অনুবাদঃ পৃথ্বীরাজ সেন
সে এক আশ্চর্য দেশ– যৌবনের রঙিন নেশায় মাতাল, মনের বিরামহীন সঙ্গম-লিপ্সা আর রাতের পর রাত রমণী দেহে ঝড় তােলা টাইফুনের। কামকলার নিত্যনতুন আবিষ্কারে শিহরণের কাক্ষিত মুহূর্তে পৌঁছে যাওয়া। সেই বাসনা-জর্জরিত সুখী সম্পৃক্ত জীবনের আর বেশরম যৌনতার নিলাজ স্বীকারােক্তি লেখা আছে আত্মকথনের পাতায় পাতায়। এমনই এক কাম বিহ্বল দিনযাপনের কলঙ্কিত পাণ্ডুলিপি ‘Scenes in the Harem of an Eastern Potentate, প্রথম প্রকাশিত হয় ১৮২৮ সালে। প্রথম সংস্করণের ভূমিকাতে লেখা হয়েছিল এই কটি কথা— এক শ্বেতাঙ্গিনী ব্রিটিশ ললনার উদ্দাম যৌন-জীবনের বর্ণময় বিবরণ, যার মধ্যে প্রতিফলিত তার লজ্জাতুর মনােভাবের আড়ালে লুকিয়ে থাকা লালসার নীরব উপস্থিতি। নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে তাকে করা হয় বন্দিনী এক তুর্কি সম্রাটের হারেমে, তারপর রাতের পর রাত তার নগ্ন দেহে চলে পাশবিক অত্যাচার, অবশেষে সে নিজেই হয়ে ওঠে শরীরের তৃষিতা রঙ্গিনী। শুরু হয় এক আশ্চর্য নিশি-অভিসার।
প্রিয় বান্ধবীকে পাঠানাে পত্রাবলীর মাধ্যমে উন্মােচিত তার নিভৃত মনের বিচিত্রসুন্দর অনুভূতিরা।
দীর্ঘদিন অপ্রকাশিত থাকার পরে এই পাণ্ডুলিপিটি ‘The Lustful Turk” নামে আবার প্রকাশিত হয়। ঐ বিতর্কিত গ্রন্থটি অবলম্বনে তুর্কি হারেমের বন্দিনী উপহার দেওয়া হল আপনাদের কাছে।
চকিত চপলা হাসি
তনুবাহারে হিন্দোলিত উছাস।
সন্ধ্যার শান্ত প্রেক্ষাপটে
দীপক রাগের মৃদুমন্দ আভাস।
জীবনের সুরাপাতে বুঝি
যৌবনের আমােদিত নন্দিনী।
তার করপুটে সখ্যতার অঞ্জলি
তুর্কি হারেমের বন্দিনী।
সুন্দরী লো সুন্দরী
তুই কোন হারেমের জলপরী ?
তুই কোন দোজখের শয়তানী
আর বেহূস্তের এক রূপ ছুড়ী?
তাের আধ-কপালে চিকুম
চুমুর পরশ রাখি সংরাগে
তাের বগলতলি ভরিয়ে তুলি
জিভ-শিহরণ আঙ-রাগে।
তাের লালচে ঠোঁট কামড়ে ধরি
কাম-পিয়াসী দন্ত-তে
আমার সােহাগ পড়ুক ঝরে
ভরাট স্তনের বৃন্তেতে।
তাের অঙ্গ-যােনি শিউরে উঠুক
আমার পুরুষ-দণ্ডতে
তাের মন পিয়াসী খুশির বাঁশী
বাজুক কামের সঙ্গতে।
আয় সােহাগী গতর-খাগি।
মাঝ রাতে আজ কি হিল্লোল
আয় রে আমার সুখ দেমাকী।
মুখপুড়ী এক শরীর পাগল।
তাের ঝরােকায় উঠুক বেজে
তৃপ্তি সুখের এ সওগাত।
তাের শরীরে আচমন সেরে
শেষ হল এ দিল-দাওয়াত।
সিলভিয়া ক্যারিকে লেখা এমিলি বালাের চিঠি
পাের্টস মাউথ ক্রাউন হােটেল ১৮ই জুন, ১৮১৪
প্রিয়তমা সিলভিয়া,
আজ সকালে এখানে এসে পৌঁচেছি। সমুদ্র যাত্রাটা ছিল খুবই ক্লান্তিকর।
চলে আসার সময় বেচারি হেনরীর বিধ্বস্ত অবয়বে যে ঘন বিষাদের ছায়া পড়েছিল একমাত্র সময়ই তাকে দূর করতে পারে। আমার মনের অ্যালবামে চিরদিন উজ্জ্বল হয়ে থাকবে তার ব্যথাতুর মুখখানি।
তুই তার রক্তাক্ত ক্ষতে প্রলেপ দেবার চেষ্টা করবি। সময় আর সুযােগ পেলে বলবি তাকে যদিও মা আর কাকার ইচ্ছে অনুসারে এই জীবন মেনে নিতে হয়েচ্ছে কিন্তু আমার মনের মধ্যে তার স্থান আগের মতােই আছে | বেচারি এলিজা চেষ্টা ককেছিলে সুদীর্ঘ ভ্রমণে তার উষ্ণ সাহচর্যে আমার মনের ক্লান্তি দূর করতে। কিন্তু দুঃখ যখন জমাট পাথর হয়ে চেপে বসে তখন তাকে সহজে দূর করা যায়
সিলভিয়া, তুই নিশ্চয়ই বুঝতে পারবি বাবা মায়ের আদেশের কাছে নিজেকে উৎসর্গ করার মধ্যে কী ভীষণ দুঃখ লুকিয়ে আছে!
মাঝে মাঝে মনে হয় যদি আমার কাকার না জন্ম হত । তাহলে কি নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে হতাম আমি বন্দিনী? ছুটে যেতাম আমার বাবা, মা, প্রিয়তমকে পরিত্যাগ করে অনন্ত বৈভবের মিথ্যে প্রলােভনে সাড়া দিতাম কি আমি? | তাের দাদার বৌ হবার সুখস্বপ্নে বিভাের থেকে আমি যে কতটা আনন্দিত ছিলাম তা কি করে বােঝাই তােমাকে। একমাত্র ভগবানই আমার সেই সুখের অতল সমুদ্রে ডুব দিতে পারেন।
তাই বিচ্ছেদ-ব্যথা আমাকে করেছে ভারাক্রান্ত। আমি শুধু ঈশ্বরের কাছে নতজানু হয়ে প্রার্থনা করছি, যেন তাড়াতাড়ি শেষ হয় এই নিঃসঙ্গ ভ্রমণ। আমি যেন আবার ফিরতে পারি ততাদের কাছে।
দেখি ইন্ডিয়াম্যানের কাপ্টেন উদ্বিগ্ন হয়ে অপেক্ষা করছে আমাদের জন্যে। বাতাস এখানে বয়ে চলেছে মধুর ছন্দে।
তবুও ভাবছি, যদি পথে আসতে দেরি হত আমার, তাহলে আমাকে ছাড়াই জাহাজ পাড়ি দিত তার নির্দিষ্ট গন্তব্যে। ইচ্ছে করলে তেমনটি করতে পারতাম না আমি? | আদরের সিলভিয়া বিদায়। দীর্ঘকালীন বিদায়। নৌকা অপেক্ষা করছে আমাদের মাদারব্যাঙ্কে নিয়ে যাবে বলে। | এখনকার মতাে বিদায় নিচ্ছি তাের কাছ থেকে। বন্ধু আমার, বেচারি হেনরীকে দেখি। তার কথা মনে পড়লে কি যে কষ্ট হয় কি করে বােঝাই তােকে!
তাের দুঃখিনী বান্ধবী,
এমিলি বারলাে
আলজিয়ার্সের সম্রাট আলির চিঠি টুনিস সাগরের রাজা মুজরাকে
২০শে সেপ্টেম্বর, ১৮১৮
মুজরা প্রিয় বন্ধু,
তােমার অসাধারণ উপহারের জন্যে কি বলে ধন্যবাদ দেব জানি না।
তােমার পাঠানাে গ্রেসিয়ান মেয়েটি তার রূপযৌবনের আগুনে পুড়িয়ে মারছে আমায়। আমি আবার বলছি সেই বাদী আমার মন কেড়েছে। আমাদের পবিত্র পয়গম্বরের নামে শপথ করে তার কুমারীত্বকে উৎসর্গ করেছি আমি।
সেই সুমিষ্ট ফুলের ঘ্রাণ নিয়েছিল ভরে। তাই বার বার তােমাকে জানাই শত সহস্র আদাব।
যখনই তার কোমল আলিঙ্গনে নিজেকে করি নিমগ্ন, তখনই আমার মনের আকাশ থেকে এক নিমেষে উড়ে যায় ভাবনার কালাে মেয়েরা। দেখ জিরা, এই সব বাদীরা তাে আমাদের খামখেয়ালের খাঁচায় বন্দিনী। তাই বােধহয় তারা শরীর সঙ্গমের প্রার্থিত মুহুর্তে অকারণে হয়ে যায় কামশীতল। অথচ তীব্র সুখানুভূতির চরমতম শিখরে পা রাখতে চাই তাদের সক্রিয় সহযােগিতায়। প্রকৃতিই আমাদের তৈরী করেছে কোমল লিঙ্গের ওপর প্রভুত্ব করতে। তারাই দেয় আমাদের অনন্ত আনন্দ, বিনিময়ে পায় জান্তব তৃপ্তি। জেনার (তােমার পাঠানাে উপহারের এই নাম দিয়েছি আমি) বেলাতেও একই অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার। এমনকি সংরাগের কাঙিক্ষত মুহূর্তেও তার মনের আকাশে সংশয়ের মেঘ ভেসে বেড়ায়। তাই ভালবাসা নয়, তাড়নাই তাকে করে তােলে কামচঞ্চলা।
এইসব জ্ঞান অকারণে আমাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। দুঃখের সাগরতীরে, যদিও আমি জানি যৌনতৃপ্তির জন্যে তার সান্নিধ্য অপরিহার্য। যদিও তার সৌন্দর্যের উদ্দীপনা এখন অনেক প্রশমিত, কিন্তু জেনার কুমারী গােলাপ এখন আমার বৃন্তে ছড়ায় লজ্জার লালিমা। তার চকিত চপল চোখের প্রশ্রয়ী দৃষ্টিতে আমি খুঁজে পাই নীলসাগরের প্রশান্তি, আবার তার অনিন্দ্যসুন্দর রূপলাবণ্য আমাকে মাঝেমধ্যেই বিমুখ করে তােলে আর এক জীবন্ত ভেনাসের প্রতি। গত দুমাস ধরে আমি যার রূপসাগরে ডুব দিয়েছি অরূপরতনের আশায়, সেই জেনার উদাসীন মনােভাব আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় ব্রিটিশ ললনার কাছে।।
পরের চিঠিতে আমি তােমাকে জানাব কি করে আমি তাকে জয় করেছি সেই রােমাঞ্চকর কাহিনী। সে এখন তােমার বন্ধুর কামনার আগুনকে উসকে দিচ্ছে বারবার।
আলি
এমিলি বারলােকে লেখা সিলডিয়া ক্যারির চিঠি
লণ্ডন ১৯শে জুন
প্রিয় এমিলি,
তােকেও জানাই বিদায়ী শুভেচ্ছা আর তাের নিঃসঙ্গ সহেলীর মুখ থেকে উচ্চারিত হােক নিরাপদ সমুদ্র যাত্রার জন্যে নৈশ প্রার্থনা। তাের লেখা গতকালের চিঠি আজ পেলাম। মনে হয় সমুদ্রযাত্রার আগেই তুই চিঠিখানা পাবি। তুই যাবার পর বেচারি হেনরী মাত্র একবার তার ঘর থেকে বেরিয়েছিল। সেই অসহায় মানুষটির দুঃখ কষ্টের কথা জানিয়ে তাের মনকে অকারণে ভারাক্রান্ত করতে চাইছি না আমি। তবে দিব্যি করে বলতে পারি সবকিছুই করব তার যন্ত্রণা দূর করতে। জানি না কি ঘটবে ভবিষ্যতে। আজ তাের মা এসেছিলেন দেখতে তাকে। হেনরীর কষ্ট দেখে তিনিও হয়ে পড়লেন উন্মম ভগবান তােদের আবার মিলন ঘটান। সময় পেলেই চিঠি দিস।
সিলভিয়া ক্যারি
(এই চিঠিখানা কোনদিন এমিলির হাতে পৌঁছয়নি, তার আগেই তার জাহাজ পাের্টসমাউথ ছেড়ে যায়।)
সিলডিয়া ক্যারিকে এমিলি বারলাের চিঠি
আলজিয়ার্স ২৪ শে জুলাই, ১৮১৪
আদরের সিলভিয়া,
আমার আগের চিঠিটা পড়ে তাের চোখের তারায় ফুটেছে নিশ্চয়ই অবাক চাউনি। সিলভিয়া, বন্ধু আমার, এই হতভাগিনীর জন্যে ফেলবি না চোখের জল? বর্বর তুর্কীদের হাতে বন্দিনী মেয়েদের নিদারুণ অভিজ্ঞতার কাহিনী তাে এর আগে শুনেছিস অনেক। বিশেষ করে কামলিন্দু তুকীরা যে কি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে তা তােকে কি করে বােঝাই। আমাকে এমনি অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে হয়েছে। চোখের জল এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে হাতের লেখা।
সিলভিয়া, বন্ধু আমরি কুমারীত্বের কোনও অহঙ্কার এখন আর নেই। যেদিন সেই অসভ্য জলদস্যুরা আমাকে জোর করে তুলে এনে পাঠিয়ে দিল সম্রাটের কাছে সেদিনই আমি হারালাম আমার সতীত্বকে। প্রকৃতি আমাকে যতখানি শক্তি দিয়েছে তা দিয়ে নিজেকে বাঁচাবার বৃথা চেষ্টা করেছিলাম আমি। তা কোনও কাজেই লাগল না। হারেমের দেওয়ালে প্রতিফলিত হলাে এক অসহায় নারীর আর্তনাদ। কেউ বাড়িয়ে দিল না সাহায্যের হাত। এমনভাবেই আমি আজ পরিণত হয়েছি এই শয়তান-তুর্কির রক্ষিতায়।
কি করে আমি মুখােমুখি হলাম এই চরম বিপর্যয়ের, সে কথা জানতে ব্যাকুল হচ্ছে কি তাের মন?
শােন তবে, শােনাই তােকে ভয়ঙ্কর সে কাহিনী। পাের্টসমাউথ থেকে তােকে যেদিন চিঠি লিখেছিলাম তার পরদিন আমরা যাত্রা করি ইংলিশ চ্যানেলের উদ্দেশ্যে। আকাশ ছিল ঝকঝকে নীল। কিন্তু দৃষ্টিরেখা থেকে স্থলভাগ হারিয়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গে আমি আক্রান্ত হই সমুদ্রজুরে। এমনটি চলতে থাকে তিন সপ্তাহ ধরে। এমনকি আমি হামাগুড়ি দিয়ে ডেকে উঠতেও পারতাম না।
একদিন হঠাৎ শুনতে পেলাম ডেকের ওপর উন্মত্ত কণ্ঠস্বর। পাঠালাম এলিজাকে জানতে এর কারণ। সহযাত্রী বলল তাকে, আমাদের জাহাজ সম্ভবত আক্রান্ত হয়েছে মুর জলদস্যুদের দ্বারা।
বুঝতেই পারছিস এই খবর বয়ে আনল কী ভীষণ ভয় মেশানাে শিহরণ! অনুমান সত্যি প্রমাণিত হলাে একটু পরে। শােনা গেল ঘন ঘন গুলির শব্দ। ভেসে এল নাবিকদের আর্ত হাহাকার। বুঝলাম আমি, শুরু হয়েছে ধ্বংসের প্রলয়লীলা।
বন্দুকের লড়াই চলল অনেকক্ষণ ধরে। তাতে ছিল না। কোনও ক্ষণিকের বিরতি। একসময়ে ফুরিয়ে গেল আমাদের গুলি। জাহাজ জুড়ে তখন শুধু ভীতসন্ত্রস্ত যাত্রদেয় কাতর হাহাকার, নীরব কান্না আর অস্ফুট গােঙানি।
ফুরিয়ে গেল সময়সীমা তারও আশ্চর্য নীরবতার ঘােমটায় মুখ ঢাকল চারপাশ, বুঝতে পারলাম আমি, কিছুক্ষণের মধ্যেই হতে হবে আমাকে বন্দিনীয় কারা যেন সশব্দে ভেঙে দিল কেবিনের দরজা। বিরত চোখে দেখি সামনে দাঁড়িয়ে সশস্ত্র তুর্কিরা। সারা দেহে তাদের রক্তের লাল ছিটে।
গত দুঘণ্টা ধরে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ঘটনার স্নায়ুপুঞ্জে তুলেছিল যে দামাল টাইফুন, আবেগ নিয়ে করছিল খেলা অবহেলায়, এখন বুঝি সহ্য হলাে না তার, সমুদ্রজুরের তন্দ্রাচ্ছন্নতায় অচিরেই হলাম অচেতন; সঁপে দিলাম নিজেকে এলিজার হাতে।
জ্ঞান ফিরতে দেখি শুয়ে আছি আমি বার্থে আমার, দাঁড়িয়ে পাশে এলিজা। বলল সে, আমরা নাকি বন্দিনী আলজিরিও জলদস্যুদের হাতে। বলল সে, চলেছি আমরা জিব্রাল্টার প্রণালী দিয়ে।
জিব্রাল্টার পার হতে সময় নিল জাহাজ প্রায় সাতদিন, গানস্যালুটের শব্দে আমি বুঝলাম এসেছি আমরা আলজেরিয়ার দরিয়ায়। এখনও পর্যন্ত ক্যাপ্টেন এসে করাঘাত করেনি আমার দরজাতে। কিন্তু যেই না জাহাজ নিরাপদে করল নােঙর, সে সামনে এসে দাঁড়িয়ে চমৎকার ইংরেজীতে আদেশ করল আমরা যেন আধ ঘণ্টার মধ্যে তৈরি হয়ে নিই। তার মুখে চমৎকার ইংরেজী শুনে সােৎসাহে আমি জানতে চাই, আমাদের নিয়ে কি করতে চায় সে।
যখন সে বলল আমাদের সে উপহার দেবে সম্রাটকে ক্রীতদাসী হিসেবে, এই কথা শুনে এক লহমায় হলাম আমি, বাক্যহারা। সে আরও জানালাে যে রূপসী বলে আমার চাহিদা বেশি হবে সম্রাটের কাছে। তার কথায় আমার আতঙ্ক এমন ঘনীভূত হলাে যে কয়েকটি প্রহর কেটে গেল স্তব্ধতায়। সম্বিৎ ফিরে এলে চোখের জলে ভেজালাম অসহায় গালদুটিকে। না হলে আবার আবেগ এসে আক্রমণ করত আমায়।
আমার কান্না দেখে কাপ্টেনের মুখে পিশাচ-হাসির ছোঁয়া লাগে। মৃদুকণ্ঠে সে শয়তানী ভঙ্গিতে তারিফ করতে থাকে আমার চোখের জলের আর সােৎসাহে বলে—ক্রীতদাসী হবার পরে এমন অনিক চোখের জল ফেলতে হবে তােমায়।
এ কথা বলে সে দ্রুত চলে যায় ডেকের ওপর। পরে আমি জানতে পেরেছিলাম যে সে হলাে ইংলিশ রেনেগাড়।
আমার মতাে অবস্থা অসহায় এলিজার। ভেবে উঠতে পারছে না সে কি করা উচিত এখন। আমি বেশ বুঝতে পারছি ভয়াবহ এক দুর্ঘটনা ঘটতে চলেছে আমার জীবনে এই মুহূর্তে। এলিজার কোনও সহানুভূতি ভরা সংলাপ আমার ওপর বর্ষণ করবে না শান্তির বারিধারা।
ভবিতব্যের অমােঘ নির্দেশে সাজতে বসি আমি। অনিচ্ছুক প্রসাধনে ফুটিয়ে তুলি নারীত্বের সৌন্দর্যকে। তারপর ক্যাপ্টেন এসে আমাদের মুখ আবৃত করে ঘন ওড়নায়। কয়েক মুহুর্তের। মধ্যে আমরা প্রবেশ করি সম্রাটের হারেমের ওয়াটারগেটে।
এই মাসের বারাে তারিখের সন্ধে সাড়ে ছ’টায় আমি ঢুকেছিলাম এই প্রাসাদে, কুমারী জীবনের নিদারুণ পরিসমাপ্তি ঘটে গেল যেখানে। সেই কয়েদখানায় পা রাখার আধঘণ্টার মধ্যেই আমার সামনে এসে দাঁড়াল ভয়ঙ্কর মুহূর্তটা আর পাঁচ ঘণ্টার মধ্যেই নির্মম সম্রাট আমার কুমারীত্ব হরণ করল নিষ্ঠুরভাবে। কেমন এক দুঃস্বপ্নের মতাে ঘটে গেল পুরাে ঘটনাটা।
যে হারেমে আমাদের টেনে হিচড়ে ঢােকানাে হয়েছিল তারই এক প্রান্তে অতুলনীয় বৈভবের চিহ্নমাখা চেম্বারে বসেছিল সম্রাট। বয়েস পঁয়তাল্লিশ হবে, মুখে তার ঝুলছিল অদ্ভুত দর্শন পাইপ। ক্যাপ্টেন আমাদের দিকে ইশারা করে তুর্কি ভাষায় কি যেন সব বলল তাকে। তাই শুনে সম্রাটের মুখে ফুটে। উঠল প্রশান্তির হাসি। কয়েক মুহূর্ত লােভী শিয়ালের মতাে জরিপ করল সে আমাদের দেহ। বিশেষ বিশেষ জায়গায় স্থির নিবদ্ধ হল চোখের মণি তার। কামনার লালয় সিক্ত হল ঠোটদুটি। তারপর সে কিছু বলল ক্যাপ্টেন। সঙ্গে সঙ্গে ক্যাপ্টেন এলিজার হাত ধরে নিয়ে গেল তাকে বাইরে। আমিও অনুসরণ করতে চলেছি সেই পথচ এমন সময় ক্যাপ্টেনের গম্ভীর গলার আদেশে ফিরে আসতে বাধ্য হই। আতঙ্কে কাঁপতে কাঁপতে বসে পড়ি সােফার ওর।
এলিজাকে নিয়ে ক্যাপ্টেন বাইরে বেরিয়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়ায় সম্রাট। মন্থর পদক্ষেপে এগিয়ে আসে আমার দিকে। কঠিন করতলে বন্দী করে আমার হাতের তালু। ভয়ে কাপতে থাকে তা। সেই কাপনের হিমশীতল অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ে কোষে কোষান্তরে।
কিছুক্ষণ কেটে যায় এইভাবে। তারপর সে আমার চিবুকে টোকা মেরে পরিষ্কার ইংরেজীতে বলে ঈশ্বরের অসীম দয়াতে আমার মতাে রূপসী সুন্দরীকে ক্রীতদাসী হিসেবে পেয়েছে সে। তাকে ইংরেজী বলতে শুনে অবাক হই আমি। কিন্তু তার বাচনভঙ্গির মধ্যে লুকিয়ে ছিল যে উল্লাসের গােপন ইঙ্গিত তা। আমার মনকে আবার আচ্ছন্ন করে ব্যথাতুর মগ্নতায়।
সম্রাট ধীরে ধীরে আকর্ষণ করে আমায় কৌচের দিকে। আমি প্রাণপণে চেষ্টা করি নিজেকে মুক্ত করতে এই নরপশুর হাত থেকে। কিন্তু তার প্রবল শক্তির কাছে পরাজিত হতে হয় আমাকে। অচিরেই সে আমার কোমর জড়িয়ে ধরে আমাকে নিয়ে যায় কৌচে। তারপর জোর করে আমাকে বসায় তার হাঁটুর ওপর। আবার শুরু হয় আমার নিস্ফল প্রতিরােধের ব্যর্থ প্রয়াস। সে জঘন্য কামনার আক্রোশে জড়িয়ে ধরে আমার গলা।। তারপর ধীরে ধীরে ঠোটে এঁকে দেয় রক্তচুম্বন। অনেকক্ষণ এইভাবে জড়িয়ে রাখে আমাকে। সমস্ত শরীরে বয়ে যায় জঘন্য ঘিনঘিনে অনুভূতি। তখনও আমি আপ্রাণ চেষ্টা করি নিজেকে মুক্ত করতে এই বাসনার কারাগার থেকে।
তারপর ধীরে ধীরে সম্রাট তার জিভ প্রবেশ করায় আমার মুখের মধ্যে, লেহন করে চারপাশ। লালাসিক্ত জিভের ডগার চিনচিনে অনুভূতি এনে দেয় অনাস্বাদিত চেতনার স্পন্দুর। মন করে এর আগে কেউ স্পর্শ করেনি আমায়। কি বলব সলভিয়া, অদ্ভুত আবেগে ভেসে যাই আমি। এই জীবনে এমন অভিজ্ঞতা তাে আগে হয় নি আমার। তুই নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারছি কি ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলাম এই ঘটনায়। কিন্তু তখনই আমার মধ্যে জেগে ওঠে যৌবন-তৃষ্ণা, প্রকৃতি এসে ক্রিয়াশীল হয়! তার বন্যবর্বর দুরন্ত দুর্মর চুম্বনবৃষ্টির কাছে ভেসে যায় আমার বাধার শেষতম অবলম্বন। ভয় আর লজ্জা ভরা অদ্ভুত অনুভূতিতে চোখদুটি বন্ধ করে দিই আমি। মনের মধ্যে জেগে ওঠে অদ্ভুত বন্য ইচ্ছেরা।
সিলভিয়া, কি বলব তােকে, তুই আমার ছােট্ট বেলার সহেলী বলে জানাই তােকে অকপটে, সেই মুহুর্তে আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম উদগ্র কামনার ঘন অরণ্যে। যখন সম্রাট গভীর আশ্লেষে লেহন করতে থাকে আমার সমস্ত মুখমণ্ডল, মুখ থেকে নিঃসৃত হয় অদ্ভুত গােঙানির শব্দ, মাঝে মাঝে চাপা দীর্ঘশ্বাস এসে জানিয়ে দেয় হৃদয়ের গভীরে লুকিয়ে আছে অনেক বিষাদ। পরক্ষণেই আবার আমি ভেসে যাই ভাললাগার তরণীতে।
আগেই বলেছি তােকে, সে আমাকে বসিয়েছিল তার হাঁটুর ওপর। একহাতে জড়িয়ে ছিল গলা। অনেকক্ষণ ধরে এমনভাবে চলল তার জিভের মারাত্মক খেলা। দীর্ঘ চুম্বনে আমাকে একেবারে অতিষ্ঠ করে দিল সে। এরপর দেখি তার আরেকটি হাত লােভী মাকড়সার মতাে ধীরে ধীরে এসে প্রবেশ করছে পেটিকোটের ভেতরে। আমি প্রাণপণে চেষ্টা করি নিবৃত্ত করতে তাকে এই ভয়ঙ্কর খেলা থেকে। কিন্তু নিষ্ফল হয় আমার সমস্ত প্রয়াস। সে ক্রমশই আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আমাকে। যদি বা একমূহুর্তের জন্যে ছেড়ে দেয় আমার বিধ্বস্ত ঠোট দুটিকে সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় বুকের আশেপাশে চোরাগােপ্তা আক্রমণ। এমনটি চলতে থাকে কিছুক্ষণ ধরে। ধীরে ধীরে আমি হারিয়ে ফেলি বাধা দেবার ইচ্ছেটুকু। এমনটি হয়নি কোনদিন আগে। পরিণত হই তার খেয়ালের পুতুলে। সে ধীরে ধীরে আমাকে শুইয়ে দেয় প্রশস্ত কৌচে।
তারপর আমি আমার কামনার গােপন ত্রিভুজে অনুভব করি তার কলুষিত স্পর্শ। ক্রমশই তার আঙুল যেন বর্ষার মতাে গেঁথে যায় লজ্জা-ভরা গহ্বরে। সিলভিয়া, জানাই তােকে গােপন কথা সেই মুহূর্তে কেমন এক অচেনা আবেগ এসে গ্রাস করল আমায়। শৈশবের প্রথম প্রহর থেকে সযত্নে রক্ষা করা কুমারীত্ব হারাবার ভয়ঙ্কর বিহুল এই মুহূর্তে আত্মার কোথায় যেন বেজে ওঠে অদ্ভুত শব্দের ব্যঞ্জনা। যেন আমি ভেসে যাই ভাললাগার মেঘমালায়। কেন। বিরূপ ঘৃণারা গ্রাস করে না আমাকে!
