প্রথম মানবী – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

›› গল্পের অংশ বিশেষ  

……….ভােরবেলা সেই নারী প্রবেশ করল আদিম উদ্যানে। ………আস্তে আস্তে পা ফেলে হাঁটছে সেই রমণী। তার শরীরে কোনাে আবরণ নেই, আভরণ নেই। সুদীর্ঘ চুল পিঠ ছাড়িয়ে নেমেছে মসৃণ নিতম্বে। দুই বাহু ও উরুসন্ধিতেও নবীন তৃণের মতন রােম। নাসিকা তীক্ষ্ণ, হৃদ্বয় গাঢ়, অক্ষিপল্লব সূক্ষ্ম । তার বক্ষের দুটি ঢেউ এবং কটিদেশের খাঁজ কোনাে শিল্পীর নিপুণ হাতে গড়া। ঢেউ দুটিতে ভাসছে স্ফুটনােন্মুখ দুটি কুঁড়ি। চাঁদের অর্ধ কলার মতন নাবি। রমণীটি যেন ঈষৎ উন্মনা, কোনােদিকেই স্থির দৃষ্টিপাত করছে না।…….

………পুরুষটিকে দেখা মাত্র রমণীটির আশিরপদনখ শিহরিত হল। তারপর জ্বালা। তারপর উত্তাল বক্ষস্পন্দন। তার ইচ্ছে হল তৎক্ষণাৎ ঝড়ের মতন ছুটে যেতে। ওই কঠিন বক্ষে তার কোমল বক্ষ মেলাতে। তার শরীরের প্রতিটি অণু-পরমাণু ওই মানুষটির সঙ্গে লীন হতে চায়।………

……..নদীর খাতে ওরা দুজনে কিছুটা আশ্রয় পেয়েছে বটে, কিন্তু কিছুক্ষণ ধারাপাতের পর ওদের শৈত্যবােধ হল। পাথরে হেলান দিয়ে বসেছিল পাশাপাশি, একসময় আদম বলল, লিলিথ, তুমি কাঁপছ? তুমি শুয়ে পড়, আমি তােমাকে আচ্ছাদিত করে থাকব।

পরম যত্নে সেই পুরুষ তার সঙ্গিনীকে শীতের বাতাস এবং বৃষ্টির ছাঁট থেকে রক্ষা করার জন্য সর্বাঙ্গ আবৃত করে রইল। বুকে বুক, মুখে মুখ, হাতে হাত, উরুতে উরু।

একটু পরেই মিলিয়ে গেল শীত বােধ। এককভাবে সমস্ত নারী ও পুরুষেরই শরীরে শীত আশ্রয় নিতে পারে, কিন্তু দুজনে আলিঙ্গনাবদ্ধ হলে শীত পলায়ন করে। তখন সেই দুই শরীরের দখল নেয় উষ্ণতা।

ওদের এই অভিজ্ঞতাই ছিল না, দুজনেই বিস্মিত হয়ে পরস্পরের নাম ধরে ডেকে উঠল, আদম! লিলিথ! উষ্ণতা ক্রমশ সঞ্চারিত হতে লাগল শরীরের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে। আগুনের মতন এতে দহন নেই, আছে পরস্পরের মধ্যে মিলিয়ে যাবার জন্য আশ্লেষ। একসময় আম অনুপ্রবেশ করল লিলিথের গভীরে। স্বয়ং প্রকৃতি তাদের নির্দেশ দিতে লাগলেন। মনুষ্য জীবনে যে এত সুখ আছে তা জানত না দুজনের কেউ। একসময়ে এই মিলনখেলা সাঙ্গ হবার পর শ্রান্তভাবে পাশাপাশি শুয়ে রইল এই নারী ও পুরুষ! অবিলম্বেই ঘুম এসে গেল।

এরপর কয়েকটি দিন, সকাল নেই, দুপুর নেই, সন্ধ্যা নেই, রাত্রি নেই, যে-কোনাে সময়, যে-কোনাে স্থানে ওরা মেতে উঠতে লাগল এই মিলনখেলায়। সমস্ত পশু-পাখি, বৃক্ষলতা, কীটপতঙ্গের মধ্যেও যে অনবরত এই মিলনখেলা চলছে, তা আগে ওরা লক্ষই করেনি। এবার সকৌতুকে ওদের লক্ষ করতে লাগল প্রাণীকুল।

দিন কেটে যাচ্ছে এক রােমাঞ্চকর উন্মাদনায়। এখন বৃষ্টি, রৌদ্র, ঝড়, বিদ্যুৎ সবই বেশি বেশি ভালাে লাগে। সময় বড়াে মােহময়। একদিন সেই নদীর খাতে, যেখানে নরম তৃণভূমিতে ওরা এখন একটি শয্যা নির্মাণ করেছে, আদম লিলিথের হাত ধরে মিলনের আহ্বান জানাল।

লিলিথ আদমের বুকে মুখ ঘষতে ঘষতে বলল, সখা, অনেকবার আমরা মিলনসুখ পেয়েছি, আমি নীচে, তুমি ওপরে।। আজ আমরা বিপরীত বিহার করি না কেন? তুমি আগে শয়ন করাে।

আদম বিস্মিতভাবে বলল, আমি নীচে থাকব? কেন? লিলিথ বলল, দেখি না, কেমন লাগে?……..

Leave a Reply