দুই ভরত বর্ষ – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়

›› উপন্যাসের অংশ বিশেষ  

……..তা ময়না বােঝে শরীর দিলে অনেক কিছু ঠিক থাকে। শুধু এই ছােটবংশীর সে নাগাল পায় না। গম খেতে উলঙ্গ হয়ে দাঁড়াতেই পাছা জংঘা সব খালি। একবার উঠে দাঁড়ায়, আবার বসে পড়ে । কেউ দেখে ফেলতে পারে ।……..পিছু পিছু আসছে ময়না। কোমরে গামছা। বুকে গামছা । শরীরে মাতনের নেশা। ছােটবংশীকে দেখলেই কন্যের মধ্যে চড়াৎ করে মেঘ গুড়গুড় করে ওঠে। কন্যেকে দেখলে সেও কেমন শরীরে রহস্য টের পায় ।………

……..ঘাসের খোঁচা খায়। হাতের মধ্যে নরম তুলতুলে বস্তুটি নাড়াচাড়া করলেই শক্ত। বড় আরাম বােধ হয় ।

তখনই কি না সেও দেখেছিল, এক কন্যে গম খেতে—একেবারে উলঙ্গ। উঠছে। বসে পড়ছে। মরীচিকা যেন। সে চোখ রগড়ে বুঝেছিল, আরে এত সেই কন্যে—ময়না। তার ইসছা হয়, বড় ইসছা—এটা ময়না করতেছেটা কি !……

……..বংশী গামছা ফেলে দৌড়ে পালালে, সে আলের ভেতর থেকে পােকামাকড়ের মতাে জমির মধ্যে সেধিয়ে গেছিল । সে হামাগুড়ি দিয়ে যত যায়, কন্যে তত পালাতে পারলে বাঁচে। তারপর যা হয় জায়গামতাে গমের জমিতে ঢুকে সাপ্টে ধরেছিল ময়নাকে। ময়না হাত পা ছুঁড়ে বলেছিল, মরণ ! ছাড়াে বলছি। ছাড়াে। আমি চিল্লাব। আকাল আর ছাড়ে !……

…..এবারে দু নম্বর। বলেই ঈশানী পেছন ফিরে দাঁড়াল। সে পা বেশ ফাঁক করে দেয়ালের দিকে নুয়ে পড়তে থাকল। ঈশানীর পাছা বের হয়ে আসছে। উঠে আসছে। কতটা অশ্লীল হতে পারে ঈশানীর বােধ হয় কোনও বােধই নেই।……..

……দু ঠ্যাঙের ফাঁকে অপরূপ কামিনীর মুখ দেখা যাচ্ছে। দুটি বিনুনি ঝুলে পড়ছে দু-পাশে। কোমর পাছা ছাড়া, মুখ এবং লম্বমান দুটো ঠ্যাং দেখা যাচ্ছে। যত দেখছে, তত সে গুটিয়ে যাচ্ছে। বাইরে তারস্বরে কাচ্চাবাচ্চারা ঈশানীদি সাকাস দেখাচ্ছে, ঈশানীদি ডাক্তারবাবুকে ম্যাজিক দেখাচ্ছে বলে চেঁচাচ্ছে।

ঈশানী নির্বিকার। তিন নম্বর।
এ-ভাবে শুয়ে পড়তে হবে। মাটিতে চিত হয়ে শুয়ে একটি পা পঁয়তাল্লিশ ডিগ্রি উপরে তুলতে হবে। আস্তে, আস্তে। ঈশানী পা তুলছে। ঈশানী পা তােলায় তার নিচের অন্তর্বাস, জংঘাস্থলে ফাঁপানাে বস্তুটিও কুঞ্চিত হচ্ছে, প্রসারিত হচ্ছে। সুধাময়ের মাথা বোঁ বোঁ করে ঘুরছে। তাকিয়ে থাকাটাও অসভ্যতা। সে জানালার দিকে মুখ ঘােরাবার চেষ্টা করল ।

এই ডাক্তার ! ও দিকে তাকাচ্ছ কেন ! ওখানে কি মজা আছে । এই তােরা যা। যা বলছি। এক লহমায় সব সাফ হয়ে গেল। দৌড়ে সবাই পালাচ্ছে। তাকাও।……..

