পাষাণী চাপা – দেবকুমার বসু

›› সম্পুর্ণ গল্প  ›› ১৮+  

উৎসঃ নষ্টনারী গ্রন্থ

দেড় বছরের চুক্তিতে জার্মানির কাজটা সেরে দীপঙ্কর যখন কলকাতায় ফিরল, তখন ও একা নয়—সঙ্গে জার্মান বউ স্টেলা আর ছ’মাসের শিশুকন্যা। স্বনামধন্য স্থপতি দীপঙ্কর চৌধুরী কলকাতার বনেদি পরিবারের ছেলে। মধ্য কলকাতায় ওর নিজস্ব ফার্ম ‘চৌধুরী। কনসালট্যান্ট আর্কিটেক্টস’-এর নাম সব প্রােমােটাররাই জানে। সরকারি ফাইলেও ওর সংস্থার নাম অন্তর্ভুক্ত।

হামবুর্গ-এর মেয়ে স্টেলার সঙ্গে ওর পরিচয় হয় ফ্রাংকফুর্টে। একই অফিসে ওর সহযােগী হিসেবে কাজ করত স্টেলা। প্রথম দর্শনেই স্টেলা ওর প্রেমে পড়ে। দীপঙ্করের চেহারাটা রাজপুরুষের মতন। যেমন গায়ের রঙ, তেমন মজবুত স্বাস্থ্য। প্রায় ছ’ফুট লম্বা দীপঙ্করের কালাে কোঁকড়ানাে চুল, প্রশস্ত কপাল, খাড়া নাক আর চিবুকের গভীর খাজ যে-কোনও যুবতীকেই আকর্ষণ করবে। বিদেশিনী স্টেলার অনুরােধেই ওরা লীভ-টুগেদার করেছিল। | গর্ভবতী হবার পর স্টেলা দীপঙ্করকে বরাবরের জন্যে জার্মানিতে থেকে যেতে অনুরােধ করে। স্বামী হিসেবে ও দীপঙ্করকে পেতে চায়। কিন্তু বুড়াে বাবা-মাকে দীপঙ্কর কথা দিয়েছিল, দেড় বছর পরে ফিরে এসে নিজের ফার্মেই বসবে। ও স্টেলাকে বিয়ে করে কলকাতায় আনার প্রস্তাব দিল।। | একটা উইক-এন্ডে ওরা হামবুর্গ গেল স্টেলার বাবা-মার সঙ্গে দেখা করতে। স্টেলার বাবা-মা সব শুনে ওদের বিয়েতে সম্মতি দিলেন। কিন্তু স্টেলা মনস্থির করতে পারে না। জার্মানি ছেড়ে বাকি জীবনটা ইন্ডিয়াতে কাটাতে ও দ্বিধাবােধ করে। আবার দীপঙ্করকে ছেড়ে সন্তানসহ অন্য পুরুষের সঙ্গে বাকি জীবনটা কাটানাের কথাও ভাবতে পারে না। দোটানায় পড়ে গেল স্টেলা।

যথাসময়ে স্টেলার বাচ্চা হল। দীপঙ্করের মেয়াদও ক্রমশ ফুরিয়ে আসতে লাগল। অবশেষে স্টেলা অনুভব করল—দীপঙ্করকে ছেড়ে ও থাকতে পারবে না। দীপঙ্করের জন্যে ও সবকিছুই ছাড়তে পারে—জার্মানি কেন, দরকার হলে দীপঙ্করের সঙ্গে ও অন্য গ্রহে যেতেও রাজি। ভালােবাসার অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে ও জড়িয়ে গিয়েছে দীপঙ্করের সঙ্গে। | অবশেষে জার্মান দূতাবাসে একটা চাকরি নিয়ে দীপঙ্করের সঙ্গে বাচ্চা নিয়ে স্টেলা চলে এল কলকাতায়। সুন্দরী শ্বেতাঙ্গিনী পুত্রবধূ আর ছ’মাসের নাতনিকে দীপঙ্করের বাবা-মা সাদরে বরণ করে নিলেন। স্টেলা ওঁদের ব্যবহারে অভিভূত হয়ে গেল।

