পঞ্চাশ বছর – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

›› গল্পের অংশ বিশেষ  

আজিমগঞ্জের মেয়ে

……শব্দ করে দরজা খুলে গেল। খােলা দরজায় এসে দাঁড়াল একটি মেয়ে। মেয়েটির বয়েস আঠেরাে-উনিশের মতন, এমনই তার চেহারা যে, বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। খুব সুন্দরী সে নয়, কিন্তু তার চেহারায় এমন একটা তেজ ও দীপ্তি আছে, যে জন্য চোখ ফেরান যায় না। বেশ লম্বা মেয়েটি, চুলগুলাে সব খােলা, আলগা ধরনের একটা হলদে শাড়ি পরে আছে। দেখলে মনে হয় ঠিক বাঙালি নয়, অথচ রাজপুতানীও বলা যায় না। স্বাস্থ্য ঝলমল করছে সমস্ত শরীরে। স্তন দুটি উদ্ধত হয়ে আছে, ছােট ছােট জ্বলজ্বলে চোখে মেয়েটি আমাদের দিকে তাকাল। কুকুরটা এবার গরু-গরর করে উঠল একবার, মেয়েটি তার পিঠে হাত দিতেই চুপ করল।…..

…….সুতরাং মেয়েটিকেই একটু চোখ ভরে দেখে নিতে লাগলাম। মেয়েটির শরীরে প্রত্যেকটা রেখা খুব স্পষ্ট, সরু কোমর—ভারী নিতম্ব ও বুক—কিন্তু তার মুখের নির্লিপ্ত ভঙ্গির জন্য এর মধ্যেই তাকে বেশ বয়স্কা মনে হয়।……..

হঠাৎ একটি নারী

……..বউটি বয়সে বছর তিরিশ বত্রিশ হবে বােধহয়, সারাক্ষণ কাজ করে—সে একাই যে সংসার সামলায় তাতে কোন সন্দেহ | নেই। ভারি ভাল মেয়ে। স্বামী-পুত্রের সেবা করাই তার একমাত্র কাজ। | কিন্তু বউটির স্বাস্থ্য একটু খারাপ হলে পারত না? এত সুন্দর শরীরের গড়ন থাকার কি | দরকার ছিল? যে রকম দারিদ্র্য এদের—তাতে তাে প্রায় পাতা খেয়েই দিন কাটায় মনে হয়—তবু এমন স্বাস্থ্য পায় কি করে? | প্রশান্ত দত্ত ওই বউটির শরীরের রেখা বিভঙ্গ থেকে চোখ ফেরাতে পারছেন না। স্ত্রীলােকটিকে ঠিক রূপসী বলা যায় না। গায়ের রংটা পােড়া-পােড়া, চোখ নাক কিছুই নিখুঁত নয়—কিন্তু নিছক স্বাস্থ্যের যে একটা সৌন্দর্য আছে সেটা এর আছে পুরােপুরি। যে কারণে | আকাশের একটা চিল সুন্দর, বুনাে ঘােড়া সুন্দর, দেবদারু গাছ সুন্দর—সেই কারণেই এই স্ত্রীলােকটিকে সুন্দরী বলা যায়। শরীরে কোথাও কিছু অতিরিক্ত নেই-বুক, কোমর, উরু—সবকিছুই মানানসই।……….অথচ তার চোখ ঘুরে ঘুরে চলে যাচ্ছে ওই বাসনা নামের স্ত্রীলােকটির দিকে। তিনি | উপভােগ করছেন ওর স্বাস্থ্যের সৌন্দর্য। একবার ওর সারা শরীরে হাত বুলােতে পারলেও বেশ আরাম হত।…….

চিরদিনের ঋণ

………..মেয়েটির বয়স ষােল। …মেয়েটি এতই সুন্দরী যে দেখলে হঠাৎ দম বন্ধ হয়ে যায়। গােলাপের পাপড়ির মতন গায়ের রং। বড় বড় দুটো চোখ স্থিরভাবে চেয়ে থাকে। হাতের আঙুলগুলাে সত্যিই ফুলের কলির মতন। মেয়েটি পরে থাকে একটা প্যান্ট আর গেঞ্জি, গেঞ্জিটার সামনের দিকটা অনেকটা কাটা, সেই ফাক দিয়ে দেখা যায় তার নতুন দ্বীপের মতন স্তন। সেদিকে তাকাব না ভাবলেও বারবার চোখ চলে যায়।..

……..এক একদিন দেবযানী এমন জামা পরে আসে, যে-জামার কাজ শরীরকে ঢেকে রাখা নয়, বেশি করে দেখান। হাজার সংযমের চেষ্টা করেও ওর বুকের দিকে না তাকিয়ে পারি না। তাতে ও একটুও লজ্জা পায় না। বরং আমার দৃষ্টি অনুসরণ করে ও নিজেই নিজের বুক দেখে আর আপন মনে হাসে। দেবযানীর আরও একটা অদ্ভুত স্বভাব ছিল নিজেই নিজের ডান বাহুতে চুমু খেত। সব জামাই হাতকাটা। নগ্ন বাহু দুটি কি পেলব আর নরম। হঠাৎ সেই হাতের ওপর ঠোট চেপে ধরে দেবানী। যেন অন্য কাউকে আদর করছে। মেয়েদের ঠোটের ওরকম ব্যবহার দেখলেই গা শিরশির করে। নিজের হাতে ওরকম চুমু খেতে আমি আগে কারুকে দেখিনি।………

Leave a Reply