………অগত্যা তার না তাকিয়ে অন্য কোনও উপায় থাকল না।

হাত দুটো পায়ের দিকে টান টান রেখে সামনের দিকে যতটা পারা যায় কুঁকতে হবে। এক দুই তিন ..দশ– পেটের পেশী সঙ্কোচিত ও প্রসারিত করতে হবে । ঝিনুকের মতাে উঠে আছে জায়গাটা । পেটের সঙ্কোচন প্রসাবণের সঙ্গে টাইট অন্তর্বাসের অন্তর্গত খেলাও জমে গেছে। সুধাময়ের হাত পা কান ঝাঁ ঝাঁ করছে। শরীরে উষ্ণতা জমছে। শ্বাসপ্রশ্বাস বিলম্বিত হচ্ছে। চোখ কেমন অলস হয়ে আসছে। সে না পেরে বলল, আমি বলছি তাে যাব না। আর কত শেখাবে আমাকে।………

……ময়না সব জানে। বােঝে। কথা বলে না।

আকালের দিকে তাকাতে তার ভালও লাগে না। শরীর ছাড়া কিছু বােঝে না। খাক না খাক দণ্ডটি ঠিক উচিয়ে থাকে। আকালকে পাশে নিয়ে শুতেও ঘেন্না তার। তবু শরীর বলে কথা, যখন শরীর মানে না, ছােটবংশী দেখা দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে যায়, তখন আর পারে না। যা পায় তাই সই। শরীরে বিষ জমলে এটা হয় সে বােঝে।…..

……আকাল আর পারে ! সে পুরুষ মানুষ না ! আগুনের হাতাটির খোঁজে আকাল আখার পাড়ে বসে ছটফট করছে। শেষে পেটের নিচে হাত ঢুকিয়ে দিতেই ময়নার মাথা গরম। একদম হাত দেইবে না। হাত ভেইঙে দেব। পুরুষমানুষ তুমি ! লজ্জা আছে তােমার। হাত সরাও বলছি !…..

……..সুধাময় বুঝল, এইসব গানে যৌনতা ছাড়া আর কিছুই নেই-হট্টগোেল-বাজার এই দুটো শব্দই বেশি করে প্রয়ােগ করা চলে গানগুলি শােনার সময়। হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল ঈশানী, শ্যারন, শ্যারন। মাই অ্যাঞ্জেল মু’। কেন যে সুধাময়ের মনে হল, এই গানে যৌনতা থাকলেও, সুর মাধুর্যে কেন জানি অভিভূত না হয়ে পারা যায় না। উষ্ণ নরম বলের মতাে ঈশানীকে তার বার বার জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে।

তারপর সে দেখল, সারা শহর, নদীর সাঁকো পার হয়ে এক আশ্চর্য উচ্ছাসের ভিতর ঢুকে যেতে চাইছে নারী। পুরুষের কোমর জড়িয়ে আছে সে। দুরন্ত গতি। আকাশ আর বিরাজমান রহস্যের নিচে নারী পুরুষের এই যৌনতা সুধাময়কে কিঞ্চিত ফাঁপড়ে ফেলে দিল।…….