কলকাতায় ফিরেই দীপঙ্কর পুরনাে গাড়িটা বিক্রি করে দিয়ে দুটো নতুন গাড়ি কিনল। প্রিন্স আনােয়ার শা রােডে একটা তিন কামরার বড় ফ্ল্যাট কিনে শিফট করল সেখানে। বাচ্চাটাকে দেখভালের জন্য একটি মেয়েকে রাখা হল। মেয়েটির বয়স বছর পনের। ছিপছিপে রােগা চেহারায় অপুষ্টির ছাপ। কালাের ওপর সুশ্রী। মেয়েটি খুবই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। যাদবপুরের বস্তি অঞ্চল থেকে সকাল সাতটার মধ্যে আসে। নাম আরতি। স্টেলা ওকে আদর করে নাম দিয়েছে মান্টি।

সকাল সাড়ে ন’টার মধ্যে দীপঙ্কর ও স্টেলা বেরিয়ে যায়। সকালের প্রাতরাশ স্টেলা নিজেই তৈরি করে। দুপুরে মান্টির খাবারের ব্যবস্থা করা থাকে। বাচ্চাটাকে স্নান করিয়ে খাইয়ে-দাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে নিজের জন্য দু-মুঠো ফুটিয়ে নেয় মান্টি। স্নানের পাটটা ভােরবেলা সেরে আসে ও।

সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ স্টেলা ফেরে। রাতের ভােজন-পর্বটা স্টেলার কাছে একটু বেশি গুরুত্ব পায়। কেননা দুপুরের লাঞ্চ দুজনেই অফিসে সেরে নেয়। স্টেলাকে ডিনারের সবকিছু গুছিয়ে দিয়ে সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ ফিরে যায় মান্টি।। | দীপঙ্কর সাতটার পরে ফিরলে দুজনে হাত-পা ছড়িয়ে একটু ওয়াইন পান করে। বাচ্চাটাও সারাদিন পরে বাবা-মাকে পায়। ন’টার পরে স্টেলা বাচ্চাটাকে দীপঙ্করের কাছে রেখে কিচেনে ঢােকে। রাত দশটার পরে পরেই ওরা শুয়ে পড়ে।

নির্বিঘ্নেই দিন কাটছিল। সমস্যা দেখা দিল বছর দুয়েক পরে। মান্টিকে নিয়ে। তখন ভালাে-মন্দ খেয়ে মান্টির দেহে বেশ চেনাই এসেছে। মান্টির জামাকাপড়, সাজ-গােজ, কিছুটা রূপচর্চা ওকে অনেকটা বদলে দিয়েছে। যৌবনের সুস্পষ্ট ছাপগুলাে চোখ টানে। কিছুদিন ধরে ওদের বস্তির একটি ছেলে মান্টির পিছনে লেগেছে। গায়ে পড়ে কথা বলতে চায়, পিছু নিয়ে বিরক্ত করে। একদিন ওকে ফলাে করে আনােয়ার শা রােডের ফ্ল্যাটটাও দেখে গিয়েছে। মান্টির মায়ের সঙ্গে দেখা করে ওকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। মান্টির মা বিধবা মানুষ। মান্টির রােজগারেই পেট চলে। মান্টির মা ব্যাপারটা মেমসাহেবকে জানাতে বলে।

