ঝিলডাঙার কন্যা – প্রচেত গুপ্ত

›› উপন্যাসের অংশ বিশেষ  

……বন্ধ দরজার দিকে মুখ করে ব্লাউজে সেফটিপিন আটকাচ্ছে শান্তি। ব্লাউজে সেফটিফিন আটকানাের কারণ হল, খানিক আগে কাদুর টানাহেঁচড়ায় ওপরের বােতামটা ছিড়ে পড়ে গেছে। শান্তি বােতাম খুঁজছে, কিন্তু পাওয়া যায়নি।

কাদু তাড়া দিয়ে বলল, কীরে এতক্ষণ লাগছে কেন। তাড়াতাড়ি কর। বললাম না কাজ আছে আমার?’

মাথা নীচু করে নিজের ভােলা বুকের দিকে তাকিয়ে হিসহিসিয়ে উঠল শান্তি। ‘তুমি কী মাইরি কাদুদা? শুধু বােতাম ঘেঁড়ােনি, নখ দিয়ে বুকের ওপরটা কেমন ছেলে দিয়েচ। মাগাে, বাঘ নাকি? হি হি।……..

…….কাদু সিলিঙের দিকে তাকিয়ে বলল, “বাঘ হলে কি আর শুধু আঁচড়াতাম? কামড়ও বসাতাম। এইরকম ঘাগ করে। বলে মুখ হাঁ করে ঘাড় কঁকাল কাদু। দাঁত দেখিয়ে হাসল।

শান্তি আদ্দেক মাথা ঘুরিয়ে বলল, কামড়াওনি নাকি? ডান পায়ের গােছটা দেখবে? শুধু গােছে। আর ওখানে? ওখানে কী কাণ্ড করেচ? বাপরে, আজ তােমার কী হয়েছিল কাদ্দা? আমাকে শেষ করে একেবারে।’ কথাটা বলে মুখ লুকিয়ে হাসল শান্তি। এটা একটা ফন্দি। এক্সট্রা’ আদায়ের ফন্দি। কাজকর্মের শেষে এ-কথা বলতে পারলে সুবিধে। কাদুর মতাে লম্পটরা খুশি হয়।…….

……সেফটিফিন আটকাতে সময় লাগল শান্তির। জামা ছােটো। ইচ্ছে করেই কাজে আসার সময় ছােটো জামা পরে সে। পার্টিকে গাধা বানানাে। পাটি ছােটো জামার কায়দা বুঝতে পারে না। ভাবে শরীর বড়াে। শান্তি মেঝেতে পড়ে থাকা শাড়িটা টেনে নিল। বলল, ‘আমি কী জানি তােমার লেইটার কোতায়। আমি কি বিড়ি টানি।……..

……হাত তুলতে গিয়ে জামায় লাগানাে সেফটিফিনে টান পড়ল শান্তির। ইস ভুল হয়েছে। জামাটা খুলে ‘বাঘ’টার কাছে যাওয়া উচিত ছিল। অন্যদিন তাই যায়। একবারে সব খুলে উদোম হয়ে তবে বিছানায় যায়। আজ হারামজাদাটা সময় দিলে না। দরজা দিতেই টান মারলে এমন করে। শুধু টান? দুটো বুকেই নখ মেরেছে। শুধু বুকে? কোমরে, পাছায় ছেড়েছে নাকি? শালা হারামি। হাত তুলে অন্ধকারেই ক্ষত দেখতে চেষ্টা করল শান্তি। মনে মনে দাঁত কিড়মিড় করে বলল, ‘শুয়ােরের বাচ্চা, করার মুরােদ নেই এক পয়সা, শুধু ধামসাবে।……..

