বাৎস্যায়ন অঙ্গুলিমেয় শ্রেষ্ঠ যৌন বিশেষজ্ঞদের অন্যতম। শুধু ভারতে নয়, বিদেশেও তাঁর রচিত “কামসূত্র প্রশংসা অর্জন করেছে।
তাঁর ‘কামসূত্র’ কামকলার অনুপম গ্ৰন্থত বটেই, সঙ্গে সঙ্গে এ’গ্রন্থ প্রাচীন ভারতবর্ষের জনজীবনের যৌন আচারব্যবহার সম্পর্কে পরিচয় প্রদান করে।
এই বিশ্ববিখ্যাত গ্রন্থটির সংক্ষিপ্ত রূপ পৌঁছে দেওয়া হল আপনাদের হাতে।
বিষয় সূচী
(১) ত্রিবর্গ
(২) চৌষট্টি কামকলা
(৩) শয়নকক্ষ এবং রতিসদন
(৪) বিলাসী নাগরিকের দিনচর্যা
(৫) নায়িকার প্রকারভেদ
(৬) নায়ক-নায়িকার প্রকারভেদ
(৭) নায়িকা-বিচার-পদ্মিনী-চিত্রিণী-শঙ্খিনী
(৮) আলিঙ্গন
(৯) চুম্বন
(১০) নখক্ষত
(১১) দন্ত-দংশন
(১২) আসন
(১৩) প্রহার ও সীৎকার
(১৪) বিপরীত রতি
(১৫) মুখমৈথুন
(১৬) রতি-র আরম্ভ ও অন্তের কর্তব্য
(১৭) প্রণয় কলহ
(১৮) বিবাহ
(১৯) নববধূর বিশ্বাস জাগ্রত করা
(২০) গান্ধর্ব বিবাহ
(২১) নায়িকা প্রাপ্তির উপায়
(২২) স্বয়ংবর
(২৩) অসুরাদি বিবাহ
(২৪) গৃহিণীর কর্তব্য
(২৫) পুনর্ভু
(২৬) অন্তঃপুর
(২৭) পরদারগমন
(২৮) দূতীর কাজ
(২৯) রাজাগণের বিলাস
(৩০) অন্তঃপুরের বিলাস
(৩১) বেশ্যাগমন
(৩২) ওষুধ এবং শৃঙ্গার-প্রসাধন-বাজীকরণ
১. ত্রিবর্গ
আচার্য বাৎস্যায়ন রচিত “কামসূত্র’ কাম-বিজ্ঞান বিষয়ে একটি আশ্চর্যজনক মহান গ্রন্থ। “কাম”-এর মত একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে লেখকের কত বিস্তৃত অনুভব ও অধ্যয়ন ছিল, তা শুধু এই গ্রন্থটি পড়ে শেষ করার পরেই বােঝা যায় – এমনও মনে হয়, যেন এই গ্রন্থের লেখক কোন দৈৰী প্রেরণার বশবর্তী হয়েই গ্রন্থটি রচনা করেছিলেন।
কামসূত্রে’ ছত্রিশ অধ্যায়, চৌষট্টি প্রকারণ, সাত অধিকরণ ও একহাজার দু’শ পঞ্চাশটি শ্লোক আছে। অনুমান করা হয় “কামসূত্র’ রচনার কাজটি সম্পন্ন হয় প্রথম ও ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যবর্তী কোন এক সময়।
ব্রণ্মা-পুত্র মনু ধর্ম বিষয়ে পুস্তক রচনা করেছেন। দেবগুরু বৃহম্পতি রচনা করেন “অর্থশাস্ত্র। আর দেবাদিদেব মহাদেবের শিষ্য নন্দী এক হাজার অধ্যায় বিশিষ্ট কামসূত্র” গ্রন্থ রচনা করেন।
এর পরে শ্বেতকেতু, আচার্য দত্তক স্বর্ণনাভ, ঘােটকমুখ, গােণিকাপুত্র ও কুচুমার প্রমুখ আচার্য কামশাস্ত্র বিষয়ক বিভিন্ন পুস্তক রচনা করেন আচার্য বাৎস্যায়ন এই সমস্ত গ্রন্থের সার সংগ্রহ করে কামসূত্র’ গ্রন্থটি রচনা করেন।
গ্ৰস্থারম্ভে আচার্য বাৎস্যায়ন মঙ্গলাচরণ করেছেন। মঙ্গলাচরণে ধর্ম, অর্থ ও কাম–এই ত্রিবর্গের প্রতি প্রণাম জানিয়েছেন। ধর্ম মানবজীবনের অভিন্ন অঙ্গ। শাস্ত্র-লিখিত বিধি অনুসারে ধর্মাচরণ করলে সুখলাভ হয়, ঈশ্বর প্রসন্ন হন এবং মানুষ ইহলােক ও পরলােক – সর্বত্রই পূজিত হয়, ধর্ম সুখদাতাও বটে, আবার ধনের রক্ষকও বটে! ধর্ম মহান এবং এর থেকে মােক্ষ লাভ ঘটে। ধর্মবিহীন কাম ও অর্থ নিষ্প্রয়ােজন সিদ্ধ হয়।
অর্থ-ধন, সম্পত্তি, সোনা, ও জমিজমা প্রাপ্ত হবার অবলম্বন। অর্থ অর্থাৎ টাকাপয়সা দ্বারাই এই সব বস্তুর রক্ষণাবেক্ষণ ও বৃদ্ধি ঘটে। অর্থ লাভ ঘটে রাজাধিকারীদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন ও বাণিজ্যকলায় নিপূণতার দ্বারা। অর্থপ্রাপ্তি গৃহস্থ জীবনের ধর্মাচরণগুলি পালন করার জন্য অত্যাবশ্যক।
কাম-শব্দ, রূপ, রস, স্পর্শ এবং গন্ধের মাধ্যমে প্রাপ্ত ইন্দ্রিয় সুখের সাধন। ইন্দ্রিয় সুখের লালসা সৃপ্তির জন্য গৃহস্থ জীবন অতিআবশ্যক। এতে সমাজের রক্ষা, বৃদ্ধি ও উন্নতি হয়। কাম বাসনা যদি অতৃপ্ত থাকে, তাহলে সমাজে দুর্নীতি, দুরাচার, অশান্তি ও ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়ে। মানব জীবনের দুটি মার্গ, প্রবৃত্তি এবং নিবৃত্তি। নিবৃত্তি মার্গ অত্যন্ত কষ্টসাধ্য, এইজনা গৃহস্থ-আশ্রমের মাধ্যমে প্রবৃত্তি মার্গই প্রশস্ত ও সুগম। সংসারে সুখলাভের দুটি মাত্র প্রধান অবলম্বন-ভগবৎ পূজা ও তার প্রাণীদের সেবা করা। এবং সদাচারিণী, সুন্দরী ও সুযােগ্য পত্নীর প্রেম ও সহবাস।
এইভাবেই মানুষের ধর্ম, অর্থ এবং কাম এই ত্রিবর্গের বিচারপূর্বক সেবন করা উচিত। শুধুমাত্র ঈশ্বরােপাসনা করা এবং কাম ও অর্থ ত্যাগ করা—সাধারণ মানুষের পক্ষে অত্যন্ত কঠিন। কেবলমাত্র আর্থিক উন্নতি মানুষকে সদগুণহীন, লােভী ও স্বার্থপর করে তােলে। শুধুমাত্র কাম-তুষ্টি হলে মানুষ ও পশুর মধ্যে কোন তফাৎ থাকে না। কাম” হল ধর্ম ও অর্থের সাধক, বাধক নয়। যদি “কাম” ধর্মহীন ও অর্থসম্পদহীন হয়ে পড়ে, তাহলে কাম ত্যাগ করাই ভাল।
বাল্যাবস্থা এবং কৌমার্য-কালে ব্রহ্মচর্য অবলম্বন করে বিদ্যা অধ্যয়ন করা উচিত, যাতে ভবিষ্যতে অর্থ-উপার্জনের সুবিধা হয়। যুবাবস্থায় কামের সঞ্চয় ও উপভােগ কর্তব্য। বৃদ্ধাবস্থায় ধর্ম ও মােক্ষের অনুষ্ঠান করা উচিত।