সব শুনে স্টেলা ব্যাপারটা নিয়ে দীপঙ্করের সঙ্গে আলােচনা করল। স্টেলা মান্টির জীবনের দায়িত্ব নিতে আগ্রহী। যদি কোনও ছেলে ওকে বিয়ে করতে চায়, সেটা কোনও অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। তবে ছেলেটাকে বােঝা দরকার। পছন্দ হলে স্টেলা সব দায়িত্ব। নিয়ে মান্টির বিয়ে দেবে। ঠিক হল, দীপঙ্কর একদিন মান্টিকে নিয়ে ওদের বস্তিতে গিয়ে ছেলেটাকে ধরবে। পরের রবিবার দুপুরে দীপঙ্কর মান্টিকে নিয়ে বস্তিতে গিয়ে ছেলেটাকে ধরে ফেলল। দীপঙ্করকে দেখে ছেলেটা দারুণ ঘাবড়ে গেল। সে দীপঙ্করের হাতে-পায়ে ধরে তার কৃতকর্মের জন্যে ক্ষমা চাইল। অনুরােধ করল, তাকে যেন পুলিশের খপ্পরে না দেওয়া হয়।

দীপঙ্কর তাকে অভয় দিয়ে তার আগমনের কারণ জানাল। বস্তির কিছু বাসিন্দাদের সাক্ষী রেখে দীপঙ্কর ছেলেটিকে কিছু কিছু প্রশ্ন করল। ছেলেটির নাম ভােলানাথ কর্মকার। বয়স বাইশ বছর। ভ্যান-রিক্সা চালায়। বাড়িতে বিধমা মা ছাড়া আর কেউ নেই। সে মান্টিকে আন্তরিকভাবেই ভালােবাসে এবং বিয়ে করতে চায়।

দীপঙ্করের ছেলেটিকে খারাপ লাগেনি। কথাবার্তায় বেশ ভদ্র ও মার্জিত। তবে বিয়ে করে মা বউকে সুখে রাখার মতাে তার রােজগার নয়। সেটাও সে কবুল করেছে। দীপঙ্কর ভােলানাথকে পরের রবিবার ওর ফ্ল্যাটে আসতে বলে ফিরে এল।

এক সপ্তাহ মান্টি ভােলানাথকে দেখতে পেল না। পরের রবিবার সকালে মান্টি ওকে দেখতে পেল বাসস্ট্যান্ডে। মান্টিকে দেখে এগিয়ে এল ভােলানাথ। সরাসরি ওকে বলল, আরতি, আমার ব্যবহারে যদি তােমার মন খারাপ হয়ে থাকে, যদি আমার ওপর রাগ করে থাক, তাহলে আমাকে মাপ করে দিও। আসলে মনের কথা কীভাবে বলতে হয়, আমি জানি না। আমি তােমাকে কোনওদিন কষ্ট দেব না। আমি কি তােমার সঙ্গে যাব ?

মাল্টি অন্য এক ভােলানাথকে আবিষ্কার করল। এক সপ্তাহের মধ্যে অনেক বদলে গিয়েছে ভােলানাথ। মান্টি বলল, তুমি দশটার পর আমার মা-কে নিয়ে যেও। আমি মাকে বলে রেখেছি।

ভােলানাথ ফিরে গেল।

সেদিনই মান্টির মা ও স্টেলার উপস্থিতিতে ওদের বিয়েটা পাকা হল। স্টেলা জার্মান কনস্যুলেটে ভােলানাথের একটা কাজের চেষ্টা করে সফল হল। বেয়ারার কাজ, মাসে দুহাজার টাকা মাইনে। সঙ্গে কিছু কিছু বাড়তি সুযােগ।