…….শান্তি উবু হয়ে হারিকেনের চিমনি সরাল। কাদু মন দিয়ে দৃশ্যটা দেখতে লাগল। মেয়েটার শরীর ভালাে। ঢলঢলে ভাব আছে। কাদু লক্ষ করে দেখেছে ঢলঢলে চেহারার মেয়েরা মূলত বােকাসােকা হয়। কিন্তু এই মেয়ে তাই নয়। এ ধুরন্ধর। চালাকি করার চেষ্টা আছে।……

………ঠোট থেকে সিগারেটটা হাতে নিয়ে শান্তির ডান বুকের দিকে তাক করে কাদু বলল, “ওখানে শুধু নখ মেরেছি, এবার আগুন মারব। অভাগার কপাল পােড়ে, তাের বুক পুড়বে শালী। পােড়া বুক নিয়ে এই ব্যবসা করবি কী করে সেটা একবার ভেবে দেখেছিস? হ্যা হ্যা।…….

…….মালতী গায়ের কাপড় ভালাে করে জড়িয়ে নিল। বুক, পাছা তাে দেখেই, হারামজাদা কাধ, গলাও বাদ দেয় না। মাটিতে গড় হয়ে প্রণাম করলে মাথার কাছে ঠায়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। ফাকফোকরে চোখ পাতবে।….

….মােম চ্যাটার্জি এবার একটা কাণ্ড করল। ফট করে টপের ওপরের বােতামটা খুলে ফেলল। ভেতরের গােলাপি ব্রা উঁকি দিল।…..

…..ঘরের ভেতর উজ্জ্বল আলাে। দেয়ালজোড়া আয়নার সামনে চেয়ারে গা এলিয়ে বসে আছে মােম। গায়ে ম্যাজেন্টা রঙের ভােয়ালে। বুক থেকে গলা পর্যন্ত ছড়ানাে। জিনস পরা পা দুটো ছড়ানাে সামনের টুলে। এর অর্থ সে শুধু মেকআপ তুলে ফেলেনি কস্টিউমও খুলে ফেলেছে।…..মােম রিভলভিং চেয়ার ঘুরিয়ে সামান্য পাশ ফিরল। ডান দিকের কাঁধ থেকে তােয়ালে পড়ল হাতের ওপর। শরীরের একপাশ উন্মুক্ত হয়ে গেল তার। বাদামি রঙের একটা জামা পরে আছে। তার আয়তন এতই সামান্য যে একে জামা বলতে অসুবিধে হয়। অন্তর্বাস বলাই সমীচীন। মসৃণ, মাখন-রঙা কাধ ও হাতের ওপর অতি সামান্য একটা স্ট্র্যাপ কোনােরকমে সেই জামাকে মােমের গায়ের সঙ্গে ধরে আছে। একটু জোরে হাওয়া দিলেই উড়ে যাবে। তােয়ালেটা বুকের ওপর তুলতে তুলতে নােম হাসল।……

……..কথা শেষ করে মােম এবার চেয়ারে মাথা এলিয়ে দিল। ম্যাজেন্টা তােয়ালে পুরােটাই এবার নেমে এল তার কোলের ওপর। এখন আর শুধু কাঁধ নয়, বুক, পেটের অনেকটাই ভেসে উঠল। মনে মনে তারিফ করল শুদ্ধনাথ। মেয়েটা ফিগার রেখেছে বটে। বুকে, পেটে কোথাও একটু বাড়তি নেই। টিভির কল্যাণে হিন্দি আর ইংরেজি সিনেমা, সােপ দেখে দেখে বাঙালির রুচি পালটে গেছে। আদ্দিকালের ঢলঢলে চেহারা এখন চলে না। শরীরে একটা টাইট ভাব চাই। আজকাল এই লাইনের মেয়েরা প্রায় সকলেই সেই চেষ্টা করছে, বেশিরভাগই পারছে না। যে সামান্য কয়েকজন পারছে তার মধ্যে মােম অবশ্যই একজন।…….শুদ্ধনাথ অবাক হওয়ার ভান করল। কাধের স্ট্র্যাপ সামান্য নামিয়ে বুলু তার ‘দিদির বুকের কাছ পর্যন্ত তুলে নিয়ে চলে গেল। এটা কি ইচ্ছাকৃত? মােমের ইঙ্গিত আছে? শরীর দেখানাের ইঙ্গিত হতে পারে।…..গল্প শেষ করে বুলুর হাত সরিয়ে খিলখিল করে হাসতে শুরু করল মােম। প্রতিটা হাসির দমকের সঙ্গে ছন্দ মিলিয়ে তার বুক কাঁপতে লাগল। ট্রেন্ড অনুযায়ী বুকের আয়তনও রক্ষা করে চলেছে মেয়েটা। বেশি হতে দেয়নি কিছুতেই।….

