কোকোজান – সাদত হাসান মান্টো

›› অনুবাদ  ›› গল্পের অংশ বিশেষ  

অনুবাদঃ এ.বি.এম কামালউদ্দিন শামীম

 

কোকোজান

……দোকানে প্রবেশ করেই এসব মেয়েরা নিজ নিজ বোরখা খুলে এক পাশে রেখে দিত এবং কেনাকাটায় মনোনিবেশ করতো । মান্টো সাহেব, আপনি হয়তো ভাবতে পারেন যে, তারা শরীয়তের বিধি সম্মত পোশাক পরিধান করতো কিন্তু আসলে তা নয় । কিন্তু এখানের মেয়েরা পর্দা করলেও ইউরোপীয় কায়দায় পোশাক পরিধান করে। ছোট করে চুল ছাটা, রঙ্গিন নখ, পায়ের অনেকটা নগ্ন । দোকানে এসে বোরখা খুলে রেখে তারা জিনিসপত্র পছন্দ করতো৷

শাহ সাহেব বললেন, ‘আমি জানি না। এ ব্যাপারে তাকে কখনো জিজ্ঞেস করিনি। কিন্তু আমার ধারণায় সে ছিল অনিন্দ-সুন্দরী। গৌর- বর্ণা । সারাদেহ বোরখায় আবৃত থাকলেও দেহের গঠন বিন্যাস সম্পর্কে ধারণা করা কষ্টকর ছিল না। আমি চোরা-চোখে দেখেছিলাম, সে ছিল যৌবনের আদর্শ সমন্বয়।…..

 

চোখ

….ডাক্তার সাদেক, পাঁচ-ছ’ মিনিট পর্যন্ত তাকে পরীক্ষা করল । তারপর সুইচ অফ করে দিল এবং আলো মেয়েটি কি বুঝল কে জানে, জ্বালিয়ে বলল, বুক অত্যন্ত পরিষ্কার পুরুষ্ট বুকে ওড়না পরিপার্টি করে জড়িয়ে বোরখা খুঁজতে লাগলো ৷……

 

যাও হানিফ, যাও

…..সামিত্রী ছিল খুবই সুন্দরী, তবে তার দেহের গরণ ছিল খুব হাল্‌কা পাতলা। ভাল করে লক্ষ্য করলে বোঝা যায় যে তার পাতলা হওয়াই যথার্থ হয়েছে। যদি সে আরো কিছুটা মোটা হতো তাহলে সৌন্দর্যের ফুল অমন প্রস্ফুটিত মনে হতো না। তার কালো হরিণ-চোখে প্রাকৃতিক সুরমা লাগানো ছিল, মাঝারী ধরনের লম্বাটে, ঘন কালো চুল কোমর পর্যন্ত বিস্তৃত, ছোট দু’টি স্তন। মান্টো সাহেব, আমি তার ভালবাসায় নিজেকে হারিয়ে ফেললাম ৷….

 

মাহমুদা

……মাহমুদার গায়ের রং উজ্জ্বল গৌরবর্ণ। স্লেটের রং-এর মতো কালো চকচকে চুল। মায়াবী আকর্ষণীয় চেহারা । মুস্তাকিমের ধারণা ছিল যে, সে খুব বেশী লম্বা হবে না। মাহমুদা উঠে দাঁড়ালে এর সত্যতা প্রমাণিত হলো ।

সাধারণ পোশাক পরিচ্ছদ। দেহের ওড়না পড়ে গেলে মুস্তাকিম দেখল মাহমুদার বুক বেশ উন্নত এবং মজবুত । ভরাট দেহ, টিকলো নাক, চওড়া ললাট, ছোট ঠোঁট, আর দু’টি চোখ যা সর্বাগ্রে দৃষ্টিগোচর হয় ।…..

 

বিয়ে

……নেশা জমে উঠেছে। উভয়ে আনন্দে ডগমগ করছিল। নেটুর এবং জামিল উভয়ে হাওয়াই ঘোড়ায় সওয়ার হয়েছে । এ ধরনের সওয়ারীদের সাধারণতঃ এমন জনপদে যেতে ইচ্ছে করে যেখানে নগ্নদেহ সুন্দরীদের দেখা পাওয়া যায় ৷ সুন্দরীদের কোমরে হাত দিয়ে তারা সেই ঘোড়ায় আরোহণ করে ভেসে বেড়াতে চায় ।…..