মুখে তার লালাভরা জিভের গােপন আক্রমণ নিভৃতগহূরে আঙুলের সর্বনাশা খেলা—নিজেকে আর স্থির রাখতে-পারি না আমি। বুঝতে পারি ক্রমশই ভালাে লাগছে এই রতিরঙ্গবিলাস।
ক্রমশই আমি নিমজ্জিত হচ্ছি সুখসাগরে। জানাতে তােকে লজ্জা হচ্ছে আমার তবুও বলি, তখন চেয়েছি অনন্তকাল ধরে চলুক এই সর্বনাশের খেলা। আর একটি অনুভূতি ক্রমেই ঘনীভূত হতে থাকে—কখন আসবে সেই পরম কাঙিক্ষত মুহূর্তটি যখন পরিপূর্ণ হবে আমার তৃপ্তি সম্রাটের পৌরুষ যখন সে বুঝতে পারল যে আমি আর আগের মতাে সৃষ্টি করছি না বাধার প্রাচীর বরং আমার আচরণে ফুটে উঠছে। নীরব আত্মনিবেদনের ভঙ্গিমা তখন সে আরও জোরে আঁকড়ে ধরল আমাকে। ইচ্ছেমত হাত রাখলাে আমার দেহের সবখানে।
তারপর ধীরে ধীরে সে আমার করতল আকর্ষণ করে রাখে তার নিম্ন নাভিতলে। তখন আমি বুঝতে পারি যে মাংসল দৃঢ় দণ্ডটি ক্রমেই বিক্ষোভে আঘাত করছে। সে যেন আর থাকতে চাইছে না বন্দি পােশাকের অন্তরালে। স্পর্শ করে বুঝতে পারি এটি বেশ দীর্ঘাকৃতি এবং পুরুষ্ট আকারে প্রাণপণ চেষ্টা করেও সরাতে পারছি না করতলখানি অচেনা অজানা এই বস্তুটির রােমাঞ্চিত পরশ মনের মধ্যে সৃষ্টি করছে অনন্ত কুহকমায়া। ভাবছি আমি সম্পূর্ণ উপুড় হলে আমি বােধহয় নিজেকে আর স্থির রাখতে পারব।
এর আসল অবয় সম্বন্ধে বিন্দুমাত্র ধারণা না থাকা সত্ত্বেও বেশ বুঝতে পারি আমি তার চলাফেরার প্রতিটি ছন্দ আমার জন্যে বয়ে আনছে অনির্বচনীয় আনন্দানুভূতি। ক্রমেই স্ফীত হচ্ছে সেই মাংসল পুংদণ্ডটি আর থেকে থেকে আঘাত করছে আমার মুঠিবদ্ধ আঙুলে। পরক্ষণে কি ঘটতে পারে সেটা আন্দাজ করে শিহরিত হচ্ছে মন। আমি মনে প্রাণে চাইছি দীর্ঘতর হােক এই শরীরের মারাত্মক খেলা। অপেক্ষা করতে থাকি ভয়ঙ্কর সেই কাঙ্ক্ষিত প্রতীক্ষিত মুহূর্তটির জন্যে এতদিন ছিল যা সুদূর কল্পনায় রহস্যাবৃত, এখন বুঝি ধীরে ধীরে তা এসে দাঁড়িয়েছে আমার সামনে। ইতিমধ্যে সম্রাট নিঃসন্দেহ হয়েছে যে আমি হলাম একেবারে কুমারী। এখনও পর্যন্ত কোন পুরুষ পতঙ্গ এসে দংশন করেনি আমাকে। তাই দ্বিগুণ উৎসাহে সে শুরু করে তার বাঘবন্দি খেলা। কখনও বা মুখ ঢুকিয়ে দেয় উন্মুক্ত দুটি স্তনের মধ্যবর্তী প্রান্তরে। কখনও জিভের পরশে সিক্ত করে নাভিদেশ। আবার কখনও বা হাত রাখে কামনার অনন্ত গহ্বরে।
এরপর সে ধীরে ধীরে উন্মােচিত করে আমাকে—যা ছিল রাতপােশাকের আড়ালে এখন তা উন্মুক্ত হল সম্রাটের চোখের সামনে। কামনার ধিকিধিকি আগুন জ্বলছে আমার মনে। ভুলে গেলাম সবকিছু প্রতিরােধের স্পৃহা হারিয়ে গেল মন থেকে, ভালবাসা এসে গ্রাস করলাে ঘৃণাকে।
সম্রাট ধীরে ধীরে প্রসারিত করল আমার উরু দুটিকে। তারপর এঁকে দিল সেখানে চুম্বনচিহ্ন। তার উন্মত্ত বাসনার তপ্ত লাভাস্রোতে ভেসে গেল আমার কুমারী জীবনের শেষতম অহংকার। নগ্নিকা আমি রইলাম তারই আক্রমণের প্রতীক্ষারতা।
আবেগে চোখ দিলাম বন্ধ করে ঘন হল নিঃশ্বাস, স্ফীত হল স্ফুরিত ওষ্ঠাধর, স্তনবৃন্তে লাগল নাচন, কঁপন জাগলা নাভিদেশে। চোখ খুলতেই দেখি নিজেকে একেবারে উলঙ্গ করেছে সম্রাট। আর সেই প্রথম আমার চোখের সামনে দৃশ্যমান হল ভয়ংকর সেই অস্ত্রটি, যা এক লহমায় ছেদ আনতে পারে কুমারী জীবনের অনুচ্চারিত উত্তেজনায় অনুভব করি আমি—তার নগ্নদেহ এসে জড়িয়ে ধরেছে আমাকে, জিভে জিভে চলছে লুকোচুরি, সিক্ত হচ্ছে ঠোট লালায়, শিথিল হচ্ছে দেহ বাসনায়, উদগ্র চোষণের ধারাবাহিক আক্রমণে বিধ্বস্ত হচ্ছি আমি।
মনে হচ্ছে যেন আক্রান্ত হয়েছি প্রচণ্ড কামজুরে আর উদগ্রীব হয়ে আছি সম্রাটের জ্বলন্ত পৌরুষের আগুনে জ্বলেপুড়ে মরব বলে। এমনভাবেই সে আমার অনিচ্ছার বাতায়নে এনেছে গভীর সুখানুভূতির বসন্ত বাতাস—প্রথমে যা ছিল প্রচ্ছন্ন অঙ্গীকারে নির্বাপিত, উন্মুক্ত করেছে তাকে কাম-কুশলতায় সত্যি এ কাজে দারুণ পারদর্শী সে। এখন যদি সে চুড়ান্তভাবে হরণ করে আমার সতীত্ব, তাহলেও বিন্দুমাত্র লজ্জিত হব না আমি। কেননা সেই তাে আমাকে শিখিয়েছে বাসনার বর্ণমালা বলেছে যৌবন-আকাশে শরীর সুখের প্রদীপ জ্বালতে এমনভাবেই সে অধিকার করেছে আমাকে শারীরিক এবং মানসিক দিক থেকে। আমি নিজেকে সম্পূর্ণ সঁপে দিয়েছি তার দুর্বার ইচ্ছার, দুর্মর বাসনার, দুর্জয় সাহসের, দুনির্বার আকাঙক্ষার জগতে। মুক্তি নেই আমার। আর কোনদিনই আমি স্ব-ইচ্ছায় উড়ব না স্বাধীন আকাশে। চিরদিনই আমাকে থাকতে হবে বন্দিনী তার হারেমের বেহেস্তে।
সম্রাট এখন আমাকে নিবিড়ভাবে আলিঙ্গন করছে। ভালবাসার ফুলঝুরি হয়ে ঝরে পড়ছে তার অনুভূতিরা; আমার মুঠিবদ্ধ হাতে এই মুহূর্তে বন্দি তার অহংকারের পুংদণ্ড। মাঝেমধ্যে নিস্থল আক্রোশে মাথা নাড়ছে সেটি, বুঝি ঘােষণা করছে জেহাদ তার প্রভুর বিরুদ্ধে। এত কাছে কামনার বিস্তীর্ণ স্বর্ণালী বেলা, অথচ সে কিনা এখনও স্পর্শ করতে পারছে না তাকে। আর কতকাল চলবে তার অন্তবিহীন অপেক্ষার পালা? হঠাৎ সম্রাট আমার সারাদেহ ভূরিয়ে দেয় উন্মাদ চুম্বনবর্ষণে। রাখে তার জিভের পর এখানে ওখানে, পরমুহূর্তেই নিদারুণ আনন্দের গল্পীর গােপন গহূরে ডুবতে ডুবতে সহসা অনুভব করি আমার নিম্ন নাভিদেশে চটচটে আঠালাে তরলের উপস্থিতি বুঝতে দেরি হয় না আমার যে এটির উৎস হল ঐ উথিত পুংদণ্ডটি।
এক নিমেষে শিথিল হয়ে আসে দৃঢ় মাংসপিণ্ড। উত্তেজনা অন্তে একরাশ অবসাদ এসে গ্রাস করে তাকে, নিজেকে সে নিমজ্জিত করে আমার দেহের নিশ্চিত নিরাপত্তায়।
দুজন আমরা থাকি মগ্ন অনন্ত আবেশে। অতি কষ্টে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করি তার থেকে। সহসা তাকাই তার পুরুষােচিত নগ্ন দেহখানির দিকে। উজ্জ্বল আলাের নী দৃশ্যমান গােপন অঙ্গেরা বিশ্রীভাবে হাত ইশারা করে আমায়। আমি ধীরে ধীরে নেমে যাই কৌচ থেকে। দেওয়াল জোড়া আয়নায় প্রতিফলিত আমার নগ্ন দেহের ছবি দেখতে দেখতে সহসা অনন্ত লজ্জা এসে গ্রাস করে আমায়। সব হারানাের বিয়ােগ-ব্যথায় ভরে ওঠে মন।
ছিল যা এতক্ষণ অনাস্বাদিত আনন্দের স্পর্শমাখা, এই মুহর্তে তা ডুব দিয়েছে কলঙ্কের কালিমা-ঘেরা সাতসাগরে, সদ্য হারানাে কুমারীত্বের নিস্ফল হাহাকারে অশ্রুসজল হয়ে ওঠে চোখদুটি আমার।
ঠিক করে নিই আমার অসংযত বেশবাস। সন্তর্পণে দেখি দেহের কোথাও চিহ্ন রেখেছে কিনা সেই সর্বনাশ। ইতিমধ্যে সম্রাট জেগে উঠেছে তার স্বল্পস্থায়ী শিথিল তন্দ্রার ঘুমঘাের থেকে। নিজেকে সম্পূর্ণ অনাবৃত রেখে উঠে আসে সে আমার কাছে। কামনার লােভী আঙুলে স্পর্শ করে আমার কটিদেশ। আবার যে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে চলেছে তা অনুমান করে মনে মনে শিউরে উঠি আমি। কেননা দেহের অঙ্গে অঙ্গে তখনও গােপন ব্যথার অনুরণন। এই মুহূর্তে নতুন করে আর সাজতে স্বৈরিণীর সাজে লাগছে না ভালাে আমার। কিন্তু জানি আমি নিষ্ফল হবে প্রতিরােধের প্রাচীর। আই আবার নিজেকে নিঃশেষে সমর্পণ করি সম্রাটের দুরন্ত ইচ্ছের কাছে অনায়াস অবহেলায় কিছুক্ষণ আমাকে নিয়ে খেলা করে সে। চোখের পাতায়, কানের লতিতে চিরকের ডগায়, স্তনশীর্ষে কুক্ষিদেশে, নাভিমূলে রাখে তার লােভী জিভের স্পর্শ। তারপর আবেশভরা কণ্ঠে ফিসফিস করে বলে-ঈশ্বরের অশেষ করুণায় তােমায় কাছে পেয়েছি সুন্দরী। অনেকদিনের স্বপ্ন ছিল করব বন্দিনী এক শ্বেতাঙ্গিনীকে আমার হারেমের রুদ্ধ কারায়, অনন্ত প্রহর ধরে ভােগ করব তাকে। এতদিনে সেই স্বপ্ন সফল হলাে আমার। যদিও এই মুহুর্তে তােমাকে ছেড়ে যেতে বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই আমার। কিন্তু জরুরি কাজে যেতে হবে আমাকে। যতক্ষণ থাকব দূরে, ভারাক্রান্ত হবে হৃদয় আমার। ফিরে এসে ভাসব আবার সুখসাগরে। এখন এসসা সুন্দরী, দেখাই তােমায় তােমার কারা আবাসখানি, এখন থেকে যেখানে কাটবে তােমার অনন্ত প্রহর।
সম্রাটের কথায় মনের মধ্যে জেগে ওঠে অদ্ভুত সাহস এক। স্পষ্ট উচ্চারণে তাকে আমি শােনাই আমার ফেলে আসা দিনযাপনের কাহিনী, অকপটে জানাই তাকে অনুরক্ত আম হেনরীর প্রতি। দ্বিধাহীন কণ্ঠে ঘােষণা করি যদিও সে চেষ্টা রছে আমার শরীর আকাশে সুখের প্রদীপ জ্বালতে, তবুও মন মার রয়েছে পড়ে সুদূর ইংল্যান্ডের কোনও এক অখ্যাত মে, যেখানে আমার জন্য অপেক্ষারত হেনরী।
এমনকি এও জানাই তাকে যে যদি সে আমাকে এই মুহূর্তে স্কৃতি দেয় এই বন্দিদশা থেকে তাহলে আমার কাকা দেবে পকে অজস্র অর্থের উপহার যা সে দূরতর কল্পনার মধ্যেও ভাবতে পারবে না। শুনেছিলাম আমি যে এইসব জলদস্যুরা হল অত্যন্ত অর্থলােভী, টাকার জন্যে করতে পারে না এমন কোনও কাজ নই। এক নিঃশ্বাসে সব কথা বলে ক্ষণকাল স্তব্ধ থাকি দেখতে পর প্রতিক্রিয়া। দেখি কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকে সে। এরপর বলতে শুরু করে—শােনাে শ্বেতাঙ্গিনী সুন্দরী, তােমার সব কথা আমার মনের মধ্যে তুলছে না কোনও তরঙ্গ। জেন মি ভবিতব্য তােমাকে করেছে আমার হারেমে বন্দিনী, এর একে মুক্তি নেই তােমার। কেউ যদি আমাকে পৃথিবীর সমস্ত নদৌলত এনে দেয়, করে আমায় স্বর্গের একমাত্র অধীশ্বর, Tহলেও আমি ছাড়তে পারব না তােমাকে।
জীবনে অনেক নারীর গােপন কুঞ্জবনে চলেছে আমার অবৈধ অভিসার। কিন্তু তােমাকে দেখে বুঝেছি আমি ব, তুমি হলে ভগবানের অসামান্যা সৃষ্টি। তােমার কুমারী দলের মনমাতানাে সুবাসে হয়েছি আমি মাতাল। তােমার মনিন্দ্য দেহের মােহিনী মায়ায় হয়েছি আমি বিভ্রান্ত। তােমার Tজ্জানত ব্যবহারের বিনম্র নিবেদন মনে জ্বেলেছে আমার তসহস্র কামনার দীপমালাকে।
তাই বৃথা এ অনুনয়। শান্তভাবে মেনে নাও তােমার ভাগ্যকে। মনে করাে ঈশ্বর তােমাকে সৃষ্টি করেছে আমাকে সুখী রার জন্যে। ফিরে আসি আমি। তারপর শেখাব তােমায় রােগের অনন্ত রহস্য। আমারই কামনার সুরভিত উদ্যানে টবে তুমি রাঙা রক্তগােলাপ হয়ে। মধ্যরাতে বাজবে আমার শরীর তৃষার নিক্কণে, হবে শৈশবের সহচরী, যৌবনের দেবদূতী।
ধীরে ধীরে আমি আমার অভিজ্ঞতার পরশপাথরে রিণত করব তােমায় কামবিহুলা রমণীতে। দেব তােমায় এমন খের অনুভূতি, মনে রাখবে তুমি সারা জীবন আমায়, লেহন রব গােপনতম অঙ্গের প্রত্যন্ত প্রদেশ, শিহরিত হবে তুমি। স্বন দেব ফুরিত ওষ্ঠাধরে, বৃন্তচ্যুতা বনবালার মতাে হবে মি ভূলুণ্ঠিতা। এসাে প্রিয়ে, যৌবনের সরসীতীরে শুরু হােক আমাদের ভালবাসাবাসির অনন্ত প্রহর।
সম্রাটের কথায় কখন যে নিজেরই অজান্তে ভিজে গেছে চাখের পাতা কান্নার লবণাক্ত জলে জানি না তা আমি, চেতনা করল যখন সে সরু জিভের ডগা ছোঁয়াল সেই অশ্রুকণার পর। আর বলল আমায়, এসাে প্রিয়ে, চল তােমার গােপন নাসাদের অভ্যন্তরে।
স্বপ্লাবিষ্টের মতাে অনুসরণ করি তাকে।পৌছে যাই আমার বলাসগৃহে। দেখি এখানে আছে তিনটি সুসজ্জিত কক্ষ। সামনে দীর্ঘ অলিন্দ। সম্রাট আমার কাঁধে ঝুর্ত রেখে আমায় নিয়ে যায় নির্দিষ্ট ঘরে, বলে—প্রথমটি হল বসার ঘর, এখানে একান্ত নাপন অতিথিদের সঙ্গে আমরা কাটাতে পারি আলাপচারিতার নন্তরঙ্গ মুহূর্ত। দ্বিতীয়টি ড্রেসিংরুম, যেখানে নিভৃতে তুমি জ্জিতা করবে নিজেকে সুরভিত অঙ্গরাগে, হয়ে উঠবে অপূর্ব ক হুরী। তৃতীয়টি হল শােবার ঘর, দেখছাে তাে এখানে প্রবেশ রতে হলে আসতে হবে অন্য দুটি ঘর পেরিয়ে।
চারদিকে তাকাই আমি। দেখি তিন তিনটি প্রশস্ত বাতায়ন য়েছে এই শােবার ঘরে। শুনতে পাই সমুদ্রের গর্জন। মুক্ত তায়নে মুখ রেখে দেখি অনেক নিচে সাগরের উর্মিমুখর লুকাবেলা। অদূরে সেই পােতাশ্রয়টি, যেখানে দাঁড়িয়েছিল নামাদের হতভাগ্য জাহাজ। বুঝতে পারি এখান দিয়ে নিষ্ক্রমণ নসম্ভব। সম্রাট আবার আমায় আকৃষ্ট করে প্রশস্ত শয্যায়। এই হের্তে আর ভালাে লাগে না তার ডাকে সাড়া দিতে। মখমলের Tদর পাতা, রয়েছে ভেলভেটের কুশন। সর্বত্র প্রাচ্যদেশীয় আভিজাত্যের চিহ্ন মাখা। দুদিকের দেওয়ালে সুবিশাল আয়না। মনকি সিলিং-এও রয়েছে আয়নার আবরণ। বুঝতে পারি আমি প্রতি রাতে এখানে রচিত হবে আমার ত্যুশয্যা। ইচ্ছের বিরুদ্ধে আমাকে বারবার লেহন করবে ঐ পাষণ্ড পশু। দংশন করবে কারণে অকারণে। নিষ্পেষণের পঢ়তর মাত্রায় ব্যথা দেবে আমার কোমল অঙ্গে। ভয়ের কাপুনি এসে জড়িয়ে ধরে আমাকে। মৃদুকণ্ঠে সম্রাট লে—বৃথাই ভয় পাচ্ছ তুমি আমায়। ফিরে আসি আমি রপর সিঞ্চিত করব তােমায় অপরূপ বাসনার বারিধারায়। ল আমার হাতে তুলে দেয় সেই বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের বিকাঠি, সেটি হল শােবার ঘরে প্রবেশ করার রুদ্ধ সংকেত।
তারপর সে আবার আমাকে আলিঙ্গন করে, ঠোটের কোণে মাকে চুম্বন স্পর্শ, হাত রাখে চিবুকে। জানায়, সে আসবে করে সাতদিনের মধ্যে। আনবে-আমার জন্যে শীতকালের উষ্ণ পহার। স্থির বিশ্বাসূ তার ততদিনে আমি হব অনুরক্তা তার এতি। অকারণে আবেগের তরী ভাসাব না জীবনতরণীতে। তার কথার মধ্যে ছিল গম্ভীরতার ছোঁয়া, আমাকে উত্তর এবার বিন্দৰত্ৰ সুযােগ না দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে যায় সে। এতক্ষণে একলা হলাম আমি। ভাবনারা সব গুমরে যাচ্ছল মনের মধ্যে। তার জঘন্য শারীরিক উপস্থিতিতে নজেকে ঠিকমত প্রস্ফুটিত করতে পারিনি আমি। এবার করাশ অন্ধকার এসে অকারণে বিদ্ধ করল আমায়। তাকিয়ে দেখি চারপাশে। সন্তর্পণে পরীক্ষা করি কোথাও আছে কিনা গােপন ছিদ্র। আবিষ্কার করি আমি বেডরুমের রজাটি ভেতর থেকে বন্ধ করা যায়। এক নিশ্চিত নিরাপত্তায় ভরে ওঠে মন। কেননা এখানে প্রবেশ করার আর কোনও পথ উন্মুক্ত নেই।
ঠিক সেই মুহূর্তে ঘরে এসে ঢােকে আমার একান্ত সহচরী পর চারটি তরুণী। সম্রাট তাদের নিযুক্ত করেছে আমার বেক্ষণের পরিচর্যার জন্যে। তাদেরই একজন পরিষ্কার ইংরেজীতে কথা বলে আমার সামনে। তার কাছে আমি এলিজার খবর জানতে চাই। সে এ বিষয়ে কিছুই জানাতে পারে না।
শােনায় সে তার বিড়ম্বিত জীবনকথা। ভাগ্যের নিদারুণ পরিহাসে আজ সে স্থান পেয়েছে সম্রাটের কলঙ্কিত হারেমে। হয়েছে তার উপপত্নী। সহচরীরা আমার জন্যে নিয়ে আসে সুস্বাদু খাদ্যের উপকরণ। সেই মুহূর্তে প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত ছিলাম আমি। নিমেষে শেষ করি আমার নৈশ আহার। তারপর জানলার পাশে রাখা কৌচে গা এলিয়ে বসে থাকি। প্রকৃতি এখন সেজেছে অপরূপ সাজে। এই মুহূর্তে সূর্য বিদায়ী অস্তরাগে আঁকছে তার ভালবাসার চিহ্ন, শেষ বিকেলের ক্লান্ত রােদেরা শেষবারের মতাে আচমন সারছে উর্মিমুখর তরঙ্গে, ফিরছে’ঘরে শ্রান্ত সমুদ্রপাখিরা, তখনও কর্মচঞ্চলতার চিহ্ন রয়েছে নিকটবর্তী বন্দরে। ক্ষণকালের জন্যে আমি ভুলে যাই সবকিছু। অনির্বচনীয় আনন্দের স্রোতে ভাসতে থাকি। মূল হয় যদি এক লহমায় এই মুহূর্তকে করে দিতাম অনাহতাহলে কি ভালােটাই না হত!
চেতনা ফিরে আসে সহচরীর ডাকে। হাতে তার ক’টি ইংরেজী বই আর রূপাের একটি ঘণ্টাগােলক যার সাহায্যে ডাকতে পারি আমি আমার সহচরীকে। তখন হঠাৎ শুনতে পাই গুলির শব্দ, প্রতিধ্বনি ওঠে দুৰ্গদেওয়ালে। ভীতচকিতা আমি জানতে চাই এর উৎস। সঙ্গিনী জানায় যখনই সম্রাট প্রাসাদে প্রবেশ করে অথবা প্রাসাদ ছেড়ে চলে যায় তখন তাকে এমন করে অভিবাদন জানান হয় বন্দুক-কুর্ণিশে। সে আরও জানাল যে, দিন পনেরাের মধ্যে ফিরবে না সম্রাট, শুনে কথা তার মন ভরে ওঠে স্বস্তিতে। যাক তাহলে বেশ কিছুদিন থাকব আমি অনাঘ্রাতা।
হাত রাখি ঘণ্টাগােলকে। ছুটে আসে সহেলী আমার। হাতে তার স্বর্ণালী দীপাধারে প্রজ্জ্বলিত প্রদীপশিখা। এবার দুচোখের পাতায় নামুক নিশিনিদ্রা, ইঙ্গিতে কাছে আসে তারা, শুরু করে আমার নৈশ পরিচর্যা। একজন উৎসাহে অনাবৃতা করতে চায় আমাকে। তর্জনী তুলে নিবৃত্ত করি তাকে। তখন তারা ধীরে ধীরে নিষ্ক্রান্ত হয়ে যায়।
ভেতর থেকে দরজা দিই বন্ধ করে। সন্তর্পণে চোখ মেলে তাকাই চারিদিকে। দেখি কোথাও আছে কিনা বিপদচিহ্ন। নজের নিরাপত্তা সম্পর্কে সুনিশ্চিত হয়ে তবেই ধীরে ধীরে উন্মােচিত করি নিজেকে। দেওয়াল জোড়া আয়নায় আমার নগ্ন দেহ হতে ছায়া কাঁপে। হাত বাড়াই রাত পােশাকের দিকে।
আর তখনই বিছানার নিচে কার উপস্থিতি অনুভব করি আমি! মেরুদণ্ড দিয়ে বয়ে যায় ভয়ের চোরাস্রোত। মুহূর্তের মধ্যে দেখি আবার বন্দিনী আমি সম্রাটের বাহুবন্ধনে। সেও আমার মতােই একেবারেই উলঙ্গ। হায় ঈশ্বর! তখন যে কী ভীষণ ভীতি আর আতঙ্ক এসে গ্রাস করেছিল আমাকে। যা ছিল নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার লােহার মােড়কে ঢাকা, নিমেষে ধ্বংস হল আত”। আমি তাে জানতাম যে আলজিরিয়া থেকে চলে গেছে সম্রাট–শােনা গেছে সশব্দ অভিবাদন, জানিয়েছে ক্রীতদাসী তার নিষ্ক্রমণের কথা সবাই আমাকে প্রতারিত করার জন্যে?
প্রতিরােধবিহীন আমি, নগ্নিকা কন্যা হয়ে হেঁটে যাই তার পাশে। নিমেষে সে আমাকে তুলে নেয় কোলে তার, ছুঁড়ে দেয়। মসলিন চাদরে।
প্রাসাদের বাতাস বৃথাই বয়ে বেড়ায় দীর্ঘশ্বাস আমার। কেউ এগিয়ে আসে না সাহায্য করতে আমায়। সম্রাটের মতাে প্রচণ্ড শক্তিশালী নারীলােভী দস্যুর কাছে কি অসহায় এই সামান্য রমণী !
পরমুহূর্তে সে সজোরে প্রসারিত করে আমার উরুদুটিকে। তারপর নিজেকে স্থাপিত করে তার মধ্যে। সেই মারাত্মক ঘটনার পর কেটে গেছে অনেকগুলাে প্রহর, তবুও ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্নের কালাে ছায়া আমার সমস্ত সত্তাকে গ্রাস করেছে। জান্তব আক্রোশে সে নির্মম নিষ্পেষণে নিপীড়িতা করে আমাকে। প্রচণ্ড যন্ত্রণার মধ্যে রক্তস্রোত নির্গত হয় আমার গােপন অঙ্গ থেকে। ব্যথায় কেঁদে কঁকিয়ে উঠি আমি।
নিজেকে মনে হয় এক অসহায় শিশু যেন! আপন খুশির খেয়ালে সে আমাকে নাড়াচাড়া করছে। আবার আমি বুঝতে পারি যে আমার গােপন গহ্বরে প্রবেশ করছে তার উদগ্র কামনার উত্তুঙ্গ যন্ত্রটি। ভয়ে, লজ্জায়, যন্ত্রণায় অচেতন হয়ে পড়ি আমি। বুঝতে পারি না কি ঘটে চলেছে চারপাশে। তবুও ক্ষীণতর চেতনার গভীর গােপন অরণ্যে তখনও শােনা যায় বীভৎস ঝড়ের সংকেত। নির্লজ্জ নেশায় মাতাল সম্রাটের লােভী দেহের দুর্বার আক্রমণে হই আমি ব্যথাদীৰ্ণা। অনায়াসে সে হাত রাখে দেহের সবখানে। ঠোটদুটিকে সুতীব্র চুম্বনে করে রক্তাক্ত। গভীরভাবে মর্দন করতে থাকে স্তনশীর্ষক। আমার কুমারী জীবনের সমস্ত বাধাকে ছিড়ে টুকরাে টুকরাে করে বীভৎস উল্লাসে নেচে ওঠে সে। মনে হয় আমি বুঝি মুখ লুকোবাে তার আদিম অভিসারের বিবরে। কেটে যায় এমন ঘটনা কতকাল ধরে। সুতীব্র চিৎকারে আমি অজ্ঞান হয়েঁ,যাই তার সুকঠিন বাহুবন্ধনে।
অনেকক্ষণ বাদে ফিরে আসে চেতনা আমার। তখনও চলছে সম্রাটের অন্তহীন খেলা। প্রথমে যা ছিল ভয়-মেশানাে বিবর্ণ অভিজ্ঞতা, এখন তাতে ক্ষীণ প্রবাহিনী স্রোতস্বিনীর মতাে বইতে শুরু করেছে ভাললাগার গভীরগােপন অনুভূতি। অনুভব করছি আমি সে উন্মত্ত আক্রোশে আন্দোলিত করছে শরীর তার, তার নগ্নদেহের স্পর্শসুখের আনন্দধারা প্রবাহিত হচ্ছে স্নায়ুপুঞ্জে আমার। গভীর অঙ্গে লাগছে দোলা, ঘর্ষণের অনাস্বাদিত সুখসাগরে ভাসছি আমি। ক্ষণে ক্ষণে মুখ দিয়ে উচ্চারিত হচ্ছে তীব্র সংরাগমাখা কামনার শব্দাবলী—ওহে সুন্দরী, আজ সারারাত তুমি থাকবে আমার অঙ্কশায়িনী হয়ে। ঈশ্বরকে অনেক ধন্যবাদ তােমার মত শরীর গরবিনী রমণীকে পেয়েছি বলে।
এরপর সে তুর্কী ভাষায় উচ্চারণ করে অজস্র শব্দাবলী।
তার কামনা থরােথরাে বাসনাজর্জর শরীরের ধারাবাহিক সংঘাতে আরও একবার অবচেতনার অন্ধকার এসে গ্রাস করে আমাকে। দুচোখে নেমে আসে ঘুম ঘুম তন্ময়তা। তারই মধ্যে অনুভব করি আমার দেহের সর্বত্র বিষাক্ত দংশনের মতাে তার কলুষিত স্পর্শ। এতক্ষণ ছিল যা ভয়ংকর এক অভিজ্ঞতার জারক রসে সিঞ্চিত, এখন ধীরে ধীরে জাগছে তার মধ্যে সুক্ষ্ম ভাললাগার নিভৃত অনুভূতি। মানুষের কামনার যাবতীয় ক্রীড়াকুশলতাকে উজাড় করে দিয়েছে সে আপন ইচ্ছার আকাশে তার। উড়ছি আমি যেন বানজারা কোনও পতঙ্গ। কখনও সে সম্ভোগের আলপনা আঁকছে আমার নিম্ননাভিদেশে, কখনও বা কুক্ষিদেশে রাখছে তার সুতীক্ষ্ণ জিভের ডগা।
বিচিত্র কায়দায় মর্দন করছে স্তনাগ্রদুটি(স্কুনান্তরের উপত্যকাকে সিক্ত করছে তার লােভী জিভের শে। একবার স্থাপিত করছে আমায় বিছানার এক কোণে পরমুহূর্তেই দুরন্ত ঈগল হয়ে নিয়ে যাচ্ছে অন্য প্রান্তে এমনভাবেই বিচিত্রসুন্দর কামনার বহিঃপ্রকাশে ব্যস্ত রাখছে আমায়।
ক্ষণিকের বিরতি যেন কিন্তু মিটবে কি তার জান্তব ক্ষুধা কোনদিন?