…..হাত টেনে নিয়ে মোম সােজা হয়ে বসল। বুকের তােয়ালে তুলে মুখ মুছল। আয়নার দিকে ফিরে ঝুঁকে পড়ে কপালে, গালে, ঠোটে হাত চেপে চেপে দেখল। ঝুঁকে পড়ার কারণে তার অতি সামান্য টপ পিঠের অনেকটা ওপরে উঠে এসেছে। জিনসের কোমরও নেমেছে। গাঢ় বেগুনি রঙের প্যান্টির বেশ খানিকটা উঁকি দিচ্ছে ভেতর থেকে। কিছুদিন আগে পর্যন্ত প্যান্টি দেখানােটা একটা ফ্যাশন ছিল। এখন সাধারণ ব্যাপার। কেউ তাকিয়ে দেখে কিনা সন্দেহ।

শুদ্ধনাথ দেখল। অন্য কোনাে কারণে নয়, দেখল মেয়েটা শরীরের নীচের অংশটা ধরে রাখতে পারছে কিনা সেটা জানার জন্য। পােশাকে ঢেকেঢুকে থাকলে অনেক সময় বােঝা যায় না। ক্যামেরা কিন্তু পােশাক টপকে ভুল ত্রুটি ধরে ফেলে। শট নেওয়ার সময় মনিটরে দেখা যায়, ভারী লাগছে। আগে থেকে জানলে অ্যাঙ্গেল বদলে সতর্ক হওয়া যায়। ভালাে কাজের অনেক ত্যাপা। তবে এই মেয়ে ধরে রাখতে পেরেছে। সামনের মতাে এর পিছনও মেদহীন।……..এক নিশ্বাসে কথা শেষ করে মােম চ্যাটার্জি হাঁপাতে লাগল। হাসির মতাে। হাঁপানাের সময়েও সে নিঃখুতভাবে বুকে ছন্দ তােলে। তাল কাটে না।……

…….মুখ ফেরাল মালতী। সংসার কম দিন হল না। দু-দুটো সন্তানের মা হতে চলল। তবু আজও স্বামীর আদর সােহাগে মাঝে মাঝে গা শিরশির করে ওঠে, লজ্জা লাগে। আর সেই কারণে ভালাে লাগে। সরিয়ে দেওয়ার জন্য সে নিতাইয়ের বুকে ঠেলা দিল। নিতাই সরল না। মুখ বাড়িয়ে বউয়ের গালে ঠোট রেখে বলল, আমি শুধু ওপরে ওপরে…একটুখানি।

এই দুনিয়ায় ভালােবাসার নিয়মকানুন বড়াে কঠিন। যিনি সেই নিয়ম বেঁধেছেন তিনি আরও কঠিন। তাঁর নিয়ম নিদারুণ অভাব, সন্তানের জন্য দুশ্চিন্তা, সংসারের চাপে বিন্দুমাত্র টলে না। হাজার দুঃখকষ্টের পরও দুটো শরীর জেগে ওঠে, হেসে ওঠে।

ঘুরে গিয়ে নিতাইয়ের কঁাধ জড়িয়ে ধরল মালতী। নিতাই বউয়ের বুকের মাঝখানটা ছুঁয়ে গলায় নাক, মুখ ঘষতে ঘষতে বলল, “মেয়েটা কেমন আছে?”