জীবনকে ক্ষণভঙ্গুর জেনে যথাসাধ্য ধর্ম, অর্থ ও কামের উপযােগ (ব্যবহার) করা উচিত। কিন্তু কুমার অবস্থায় ভুল করেও রতিসুখে লিপ্ত হওয়া উচিত নয়। প্রত্যেক আশ্রমের (যেমন গৃহস্থ আশ্রম, ব্রহ্মচর্য আশ্রম, বাণপ্রস্থাশ্রম ও সন্ন্যাসশ্রম) পালনীয় ধর্ম পৃথক পৃথক। এক আশ্রমের ধর্মকৃত্যগুলি ভালভাবে পালন করার পরেই অন্য আশ্রমের ধর্ম অবলম্বন করা কর্তব্য।
কামসুত্রের প্রধান বিষয়বস্তু যদিও কাম সম্পৰ্কীয় জ্ঞান পরিবেশন করা, কিন্তু যেহেতু কামের সঙ্গে ধর্ম ও অর্থের গভীর সম্পর্ক রয়েছে, তাই গ্রন্থকার আচার্য সেসব বিষয়েরও ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র-প্রতেকেরই কর্তব্য হল পবিত্র মন–বচন ও শুদ্ধাচারিণী স্বজাতীয় কন্যা বিবাহ করা। এতে ধর্ম, অর্থ এবং সাচ্চা রতিসুখ লাভ হয়।
মানুষের কর্তব্য হল ও নিজের জীবনকে চার আশ্রমে বিভক্ত করে। ধর্ম, অর্থ ও কামকে এমনভাবে অর্জন ও উপভােগ করা যাতে এরা পরম্পর-সম্পর্কিত হয়। একে অন্যের বাধক না হয়। ধর্ম, অর্থ ও কাম–এই ত্রিবণের পারস্পরিক সমম্বয় ও সামঞ্জস্য পরম আবশ্যক।
২. চৌষট্টি কামকলা
যুবকের কর্তব্য হল ব্রহ্মচর্য ধারণ করে অবকাশ সময়ে চৌষট্টি কাম কলা অধ্যয়ন করা।
কুমারী কন্যার গৃহে বসেই কামশাস্ত্র পড়া প্রয়ােজন এবং বিবাহের পরে স্বামীর ইচ্ছানুসারে রতিশাস্ত্র পড়া কর্তব্য।
কুমারী যুবতীর একান্তে চৌষট্টি কামকলা অভ্যাস করা উচিত। এক্ষেত্রে ধাই-মায়ের বিবাহিত কন্যা, সখী, সম-অবস্থার মাসী, বিশ্বস্ত বৃদ্ধা দাসী অথবা বড় বােনের সাহায্য নেয়া যেতে পারে।
নিম্নলিখিত চোষট্টি কলা শরীর ও মনকে আনন্দে ভরপুর করে। এবং জীবনােপযােগী হয় : ১. সংগীত ২. বাদ্য ৩. নৃত্য ৪. চিত্রকলা ৫. ভূর্জারি পত্রের তিলক রচনা ৬. দেবমন্দিরে চাল ও ফুলের সাজসজ্জা ও আলপনা দেয়া ৭. বাসগৃহে পুষ্পসজ্জা রচনা ৮. দাত, বস্ত্র এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ কুক্কুমে রাঙানাে ৯. গ্রীষ্মকালে পুষ্প শয্যা ও ভূমিকে সাজান ১০. ঋতু অনুসারে শয্যা সাজান ১১. জল- তরঙ্গ বানানাে ১২. জলনক্রীড়া, সাঁতার, নিমজ্জমান ব্যক্তিকে বাঁচান ১৩. মারন, উচাটন, বশীকরণ মন্ত্রাদির প্রয়ােগ জানা ১৪. পূজন ও শৃঙ্গারের জন্য পুষ্পহার রচনা ১৫. পুষ্পের শিরােভূষণ তৈরি করা ১৬. দেশ ও যুগের রীতি অনুযায়ী বস্ত্র, ভূষণ এবং পুষ্পমালা পরিধানের বিধি ১৭. হাতীর দাঁত ও শাঁখের কাণের দুল বানান, কান ও কপাল চন্দন, কুঙ্কুম ও কস্তুরী দিয়ে সুশােভিত করা ১৮, নানা প্রকার ধূপধুনা, তেল এবং সুগন্ধী দ্রব্য প্রস্তুত করা ১৯, অলঙ্কার তৈরির ও পরার কলাকৌশল ২০, ইন্দ্রজাল ২১. রাগস সৌন্দর্য ইত্যাদি বৃদ্ধি করা ২২. হাত সাফাই ২৩. রন্ধন-বিদ্যা ২৪. মদ, রস, ফলের রসের মদ প্রস্তুতি ২৫. সেলাই ফোড়াই ২৬. বাজিকরের খেলা ২৭. বীণা, ডমরু বাজান ২৮. ধাঁধা সমাধান ২৯. প্রতিমালা ৩০. তর্ক-বিতর্কে কঠিন শব্দ-প্রয়ােগ ৩১. পুস্তক অধ্যয়ন ৩২. কাহিনী, নাটক ইত্যাদি শৃঙ্গার রসের জ্ঞান ৩৩. সমস্যা সমাধান ৩৪. বেত ও কুশের চেয়ার, আসন, চাটাই বানান ৩৫. কোন বস্তু পরিষ্কার করা, বাড়ান-কমানাে, ধাতু ও কাঠের অপদ্রব্য বানান ৩৬. ছুতােড় মিস্ত্রীর কাজ ৩৭. বাস্তু-বিদ্যা ৩৮. রত্ন বিচার ৩৯. ধাতু-বিচার ৪০. মণিমাণিক্যের গুণ বিচার ও প্রয়ােগ কৌশল ৪১. পশুপাখী ধরার কৌশল ৪২. ষাঁড়, মুর্গী লড়াই ৪৩. ময়না ইত্যাদি পাখিকে বুলি শেখানাে ৪৪. মালিশ ও কেশ-মর্দন ৪৫. সাংকেতিক গুপ্তভাষা বলা ৪৬. সাংকেতিক ভাষা লেখা ও বােঝা ৪৭. অন্য প্রদেশের ভাষা জ্ঞান ৪৮. ফুল দিয়ে রথ সাজান ৪৯. শুভাশুভ ভবিষ্যৎ কথন ৫০. বায়ু যান নির্মাণ ৫১. স্মরণ-শক্তির বিধি ৫২. খেলা ও তর্ক বিতর্কের জন্য পড়াশুনা ৫৩. অন্যের পড়া বিষয় দ্রুত পুনরাবৃত্তি করার ক্ষমতা। ৫৪. কাব্য-রচনা ৫৫. শব্দ জ্ঞান ৫৬. ছল করার জন্য কণ্ঠস্বর ও পােশাক বদলান ৫৭. রসশাস্ত্র ও অলঙ্কারান ৫৮. খােলা গুপ্ত অঙ্গ আবৃত করা ৫৯. জুয়া খেলা ৬০. পাসা খেলা ৬১. বল, পুতুল ইত্যাদি খেলার জিনিস বানান ৬২. আচার-শাস্ত্র ৬৩. শাস্ত্র-বিদ্যা ৬৪. ব্যায়াম এবং মৃগয়ায় দক্ষতা।
৩. শয়নকক্ষ এবং রতিসদন
গৃহস্থ জীবনে ধন অত্যন্ত আবশ্যক। তাই প্রত্যেক যুবকের বিদ্যাধ্যয়নের পরে ধনােপার্জন করা হবে এবং গৃহাস্থাশ্রমে প্রবেশ করা উচিত।