আবার সে ফিরে গেল আদিম অরণ্যে। শুরু করল একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। কানের লতিতে, ঘাড়ের পাশে, চিবুকে, কপালে দিল তার লালারঞ্জিত চুম্বন চিহ্ন। ভয় আর উত্তেজনা, ভাললাগা আর ঘৃণা-মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় আমার কাছে। কখনও বা আপ্লুত হই বীভৎস সুখের গােপন অনুভূতিতে। কখনও বা পরিপ্লাবিত শােক এসে গ্রাস করে আমাকে।।
কী আশ্চর্য ক্ষমতা এই জীবন্ত নরপশুর! অনন্ত প্রহর ধরে সে যেন আমার কুমারী উপত্যকায় প্রােথিত করবে তার পৌরুষের জয়পতাকা। ক্লান্তিবিহীন পথ চলা তার এতটুকু আলস্য এসে গ্রাস করছে না তার উদগ্র বাসনাকে। প্রতিমুহূর্তেই সে যেন নতুন আশায় উজ্জীবিত হয়ে ঝাপিয়ে পড়ছে আমার ওপর। আর লেহনে-পীড়নে-নিষ্পেষণে মর্দনে-চোষণে-চুম্বনে করে তুলছে আমাকে কামতাড়িতা। কপাল থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত অবিরাম বর্ষার রিমঝিম বৃষ্টির মতাে ঝরছে তার চুম্বনবৃষ্টি। কী অদ্ভুত আবেশে সে ছোঁয়াচ্ছে ঠোট তার আমার পায়ের আঙুলে।
গতকাল সে বলেছিল শেখাবে আমাকে ছেনালিপনার গল্পগাথা, গড়ে তুলবে আমাকে যৌবন-কুঞ্জবনের মক্ষিরাণী হিসেবে, আমি হব তার মালঞ্চের মধুকর, ভ্রমর হয়ে শােনাব তাকে ভালবাসার অশ্রুত সঙ্গীত, হব তার স্বপ্নের জলপরী, পাখা মেলে দেব সান্ধ্য আকাশে। জীবনে অনেক রমণীর ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এসেছে সে, হারেমে তার বন্দিনী আছে সর্বশ্রেষ্ঠা সুন্দরীরা। অনন্ত বৈভবের রুদ্ধকারায় সে আটকে রেখেছে যৌবনবতী, লাস্যময়ী রঙ্গনটীদের। মৈথুন তার কাছে প্রাত্যহিক খেলামাত্র, সম্ভোগ আনে না আর বার্তা লেনও গােপন সুখের, সঙ্গমজনিত ক্লান্তি এসে গ্রাস করে ক্ষযুিপুঞ্জ তার। তাই বুঝি সে এই বিদেশী সুরার নেশায় হবে মহিলা স্বদেশী বারবিলাসিনীদের পরিত্যাগ করে শ্বেতাঙ্গিনী সুন্দরীর ঘনিষ্ঠ দেহস্পর্শে অতিবাহিত করবে তার নিদ্রাবিহীন মধুযামিনী।
বার বার আমি ইচ্ছের বিরুদ্ধে ঝাপ দিই ঝাবিক্ষুব্ধ জীবন সমুদ্রে আমার, পরিশ্রান্ত সমুদ্র-কন্যা হয়ে। ভাসাই তরণী আমার।
মাঝে মাঝে ক্ষণিক প্রভার মতাে মনের আকাশে উদ্ভাস হয়ে ওঠে হেনরীর মলিন মুখখানি। এখন বেশ বুঝতে পারছি আমি, এ জীবনে আর কোনদিন দেখা হবে না তার সঙ্গে। নিজের অজান্তেই আমি হয়ে উঠব বিকৃত কামকলার সঙ্গিনী স্বৈরিণী এক, মধ্যরাতে সাজাব নিজেকে ব্যাভিচারিণীর বেশে, আঁকবাে কপালে সযত্নে কলঙ্কচিহ্ন। তারপর সম্রাটের অঙ্কশায়িনী হয়ে রুদ্ধ যন্ত্রণাকে বন্দিনী করে মেতে উঠব শরীরের ধিকৃত শীৎকারে।
এমনভাবেই একদিন যৌবন এসে শেষবারের মত সেলাম জানাবে আমাকে। যােলটি বসন্তের অনভিজ্ঞা যে এক কিশােরী কন্যা প্রবেশ করেছিল তুকী হারামের অভ্যন্তরে, অস্পর্শিতা ছল তার তনুখানি, অচুম্বিতা ছিল পবিত্র ওষ্ঠদুটি, অনাঘ্রাতা ছল তার যৌবনপুষ্পদিনের পর দিন, রাতের পর রাত মৈথুন দেহে তার এঁকেছে ব্যর্থ জীর্ণ দিন যাপনের বিবর্ণ চত্রাবলী। একদিন সে পরিণত হবে লােলচৰ্মা, বিগতযৌবনা বৃদ্ধা রমণীতে।
তখন আর কোনও লােভী পুরুষের চোখের আকাশে লােভের বিদ্যুৎরেখা দেবে না দেখা, ঠোটের পেয়ালায় সে পান করবে না কামনার মদিরা—তখনই সত্যি সত্যি মুক্তি হবে আমার।
কখন যে অনন্ত নিদ্রা এসে গ্রাস করেছিল আমাকে জানি না।সমস্ত রাত কেটে গেল সেই গভীর ঘুমঘােরে। যখন ভােরের আলাে এসে সযত্নে প্রাসাদ সৌধের চূড়ায় চূড়ায় আঁকছে আলপনা তখনই ঘুটা হঠাৎ ভেঙ্গে গেল আমার। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হল ব্যথার সেই অনুভূতিটা। কাল রাতে বার বার ঘটে যাওয়া ভয়ঙ্কর ঘটনা এখনও দেহকে করে তুলেছে যন্ত্রণাদগ্ধ।
এমনকি নিজে উঠতে পারছি না আমি। মনে হচ্ছে কোনও এক ভয়ঙ্কর নেশায় আচ্ছন্ন যেন আমার সমস্ত শরীর।
তৈরি ছিল সহচরীরা। ছুটে আসে তারা। ধরে ধরে আমাকে বসিয়ে দেয় কৌচে। বাতায়ন পথে চোখ মেলে দিই আমি। প্রথম ভােরের শিশুসূর্য আনমনে করছে খেলা উর্মিমুখর সমুদ্রমায়ের সাথে, ঢেউ ভাঙছে আপনমনে, পাড় ভাঙছে বালিয়াড়ির।
নিকটবর্তী পােতাশ্রয় আবার কর্মচঞ্চলতায় উঠেছে ভরে। শুরু হতে চলেছে আর একটি সুন্দর সজীব, সপ্রাণ সকাল। যদিও আমার কাছে নতুন করে দিনটি আনছে না কোনও বার্তা।
জানাল সহেলী এসে, সম্রাট নাকি আসবে না আজ রাতে। একথায় এখন বিশ্বাস হয় না আর। আমি জানি এ হল সবই বানানাে কথা। হাতের মুঠোর মধ্যে কুমারী কন্যাকে পেয়ে ইচ্ছেমতাে দগ্ধ করছে তাকে মিথ্যে আশ্বাসের আগুনে। জানি আমি, যে কোন মুহূর্তে সে আবার আহত বাঘের মতাে ঝাপিয়ে পড়বে আমার ওপর।
হলও তাই। যখন সবেমাত্র সন্ধ্যার আকাশ সেজেছে মােহিনীর বেশে। আর আমি শেষ করে নৈশ আহার প্রস্তুত হচ্ছি ঘুমের জগতে প্রবেশ করব বলে, তখনই হঠাৎ অনুচরী জানিয়ে গেল মত পরিবর্তন হয়েছে সম্রাটের। এখুনি সে আসছে আমার কাছে। অজানা আশঙ্কায় কেঁপে ওঠে মন।
তার মানে আজ রাতে আমি হব তার অঙ্কশায়িনী! আমাকে নিয়ে চলবেতার দুরন্ত ব্যাভিচারের খেলা।
কখন যে সম্রাট নীরবে নিঃশব্দে এসে দাঁড়িয়েছে আমার পাশে, ধীরে ধীরে করেছে আমাকে আবরণহীনা, স্থাপিত করেছে আমায় মেহগনি খাটের মসলিন চাদরে-বুঝতেই পারিনি আমি।
যখন সে ভরিয়ে দিল দুটি ঠোট স্পর্শের আগুনে, তখন ফিরে আসে হারানাে চেতনারা আমার। নিজেকে নিঃশেষে সমর্পণ করি তার উদগ্র কামনার কাছে। তবুও মাঝে মাঝে অস্ফুট আর্তনাদে কয়েকটি অব্যক্ত ধ্বনি বেরিয়ে আসে মুখ থেকে। তাতেই প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে সে রাগান্বিত হয়ে বলে—এখন এসব শুনতে আমার ভালাে লাগছে না সুন্দরী। এমনভাবে স্বপ্নের আবেশটাকে ভেঙে দিও না তুমি।
ধীরে ধীরে সে হাত রাখে আমার সােনালি চুলে, মুখ ডুবিয়ে সুঘ্রাণ নিতে চায় সুরভিত প্রসাধনীর। মনে হয় আমার, যদি হতাম আমি হেনরীর বাহুলগ্না তাহলে কি এমন ঘৃণারা এসে ঘিরে ধরতাে আমাকে?
সম্রাট বলে–শােন শ্বেতাঙ্গিনী, আজ পর্যন্ত আমার হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারেনি কোনও বন্দিনী কন্যা। প্রকৃতির আশ্চর্য ইঙ্গিতে মিলেছি আমরা পরস্পর। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর এনে দিয়েছেন তােমাকে, সাতসাগরের দেশ থেকে তুমি হাজির হয়েছ আমার হারেমে তােমার অপূর্ব সৌন্দর্যের ডালি নিয়ে। মিলনের এই মধুব মুহূর্তে কেন শােনাও বিচ্ছেদ রাগিনী! তার চেয়ে এসাে, সম্মত হও আমার আহ্বানে সাড়া দাও আমার ডাকে, তােমার আমার যৌথ প্রণয়ের যুগলবন্দি বেজে উঠুক। অবরুদ্ধ কান্না এসে ভাসিয়ে দেয় আমার চোখ, ঠোটদুটিতে ভালবাসার চুম্বনচিহ্ন আঁকতে আঁকতে সম্রাট আবার বলেশােন বােকা মেয়ে, তােমার অসম্মতিতে যদি আমি তােমাকে করি আমার শয্যাসঙ্গিনী তাহলে কুমারীত্ব বজায় থাকবে তােমার? নাকি ভাবছ এভাবে রাতের পর রাত আমার হারেমে বন্দিনী থাকার পুরুফিরতে পারবে তুমি আবার সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে।তোহলে ভুল ভাবছ সব। আর কোনদিনই বাইরের পৃথিবী জায়গা দেবে না তােমাকে। তাদের চোখে ইতিমধ্যেই তুমি চিহ্নিত হয়ে গেছ কলঙ্কিনী বারবিলাসিনী হিসেবে।
…ভগবান তােমাকে সৃষ্টি করেছে পুরুষের দ্বারা ধর্ষিতা হবার জন্যে। এটাই ভবিতব্য, এটাই প্রকৃতির অমােঘ সত্য। মেনে নাও একে, বাধার প্রাচীর তুলে কোনও লাভ নেই আর। বৃথাই তুমি কষ্ট পাবে, শরীর সম্ভোগের অনন্ত আনন্দ থেকে বঞ্চিত হবে।
এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় তার দুরন্ত খেলা। আবার সে প্রসারিত করে আমার উরুদুটিকে, কামনাগহূরে রাখে তার আঙুল, শুরু হয় তার সর্বনাশের খেলা। এমনভাবেই আবার সে নিজেকে উদ্দীপ্ত করে বাসনার তীব্র রিরংসায়। আমার দিক থেকে সামান্যতম বাধা না পেয়ে হয়ে ওঠে সে বাঘের মতাে শক্তিশালী। ইচ্ছেমতাে হাত রাখে এখানে ওখানে।
মনে হয় আমার, মানুষের কামকলার ইতিহাসে এমন কোনও কাহিনী নেই যা সম্রাটের অজানা। কতভাবে যে সে করে তুলতে পারে রমণীকে কামচঞ্চলা কে জানে! এ ব্যাপারে অসম্ভব উৎসাহ তার। ক্লান্তির কোনও চিহ্ন নেই তার আচরণে।
এক ঘণ্টার মধ্যে বার বার তিনবার তার উথিত পুংদণ্ডটি প্রবেশ করল আমার গভীর গােপন উপত্যকায় আর নির্গত জীবনরসের ধারা এসে ভরিয়ে দিল দেহ। যখন প্রথমবার তার হাতে আমি হারাই আমার কুমারীত্বের গৌরব, তখন অকারণ রক্তস্রোত এসে চাদরে এঁকেছিল কলঙ্কের দাগ। এখন তেমনটি আর হচ্ছে না, বুঝতে পারছি আমি ধীরে ধীরে হয়ে উঠছি সম্রাটের যােগ্য সহচরী। অনেকক্ষণ ধরে এইভাবে আমাকে নানাভাবে উত্তেজিত করার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে উঠে যায় সম্রাট। তার চোখে মুখে লেগে আছে অসম্পূর্ণ সন্তুষ্টির ছায়া। ধীরে ধীরে সে হেঁটে যায় প্রশস্ত শয়নকক্ষের এক ধারে, মনে হয় হয়ত আমার কান্নার নীরব প্রতিবাদেই এমনটি করছে সে। হয়ত্ব বার বার আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে এই সম্ভোগ খেলায় করতে চাইছে না সঙ্গিনী ঘরের কোণে স্থাপিত বােতলে ছিল সুরভিত তরল, তা দিয়ে পরিষ্কার করে নেয় অহংকারের দণ্ডটিকে। তারপর দ্বিগুণ উৎসাহে ফিরে আসে আমার কাছে। তার মানে আরও একবার আমি হব তার গােপন ইচ্ছের ক্রীতদাসী। আমার নিষ্ফল বাধাকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে আবার সে তার যৌবনের বারিধারায় স্নাতা করবে আমায়।
কিন্তু বিশ্বাস কর তুই সিলভিয়া, স্বীকার করতে লজ্জা নেই তাের কাছে, এখন আর সেই পুরুষ্ট মাংসল দণ্ডটিকে আগের মতাে ভয়ংকর ভয়াবহ মনে হলাে না আমার। বরং উথিত পৌরুষের সেই নির্ভীক বহি:প্রকাশ দেখে মনে মনে কেমন কৌতূহল বােধ করি আমি। ভাবতে থাকি এরই মধ্যে নিহিত আছে একজন পুরুষের সমস্ত আনন্দ।
নিমেষের মধ্যে সম্রাট ওটিকে অনুপ্রবিষ্ট করায় আমার অভ্যন্তরে। তারপর ধীরে ধীরে আন্দোলিত করতে থাকে শরীরটি তার। ছন্দে ছন্দে কেঁপে ওঠে তার দণ্ডটি। আমি বেশ বুঝতে পারি ঘর্ষণজনিত আশ্চর্য সুখের অদ্ভুত অনুভূতি এক, ঘুম ভাঙছে মনের মধ্যে আমার।
কানের কাছে ঠোট রেখে ফিসফিসিয়ে জানতে চায় সম্রাট-শােন সুন্দরী, এখন কি আগের মতাে অতটা খারাপ লাগছে আমাকে? আগের মতােই যন্ত্রণায় বিদগ্ধ হচ্ছে কি তােমার মন? যদিও তার প্রশ্নের জবাব ছিল আমার ঠোটে, কিন্তু সেই মুহুর্তে নীরব মৌনতায় ঢেকে রাখি নিজেকে।
সত্যি বলতে কি, আগেই বলেছি তােকে, এখন আর অতখানি নির্মম মনে হচ্ছে না তাকে, নিষ্পেষণ তার আনছে না আগের মতাে সুতীব্র ব্যথা। বরং চাইছি আমি সঙ্গোপনে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হােক এই স্বর্গসুখেকুপ্রণয়লীলা। চরম ঘটনা ঘটে যাবার অনেকক্ষণ পরেও ছিল সে নিমগ্ন আমাতেই। তার পৌরুষের শেষ বিন্দুটি যখন ঝরে পড়ল আমার কামনা ত্রিভুজের অভ্যন্তরে, তখন আশ্চর্য অনুভূতি এসে গ্রাস করল আমাকে। সে যে কি ভীষণ সুখ, তুই কেমন করে বুঝবি মুখপুড়ি তাের তাে এমন অভিজ্ঞতা হয়নি! সত্যি কি তাই কতক্ষণ যে দেহ ছিল দেহের সঙ্গে এক হয়ে কে তার খবর রাখে! তখনও নিষ্ক্রান্ত হয়নি সম্রাটের পৌরুষ পতাকা। মাঝে মধ্যে মৃদুস্পন্দনে সে তার অস্তিত্ব ঘােষণা করছে। আর সেই ক্ষণিক আন্দোলনের শিহরণ আমার জন্যে বয়ে আনছে অদ্ভুত অনুভূতি!
অভিজ্ঞ সহচরের মতাে সম্রাট বিবৃত করছে তার আশ্চর্য কাহিনী। এই মুহূর্তে সে আর শরীর তৃষ্ণায় নগ্ন কোনও নরপশু নয়। এখন মনে হচ্ছে যে, সে যেন বিবেচক, সহিষ্ণু, সমব্যথী। আমার দুঃখকষ্টের অবসান ঘটানাের চেষ্টা করছে সাধ্যমত প্রয়াসে। অনেকখানি বদলে গেছে সে। আগের মতাে আর কামনাজর্জর হয়ে প্রচণ্ডভাবে সংহার করছে না আমায়। এখন তার আলিঙ্গনে এসেছে ভালবাসার ছোঁয়া। যেমনভাবে কপােতকপােতীর মতাে সুখের আবেশে মগ্ন থাকে দুটি মন, পৃথিবী ছড়িয়ে নীল-নির্জনতায় রচিত হয় ভালবাসার বাসরশয্যা, তেমনভাবেই সে আচরণ করছে এখন।
আমার প্রতি হঠাৎ সে যে কেন এতখানি সদয় হয়ে উঠেছে তার কোনও কারণ জানা নেই আমার! কেনই বা সে হারেমের অন্যান্য সুন্দরীদের ছেড়ে শুধুমাত্র আমার কুঞ্জবনে কাটাচ্ছে তার নিদ্রাবিহীন রাত—বলতে পারব নাআমি। তবে মনের মধ্যে আমার অভিনীত হচ্ছে আশ্চর্য এক রহস্য নাটক।
যদিও এখনও উন্মন আমি হতভাগ্য হেনরীর জন্যে, আমার কুমারীত্বের চরম-অবমাননা যে করেছে সেই সম্রাট আমার চোখে নরপশু এক, তা সত্ত্বেও নিমজ্জিত হচ্ছি আমি অচেনা, অজানা সুখসাগরে। বয়সের বাধা অতিক্রম করে, ধর্মের বিভাজন রেখা মুছে সে ক্রমশই হয়ে উঠছে আমার সুপ্ত আকাঙক্ষার সম্রাট। লিখতে বসে লজ্জা হচ্ছে আমার। তবু বলছি তােকে, চুম্বন তার আগের মতাে আনছেন জঘন্য ঘৃণার অনুভূতি। বরং বয়ে আনছে সে প্রচণ্ড উতেজনার সংবাদকে। আমি কি ক্রমশই তার বিকৃত কামনার কাছে হারাতে বসেছি আমার নারীত্বের গােপন সত্তাকে? হব কি আমি তার হাতের পুতুল? এক কামজর্জরিতা রমণী হয়ে দিন কাটাব তুর্কি হারেমে?
যদিও এখনও আমি ফিরিয়ে দিচ্ছি না তার অজস্র অনুরাগকে, কিন্তু ইচ্ছে হচ্ছে ভীষণ তার আদরের উত্তর দিই এক উষ্ণ চুম্বন পরশে। যেমনভাবে নেশার ঘােরে আচ্ছন্ন হয় মানুষ, নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও অবহেলায় তুলে নেয় বিষের পাত্রখানি, তেমনভাবেই আমি তার প্রচণ্ড শক্তিশালী আবেদনের কাছে নিজেকে করে তুলেছি নতজানু। এই মুহূর্তে তার অহংকারের বস্তুটি নির্জীব হয়ে পড়ে আছে আমার নাভিদেশে। মাঝে মধ্যে করতলস্পর্শে সেটিকে উদ্দীপ্ত করার চেষ্টা করছে সে। বুঝতে পারছি আমি, আবার এখুনি এটি প্রবেশ করবে আমার শরীরে।
এবারই প্রথম বিন্দুমাত্র অসুবিধে হলাে না আমার গ্রহণ করতে তার পৌরুষ প্রতীককে। এর আগে প্রতিবার আমি ককিয়ে উঠতাম যন্ত্রণায়। এবার কিছুই ঘটল না আর, বরং এই প্রথম ভাললাগার অনুভূতি এসে গ্রাস করল আমাকে।
ধীরে ধীরে সম্রাট তার দণ্ডটিকে অনুপ্রবিষ্ট করালাে আমার গহরে। অনেকক্ষণ ধরে সেটিকে ঠিকভাবে স্থাপিত করল তার নিজের জায়গায়। এই প্রথম এতদূরে পৌঁছে গেল সে, আর ভাললাগার অস্ফুট শীৎকার বেরিয়ে এল আমার মুখ থেকে।
শুরু হল সম্রাটের দুষ্টুমি। ঠোটের ওপর ঠোট রেখে, স্তনশীর্ষ মর্দন করে ক্রমেই আমাকে ধাপে ধাপে সে নিয়ে গেল উত্তেজনার উত্তঙ্গ শিখরে। আর আমিও ভয়ঙ্কর সেই বিস্ফোরণের আশঙ্কায় নিজেকে নিঃশেষে তার কাছে সঁপে দিলাম। উত্তপ্ত লাভালাত এসে ভরিয়ে দেয় আমার গহূর। অনেকক্ষণ থাকি আমি আচ্ছন্ন। মনে হয় যেন কেটে গেছে মােহমুগ্ধ তন্দ্রাচ্ছন্নতার আশ্চর্য প্রহর।
অবশেষে শেষ হয় সর্বনাশের এই খেলা। বেচারি সিলভিয়া আমার, মনে হয় এখনও এমন কোনও অভিজ্ঞতা হয়নি তাের, হলে বুঝতিস কি প্রচণ্ড শক্তিশালী এই দণ্ডটি, এক লহমায় যা নারীর শরীরে আনতে পারে উদগ্র বাসনার স্পন্দন। কুমারীর কাছে ঘৃণার এই পুংদণ্ড হল রমণীদেহের চরম অভিপ্রেত। যখন এটি আমার গােপন অঙ্গের দেওয়ালে তুলছিল ঘর্ষণের স্পর্শ অনুভূতি, তখনই আমি বুঝতে পারছিলাম যে, কি প্রচণ্ড ক্ষমতা লুকিয়ে আছে এই আপাত নিরীহ অঙ্গটির মধ্যে।
শরীর খেলার দুরন্ত খেলােয়াড় হিসেবে সম্রাট কখনও বা মন্দাক্রান্তা ছন্দে আন্দোলিত করছিল তার যন্ত্রটিকে। আবার কখনও উন্মত্ত উন্মাদনায় তুলছিল ঝড় যােনির আকাশে।
আমার সমস্ত সত্তা, হৃদয়, আত্মা যেন সেই স্পর্শসুখের। বিহুলতায় মিলে মিশে একাকার হয়ে গেল। হারিয়ে গেলাম আমি, মুখ লুকোলাম সেই গভীর গােপন নির্জনতায়। আচ্ছন্ন হলাে দৃষ্টিশক্তি, আবিষ্ট হলাে মন, আপ্লুত হলাে সত্তা, আগ্রাসী হলাে উত্তেজনা, এখন বুঝি সত্যি সত্যিই আমি হয়ে গেলাম তুর্কি হারেমের রক্ষিতা। সুখের এই আবিষ্ট অনুভূতি আনতে জেগে উঠলাম আমি।
আমার পরিপূর্ণ আনুগত্যে বিস্মিত সম্রাট এবার বােধহয় চাইছে পৌছে দিতে আমায় অন্তিম আরামের শীর্ষবিন্দুতে। ভাবতে পারেনি সে, এমনভাবে আমি নিজেকে নিঃশেষে সমর্পণ করব তার আদিম অভীপ্সার কাছে। নিরুদ্দেশ আমার দেহের ব্যথার গােপন অঙ্গে আর বাজে যন্ত্রণার ক্ল্যারিওনেট, নির্ভার লাগে দেহ। মনে হয় যেন আমি সাঁতার কাটছি সুখের সমুদ্রে নীল আকাশে সঞ্চরমান মেঘের মতাে উড়ছে আমারমে। সদ্য সতীত্ব হারানাে কুমারীর লজ্জা এসে বেঁধেছে বার্সা হারিয়ে গেছে যন্ত্রণা, আতঙ্ক উধাও। শুধু সারা দেহ জুড়ে প্রথম বর্ষার বৃষ্টিপাতের মতাে আশ্চর্য অনুভূতি এক!
উত্তেজনার চরমতম মুহুর্তে যেমনভাবে অনাস্বাদিত আনন্দ এসে দাঁড়ায় সামনে, আত্মার গভীরতম প্রদেশে কে যেন বাজায় সম্ভোগের অর্কেস্ট্রা। পলে অনুপলে আমি ভেসে চলেছি অজানা সুখের তরীতে, যদিও এখনাে আমি আমার সজীব মুখমণ্ডলে সন্তর্পণে খুঁজি না। অনুরাগের চিহ্ন, যদিও নিখাদ ভালবাসা এসে হাতছানি দিয়ে ডাকে না আমায় যদিও মনের মধ্যে এখনও রয়ে গেছে অদ্ভুত আতঙ্ক এক, তবুও আমি কি পরিপূর্ণ হয়ে উঠছি না কামতৃপ্ত রমণীর মতাে?
ইংল্যান্ডের দিনগুলি স্মৃতিদন্ধ ছায়াচ্ছন্নতায় ঢেকেছে মুখ, মনে হয় সে যেন এ জীবনের ঘটনা নয়, কোনও এক অজানা পৃথিবীর অচেনা জগতে জন্ম নিয়েছিলাম আমি। আর কোনদিন যে বাতাসে নিঃশ্বাস নেব না আমি, যেখানকার অপূর্ব প্রাকৃতিক শশাভায় মুগ্ধ হবে না মন আমার। যে সব প্রিয়জনদের দেখতে পাব না কোনদিন আর সেই দৃশ্য, সেই স্মৃতি, সেই মলিন মুখগুলি এসে ভিড় করে চোখের সামনে।
তাদের কথা ভাবতে ভাবতে কেমন যেন আনমনা হয়ে যাই আমি। অবশ্য ভাবনার অবকাশ থাকে না। কেন না ইতিমধ্যেই সম্রাট আবার শুরু করেছে তার ছটফটানি, এবার সম্পূর্ণ নতুন ভঙ্গিমায় আমাকে উপভােগ করছে সে। তুর্কি কামশাস্ত্রের আপাত কঠিন শাসনে অন্বেষণ করছে যৌবনের সুখ অনুভূতিকে।
ভীষণ ভালাে লাগছে আমার, তার আলিঙ্গন যেন ভােরের শিশির হয়ে ঝরে পড়ছে আমার সারা দেহে এই মুহূর্তে সবকিছু ভুলে গেছি আমি, বিস্মৃত হয়েছি, অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ। সব হারানাের বেদনা এসে এখনকার গ্রাস করছে না আমায়।
মুখ দিয়ে নিঃসৃত হচ্ছে অস্ফুট নি। ক’দিন ধরে জমেছিল ঘৃণার যে কালাে মেঘের দলখন কোথায় হারিয়ে গেছে তারা!
শরীরের খেলায় সম্রাট যে দিগ্বিজয়ী তার প্রমাণ পাচ্ছি আমি। রমণী-মনের সুদূরতম কোণে যে অনায়াসে জ্বালাতে পারে অসম্ভব ভালবাসার আকাশ প্রদীপ, বিশ্বের যে কোনও নারীকে সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট করার অস্ত্র আছে তার তুণে। এক লহমায় সে হতে পারে কিশােরীর যুবরাজ, যুবতীর প্রেমিক পুরুষ, এমনকি বিগত যৌবনাকেও দিতে পারে কাঙিক্ষত আনন্দের স্বাদ!