বর কনে সাজিয়ে বস্তিতেই ওদের বিয়ে দিল স্টেলা। বিয়ের সব খরচ দিল দীপঙ্কর। স্টেলা এক সপ্তাহের ছুটি দিয়ে ওদের পুরীতে পাঠিয়ে দিল হনিমুন করতে। পুরী থেকে ফিরে এলে ওদের জীবনযাত্রা একটু বদলে গেল। সকালে মান্টির সঙ্গে ভােলানাথও চলে আসে ফ্ল্যাটে। ভােলানাথ বাজার করে, মান্টি রান্নার ব্যবস্থা করে। বাচ্চাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে স্টেলা। সকাল ন’টায় স্টেলার সঙ্গে ব্রেকফাস্ট খেয়ে ওর গাড়িতেই অফিস বেরিয়ে যায় ভােলানাথ। দীপঙ্কর বেরােয় সাড়ে ন’টায়। সন্ধ্যায় স্টেলার গাড়িতে করেই ভােলানাথ ফিরে আসে ফ্ল্যাটে। মান্টি আর ভােলানাথ স্টেলাকে কোনও কাজই করতে দিতে চায় না। রাতের সব ব্যবস্থা করে ওরা ফিরে যায় আটটার সময়।

সপ্তাহখানেক পরে স্টেলা নিয়মটা একটু বদলে দিল। একরকম জোর করেই ওদের রাতের খাবার দিতে শুরু করল। রাত আটটার পর বস্তিতে ফিরে গিয়ে ওদের যদি উনুন জ্বালতে হয় তাহলে বিবাহিত জীবনের আনন্দটাই মাটি হয়ে যাবে। মান্টিকে জন্ম নিরােধক বড়ি কিনে দিল স্টেলা, যাতে হুট করে গর্ভবতী না হয়।।

বিয়ের ছ’মাস পুরাে হতেই মান্টির শরীরে যৌবনের ঢল নামল। ভারি বুকের গঠন, নিতম্বের ঢেউ, সুডৌল বাহু, সুগঠিত উরু—সব কিছুই যৌন আবেদনে প্রস্ফুটিত। মান্টির ওই রূপ-যৌবনের আগুনে একদিন দগ্ধ হল দীপঙ্কর।

তিনদিন জুরে ভুগে সাতদিন অফিস কামাই করল দীপঙ্কর। লাে তিনদিন ছুটি নিয়ে, চতুর্থ দিন মান্টিকে যথাযথ সব নির্দেশ দিয়ে অফিসে গেল। সেই দিনই দীপঙ্করের গা স্পঞ্জ করাতে গেলে ও মান্টির বুকের স্পর্শ পায়। দুর্বল শরীরে মুহূর্তে অসুরিক শক্তি ভর করে। দিকবিদিক জ্ঞান হারিয়ে দীপঙ্কর মান্টিকে বুকে চেপে ধরে। আন্টির বিবেক, আদর্শ, শুচিতা বাধা দেবার চেষ্টা করে দীপঙ্করকে। কিন্তু যৌন তাড়নায় সবকিছু ছারখার করে দেয় দীপঙ্কর। প্রায় ধর্ষণের প্রক্রিয়ায় ও মান্টিকে পিষে ফেলে বুকের নিচে। তখন বাধা দেবার সমস্ত শক্তি হারিয়ে ফেলে মান্টি। আপনা থেকেই ওর দুই উক্ত শিথিল হয়ে যায়। আর তখনই দীপঙ্কর প্রবিষ্ট হয় মান্টির গােপন গুহায়।

এইসব খেলা একবার শুরু হলে শেষ হতে চায় না। নারীশরীর ক্রমাগত অহন করে চলে। পরপর চারদিনই দীপঙ্কর মান্টিতে উপগত হল। যৌন অভিজ্ঞতায় মাল্টি বুঝে গেল—দীপঙ্করের তুলনায় ভােলানাথ কতটা আনাড়ি। সঙ্গমসুখে প্রলােভিত হল ও। দীপঙ্কর অফিস যেতে শুরু করল। কিন্তু নিশির ডাকের মতন প্রতিদিন দুপুরে ও মান্টির কাছে চলে আসে। সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে রতিলীলায় মেতে যায় দুজনে। নিয়মিত দ্বিপ্রহরিক সঙ্গমে অভ্যস্ত হয়ে গেল ওরা।

