প্রতিদান – তিমিরেন্দু রায়চৌধুরী

›› গল্পের অংশ বিশেষ  

হঠাৎ চোখাচোখি। সারা শরীর কেঁপে উঠল অমিতের। পুলকে নয়, ভয়ে । আড়চোখে একবার তাকাল সুকন্যার দিকে। গাদাগাদি ভিড়ের মধ্যে শরীরটাকে ধনুকের মত বেকিয়ে, ডান হাতে হ্যান্ডেল ধরে দাঁড়িয়ে আছে সুকন্যা। ওর স্লিভলেসের ভিতর থেকে পৈতেটা উকি মারছিল। প্রায় পঁয়ত্রিশ টাকা খরচা করে নিউ মার্কেট থেকে এই জাপানী ব্রেসিয়ারটা কিনেছিল সুকন্যা। সেদিন সঙ্গে অমিতও ছিল কিন্তু সুকন্যা অমিতকে দোকানের ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। বলেছিল, ‘তোমার পাশে নাড়িয়ে দোকানীর সামনে এই সব জিনিস কিনতে আমার লজ্জা করবে না বুঝি ?
এ দিন হলে যেভাবেই হোক সুকন্যাকে ওর অন্ধ্র স্খলনের ব্যাপারটা টের পাইয়ে দিত অমিত। এর আগে দিয়েওছে বহুবার। অমিতের, কেন জানে না, মনে হয়, মেয়েরা ইচ্ছে করেই ব্রা দেখাতে ভালবাসে। অন্তত ওর নিম্ফোম্যানিয়াক কলেজের বান্ধবী শুভ্রা তো বাসতই। মেয়েরা দেখাতে ভালবাসে, আর অমিত কি দেখতে ভালবাসে না-?
আলবাৎ বাসে। কিন্তু নিজের বৌ-এর বেলায় নয়। অন্তত এই প্রকাশ্য দিবালোকে এক বাস লোকের মধ্যে দাঁড়িয়ে তো নয়-ই। বৌ-এর ব্যাপারে অমিত সাঙ্ঘাতিক পসেসিভ, অন্য সব ব্যাপারে যতই আধুনিক হোক না কেন। পার্টি-টার্টিতে অমিত ইচ্ছে করেই সুকন্যাকে নিজের বাহুসংলগ্না করে রাখে। মাঝে মাঝে সুকন্যাই এতে বিরক্ত হয়। ‘আরে বাবা, পাঁচ বছর প্রেম করে বিয়ে করা বৌ-এর উপরেও এতটুকু বিশ্বাস নেই ?”
বিশ্বাস আছে, তবু ভয় হয়। ওদের এই সাত বছরের সম্পর্কে সুকন্যা এমন কিছু করে নি, যাতে ওর সম্পর্কে অমিতের বিন্দুমাত্র অবিশ্বাস জন্মাতে পারে। কেবল ওর ছোটবেলার প্রেমিক অভিজিতের কথা তুললে সুকন্যার মুখটা তখনও লাল হয়ে যায়। অবশ্য ছোটবেলায় ও রকম দু-চারটে খুচরো প্রেম সবাই করে। অমিতও করেছে। অভিজিতের নাম করলেই সুকন্যা, ঝুমরুর নাম করে। বলে “লেকে বসে ঝুমরুর সঙ্গে তোমার ফষ্টিনষ্টির কথা আমি ভুলে গেছি ভেবেছ?” তারপর দুজনেই হাসে, হাসতে হাসতে আঁচল ধরে ওকে কাছে টেনে নিয়ে আসে অমিত, সুকন্যার বুকে বুনো মোষের মত মাথা ঘষে।
কিন্তু আজ সুকন্যার দিকে তাকাবারও সাহস হচ্ছে না অমিতের। ওর দিকে তাকাতে গেলে আবার যদি চোখাচোখি হয় ? কিংবা দুম করে যদি জিজ্ঞাসাই করে বসে, কেমন আছেন? আর ভাবতে পারছিল না অমিত। গলা শুকিয়ে কাঠ। একটু জল খেতে পারলে ভাল হত। একবার মনে হল, সুকন্যাকে ডেকে নিয়ে বাস থেকে নেমে পড়বে। বলবে এইভাবে গরু-ছাগলের মত দমবন্ধ অবস্হায় বাসে যেতে ভাল লাগছে না ওর।