সৌভাগ্য আমার, ধরা পড়েছি আমি এমন এক কামকুশলী পুরুষের হাতে।
কেটেছে আঠারােটি বসন্ত প্রতীক্ষায় থেকে একা। রােমাঞ্চিত হয়েছি সদ্য প্রস্ফুটিত স্তনশীর্ষের স্পন্দন দেখে। অব্যক্ত আবেশে মেতেছি সম্মােহনের বিকৃতরুচিতে। ভাবিনি তখনও একদিন আমার শরীরের তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে কোনও পুরুষ এসে এমনভাবে বাজাবে তার প্রণয় মূৰ্ছনা।
হঠাৎ থেমে যায় সম্রাটের দেহ-আন্দোলন। আমার থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ক্ষণকাল স্তব্ধ থাকে সে। তার গােপন অভিলাষের সুলুক সন্ধানে মত্ত থাকে। আমি জানতে চাই তার আপাত আলস্যের কারণ।
প্রত্যুত্তরে সে প্রগাঢ় কণ্ঠে বলে, যৌবনের প্রথম প্রহর থেকে আমি তৃষিত ছিলাম তােমার মতাে শ্বেতাঙ্গিনী সুন্দরীকে শয্যাসঙ্গিনী করব বলে, স্বর্ণালী কেশদামে রাখব আমার হাতের পরশ, কামনার লাল ত্রিভুজ সিক্ত হবে উচ্ছসিত বারিধারায়।
দেখতে দেখতে অতিক্রান্ত হয়েছে প্রথম যৌবনের আরক্তিম মুহূর্ত। অজস্র অর্থের সােনার সিংহাসনে বসে অনায়াসে আমি ভােগ করেছি তুরস্কের শ্রেষ্ঠতম সুন্দরীদের। বয়সের বিচার না করে ডুব দিয়েছি শরীর-সমুদ্রে, উদ্ভ্রান্ত নাবিকের মতাে ঘুরে বেড়িয়েছি কামরসুমদ্রতটে, নির্মম দস্যু হয়ে ছুটিয়েছি লােভের ঘােড়া, উলঙ্গ শরীরের পার্বত্য উপত্যকায়।
তবুও শান্তি পাইনি আমি। তৃপ্তি চিরদিনই আমার কাছে থেকে গেছে অধরা। নিষ্ফল সঙ্গম অন্তে একরাশ হতাশা এসে ভিড় করেছে মনের আকাশে, হয়েছি মাতাল সুস্বাদু মদিরায়, মনকে এই বলে সান্ত্বনা দিয়েছি যে, জীবনে আর দেখা হবে না সুদূরতমা নক্ষত্রকন্যার সাথে।
অবশেষে আকস্মিক আবিষ্কারে তােমাকে পেয়েছি আমি। বুঝতে পেরেছি তুমি একেবারে অস্পর্শিতা। তাইতাে জ্বালতে চাই ভালবাসার চিরাগ তােমার মনে হবে তুমি আমার বেহেস্তের পরী। অনিমেষ তােমার নয়নে নয়ন রেখে কেটে যাবে আমার শবনম সন্ধ্যা। মসহুর রাত এসে দাঁড়াবে সামনে আমার।
এসাে কন্যা, শুধু শরীর নয়, তােমাকে শােনাই আদিগন্ত ভালবাসার অসমাপ্ত গল্পগাথা।
সম্রাটের এহেন আলপচারিতায় চমৎকৃত হই আমি। প্রথম থেকে তার প্রতি জন্মেছিল বিতৃষ্ণা, ঘৃণা এসে ঢেকেছিল ভালবাসার সুখ, এখন আর অস্তিত্ব নেই তাদের।
এই প্রথম আমি তাকাই তার দিকে অন্যদৃষ্টিতে, দুচোখের তারায় ঝরছে আশ্চর্য মাদকতা এক। এই কি সেই দুষ্ট দস্যু, যে হরণ করেছে আমার নারীত্ব, গলায় আমার পরিয়েছে যন্ত্রণার কণ্ঠহার, আবার ভরিয়েছে মন আমার অনাস্বাদিত আনন্দে ? মিলন হয় চারচোখের। লজ্জায় মুখ নামিয়ে ফেলি আমি। আমার সােনালি চুলে সে রাখে তার প্রশ্রয়ী হাত। তারপর ধীরে ধীরে ঠোটে আঁকে জ্বলন্ত চুম্বন! পৃথিবীর কোথায় বিস্ফোরণ হয় কি? তরঙ্গ বিক্ষুব্ধ সমুদ্র থেকে হঠাৎ ছুটে আসা জলরাশিরা আনে কি প্রবল বন্যা? ভেসে যায় বিশ্বচরাচর।
নিজেকে আর স্থির রাখতে পারি নি আমি। কয়েকদিন ধরে আবেগেরা মথিত হচ্ছিল আশা নিরাশায়। এই মুহূর্তে তারা আর থাকতে চাইছে না বন্দি সংযমের রূদ্ধকারায়। সম্রাটকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে স্পর্শ করঠোটদুটি তার। তারপর গভীর আশ্লেষে চুম্বন দিই তাকে।
কেটে যায় অনন্ত প্রহর। বিধাতা হলে এই মুহূর্তকে চিরকালের জন্যে ছিনিয়ে আমি মহাকালের বুক থেকে। নিতান্ত মানবী আর্মি, তাই একসময় শেষ হয় ভালবাসাবাসির এই অবুঝ খেলা। আদুরে কিশােরীর মতাে আপ্লুত অভিমানে নিজেকে সমর্পণ করি তার আগ্রাসী বাহুবন্ধনে।
যে রাত বয়ে আনত শঙ্কা লাগামছাড়া, আসন্ন সন্ধ্যার অপসৃয়মান সূর্যালােক এসে চোখ রাঙাতে, ভয়ংঙ্কর ঘটনার আবেশে থাকতাম ভীত। আজ কোনও চিহ্ন নেই তার। সেজেছে এই রজনী ব্রীড়াবনতা বধূর বেশে, অলক্তক রাগুরঞ্জিত পদযুগলে শ্রুত হয় অনুপম নুপুর-নিক্কণ, রহস্য রােমাঞ্চের ওড়নার আড়ালে হঠাৎ উদ্ভাসমুখে কত না অব্যক্ত কাহিনী!
এই রাত কাছে আসার, এই রাত ভালবাসার। এই রাতে আমরা দুজন রক্তাক্ত করতলে বন্দি করব মুঠো মুঠো নীলজ্যোৎস্নাকে। ঊর্মিমুখর সমুদ্রসঙ্গীত শুনতে শুনতে ভেসে যাব আশ্চর্য আবেশে!
সাক্ষী থাক রাতজাগা সমুদ্রপাখিরা, সাক্ষী থাক ঘুম ভাঙা নক্ষত্রের আলাে, শরীরে রাখলে শরীরে বেজে ওঠে সুমধুর সঙ্গীত এক, ছুটে আসে চুম্বন নিস্পাপ বৃষ্টির মতাে, আলিঙ্গনে যেন স্বর্গের উদ্যানে পাশাপাশি হাঁটা, কি সুখ মর্দনে আগে তাে বুঝিনি আমি।
এই প্রথম নিজেকে হারাই চরম রতির অনুভূতিতে। শেষ হয় সেই রাত। ধীরে ধীরে তরুণ তপন এসে দাঁড়ায় চোখের সামনে, ফুলের পাপড়ি মেলে, পাখিরা গান গায়, ঘুম ভাঙে আমার। দেখি তখনও শিশুর মতাে অঘােরে নিদ্রারত সম্রাট। এখনও সম্পূর্ণ উলঙ্গ সে। সারারাত ধরে যে দণ্ডটি তুলেছিল ঝড়, এখন তা শিথিল আবেশ নিদ্রামগ্ন যেন!
অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি তার দিকে। ভাবি কী আশ্চর্য ক্ষমতা ধরে এই যন্ত্রটি! ধীরে ধীরে হাত রাখি সেখানে।
ঘুম ভেঙে যায় সম্রাটের। আমাকে এমন করতে দেখে কৌতুক এসে জমা হয় মুখে তার। বুঝতে পারে সে, আমি দিয়েছি ধরা ফাঁদে তার। নিজেকে আবৃত করার চেষ্টা করি চাদরে। শুরু হয় লুকোচুরি খেলা।
উন্মত্ততা নয়, নির্মমতা নয়, নয় কোনও অনিচ্ছুক আক্রমণ। সেজেছে সম্রাট এখন হৃদয়বান প্রেমিকের বেশে। আমার প্রতিটি আবেগকে জানাচ্ছে সে সখ্যতাভরা শ্রদ্ধা। এ যেন প্রথম রাতের সেই সম্রাট নয়। কি করে এতখানি পালটে গেল সে?
সম্রাট এসে আঁকড়ে ধরে আমার হাত। তারপর সেটিকে স্থাপন করে তার পুংদণ্ডের ওপর। প্রথমে কেমন যেন অস্বস্তি এসে ঘিরে ধরে আমাকে। এর আগে তাে কোনদিন এমন অনুভূতি হয় নি আমার। স্পঞ্জের মতাে শিথিল নরম মাংসের কাপন লাগে আমার। অসম্ভব সংবেদী সেই গােপন অঙ্গ আমার হাতের স্পর্শে ধীরে ধীরে দৃঢ় হয়ে ওঠে। যেন হঠাৎ ঘুম ভাঙে তার। নিষ্ফল আক্রোশে মাথা নাড়ে সে। নিজেকে মুক্ত করার প্রয়াসে হয় মগ্ন। সম্রাট আমাকে শেখায় কেমন করে আদর করতে হবে সেটিকে। ধীরে ধীরে জাগাতে হবে বুকে তার মৃদুমন্দ কম্পন।
কথামতাে তার শুরু হয় আমার বিচিত্র খেলা। অবাক হয়ে দেখি আমি, সেটি দৈর্ঘে আর শক্তিতে বেড়ে চলেছে ক্রমশই। অবশেষে বাড়তে বাড়তে সেটি পৌঁছে যায় অবিশ্বাস্য উচ্চতায়। মনে হয় যেন প্রচণ্ড সেই স্তম্ভ এসে গ্রাস করবে আমাকে। একটি হাত যখন মগ্ন ছিল নিদ্রামগ্ন পাহাড়ের ঘুম ভাঙাবে বলে, অন্য হাত তখন প্রবেশ করাই নিজের যােনিদেশে, পরীক্ষা করে দেখি সেই বীভৎস যন্ত্রের ধারান্বিত আক্রমণ এ সহ্য করবে পারবে কিনা!
আমাকে এমনটি করতে দেখে আবার হেসে ওঠে সম্রাট। আমাকে বলে, শােন বােকা মেয়ে, মিথ্যে তােমার ভাবনা। দেখ কেমন করে এটি প্রবেশ করে তােমার অভ্যন্তরে।
এবার আমি নিজেই প্রসারিত করেছি আমার উরুদুটি, গ্রহণ করতে সেই বস্তুটিকে উন্মুখ হয়েছে মন। সম্রাট ধীরে ধীরে আমাকে শুইয়ে দেয়, ডান হাত রাখে ঘাড়ের পাশে। মৃদুমন্দ আন্দোলনে স্নায়ুপুঞ্জে পাঠায় বেসরম সংকেত তার।
মােহাবিষ্টের মতাে আমি নির্দ্বিধায় অনুসরণ করি তাকে। এতক্ষণ যা ছিল ঘন সংবদ্ধ, এখন তাতে জাগে অচেনা প্রাণের স্পন্দন এক। অনেকখানি উন্মুক্ত হয় সে। প্রতীক্ষায় থাকে প্রিয় বস্তুর আস্বাদনে।
গমকে গমকে সম্রাট স্থাপিত করে নিজের পৌরুষ। প্রােথিত করে তার দণ্ডটিকে। এখন আমি অনুগতা রমণীর মতাে পালন করছি আজ্ঞা তার। কামনা তরঙ্গে ভাসতে ভাসতে অস্ফুট আর্তনাদে ভরিয়ে তুলছি রাতের বাতাস।
কখনও সে অনুরােধ করছে রাখতে আমার পদযুগল কাঁধের ওপর তার। কখনও বা বলছে আমায় উপুড় হয়ে শুতে, যাতে উন্মুক্ত পৃষ্ঠদেশ দৃষ্টিগােচর হয় তার। জুলছে চোদে বাসনার আগুন, গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে প্রবল আলিঙ্গন পারস্পরিক সমঝােতার উদ্যানে পা রাখছি আমরা। মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে কামনার জারক রস ভাষায় প্রকাশ করা যায় না এমন সুখ এসে গ্রাস করছে হৃদয়। এমনভাবেই শেষ হলাে আত্মনিবেদনের দ্বিতীয় রাত সকাল এসে কড়া নাড়ল মনের দরজায়। তখন থেকেই উৎকণ্ঠিতা আমি কখন ধরণী হবে গভীর ঘুমে অচেতন, আর শুরু হবে ভালবাসাবাসির অবুঝ খেলা।
পরের দিন সম্রাট আমাকে পরিচিত করাল তার তিন সঙ্গিনীর সঙ্গে একজন ফরাসী, অন্যজন ইতালীয়ান তৃতীয়জন গ্রীক। তারা সকলেই অনিন্দ্য সৌন্দর্যের অধিকারিণী তাদের একজনের নাম জেনা—রূপলাক্টণ্যর বর্ণচ্ছট বিচ্ছুরিত হচ্ছে কোমল তনুবাহার থেকে তার। সতেরােটি বসন্তের পদচিহ্ন আঁকা পেলব কটিদেশে, কোমল স্তনশীর্ষে ভরাট নিতম্বে, নিলোম কুক্ষিদের্শে লাজবতী যােনিতে যৌবন এঁকেছে তার শিহরণের কোলাজ ছবি।
প্রথম ভােরের আলােয় রাঙা সদ্যফোটা লিলির মতে অপাপবিদ্বাতা লেগে আছে তার দেহের সবখানে। বিদায় কিশােরীবেলা এখনও ডাকে তাকে আনমনে, নিরালায়, তা ঈষৎ কালাে চোখের তারায় কাঁপে কোনও দূরতম নক্ষত্রে বিষাদ ছায়া। সৌন্দর্যের সাথে বিষন্নতার সম্মেলনে অপূর্ণ অবয়ব পেয়েছে অনুপমা রূপ তার।
প্রথম দর্শনেই মেয়েটির প্রতি অতিমাত্রায় আকৃষ্ট হয়ে পড়ি আমি। জানতে চাই তার ফেলে-আসা জীবনের ইতিহাস। একটু পরে শশানাব তােকে সেই আশ্চর্য কাহিনী। শুনতে শুনতে তু অবাক হয়ে ভাববি সত্যি পৃথিবী এক মায়াবী রঙ্গমঞ্চ, এখানে আমরা আমাদের সুনির্দিষ্ট ভূমিকায় অভিনয় করি মাত্র। নেপথে থাকা কোনও অজানা যাদুকরের সুতাের টানে নাচি আমর অসহায় পুতুল নাচ।
কখনও ডুব দিই দুঃখের সাগরে। কখনও হই তা সুখরৌদ্রে, কখনও ভাসাই সাম্পান শােক তটিনীতে, কখনও মত্ত হই কামনা মদিরায়। শােনাব তােকে ইতালীয় আর ফরাসী কামিনীর কাহিনীও।
শুরু করবাে আমি ইতালীয় ললনার গল্প দিয়ে। পরিষ্কার ফরাসী জানে সে। আমাকে শােনাল সম্রাটের হাতে বন্দিনী হবার গল্প।
অসামান্যা সুন্দরীর সে। তার সৌন্দর্যের সাথে মিশে আছে। অসম্ভব গভীরতা কালাে চোখের ঝিলিক দেওয়া কণিনিকায়। অতীত যেন হয়ে ওঠে বাঙময়। সুস্বাস্থ্যের অধিকারিণী সে, মধুরভাষিণী, শুচিস্মিতা, মৃদুস্বভাবা, শঙ্কিনী এক কন্যা যেন। শুধু ত্রুটির চিহ্ন লেগে আছে একটু বড় মুখমণ্ডলে। ঈষৎ উদ্ভাসিত দাঁতের ডগা সৃষ্টি করেছে অদ্ভুত মােহিনী মায়া এক।
বলতে শুরু করে ইতালীয় বালা—জন্ম আমার জেনােয়াতে, যে শহরের থতি পরিব্যাপ্ত সারা বিশ্বে তার অসামান্য শিল্প সাহিকে জন্যে। প্রকৃতি বুঝি আপন খেয়ালে সাজিয়েছে শহরটিকে এঁকেছে কপালে তার প্রােষিতভর্তৃকার টিপ। ভূমধ্য-সহায়ের মনােরম বাতাবরণে আচ্ছাদিত শহরটি আমার।
এই শহরের নিয়ম হল পুরুষ এখানে বন্দি থাকবে মহিলার ইচ্ছে কারাগারে, হবে তার সুখ-স্বপ্নের দোসর। তারই খেয়ালের অনুবর্তনে কাটাবে জীবন প্রহর তার। নারীরা এখানে স্বেচ্ছাস্বাধীন, নয় বন্দিনী তার কোনও কুসংস্কারের বেড়াজালে । / অকারণ সংযম এসে ঢাকে না চোখ তাদের। মুক্ত বিহঙ্গের মতাে তারা উড়ে বেড়ায় ভাবনার আকাশে।
পুরুষরা এখানে কন্দর্পকান্তি। নীল চোখের নীলা থেকে ঠিকরে আসে উজ্জ্বলতা। হয় তারা আত্মার আত্মীয়, স্বপ্নের প্রেমিক, জীবনের দোসর, পথচলার সঙ্গী। এই শহরের সমস্ত যুবকের মধ্যে যে ছিল আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ, নাম তার সিনর লুডােভিসাে। তার প্রেমে মগ্না ছিলাম আমি। নাম আমার হােননারিয়া গ্রিমালডি। বাবা আমার সম্মানীয় সেনেটর। রূপের খ্যাতি ছিল আমার সারা শহরে, আর ছিল দেমাকী অহংকার।
প্রথম কিশােরীবেলা থেকেই আমি ছিলাম প্রচণ্ড আত্মমুখী যদিও সিনর লুডােভিসােকে ভালবাসতাম প্রচণ্ড, কিন্তু তাকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখিনি নানা কারণে। আগেই বলেছি আমি ছিলাম আমরা সম্পূর্ণ স্বাধীন, পাশেই বিয়ের শৃঙ্খল এসে করে বন্দিনী আমাকে, তাই সুখী গৃহকোণের সুখস্বপ্নকে অকারণে ঘুম পাড়িয়ে হলাম আমি একলা পথের পথিক।
হােননারিয়াকে থামিয়ে জানতে চাই আমি এখন কি মনে হয় তােমার? এখন তাে তুমি সম্রাটের কুখ্যাত হারেমের এক কলঙ্কিতা রক্ষিতা, তাই না?
আমার কথার উত্তর দিতে গিয়ে চিবুক বাঙা’ হয়ে ওঠে তার। বুক থেকে নির্গত হয় চাপা দীর্ঘশ্বাস বলে সে, তুমি ঠিকই বলেছ সহচরী, জানলে আগে- এমনটি হবে, হতাম আমি সিনরের ঘরণী। নিজেকে দিঅ সঁপে তার বন্য কামনার কাছে। বেশ মনে পড়ে আমার কতদিন সে কাছে পেতে চেয়েছে আমাকে, আদরে সোহাগে ভরাতে চেয়েছে সমস্ত শরীর আমার। অথচ অকারণে বিমুখ করেছি তাকে। আঙুলে আঙুল না রেখেও কেটে গেছে কত মগ্নমুখর প্রহর।
মাঝে মাঝেই শিশুর মতাে অবুঝ অভিমানে দূরে সরে যেত সে। বিরহের সমুদ্রে ডুব সাঁতার দিতে দিতে আবার ফিরে আসত কাছে আমার। শােনাতাে আমায় অবরুদ্ধ মনের অবদমিত বাসনার গান।
তারপর একদিন পাঠাল সে আমাকে সুদীর্ঘ প্রেমপত্র ছত্রছত্রে তার স্বজন বিয়ােগব্যথার হতাশ্বাস। পড়তে পড়তে ঝাপসা হয়ে এল চোখদুটি আমার। উত্তর দিলাম সেই সুদীর্ঘ চিঠিখানির। কাব্যের ছন্দে জানালাম মনােবাসনার কথা। পৌঁছে দিলাম সুউচ্চ ভালবাসার শীর্ষ সংকেত। কিন্তু প্রশমিত হতে পারে হৃদয় তার এমন কোনও ওষধি ছিল না আমার চিঠিতে, অবশেষে সে মরিয়া হয়ে দেখা করল আমার বাবার সঙ্গে সরাসরি প্রস্তাব দিল আমাকে বিয়ে করার।
আমার বাবা ছিলেন সাধাসিধে সরল প্রকৃতির মানুষ হয়তাে তিনি খুশি হলেন যুবকটির এই স্পষ্ট বাচনে। সরাসরি বললেন আমায়—হয় বিয়ে করতে হবে তাকে আগামী কাল অথবা জীবন কাটাতে হবে আমাকে সন্ন্যাসি হয়ে। শুরু হল আশা-নিরাশার দ্বন্দ্ব। ভাবলাম একবার সম্মত হই সিনরের প্রস্তাবে, হই তার জীবনসঙ্গিনী। পরমুহুর্তেই ভাবি তাহলে হারাতে হবে কর্তৃত্ব আমার, হতে হবে তার ইচ্ছেঃ কাছে স্বেচ্ছাবন্দিনী। পরক্ষণেই মনে হয় যােগ দিই সন্ন্যাসিনীদের মঠে, জীবন কাটাই বিরহিনী বিষাদপ্রতিমা হয়ে। তাহলে তাে আর দেখতে পূর্ব মা তাকে কোনদিনই।
এই ভাবনা মনের আকাশে জ্বালায় দুঃখের দীপশিখা ভাবতে ভাবতে তলিয়ে যাই অনিশ্চয়তার গহূরে। উধাও নিদ্র দুচোখ থেকে আমার অদ্ভুত অবসাদে ভারাক্রান্ত মন। অবশেষে উপনীত হই স্থির সিদ্ধান্তে। তাকে ছাড়া কাটতে না জীবনের প্রহর আমার। ব্যক্তিত্বের বিসর্জনেও হতে হতে তার পথের পথিক।
জানাই তাকে মনের কথা, আরােপ করি শর্তাবলী। হ তার ঘরণী আমি, কিন্তু প্রথম থেকেই সে আমাকে অধিকার করতে পারবে না স্বামিত্বের প্রবল পরাক্রান্ত ব্যঞ্জনায়। সময় হলে আমি সঁপে দেব নিজেকে, তার দিগন্তবিস্তৃত ভালবাসা অরণ্যানীতে হারাব পথ।
আমার শর্ত শুনে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হলাে সে। ভাসল বুঝি ভাবনার তরঙ্গে। তারপর নতমস্তকে সম্মতি জানাল প্রস্তানে আমার। জানতাম আমি ঘটবে এমনটাই, আজ অব্দি কোনদিন সে করেনি আমার বিরুদ্ধাচরণ।
তাই এক সুন্দর সন্ধ্যায় মিলন হলাে আমাদের। হলা আমি লুডাে- ভিসাের ঘরণী। শুরু হলাে জীবন-উপন্যাসে একহাতে জড়িয়েছিল গলা… নতুন অধ্যায়। তিরিশটি দিনের অন্তে আবিষ্কার করল সে পরেছি আমি পায়ে বন্ধনের শৃঙ্খল, হয়ে উঠেছি তারই যৌণ সহকারিণী। যখন এমনি করে কাটছিল দিন, ধীরে ধীরে নব স্বামিত্বের অজানা অহঙ্কারে ভরে উঠছিল মন তার, পৃথিবী থেকে চলে গেলেন তার বাবা, রেখে গেলেন কর্সিকাতে তা জন্যে বিপুল সম্পত্তি এক। সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের জন্যে তাকে এখুনি যেতে হত সেখানে। অথচ সে কোনমতেই আমাকে ফেলে চাইছে না যেতে এমন অবস্থায় আমিই সমাধান করি সমস্যা তার। জানাই তা সঙ্গিনী হব এই সমুদ্রযাত্রার। আমার এই প্রস্তাবে অবাক হয়ে যায় লুডােভিসাে। শুরু হলো আমাদের স্বপ্নের সমুদ্রযাত্রা।
প্রবাদ আছে যে, কামনা-কন্যা ভেনাসের জন্ম হয়েছি। সমুদ্রে, তাই বােধহয় অকস্মাৎ হয়ে উঠি আমি অসংযমী এতদিন ছিল যা পরিশীলিত আবরণে আচ্ছাদিত, উন্মুক্ত হল : সাগরসহেলীর ডাকে সাড়া দিলাম দুর্মর বানায় তার। তার বলিষ্ঠ হাতের পরশে তৃপ্ত করল আমার কামপিপাসা।
অবগাহন করছিলাম সুখ-সাগরে তখনই হঠাৎ একদি ঘনিয়ে এল দুর্ভাগ্যের অন্ধকার যদি জানতাম ঘটবে এমন তাহলে হয়তাে নির্গত হতাম না এই অভিশপ্ত সমুদ্রযাত্রায়। ভাগ্যে যা ছিল ঘটে গেল তাই। ঝড়ের রাতে আম আক্রান্ত হলাম আফ্রিকান জলদস্যুদের দ্বারা। আমাকে আ । লুডােভিসােকে বন্দি করল তারা নিয়ে গেল তাদের সম্রাটে কাছে।
চোখের সামনে নিজের বিবাহিত স্ত্রীর এই অনাদর দেখে অসহায় আকুতিতে ভরে ওঠে লুডােভিসাের মন। কিন্তু মুহূর্তে আমাকে রক্ষা করার কোনও অস্ত্রই মজুত নেই তা তুণে। তাই অসহায় আত্মসমর্পণ করা ছাড়া কোনও পথ খোলা ছিল না আমাদের কাছে।
নিয়মমতাে হাজির হলাে এই সম্রাট। চোখের সামনে আমার মতাে কামনা মদির রমণীকে বসে থাকতে দেখে এক নিমেষে জুলে ওঠে বাসনার আগুন তার। সে জানতে চায় আমার ফেলে-আসা জীবনের কথা। আর যখন বুঝতে পারে যে আমি হলাম বিবাহিতা, তখন তার চোখের কোণে দেখা দেয় আশ্চর্য আত্মতৃপ্তির ঝিলিক। হয়তাে মনে মনে সে নিজেকে প্রস্তুত করে নেয় আসন্ন অভিসারের জন্যে। বিবাহিতা হবার জন্যে শরীরের ছেনালিপনায় যথেষ্ট পারদর্শিনী আমি—এটাই হয়তাে ভেবেছিল সম্রাট!
কুমারী কন্যা হলে আমাকে শেখাতে হত কামনার জটিল বর্ণমালা, এখন আর ঘটবে না এমনটি। প্রথম রাতেই বিছানায় তুলব আমি ঝড়, টাইফুনের ইঙ্গিতে মাতাবাে তাকে এমনটি ভেবেছিল সে। পায়ে পায়ে প্রবেশ করি নির্দিষ্ট কক্ষে আমার। চোখের ইশারায় সবাইকে বাইরে বের করে দেয় সম্রাট। আমাকে এনে বসায় সুসজ্জিত কেঁচে। তারপর হাতে হাত রেখে, আঙুলে জল জড়িয়ে প্রকাশ করে মনােভঙ্গি তার।
নির্ভুল ইতালীয় ভাষায় জানায় মনের ইচ্ছা তার। তার অবদমিত আকাঙক্ষার কথা শুনে ভয়ে কাঁপতে থাকি আমি। সে আমার পাশে এসে বসে, অনায়াসে তুলে নেয় তার প্রশস্ত বাহুতে হাতদুটি আমার।
সে জানতে চায় ইতালীর কোন শহর থেকে এসেছি আমি। তার কণ্ঠস্বরে আছে এক আশ্চর্য কাঠিন্য এবং গম্ভীরতা। মনে হয় যথেষ্ট ব্যক্তিত্বসম্পন্ন সে। প্রথম থেকেই আমার প্রতি কিঞ্চিৎ সদয় ছিল সম্রাট, এর কারণ, আমি বলতে পারব না।
কিছুক্ষণ কথাবার্তা চলার পর, হঠাৎ সে হাত রাখে আমার কোমরে। তারপর সজোরে সে আকর্ষণ করে আমাকে তার দিকে। একটু বাদেই দেখি আমি, সে প্রচণ্ড কামনার জ্বলন্ত বহিঃপ্রকাশৈ লেহন করছে আমার সমগ্র মুখমণ্ডল। তার সিক্ত লালা এসে আবিষ্ট করছে আমায়। ক্রমশ:অবসন্ন হয়ে পড়ি আমি। তার আক্রমণের আকস্মিকতায় বিহুল হয়ে গেছি আমি, বাধা দেবার বিন্দুমাত্র ইচ্ছাও যেন নেই আমার।
একটু পরেই সম্রাট অনাবৃতা করল স্তনদুটি আমার । তারপর আপনমনে খেলা করতে থাকে তার নিজের ইচ্ছেয়। স্তনবৃন্তকে দুমড়ে মুচড়ে যন্ত্রণা এনে দেয় মনে আমার। অস্ফুটে চিৎকার করে বলে, হায় মহম্মদ, কি আশ্চর্য সৃষ্টি এই দুটির। এতাে সুডৌল স্তনশীর্ষ আগে দেখার সৌভাগ্য হয়নি আমার। তার মুখ থেকে ছিটকে ছুটে-আসা এই সব মন্তব্য আমার গণ্ডদেশ করে দেয় আরক্তিম।
কৌচ থেকে উঠে সম্রাট মৃদু প্রত্যয়ী কণ্ঠস্বরে বলে—এতক্ষণ ধরে আমি তােমাকে আবিষ্কার করার চেষ্টা করছিলাম। এখন এসাে হে রূপসী ক্রীতদাসী, হও আমার শয্যার সহচরী। ভেবাে না অত সহজে ছেড়ে দেব আমি। হাতের মুঠোর মধ্যে পেয়েছি যখন একবার তােমায়, আমার কামের আগুন প্রশমিত না হওয়া পর্যন্ত তােমায় পুড়িয়ে মারব আমি!
এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে সে আমার পাশে এসে বসে। দু হাতে জড়িয়ে ধরে আমার কোমর। প্রচণ্ড যন্ত্রণায় কঁকিয়ে উঠি আমি। স্তনে আবার হাতের স্পর্শ পাই। নিজেকে এমনভাবে সম্পূর্ণ তৃপ্ত না করা পর্যন্ত চলতে থাকে তার বিধ্বংসী খেলা। পেটিকোটের নিচে লােভী আঙুলের ছাপ পড়ে যায়। আমি সাধ্যমতাে চেষ্টা করি তার বিরুদ্ধে প্রতিরােধের প্রাচীর গড়ে তুলতে। কিন্তু কিছুই হয় না। একটু বাদে তীব্র হুইসেলের শব্দ করে সে। শব্দ শুনে একমুহুর্তের মধ্যে হাজির হয় অদ্ভুত দর্শন সহচরের দল। তুর্কি ভাষায় সে তাদের কি যেন আদেশ করে।
তারা ফিরে আসে তীক্ষ কাঁটাওয়ালা চাবুক নিয়ে।
সম্রাটের অমােঘ আদেশে আমাকে চেপে ধরে রাখে দুই ক্রীতদাস। এমনকি আমার মাথাটাকে মাটির দিকে নামিয়ে দেওয়া হয়। প্রচণ্ড যন্ত্রণার স্রোত বয়ে যায় মেরুদণ্ড দিয়ে অস্ফুট আর্তনাদে চিৎকার করে উঠি আমি। চোখ থেকে বেরিয়ে আসেন কান্না। কিন্তু তার কোনও প্রভাব পড়ে না তাদের ওপর।
সম্রাট ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ নগ্ন করে আমাকে। ছুঁড়ে দেয় আমার পরিধেয়, এমনভাবেই আমাকে সম্পূর্ণ উলঙ্গ হয়ে। দাঁড়িয়ে থাকতে হয় লােভী পুরুষদের চোখের সামনে। শুনলে তুমি অবাক হবে ম্যাডাম, এই অবস্থায় সে প্রচণ্ড চাবুক মারতে শুরু করে আমাকে। যন্ত্রণায় তীব্র আর্তনাদ করি আমি। সারাদেহে চাবুকের লাল দাগ পড়ে যায়।
কিছুক্ষণ পরে হয়তাে সম্বিৎ ফেরে তার। বুঝতে পারে সে প্রথম রাতের পক্ষে যথেষ্ট হয়েছে এই আক্রমণ। হয়তাে আমি ভবিষ্যতে আর কোনদিন তার ইচ্ছার বিরুদ্ধাচরণ করব না।এমনভাবে যদি মৃত্যু এসে দাঁড়ায় চোখের সামনে, তাহলেও হয়তাে আমি সাড়া দেব সম্রাটের আকুল আকাঙক্ষর কাছে।
ক্ষণিকের বিরতির পর আবার শুরু হয় তার উন্মাদ প্রহার। সেইসঙ্গে চিৎকার করে বলতে থাকে সে–ওরে শ্বেতাঙ্গিনী, বারবিলাসিনী, আমি তােকে দেখাব নরকে যাবার রাস্তা।চাবুকের মার খেতে খেতে কখন যে জ্ঞান হারিয়ে গেছে আমার জানি না। অবসন্ন, ক্লান্ত দেহটা তখনও ধরে রেখেছে প্রচণ্ড শক্তিশালী সেই দুই বিকট দর্শন। অচিরেই আমাকে মুক্তি দেওয়া হল সেই জঘন্য অবস্থা। থেকে। সম্রাটের নির্দেশে বিদায় নিল রক্ষকের দল। যেন কিছুই হয়নি এমন ভান করে আমার সামনে এসে দাঁড়াল সে। হাত রাখল আমার যন্ত্রণাদগ্ধ শরীরের সবখানে। একটু আগে যে প্রচণ্ড চাবুকে রক্তাক্ত করছিল আমাকে এখন সেই চাইছে দিতে সােহাগের সহস্র উপহার। আর বিনা প্রতিবাদে তা গ্রহণ করতে চলেছি আমি। সম্রাটের নির্দেশে আমাকে শুতে হল তার পাশে। সে আমার চোখ থেকে বেরিয়ে আসা লবণাক্ত অশ্রুতে রাখল তার জিভ, ভয়ঙ্করভাবে চোষণ করতে লাগল আমার ঠোটদুটি এবং এক নিমেষে লম্বা জিভের ডগা ঢুকিয়ে দিল আমার মুখের ভিতর। সমস্ত শরীর ভরে ওঠে বিশ্রী ঘূণায়। সম্রাট বারবার জানতে চাইল যে আমি বিবাহিত কিনা। এর উত্তরে আমি দৃঢ়কণ্ঠে জানালাম যে, ইতিমধ্যেই আমি হয়েছি অন্য আর একজনের জীবন সঙ্গিনী। হারিয়েছি আমার কুমারীত্ব তার কাছে।
আমার কাছ থেকে এ উত্তর শুনে প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল সম্রাট। চিৎকার করে বলল সে-যে তােমার সতীত্ব হরণ করেছে—অচিরেই মৃত্যু হােক তার। ভেবেছিলাম আমিই খুলব তােমার শরীরের তালা।
সম্রাটের কথায় লজ্জিত হয়ে পড়ি আমি। লজ্জা নাকি আমার সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তােলে শতগুণে, এই মন্তব্য করল সে। আবার আমার ঠোট হয়ে উঠল খেলার পুতুল তার। উচ্চকণ্ঠে জানতে চাইল সে, কতদিন তুমি যুক্ত আছ ঐ খ্রীষ্টান কুকুরের সঙ্গে।
আমি বলি মাত্র একমাস।
—এক মাস! ঈশ্বর তােমাকে তৈরী করেছেন আমার ভােগে লাগার জন্যে। তােমার শরীরের কোণে কোণে জুেলেছেন কামনার শিখা আর তুমি কি না শয্যাসঙ্গিনী হয়েছ অন্য এক পুরুষের ? এখুনি আমাকে চুম্বন কর।
তার কথার অবাধ্য হলে কি ঘটতে পারে সেটা অনুমান করে সঙ্গে সঙ্গে অনিচ্ছাসত্ত্বেও স্পর্শ করি তার ঠোটদুটি। আমাকে এমনভাবে তার ইচ্ছের কাছে পরাজিত হতে দেখে প্রচণ্ড খুশি হয় সে। সঙ্গে সঙ্গে কামড়ে ধরে আমার ঠোটদুটি। অনেকক্ষণ ধরে চলে তার এই খেলা। পরমুহুর্তেই সে হাত ঢুকিয়ে দেয় আমার পেটিকোটের মধ্যে, স্পর্শ করে স্তনশীর্ষ, হাত রাখে গােপনতম অঙ্গে। প্রচণ্ড ভয়ে আমি বিনা প্রতিবাদে মেনে নিই তার নির্লজ্জ আক্রমণ।
মনে পড়ে হতভাগ্য লুডােভিসাের কথা। সম্রাটের আদেশে বিশেষ আসনে উপবেশন করি আমি, যাতে সে সহজেই অবলােকন করতে পারে আমার স্ত্রী-অঙ্গকে অনেকক্ষণ ধরে। দুচোখে সেটিকে নিরীক্ষণ করে চিৎকার করে ওঠে। সম্রাট—এতক্ষণ তুমি মিথ্যে বলেছ সব! এই কথা বলতে বলতে অতি দ্রুত তার আঙুল ঢুকিয়ে দেয় গভীর গােপন অভ্যন্তরে। এতদিন ছিল যা অস্পর্শিত, এমনকি লুডােভিসােও কোনদিন স্পর্শ করেনি যা, আঙুলের পরশে এই মুহূর্তে সেখানে পরপুরুষের লােভী হাতের ধারাবাহিক ঘর্ষণ!
প্রচণ্ড যন্ত্রণায় কেঁদে উঠি আমি। মনে হয় এখুনি বুঝি হৃদপিণ্ডটা আমার বেরিয়ে আসবে বুক থেকে। তখনও চলেছে সম্রাটের পূর্যবেক্ষণ। তার আদেশে উরু দুটিকে যথাসম্ভব প্রসারিত করতে হল আমায়। অনেকক্ষণ ধরে আমাকে পরীক্ষা করে সে আবার বলে—হায় মহম্মদ! তুমি তাে একেবারে কুমারীত্ত।
পরক্ষণেই গলার স্বরে আরােপিত করে প্রচণ্ড গাম্ভীর্য বলে–তােমার কুমারীত্ব সম্বন্ধে মিথ্যে ভাষণ দিয়ে আমাকে প্রতারিত করেছ তুমি, এর জন্যে পাওনা তােমার মারাত্মক শাস্তি। বলাে সুন্দরী কিভাবে তােমাকে শাস্তি দেব আমি? ভয়ে কাঁপতে কাপতে কোনরকমে জবাব দিই। আমি—আপনি জানতে চেয়েছিলেন কতদিন আগে বিয়ে। হয়েছে আমার। সত্যি সত্যি আমি একমাস আগে আবদ্ধ হয়েছি বিবাহ-বন্ধনে।
আমার উত্তরে অবাক হয় সম্রাট। বলে, কি আশ্চর্য! এখনও তােমার স্বামী স্পর্শ করেনি তােমার স্ত্রী অঙ্গ? এ কি করে সম্ভব!
অবশেষে আমি স্বীকার করি যে, তার কথাই সত্যি। আনুষ্ঠানিকভাবে বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও শরীরের দিক থেকে আমি রয়ে গেছি কুমারী জীবনে।
উত্তর শুনে কুটিল হাসির স্পর্শ লাগে ঠোটে তার। সে বলে চিবিয়ে চিবিয়ে—নিজের ভাগ্যকে হিংসে করতে ইচ্ছে করছে আমার। এমনটি তাে আমি দেখিনি আগে! একমাসের বিবাহিত জীবন যাপন করার পরও অটুট আছে কুমারীত্ব তােমার! এসাে, আমি পথ হারাই তােমার আশ্চর্য শরীর-অরণ্যে। করি তােমার সতীচ্ছেদ। হয়ে ওঠো তুমি পরিপূর্ণা রমণী আমার পৌরুষপরশে।
উঠে বসে সে কৌচে। আমাকেও বসায় তার পাশে। তীক্ষ্ণ হুইসেলের শব্দে ডেকে পাঠায় রক্ষীদের। তারা আমাকে নিয়ে যায় একটি ছােট ঘরে। চারদিকে দেওয়াল জোড়া আয়না। ভালভাবে লক্ষ্য করে দেখি আমি, ছােট্ট এই ঘরটির মধ্যে রয়েছে চকলেট-রঙা ভেলভেট চাদর-ঢাকা কৌচ, একটি বিরাট মাথার বালিশ। ঘরে নেই আর কোনও আসবাবপত্র।
মুহুর্তের মধ্যে কাজ শুরু করে রক্ষীরা। নিমেষের মধ্যে আমার সমস্ত পােশাক খুলে নেয় তারা। এমনকি খুলে ফেলে চুলের ফিতে। অচিরেই ফিরে যাই আমি আমার প্রথম জন্মদিনের পােশাকে। দোল জোড়া আয়নায় প্রতিফলিত আমার উলঙ্গ দেহের ছবি দেখতে দেখতে অদ্ভুত নিরাপত্তাহীনতা এসে গ্রাস করে আমাকে।
একটু পরেই কি ঘটতে চলেছে সেটা অনুমান করে শিহরিত রক্ষীরা নিয়ে যায় আমার সমস্ত পােশাক। বন্ধ হয় সামনের দরজা। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আমারই মতাে সম্পূর্ণ। উলঙ্গ হয়ে প্রবেশ করে সম্রাট। তুমি তাে জান ম্যাডাম, এসব কাজে বিন্দুমাত্র বিলম্ব সহ্য করতে পারে না সে।
এক লহমায় জড়িয়ে ধরে আমাকে। দু’ বাহুর কঠিন নিষ্পেষণে চাপ দেয় কোমল স্তনের ওপর। উন্মাদের মতাে ঠোটে, মুখে, কানে, গলায়, চিবুকে দেয় চুম্বনচিহ্ন। অনুকূল পরিবেশে জানায় সে পৌঁছে দেবে আমাকে কাঙ্ক্ষিত সুখের উপত্যকায়। স্বামীর কাছ থেকে যে সন্তুষ্টি পাই নি, আমি অচিরেই তা উপস্থিত হবে আমার সামনে। এই বলে সে আকর্ষণ করে আমাকে অভিজ্ঞ সহচরের মতাে, নিয়ন্ত্রণ করে আমার ভঙ্গিমা।
আবেশী কণ্ঠস্বরে বলে—এমনভাবে শােও তুমি আর প্রসারিত কর তােমার কোমল উরুদুটিকে।
তার কথা মেনে চলি আমি। কিন্তু সঠিকভাবে উন্মােচিত করতে পারি না নিজেকে।
ঈষৎ রাগান্বিত হয়ে সম্রাট নিজেই অবতীর্ণ হয় মঞ্চে। দু’হাত দিয়ে যতটা সম্ভব প্রসারিত করে দেয় আমার পা দুটিকে।
দেওয়াল-জোড়া আয়নায় দেখি তার অতি বৃহৎ উথিত দণ্ডের প্রতিফলন। দেখেই ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে যাই আমি। একটু বাদেই এটি অনুপ্রবিষ্ট হবে আমার মধ্যে, একথা ভেবে ভীষণ কষ্ট হয় আমার।
বােধহয় চোখের তারায় ফুটেছিল নিদারুণ আশঙ্কাসেম্রাট সস্নেহে হাত রাখে আমার মাথায়। জিভ দিয়ে তাচ্ছিল্যের শব্দ করে বলে, আর তােমাকে থাকতে হবে না উপসী, রাতের পর রাত তােমাকে অবহেলা করে তােক স্বামী যে অন্যায় অবিচার করেছে আজ অবসান হবে তা বুঝতে পারবে তুমি কি সুখ লুকিয়ে আছে শরীর-সঙ্গমে।একবার ধর্ষিতা হবার পর তুমিই চাইবে বারবার লাঞ্ছিত হতে আমার হাতে। থাকবে তুমি প্রতীক্ষারতা আমার জন্যে। যে রাতে আমি হব না তােমার শয্যাসঙ্গি, কাটবে তােমার নিদহারা নিশি। এমনকি স্বয়ংরতিতে এ মেতে উঠে তুমি নিবৃত্ত করবে তােমার প্রচণ্ড কামনাকে। এই বলে সে ধীরে ধীরে আমার মধ্যে প্রবেশ করায় তার আপন অহঙ্কার। ধাপে ধাপে সেটি পাঠিয়ে দেয় পিচ্ছিল যােনিপথের গভীর-গােপন কাঙ্ক্ষিত স্থানে। প্রথম মৃদুমন্দ যন্ত্রণার ছন্দে আন্দোলিত হচ্ছিল দেহ আমার, তারপর সারা শরীর ভরে ওঠে গভীর শান্তিতে। ম্যাডাম, বলতে লজ্জা নেই আমার, একমাসের বিবাহিত জীবনে এর আগে স্বামীর সঙ্গে ঘটে গেছে মৈথুনের মধুর মুহূর্ত, কিন্তু এমন নিদারুণ সুখের সন্ধান পাই নি আমি আগে কোনদিন।
সম্রাটকে আঁকড়ে ধরি আমি হতাশা, লজ্জা এবং বিভ্রান্তির অদ্ভূত আর্তিতে। আমাকে এমনটি করতে দেখে ক্রমেই প্রচণ্ড পরাক্রমশালী হয়ে ওঠে সম্রাট। এতক্ষণ নিস্তেজ ছিল তার ধ্বজাটি। এখন অকস্মাৎ ঘুম ভাঙে তার। প্রবল আক্রোশে নিজেকে আন্দোলিত করতে থাকে সে। অপ্রশস্ত সুড়ঙ্গপথে। বারে বারে সিক্ত হয় কামনার রসে। তার ধারাবাহিক আক্রমণে আর্তনাদ করে উঠি আমি। অবশেষে সেটি ছিন্ন করে দেয় আমার কুমারী জীবনের। আবরণটিকে। তখনই এক অব্যক্ত বেদনায় ভরে ওঠে মন।
তখনও প্রবল উৎসাহে নিজেকে নিয়ােজিত রেখেছে সম্রাট। ছন্দোবদ্ধ আক্রমণে কখনও ধীর লয়ে, কখনও বা প্ৰবলগতিতে চলেছে তার এই সর্বনাশের খেলা।
তার প্রবল শক্তিশালী ব্যক্তিত্বের কাছে অসহায় আমি মুহূর্তে বিদ্ধ হচ্ছি সেই প্রচণ্ড শক্তিশালী সংবেদনশীল পুংযন্ত্রটির আক্রোশে। এমনটি চলতে থাকে অনেকক্ষণ। অবশেষে লাল রক্তের। স্রোত এসে ভাসিয়ে দেয় বিছানা। চেতনা হারিয়ে যায়। নিদ্রা এসে আঁকড়ে ধরে চোখের পাতা।
ম্যাডাম, তুমিও তাে শিকার তার কামনার, জানবে তাহলে কি ভীষণ ব্যথা লাগে তার অস্বাভাবিক প্রকৃতির দণ্ডটিকে গ্রহণ করতে।
নিরুপায় আমরা। রাতের পর রাত চলবে এমন খেলা। মুক্তি নেই এই অন্ধকার জগৎ থেকে। এতটুকু দয়ামায়া নেই সম্রাটের মনে। আমাকে প্রচণ্ড যন্ত্রণায় কাতর দেখেও অনুশােচনা এসে আচ্ছন্ন করছে না তার মন। মুহূর্তের বিরতি দিয়ে সে আবার ঝাপিয়ে পড়ে আমার। ওপরে। দ্বিগুণ উৎসাহে শুরু করে রমণ-ক্রিয়া তার।
বার বার তার হাতে এমনভাবে লাঞ্ছিত হতে হতে নিজের প্রতি বিতৃষ্ণা এসে যায় আমার। অনেকক্ষণ বাদে বুঝি ক্লান্ত হয়ে পড়ে সে। আমাকে বসায় কৌচে তার পাশে। নিবিড়ভাবে আঁকড়ে ধরে সমস্ত শরীর আমার।
কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বলে–সুন্দরী ক্রীতদাসী আমার, তােমার নাম আমি বাঁধিয়ে রাখব সােনার অক্ষরে। তুমি হবে আমার হারেমের শ্রেষ্ঠতমা বন্দিনী। করব তােমায় যৌবনের সহচরী আমার। রাতের পর রাত কাটাব তােমার কবােষ্ণ দেহের উষ্ণতায়। দেব তােমাকে অনাস্বাদিত সুখের সন্ধান। সন্তুষ্টির স্বর্ণশিখর প্রাঙ্গণে পৌঁছে দেব তােমাকে।
তােমাকে আর হতে হবে না আমার পত্নীদের পরিচারিকা। অকারণে লাঞ্ছিতা হবে না তুমি প্রধান সুলতানদের হাতে। এছাড়া আরও অনেক অভাবিত পুরস্কার জুটবে তােমার কপালে। ধীরে ধীরে তা জানানবে তােমাকে। প্রথম সঙ্গমে তুমি আমাকে যে অনির্বচনীয় আনন্দ দিয়েছ তা আমি মনে রাখব চিরকাল।
এই বলে সে ইঙ্গিতে ডাকে তার তুর্কি দাসদের। সম্রাটের আদেশে বহন করে নিয়ে আসে মেয়েলি পােশাক আমার। তাদের সাথে নিজেকে আবৃতা করি আমি। সম্রাট আমাকে নিয়ে যায় প্রশস্ত ভােজনকক্ষে। ওক কাঠের টেবিলে সাজানাে আছে সারিবদ্ধ পাত্র, রূপাের দীপাধারে প্রজ্বলিত মােমশিখা, ওড়না-ঢাকা বাঁদীরা ব্যস্ত সান্ধ্য আহার পরিবেশনে।
সেই মুহূর্তে কোনও কিছু খেতে বিন্দুমাত্র ইচ্ছে ছিল না। আমার। তবুও খেতে হলে সম্রাটের সঙ্গে। তার নির্দেশে মুখে। তুলতে হল সুস্বাদু খাবার আর পানীয়। কড়া মাদকের গুণে ঝিম ধরে শরীরে। মনে হয় যেন হারিয়ে যাব আমি অমানিশার অন্ধকারে। নৈশ আহার শেষ করে আমি কোনরকমে উঠে দাঁড়াই। সম্রাট আমাকে ধরে ধরে নিয়ে যায় শােবার ঘরে। দেহের এখানে ওখানে আঁকে সখ্যতা ভরা চুম্বনের ছবি। তখনই এক ক্রীতদাসী এসে শুরু করে আমার পরিচর্যা। পােশাক খুলে সারা দেহ সংবহন করে সে সুগন্ধী তরলে। তারপর আমাকে পৌঁছে দেয় বিছানাতে।
অনেকক্ষণ ধরে যে নিদ্রার জন্যে কাঙিক্ষত ছিলাম আমি। তা এসে হাজির হয় ক্লান্ত দু চোখের পাতায়। হারিয়ে যায় স্মৃতিরা। একটু আগে ঘটে যাওয়া ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনাকে সম্পূর্ণভাবে বিস্মৃত হয়ে আমি ডুবে যাই অনন্ত নিদ্রার মধ্যে।
তন্দ্রা ভাঙে বাঁদীর ডাকে। জানায় সে, তৈরি এখন নৈশ আহার। উঠে বসি আমি। সে আমাকে সাজায় রাত পােশাকে। একাই বসে ডিনার সারি আমি। তারপর সে আমাকে নিয়ে যায় আর একটি ঘরে। অবাক হয়ে দেখি সেখানে কাচের আলমারিতে সাজানাে আছে, অসংখ্য গ্রন্থ, সবই লেখা আমার মাতৃভাষাতে।
সম্রাটকে আমি শুধুই নির্লজ্জ শরীর-তৃষার জঘন্য নরপশু হিসেবে চিহ্নিত করেছিলাম মনে মনে, তার মধ্যে যে লুকিয়ে আছে সংস্কৃতি প্রতি এতখানি আগ্রহ, জানতে পেরে তা, অবাক হয়ে যাই আমি।
ছােট থেকে ছিলাম আমি পুস্তকের অনুরাগিনী। কত না প্রহর কেটে গেছে আমার প্রিয় গ্রন্থের অন্বেষণে। এখানে সম্পূর্ণ অজানা পরিবেশে আবার দেখতে পেয়ে তাদের ভরে ওঠে মন। অজানা আনন্দে। মনে হয় ফিরে গেছি আমি পুরােনাে দিনে, হাত রাখি প্রিয় গ্রন্থকারের রচনাবলীতে। বাদীর ডাকে ভেঙে যায় তন্ময়তা। জানায় সে শুধু বই নয়, আমার মনােরঞ্জনের জন্যে আছে অন্যান্য উপকরণ। সিটিং রুমে রয়েছে সুবিশাল পিয়ানাে এক, আমার আঙুলের ছোঁয়ায় যা ঝঙ্কৃত হতে পারে।
অবাক হই আমি, ঘাের লাগে চোখে। সামান্য এক ক্রীতদাসীকে সুখী করার জন্যে সম্রাটের এই আন্তরিক প্রয়াসে বিস্মিত হতে হয় আমাকে। সরল শিশুর মতাে ঘুরে বেড়াই বসার ঘরের চারপাশে। ভুলে যাই নিদারুণ ভাগ্য-বিপর্যয়ের কথা। মনে হয়, এমন। করেই কেটে যাবে জীবনের বাকি মুহূর্তগুলাে।
একান্ত সহচরী এসে পৌঁছে দেয় সেই দুঃসংবাদ। এখুনি আসছে সম্রাট তার আগ্রাসী দেহের প্রচণ্ড ক্ষিধে নিয়ে। এখন কীই বা করতে পারি আমি? আত্মরক্ষা করার সামান্য অস্ত্র মজুত নেই আমার কাছে। তাছাড়া একবার তাে আমি বিসর্জন দিয়েছি আমার নারীত্ব, এখন আর নিজেকে বাঁচিয়ে লাভ কি? সমাজ তাে আর কোনদিন আমাকে স্থান দেবে না সুস্থ, স্বাভাবিক, নিরুদ্বিগ্ন জীবনে।
তার চেয়ে শান্ত মনে মেনে নিতে হবে ভাগ্যকে এই কথা বলে মনকে প্রবােধ দিই আমি। প্রবেশ করি বেড চেম্বারে। সকালে যে মেয়েটি ছিল উৎকণ্ঠিতা, এখন অনেকখানি বদলে গেছে সে।
একটু পরেই সম্রাট প্রবেশ করে সেখানে। আগের মতােই কামচঞ্চল মনে হয় তাকে। যেন আবার নির্মমভাবে হত্যা করবে আমার কুমারীত্বকে। কিন্তু অনেক বদলে গেছে মনােভাব তার। সকালে যে ছিল বেসরম কামনার তীব্র পথিক, চাবুকের আঘাতে করেছিল আমাকে যন্ত্রণাকাতর, এখন পরিণত হয়েছে সে লাজুক প্রেমিকে। আমারই দুরন্ত আকাঙক্ষায় এখন রঙিন হবে সে, হবে আমার আপন খেয়ালের সহচর।
হলােও তাই, আমাকেই নিতে হল আগ্রাসী ভূমিকা। ঠোটে ঠোটে মিলন হলে কোথায় ঘটে বজ্রপাত? লুডােভিসাে আমাকে করেনি এমন করে আকুল। এর আগেই বলেছি তােমায়, বদলে গেছে সম্রাট এখন অনেক, চুম্বন করছে আমায় একেবারে নতুন ভঙ্গিতে। আমা: ঈষৎ বিস্ফারিত ঠোটদুটির মধ্যে প্রবেশ করেছে তার সরু জিভ, পৌঁছে গেছে তা টাকরাতে। দুটি জিভের আশ্চর্য খেলায় উৎপন্ন হচ্ছে অনুপম আনন্দ এক।
ক্লান্তি উধাও, হারিয়ে গেছে লজ্জারা, শরীর জুড়ে বাজছে এখন মিথুন বেলার অর্কেস্ট্রা। আবার আমাকে শুইয়ে দিল সম্রাট। কামত্রিভুজে লাগল তার সােহাগ চিহ্ন। কি করে বােঝাই তােমাকে? এই মুহূর্তে এমনভাবে সে আমাকে বিদ্ধ করছে তার অহংকারের বস্তুটি দিয়ে! মুখ থেকে বেরিয়ে আসে অপূর্ব সুখের গােঙানি।
পিচ্ছিল সুড়ঙ্গপথ আবার ভরে যায় উত্তেজনার রসে, টইটুম্বুর হয়ে ওঠে মন। মনে হয় অনেকক্ষণ ধরে চলুক এই ভয়ঙ্কর খেলা। আগ্রাসী সম্রাটের প্রতিটি উদ্বেলিত চুম্বনের উত্তরে আমি আঁকছি আমার অনুরাগরঞ্জিত ভালবাসার চিহ্ন। সঙ্গমে যে বয়ে আনতে পারে এতখানি আনন্দ, মিলন যে হয়ে উঠতে পারে কাঙ্ক্ষিত পরম, প্রার্থিত পুরুষ এসে ভাঙাতে পারে ঘুম শেষ রাতে, বলতে পারে কানে কানে ফিসফিসিয়ে—এসাে প্রিয়ে, সারি আচমন তােমার শরীর সাগরে—কে জানতাে আর্থে তা!