গার্হস্থ্য জীবনযাত্রার জন্য গৃহের প্রয়োজন অপরিসীম। গৃহ সেখানেই নির্মাণ করা উচিত, যেখানে জীবিকা অর্জনের সুবিধা আছে। এবং নিজস্ব বিদ্যা ও কল সম্মানিত হবার উজ্জ্বল সম্ভাবনা আছে। গৃহস্থলী হওয়া উচিত সুরক্ষিত এবং সামাজিক জীবনের অনুকুল। কাছাকাছি কোন সরােবর, বাগান, থাকা বাঞ্ছনীয়। বাড়িতে প্রত্যেক কাজের জন্য আলাদা কোঠা থাকা দরকার। শয়নের জন্য দুটি করু-একটি ঘুমােনর জন্য, অন্যটি রতিক্রীড়ার জন্য। শয্যা দুটি ঘরেই আলাদা আলাদা হবে।
রতিসদন বিশেষ শােভাযুক্ত এবং শৃঙ্গারপূর্ণ হওয়া প্রয়ােজন। শয্যায় শিয়রের দিকে একটি কুশ-আসন, এবং কাছেই একটি ছােট বেদী থাকবে, বেদীর উপরে রতিকালে উপভােগের জন্য চন্দন, কুঙ্কুম, পুষ্পমালা, গন্ধপাত্র, ঘাম শুষ্ক করার দ্রব্য, দূষিত বায়ু দূর করার জন্য মাতুলুংগের ছাল এবং পান রাখা থাকবে। এছাড়া বিলাসকক্ষে থাকবে পিকদানি, খুঁটিতে বীণা, চিত্রফলক, চিত্র বানানর সামগ্রী, শৃঙ্গার সাহিত্য এবং কুরংটক পুষ্পের মালা যা আলিঙ্গনের চাপে নষ্ট হয়।
বিছানার কাছে ঘরের মেঝেতে একটি গােল আসন বিছানাে থাকবে, যাতে বালিশ থাকবে ঠেসান দিয়ে বসে পাশা খেলার জন্য। শয়নকক্ষের কাছের বাগানে লতা-আচ্ছাদিত দোলনা-শয্যা থাকবে। যার উপর প্রেমাস্পদরী রম্যক্রীড়া করতে পারে। কাছেই লতা-গুল্পপুষ্পে আচ্ছাদিত বেদিকা থাকবে যার উপরে মদিরা ইত্যাদি সামগ্রী থাকে।
রতি বিলাস-ক্রীড়ার জন্য কোমল ও পরিষ্কার শয্যা প্রয়ােজন। চারপাশে মনােরম প্রাকৃতিক পরিবেশ থাকবে, চাদিনী রাতে শীতল সমীর প্রবাহিত হবে, পাখির কুজন-সঙ্গীত শােনা যাবে। তাম্বুল (সুপারি), মদিরা, পুষ্পমালা, সুগন্ধিত দ্রব্যাদি, উত্তম বস্ত্র এবং নবযৌবনা কামিনীর উপস্থিতি—এ সমস্তই কামােদ্দীপনা উৎপন্ন করে।
৪. বিলাসী নাগরিকের দিনচর্যা
নাগরিকের কর্তব্য – প্রত্যহ সকালে শৌচাদি করে, দাঁত মেজে, চন্দন-কুঙ্কুমের প্রলেপ লাগিয়ে পুষ্পমালা পরিধান করা, ঠোট লাক্ষারসে রাঙিয়ে, সুরভিত পানি খেয়ে অর্থ ও কামের সম্পাদনে প্রবৃত্ত হওয়া।
প্রতিদিন স্নান, একদিন অন্তর অঙ্গমর্দন দু’দিন অন্তর জয় জল বুদবুদ লাগানো, চারদিন বাদে বাদে দাড়ি মােছ কাটানাে। পাঁচ-ছয়দিন বাদে বাদে গুপ্তস্থানের চুল কাটা বিলাসী নাগরিকের কর্তব্য। বগলের ঘাম সব সময় পুছে ফেলা উচিত। দ্বিপ্রহরের পূর্বে মধ্যাহ্ ভােজন। এবং সন্ধ্যাকালে ভােজন করা কর্তব্য। ভােজনের ঠিক পরে ভােলা ময়নাকে সুন্দর বুলি শেখানাে, তিতির, মুর্গীর লড়াই করান। বিভিন্ন কলা ও ক্রীড়া করে চিত্তবিনােদন করা এবং চাকর-বাকর ও বিদূষকদের কাজকর্ম তদারক করা উচিত। গ্রীষ্মকালে দিনের বেলা শােওয়া দোষের নয়। – দিনের তৃতীয় প্রহরে বস্ত্র ও অলঙ্কার পরিধান করে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে বিনােদন, মনােরঞ্জন এবং আমােদ-ক্রীড়া করা বিধেয়। সন্ধ্যাকালে গান-বাজনা করে আনন্দ করা বাঞ্ছনীয়।
বিলাসী পুরুষ এর পরে রতিসূদনকে সাজিয়ে নায়িকার প্রতীক্ষা করেন। নায়িকাকে ডেকে আনার জন্য দূতী পাঠান বা নিজেই তাকে ডেকে আনেন। আগন্তুক নায়িকা বা নায়িকাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে। তাদের আপ্যায়িত করেন। এই কার্যক্রম নিজের স্ত্রীর জন্য নয়, বরং অভিসারিকা রমণীদের জন্য।
দেবপূজার উদ্দেশ্যে ব্যক্তিগণকে একত্রিত করে যাত্রা করা। বিদ্বানদের সঙ্গে আনন্দ করার জন্য তর্ক-বিতর্ক করা, মদ্য ও অন্যান্য মাদক দ্রব্য সেবন করা, বাগানে ভ্রমণ করা এবং বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে মনােরঞ্জন করা—এই পাঁচ প্রকার কার্য নাগরিকের সম-অবস্থার মানুষ ও বন্ধুদের সঙ্গে করা উচিত।
নাগরিকের প্রধান কর্তব্য : বহিরাগত শিষ্ট ব্যক্তিদের যথাসাধ্য আদর-যত্ন করা।
৫. নায়িকার প্রকারভেদ
বিষয় ভোগের যােগ্য তিন প্রকার নায়িকা হয়ে থাকে-কন্যা, পুনর্ভ এবং বেশ্যা। সবর্ণ কন্যা পুত্রফলদায়িনী হয়, অতএব তাকেই সর্বশ্রেষ্ঠ মেনে নেওয়া হয়েছে। অসবর্ণ নায়িকা মধ্যম নায়িকা। কেননা সে শুধুমাত্র সুখদায়িনী হয়, তার সন্তান ধর্মকর্মের যােগ্য নয়। পুনর্ভ স্ত্রী তাকে বলা হয় যার পতিবিয়োগ ঘটেছে, অথবা যে স্বামীর জীবদ্দশাতেই অন্য পুরুষের সঙ্গে মিলিত হয়। পুনর্ভ দুই প্রকার হয়-ক্ষতযােনি ও অক্ষতযােনি ক্ষতযােনি বিধবাকে গ্রহণ করা অনুচিত। কিন্তু অক্ষতখােনি বিধবা বিবাহের যােগ্য। এই স্ত্রী মধ্যম নায়িকা হিসেবে গণ্য। বেশ্যা তৃতীয় নায়িকা। সে সবচেয়ে অধম এবং একে ত্যাগ করাই সঙ্গত। বিশেষ অবস্থায় অন্যের বিবাহিতা স্ত্রী চতুর্থ শ্রেণীর নায়িকা বলে গণ্য হতে পারে-আচার্য গােণিকাপুত্রর এই অভিমত।
ঐ বিশেষ অবস্থাগুলি নিম্নলিখিত রূপ :
যখন পুরুষ জানতে পারে যে অমুক ব্যক্তির স্ত্রী ব্যাভিচারিণী, তখনই তাকে প্রীতি করতে পারে, কেননা ঐ স্ত্রীর সতীত্ব অন্য পুরুষরা অনেক আগেই নষ্ট করেছে।