আদর নেওয়ার জন্য মালতী মুখটা তুলল ওপরে। ঘরের চালার দিকে। ফিসফিস করে বলল, ‘অ্যাই অমন করে না…বলতে নেই, দুটো দিন ভালাে আছে। আজ বিকালে বলল, মা খিদে পেয়েছে।

‘বাঃ খিদে পাওয়া ভালাে লক্ষণ। আমি তােমায় বলেছিলাম না, ওই বড়াে ডাক্তার যে-সে মানুষ নয়। বলেছিল তাে সব ঠিক হয়ে যাবে।

কোলে-পড়া শাড়ির আঁচল সরাতে সরাতে মালতী বলল, ‘তাও তুমি আরও একবার যাও।

রাত হয়ে গেলে, গরমে ঘরে গায়ে জামা রাখে না মালতী। তার ওপর এই সময় বুক দুটো ভারী হয়ে আসছে। গলা থেকে সেই নগ্ন বুকে মুখ নামাল নিতাই। আলগােছে স্তনবৃন্তদুটোয় ঠোট ঘষতে লাগল। ভরা শরীরের স্বাদ, গন্ধই আলাদা।

‘গােপীদাও এই কথা বলছিল।

কী বলছিল?’ স্বামীর মাথার পিছনটা চেপে ধরে বুকের মাঝখানে। আদর নিতে নিতে বলল মালতী।

নিতাই জড়ানাে গলায় বলল, বলছিল, আর একবার দেখিয়ে নিয়ে আয় নেতাই।’

‘অ্যাই কী কর? কর কী? লাগে না বুঝি? উফ এই বুড়াে বয়েসে কী যে কর।”

মালতীর গলায় আশকারা। নিজেই স্বামীর হাতটা টেনে নগ্ন বুকের ওপর বােলাচ্ছে।

নিতাই বলল, ছাড়ব না। ইস, মদের গন্ধ। একটা কথা ভেবে রেখেছি মালতী?” কী?

হাত বাড়িয়ে হ্যারিকেনের আলাে কমাল মালতী। মানুষটাকে নিয়ে এই বিপদ। যখন চাইবে এমন করবে যে কোনােদিকে জ্ঞানগম্যি থাকবে না। মেয়েটা যদি ঘুম ভেঙে উঠে পড়ে?

‘ঠিক করেছি, ফুলের যদি ফের কিছু হয়, সােজা বানেরহাটে নিয়ে যাব। তাই ভালাে। তবে মনে হয় ভগবানের কৃপায়..।

মেঝেতে শুয়ে পড়ল মালতী। ঘাম আর মদের গন্ধ মাখা নিতাইকে সরিয়ে কোমরের কাপড় আলগা করল। শায়ার দড়ি খুলল। তারপর নিতাইয়ের জামা খুলতে খুলতে বলতে, আমি তাে পুজো দিয়েছি।

‘বেশি করে দিয়েছ তাে?”

“গরিব বাপের মেয়ে, তার আবার বেশি পুজো কী? সেদিন দশ টাকা দিয়ে এলাম।।

মালতীকে পাশ ফেরাতে ফেরাতে নিতাই বলল, তাও আর একবার বেশি করে দিয়ে আসবে। এই ধর শ-খানেক টাকা।

শাড়ি, শায়া সরিয়ে মালতীতে উন্মুক্ত করেছে নিতাই। পেট বড়াে হয়েছে। সেই পেটে মুখ দিল যত্নে। মালতী গােড়া থেকেই দেখেছে, তার স্বামী মানুষটা যতই গাঁইয়া ভূত হােক না কেন বউকে সােহাগের সময় যত্ন করে। ব্যথা কষ্ট দেয় না। যেটুকু দেয় সেটাও আরামের। গ্রামের মেয়েবউদের মুখে কতরকম শশানে। শুনে শিউরে ওঠে। খগেন বউকে আগে কাপড় খুলে উবু করে বসিয়ে রাখে, তারপরইস মাগাে। মানুষ না পিশাচ? ঘােষপাড়ার দুয়ার অবস্থা আরও খারাপ। রাতদুপুরে এমন ভাবে শরীরের ওপর চেপে বসে যে দমবন্ধ হয়ে আসে মেয়েটার। সেই তুলনায় তার স্বামী অন্যরকম। অনেক ভালাে।

নিতাইয়ের কোমর দু-হাতে ধরে নিজের পেট থেকে সাবধানে সরাল মালতী, তারপর এগিয়ে ধরল নিজেকে। কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল, “অ্যাই সাবধানে কিন্তু। একদম জোর করবে না। দেখবে লাগে না যেন। পেটেরটা ব্যথা পাবে। হি হি।’