লুডােভিসাের কোন স্মৃতি এখন আর জেগে নেই গভীর গহন কোণে আমার মনে হয়, সে যেন গত জন্মের সহচর, এ জীবনে তার সঙ্গে আমার দেখা হয়নি। জন্মেছি আমি সম্রাটের দ্বারা নিস্পেষিত হব বলে। সম্রাট আমাকে শেখাচ্ছে কামনার বর্ণমালা। ধীরে ধীরে উন্মােচিত করছে ভালবাসার রহস্যকে। পরিপূর্ণ করছে জীবন আমার; এই পৃথিবীর অসহায়, দুর্বল রমণীদের সৃষ্টি হয়েছে যে কারণে, সেই পরম ঈপ্সিত লক্ষ্যের দিকে সে নিয়ে চলেছে আমাকে। এমনভাবেই, অদ্ভুত ঘােরের মধ্যেই কেটে যায় বন্দিনী জীবনের প্রথম মাসটি।
সারারাত ধরে চলে তার অবুঝ অভিসারের পালা। সারাদিন মগ্ন থাকি আমি গভীর ঘুমে। এছাড়া কোনকিছুই আর করার নেই এখন আমার। মাঝে মাঝে ইচ্ছে হলে চোখ রাখি বই-এর পাতায়। আগের মতাে পড়তে আর ভালাে লাগে না। মনে হয় কি লাভ বৃথা জ্ঞান অন্বেষণে। বাকী জীবনটুকু তাে আমাকে থাকতে হবে বন্দিনী তার দেহের খাঁচায়। আর কোনদিন পারব না উড়তে আমি স্বাধীনতার নীল আকাশে, বদ্ধ বাতায়নে দাঁড়িয়ে চেয়ে চেয়ে দেখব সাদা মেঘের খেলা। ডাকতে ডাকতে উড়ে যাবে দুরন্ত সমুদ্রপাখি। আমার দিকে ছুঁড়ে দেবে করুণা অনেক। সকালের সােনালি রােদ এসে বিদ্রুপ করবে আমায়। রাতের জ্যোৎস্না শােনাবে অশ্রুত কাহিনী তার।
কখনও বা শেষ বিকেলে হাত রাখি পিয়ানােতে; আনমনে বাজাই আমার প্রিয় সুর। আর তখনই বৃষ্টিপাতের মতাে ভিজতে ভিজতে ফিরে আসে জেনােয়া শহর আর হারানাে শৈশব। ছিলাম আমি প্রচণ্ড ব্যক্তিত্বসম্পন্না। ইচ্ছে করে শৃঙ্খলিতা হব না বলে পরিনি পায়ে বিয়ের শেকল। দিনের পর দিন ফিরিয়ে দিয়েছি প্রিয়তম লুডােভিসােকে। অবশেষে অনেকে শর্তাবলী আরােপ করেছি আমার বৈবাহিক জীবনে।
অনুগত সহচরের মতাে লুডােভিসে মেনে নিয়েছে তা। প্রতিবাদ করেনি, তার প্রচণ্ড পৌরুষের ভয়াল আক্রমণে ভেঙে চুরমার করেনি আমার কুমারীত্বের প্রাচীরকে। তার ভালবাসা ছিল অনেকটা সখ্যতার সূক্ষ্ম আবরণে ঢাকা, সমমর্মিতার পরশ মাখা, সহযােগিতার আবেশ-ভরা। শরীরের খেলায় আমাকে নিতে হত প্রধান ভূমিকা। তালেতালে সঙ্গত করত সে।
সম্রাট বদলে দিয়েছে সব। কলঙ্কের বিছানাতে আমাকে শুইয়ে রেখে জ্বেলেছে কোষে কোষান্তরে অদ্ভুত ভাললাগার শিখা। আপ্লুত হয়েছি আমি, পরিপ্লাবিত হয়েছি তার সর্বগ্রাসী কামনার প্রচণ্ডতায়। দিন কাটে আমার অদ্ভুত তন্দ্রামগ্নতায়। মনে হয় কখন আসবে রাত। আবার আমি আশ্রয় নেব সম্রাটের প্রশস্ত বুকে। আলিঙ্গনে, মর্দনে, চুম্বনে, চোষণে, দংশনে, লেহনে ক্ষণে ক্ষণে করবে আমায় শিহরিতা সে। অবশেষে বাঁধ-ভাঙা বন্যার মতো ছুটে আসবে উত্তপ্ত জলরাশি, ভরে যাবে আমার গােপন গহুর। পোঁছে যাব আমি চরম রতির পরম ঈপ্সিত মুহূর্তে।
প্রথম প্রথম থাকত মগ্ন সম্রাট আমার শরীর অন্বেষণে। ক্রমশ কমে আসে তার মত্ত মৃগয়ার মুহূর্তগুলি। বাঁদী এসে খবর দেয় আমায়, তার হারেমে এখন এসেছে প্রাচ্যদেশীয় সুন্দরীরা। তাদের প্রচণ্ড যৌবনের দাউদাউ বন্যায় জ্বলছে সম্রাট। শরীরে শরীরে রেখে চলছে তার অনুখন কামনার ভয়ংকর খেলা। তাই ভুলে গেছে সে আমাকে। এক শরীরে বারবার তৃপ্তি পায় না। সে। চলে তার নিত্য নতুন রমণীদেহের অনিঃশেষ অনুসন্ধান। সারারাত ঘুম আসে না চোখে আমার। নিম্ন নাভিদেশ থেকে উঠে আসে চেতনা এক। ছড়িয়ে পড়ে সারা দেহে। একাই থাকি আমি প্রতীক্ষার তার আগমনের প্রত্যাশায়। আসে না। সে, ভাঙায় না ঘুম আমার প্রত্যাশার।
সেই তাে করেছে বাঘিনীকে রক্ততৃষিতা, এখন অনাদরের অরণ্যে একাই ঘুরছে সেই ভয়ঙ্কর কৃঘিনী শিকারের সন্ধানে। মেনে নিয়েছি ভাগ্যকে আমি আমার।
এমন করেই দেখতে দেখতে অতিবাহিত হয়েছে দুটি বছর। মাঝে মাঝে মনে পড়ে লুডােভিসাের কথা। বিচ্ছিন্ন হবার পর কোথায় সে আছে কেমন আছে জানি না আমি। আছে কি না। এই পৃথিবীতে সেই খবরও জানা নেই আমার। ইচ্ছে হয় মাঝে মাঝে, যদি একবার দেখতে পেতাম তাকে! আবার হতে। পারতাম মিলিত তার সাথে কি! তাহলে বাকী জীবনে চাইবার মতাে আর কিছু থাকত না আমার!
কিন্তু সম্রাট এমনভাবে বেঁধেছে তার বাসনায়, কোনদিন কি আমি হতে পারব তৃপ্তা লুডােভিসাের আলিঙ্গনে, তার চুম্বনচিহ্ন কি বয়ে আনবে আমার জন্যে আশ্চর্য আনন্দের স্বাদ? পরিপূর্ণা হব কি তার ধারাবাহিক সােহাগে? এই হল আমার মতাে হতভাগ্য রমণীর জীবনকথা। জানি। আমি ম্যাডাম, বাকি দিনগুলাে আমাকে কাটাতেই হবে এই নরকে। এর থেকে মুক্তি নেই আমার।
সহেলী সিলভিয়া, এই হলাে সেই ইতালীয় ললনার আত্মকথন। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই আমার, তার স্বীকারােক্তির শেষ অংশটি অকারণে আমার মনে এনেছিল অনেক সন্দেহ। ভাবছিলাম আমি উৎকণ্ঠিতচিত্তে, তাহলে কি আমিও একদিন নিমজ্জিত হব অবহেলার সমুদ্রে? একাই কাটবে আমার নিশি প্রহর, তারই মতাে থাকব আমি শরীরতৃষিতা ?
পরমুহূর্তেই ভরে যায় মন আশ্চর্য আনন্দে এক। আজ পর্যন্ত অতিক্রান্ত হয়নি এমন কোনও সপ্তাহ যখন কমপক্ষে তিন তিনবার সে আসেনি আমার কাছে। তার আগ্রাসী আক্রমণে অলসতার ছায়া পড়েনি, অনীহা এসে ঢাকেনি তার। উদগ্র কামনাকে।
আগের মতােই সে আমাকে শােনায় ভয়াল, ভয়ংকর জলপ্রপাতের শব্দ। হাত ধরে নিয়ে যায় আমাকে ভয়ংকর উপত্যকায়।যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি পৌঁছে যাচ্ছি শরীর সুখের সর্বোচ্চ। শিখরে ততক্ষণ চলে তার অন্তহীন প্রণয়লীলা। ক্লান্তি উধাও, অবসাদ নিরুদ্দেশ, বিহু নেই, আছে শুধু কূল-ভাসানাে জলরাশির কল্লোল।
প্রতি রাতেই এমন করেই সে ভাসিয়ে নিয়ে যায় আমাকে। সেদিক থেকে অনেকখানি ভাগ্যবতী আমি। ধীরে ধীরে অন্তরঙ্গ আলাপচারিতায় আমার কাছে। উন্মােচিত করে তার গভীর গােপন কলঙ্ককথা।
একদিন জানতে চায় সে আকুল হয়ে—ম্যাডাম, সম্রাট যখন তােমাকে অন্যভাবে উপভােগ করে, তখন কি তুমি শিহরিত হও আগের মতােই?
তার এই প্রশ্ন শুনে অবাক হই আমি। অজ্ঞতায় ভরে ওঠে মুখ। অনুরােধ করি তাকে বুঝিয়ে বলতে ব্যাপারটা।
কথা শুনে আমার, খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে সে। হাসতে হাসতে বলে–তুমি কি সত্যি বলছ ম্যাডাম? বন্দিনী যে তুর্কি হারেমে, হয়নি তার এমন অভিজ্ঞতা, মানতে হবে আমায়? করেনি সে শিহরিত তােমাকে নতুনতর ভঙ্গিমায়?
তাকে আমি অনুরােধ করি বুঝিয়ে বলতে ব্যাপারটা।
বলে সে–তুমি কি জানাে ম্যাডাম, রমণীরা দু’ভাবে গ্রহণ করতে পারে পুরুষকে, এমনভাবেই ভগবান সৃষ্টি করেছেন তাকে।
তারপর সে বুঝিয়ে দেয় সমস্ত ব্যাপারটা।
শুনে আমি বিস্মিত হয়ে উঠি। কি করে সম্ভব এটা? এতাে পরিপূর্ণ জান্তব ব্যাপার।
প্রশ্ন করি তাকে তােমার কি হয়েছে এমন অভিজ্ঞতা?
নিস্পৃহ কণ্ঠে সে বলে—অনেকবার। সত্যি বলতে কি এখন তাে সম্রাট পছন্দ করে এই পথটাই। সে বিশ্বাস করে এটাই নাকি কাঙিক্ষত সুখের প্রার্থিত মুহূর্তকে দীর্ঘায়িত করে।
আবার প্রশ্ন করি আমি—এতে সত্যি সত্যি সুখ পাও তুমি? তােমার মন কি ভরে ওঠে না অদ্ভুত ঘৃণায়, জাগে না কি প্রতিবাদের আগুন?
আবার হেসে ওঠে সে। জবাব দেয় মোডাম, তুমি দেখছি একেবারেই ছেলেমানুষ। জানাে তুমি সৃষ্টিকর্তার আশ্চর্য অনুগ্রহে আমাদের দেহের প্রতিটি অংশই বহন করে কামনা তরঙ্গকে। ইচ্ছে মতাে পুরুষ তদংশন করে তাকে। কেউ বা তৃপ্ত হয় এক ভঙ্গিমায়, কেউ বা আনন্দ পায় অন্যভাবে। এতে সাড়া আমাদের দিতেই হবে। কতক্ষণ আমরা থাকতে পারব অধরা?
দেখ একদিন সম্রাট তােমাকে শেখাবে এই সর্বনাশের খেলা। এখন থেকে তুমিও চাইবে বার বার এমনভাবে ধর্ষিতা হতে তার কাছে। আর যদি বিশ্বাস না হয় তােমার, তাহলে একদিন লুকিয়ে এসাে আমার শশাবার ঘরে। থেকো বসে প্রসাধন কক্ষে। এখনও মাঝে মাঝে সম্রাট দিনের বেলা আসে আমার কাছে, আর শুরু করে তার জান্তব খেলা। তখন তুমি নিজের চোখে দেখতে পাবে সব। বদলে যাবে ধারণা তােমার।।
ইতালীয় কন্যার আন্তরিক সংলাপ এনে দিল একরাশ হতাশা চেতনায় আমার। সেই সন্ধ্যায় সম্রাট এল মিলিত হতে আমার সঙ্গে। অবাক হয়ে দেখল সে, সুখের আকাশে জমেছে।
আমার বিষাদের কালাে মেঘ। অনুমান করল, ঘটে গেছে। কোনও অঘটন।
ধীরে ধীরে আমাকে আলিঙ্গন করল সে। স্নেহ চুম্বন চিহ্ন দিল চিবুকে। বলল—প্রিয়তমা জুলিমা (এই নামেই সে ডাকে আমায়) বিষাদে কেন ঢেকেছু সুন্দর মুখখানি তােমার? কি হয়েছে বল, সুন্দরী ক্রীতদাসী আমার?
তখন ধীরে ধীরে জানাই তাকে সব কথা, ইতালীয় কন্যা যা বলেছে আমাকে।
এমনকি জানাই তাকে, আমাদের দেশে এটি হল ভয়ংকর অপরাধ। যার জন্যে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে।
ভেবেছিলাম, কথা শুনে আমার রাগ জমবে কালাে মুখে তার। বাস্তবে হল না কিছুই। শান্তস্বরে সম্রাট বলল-সবই জানি জুলিমা, পৃথিবীতে তােমাদের দেশেই এই মারাত্মক শাস্তিরবিধান আছে। তুমি তাে এখন আর ইংল্যান্ডে বাস করছ না। এ জীবনে আর কোনদিন ফিরবে না সেখানে। যতক্ষণ পর্যন্ত মৃত্যু এসে আমাদের একজনকে কেড়ে না নেবে ততক্ষণ আমরা থাকব এমনই সংযুক্ত। কাজেই কি লাভ এসব কথা ভেবে। উচিত তােমার আমার সমস্ত ইচ্ছার প্রতি নিবেদিত হওয়া। ইংল্যান্ডের আইন কি বলেনি, স্ত্রী তার স্বামীর সমস্ত আইনগত চাহিদাকে পূরণ করবে? আরও বলে সে—যদিও তুমি এখনও আমার বিবাহিত স্ত্রী। নও, কিন্তু আমাদের প্রথা অনুসারে তােমাকে বসানাে যেতে পারে একই আসনে, তাই শুনতেই হবে তােমাকে আমার সমস্ত কথা। আর যদি সত্যি সত্যিই তুমি আমার বৈধ স্ত্রীর মর্যাদা পেতে চাও, তাহলে ধর্মান্তরিত হতে হবে তােমায়। এতেও আপত্তি নেই আমার।
আমাদের আইন অনুসারে পুরুষকে দেওয়া হয়েছে অসীম ক্ষমতা। সে ইচ্ছেমতাে উপভােগ করতে পারে তার স্ত্রী অথবা রক্ষিতাদের। এ ব্যাপারে রমণীদের কোনও অভিযােগেরই বিচার হবে না। তাই যখন চাইব আমি, হরণ করব তােমার দ্বিতীয় কুমারীত্বকে, পৌঁছে যাব আর এক সুখের। শীর্ষবিন্দুতে, এর মধ্যে অন্যায় নেই। শােননা জুলিমা, তুমি যদি বিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার কর, তাহলে দেখবে যখন সেটি যথাযথভাবে নিষিক্ত হয় তখন স্বাভাবিকভাবে বন্ধ হয়ে যায় তার মুখ। শিশুসন্তান ভূমিষ্ঠ না হওয়া পর্যন্ত ঢাকা থাকে তার মুখখানি। যদি একজন রমণী উৎপাদনশীলা হয় এবং লাভ করে চরম রতি তাহলে তিনমাসের মধ্যে সে হবে নিশ্চিতভাবে গর্ভিণী, ভাগ্যে যা থাক তখনও সে থাকবে হয়ে গর্ভবতী। সেক্ষেত্রে আরও ছ মাস পর্যন্ত বহন করবে সে ভূণটিকে গর্ভে তার। তার মানে গর্ভধারণের পর প্রতিটি মৈথুন অন্তে নেমে আসবে নিরাশা। তার গােপন গহূরে যতবার তরল প্রবেশ করুক না কেন সেটি পথ হারাবে অন্ধকারে।
তাহলে ভেবে দেখ সুন্দরী ক্রীতদাসী আমার, এমনভাবে প্রতি মুহূর্তে নষ্ট হচ্ছে লক্ষ লক্ষ প্রাণের সম্ভাবনা। এর মধ্যে কোন অপরাধবােধ লুকিয়ে আছে কিঃতাহলে কি তফাৎ? যদি জীবনরস প্রবেশ করে কামনার গরে অথবা আশ্রয় নেয় সে, ঠিক তার নীচের গােপন কোটরে পৃথিবীতে কোনও রমণী এই কাজকে জঘন্য বলে মনে করে না।
এমনকি আমার গ্রীস আর কর্সিকার সুন্দরীরা এইভাবে রমণ- ক্রিয়ার মধ্যে খুঁজে নেয় অসীম আনন্দ। মনে করে তারা, এটি হল আমার প্রতি তাদের কর্তব্যবােধ এবং আনুগত্যের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। ছেলেবেলা থেকে তাদের এমনভাবে শিক্ষিত করে তােলা হয়েছে যাতে তারা সহজেই সাড়া দিতে পারে পুরুষ প্রেমিকের ডাকে।
আমার হারেমে আছে দুজন ইতালীয় ললনা যারা এ ধরণের আনন্দকে গর্হিত বলে মনে করে না। আমার ফরাসী ক্রীতদাসীও একে গ্রহণ করে প্রশ্রয়ের মধ্যে। তবে জানি আমি, তােমাদের দেশে এর বিরুদ্ধে আছে এক কুসংস্কার। কিন্তু ধীরে ধীরে তােমাকে কাটিয়ে উঠতে হবে তা, তবেই তুমি যথার্থভাবে। আমার অনুগামিনী হয়ে উঠতে পারবে।
তার এই কথা শুনে ভীষণ জোরে কেঁদে উঠি, জড়িয়ে ধরি। গলা তার আদুরে কন্যার মতাে, উন্মাদিনীর মতাে চুমু দিই সারা শরীরে তার। তারপর বলি—না, না সম্রাট, কথা দাও আমাকে তুমি কোনদিন এমন করে কষ্ট দেবে না।
সম্রাট চিৎকার করে বলে—আমাকে এমনভাবে শপথ করতে বাধ্য করাে না জুলিমা।
আমি মনে করাই তাকে কিন্তু তােমাকে তা করতেই হবে।
—কেন? জানতে চায় সে।
—মহান পয়গম্বরের নামে শপথ করে বলেছিলে তুমি, চাইব আমি ইচ্ছেমতাে আমার যে কোন উপহার, মনে পড়ে কি সেই পবিত্র শপথের কথা?
মনে আছে সবকিছু।
—তাহলে তুমি কথা দাও আমাকে, কোনদিন এমনভাবে হরণ করবে না কুমারীত্ব আমার।
চিৎকার করে ওঠে সম্রাট—কী ভাবছ তুমি, মহান আলির কোন কাজে জুলিমাকি ভ্রষ্টা হতে পারে!
উঠে যায় সে কৌচ ছেড়ে। সর্বাঙ্গ জ্বলছে তার প্রচণ্ড রাগে। এই প্রথম আমাকে এতখানি ভালবাসার পর রূঢ়বাক্য মুখ থেকে বেরিয়ে এল তার।
বলতে থাকে সে—সত্যি কথা, শপথ করেছি আমি। আর একজন ধার্মিক হিসেবে সেই শপথ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে আমায়। কিন্তু দোহাই তােমাকে, এমন করে প্রতিজ্ঞার কথা মনে করিয়ে দুর্বল করে তুললা না আমায়। তাহলে ঘােরতর অন্যায় হবে সেটা।
এইকথা বলে আমার উত্তর না শুনে অতি দ্রুত বেরিয়ে যায় সে সেই ঘর থেকে। তখনও বিড়বিড় করে কি সব বলে চলেছে যেন! কেঁদে ফেলি আমি। তার এহেন ব্যবহার আমার মনে এনে দেয় বিষাদ ঘন স্তব্ধতা।
সম্রাট চলে যাবার এক ঘণ্টা পরে দু চোখ বেয়ে অঝােরে ছিল অশ্রুকণা। এতেই বেশ কিছুটা আশ্বস্ত বােধ করি আমি। বুঝতে পারি আমার প্রতি হয়তাে আর কোনদিন সদয় – না সে। তাকে কি আমি বুঝতে পারি ঠিকমতাে।
আসে আর একটি সকাল। সারাদিন প্রতীক্ষায় থাকি। তার অবকাশে সাজাই নিজেকে সুন্দরীতমার বেশে। সুগন্ধিতে ভিত করি দেহখানি আমার। ধীরে ধীরে যামিনী মন্দাক্রান্তা অ মদালস ছন্দে এসে দাঁড়ায়। আকাশের প্রেক্ষাপটে একটি করে জাগতে থাকে তারা। এক শয্যায় থাকি আমি উন্মনা, স না সে, কেটে যায় রাত। এমনভাবেই কেটে যায় দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ রাত। শ্বাস বন্ধ করা, বিষাদের তমিস্রাঘন অন্ধকারে মুখ ঢাকি স। শুনতে পাই পায়ের শব্দ তার। বুঝতে পারি মত্ত এখন রের মৃগয়ায় সে অন্য কোনও রক্ষিতার সাথে। বুকের ভেতরটা মােচড় দিয়ে ওঠে। মনে পড়ে তার পষিত আলিঙ্গনের কথা, কামনার জারক রসে সিঞ্চিত এরা পাখা মেলে ভােরের আকাশে। আমার অসন্তুষ্ট বাসনারা অই শক্তিশালী হয়ে ওঠে। পঞ্চম দিনে দেখা হয় হাননারিয়ার ইতালীয় সেই বারবণিতার চোখে মুখে এখন উপচে পড়ছে র জোয়ার। দেখেই বুঝতে পারি তাকে। অসম্ভব কামতৃপ্ত জানায় সে কেমন করে কেটে গেছে কত রাত সম্রাটের লঙ্গনে।
অবশেষে সম্রাটের ইচ্ছার কাছে নিজেকে সম্পূর্ণ নিবেদিতা করে লিখতে বসি পত্র তাকে।
সম্রাটকে লেখা এমিলির চিঠি
হায় আলি, তুমি কি করে তােমার প্রাণের চেয়ে প্রিয় জুলিমাকে ছেড়ে অতিবাহিত করলে এতগুলাে দিন! ভাবলে না একবারও, তোমাকে না পেলে কেমনভাবে কাটবে তার নিদ্রাবিহীন রাত। কে আদরে আদরে ভরাবে সারা দেহ তার, কার হাতে ধর্ষিতা হয়ে লাভ করবে সে স্বর্গসুখ! শেষতম অন্তরঙ্গ আলাপচারিতায় বলেছিলাম যা, মনে গরাে সেটা আমার অন্তরের কথা নয়। পরিস্থিতি বাধ্য রেছিল উচ্চারণ করতে শব্দগুলি আমার। হায় আলি, আমি এখন গর্ভবতী। তােমার হতভাগ্য তদাসীকে ক্ষমা কোরাে। সন্দেহ কোরাে না ভালবাসায় মার। ক্ষমা করাে আমার অজ্ঞতাকে। তুমি কি পাওনি আমার কাছ থেকে ভালবাসা আর আনুগত্যের নিদর্শন? ভুলে গেছি তাে আমি সব, আমার প্ৰিয়তম দেশ, প্রিয় বান্ধবীদের ছেড়ে হয়েছি বন্দিনী তোমার হারেমে। হায় আলি, দয়া করো আমায়। রেখাে না আমাকে অস্পর্শিতা আর। তােমার মনের বাসনাকে মেটাব আমি আমার নারীত্বের পরিপূর্ণতায়।
তােমার অনুগতা ক্রীতদাসী
জুলিমা
আলির চিঠি তার জুলিমাকে
শুয়েছি পত্রখানি, তােমার। জানতাম যে তুমি এখন গর্ভধারণ করেছ। এইজন্যে তােমার প্রতি বেড়ে গেছে ভালবাসা আমার। যতক্ষণ পর্যন্ত তােমার আনুগত্য সর্বাঙ্গসুন্দর না হচ্ছে ততক্ষণ আমি এমনভাবেই থাকব অনেক দূরে। লিখেছ তুমি যে, আমার সার্বিক উপস্থিতি ভুলিয়ে দিয়েছে তােমায় তােমার মাতৃভূমি পর প্রিয় বান্ধবীদের কথা। কিন্তু একবারও কি মনে পড়ে না সেই সুখের মুহূর্তগুলি—ছিলে তাে তুমি এক অনভিজ্ঞা কুমারী, শরীরের খেলায় পারদর্শিণী করেছি আমি। কি দেবে উপহার আমায় এর প্রত্যুত্তরে? আমার কামনার সোনার শেকল পরবে কি পায়? কেন আমায় তুমি বারবার মনে করাও শপথের কথা? আমি তাে চেয়েছি তােমার দ্বিতীয় কুমারী গহ্বরে প্রবেশ করাতে আমার দণ্ডটিকে। রাজি আছ কি তুমি? স্পষ্ট করে জানাও।
ইতি
তােমার আলি
আলির চিঠিখানি পেয়ে রক্তে বেজে ওঠে কামনার মাদল। সঙ্গে সঙ্গে লিখি তাকে ভুলে গেছি সব কথা আমার। তােমারই আসার প্রতীক্ষায়।
জুলিমা
সম্রাটকে লেখা এমিলির চিঠি
এল আবার বহু প্রতীক্ষিত সন্ধ্যাটি আমার সামনে, প্রবেশ করল প্রমিক পুরুষ সম্রাট। দেখে তাকে স্থির থাকতে পারি না আমি। মচিরেই নিজেকে নিমজ্জিত করি বলিষ্ঠ বাহুপাশে তার। অচেতনার মধ্যে চোখদুটি ভরে যায় লবণাক্ত জলে, সেখানে লখা নেই বেদনার অশ্রুগাথা। আছে শুধু সুখসাগরে ভেসে আওয়ার নিদারুণ প্রতিশ্রুতি।
শক্ত করে চেপে ধরি তাকে। দুটি দেহের মিলিত আলােড়ন ছন্দ জাগায় মনে মনে। আমাকে উদ্দেশ্য করে নিবেদন করে সেজীর্ঘ প্রতীক্ষিত, দুষিত আকাঙ্ক্ষিত চুম্বন। কিন্তু আমার দিক থেকে তেমনভাবে প্রত্যুত্তর না পেয়ে কিছুটা ব্যাহত হয়। অবশেষে আমি তার ঠাটে এঁকে দিই আমার ভালবাসার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। সঙ্গে সঙ্গে সম্রাট শুরু করে কামলীলা তার। চোখের নিমেষে নগ্ন করে আমাকে, আমার স্তনশীর্ষে হাত রাখে অন্যমনে, দলিত মথিত করে আমার স্তনবৃন্ত। হারিয়ে গিয়েছিল যে চেতনা, এখন আবার ফিরে যাই তাতে।
এমনভাবে নগ্নিকা এই কন্যাটিকে দু হাতের মধ্যে গ্রহণ করে সম্রাট। নিতম্বের তলায় রাখে দুটি বালিশ তারপর ঈষৎ অবনত করে শরীর আবার, যাতে স্পর্শ করে উরুদেশ। এর ক্ৰলে ধরে ধীরে উন্মুক্ত হয় নিতম্ব আমার।। এমনভাবে আমাকে বসিয়ে আলি প্রসারিত করে উরুদুটি আমার। অদ্ভুত আবেশে ভরে যায় মন। তারপর আশ্চর্য এক কৌশলে চেষ্টা করে দ্বিতীয় কুমারী গহ্বরে তার পুংদণ্ডটিকে প্রবেশ করাতে। প্রথম চেষ্টায় সে সফল হয় না। চেষ্টা করে বারবার, অদ্ভুত শিহরণ এসে গ্রাস করে আমায়। মনে হয় এই অমােঘ খেলায় হেরে যাবে সে। একটু বাদে অদ্ভুত আবেশে জড়িয়ে ধরে চোখ দুটি। ধীরে ধীরে সে প্রবিষ্ট করায় উথিত দণ্ডটিকে তার। ব্যথায় সে জেগে ওঠে সন্ধ্যাকাশের তারার মতাে। সাবধানে দৃঢ়ভাবে সে প্রবেশ করায় দণ্ডটি তার। ক্রমশঃই উত্তেজনায় কেঁপে উঠছে শরীর। জান্তব এই ক্ষুধার কাছে পরাজিত, ধ্বস্ত হচ্ছি আমি।