যখন কোন পুরুষ জানতে পারে অমুকু ব্যভিচারিণী স্ত্রীর স্বামী অত্যন্ত প্রভাবশালী এবং আমার শত্রুর মিত্র এবং সে স্ত্রীর বশীভূত। এমন পরিস্থিতিতে ঐ ব্যভিচারিণী স্ত্রী নিজের স্বামীটিকে আমার শত্রুর থেকে দূরে সরিয়ে দেবে, যদি আমি ব্যভিচারিণী স্ত্রীকে আমার প্রেমবশ করতে পারি।
অমুক পুরুষ আমার বন্ধু ছিল। এখন আমার প্রতি বিরক্ত। তার স্ত্রী আমার সঙ্গে প্রেম করে তার স্বামীকে আবার বন্ধু করে দেবে। যদি কোন স্ত্রীলােকের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে নিজের এবং বন্ধুদের ভাল হয় এবং শত্রু বিনাশ হয়, তবে তার সঙ্গে ভােগসুখ করলে কোন ক্ষতি নেই।
অমুক স্ত্রীর সঙ্গে মৈত্রী কর ওর স্বামীকে মারতে পারব এবং নিজের হারানাে সম্পত্তি, যা ওর স্বামী কেড়ে নিয়েছিল, তা আবার ফিরে পাব।
ধনপ্রাপ্তির জন্য স্ত্রীলােকের সঙ্গে মৈত্রী করা কোন খারাপ কথা নয়। আমি ধনহীন, আমার জীবিকা নির্বাহের কোন ব্যবস্থা নেই, অতএব ঐ স্ত্রীরলােকের সঙ্গে যৌন সংসর্গ করে আমি সহজেই ধনলাভ করতে পারব।
এই স্ত্রীলােকটি আমাকে ভালবাসে, এর প্রস্তাব যদি আমি অস্বীকার করি, তবে হয়ত এ আমার অপমান করে আমাকে ধ্বংস করবে। তাই এমন নারীর সঙ্গে বিষয়ভােগ করা পাপ নয়।
এমন স্ত্রীতে অনুরক্ত হওয়া পাপ নয় যে নিজের স্বামীর সঙ্গে আমার দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করবে এবং তাকে আমার শত্রুদের সঙ্গে মিলিয়ে দেবে।
এই স্ত্রীলােকটির স্বামী আমার স্ত্রীকে নষ্ট করেছে। অতএব আমিও এই স্ত্রীলােকটিকে নষ্ট করে ওঁর স্বামীর ব্যবহারের প্রতিশােধ নেব। এরকম পরদায়া সম্ভোগে কোন দোষ নেই বলেই মেনে নেয়া হয়েছে। যদি কোন রমণীর সহায়তায় দেশের শত্রুকে বিতাড়ন করতে সফল হই, তবে এমন নারীর সঙ্গে সম্বন্ধ রাখায় কোন অন্যায় নেই।
যে সুন্দরীকে আমি কামনা করি, সে এই শরীর অধীন, সূতরাং এর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে আমি আমার মন-পসন্দ রমণীকে পেতে পারি।
আমার শত্রু এই স্ত্রীলােকটির সঙ্গে সম্পর্ক রাখে। এই স্ত্রীলােকটির। সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা করে আমি আমার শত্রু নিধন করতে পারি।
কিন্তু বিনা কারণে কেবল বিষয় ভােগের উদ্দেশ্যে পরস্ত্রীর সঙ্গে সম্ভোগ করার দুঃসাহস কখনই করা উচিত না।
বিধবা হচ্ছে পঞ্চম প্রকারের নায়িকা যে নায়ককে তার আকাঙ্ক্ষিত নায়িকার সঙ্গে মিলন করিয়ে দেয়।
ইতস্তত: ভ্রমণকারী সন্ন্যাসিনী ষষ্ঠ নায়িকা, যে নায়কের কার্যে সফলতা পৌঁছে দেয় এবং নিজেও যৌন সম্বন্ধ স্থাপন করতে পারে।
বেশ্যার অক্ষত যােনি কন্যা বা যুবতী দাসী সপ্তম প্রকারের নায়িকা।
যৌবন মদমত্ত কুলাঙ্গণা অষ্টম প্রকারের নায়িকা বলে গণ্য।
নিম্নলিখিত প্রকারের নারীদের সঙ্গে সম্পর্ক বর্জনীয় – কুষ্ঠ রােগগ্রস্তা, পাগল, পতিতা, বৃদ্ধা, অত্যন্ত কালাে বা অত্যন্ত সাদা, যার শরীর থেকে দুর্গন্ধ আসে, যে অন্যপুরুষের সঙ্গে সংসর্গ রাখে। যে সংগম কালে মুখ ফিরিয়ে নেয়, পত্নীর সহেলী, সন্ন্যাসিনী, সম্বন্ধিগণ, বন্ধু, আচার্য এবং রাজমহিষীগণ।
৬. নায়ক-নায়িকার প্রকার ভেদ
জননেন্দ্রিয়ের দৈর্ঘ্য ও স্থূলতা অনুসারে শশ, বৃষ এবং অশ্ব নামক তিন শ্রেণীর পুরুষ রয়েছে বলে আচার্যর মত। মধুরভাষী, সুন্দর, সমান দন্তসারি বিশিষ্ট, প্রসন্নচিত্ত, গােলমুখমণ্ডল যুক্ত এবং সুগন্ধী বীর্যবান শশ জাতীয় নায়ক হয়।এর চক্ষু আয়ত, রক্তিম, শরীর সুডৌল, আঙুল সুন্দর ও লাল, চুল নরম এবং গলা লম্বা হয়ে থাকে। এরা কম খায় ও কম রতিক্রিয়া করে।
বৃষ
এই শ্রেণীর নায়কের ললাট উঁচু ও প্রশস্ত, গলা ও পেট মােটা, দেহু গৌরবর্ণ, শরীর মােটা, বাহু লম্বা ও মােটা, হাত-পা লাল, চক্ষু রক্তবর্ণ এবং জননেন্দ্রিয় নয় আঙুল লম্বা হয়। এর সিংহের সমান গতি। এরা মধুরভাধী হয়। বেশি ঘুমায়। লজ্জা কম হয়, আগুনের মত তেজস্বী এবং প্রকৃতি কফযুক্ত হয়।
অশ্ব
যার মুখ, কান, কপাল ও ঠোট লম্বা, চুল ঘন, আঙুল লম্বা, দৃষ্টি এবং চালচলন চপলতাপূর্ণ এবং চঞ্চল, জঙ্ঘা ও বাহু মােটা, নখ সুন্দর, বড় বড় চোখ, সাহসী হৃদয় এব রতি-তে প্রচণ্ড, যার মাখনের সমান গাঢ় ও সুগন্ধিত বীর্য এবং যার জননেন্দ্রিয় বার আঙুল লম্বা, তাকে অশ্বজাতীয় পুরুত্ব বলা হয়।
যােনির ছােট-বড় আকার ও গভীরতা অনুসারে মৃগী, বড়বা ও হস্তিনী—এই তিন প্রকার নায়িকা হয়ে থাকে।
মৃগী
ছােট উদর, ছোট নাক, কোকড়ান চুল, বিশাল নিতম্ব, সুন্দর চোখ, রক্তিম অধর, নরম হাত-পা, সাধারণ উন্নত স্তন, ক্ষীণ শরীর, সুন্দর কেশ, ঈর্ষা ভয়ে ভীত, চঞ্চল হৃদয়, অল্পাহারী স্ত্রী মৃগী নায়িকা বলে গণ্য। এদের যােনি ছয় আঙুল গভীর হয়। আলস্য-জড়ানাে মধুর বুলি বলে এবং প্রেম করতে জানে।