……..যুবতী শুয়েই আছে। তারপর মিউজিক আরও প্রবল হলে সে উঠে দাঁড়াল, হেঁটে যেতে থাকল। শরীর যেন আর দিচ্ছে না। চুল ছড়িয়ে আছে পিঠে। সমুদ্রের হাওয়ায় নরম মসৃণ সিঙ্কের ম্যাকসি নিতম্বের ভাঁজে অদৃশ্য হয়ে যেতে চাইছে। নারীর এই মহিমায় সুধাময়ের শরীর শির শির করছে। সে ভিতরে বেশ ছটফট করছিল—যেন পালাতে পারলে বাঁচে।……আর তখন দেখছে ঈশানী তার হাত চেপে ধরেছে। চোখ বিস্ফারিত । স্নিগ্ধ সুষমায় সারা মুখ উদ্ভাসিত। কোনাে গােপন সুখে মগ্ন ঈশানী । ববি অ্যালবামের গুড এনাফ গানটি নরনারীর যৌন ইচ্ছের এক গভীর প্রতীক। সেই সুখে কি শরীর থেকে নির্গত হয় ভালবাসার উষ্ণতা। ঈশানী কি এভাবেই রতিক্রিয়ায় সুখ পায় ! এই সব গানে যৌনতার নানা উপকরণ থাকে—মানুষ যেভাবে পারে তার দৃশ্যাবলী থেকে সঙ্গমের ইচ্ছেকে পূর্ণ করতে পারে। একজন পুরুষ যা পারে না, গানে তার অধিক কিছু আছে এমনও ভাবল সুধাময়।

ঘাের কেটে যেতেই ঈশানী বােধহয় লজ্জায় চাদর টেনে মুখ ঢেকে দিল। কিন্তু সে সুধাময়ের হাত ছাড়ছে না।…….

……..ময়নারে পরাণ ত আর সয় না । লাটুবাবু যে তার অন্নদাতা ময়নার যদি সেই স থাকত। মাঝে মাঝে ময়নার কথা ভাবলে তার শরীর অবশ্য অবশ লাগে। মিছে কথা বললে পাপ হয়। ময়নাকে দেখলে বেঁচে থাকার যুস পায়। তবে পরস্ত্রী বলে কথা। পরস্ত্রী হলগে জননী, শাস্ত্রে লেখা আছে। | ময়নাকে দেখতে পাবে বলে ঘুরপথে জমিতে আসে। ময়না দাদা দাদা করে। রঙ্গরসিকতা করে। এবং সে কতবার দেখেছে, ময়না গাছে হেলান দিয়ে বুকে কাপড় পর্যন্ত সরিয়ে দিয়েছে।

দৃশ্যটা দেখলে তার বুক কাঁপে, কেমন অবুঝ হয়ে ওঠে। তুই আকালের অগ্নিসাক্ষী করা বউ। তু নষ্ট হয়ে গেলে সমাজ তুকে কুলটা বলবে। দৃশ্যটা দেখলে তার হাড় পর্যন্ত নড়বড়ে হয়ে যায়। হাঁটুতে বল থাকে না। ময়না দুহাতে শাড়ি তুলছে ত তুলছেই। তখন আর কি করা—আহাম্মকের মতাে হা হা করে না হেসে পারে না। যেন এসবের সে কিছু বােঝে না। শুধু পালাবার সময় তার এক কথা—ময়না তুর শরীরে গরম ধরেছে। মাঠে ঘুরে আয় না হয় গাছতলায় বসে থাক। হাওয়া পাবি। শরীর ঠাণ্ডা হবে। সব গরম উবে যাবে।…….

………এটাই ঈশানীর ম্যাজিক। শরীরসর্বস্বতা কী তুলনাহীন সুন্দর। তার এই যে নগ্ন ছবি, শুয়ে আছে ঘাসের উপর হাঁটু ভাঁজ করে, পােশাক তার ছড়িয়ে ছিটিয়ে, প্রায় ফুড়েই দিয়েছে সব শরীর থেকে, তার এত কাণ্ডজ্ঞানের অভাব এমনও মনে হয়েছে, সেও ঠিক ছিল না—হাত পা কাঁপছিল উত্তেজনায় জড়িয়ে ধরে ঈশানী পাগলের মতাে তাকে চুমাে খেয়েছে, যেন গিলেই ফেলবে—এমন উদ্দামতা তার সহ্য হবার কথা নয়, পালাতেও পারছে না—শেষে তার আত্মসমর্পণ—ঈশানী তাকে ছিড়েখুঁড়ে খেতে যখন চাইছে ধাক। যা খুশি করুক তাকে নিয়ে।

