চশমরঙ্গ – মলয় রায়চৌধুরী

›› উপন্যাসের অংশ বিশেষ  

…..সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময়ে নগেন দত্ত অনুভব করতে পারছিলেন যে তিনি উলুপি-সুবাসের হ্রদের হাফঠাণ্ডা তলদেশ থেকে ওপরের দিকে উঠছেন, আলোকপ্রাপ্তির আধুনিকতায় ধুয়ে যাচ্ছে তাঁর পোশাক, যেমন দুশো বছর আগে হয়েছিল, তখন বাবার সঙ্গে এসেছিলেন, বাবা নিয়ে এসেছিলেন ছেলেকে যৌনকর্মে সুদক্ষ করে তোলার জন্য ।

নগেন দত্তের বাবা ভাব-ভালোবাসায় বিশ্বাস করতেন না, বিশ্বাস করতেন যৌনখেলার দক্ষতায়, যেমন তাঁর পূর্বপুরুষরা তিন-চারশো বছর আগে দশবারোজন বউ রাখতেন আর আনন্দ করতেন ।

বাবা একটি যুবতীকে চিৎ করিয়ে শুইয়ে, ছেলেকে বলেছিলেন, তুমি যতোই প্রেমের রসবিজ্ঞান পড়ো, লিঙ্গের স্মৃতির কাছে সবই তুচ্ছ, যে লিঙ্গের নিজস্ব স্মৃতি নেই, বুঝতে হবে তাতে মনুষ্যত্বের অভাব রয়েছে, এইভাবে দশ বছরের ছেলেকে শিক্ষা দিয়েছিলেন :

বাবা : এই দুটো হল ঠোঁট, তোর যেমন আছে তেমন মেয়েদেরও থাকে, দেখেইছিস, তা এই দুটো ঠোঁটে তুই নিজের দুটো ঠোঁট রেখে ডাবের জল খাবি ।

ছেলে : ডাব তো আমাদের শেতলপুরের জমিদারিতে কাঁদি কাঁদি হয় বাবা, একজন মেয়ের ঠোঁটে কেন খাবো, ডাবের জল তো পাবো না, কী পাবো তাহলে ?

বাবা : যখন খাবি তখন বুঝতে পারবি, লালার সঙ্গে লালা মিশলে জ্বালা বাড়ার জ্বালা কমে ।

ছেলে : আচ্ছা, তুমি বলছ যখন তখন খেতেই হবে ।

বাবা : এই দ্যাখ, এদুটো হল মাই, কিন্তু শক্তপোক্ত হলে তাকে বলে স্তন, ছোটো বেলায় যেমন করে চাকরানিদের দুধ খেয়েছিস, এখনও তেমন করেই খাবি ।

ছেলে : এখন আর কেন দুধ খাবো বাবা, বাড়িতে গোরুর খাঁটি দুধ তো খাইই ।

বাবা : দুধ খাবার মতন করে খাবি, কিন্তু দুধ বেরোবে না, আনন্দ খাবি, দুধ থাকলে একরকমের আনন্দ হয়, আবার দুধ না থাকলে আরেকরকমের আনন্দ ।

ছেলে : দুধের বদলে কী বেরোবে তাহলে ?

বাবা : কিছুই বেরোবে না, তুই যখন খাবি তখন বুঝতে পারবি ।

ছেলে : বাবা, এনাকে এরকম উলঙ্গ দেখে আমার কুঁচকির জায়গায় টিং-টিং করে শিরশিরানি আরম্ভ হয়ে গেছে ।

বাবা : গেছে তো ? এই যে কুঁচকির মাঝে যা দেখছিস, সেখানে শিরশিরানির সঙ্গে শিরশিরানি মেশালে তোর আনন্দধারা প্রবাহিত হবে, তোর মন ভালো হয়ে যাবে, অন্ধকার থেকে আলোয় পৌঁছোবি, আলোকপ্রাপ্তি ঘটবে ।

যে মেয়েটি শুয়েছিল সে আচমকা উঠে বসে বলেছিল, ওভাবে বোঝালে হবে না কত্তা, শেষে বন্দরের বদলে খেয়াঘাটে জাহাজ ভেড়াবে তোমার ছেলে, তোমাকে চিন্তা করতে হবে না, ও আমি হাতে-নাতে শিখিয়ে দেবো, যেমন করে তোমায় শিখিয়েছিলুম, তোমার শশুরের উইল অনুযায়ী । এখন তুমি বাইরে গিয়ে অপিক্ষে করো, আমরা মহড়া দিয়ে নিই । ওকে জানতে হবে তো দুটো শরীরকে কেমন করে স্হিতাবস্হা থেকে স্ফীতির অবস্হায় নিয়ে যায় প্রেম, ওতো এখনও জানে না যে প্রেম হল স্হিতাবস্হার বিরুদ্ধে প্রথম উল্লাস ।