বড়বা
এর মুখ সুন্দর, চুল সােজা, ঘন এবং চিকন, চোখ চঞ্চল ও পদ্মফুলের মত। স্তন পুরুষ্টু ও শক্ত, উদর ছােট, সুন্দর, মােটা হাত, জহ্বা পুষ্ট ও বিশাল, এবং প্রকৃতি বাত-কফ যুক্ত হয়। এই নায়িকা মধুর বুলি বলে, শয়ন ও ভােজনে বেশি আগ্রহ। রতিকলায় নিপুণ হয় এবং এর যােনি নয় আঙুল এভীর হয়।
হস্তিনী
এর দেহ মােটা, দাঁত বড় এবং বর্ণ লাল হয়, শরীর সুন্দর হয়। খুব বাচাল ও চঞ্চল হয়, এর রজ থেকে হাতীর মদের সমান গন্ধ আসে। এর গাল, কপাল এবং ঠোট প্রশস্ত হয় কেশ লম্বা ও ঘন হয়। হাতীর মত গম্ভীর হয় গলার স্বর। স্বভাবে কামুক ও ক্রোধী হয়। চোখের পাতা ভারী এবং এর যােনি বার আঙুল হয়। পরপুরুষ দ্বারা সম্ভোগ করিয়েও সেই পাপকর্ম গোেপন করে। এরা অধিক ঝাল-মশলা যুক্ত খাবার পছন্দ করে। সাজসজ্জা করে না। শরীরে লােম থাকে। খারাপ ঢঙে চলাফেরা করে এবং রতিকালে অনেক চেষ্টায় বশীভূত হয়। সর্বদা স্বামী সঙ্গ চায়। পরপুরুষ ভােগের বাসনা রাখে, সবসময়। কামানলে জ্বলতে থাকে।
সমভাবাপন্ন স্ত্রী পুরুষের সম্বন্ধকে সমরত বলে এটা তিন প্রকার হয়-মৃগীর সঙ্গে শশ (খরগােশ), বড়বা বৃষের সঙ্গে এবং হস্তিনী অশ্বের সঙ্গে। এছাড়া অন্যরকম সম্বন্ধকে বিষমরত বলে। সমস্ত প্রকারের ভােগের মধ্যে সমরত শ্রেষ্ঠ।
৭. নায়িকা বিচার
কামশাস্ত্রজ্ঞরা বার থেকে ষােল বছর বয়সী কন্যাকে বালা বলেন; এর পরে তিরিশ বছর বয়স পর্যন্ত নারীকে তরুনী বলে। তিরিশ থেকে পঞ্চাশ বছর বয়স পর্যন্ত স্ত্রীলােককে প্রৌঢ়া বলে। পঞ্চাশাের্ধ মহিলা বৃদ্ধা হয়ে যায় এবং তাই তারা সম্ভোগের ক্ষেত্রে ত্যাজ্য।
বালা বা মুগ্ধা
বালা লজ্জাবশত প্রকাশ্যে কামরত হয় না। এরা অন্ধকারে বেশি রতিসুখ দেয়। বালা রতিকালে বাধা দেয়, সংকোচ প্রকাশ করে এবং অভিমান করে। কিন্তু এর মান চিরস্থায়ী হয় না।
মুগ্ধা নায়িকা আস্তে আস্তে শিথিল পা মাটিতে রাখে, অনর্গল হাসে , ধীরে ধীরে অল্প কথা বলে। সামান্য কথায় অদ্ভুত লজ্জা পেয়ে স্তব্ধ হয়ে যায়। স্বামীর কাছে যেতে ভয় পায়, সংকুচিত হয়, কিন্তু মনে মনে প্রিয়তম স্বামীর নামই জপ করে। এ বিপরীত ভাবে প্রিয়তমের মনে অনুরাগ উৎপন্ন করে। স্বামীর সামনে দৃষ্টি অবনত করে, কথা বলে না। বিছানাতে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পড়ে এবং স্বামী সম্ভোগ আলিঙ্গন করলে ভয়ে কাঁপতে থাকে।
সখীরা খুব জোরভার করলে তবেই রতিশয্যায় যায় এবং কাম সম্পৰ্কীয় কথা শুনে কখন হাসে, কখন কঁাদে।
শুরুতে স্বামীকে দেখে চোখ ঘুরিয়ে নেয়, গদগদ অস্পষ্ট স্বরে উত্তর দেয়। কিন্তু ঘনিষ্ঠ পরিচয় হলে তখন কটাক্ষ করে, মৃদু মৃদু হাসে, অভিমান করে। কামের অঙ্কুরােদগম এখান থেকেই শুরু হয়। কখন অঙ্গ দেখায়, কখন লুকায় আর ভয়ে ভয়ে, মৃদু মৃদু হেসে স্বামীর কাছে যায়।
রতিসদনে যেতে যেতে বালা নূপুর খুলে ফেলে, কটিভূষণ শক্ত করে বেঁধে নেয়, যাতে শব্দ না হয়।
রতিক্রীড়ায় তার মাথার চুল এলােমেলাে হয়ে যায়। কটিভুষণ খসে পড়ে, স্তনের উপর ঝুলতে থাকা হার দুমড়ে মুচড়ে যায়। লজ্জাবশত সে নিজের স্তনযুগল এবং জঞ্জা ঢেকে ফেলে এবং ভয়ভীত হয়ে এদিক-ওদিক তাকায়। তার এই রূপ অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর হয়ে থাকে।
কামক্রীড়ায় পতির ছলাকলায় বিরক্ত হয়ে সে নিজেই আগ বাড়িয়ে সাহস করে পুরুষের সমান আচরণ করে, কিন্তু যখনই সক্রিয় হবার চেষ্টা করে, তখনই অবসন্ন হয়ে পড়ে, জঙ্ঘা শিথিল হয়ে আসে এবং লজ্জাবশে স্বামীর বুকে মুখ লুকায়। পুরুষের মত শৌর্য নারীর কী করে হবে।
তরুণী
তরুণীর দৃষ্টি হর্ষোৎফুল্ল হয়। এর চাল চালন হয় খামখেয়ালি। আর এ সবসময় মদোম্মত্ত হয়। হৃদয়ে সজ্জা আর রতিলালসা সমপরিমাণে প্রবল থাকে। এর পীনােন্নত স্তন অত্যন্ত মাদক হয়। কাপড় ঠিক করার ছলে প্রিয়তমাকে নিজের কোময় ও স্তন দেখায়। প্রিয়তমের সঙ্গে থাকতে পারলে নিজের সৌভাগ্য বলে মনে করে। এবং তার গুণকীর্তন করে সখীদের কাছে। পতিকে দেখলে হাসে, আলসেপনা করে, এবং তির্যক দৃষ্টিতে তাকায়। প্রথমে স্বামীর সম্ভোগ চেষ্টাকে তিরস্কার করে, কিন্তু পরে তাতেই তন্ময় হয়ে যায়। এবং বিপরীত রতি দ্বারা আপন হৃদয়ের দাউ দাউ কামাগ্নি শান্ত করে। রতি ক্রিয়ায় এ অপূর্ব কামকলার পরিচয় দেয়, মধুর সীৎকার করে। সম্ভোগানন্দে কখন এর চোখ খুলে যায়, কখন বন্ধ হয়ে যায়। হাসির গমকে ফেটে পড়ে, খেমে থেমে কথা বলে, কটাক্ষ করে এবং স্বামীর প্রতি হার্দিক প্রেম নিবেদন করে।