ভালােবাসার যন্ত্রণায় জীবনের বাকি যন্ত্রণাগুলাে অল্প সময়ের জন্য হলেও ভুলে গেল মালতী। চাপা গােঙানি নিয়ে ভেসে গেল। সঙ্গমের তৃপ্তি শেষে উদোম শরীরের ওপর কাপড় টেনে ধরে যখন উঠে দাঁড়াল সে তখন নিতাইয়ের চোখ বােজা। জড়ানাে গলায় বলল, ‘রাতে খাব না।

মালতী ঠোট টিপে হেসে বলল, ‘মরণ। লুঙ্গিটা টেনে নেবে তাে।……..

…….সবথেকে বড়ো বিষয় হল পােশাক। মহিলার পােশাক মারাত্মক। এই মুহূর্তে মেয়ে গলা বন্ধ পােশাক পরে থাকলেও এই মহিলা সাতসকালে পিলে চমকানাে সাজ দিয়েছেন। হিন্দি সিরিয়ালের কায়দায় জরি পাড়ের চকমকে শাড়ির নীচে একটা ফিতেওলা ব্লাউজ। ফিতেওলা সেই ব্লাউজও চকমকে। ফিতেতে জরির গুঁড়াে থাকতে পারে। নইলে আলাে পড়ে এত চিকচিক করবে কেন? সােমনাথের এক সময় মনে হল, ব্লাউজ নয়, এটা আসলে অন্তর্বাস ধরনের কিছু। নইলে এত ছােটো কেন? শরীরে লেগে আছে মাত্র। মহিলার ঘাড়, কাধ, হাত এবং বুকের অনেকটাই দেখা যাচ্ছে। চেয়ারে বসে থাকার কারণে পিঠ দেখা যাচ্ছে না। তবে তার অবস্থা যে আরও মারাত্মক সেটা সহজেই অনুমান করা যায়। মহিলা কি বাড়িতে সবসময় এরকম শরীর দেখিয়ে বসে থাকেন? নাকি লােক আসবে বলে সেজেছেন ?……..

…..‘এক কাজ করি বরং, আমি জামা-টামা খুলে আপনার সঙ্গে বসে বসে গল্প করি। আপনি ইচ্ছে করলে আমার শরীর দেখুন, না ইচ্ছে করলে মুখ ফিরিয়ে থাকুন। যেটা আপনার খুশি। মনে হয় না মুখ ফিরিয়ে থাকবেন। খােলা জায়গাগুলাে রােগাভােগা লাগলেও আমার ঢাকা অংশটা একেবারে খারাপ নয়, তবে কথা দিচ্ছি জোর করব না। শুধু এইটুকু বুঝতে পারব, আপনি মিছিমিছি তােশকের তলায় টাকা রেখে যান না। আমার খটকা দূর হবে।…..

…….ক্লাবের একটা এসি ঘরে মােমের মেকআপ এবং পােশাক বদলানাের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে ঢুকতেই শুদ্ধনাথ জানতে পারল, তার আশঙ্কাই সত্যি। কানে মােবাইল লাগিয়ে ওইটুকু ঘরেই উত্তেজিত ভাবে পায়চারি করছে মােম। উত্তেজিত হলেও তাকে দেখাচ্ছে দারুণ। টি শার্ট আর শর্টসে ঝলমল করছে। ঠিক যেমনটা শুদ্ধনাথ চেয়েছিল। ফর্সা, ছিপছিপে দুটো পায়ের প্রায় পুরােটাই উন্মুক্ত। উরুর খানিকটা ওপরেই প্যান্ট শেষ হয়ে গেছে। দীর্ঘ উজ্জ্বল নগ্নতার শেষে পায়ের পাতায় স্নিকার। তার রংও সাদা। শুধু ফিতেটুকু নীল। টি শার্টের ঝুলেও টানাটানি রাখা আছে। ইচ্ছে করেই রাখা আছে। দৌড়ােনার সময় হালকাভাবে পেট, পিঠ দুটোই যাতে বেরিয়ে পড়ে। হালকাই ভালাে। শার্টের আড়ালে থাকা বুক দুটো নিখুত এবং স্পষ্ট হচ্ছে। দুশ্চিন্তার মধ্যেও শুদ্ধনাথ দ্রুত ভেবে নিল, ক্রেন দিয়ে ওপর থেকে নয়, আগে এই মেয়ের পা দুটোকে ফ্রেমে রাখতে হবে। নগ্ন পা ছুটে আসছে। তারপর ধীরে ধীরে ক্যামেরা উঠবে। একবার এই বিজ্ঞাপন যে দেখবে, সে বারবার দেখার জন্য অপেক্ষা করে থাকবে। নারীশক্তি’ কাকে বলে দেখে ছাড়বে একেবারে।