ছেলে বলেছিল, জানি গো জানি, প্রেমিকার সবকিছু জেনে ফেললেই প্রেম গুবলেট ।

শিক্ষিকা মেয়েটি বলেছিল, নগেন দত্তর চুলে বিলি কেটে, অ্যাই তো কতার মতোন কতা ।

ছেলে সেইমতো জীবন কাটাচ্ছিল, কিন্তু হঠাৎই কুন্দনন্দিনীকে দেখে তার প্রতি ভালোবাসায় আক্রান্ত হলেন নগেন দত্ত।

ছেলেকে ভালোবাসায় আক্রান্ত হতে দেখে হঠাৎ মারা গিয়েছিলেন নগেন দত্তের বাবা । ….

…..নগেন দত্ত পড়া আরম্ভ করলেন, এই বলে যে, নারীরা চার রকমের হয়, পদ্মিনী, চিত্রিনী, শঙ্খিনী আর হস্তিনী, তোমার এই গ্যালারিতেই তো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে লিখে গেছেন ভারত মুকুজ্জে । তাঁর, নগেন দত্তর, গলা থেকে বেরোতে লাগল আঠারো শতকের বাঙালি বামুনের স্বর:

পদ্মিনী

নয়ন কমল কুঞ্চিত কুন্তল ঘন কুচস্হল

মৃদু হাসিনী।

ক্ষুদ্ররন্ধ্র নাসা মৃদুমন্দ ভাষা নৃত্যগীতে আশা

সত্যবাদিনী ।।

দেবদ্বিজে ভক্তি পতিঅনুরক্তি অল্পরতিশক্তি

নিদ্রাভোগিনী

মদন আলয় লোম নাহি হয় পদ্মগন্ধ কয়

সেই পদ্মিনী ।।

চিত্রিনী

প্রমাণ শরীর সর্ব কর্মে স্হির নাভি সুগভীর

মৃদু হাসিনী ।

সুকঠিন স্তন চিকুর চিকন শয়ন ভোজন

মধ্যচারিনী ।।

তিন রেখে যুত কন্ঠবিভূষিত হাস্য অবিরত

মন্দ গামিনী ।

মদন আলয় অল্প লোম হয় ক্ষারগন্ধ কয়

সেই চিত্রিনী।।

শঙ্খিনী

দীঘল শ্রবণ দীঘল নয়ন দীঘল চরণ

দীঘল পাণি।

মদন আলয় অল্পলোম হয় মীনগন্ধ কয়

শঙ্খিনী জানি ।।

হস্তিনী

স্হূল কলেবর স্হূল পয়োধর স্হূল পদকর

ঘোর নাদিনী ।

আহার বিস্তর নিদ্রা ঘোরতর রমণে প্রখর

পরগামিনী ।।

ধর্মে নাহি ডর দম্ভ নিরন্তর কর্মেতে তৎপর

মিথ্যাবাদিনী ।

মদন আলয় বহুলোম হয় মদগন্ধ কয়

সেই হস্তিনী ।।

—ক্লায়েন্টরা কতো রকমের হয় লিখেছিলেন নাকি ? জানতে পারলে ক্লায়েন্ট অনুযায়ী কুন্দনন্দিনীদের কোন দরোজায় কে দাঁড়াবে, ডিসাইড করতে পারবো তাহলে ।…….

……আরেকটু অপেক্ষা করেই দেখি, ভাবলেন নগেন দত্ত, মাথার কোঁকড়া কালো চুলে হাত বুলিয়ে । পেছন ফিরে দেখলেন, দুটি যুবতী ঢুকলো ঘরে, বলে উঠলেন, আরে তিথি আর ছন্দরানি, তোমরা তো বিগতবুড়ি হয়ে গিয়েছিল, আবার দেহ ফিরে পেলে কী করে ? আমি তো তোমাদের পুনর্নিমাণ করে দেখলুম একটু আগে, আগাপাশতলা। এখনও পোশাক না পরেই আছো ? চক্কোত্তিবাবুর কোনো ক্লায়েন্ট এসে পড়লে বিপদে পড়বে, যাও আগে পোশাক পরে এসো ।