একেবারে শেষের দিকে সফল হয় তুর্কি তার মদির নেশায়। সম্পূর্ণ মাংসল পতাকা প্রােথিত করে দ্বিতীয় কুমারীর গহ্বরে। ব্যথায় থরাে থরাে করে কাঁপতে থাকে সমস্ত নিতম্ব। মনের মধ্যে ভিড় করে অদ্ভুত এক অবসাদ আমার । চেতনারা চাবুক খেয়ে হয়ে ওঠে রক্তাক্ত। আশ্চর্য জ্বরে আক্রান্ত হই আমি। বুঝতে পারি না কি করপ কর্তব্য এখন আমার। বয়ে চল সময়, অনেকক্ষণ কেটে যায় এইভাবে, মনে হয় বুঝি কেটেছে অনন্ত প্রহর। তারপর ধীরে ধীরে নিজেকে নিষ্ক্রান্ত করে সে তার এই বন্য জান্তব্ধ খেলা থেকে। শরীরের মধ্যে এতক্ষণ শলাকার মতাে বিধছিল পুরুষ দণ্ডটি তার। নিষ্ক্রান্ত হবার পর অনুভব করি অসহ্য ব্যথা। অনেকক্ষণ থাকি আমি বাক্যহারা। আবার অবসাদে বুঝি কিছুটা বিমর্ষ হয়ে পড়ে সম্রাট।
পরের দিন গােপন আলাপচারিতার আসরে জানাই আমার প্রথম অভিজ্ঞতার কথা সহেলীদের কাছে। ইতালীয় বালা হেসে কুল হয়, ফরাসী ললনার ঠোটের কোণে জেগে ওঠে তাচ্ছিল্য, আমার সব কিছুকেই ভাবে তারা ছেনালিপনা। গ্রীক কন্যাই একমাত্র সহানুভূতি জানায় আমাকে। সেই হয়ে উঠেছে এখন আমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। তার সঙ্গে কেটে যাচ্ছে প্রহর। অসামান্য রূপলাবণ্যের অধিকারিণী সে। লম্বা কৃশ কায়া, মুখের মধ্যে বিষণ্ণতার ছায়া কাপে। মনে হয় সবসময় সে যেন হেঁটে চলেছে কুয়াশা-ভরা উপত্যকা দিয়ে।
তার ঈষৎ নীলা চোখের তারায় শারদ সন্ধ্যার চন্দ্রের জ্যাৎস্না। অপসৃয়মাণ সূর্যের আলােয় মৃত্যু উদ্ভাসিত পৃথিবীর য়া কঁপে কুঞ্চিত কেশদামে তার। ধীরে ধীরে শিখিয়ে দিই নামি তাকে ইংরেজী ভাষাটি। অদ্ভুতগতিতে আয়ত্ত করে সে। বদেশী ভাষাটিকে। এখন আমরা কথা বলতে পারছি অনেক হজ ও অবাধভাবে। পরস্পরকে জানাতে পারছি সহানুভূতি আমাদের দুর্ভাগ্য আর বন্দিত্বের কথা স্মরণ করে। আয় পলভিয়া শােনাই তােকে, সেই গ্রীককন্যার অবাক কথা কাহিনী।
গ্রীক ললনা আদিয়ান্তির ইতিহাস-নাম আমার আদিয়ান্তি। জন্ম হয়েছিল আমার ম্যাকারিয়ার মতাে সুন্দর এক দ্বীপে। বাবা হলেন বিখ্যাত ব্যবসায়ী থিয়ােড়ডারিকাস। ছিলাম আমি তার একমাত্র সন্তান। তখন গ্রীস ছিল তুর্কীদের শাসনাধীন। তাই বাবাকে মেনে চলতে হত সহজ, সরল স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। মাঝেমধ্যে তিনি চাইতেন বিলাসের মধ্যে কাটাতে মুহূর্ত। কিন্তু পারতেন না তা। যে দেশ একদিন খ্যাত ছিল পৃথিবীতে তার শীর্য ও বীর্যের জন্যে এখন তা পদানত শক্তিশালী তুর্কীদের হাতে, এই অনুভূতি সর্বদা বাবার মনে এনে দিত বিষন্ন চেতনা । ছােট থেকে আমিও তাই মানুষ হয়েছি বিষাদঘন শ্রাতাবরণের মধ্যে। থাকত পাশে যুবক এক, নাম তার ডেমেট্রিয়াস, ছিল সে অশক্ত, বিকলাঙ্গ বিধবার একমাত্র সন্তান। জন্মে ছিল সে সুস্থ স্বাধীন জীবনের সাধ উপভােগ করবে বলে। তাই পরাধীনতার আবরণকে ছিড়ে ফেলতে আগ্রহী ছিল সে। জ্বালতে চেয়েছিল সে স্বাধীনতার অগ্নিশিখা। অসম্ভব আত্মপ্রত্যয়ী ছিল সে। বলিষ্ঠ তার অহংকার একক ভ্রমণে পাম গাছের মতাে সুউচ্চ প্রতিশ্রুতিতে হেঁটে যেত। গম্ভীরতার পদধ্বনি তুলে ছিল তার উজ্জ্বল দুটি চোখ। সহ্য করতে পারত না বিন্দুমাত্র অপমান। বাগ্মী ছিল সে। কাব্যিক, রােম্যান্টিক, উচ্চাকাঙ্খী, শিল্পঅনুরাগী অনেকগুলি বিরলতম গুণের সমাহার ঘটেছিল তার মধ্যে। স্বপ্ন দেখত সে এমন ভবিষ্যতের, হবে যা সুখ সমৃদ্ধিতে ভরা। কল্পনায় ছবি আঁকত হারিয়ে যাওয়া দিনের শ্রেষ্ঠ বীরদের।
অনেক দিন থেকেই এই দুই পরিবার ছিল পরস্পরের সঙ্গে। ছােট বেলা থেকেই একসঙ্গে মানুষ হয়েছি আমরা। তাই বাধহয় আমার প্রতি আলাদা করে কোনও আগ্রহ প্রকাশ করত না ডেমেট্রিয়াস। কিন্তু স্বীকার করতে দ্বিধা নেই আমার, যৌবনের প্রথম দিনগুলি থেকেই তাকে মনেপ্রাণে আমি গ্রহণ করেছিলাম জীবনের ধ্রুবতারা হিসেবে। ভাবতাম একদিন সে হবে আমার জীবনসঙ্গী। কতদিন কেটে গেছে তার সঙ্গে ভাবগম্ভীর আলােচনায়। আমার অনন্ত প্রশ্নের জবাব দিত সে ক্লান্তিহীনভাবে।
অবশেষে একদিন এক পূর্ণিমালােকিত রাতে হাতে হাত রেখে শপথ করি আমরা পাশাপাশি পথ চলা গ্রীস দেশের প্রথা অনুযায়ী যে কোন বিয়েকে নিয়মসিদ্ধ করতে হলে সম্মতি নিতে হবে গভর্নরের। আমাদের গভর্নর ছিল আসলে এক ল্যাটিন খ্রীষ্টান অনেকদিন আগে সে ইসলাম ধর্মগ্রহণ করে তুর্কীর নাম নিয়েছে। পরিচিত এখন সে আলি ওসমান নামে।
বাবা গেলেন চাইতে তার প্রার্থনা, সঙ্গে নিলেন সামান্য কিছু উপহার। বাবার এই উপহারের দিকে চেয়ে তাচ্ছিলাে হাসি হেসে ওঠে ওসমান। নিদারুণ উদাসীনতার সঙ্গে গ্রহণ করে সেটিকে সে। যদিও সে প্রথমে ছিল ল্যাটিন খ্রীষ্টান, কিন্তু এখন সে অন্তর থেকে ঘৃণা করে গ্রীক চার্চকে। জানতে চায় সে-ওহে খ্রীষ্টান কুকুর, কন্যা কি সুন্দরী তােমার? ঠিক তখন এক ফরাসী দেহরক্ষী ওসমানের কানে কানে সেই গােপন সত্যটি প্রকাশ করে যে আমি হলাম সেই দ্বীপের সর্বশ্রেষ্ঠ সুন্দরী কুমারী।
ওসমান কয়েক মুহূর্ত কি যেন চিন্তা করে। তারপর ঠোটে হাসি এনে বলে, আমি গ্রহণ করেছি উপহার তােমার। আর অনুমতি দিচ্ছি, তােমার কন্যা যেন ঐ তরুণ গ্রীককে জীবনসঙ্গী করতে পারে। কিন্তু একটাই শর্ত আছে এই অনুমতির, সকলকে পেট ভরে ভুরিভােজ করাতে হবে এই বিয়ের অনুষ্ঠানে এবং আমাকেও নিমন্ত্রিত হিসেবে ডাকবে তুমি সেখানে।
ফিরলেন বাবা ঘরে বিষাদঘন মনে। শুরু হল বিয়ের প্রস্তুতি আর সেই নিষ্ঠুর ওসমানকে আমন্ত্রণের পালা।
ধীরে ধীরে এসে উপস্থিত হল বহু আকাঙ্খিত সেই দিনটি। গ্রীক পুরােহিত এক বৃদ্ধ ভদ্রলােক। তিনি পত্র পুষ্প-শোভিত পবিত্র উপহার দিলেন আমাদের হাতে। বাঁধা ছিল সেটি সুদৃশ্য রিবন আর লেস দিয়ে। তারপর একটি রূপাের আংটি পরালেন আমার আঙুলে। ডেমেট্রিয়াসকে দিলেন সােনার আংটি। আংটিবদলের সঙ্গে সঙ্গে সারাজীবন একসঙ্গে পথ চলার শপথ নিলাম আমরা। বৃদ্ধ পুরােহিত তখন মদে ডােবানাে পবিত্র রুটি পরিবেশনের জন্যে প্রস্তুত হচ্ছেন। এরপরই শেষ হবে বিয়ের অনুষ্ঠান। হঠাৎ শােনা গেল তুর্কি সঙ্গীতের সাথে ভয়মিশ্রিত মানুষের কোলাহল। অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখি আমি ধেয়ে আসছে ওসমান, সঙ্গে তার কুড়ি থেকে তিরিশ জন সশস্ত্র প্রহরী।
বুদ্ধিমান ডেমেট্রিয়াস বুঝতে পেরেছে কি ঘটতে চলেছে এখন। কাতরকণ্ঠে অনুনয় করে সে বৃদ্ধ পুরােহিতকে, তিনি যেন অচিরেই শেষ করে দেন এই ধর্মীয় অনুষ্ঠান। কিন্তু অদূরে ঐ দস্যুকে এমনভাবে তেড়ে আসতে দেখে কেঁপে ওঠেন বৃদ্ধ পুরােহিত। হাত থেকে পড়ে যায় পবিত্র রুটি আর মদ।
কয়েকমুহূর্তের মধ্যেই সামনে এসে দাঁড়ায় ওসমান। তারপর বিশ্রী গালাগাল দেয় উপস্থিত সকলকে। চিৎকার করে বলে—চুপ কর কুকুরের দল। পয়গম্বরের নামে শপথ করে বলছি, এখুনি বন্ধ কর বিয়ের এই নাটক।
বৃদ্ধ পুরােহিত বাধা দেবার চেষ্টা করেন। বলেন তিনি অনেক দেরি হয়ে গেছে ওসমান। এখন ওরা বিবাহিত স্বামীস্ত্রী।
-চুপ কর খ্রীষ্টান কুকুর, নাহলে চিরতরে বন্ধ করে দেব তাের মুখ।
ওসমান বলে—বন্ধ কর এখুনি সব কিছু। নাহলে তরবারির এক আঘাতে মাথাটা কেটে ফেলব তাের। দেখি আমার হতভাগ্য বাবা উদাসদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। তিনি যেন বুঝতেই পারছেন না কি ঘটতে চলেছে তাঁর কন্যাসন্তানের ভাগ্যে।
বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি আমি। চোখদুটি দৃঢ়নিবদ্ধ ডেমেট্রিয়াসের চোখে। সেও এখন নিজেকে ঢেকেছে বিষন্ন এক নীরবতার আবরণে। চোখ দুটি অশ্রুসজল তার, মুষ্টি বদ্ধ হাত, অস্ফুটস্বরে কত কথা যেন শােনাতে চাইছে সে।
ওসমান বারবার চিৎকার করে বলে বন্দি করাে ঐ কুমারী কন্যাকে, এই সব ধার্মিক অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা কর তাকে। এগিয়ে আসে ওসমান অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল দিতে দিতে। এই মুহূর্তে হঠাৎ ডেমেট্রিয়াস ঝাঁপিয়ে পড়ল তার দিকে বিদ্যুৎরেখার ওপর। চেষ্টা করল প্রচণ্ড ঘূষির আঘাতে শয়তানকে ধরাশায়ী করতে। সফল হল না তার প্রচেষ্টা।
ওসমানের সঙ্গে প্রস্তুত আছে সশস্ত্র দেহরক্ষীর দল। একনিমেষেই ডেমেট্রিয়াসকে তারা ফেলে দিল মাটিতে।
ওসমান চিৎকার করে বলে—একজন মুসলমানের গায়ে হাত তুলেছিস, এইভাবে তুই পয়গম্বরের আইন ভেঙেছি। আঘাত করেছি এমন একজনকে যে হল বিশ্বস্ত মানুষের সহচর। তােকে আমি ছিড়ে টুকরাে টুকরাে করে ফেলব, রাস্তার কুকুর দিয়ে খাওয়াব তাের মাংসখণ্ডগুলিকে। খ্রীষ্টান কুকুর, এটাই হল তাের শেষ পরিণতি!
শুরু হয় খণ্ডযুদ্ধ। হতাশার কবর থেকে উঠে এসে আমার বাবা চেষ্টা করেন ওসমানকে পরাজিত করতে। এই যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। শেষবারের মতাে ডেমেট্রিয়াস চেষ্টা করে লড়াই চালিয়ে যাবার। কিন্তু অচিরেই ওসমানের তীক্ষ্ণ তরবারির আঘাতে মৃত্যু হয় তার।
চোখের সামনে পিতা আর স্বামীর যুগপৎ মৃত্যু দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি আমি। জ্ঞান ফিরতে দেখি শুয়ে আছি আমি এক তুর্কদেশীয় জাহাজের কেবিনে। চলেছে জাহাজ টিউনিস-এর উদ্দেশ্যে। সেখানে পৌঁছানাের পর বিক্রি করে দেওয়া হল আমাকে বে-এর কাছে। টিউনিসে পৌঁছে জানতে পারলাম যে দৈবযােগে কিভাবে বাঁচিয়েছি আমার কুমারীত্বকে ওসমানের কাছ থেকে।
আমার পিতা এবং স্বামীর মৃত্যুর পর ওসমান আমাকে নিয়ে যায় তার হারেমে। ইচ্ছে ছিল তার এই প্রস্ফুটিত পদ্মের কোরকে মুখ রাখবে সে। কিন্তু তখন আমি হারিয়ে ফেলেছি মানসিক চেতনা আমার। পৌছে গেছি উন্মাদ অবস্থায়। মহম্মদের আইন অনুসারে যদি কোনও পুরুষ মানসিকভাবে অসঙ্গতিপূর্ণ রমণীকে ধর্ষণ করে তাহলে নিশ্চিত মৃত্যুদণ্ড হবে তার।
তাই আমার দেহকে স্পর্শ করতে পারেনি গভর্নর। কিছুদিন বাদে সে আমাকে বেচে দেয় এক ক্রীতদাস ব্যবসায়ীর হাতে। অত্যন্ত চতুর সেই ভদ্রলােক আমাকে নিয়ে চলে আসে বের কাছে দামী উপহার হিসেবে দেবে বলে। বে আমাকে পাঠায় উপঢৌকন হিসেবে সম্রাটের কাছে। বে অফ টিউনিসও আমাকে অবহেলা করে গেছে। হয়তাে শারীরিক ভােগ করার মতাে উদ্বৃত্ত সময় ছিল না হাতে তার। অথবা, আমাকে সে উপযুক্ত মনে করেনি তার শয্যাসঙ্গিনী হিসেবে।
সম্রাটের সঙ্গে দু তিনটি কথা বলার পরই বুঝতে পারলাম যে তার থেকে এবার আর মুক্তি নেই আমার। সম্রাটের হাতেই হারাতে হবে কুমারীত্বের অহংকার। শক্তিশালী ওসমানের থেকেও নির্মম সে, হৃদয়হীন ঘাতকের চেয়ে।
তার মধুর স্পর্শে ডেকে নিয়ে যায় আমাকে তার শােবার ঘরে। তার আচরণের মধ্যে অদ্ভুত পরিবর্তন লক্ষ্য করি আমি। আজ সন্ধ্যে থেকেই আমার প্রতি সে প্রদর্শন করছে সহানুভূতি আর সমমর্মিতা-ভরা মনােভঙ্গি। বুঝতে পারছি না আমি, কি চায় সে? চায় কি সে ভালবাসার তৃণে বিদ্ধ করতে আমায়, তারপর যেমন ভাবে ঊর্ণনাভ তার শিকারের সন্ধানে এগিয়ে যায় সেভাবেই ভােগ করবে আমার সমস্ত শরীর! এদের আমি বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করতে পারছি না। মনে হয় সবসময় এদের মনের মধ্যে জ্বলছে ছলনার আগুন।
কফি পান শেষ করার পর সে সােফাতে গিয়ে বসে। আমাকেও বসতে হয় তার পাশে। আমি তাে এখন তার ইচ্ছার ক্রীতদাসী। তার চোখের মধ্যে দুরন্ত, কামনার ছায়া কাপছে। বুঝতে পারছি আমি আর কিছুক্ষণের মধ্যেই সে আচমন সারবে আমার শরীরের পুষ্করিণীতে সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় তার খেলা। আমাকে বিন্দুমাত্র সুযােগ না দিয়ে সে অতি দ্রুত খুলে ফেলে আমার বক্ষবন্ধনীর বােতামগুলি। পাকা আপেলের মতাে টুকটুকে লাল স্তনদুটি একনিমেষে উন্মুক্ত হয় তার লােভী চকচকে চোখের সামনে। বরাবরই এইরকম বৃহস্তনের অধিকারিণী আমি! তা দেখে বেশ খুশি হয়েছে সে।
বুঝতে পারি উত্তেজনার পারদের মাত্রাটা চড়তে থাকে দ্রুতগতিতে। বারণ করি তাকে এই মুহূর্তে অসভ্য আচরণ না করতে। সঙ্গে সঙ্গে আমার কথা শােনে সে। প্রেমিকের মতাে স্তব্ধ করে হাতচালনা তার।
তাকে এই অবস্থায় দেখে আমি বলি—অনুগ্রহ করে সে যদি আমার জন্মভূমিতে আমায় ফিরিয়ে দেয় তাহলে ভাল হয়।
আমার কথার সে কোন জবাব দেয় না। মনে হয়, কথাটা তার অন্তরে স্পর্শ করেছে। মনের মধ্যে হঠাৎ ভেসে আসে হারিয়ে-যাওয়া জন্মভূমির দৃশ্যাবলী। সত্যি কি আমি কোনদিন ফিরতে পাব সেখানে?
কিছুক্ষণ পর কেটে যায় এই শান্ত সমাহিত নীরবতা। সে ধীরে ধীরে বলতে আরম্ভ করে প্রিয়তমা ক্রীতদাসী আমার, কেমন করে তুমি আমার মনের খাঁচার শিকল কেটে পা রাখবে পৃথিবীর বৃহৎ আকাশে?
এই কথা বলতে বলতে পাগলের মত চুম্বন দিতে থাকে সে আমাকে। আমি বুঝতে পারি না কি করে তার এই প্রচণ্ড আগ্রাসী কামনার আগুন থেকে বাঁচাব নিজেকে। মনের মধ্যে জ্বেলে রাখি ভালবাসা আর আশা, আনন্দের চিরাগ। তারপর চেষ্টা করি প্রতারণার ছলনা দিয়ে ভুলিয়ে রাখতে মন তার।
আবার আমরা কফি পান করতে বসি বুঝতে পারছি আমি এর মধ্যে মেশানাে আছে নিদ-জাগানাে ওষুধ যা অচিরেই আমাকে পাঠিয়ে দেবে পরমকাঙ্খিতৃসুমের উপত্যকায়। তারপর এক তাতার দস্যু এসে লুণ্ঠন করবে আমার কুমারীত্বকে। আমিও আমার সমস্ত কুমারীত্ব হারিয়ে পরিণত হব তার হারেমে বন্দিনী ক্রীতদাসীতে। বুঝতে পারি সতীত্বশেষের ঘণ্টাধ্বনি শােনা যাবে এবার। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই ঘনিয়ে আসবে সেই চরম ঘটনাটি। প্রথম বারের মতাে আমি ধর্ষিত হব।
কফিতে যে ওপিয়াম মেশানাে ছিল তারই মাদক আক্রমণে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে ওঠে চোখ। সত্যি বলতে কি আমি তার বাহুবন্ধনে ধরা দিয়ে ঢলে পড়ি ঘুমে। এই নারকোটিক ড্রাগ আমার সমস্ত শরীরে এমন একটি ক্রিয়ার সৃষ্টি করে যে, তারপর যে কি ঘটেছিল তা আমার খুব ভালাে মনে নেই।।
আধাে অন্ধকারের মধ্যে অপসৃয়মাণ ছায়াচ্ছন্নতায় মনে পড়ে আমার, যেই আমি মাদকের আক্রমণে হারিয়েছি চেতনা আমার, সঙ্গে সঙ্গে সম্রাট আমায় কোলে তুলে নিয়ে যায় দুগ্ধফেনসম শুভ্রশয্যায়। তারপর নিজের হাতে উন্মুক্ত করে আমাকে। তখন আমি তার কামনার কাছে পরাজিত, বিধ্বস্ত নায়িকার মতাে আত্মনিবেদিতা। আমার প্রচণ্ড ব্যথাভরা উত্তেজনার শীর্ষবিন্দুতে থরােথরাে কাঁপতে থাকে অনুভূতি। সেই ওষুধের আক্রমণ এত বেশি ছিল যে সমস্ত স্নায়ুপুঞ্জ ধরে। বাজতে থাকে প্রথম বর্ষার রিমঝিম বৃষ্টি, সারারাত আমি কাটাই তন্দ্রাচ্ছন্নতার মধ্যে। সমস্ত সময়টা সম্রাট অতিবাহিত করেছিল শারীরিকভাবে আমাকে ভােগ করার জন্যে। বুঝতে পেরেছিল যে, চেতনার ঘুম ভাঙলে আমি হয়তাে বাধার প্রাচীর সৃষ্টি করব তার সামনে। এমনভাবে সে আমার সঙ্গে প্রথম মিলনের মুহূর্তটিকে কলুষিত করতে চাইছে না।
নিদ্রাভঙ্গের পরে সম্রাটের মুখ থেকে শুনেছিলাম আমার সেই মুহূর্তের অভিজ্ঞতার কথা। তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ ম্যাডাম, সবকিছু শােনার রে মন ভরে উঠেছিল উত্তেজনা ও দুঃখের অদ্ভুত অনুভূতিতে। দেখলাম আমি সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে শুয়ে আছি সম্রাটের পাশে। আমার শরীরের বিশেষ একটি অঙ্গে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করলাম। চরম সত্যটা এক লহমায় উদ্ভাসিত হল আমার সামনে। তার মানে সতীচ্ছেদ হয়ে গেছে আমার। সঙ্গে সঙ্গে কান্নার উত্তরালে ভেসে যাই আমি।
ঘুম ভাঙে সম্রাটের। দেখি সে হাঁটু মুড়ে বসে জবাবদিহি করছে তার দ্বারা কৃত এই পাপকর্মের। এটাই আমার সমস্ত আনন্দের বুকে জ্বালিয়ে দেয় বিষাদের অগ্নিশিখা। অনেকক্ষণ পরে আমি জানতে চাই সে এমনভাবে কেন আমায় নষ্ট করল?
সম্রাট আবেগপূর্ণ কণ্ঠে জবাব দেয়—সুন্দরী ক্রীতদাসী । আমার, কি করে ভাবলে তুমি, এমন সুন্দর তনুবাহার থেকে যাবে আমার অস্পর্শিত ? তুমি যদি এখন আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চাও তােমার ফেলে-আসা জন্মভূমিতে, বাধা দেব না আমি। কিন্তু মনে রেখ সুন্দরী, পথে আছে তস্কর অনেক, তাদের আক্রমণে আবার ক্ষতবিক্ষত হবে তুমি। তারা কেউ আমার মতাে স্বপ্ন-সুখের সােহাগ মায়ায় ভরাবে না হৃদয় তােমার। পথে আছে ওসমানের মতাে ভয়ঙ্কর দস্যুরা, তারা নির্মমভাবে ভােগ করবে তােমার শরীরের প্রতিটি অংশকে।
সে আরও বলতে থাকে সুন্দরী ক্রীতদাসী আমার, ক্ষমা কোরাে আমাকে। আমার মধ্যে তুমি পাবে তােমার অহংকার আর ব্যক্তিত্বের সফল পদচারণা। এসাে মুছে ফেল আঁখি জল। আরও বলে সে আমার মনকে অযথা আর কষ্ট দিও না।
সম্রাটের কথার সারবত্তা অচিরেই উপলব্ধি করতে পারি। তুর্কি হারেম থেকে যদি কোনভাবে আমার জন্মভূমিতে ফিরে যেতে পারি তাহলেও কেউ স্থান দেবে না আমাকে। ভদ্রসমাজ থেকে চিরদিনের মতাে হারিয়ে গিয়ে আমি এখন পরিণত হয়েছি রঙ্গনটীতে।
বুঝতে পারছি আমি, আমার কুমারীত্বের সবটুকু সুষমা শোষণ করেছে সে। সংক্ষেপে বলতে গেলে সে তার আদিগন্ত ভালবাসার মৃদুমন্দ পরশে ভরিয়েছে, আমার মন। ধীরে ধীরে এমনভাবেই জাগ্রত করছে আমার মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা বাসনাকে। আমাকে ভীষণভাবে দুঃখিত,এবং দ্বিধাগ্রস্ত হতে দেখে সে শুরু করে কথা বলা। কি বলছে সে; সে বিষয়ে কোন চেতনা ছিল না মনে আমার। পারিপার্শ্বিকতা সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে অজ্ঞ ছিলাম আমি। হঠাৎ দেখি সে আমাকে উপুড় করে শুইয়ে দিল। তারপর দুহাতে জোরে আমার উরুদুটিকে প্রসারিত করে দিল। চোখের নিমেষে সে তার দৃঢ় পুংদণ্ডটি প্রােথিত করে আমার যােনিদেশে এবং অতি দ্রুত আন্দোলিত করতে থাকে শরীর তার। বুঝতে পারি আমি, তার পৌরুষের অহংকার শেষতম সীমানাতে পৌঁছে গেছে আমার। বুঝতেই পারছ ম্যাডাম, তখন আমার অবস্থা কী। হয়েছিল!