মােম মােবাইলে কথা চালাচ্ছে

কী যে বলাে মা, কত ইঞ্চি আমি কি মেপেছি?.. আমি কি টেপ ফিতে নিয়ে শু্যটিঙে আসি?… বলছি তাে কম, একেবারে এইটুকু। জাস্ট কোমর থেকে নেমে ঢেকে রেখেছে … না না এরকম কোনাে কথা হয়নি…শুধু ঝুলে কম না মা, ইটস মাের অর লেস স্কিন ফিটিংস… পেছনটা পুরাে বােঝা যাচ্ছে। আরে, আমি কী করে আগে দেখব.. ইটস ইমপসিবল মা…তুমি বুঝতে পারছ না..শর্টস পরতে। হবে এটা জানতাম, কিন্তু তার যে হাল এই হবে আমি কী করে বুঝব?…পেমেন্ট অনুযায়ী…আসলে শুদ্ধদার সঙ্গে তাে আমার কাজ অনেকদিনের, আমি বিশ্বাস করেই রাজি হয়েছিলাম…হা হা বলছি, ওই তাে শুদ্ধদা এসেছে…এখন রাখছি মা…ডােন্ট ওয়ারি…।………মােমের ঊরুর একটু নীচ পর্যন্ত তােয়ালে ঝুলছে। সেই অবস্থায় চেয়ারে পা তুলে দিয়ে মােম বলল, অত লেকচার শুনে আমার কাজ নেই। প্রথম যখন কনসেপ্টটা শুনেছিলাম, তখনই বুঝেছিলাম, ডাল মে কুছ কালা হ্যায়। ঠিক আছে আমার ফিগার ভালাে, তােমরা তাে একটু ইউজ করবেই, কিন্তু এতখানি আমি ভাবতে পারিনি। দ্যাখাে, শুদ্ধদা অন্য কেউ হলে এতক্ষণ অপেক্ষা করতাম না। কস্টিউম খুলে, মেকআপ তুলে বাড়ির পথে রওনা হতাম। তুমি বলেই সেটা পারছি না। আমি অপেক্ষা করছি, তুমি একটা কিছু ভেবেচিন্তে ওয়েআউট বের করাে। সরি, এতখানি শরীর আমি দেখাতে পারছি না।

শুদ্ধনাথ কাতর গলায় বলে, শরীর কোথায়? এ তাে পা!

মােম এবার হেসে ফেলল। বলল, এটা ভালাে বলেছ, এরপর তােমরা বলবে, তােমার শরীর কোথায়, ও তাে তােমার বুক!……..

…….মােম সামান্য হেসে বলল, তুমি এত টেনশন নিচ্ছাে কেন? তােমার সঙ্গে তাে আমার কোনাে সমস্যা নেই। আমার শর্টসের লেংথ কতটা বাড়ালে। পার্টি তােমার কাজটা নিতে পারবেন জেনে নাও। জগিং মানে তাে আর থাই পর্যন্ত পা দেখানাে নয়, ক্যাপরি বা জগিং স্যুটেও কাজ চলতে পারে। সাউথ সিটি মল থেকে চট করে একটা কিনে আনলেই হবে। আর যদি তােমার ওই পার্টি বলেন, না, বিসকিটে গ্লুকোজের সঙ্গে উনি আমার পা, পেট আর বুকও চাইছেন তাহলে অন্য কথা। জগিং-এর যা রেট, উরু বা পেট তাে আর সেই পয়সায় বেচা যায় না। নাকি সেটা উচিত ? তুমিই বলাে না? কেনাবেচার মধ্যে সারাক্ষণ থাকো, মুড়ি মিছরির আলাদা আলাদা দামের ব্যাপারটা তােমরাই তাে সবথেকে ভালাে বুঝবে। এই পা দুটো কি বেচার মতাে সেক্সি নয়? নাকি ফ্রি-তে বিলিয়ে দেওয়ার মতাে বিশ্রী ?…..