তিথিই প্রথম কথা বলল, নগেন দত্তকে জড়িয়ে গালে ঠোঁট চিপে, মমুয়াআআআআআঃ, ডক্টরেট করিয়ে ছাত্ররা গেছে, তাই তুমি চলে যাবার আগে পুরোনো রাতগুলো আরেকবার গুলজার করার জন্যে এলুম, তক্কে-তক্কে ছিলুম, নজর রেখেছিলুম দরোজার দিকে, চলো আমরা দুজনে তোমার দুদিকে শুয়ে জম্পেশ খেলা করি ।

নগেন দত্ত তিথি আহমেদের মুখটা ঘুরিয়ে নিজের দিকে এনে ঠোঁটে চুমু খেয়ে বললেন, তোরাও যে অধ্যাপক হয়ে গেছিস তা জানতুম না, অধ্যাপনার সঙ্গে মর্ষকামী সেক্স যায় কিনা তেমন জানি না গো । তখন তো তোরা আকাট ছিলিস, খেলতে ভালো লাগতো, মুকখুর সঙ্গে খেলার স্বাদ আর বিএ-এমএ পাশের সঙ্গে খেলার স্বাদে কি তফাত নেই, কী বলিস তোরা ? ।

ছন্দরানি বললে, অধ্যাপনা করি বলে কি আমাদের যৌনতা নেই, আমাদের দেহও কি অধ্যাপকদের মতন গোমড়া থাকবে নাকি ! আমাদেরও লাবিয়া আছে, উৎসুক ভগাঙ্কুর আছে, তুমি আমাদের সমান স্ট্যাটাসের, আমরা তো সীমা ভেঙে ছাত্র ফুসলিয়ে তাদের সঙ্গে শুতে পারি না, টাকা না নিয়ে শুলে স্ট্যাটাসে বাধে, এতো পড়াশুনা করে ফেলেছি, হাজার দশেক বই পড়ে ফেলেছি, সতেরোটা গবেষণার বই লিখে ফেলেছি ইংরেজি আর বাংলায়, তুমি, আমাদের দেহের ঈশ্বর, আজ দেখা দিলে আশি-নব্বুই বছর পর, ঝিনচাকুনি খেলা তো খেলতেই হবে ।

নগেন দত্ত বললেন, ওহ, আমার জ্ঞানচক্ষু যাকে বলে উন্মীলন করে দিলি তোরা দুজনে, আমি তো কখনও স্ট্যাটাসের কথা ভেবে কারোর সঙ্গে শুইনি, দেশে হোক বা বিদেশে, কমিউনিস্ট রাষ্ট্রে হোক বা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে, ব্রিটেনের পুঁজিবাদে হোক বা ভিয়েতনামের সাম্যবাদে, নিউ ইয়র্কের আনডারগ্রুাউন্ড হুকারের সঙ্গে হোক বা জার্মানির ওভারগ্রাউন্ড ব্রথেলে, আমি তো ভাবতুম যা পাই তাই খাই হল প্রকৃত প্রেমিকের লক্ষণ । বুঝতেই পারছিস যে আমি একজন আন্তর্জাতিকতাবাদী ।

তিথি আহমেদ বললে, চলো না গো, জানই তো আমার গায়ে সুলতান ইলিয়াস শাহের রক্ত বইছে, সেরকম স্ট্যাটাসের নাগর পাইনি বহুকাল, সবই এলেবেলে রাস্তাছাপ, প্লেবিয়ান কোমরের মিনসে-মরদ, চুমু খাবার টেকনিক জানে না, শোবার শৈলী জানে না, জড়াবার আঙ্গিক জানে না, তাদের কেবল মুঠোয় কনটেন্ট হলেই হয়ে গেল, আমাদের যেন সাধ-আহ্লাদ নেই, উপচে ওঠার ইচ্ছে নেই । সংসার করিনি কেন বলো তো, সংসার মানেই তো পুনরাবৃত্তি, একই পুরুষ, একই দুর্গন্ধ, একই বিছানায় দিন নেই রাত নেই, বাচ্চার পর বাচ্চা বিইয়ে চলো বছর-বছর, ওহ ভাবা যায় না।

তোরা এখন অধ্যাপনা করিস, ছাত্র ঠ্যাঙাস, সকালে টিউশানি রাতে ইশক সমুন্দর ডাল দে অন্দর, তোদের কি বিনা পোশাকে পাগলু ডান্স করা শোভা পায়? আমার কথা বাদ দিচ্ছি, আমি হলুম জমিদার বাড়ির ছেলে, কর্নওয়ালিসের দেয়া অধিকার শরীরে রয়ে গেছে, আইনে থাকুক বা না থাকুক, তাই ভাবছিলুম…। ……..