এইসব গােপন খেলা বােধ হয় বেশিদিন চাপা থাকে না। ওরা ধরা পড়ে গেল একদিন।

সেদিন অনিবার্য কারণে লাঞ্চ ব্রেকে ছুটি হয়ে গেল স্টেলা ও ভােলানাথের। ওরা দুজনে ফিরে এল ফ্ল্যাটে। কলিং বেল টিপে কোনও সাড়াশব্দ না-পেয়ে ব্যাগ থেকে ডুপ্লিকেট চাবি বের করল স্টেলা। দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে প্রথমে কিছুই বুঝতে পারল

ওরা। মনে হল, ফ্ল্যাটে কেউ নেই—একেবারে নিঝুম। খােলা দরজা দিয়ে একটা ঘরে চোখ পড়তে দেখল, বাচ্চাটা অকাতরে ঘুমচ্ছে। সেটলার। বেডরুমের দরজাটা বন্ধ। হঠাৎ স্টেলা লক্ষ্য করল দরজার চৌকাঠে একটা শাড়ির কিছুটা অংশ বন্ধ দরজায় চেপ্টে রয়েছে। ভ্র কুঞ্চিত হল স্টেলার। দরজায় টোকা দিল ও। কোনও সাড়া-শব্দ নেই। অধৈর্য হয়ে দুমদুম করে ঘুষি মারল দরজায়। খুলে গেল দরজা। সায়াপরা মান্টির খালি গায়ে শাড়িটা জড়ানাে। ওই শাড়িরই কিছুটা অংশ চৌকাঠে আটকে ছিল। তাই শাড়িটা পরতে পারেনি মান্টি। খাটের বিছানাটা লণ্ডভণ্ড। স্টেলা মান্টির চুলের মুঠি ধরে হিড়হিড় করে টেনে আনল ঘরের বাইরে। চিৎকার করে বলে উঠল, ‘কাকে ঢুকিয়েছিস আমার বেডরুমে নােংরা মাগী!

জবাব না-পেয়ে ছুটে আবার ঘরে ঢুকল স্টেলা। খাটের নিচেটা দেখল। কেউ নেই। চোখে পড়ল সংলগ্ন বাথরুম ভেতর থেকে বন্ধ। দু-চার ঘা মারল বাথরুমের দরজায়। ততক্ষণে মান্টি গুটিগুটি এসে দাঁড়িয়েছে ঘরের দরজায়। ওকে দেখে স্টেলার চোখে আগুন ঝরে পড়ল। কাটা গাছের মতন হুড়মুড় করে মান্টি ভেঙে পড়ল স্টেলার পায়ের কাছে। রুদ্ধ গলায় কোনওরকমে বলল, আমাকে খুন করে ফেলুন মেমসাহেব। বাথরুমে সাহেব।

সেই মুহূর্তে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গেলেও স্টেলা বােধ হয় অতটা চমকাত না। ওর মস্তিষ্কে উল্কাপাত শুরু হল। চোখ অন্ধকার হয়ে গেল। মুহূর্তে বােবা কালা হয়ে গেল ও। জ্ঞান হারিয়ে অচৈতন্য স্টেলা পড়ে গেল মেঝেয়।।

পাঁচ ঘণ্টা পরে ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকাল স্টেলা। একটু একটু করে চিনতে পারল নিজের ঘর, আসবাবপত্র। দেখল পায়ের কাছে অতন্দ্র প্রহরীর মতন দাঁড়িয়ে আছে ভােলানাথ। দ্রুত বেরিয়ে গেল ভােলানাথ। একটু পরেই ভােলানাথের গলা শুনতে পেল স্টেলা—হা ডাক্তারবাবু……..এইমাত্র……ঠিক আছে, আমি কোথাও যাচ্ছি না….খাইয়ে দেব……কাল সকালে আসছেন ?……ভয় নেই তাে ?…..ঠিক আছে…..।