…….মেয়েটা কাজও করেছে মারাত্মক। শুধু চাপা ছােটো শটর্স পরে দৌড়ােয়নি, দৌড়ােত দৌড়ােতে হাত ছড়িয়ে এক্সারসাইজ করেছে, লাফ দিয়ে গাছের পাতা ছুঁয়েছে। গাছের পাতা ছোঁয়ার দৃশ্যটা শুদ্ধনাথের একেবারেই ভাবা। ছিল না। মােম নিজে থেকেই ইমপ্রােভাইজ করল। হাত উচু করে লাফ দেওয়ার সময় বেতের মতাে লিকলিকে শরীরটা একেবারে ঝকমক করে উঠল। বুক থেকে শুরু করে, পেট, নিতম্ব, পায়ের গােছ পর্যন্ত শূন্যে চকিতে ঢেউ তুলল যেন ।…….

…….কাদুর পিঠের ওপর নিজের বুকের ভার রেখে অকারণে হাসছিল শান্তি। ‘আঃ শান্তি, বিরক্ত করিস না।….কাদুর খালি পিঠে আঙুল চালিয়ে শান্তি বলল, “ওমা, আমি বিরক্ত কই করলাম! তুমিই তাে বলেছিলে ওষুধ খেয়ে দোর দেবে। বলােনি?

শান্তির খিলখিল আওয়াজের হাসির মধ্যে দরজায় উকি দিল শােল। কাদুর পিছনে নিজের শরীর লুকোল শান্তি। শশাল চাপা গলায় জানাল গােপীনাথকে ডেকে আনা হয়েছে। কাদু হাতের ইশারা করায় শান্তিকে সরে যেতে বলল। শান্তি গদির ওপর পড়ে থাকা ব্লাউজ, অন্তর্বাস কুড়ােতে গেলে কাদু বাধা দেয়।

এগুলাে এখানে থাক শান্তি। দরকার লাগবে। তুই এমনি যা। ওমা খালি গায়ে বেরােব?’ কাদু দাঁত ঘষে বলে, শাড়ি জড়িয়ে বেরাে শালী। শান্তি গায়ে শাড়ি ঢেকে দ্রুত ঘর ছাড়ল।……..

……ধীর পায়ে ঘরে ঢুকল শান্তি। হাতে পানের সরঞ্জাম। কাদু তার দিকে তাকিয়ে চমকে উঠল। বাহ। মানা চোখ ফেরাতে পারলেন না।

চোখ না ফেরানাের মতােই কাণ্ড করেছে শান্তি। পােশাক ঊরুর একটু নীচ পর্যন্ত গিয়ে থমকে গেছে। জিনিস মাপে বড়াে হয়নি। আবার ছােটো হয়নি। এইটাই কাদু চেয়েছিল। বড়াে হলেও যেমন খেলতে অসুবিধে, ছােটো হলে তেমনি খেলাতে অসুবিধে। আসল ব্যাপার হল, ফিনফিনে জামার ভেতরে শান্তির ছিপছিপে শরীরটা দেখা যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু স্পষ্ট নয়। অস্পষ্ট, আবছা। দেখা যাচ্ছে, আবার দেখা যাচ্ছেও না। মনে হচ্ছে, মেয়েটার বুক, পেট, নাভি যেন কুয়াশা মাখা। ধোঁয়া ধোঁয়া। দোকানি প্যাকেট করার সময়েই চোখ টিপে বলেছিল, ‘নিয়ে যান, রাতেরবেলায় গিন্নিকে পরালে মজা আছে।