কোন কোন তরুণী যৌবনের মাদকতায় এতই উম্মত্ত হয়ে ওঠে যে নিজের শরীরের কোন বােধ থাকে না। সখীরা জিজ্ঞাসা করলে বলে–হে সখী, সেই প্রিয়তম এল বিছানায়, আমার নীবী বন্ধন (সায়ার গিট) নিজে থেকেই খুলে গেল। কোমরের অলঙ্কার নেমে যায় নিতম্বে! এরপরে কী হল, তা আমি জানি না। আমিও প্রেম আর কামের প্রবল উত্তেজনায় বিলকুল বিবশ, বেহুশ হয়ে পড়েছিলাম।
তরুণীর চালচলনে থাকে চপলতা। এর উচু নিচু মাটির বােধ থাকে না। কাপড়-চোপড় খেয়াল থাকে, না থাকে দেহের খেয়াল, ভুকুটি করা, কটাক্ষ করা, মধুর কথা বলা, সলজ্জ হাসি–এই হল যৌবনোম্মত্ত তরুণীদের হাব-ভাব, চাল-চলন।
প্রৌঢ়া
বয়স বাড়ার সঙ্গে তরুণীর লজ্জা, ভয় এবং চপলতা দুর হয়ে যায়। লজ্জা কমে আসে। তার স্তন পীনােন্নত, চোখ সুন্দর, ভ্রু বাঁকা এবং চাল-চলন হংসিনীর সমান হবে। এ অত্যন্ত রতিপ্রিয়া এবং পতিকে দৃঢ় আলিঙ্গন করে তাকে গাঢ় চুম্বন করে। প্রৌঢ়া রঙবেরঙের কাপড়, গয়না পরে এবং খুব সাজগোজ করে। এর রতি এত প্রচণ্ড যে প্রায়ই এর কামের তৃপ্তি হয় না। কামকলায় নিপুণ হওয়ায়, সে নানারকমের মিলন-আসন ও আলিঙ্গন দ্বারা স্বামীকে কামসুখ দান করে।
প্রৌঢ়ার রতিশয্যার বর্ণনা করতে গিয়ে আচার্য বলেন: আলুথালু কাপড়-চোপড়ে কোথাও তিলক-কুমকুমের দাগ, কোথাও পায়ের আলতার দাগ, কোথাও পানের পিকের চিহ্ন, কোথাও খোপার চুল খুলে পড়েছে। প্রৌঢ়া এতােই কামােস্মত্ত হয় যে রতি ক্রীড়ার সময় এলােমেলাে কাপড়-অলঙ্কার নিজে ঠিক করতে পারে না। সে স্বামীকে বলে, “হে প্রিয়তম, আমার এলাে চুল ঠিক করে দাও, কপালে তিলক লাগিয়ে দাও, স্তনের উপরের ছিড়ে যাওয়া হার জুড়ে দাও। প্রিয়তম যখন ঐসব ঠিক করার জন্য তাকে স্পর্শ করে তখন প্রৌঢ়া আবার উত্তেজিত হয়ে ওঠে।
কামপীড়িত প্রৌঢ়া কথা -সম্ভোগের সময় আমার অধীরতা দেখে আমার স্বামী কোন কিছুরই প্রতীক্ষা করেনি। সীৎকার হতে পারে নি, শ্বাস নেবার সময়ও মেলে নি, কিছু বলতেও হয় নি। স্বামী আমার সায়ার গিট (নীবী বন্ধন) খােলে নি, পালঙ্ক ছিল না, পুষ্পমালা ছিল না, প্রদীপ জ্বালা হয় নি। এই সব কিছুর অনুপস্থিতিতেই স্বামী আমাকে সম্ভোগ করে অনেক অনেক সুখ দিয়েছে। আমি সম্ভোগের জন্য খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম বলেই স্বামী আমাকে তড়িঘড়ি করে সম্ভোগ করে। আর অনেক সুখও দিয়েছে।
কামশাস্ত্রের আচার্য রূপ, শীল, গুণ এবং স্বভাব অনুযায়ী নায়িকার চার ভেদ বর্ণনা করেছেন।
পদ্মিনী
এর অঙ্গ কোমল, মুখ চন্দ্রমা-সমান সুন্দর, চোখ হরিণীর মত চঞ্চল ও বিশাল হয়। এর অঙ্গ থেকে সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ে, চোখে ছেয়ে আছে লালাভ ভাব। স্তন উন্নত ও নাক সুন্দর হয়। এর চাপা ফুলের মত গাঁয়ের রঙ। গৌরবর্ণ তনুটি পাতলা এবং যােনি পদ্মফুলের মত নরম হয়। পদ্মিনী নারী দেব-দ্বিজে ভক্তিমতী, সুমধুর বচন বলে, সাত্বিক ও স্বল্পাহার করে। রাজ হংসিনীর সমান ধীর গতিতে চলে। স্বভাবে মানিনী ও লজ্জাশীলা হয়। মূল্যবান গয়না, মধুর বাণী ও নরম, সাদা বস্ত্র এর প্রিয়। এরা নারীজাতির মধ্যে শ্রেষ্ঠ। পতিকে সম্মান করে এবং যে ঘরে থাকে সেই ঘর স্বর্গে পরিণত হয়। এদের জন্য পুস্প শয্যা সর্বশ্রেষ্ঠ।
চিত্রিণী
এর গঠন সাধারণ, দুবলা-পাতলা দেহ এবং চালচলন মনােরম হয়। এই মনােরমার স্তন, নিতম্ব ও জঙ্ঘা স্থুল এবং পুষ্ট হয়। ঠোট লাল, গলা শঙ্খের মত আর গলায় তিনটি রেখা থাকে। এর ময়ুরের সমান মধুর স্বর এবং যােনি মদনজলে ভরপুর থাকে। এরা গীতনৃত্য-চিত্রকলায় নিপুণ হয়। শৃঙ্গার, বস্ত্র, ভূষণ, ফুল ইত্যাদি এদের প্রিয় বস্তু। রতি ক্রিয়ায় অনুরাগ কম, কিন্তু শৃঙ্গারের হাবভাব প্রেমিকা সুলভ। এরা পতিব্রতা, স্নেহময়ী ও মিলনসার হয়ে থাকে। প্রকৃতি কিছুটা অলস ধরনের। এদের সুগন্ধিত কার্পাস শয্যা প্রিয় হয়। প্রিয়তমেরা মধুর কথা, কাহিনী ও উপাখ্যান শুনে প্রসন্ন থাকে।
শঙ্খিনী
এর বাহু লম্বা, কপাল ছােট আর পা বড় হয়। এর স্তন ছোট ও স্বভাব ক্ৰোধী হয়। এর দেহের শিরা-উপশিরা উপগত হয় এবং এ চলা ফেরা করে অঙ্গ উপর-নীচে দুলিয়ে দুলিয়ে। এর যােনি লােমে আবৃত এবং ক্ষার-গন্ধ যুক্ত হয়। শরীর কিঞ্চিৎ উষ্ণ থাকে, দেহ প্রকৃতি পিত্ত প্রধান হয়, এখানে-ওখানে কথা লাগিয়ে বেড়ায়। গলার স্বর কর্কশ হয়। এই শ্রেণীর নারী সবসময় কামপীড়িত থাকে। কাউকে ভয় করে না এবং পরপুরুষের সঙ্গ কামনা করে। একে সন্তুষ্ট ও প্রসন্ন করা খুব কঠিন। সংসারের সর্বশ্রেষ্ঠ আভূষণ ও বস্ত্র পরিধান করতে চায়। স্বামীর পাশে বসে প্রণয়ের কথা শুনতে ভালবাসে।
হস্তিনী
এর বর্ণনা আগে দেয়া হয়েছে।