একটু পরেই ভােলানাথ ঘরে ঢুকল। হাতে গরম দুধের গ্লাস। বলল, “মেমসাহেব, আর কোনও ভয় নেই। আপনি দুধটা খেয়ে নিন। ডাক্তারবাবু এসে আপনাকে দেখে ইঞ্জেকশন দিয়ে গিয়েছিল। কাল সকালে আবার আসবে। নিন, ধরুন।

স্টেলার উঠতে কষ্ট হচ্ছিল। ভােলানাথ মাথার নিচে বাঁ হাতের সাপাের্ট দিতে স্টেলা উঠে বসল। দুধটা ভােলানাথের হাত থেকে নিয়ে একটা চুমুক দিল। জিজ্ঞেস করল, ‘ওরা কোথায় ?

ভােলানাথ বলল, “মেমসাহেব, আপনি অজ্ঞান হয়ে যাবার পর সাহেব আর মান্টি বাচ্চাটাকে নিয়ে কোথায় চলে গেছে জানি না। আমার সঙ্গে কেউ কথা বলেনি।

স্টেলা জিজ্ঞেস করল, আমি কি মেঝেয় পড়ে গিয়েছিলাম ? ভােলানাথ জবাব দিল, হা, মেমসাহেব।। স্টেলা আবার জিজ্ঞেস করল, তুমি কি আমাকে কোলে করে তুলেছ ? ভােলানাথের মাথা হেঁট হয়ে গেল। বলল, হ্যা, মেমসাহেব। স্টেলা বলল, তুমি আমার কাছে এস। খাটে বস। ভােলানাথ স্টেলার পায়ের কাছে বসে ওর পায়ের পাতায় হাত রাখল। স্টেলা বলল, ‘ভােলানাথ, আমি বাঁচতে চাই।

ভােলানাথ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। স্টেলা আবার বলল, ‘এই অপমান সহ্য করে আমি দেশে ফিরে যেতে পারব না। তােমাদের সাহেব আমার সঙ্গে আর মান্টি তােমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আমরা এর বদলা নেব।

ভােলানাথ মাথা নিচু করে বসে রইল। স্টেলা বলল, আমি তােমার সাহায্য চাই ভােলানাথ। আমি জানি, তােমাকে বিশ্বাস করে আমি ঠকব না। আমি তােমাকে বিয়ে করতে চাই, ভােলানাথ।

মুখ তুলল ভােলানাথ। বলল, আমি আপনাকে অন্য চোখে দেখি, মেমসাহেব। আপনি আমার কাছে দেবী—ঈশ্বরী।

স্টেলা বলল, ‘জানি। জানি বলেই বাকি জীবনটা তােমার ওপর ভার রেখে বাঁচতে চাই। জার্মানিতে আর কোনওদিন ফিরব না। একজন ইন্ডিয়ান আমাকে ঠকিয়েছে। আমি জানি, তুমি আমায় কোনওদিন ঠকাবে না। তুমি আমাকে বিয়ে না করলে আত্মহত্যা ছাড়া আমার কোনও পথ নেই। দুধের গ্লাসটা স্টেলা ফেরৎ দিল ভােলানাথকে। গ্লাসটা হাতে নিয়ে ভােলানাথ বলল, “মেমসাহেব, আমি আপনাকে কোনওদিন ছেড়ে যাব না। আপনাকে সেবা করব। কিন্তু দুহাত বাড়িয়ে স্টেলা বলল, আমি তােমার মেমসাহেব হয়ে বাঁচতে চাই না ভােলানাথ। এস, আমার বুকে এস।” বলতে বলতেই ভােলানাথকে বুকে জড়িয়ে ধরল স্টেলা। নির্দ্বিধায় ভােলানাথের ঠোটে ঠোট রাখল ও।

One thought on “পাষাণী চাপা – দেবকুমার বসু

  1. বাস্তব অভিজ্ঞতারনিরিখে পাষানী চাঁপা অসাধারণ এক গল্প।
    ভালো লাগলো।

Leave a Reply