমু খেলাে। ক্ষণিকের জন্যে মুখ রাখলাে ওর স্তনসন্ধিতে। কিশার শরীরে কালবৈশাখী উঠল সঙ্গে সঙ্গে। ওর নাকের পাটা ফুলে উঠল, চোখ লাল হয়ে এল আবেশে।
হঠাৎ অরি বলল, ঘরে যাও কিশা। পিকু আছে। টুবুল আছে . তোমার। তুমি আমার কেউ নও। কেউ হবে না কখনও। যাও, ঘরে যাও।
কিশা চেয়ার ছেড়ে অপমানে উঠে পড়ল।…….
……অরি মুখ নামিয়ে, অনেক চেষ্টা করে বলেই ফেলল কথাটা : কখনও কোনােদিন সুযােগ হলে, তােমায় আমি চান করাবাে নিজে হাতে একদিন। দেবে তাে? করাতে?
কিশা অন্যমনস্কতা কাটিয়ে খিলখিল করে হেসে উঠল। ‘বলল কী পাগল। কী পাগল, আমার হাসি পাচ্ছে।
একটু থেমে বলল, এমন আমি শুনিনি কোথাও। এমনকি পড়িও নি।
অরি বলল, দেখাে, আমি কী সুন্দর করে চান করাবাে তােমাকে। সম্ভবনের করেঞ্জ ফুলের তেল মাখাবাে তােমার সারা গায়ে। গন্ধরাজ লেবু গােল করে কেটে ফেলে রাখবাে বাথটাবের জলে। কঁচা-হলুদের সঙ্গে শ্বেত-সর্ষের তেল আর খসস আতর মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে দেবে। তােমার হাতের, পায়ের গােলাপি নখ কেটে দেবাে, গােলাপ জলে ভিজিয়ে নিয়ে। তারপর কেয়া পাতার মধ্যে উষা রঙের পাকা ধুধুলের খেয়া রেখে তাতে চন্দনের গুড় আর সাদা গােলাপের পাপড়ি মিশিয়ে তােমার গা ঘষে দেবাে। প্রথম-বৎসা সাদা গাইয়ের শ্রাবণী পূর্ণিমার দুধে রক্ত-পদ্মর রেণু মিলিয়ে তােমার দুই স্তনে ধারা বওয়াব। প্রথম ভােরের আলােলাগা রক্ত-পদ্মর মত হয়ে উঠবে তােমার দুটি স্তনের রঙ। তুমি দেখাে, কেমন করে চান করাই আমি তােমাকে।……..
……..সে গন্ধ এখন অন্য পুরুষের নাকে কামড়ালে পাবি। সেই পুরুষদের অরি চেনে, জানে। তারা রুমিরই স্ট্যাণ্ডার্ডের। রুমি তাদেরই যােগ্য। ছিঃ ছিঃ। কুকুর, বেড়াল ; শেয়াল সব, অরির ভালােবাসার শব ঠুকরে খাচ্ছে। ওরা স্ক্যাভেঞ্জার। এঁটো-করা, বাসি, মরা-মানুষীর মাংস খায় ওরা। ওদের ঐ গন্তব্য। এটুকুই খা, খা, ” তােরাই কুরে খা। তােরা তাে মাংস খেয়েই বেঁচে থাকিস। মাংসর আড়ালে যে উষ্ণতা থাকে, মাংসল স্তনের আড়ালে যে হৃদয় বলে একটা ব্যাপার থাকে তার খোজ তােরা রাখিস না। তােরা খা রুমিকে— কামড়াকামড়ি করে খা, ছিড়ে খা শকুনের মত রুমির স্তনের নিটোল বোঁটা, নাড়িভুড়ি, নাক, চোখ জরায়ু। জটায়ুর প্রেতের মত তােরা তােদর নখদন্তে ঠুকরে খা। যা। খাগে যা।………..