নিঃশ্বাস নিতে পারছি না, বুকে অনুভব করছি চাপা বেদনা, রক্ষা করার মতাে বন্ধু এখানে নেই। এখন বুঝতে পারি, আমি বােধহয় নেশাচ্ছন্ন ছিলাম। এমনভাবেই বারবার আমার। তনুবাহারকে কলুষিত করেছে সে।
ধীরে ধীরে আমার মধ্যে জাগ্রত হয় অন্যতর চেতনা এক। আমি সাড়া দিতে শুরু করি তার আগ্রাসী মনােভাবের। দাঁতে দাঁত রেখে চুরমার করি সবকিছু। বুঝতে পারি, এতদিন ধরে পুরুষ দেহের অনুপস্থিতিতে মন ছিল আমার তৃষিতা, এখন যন্ত্রণাদগ্ধতার মধ্যেও প্রাণের সঞ্চার হচ্ছে।
সারা দেহে বয়ে যায় তরঙ্গ সুখের এক অনুভূতি স্তনশীর্ষে। কাঁপতে থাকে কামনার থরােথরাে অভিমান। তার দস্যুর মতাে ছুটে আসে বাসনারা, তৃষিত তাপিত পৃথিবীর বুকে নেমে আসে বৃষ্টিধারা। জাগছে, জাগছে বাসনারা আমার। তার পরিপ্লাবিত আক্রমণে ভেসে যাবে সম্রাট। কামনালুণ্ঠিত আনন্দ আর আগ্রাসী সুখ-অনুভূতিরা মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। কোথায় যেন বেজে ওঠে অর্কেস্ট্রা। মনের গােপন-গহনগভীর অরণ্যে শােনা যায় অশ্বক্ষুরের বিচিত্র ধ্বনি। জীবনের সুধাপানে মত্ত হই আমি। অনুভব করি সম্রাটের পুংদণ্ড-প্রেরিত রসের ধারা; তাতেই সঞ্জীবিত হয়—-উদ্দীপিত চেতনারা আমার। অতি দ্রুত আমরা দুজন পৌঁছে যাই পরম কাক্ষিত, চরমরতির মুহূর্তে।
শেষ হয় ভালবাসাবাসির অবুঝ খেলা। ক্লান্ত বিধ্বস্ত সম্রাট শরণার্থী ক্লান্ত শিশুর মতাে আমার পাশে। এই মুহূর্তে অনুভূত সুখ তখনও তিরতির করে কাপছে দুচোখের পাতায় আমার। মনের মধ্যে জাগছে অভিলাষ এক, আবার কবে লাভ। করব এমন চরমরতির অভিজ্ঞতা। সম্রাটের মুখে এঁকে দিই প্রশ্রয়ের চুম্বনচিহ্ন। ক্ষমা করে দিই তাকে, আমাকে যে এমনভাবে রাঙিয়েছে স্বৈরিণীর বেশে, তার প্রতি এখন আর নেই কোনও লজ্জা, ঘৃণা, কিংবা ভয়ের অনুভূতি। জাগছে তীব্রতর কামনা তরঙ্গ, যেমন করে উর্মিমুখর। সমুদ্রের তরঙ্গমালা আছড়ে পড়ে বালুকাবেলায়, পাড় ভাঙে। তটরেখার, মাঠভাঙে কালপুরুষ, মধ্যরাতে, তেমনভাবেই আমার কুমারীত্বের অর্গল ভেঙেছে সে। সেই জোতির্ময় শক্তির বহিঃপ্রকাশে অবাক আশ্চর্য হয়ে গেছি আমি, জেনেছি, জীবনের তন্ময়তার কথা। ভালবাসার কুহকমায়া এসে দাঁড়িয়েছে আমার সামনে।
কতকাল এমন পাশাপাশি ছিলাম বসে আমরা, কেটে গেল রাত। জেগে উঠল ভােরের রক্তিম সূর্য, ছুটে এল সহচরীর দল। তারা আমাকে হাত ধরে নিয়ে গেল প্রক্ষালন কক্ষে। অঙ্গ সংবাহন করল সুরভিত তরলে, আঁচড়ে দিল চুল আমার, আমায় সুন্দর করে সাজিয়ে পৌঁছে দিল সুখশয্যায়, সেখানে। আমি বারবিলাসিনীর বেশে সজ্জিতা থেকে অপেক্ষা করছি সম্রাটের ফিরে আসার।
এখন আর আগের মতাে বক্ষ দুরু দুরু কম্পমান নয়, সেখানে টাইফুনের আওয়াজ। আৰু বয়ে যাচ্ছে বসন্ত বাতাস। সম্রাট ছুটে আসে অগ্নিশিখার মতাে। এসেই একনিমেষে খুলে দেয় আমার রিবন, চলকে ওঠে স্তনদুটি, মুঠোর মধ্যে ধরে নেয়, দুমড়ে মুচড়ে কথার মাধ্যমে প্রকাশ করে চেতনা তার। তারপর সে পর্যবেক্ষণ করে আমার দেহের প্রতিটি অংশ, অসংখ্য চুক্ষনেভরিয়ে দেয় আমাকে। আমাকে দেখে তৃপ্ত হয়। ঔৎসুক্য তার আমাকে বসায় সে তার ঊরুর ওপরে। তারপর ধীরে ধীরে ঠোট রাখে নিম্ন নাভিদেশে। আর এক ধরণের শিহরণে কেঁপে ওঠে শরীর আমার। কতরকম ভাবে চুম্বন এঁকে দেয় সে কামনার গােপন ত্রিভুজে, ঠোটে আদর করে আমায়, ঈষৎ দংশনে বিদ্ধ করে আমায়।
সাড়া আমাকে দিতেই হয়। আমিও তার এই প্রচণ্ড আগ্রাসী। মনােভাবের কাছে নিজেকে আর স্থির রাখতে পারি না।
অনেকক্ষণ ধরে ঠোটে ঠোট রেখে চলে আমাদের অনন্ত খেলা। সম্পূর্ণ নতুন ভঙ্গিমাতে আমাকে এবার ভােগ করতে। চেষ্টা করছে সে। অনেকটা ঘােটকীর মতাে ভঙ্গিমায় বসেছি আমি। আর আমার নিতম্বদেশের তলা দিয়ে প্রসারিত করছে সম্রাট তার দীর্ঘ পুংধ্বজাটিকে।
প্রথমে যন্ত্রণা এসে বিদ্ধ করে আমাকে। তারপর এক আশ্চর্য সুখের শিহরণ বয়ে যায় আমার সারা দেহে। বেশ কিছুক্ষণ নিরন্তর প্রয়াস চালানাের পরে দেখি, ধীরে ধীরে সফল হয়েছে সে তার এই পদ্ধতিতে। আর আমিও অদ্ভুত অনুভূতি উপভােগ করছি দেহের প্রতিটি রােমকূপে। চেষ্টা করি সুখ দিতে তাকে নতুনতর এই ভঙ্গিমাতে। আন্দোলিত করতে থাকি উরুদুটি আমার। কামনার স্বেদবিন্দুতে সেখানে রচিত হচ্ছে নতুন ইতিহাস এক। তার সুদৃঢ় দণ্ডটি দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হয়ে অনুপ্রবিষ্ট হয় আমার গভীর গােপন গহূরে। মুখ ঢাকি লজ্জায়। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে আমার। তবুও দেহটিকে ধীরে ধীরে ওপরে নিচে, সামনে পাশে আন্দোলিত করতে থাকি মন্দাক্রান্তা ছন্দে।
সম্রাট নিজেকে স্থাপিত করেছে আমার ওপর। ঠোটে ঠোটে মিলন ঘটে চলছে দারুণ খেলা এক। যেন ভালবাসার লাটুর মতাে ঘুরপাক খাচ্ছে সে আমার শরীরের ওপর। নতুনতর এই ভঙ্গিমায় অনেকক্ষণ ছিলাম আমরা মওমাতাল। প্রচণ্ড চাপ দিচ্ছে সে আমার দুটি পূর্ণবিকশিত স্তনের ওপর। দুমড়ে মুচড়ে একাকার ককেছিচ্ছে স্তনবৃন্ত। মাঝে মধ্যে আঙুল রাখছে কুক্ষিদেশে আমার শিরশিরে অনুভূতির স্রোত পৌছে যাচ্ছে মাথার মধ্যে।
সম্রাটের এই সমস্ত খুনসুটির প্রত্যুত্তর দেবার যথাযথ চেষ্টা করছি আমি। জমে উঠছে শরীর শরীর খেলা। শরীরের খেলায় অত্যন্ত পারদর্শী সে। কোনভাবেই আমি তাকে ক্লান্ত বা বিধ্বস্ত করতে পারছি না। চেষ্টা করছি, যথাসাধ্য চেষ্টা করছি সাড়া দিতে তার ডাকে। যদিও জানি এই খেলাতে সেই হবে চিরদিন বিজয়ী।
অবশেষে আবার নির্গত হয় উষ্ণস্রোত। আমরা দুজন হারিয়ে যাই চরমরতির মুহূর্তে। সম্রাটের মুখ-নিঃসৃত শীৎকার শব্দাবলীর মাধ্যমে প্রকাশিত তার সার্বিক সন্তুষ্টির বার্তা, আনন্দ দেয় আমাকে। যাক্, আমি তাহলে তার সবচেয়ে প্রিয় ক্রীতদাসী হতে চলেছি। ম্যাডাম, আমার ভবিতব্যকে মেনে নিয়ে হতে চলেছি আমি হারেমের শ্রেষ্ঠ রত্ন।
এই কথা বলতে বলতে সে নিজেকে নিঃশেষে সমর্পণ করে আমার প্রসারিত বাহুদুটির মধ্যে এবং অসহায়ভাবে চুম্বন। করতে থাকে আমার চিবুকখানি! তুমি কি আমার প্রতি ঈর্ষিতা হচ্ছ? কারণ আমি এই মুহূর্তে সম্রাটের সবচেয়ে কাছের রঙ্গনটী!
দেখি, তার চোখের মধ্যে মুক্তোবিন্দুর মতাে অশ্রুবিন্দু টলটল করছে—তবে সত্যি কথা বলতে কি ম্যাডাম, এখনও পর্যন্ত আমার মনের মধ্যে ডেমেট্রিয়াসের ছবি আঁকা আছে। জীবনে যদি আমি কোনও পুরুষকে কোনােদিন ভালবেসে থাকি তাহলে সে হল ডেমেট্রিয়াস।
সিলভিয়া ক্যারিকে লেখা এমিলি বারলোর চিঠি
আমার হতভাগিনী সহচরী এলিজার কথা জানাতে ভুলে গিয়েছিলাম আমি। সম্রাটের সঙ্গে প্রথম দেখার পর থেকে পাইনি তার কোনও খবর। সম্রাট তাকে তুলে দিয়েছে টিউনিসের রাজার হাতে, উপহার হিসেবে। টিউনিসের রাজা তার ওপর চালিয়েছিল যে বর্বর নৃশংস অত্যাচার, সেটা আমাদের হারেমের আলােচনার বস্তু হয়ে ওঠে।
একদিন সম্রাট এসে প্রবেশ করল আমার ঘরে, ছুঁড়ে দিল একটি চিঠি, বলল এতে আছে আমার বান্ধবী এলিজার অজানা কাহিনী। আরও জানাল সে, আমার হারেমের সঙ্গিনীরা সহ্য করে না তার মতাে অনন্ত বেদনা।
আমি চিঠিখানি পড়তে শুরু করি। তাকেও শােনাই সেই করুণ কাহিনী।
আলজিরিয়ার সম্রাটকে লেখা টিউনিসের রাজার চিঠি
মহম্মদের আশ্চর্য আশীর্বাদে পাঠিয়েছ তুমি এমন এক রমণীকে, যে অচিরেই জয় করেছে হৃদয় আমার। হরিণ চোখের স্তিমিত মনের মনােহারিণী। আলির কসম খেয়ে বলতে পারি আমি, যখন রাখি হাত তার উন্মুক্ত বুকদুটিতে, মনে হয় সে যেন বাঘিনীর মতাে ফুসছে। যখন আমি অকর্ষিত ভূমিতে রাখি উদ্ধত অসংযমী দণ্ড আমার, অদ্ভুত আনন্দ এক সকালের রােদের মতাে খেলা করে শরীরে। তবে মনের ঠিকানা পাইনি তার—কি চায় সে? পছন্দ করে কোন ভঙ্গিমা? কোন প্রিয় পুরুষের ছবি দেখে মনের দর্পণে এসব কথা জানতে পারিনি এখনও অব্দি আমি। তবে এসব নিয়ে মাথাব্যথা নেই আমার। তাকে আমি করেছি আমার রাত্রিদিনের সঙ্গিনী। মাঝেমধ্যেই ইচ্ছে হলে বিছানায় তুলি। পরিপূর্ণভাবে ভােগ করি সেই নারীকে, তার পায়ের পাতা থেকে মাথার চুল অব্দি আমার, শুধু আমার।
এসাে, তােমায় শােনাই আমি কেমন করে করেছি বাঘিনীকে বন্দিনী, আমার খাঁচার মধ্যে। প্রথম থেকেই কেমন যেন অভিমানিনী ছিল সে, আমার ইচ্ছের কাছে নতজানু করত না তার আত্মাকে। অদ্ভুত ব্যক্তিত্বের ছদ্ম আবরণে ভরা ছিল মনটি তার। এতে অত্যন্ত কুপিত হয়েছিলাম আমি।
তােমার পাঠানাে উপহার কি থেকে যাবে অচুম্বিত চিরকাল—এই প্রশ্ন জাগত আমার মনে মনে।
দুদিন কেটে গেল এমনভাবে, তৃতীয় দিন যখন রাত্রি এসে ঝাঁপিয়ে পড়ল পৃথিবীতে দিকে দিকে জ্বলে উঠল প্রদীপ, হাতের মুঠোয় দেহের সমস্ত রাগকে বন্দি করে আমি এসে দাঁড়ালাম তার কাছে। একটি হাত রাখলাম কোমরে তার, ধীরে ধীরে চিবুক খানি তুলে ধরলাম আমার মুখের কাছে। সে যে কেমনভাবে প্রতিহত করেছিল ধারাবাহিক আক্রমণ আমার, সে কাহিনী শুনতে ধৈর্যচ্যুতি ঘটতে পারে তােমার। তবে জেনে রাখ তুমি, প্রচণ্ড লাথির আঘাতে আঘাতে জর্জরিত হচ্ছিলাম আমি। প্রচণ্ড বলশালী আমি, তবুও সহ্য করেছি তার সবকিছু দেখি না কতদূর বাড়তে পারে বন্দিনী বিহঙ্গী আমার। অবশেষে ডাকতে বাধ্য হই রক্ষীদের। তারা অতি দ্রুত সরিয়ে নেয় তাকে। আমার নির্দেশে তারা তার দুটি ঊরুকে ধরে প্রসারিত করে দুদিকে। যন্ত্রণায় কেঁদে ওঠে সে। আমার ঠোটের কোণে খেলে যায় নির্মম হাসি। মনে মনে বলি আমি— ছেনালি রমণী, এখনই শেষ হবে তাের সতীত্বপনা।
এমনভাবেই তাকে রেখে আমি ইঙ্গিত করি চলে যেতে ক্রীতদাসদের।
এ চলে যেতে তারা আমি তাকে বসাই কৌচে এবং একমুহূর্ত সময় নষ্ট না করে তুলে ধরি তার কামনার আবেশে ভরা কুঞ্চিত কেশদামে ঢাকা ঊরুদেশে। হায় আলি, কি করে বােঝাব তােমায়, তার এই নিম্ন নাভিদেশ দেখে কাম এসে জমতে থাকে আমার মনের মধ্যে। তখুনি সেখানে আমার পুংদণ্ডটি স্থাপন করতে উদ্বেল হয় মন খালি তার ভালবাসার পরিপূর্ণতায় ভরা স্তনবৃন্ত দুটিতে তিরতির করে কাঁপছে অভিমান। মনে হয়, এ যেন নগ্নিক ভেনাসের মন্দির। নাভিদেশ ঢাকা আছে অসম্ভব সুন্দর রেশম কালাে চুলে। সুগন্ধ নির্গত হচ্ছে তার মসৃণ উরুদেশ থেকে এক লহমাতে বুঝতে পারি আমি, এখনও সতীচ্ছেদ হয়নি তার। এখনও অস্পর্শিতা আছে সে। এই আবিষ্কারে নেচে ওঠে মন আমার।
জাননা তাে তুমি, চিরদিনই আমি রমণীদের কুমারীত্ব হরণ করতে ভালবাসি। আনমনে হাত রাখি যােনিদেশে তার। আঙুলে আঙুল জড়িয়ে খেলা করি সেখানে। তারপর তর্জনী স্থাপন করি তার সেই নিভৃত গােপন গহূরে। চিৎকার করে ওঠে সে, বুঝতে পারি আমি, এর আগে এমনতর অনুভূতি হয়নি তার। মুহুর্তের মধ্যে সে শুয়ে পড়ে আমার কোলের ওপর আমি সঙ্গে সঙ্গে দুহাতে মর্দন করতে থাকি দুটি স্তন তার। এ সেই কুমারী রমণী ক্রমশ আক্রান্ত হয় আমার কাম-তাড়না প্রাবল্যে।
তারপর ধীরে ধীরে তাকে নগ্ন করি আমি। দেখি তাসমস্ত দেহের মধ্যে প্রবাহিত হচ্ছে প্রচণ্ড কামনার চোরাস্রোত কাঁদতে থাকে সে। চোখের জলের ধারায় নিজেকে সিক্তা কনে উপযুক্ত করে আমার কাছে ধর্ষিতা হবে বলে। এতক্ষণে হয়তে বুঝতে পেরেছে সে বৃথা রাগ, বৃথা অভিমান; নিত্যন্ত এই প্রতি আক্রমণ। অচিরেই তাকে সাড়া দিতেই হৰুে আমার ডাকে। এক নিমেষের মধ্যে সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে যায় সে। যেখানে থরাে থরাে কাঁপতে থাকে দুরন্ত কামনা। এক আশ্চর্য কুহকিন কন্যার মতাে শায়িতা সে আমার শয্যাতে। সর্বাঙ্গ লেহন করছে ইচ্ছে করে আমার। মনে হয় জিভ দিয়ে সুড়সুড়ি দিই তা গােপন অঙ্গে।
তার কাধ, নাভি, কুক্ষিদেশ, উরু, স্তন, স্তনান্তরের রেখ সর্বত্র বাসনা-জর্জরিত হৃদয়ের বহিঃপ্রকাশ। অসম্ভব উজ্জ্ব তরুণীর লাবণ্যে টলমল স্তন দুটি থেকে নির্গত হচ্ছে বাসনা, আমি তাকে উদ্দেশ্য করে বলি—শােননা সুন্দরী, এখুনি তােমার পূর্ণিমা জ্যোৎস্নার মতাে শ্বেতশুভ্র দেহের পরিবর্তিত হবে রক্তিম লজ্জায়।
শুরু করি খেলা আমার। প্রথমেই রাখি ঠোট তার কামনা বিশেষ বিশেষ বিন্দুতে, আমার হাত দুটি উর্বর আনন্দে খে করে নাভিদেশে তার। তাকে বসাই বিশেষ ভঙ্গিমাতে। কেনন জানােই তাে তুমি, মেয়েদের অত্যাচার না করলে আমা কামপ্রবৃত্তি জাগ্রত হয় না।
সেখানে ঝুলছিল দুটি দড়ি, তা দিয়ে হাত দুখানি বন্ধ করি তার। তুলে নিই আমার চাবুক, ধীরে ধীরে আঘাত করতে থাকি তাকে। কাঁদতে থাকে সে, কান্নার তালে তালে বাড়তে থাকে চাবুকের আঘাত।
চাবুকের আঘাতে আঘাতে জর্জরিত হয়ে আর্তস্বরে চিৎকার করে ওঠে মেয়েটি—আর মেরাে না আমায়। ক্ষমা করাে টুকরাে টুকরাে করে ছিড়াে না আমার সমস্ত দেহ।
তার ক্রন্দনে মনের মধ্যে জেগে ওঠে ধর্ষকাম। আমি নতুন উদ্যমে আবার চাবুক দিয়ে আঘাত করতে থাকি তার সারা দেহ। এমনটি চলতে থাকে অনেকক্ষণ ধরে। অবশেষে নিদারুণ ক্লান্তি এসে গ্রাস করে আমার সমস্ত সত্তা।
বিরক্ত হয়ে চাবুক ছুঁড়ে ফেলে দিই আমি। তার সারা দেহে তখন আঘাতের রক্তিম চিহ্ন। পাশে বসি তার। তাকিয়ে থাকি রক্তরাঙা মুখের পানি হাত বুলিয়ে দিই অসম্ভব রূপবতী দেহের চারপাশে কোনওঁ শব্দ উচ্চারিত হয় না মুখ থেকে তার। অবশ হয়ে পড়ে থাকে সে নিঃসাড়। ঢেকে রাখি লজ্জাকেন্দ্র তার অলিভ পাতায়। মােহিনী মাদকতা এসে ভরিয়ে দেয় সর্বাঙ্গ তার। হাত রাখি কামনার গােপন ত্রিভুজে। থরােথরাে করে কেঁপে ওঠে সে। তখনও তাকে উচ্ছিষ্ট করার বিন্দুমাত্র বাসনা জেগে নেই আমার মনে। করেছে যে দুর্বিনীত আচরণ আমার সঙ্গে, সম্পূর্ণ হয়নি শাস্তি . তার এখনও।
নিজেকে উলঙ্গ করি একেবারে। আবার তুলে নিই চাবুকখানি। প্রচণ্ড জোরে আঘাত হানতে থাকি তার সর্বাঙ্গে। যন্ত্রণায় কঁকিয়ে ওঠে সে। দ্রুত হয় আঘাতের মাত্রা। ডেকে পাঠাই পরিচারকদের। আমার আদেশে তারা মেয়েটিকে শুইয়ে দেয় কৌচে। এবার প্রস্তুত মন আমার। অবাহন করতে তার বাসনার নিঝরিণীতে। বেশিক্ষণ আর থাকতে পারি না অপেক্ষাতে। গভীরভাবে আলিঙ্গন করি তাকে। এই মুহূর্তে নিভে গেছে প্রতিহিংসার আগুন, নিদারু প্রশান্তি এসে গ্রাস করেছে সারা মন।
একটি বালিশ রাখি তার নিতম্বদেশে। আরও প্রবলভাবে প্রকটিত হয় নাভিমূল তার। উরুদুটি তার তুলে নিই আমা কাধের ওপর। তারপর শান্তভাবে ধীরে ধীরে প্রসারিত করি রে দুটিকে। অপূর্ব আবেশ এসে গ্রাস করে আমায়। অনেকক্ষ তাকিয়ে থাকি গভীর গােপন সুড়ঙ্গ পথের দিকে। বুঝতে পারি অজানা, অচেনা আগন্তুককে স্থান দিতে রাজি হচ্ছে না সে।
মনে হয়, এই পৃথিবীতে নেই আর কিছু যা দিতে পান এমন সুমধুর আনন্দ। তার আঁখিনিঃসৃত লবণাক্ত জলকণা বহ করছে আমার জন্যে বিচিত্রতর সন্তুষ্টির অনুভূতি, তা বিষাদক্লিষ্ট মুখে লেখা আছে উদ্দীপ্ত আনন্দের কথা।
বুঝতে পারি আমি, এই প্রথম কোনও পুরুষ-পতঙ্গ বসতে চলেছে সুবাসিত পুষ্পে তার। কয়েকবাৰে অদম্য প্রয়া স্থাপন করি আমার অহংকারের ধ্বজাটিকে গােপন সুড় তার। মৃদু শিহরণে কেঁপে ওঠে মেয়েটির সর্বাঙ্গ। আমার দে, স্পর্শ লাগে সেই কাপুনির। ধীরে ধীরে আন্দোলিত করা থাকি সমস্ত শরীর আমার। যতই বাড়তে থাকে ধর্ষণের মাত্রা, ততই চিৎকার করা থাকে সে, শুধু চিৎকার নয়, সাধ্যমতাে সে চেষ্টা করে, আমার এই দুরন্ত প্রয়াসের বিরুদ্ধে তুলতে বাধার প্রাচীর। অবশে শেষতম প্রচেষ্টায় সমাপ্ত করি আরব্ধ কাজটি আমার। সম’ দেহজুড়ে তখন বেজে ওঠে সুখের অনির্বচনীয় অনুভূতি তখনকার মতাে নির্বাপিত হয় কামনার আগুন।
চিরযৌবনা ইউরােপার মতাে শায়িতা সে। সদ্য হারাতে কুমারীত্বের বেদনায় হয়তাে বা ঈষৎ দুঃখিত, নিজেকে বিচ্ছি করেছি তার থেকে। রক্তলাল রুমালে শুষে নিচ্ছি আঁখিনিঃস অশ্রুকণা তার। তারপর তার আহত, অপমানিত ওষ্ঠাধ এঁকে দিই গভীর সুখের চুম্বন চিহ্ন।
তখন এক আশ্চর্য অনুভূতিতে ভরে যায় সারা মন আমার, ভেবে দেখাে আলি, আমিই হলাম দুরন্ত সে ঘােড়সওয়ার, যে ছুটিয়েছে অশ্ব তার দুরন্ত উপত্যকায় হ্রেষাধ্বনিতে বিদীর্ণ হয়েছে আকাশ বাতাস। এই অনুভূতি বহ করে অসীম সুখ আর অনন্ত আনন্দকে। পরিপ্লাবিত হয় মন আবার তাকে নিয়ে শুরু করি নতুনতর খেলা এক। আমা আদেশে রক্ষীরা এসে বেঁধে ফেলে মেয়েটিকে। হাতে আ পায়ে পরায় সিল্কের শৃঙ্খল। এমনভাবে স্তব্ধ করা হয় গতিবে তার। তারপর অনেকক্ষণ ধরে আমি আপন ইচ্ছার খেয়ালে লেহন করি তাকে। সে এক আশ্চর্য অনুভূতি! বারে বার শিহরিতা হচ্ছে সে আমার মুখনিঃসৃত জলীয় পদার্থে। কিন তুলতে পারছে না প্রতিবাদের সামান্যতম বড়।
এবারের মতাে শেষ হল খেলা আমার। এখন আমার যেতে হবে বােনাতে। বারােদিন বাদে ফিরে এসে আবা উপগত হব তার শরীরে। এভাবে কেটে যায় বারােটি দিন। এই ক’দিনে আমি অংশ গ্রহন করিনি কোনও রমণীসম্ভোগে। ফিরে আসার পর অতিমাত্রা কামকাতর হয়ে পড়ি। অনতিবিলম্বে ডেকে পাঠাই তাকে সইছে না বিলন্ত আর। এবার তাকে উপভােগ করব বিচিত্ৰত কায়দায়। শােয়াই তাকে তৈরি করা এক কৌচে। হ্যাণ্ডেলে সাহায্যে যেটিকে একবার ওপরে তােলা যেতে পারে, পরক্ষণে নামানাে যেতে পারে তার অবস্থান।
অতি দ্রুত করি তাকে পূর্ণ প্রকাশিতা। আনন্দে পরিপূ হয় মন যখন দেখি সম্পূর্ণ অন্তর্হিত চাবুকের রক্তিম অভিবাদন তার পৃথুলা গজদন্তসমা উরুদুটি এবং কামনার উত্ত শিখরসম নিতম্বদ্বয় হাত দিয়ে ইশারা করে আমায়। পৃথিবী আর কোনও রমণী নেই শরীরের গর্বে যে আরও বেি গরবিনী তার চেয়ে। স্পর্শ করতেই জ্বলে যায় সমস্ত শরী আমার। আনমনে স্পর্শ করি সুডৌল স্তনদুটি তার।
উন্মােচিত করি পােশাক আমার। আবার দাঁড়াই চাবুক হাতে। তাকে দেখলেই আমার চেতনা রঙিন হয় ধর্ষকামে আনন্দে। এবার শুরু হবে ভালবাসার দ্বিতীয় পাঠ। বােঝা তাকে আমি, সম্রাটকে অপমান করার ফল কী মারাত্মক এখনই কি ঘটতে চলেছে সেটা অনুধাবন করতে পেরে প্রচ জোরে কেঁদে ওঠে সে। হাসতে থাকি আমি শয়তানের হাসি হাসির গমকে গমকে প্রকাশিত হয় প্রবল প্রতিহিংসা আমার শুরু হয় চাবুকের আক্রমণ। লাল হয়ে উঠতে থাে শঙ্খধবলের মতাে পেলব মসৃণ ত্বক তার।
ইতিমধ্যে আমার অনুচরেরা হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে কৌচটি পোঁছে দিয়েছে উচ্চতম অবস্থানে। এর ফলে সম্পূর্ণ উন্মােচিত যােনিদেশ তার। এমন কি ভালবাসার ঈষৎ গােলাপি গহ্বর স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হচ্ছে এখন।
উত্তেজনার আতিশয্যে উখিত হয়েছে আমার অহংকারাে অস্ত্রটি। মেঝের ওপর দাঁড়িয়ে সেটিকে সজোরে প্রােথিত ক ঈপ্সিত উপত্যকায়। ধাপে ধাপে পৌঁছে যায় সে শেষত বিন্দুতে। এবার মৃদুমন্দ আন্দোলনে কাপাতে থাকি সমস্ত দেহ এই কঁাপনের প্রশময়েটির শরীরে বুঝতে পারি আমি মাঝেমধ্যে দারুণ অপরাধবোেধ এসে গ্রাস করছে সমস্ত মন তার। তারই মাঝে হঠাৎ আলাের ঝলকানির মতাে উঠা জেগে গর্ভীর গােপন যৌনতা। এই দুই পরস্পর বিপরীত সত্তার আলােড়নে হচ্ছে : দ্বিধাগ্রস্ত। একবার ভাবছে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে কর নিবেদিতা আমার আগ্রাসী ইচ্ছার কাছে। পরমুহুর্তেই আবার চাইছে করতে রচনা উল্লঙ্ বাধার প্রাচীর।
তবে এবারে অনেক শীতল মনােভাব তার আচরণ জাগছে দূর আকাশের তারার মতাে সার্বিক অনুমােদন। তা অদ্ভুত এক আনন্দ ছড়িয়ে পড়ছে আমার স্নায়ুপুঞ্জে। চাই আমি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হােক রতিরঙ্গবিলাসের এই আবি মুহূর্ত। নতুন এই ভঙ্গিমাতে সব কিছুই কেমন অপূর্ব লাগ আমার কাছে। ধীরে ধীরে আমি পৌঁছে যাচ্ছি চরম আননে ভেবে দেখাে আলি, আমিই হলাম দুরন্ত সে ঘােড়সওয়ার, যে ছুটিয়েছে অশ্ব তার দুরন্ত উপত্যকা হ্রেষাধ্বনিতে বিদীর্ণ হয়েছে আকাশ বাতাস। এই অনুভূতি বত করে অসীম সুখ আর অনন্ত আনন্দকে। পরিপ্লাবিত হয় মন আবার তাকে নিয়ে শুরু করি নতুনতর খেলা এক। আম আদেশে রক্ষীরা এসে বেঁধে ফেলে মেয়েটিকে। হাতে পায়ে পরায় সিল্কের শৃঙ্খল। এমনভাবে স্তব্ধ করা হয় গতি তার। তারপর অনেকক্ষণ ধরে আমি আপন ইচ্ছার খেয়া লেহন করি তাকে। সে এক আশ্চর্য অনুভূতি! বারে বারে শিহরিতা হচ্ছে সে আমার মুখনিঃসৃত জলীয় পদার্থে। তুলতে পারছে না প্রতিবাদের সামান্যতম ঝড়। এবারের মতাে শেষ হল খেলা আমার। এখন আমার যেতে হবে বােনাতে। বারােদিন বাদে ফিরে এসে আব উপগত হব তার শরীরে।
কেটে যায় বারােটি দিন। এই ক’দিনে আমি অংশ গ্রহ করিনি কোনও রমণীসম্ভোগে। ফিরে আসার পর অতিমাত্র কামকাতর হয়ে পড়ি। অনতিবিলম্বে ডেকে পাঠাই তাকে সইছে না বিলম্ব আর। এবার তাকে উপভাের্গ করব বিচিত্ৰ কায়দায়। শােয়াই তাকে তৈরি করা এক কৌচে। হ্যাণ্ডেলে সাহায্যে যেটিকে একবার ওপরে তোলা যেতে পারে, পরক্ষ নামানাে যেতে পারে তার অবস্থান।
অতি দ্রুত করি তাকে পূর্ণ প্রকাশিতা। আনন্দে পরিণ হয় মন যখন দেখি সম্পূর্ণ অন্তর্হিত চাবুকের রক্তিম অভিবাদন তার পৃথুলা গজদন্তসমা উরুদুটি এবং কামনার উত্ত শিখরসম নিতম্বদ্বয় হাত দিয়ে ইশারা করে আমায়। পৃথিবী। আর কোনও রমণী নেই শরীরের গর্বে যে আরও বে গরবিনী তার চেয়ে। স্পর্শ করতেই জ্বলে যায় সমস্ত শর আমার। আনমনে স্পর্শ করি সুডৌল স্তনদুটি তার।
উন্মােচিত করি পােশাক আমার। আবার দাঁড়াই চার হাতে। তাকে দেখলেই আমার চেতনা রঙিন হয় ধর্ষকামে আবার হাত রাখি তার শরীরের লােভনীয় অংশগুলিতে ধীরে ধীরে জাগিয়ে তুলি চেতনার অনুরণন। প্রসারিত করি উরুদুটিকে। প্রবেশ করাই আমার লিঙ্গটি ভাসতে থাকি কামনার তরঙ্গে। যদিও জ্বালেনি সে সহযােগিতার আগুন তথাপি আমি পৌঁছে যাই চরম সন্তুষ্টির প্রশস্ত উদ্যানে।
আজ এই পর্যন্ত থাক। আশা করছি পরবর্তী চিঠিতে তােমায় শােনাব আর এক কাহিনী।
ইতি তােমার
মুজরা
বুঝতেই পারছ এই চিঠিটা বহন করছে আমার জন্যে অনেক বেদনা। এক সপ্তাহ বাদে লেখা পরবর্তী চিঠির মাধ্যমে পরিস্ফুটিত হবে নতুন কাহিনী।