নগেন দত্ত বললেন, তাই তো চিন্তায় ছিলুম যে তোরা বুড়ি হলি কেমন করে, দাদামশায়ের উইলে লেখা আছে যে আমি যার সঙ্গেই শুই না কেন, তার বয়স উনিশ থেকে কুড়ির ভেতরে আটকে থাকবে ।

আমি উনিশেই আছি গো, তিথি আহমেদ নিজের দুই বুকে হাত রেখে বললে, এ রঙ একেবারে পাকা, তোমার গায়ে বা ধুতি-পাঞ্জাবিতে লাগবে না । সালভাদর দালি তো বলেই ছিলেন তোমাকে যে ‘দি গ্রেট ম্যাসটারবেটর’ হল কালজয়ী পেইনটিং, আমার দেহ জয় করে ফেলেছে কালপ্রবাহকে । তোমার দাদামশায়ের উইল অনুযায়ী আমার পিরিয়ডও মাসে-মাসে হয় না যে পেইনটিং খারাপ হয়ে যাবে ; সেই যে সালভাদর দালি আমার দেহে এঁকে দিলেন, তারপর তো একশো বছর হতে চলল, মাসিক হয়নি, স্যানিটারি প্যাড বেঁধে পেইনটিংটার মাঝখানে প্যাচ বসাতে হয়নি । কালেজে পড়াতে গেলে এর ওপর জিনস আর টপ পরে নিই, যদিও উপাচার্য মশায় বলেছেন যে পেইনটিঙ দেখতে না পেলেও ছাত্ররা পেইনটিঙের নাম শুনে বিপথগামী হয়ে যেতে পারে । আমি উপাচার্য মশায়কে বললুম যে আমার পড়াবার বিষয় হল ‘লিঙ্গ উইথ স্টিকস’, যাকে কালেজ পড়ুয়ারা বলে লিঙ্গুইস্টিকস, তাতে তো তারা বিপথগামী হচ্ছে না, বিশ্বখ্যাত পেইনটিঙ দেখে হবার প্রশ্ন ওঠে না। …….

…..ছন্দরানির সবুজ ফজলি আমের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে নগেন দত্ত বললেন, তোর আম দেখতে-দেখতে মনে পড়ে গেল সাত বছর আগে পালতোলা নৌকোয় তোর সঙ্গে পূর্ণিমার রাতে শোয়ার কথা, আমার ছোঁয়াকাতর অঙ্গ তোকে ভেদ করে ভেতরে গিয়ে থামতেই চাইছিল না, এগিয়েই যাচ্ছিল, যেন কিছু অনুসন্ধান করছে, তখন আমি বুঝতে পারলুম যে তোর ভেতরে গিয়ে আমার প্রাণপুরুষ স্বপ্ন দেখতে আরম্ভ করেছে, অদ্ভুত স্বপ্ন, আজও মনে আছে, মাংসের তৈরি মেশিনের শহর, বাড়িঘরও মাংসের, রাস্তাঘাটও মাংসের, গাছ আর ফুলফলও মাংসের, কতো রঙের মাংস, শুধু মানুষ আর অন্য প্রাণীরা পেতলের তামার রুপোর লোহার আর নানা ধাতুর মিশেলের । আমার অঙ্গ ঘুরে বেড়াতে লাগল ওই মাংসের শহরে, দেখল ধাতুর তৈরি সব মানুষ আর প্রাণীরাই আনন্দ করছে, নাচছে গাইছে মদ খাচ্ছে ভাতরুটি খাচ্ছে, ছাগল-গোরু-শুয়োরের মাংস ধাতুর বলে তাদের ব্লাস্ট ফার্নেসে গলিয়ে গেলাসে আর কাপে ভরে খাচ্ছে । তুই বলতে লাগলি, হে আড়ম্বর আরও ভেতরে এসো, আরও ভেতরে এসো, আরও ভেতরে এসো, কিন্তু তুই আমাকে বলছিলি না, তোর ভেতরে গিয়ে যে স্বপ্ন দেখছিল, তাকে বলছিলি, আমি যদিও ঘুমিয়ে পড়েছিলুম, কিন্তু তোর কথা শুনতে পাচ্ছিলুম, বুঝতে পারছিলুম যে স্বপ্নটা আমি দেখছি না, দেখছে আমার প্রিয় অঙ্গখানা তোর প্রিয় অঙ্গের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী হয়ে ।