…..জামিলের মন-মগজ তখন সুন্দরী নারীদেহের সাথে একাত্ম হয়ে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর। সে জানতো যে, ব্রথেল-এর কারণে সারা বোম্বেতে বিখ্যাত জায়গায় সে এখন দাঁড়িয়ে আছে। আরামপ্রিয়রা এখানেই ছুটে আসে ৷ শহরের যেসব মেয়ে লুকিয়ে ছাপিয়ে ব্যবসা করে তারা এখানে চলে আসে। এসব জানা থাকায় জামিল নেটুরকে বলল, আমি বলছিলাম কি এখানে মানে এদিকে কোন ছুকরি-টুকরি পাওয়া যায় না ?

নেটুর গ্লাসে মদ ভর্তি করে হেসে বলল, মিষ্টার জামিল, এক নয়, হাজারো হাজারো হাজারো – ।….

….অসংখ্য ব্রথেল, বিশ পচিশটি ঘর খুঁজে দেখা হলো। কোন মেয়েই জামিলের পছন্দ হলো না ৷ সবাই মেক-আপের মোটা আবরণের নীচে লুকিয়ে আছে । জামিল এমন একটা মেয়ে চাচ্ছিল যাকে দেখে মেরামত গৃহের কথা মনে না পড়ে। যাকে দেখে যেন মনে না হয় যে, পলেস্তারা খসে পড়া অট্টালিকায় আনাড়ি হাতে চুন সুরকি লাগানো হয়েছে ।…..

….মেয়েটি পালঙ্কের উপর বসে বলল, আমার নাম তারা ।

জামিল তাকে বিছানায় শুইয়ে কিছুক্ষণ আদর করে বলল, সোডা এবং গ্লাস দরকার।….তিন পেগ পান করার পর জামিল অনুভব করলো যে, তার অবস্থা ভাল হয়ে গেছে। তারাকে চুমু খেয়ে চেটে সে ভাবলো এবার ঘটনা সংক্ষিপ্ত হওয়া উচিত। সে তারাকে বলল, কাপড় খোলো ৷

সব ?

হাঁ, সব ৷

তারা কাপড় খুলে শুয়ে পড়ল । জামিল তারার নগ্ন দেহের প্রতি তাকিয়ে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হলো যে, ভালোই। সঙ্গে সঙ্গে অন্য একটি চিন্তা তার মাথায় ঘুরপাক খেলো। জামিল বিবাহিত। স্ত্রীকে সে দু’তিনবার দেখেছে ৷ সে ভাবলো, আমার স্ত্রীর দেহ কেমন হবে ? সে কি তারার মত একবার বলতেই সব কাপড় খুলে শুয়ে পড়বে ? সে কি তার সাথে ব্রাণ্ডি খাবে ? তার চুল কি ছোট করে কাটা থাকবে ?

হঠাৎ জামিলের বিবেক বোধ জেগে উঠে তাকে জ্বালাতন করতে শুরু করল। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সে সেরে ফেলেছে। শুধু এখন শ্বশুরা- লয়ে গিয়ে বৌ-এর হাত ধরে নিয়ে এলেই হলো । তার কি উচিত একটি বাজারের মেয়েকে বুকে জড়িয়ে আদর করা, তার রূপ সৌন্দর্য উপভোগ করা ৷

জামিল খুবই ক্লান্ত এবং অবসন্ন বোধ করল। ধীরে ধীরে তার চোখ বুজে এলো এবং সে ঘুমিয়ে পড়ল । অল্পক্ষণের মধ্যে তারাও ঘুমিয়ে গেল ।…..

…..জামিল কয়েকবার সামঞ্জস্যহীন উদ্ভট স্বপ্ন দেখল। ঘণ্টা দুয়েক পর একটা ভয়াবহ স্বপ্ন দেখে সে ধড়ফড় করে উঠে বসলো । চোখ কচলে চারদিকে চেয়ে দেখল সে একটা অপরিচিত কামরায় রয়েছে, তার পাশে একটি নগ্ন মেয়ে শুয়ে আছে । কিছুক্ষণ পর সবকিছু তার কাছে স্পষ্ট হতে লাগল ।…..

Leave a Reply