৮. আলিঙ্গন
অবিবাহিত স্ত্রী-পুরুষ প্রেম প্রকাশ করার জন্য চার প্রকার আলিঙ্গন করে:
১. স্পৃষ্টক—রাস্তায় যাবার সময় মুখােমুখি সংঘর্ষ হয়ে যায় প্রেমিক-প্রেমিকার।
২. বিদ্ধক-রমণী কোন বস্তু বহন করে নিয়ে যাবার ছুতোয় পুরুষের সামনে দিয়ে যাবার সময় স্তনযুগল দ্বারা তার গায়ে চাপ দেয়। পুরুষও তখন তাকে ভাল করে চেপে আলিঙ্গন করে। এই ধরণের আলিঙ্গন নায়িকাই করে থাকে এবং তা একান্তেই করা হয়ে থাকে।
৩. উদঘৃষ্টক–একান্তে, লােকজনের সামনে, অন্ধকারে ধীরে ধীরে চলতে চলতে নায়ক-নায়িকার মধ্যে অনেকক্ষণ ধরে গা-চাপাচাপি হতে থাকে। একে উদঘৃষ্টক আলিঙ্গন বলে।
৪. পীড়িতক-প্রেমিকা দেয়াল বা পিলারে ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে প্রেমিকা তাকে গভীরভাবে চেপে রাখে। একে পীড়িতক আলিঙ্গন বলে। নায়িকাও বিপরীতক্রমে এমনটি করতে পারে।
বিবাহিত দম্পতিদের সম্ভোগের জন্য নিম্নলিখিত প্রকারের আলিঙ্গন উপযুক্ত।
৫. লতা বেষ্টিতক-রতিকালে যুবতী লতার মত পুরুষকে আপন বাহু দিয়ে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরে, এবং চুম্বনের জন্য তার মুখ নিচে নামিয়ে নেয়। এবং এরপরে মৃদু মৃদু সীৎকার করে প্রিয়র মুখ-সৌন্দর্য নিরীক্ষণ করে।
৬. বৃক্ষাধিরুঢ়ক—এই আলিঙ্গনে স্ত্রী পুরুষের দুই পায়ে পা রাখে, বা নিজের দুই পা দিয়ে পুরুষের কোমর বেষ্টন করে আর সঙ্গে সঙ্গে তার গলা নিচু করে মুখ চুম্বন করার চেষ্টা করে। গাছে চড়ার ভঙ্গিমায় পুরুষের উপরে চড়ার চেষ্টা করতে থাকে। এই সময় স্ত্রী কামােন্মত্ত হয়ে মধুর সীৎকারও করো ।
এই দুই প্রকার আলিঙ্গন কামেচ্ছা বাড়ানর জন্য সম্ভোগের পূর্বে ছাড়িয়ে দাঁড়িয়ে করা হয়ে থাকে। নিম্নলিখিত আলিঙ্গনগুলি শয্যাকালীনঃ
৭. তিলতণ্ডুলক-শয্যায় শুয়ে স্ত্রী-পুরুষ পরস্পরের হাত, পা, কোমর মিলিত করে পরস্পরকে গাট আলিঙ্গন করে। এই আলিঙ্গনে হাত-পা তিল ও চালের মত মিলে যায়।
৮. ক্ষীরজলক-অত্যন্ত কামােত্তেজিত অবস্থায় নায়িকা পুরুষ শরীরের দুই পাশে নিজের পা বিস্তৃত করে সামনে বসে থাকে পুরুষের কোলে বসে এবং নিজের স্তন তার বুকে চেপে ধরে। অথবা স্ত্রী-পুরুষ শয্যায় শায়িত অবস্থায় মুখােমুখি গাঢ় আলিঙ্গনাবদ্ধ হয়।
৯. উরুপগুহন–স্ত্রী-পুরুষ পরম্পরমুখী হয়ে শুয়ে স্ত্রী বা পুরুষ একে অপরের একটি বা উভয় জঙ্খা নিজের একটি বা উভয় জঙ্ঘা দিয়ে পুরাে দৈহিক শক্তি দিয়ে নিষ্পেবর্ণ করে। জম্বার মাংসল অংশ নিষ্পেষণ করলে অত্যন্ত সুখ প্রাপ্ত হওয়া যায়।
১০. স্তনালিঙ্গন- স্ত্রী নিজের পিঠ ঝুঁকিয়ে এবং বুকের ছাতি ফুলিয়ে নিজের স্তনযুগল পুরুষের বুকে খুব জোরে চেপে ধরে। এই আলিঙ্গনে স্ত্রী ও পুরুষ উভয়ের কোমরের উপরের দেহাংশ (উৰ্দ্ধাংগ) নগ্ন হওয়া আবশ্যক।
১১. ললাটিকা- স্ত্রী ও পুরুষ পরস্পরের চোখ-মুখ সামনাসামনি রেখে কপালে কপাল চেপে ধরে।
৯. চুম্বন
আলিঙ্গনের পরে চুম্বন ইত্যাদির প্রয়ােগ করা প্রয়ােজন। চুম্বন, নখক্ষত ও দন্ত-দংশন—এসব ক্রমানুসারে করা হয়না, কেননা মিলনের আবেগে এই ক্রমরক্ষার কোন সম্ভাব্যতা থাকে না। প্রায়শঃ সম্ভোগের পুর্বেই এর প্রয়ােগ করা হয়। রতিক্রিয়ার সময় প্রহার ও সীৎকার-এই দুইয়ের প্রয়ােগ হয়।
চুম্বনের জন্যেও কোন বাঁধা-ধরা সময় নেই, কেননা ‘কাম’ নিয়ম বন্ধনের বাইরে।
মস্তক, কপালের সামনের চুল, গাল, চোখ, বুক, স্তন, ঠোঁট এবং মুখের অভ্যন্তর-এসমস্তই চুম্বনযােগ্য অঙ্গ। লাটদেশের নিবাসীরা জঙ্ঘার সন্ধিস্থল, বগল এবং নাভি চুম্বন করে।
মুগ্ধা বা বালা নায়িকা নিপ্রকার চুম্বন করে।
নিমিত্ত্বক—প্রথমবার যখন নায়ক নবােন্নকে গভীর আগ্রহে চুম্বন করে, তখন মুখ নায়িকা সসঙ্কোচে নায়কের ঠোঁটে ঠোঁট রাখে ; কিন্তু নিজের ঠোট একটুও নাড়ায় না। একে নিমিত্তক চুম্বন বলে।
স্ফুরিতক-পতি যখন নববধূকে চুম্বন করে, তখন সে সলজ্জ আবেশে পতির অধর নিজের ঠোঁট দিয়ে ধরার চেষ্টা করে। নবােঢ়ার নিজের নিচের ঠোট (অধর) নড়তে থাকে, কিন্তু ওপরের ঠোঁট অনড় থাকে। একে বলে স্ফুরিতক চুম্বন।
ঘটিতক- এই চুম্বনে নবােঢ়া পতির ঠোঁট ধরে লজ্জায় নিজের চোখ বন্ধ করে,পতির দুই চোখ ঢাকে এবং নিজের জিভের ডগা দিয়ে স্বামীর ঠোঁট লেহন করতে থাকে।
দম্পতির চার রকম চুম্বন রয়েছে
তিষঙ্ক– দম্পতি মুখ সামান্য মুড়ে নিজের নিজের ঠোঁট গােল করে একে অন্যের ঠোঁট রগড়াতে থাকে।
উদভ্রান্ত-পিছে বসে পতি বা পত্নী একে অন্যের মুখ নিজের দিকে ঘূরিয়ে তার ঠোঁট চুষতে থাকে।
অঘপীড়িতক- পূর্ববর্ণিত তিনপ্রকারের চুম্বনে ঠোঁটকে জোরে চাপতে থাকেন।
অবপীড়িতক- নায়িকার অধরকে আঙুল দিয়ে ধরে নিজের ঠোঁট দ্বারা চাপতে থাকে, কিন্তু দাঁত লাগায় না।