হ্যাঁ, এই এক তোমার অস্ত্রখানার চরিত্রেরই দেখেছি তোমার সঙ্গে মিল আছে, স্বপ্ন দেখতে জানে, বেশির ভাগ মিনসে নিজেরাই মেশিন, জানেই না যে তারা যেমন স্বপ্ন দেখে, তেমনই তাদের অঙ্গখানার স্বপ্নের সঙ্গে আমার অঙ্গের স্বপ্নের মিল হওয়া উচিত । তোমাকে বলেছিলুম তো, সেদিন নৌকোয় আমার অঙ্গখানাও একই সঙ্গে স্বপ্ন দেখছিল, ভেসে চলেছি একজন মানুষের ভেতরের নৌকোয় চেপে, লাল রঙের সমুদ্রে সে কি ঢেউ, লাল জলের ঘুর্ণি উঠে এলো আর আমার অঙ্গ সেই লাল ঘুর্ণির সঙ্গে ঘুরতে লাগল, ভাসিয়ে নিয়ে চলল লাল বানভাসিতে আশেপাশের সবকিছু, তারপর আছড়ে লাল জলের সমুদ্রে পড়ে গেল লাল জলের জলস্তম্ভ । আমি ভার্জিন ছিলুম তো, আর সেটাই ছিল আমার প্রথম রাত, তার আগে থেকেই, তোমাকে দেখে পর্যন্ত ভালোবাসতে শুরু করেছিলুম, মনে আছে তোমার, আমি তোমার বুক চাটছিলুম, হাত চাটছিলুম, কোমর চাটছিলুম, মনে হচ্ছিল তোমার পুরোটা চেটে নিজের পাকস্হলিতে ঢুকিয়ে নিই । আমার শরীরের ভেতরে তখন ঘুরে বেড়াচ্ছে তোমার ছেড়ে দেয়া ভয়ংকর সামুদ্রিক জীবরা, হাঙর, তিমি, শুশুক, ড্র্যাগনমাছ, ভ্যামপায়ার স্কুইড, লাল-জেলিফিশ, ব্লবমাছ, কফিনমাছ, আইসোপড, স্টারগেজার, চিমেরা, অক্টোপাস, অ্যাঙ্গলারমাছ, হ্যাচেটমাছ, ব্যারেলচোখো, ভাইপারমাছ, গবলিনমাছ, ওঃ, কতো রক্ত বেরিয়েছিল, যা দেখে তোমার মতন নৈমিত্তিক অভিজ্ঞ মানুষও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলে ।

আসলে তোর ভেতরে ঢুকে আমার স্বপ্নের নদী খুঁজে বেড়াচ্ছিল কুন্দনন্দিনীকে, ডাকছিল তাকে কেঁদে-কেঁদে, তারপর না পেয়ে মুষড়ে পড়েছিল ।

ছন্দরানি বললে, আমি তোমাকে চেয়েছিলুম, তোমাকে পেয়েছিলুম, আজও তোমাকেই চাই, অন্যের সঙ্গে শুলেও চোখ বুজে মনে করি যে তোমার সঙ্গেই শুয়ে আছি, আমার সঙ্গে যা করা হচ্ছে, তা তুমিই করছ । তোমাকে জিইয়ে রেখেছি আমার ভেতরে, প্রতিদিন ক্লায়েন্টরা আমাকে এইভাবে তোমাকে পাইয়ে দ্যায় ।

তিথি আহমেদ বললে, সমস্যা কি জানিস, তিরিশ হাজারিনীর দেশে যারা আসে সকলেই দুঃখি, ভাবে শুলে বুঝি দুঃখু চলে যাবে, অথচ শোবার ব্যাপার তো আনন্দের, আহ্লাদের, মাংসের সঙ্গে মাংসের সংঘাত আর সংঘর্ষের, জন্নতপ্রাপ্তির । এই এক তোমাকে ছাড়া নগেন, কাউকে দেখলুম না যে আমাকে সন্তুষ্ট করতে পারে ।…….

……মন্দিরের নাচিয়েরা এই গানটা গাইতে গাইতে নেচেছিল :

স্মরসমরোচিতবিরচিতবেশা

গলিতকুসুমদরবিলুলিতকেশা

হরিপরিরম্ভণবলিতবিকারা

কুচকলসোপরি তরলিতহারা

বিচলদলকললিতাননচন্দ্রা

তদধরপানরভসকৃতন্দ্রা

চঞ্চলকুণ্ডলললিতকপোলা

মুখরিতরসজঘনগতিলোলা

দমিতবিলোকিতলজ্জিতহসিতা

বহুবিধকূজিত রতিরসসিতা

বিপূলপূলকপৃথুবেপথুভঙ্গা

শ্বসিতনিমিলতবিকসদনঙ্গা

শ্রমজলকণভরসুভগশরীরা

পরিপতিতোরসি রতিরণধীরা……..