তার হুঁশও ফিরে এসেছে। কালাে পাথরের পাষাণ বেদীটি যে দেবীর থান এও সে বুঝে ফেলল। পিচাশিতলার জঙ্গলে ঢুকে সে বুঝতেই পারেনি, ঈশানী কোথায় তাকে নিয়ে যাচ্ছে। দুপরের রােদ গাছের মাথায়। কাক পক্ষীও ডাকছে না। প্রাচীর সংলগ্ন করবী গাছ থেকে হলুদ ফুল দুটো একটা উড়ে যাচ্ছে যেন হাওয়ায়। বড় নিরিবিলি নির্জন এই জঙ্গল মধ্যে যে কেউ ঢুকে পড়তে পারে, ঈশানীকে নগ্ন অবস্থায় দেখে ফেলতে পারে—সে বােধও নেই ঈশানীর। সে আর কি করে!

ছুটে গেল, তুলে নিল পাজামা আর ব্রেসিয়ার। দ্রুত কাজগুলি সারতে না পারলে তারা ধরা পড়ে যাবে! ঈশানীর কি কোনাে সন্ত্রম বােধ নেই-ইজ্জতের ধার ধারে না! সে যে পাগলের মতাে কাণ্ড ঘটিয়ে বসে আছে সেই বােধও বুঝি নেই। এক আশ্চর্য স্বর্গীয় সুখ তাকে ঘিরে আছে যেন।…….

……..সে শরীরের সঙ্গে আর এক অন্য শরীর মিশিয়ে দেবার ইচ্ছায় প্রায় পাগল হয়ে ওঠেছিল। তাকে ধরে এনেছে, ঈশানীর প্রবল যৌন আবেদনের কাছে শেষ পর্যন্ত সে হার মেনেছে, ঈশানীকে বিবস্ত্র অবস্থায় শুয়ে আছে দেখতে না পেলে সে বুঝতে পারত না। | কিন্তু এই যে গভীর সন্নিকট হওয়া, শুয়ে পড়া, আলিঙ্গনে আবদ্ধ হতে হতে মিশে যাওয়ার স্বরূপটা সে কিছুতেই ধরতে পারছে না। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের এই সময়টুকু কোথাও যেন একটা ফাঁকা জায়গা রেখে দিয়েছিল—সে মাথার ভিতর তার দৃশ্যপট কিছুতেই মনে করতে পারছে না। বেহুস ছিল, থাকতে পারে। তার চোখ বুজে আসছিল মনে করতে পারে। কিন্তু কিভাবে কখন ঘটে গেল এতটা নির্লজ্জ অভিলাষ সে আদৌ তা বুঝতে পারছে না।

বুঝতে পেরেই ঈশানীকে পােশাকে জড়িয়ে দিয়েছে। সুন্দর বিজ্ঞাপনের মতাে তার শরীর। হাত পা জানুদেশ, নাভিমূলের উষ্ণ প্রবাহ স্থির হয়ে আছে কুসুমের কোমল আভাষে। নারী তবে এই।……

………সুধাময় বুঝতে পারল, ঈশানীর হুঁস ফিরে এসেছে। লুজ বেলবটস, এবং কমলা রঙের জরি সুতাের নকশি কাজ করা কোট গায়ে সে এখন বসে আছে। এই সংসারে সে বড় একা আর মনে হচ্ছে না। তার ব্রেসিয়ার কিছুটা আলগা, সুধাময় ওর শরীর তুলে ব্রেসিয়ারের ক্লিপ আটকাতে পারেনি। তার আগেই ধড়ফড় করে উঠে বসে বলেছিল, আমার কি হয়েছে ডাক্তার ?………

Leave a Reply