সত্যি মজা আছে। মানা হারামজাদা শান্তির গা থেকে এই কুয়াশা সরাতে। চাইবে এটাই মজা।……

…..শান্তি মানার পাশে উবু হয়ে বসল। পানের সরঞ্জাম ফরাশের ওপর রেখে কাধের চুল সরিয়ে দিল পিঠে। তার গােলাপি জামা পিছলে উঠে এল উরুর ওপর। চুলে-ঢেকে রাখা শ্যামলা বুকের খানিকটা ছলকে পড়ল সামনে। কাদুর শরীরে শিরশিরানি দিল। ফ্যাকাশে পাউডার-মাখা-মুখে ঘাড় কাত করে শান্তি বলল, কাদুদা, পান সাজি?”…….

……..ঘরের ভেতর তখন ফিসফিসানি শুরু হয়েছে। ‘একটু চুন দিই দাদা? ‘দাও, অল্প দাও। তােমার নাম কী? “ওমা মানুষটা বলে কী গা! নাম তাে জানেনই। শান্তি। হি হি। ও হ্যা শান্তি। শান্তি তােমায় ভারি সুন্দর দেখতে। ‘হি হি। সুন্দরের কী দেখলেন? দাদা, খয়ের দেব? মুখ কিন্তু লাল হবে। “থাক তাহলে। ‘সুপারি দেব না? দিই কয়েক কুচি…অ্যাই কী করেন…কাতাকুতু লাগে।’ “ঠিক আছে, সরে এসাে। ইস মাগাে…লজ্জা করে…এদিকে না..। দাঁড়ান পানটা সাজি। সাজো। বােতাম কোনদিকে শান্তি ?

‘বােতাম নেই দাদা…ফিতা..পিঠের কাছে ফিতা ইসিস্টেম…কোমরে …পিঠে…মাইরি, ওখানে হাত দেন কেন…হি হি।

কই ফিতে? পাই না তাে, বলাে কই? তাড়াতাড়ি বলাে শান্তি। তাড়াতাড়ি, তাড়াতাড়ি।

‘কাদুদা এমন জিনিস আনছে না…এই তাে ফিতা, নেন ধরেন…এসব শহরের জিনিসের কায়দাকানুন কি আমরা জানি?

‘এবার?

বােকা মানুষ, এবার কী জানে না। নেন টান মারেন,,আস্তে টানেন …গিট পড়লে আর এক কিত্তি হবে…আমাদের বাবা শাড়িই ভালাে…টান মেরে…অ্যাই। লজ্জা করে…হাত সরান…সরে আসেন…হাঁ করেন পানটা মুখে দিই। নিন আসেন, কাছে সরে আসেন।………

……..কাদুকে উঠোনে দেখে চমকে উঠল মালতী। এই লােক তার বাড়িতে কেন! দ্রুত হাতে গায়ের এলােমেলাে কাপড় ঠিক করতে করতে মাথায় আঁচল টানল মালতী।

কাদু কয়েক পা এগিয়ে এসে দাঁড়াল দাওয়ার সামনে, মালতীর মুখােমুখি। মুখে বিশ্রী হাসি। সাপের মতাে নিস্পলক চোখে নির্লজ্জের মতাে মালতীর গােটা শরীরটা মাপতে লাগল। বুক থেকে কোমর পেট হয়ে পায়ের পাতা পর্যন্ত। শিউরে উঠল মালতী। গা ঘিন ঘিন করে উঠল।

বাড়িতে কেউ আসবে এ ব্যাপারে একেবারেই প্রস্তুত ছিল না সে। গা খালি করে রান্না করছিল। বাচ্চার জন্মের সময় যত এগিয়ে আসছে গায়ে কাপড় রাখাই কঠিন হয়ে পড়ছে। বুক দুটো ভারী হয়ে উঠছে দিন দিন। গায়ে জামা রাখতে কষ্ট হয়। তার ওপর ভ্যাপসা গরম। শরীরের ভেতর বাইরে সর্বক্ষণ আনচান করে।………

Leave a Reply