কর্ষণ চুম্বন- একে অবসর প্রাপ্ত চুম্বনও বলে। সুযোগ পেলে স্ত্রী বা পুরুষ যে প্রথমে অপরকে চুম্বন করে, তারই জিত হয়। একে এক ধরণের বাজি ধরা বলা যায়। কপটতা এবং ছল করে অপরের অধর নিজের ঠোঁট ধরে পাকড়ে নিত পারলেই তার জয় হবে—এমনটি ধরে নেয়া হয়।
এই বাজি ধরার খেলাতে নায়িকার পক্ষে হেরে যাওয়াই শোভন। নায়ক সদা বিজয়ী হয়ে থাকে। হেরে গিয়ে নায়িকা হাত-পা ছোঁড়ে এবং কৃত্রিম রাগ প্রকট করে, কিন্তু আবার বাজি ধরে, আবার হেরে যায় এবং বেশি করে চেঁচামেচি করতে থাকে। এইভাবে এই মধু প্রণয়লীলা-কলহ দম্পতির কাম উদ্দীপ্ত করে।
উত্তর-চুম্বন- স্ত্রী যখন স্বামীর অধর চুম্বন করতে থাকে, তখন স্বামীরও স্ত্রীর উপরােষ্ঠ পাকড়ানাে উচিত।
সম্পূট চুম্বন- পুরুষ যদি স্ত্রীর উভয় ঠোঁটই গভীর ভাবে চুম্বন করতে থাকে, তাহলে স্ত্রীরও উচিত পুরুষের উভয় ঠোঁট চুম্বন করা। কিন্তু পুরুষের মোছ থাকলে চলবে না।
অন্তর্গত মুখ চুম্বন- সম্পুট চুম্বনে পুরুষ নিজের জিহ্বা দিয়ে স্ত্রীর দাঁত, তালু ও জিভ ভাল করে চাটতে থাকে। একে জিহ্বা যুদ্ধ বলে।
দন্তযুদ্ধ ও মুখযুদ্ধও এই প্রকার হয়ে থাকে। এতে স্ত্রী ও পুরুষ একে অন্যের ঠোট দুটি বা দস্তসারি জোর করে ধরে, নিজের মুখ ও দাঁতও অপরকে ধরার সুযােগ দেয়।
ঠোঁট ও মুখবিবর ছাড়া অন্য স্থানগুলিতে চার প্রকারের চুম্বন হয়। সামনা সামনি মুখ করে চুম্বন করা যেতে পারে বিভিন্ন অংশে, যেমন কাঁধ, বুক, বগল, চেপে-ধরা স্তন, গাল, নাভি এবং যােনির উন্নত স্থানে। স্তন-পাশে বগলের নীচেও চুম্বন করা যায়। মৃদু চুম্বন-কেবল স্পর্শমাত্র যেমন, কপাল, চোখ, ভ্রু।
চলিতক- যদি পুরুষের অন্য কোন বিষয়ে মগ্নতা থাকে অথবা সে শুয়ে থাকে, তখন স্ত্রীর তাকে নিজের দিকে আকর্ষণ করার জন্য চুম্বন করা প্রয়ােজন। এই ধরনের চুম্বনকে বলে চলিতক।
প্রতিবোধক—যদি পতি বেশি রাত করে ঘরে ফেরে এবং পত্নী বিছানায় ঘুমন্ত অবস্থায় থাকে, তবে সম্ভোগ নিমন্ত্রণ জানানাের জন্য স্বামীর উচিত তাকে চুম্বন করে জাপানাে। এই ভাবে নিদ্রাভঙ্গ করা মৃদু ও মধুর।
সভৌষ্ঠ– পত্নী নিজের দুই ঠোট দিয়ে পতির ঠোট দুটি ধরে নিজ জিহ্বাকে পতির তালুতে রগড়াতে থাকে এবং নাচতে শুরু করে, তবে এমন চুম্বনকে সভৌষ্ঠ বলে।
রতিকালে কামেচ্ছা বাড়ানাের জন্য পতি-পত্নীর উভয়েরই কর্তব্য অপরের কামােত্তেজনা বৃদ্ধিকারী চেষ্টার প্রত্যুত্তর দেয়া। পতি যে অঙ্গে প্রহার করে, সেই অঙ্গে পত্নীরও প্রহার করা উচিত। পত্নী যে অঙ্গ চুম্বন করে, পতিরও উচিত পত্নীর সেই অঙ্গে চুম্বন এঁকে দেয়া।
১০. নখক্ষত
নখক্ষত করা এক কলা। স্তন এবং অন্য স্ফীত মাংসল স্থানগুলি টিপলে, চাপ দিলে যে চিন্থ পড়ে তাকে নখচ্ছদ বলে।
প্রবল কামুক স্ত্রী পুরুষ একে অন্যকে নখ দিয়ে চুলকায়, চিমটি কাটে। প্রথম পুরুষ সমাগমে, বিদেশ থেকে সদ্য ফিরলে প্রবাস গমন কালে কুপিতা স্ত্রীকে প্রসন্ন করার জন্য স্বামী নখ প্রয়ােগ করে।
বগল, স্তন, গলা, পিঠ, গুপ্তেন্দ্রিয়, জঙ্ঘা তথা নিতম্ব নখক্ষত কারার যােগ্য অঙ্গ।
অনেক কামী পুরুষ নিজের বাঁ-হাতের নখ লম্বা ও ধারাল রাখে।
নখের আটরকম গুণ থাকা প্রয়ােজন; সমান, স্বচ্ছ, কান্তিযুক্ত, ভাঙা না হয়, বৃদ্ধিশীল, কোমল, চিকন ও সুন্দর। গৌড়দেশের নিবাসীদের নখ লম্বা হয়, দক্ষিণ দেশের অধিবাসীদের নখ ছােট হয়। মারাঠিদের নখ খুব বড়াে হয় না, আবার খুব ছােটও হয় না।
১. সব আঙুল এক সঙ্গে মিলিয়ে কপাল, স্তন এবং ঠোঁটে আলতো ছোঁয়া দেয়া, যাতে চিন্হ পড়ে এবং শরীরে পুলক ও রােমাঞ্চ জাগে, এই প্রকার নখচ্ছদকে আচ্ছুরিতক বলে। এই ক্রিয়ায় নখ থেকে কখন কখন চটচট ধ্বনি হতে থাকে।
২. গলা ও স্তনের উপর অর্ধচন্দ্রের সমান নখ দ্বারা সৃষ্ট চিন্হকে অর্ধচন্দ্রক বলা হয়।
৩. অর্ধচন্দ্রকের সমান দুটি নখ চিন্হ যখন মুখােমুখি করা হয়, তখন তাদের আকার গােলাকৃতি হয়ে যায়। একে মণ্ডলক্ষত বলে। নাভিমূলে, নিতম্বে এবং যােনির ফুলাে ফুলাে উচু অংশে গােল নখক্ষত প্রয়ােগ করা হয়।
৪. নখরেখা যদি কিঞ্চিৎ মােড়ান হয় এবং স্তনবৃন্তে সামনে অঙ্কিত হয়, তবে তাকে ব্যাঘ-নখ বলা হয়।
৫. পাঁচ আঙ্গুলের নখ দ্বারা যদি স্ত্রীর স্তনের বোঁটা টানা যায়, তবে ঐ স্তনবৃন্তের চারপাশে যে নখরেখা অঙ্কিত হয়ে যায় তাকে ময়ূরপদক বলে।
৬. পুরুষ যদি স্ত্রীর স্তনবৃন্তে জোরে চাপ দিয়ে পাঁচ নখ বসিয়ে দেয় এবং নখক্ষত করে দেয়, তবে এই ভাবে সৃষ্টি হওয়া নখচিন্হকে শশপ্লুতক বলে। এই চিন্হ অনেকটা খরগােশের চঞ্চলপায়ের চিন্থের মত হয়।
৭. স্তন ও কোমরে পদ্মপাতার মত নখচিন্থগুলিকে উৎপল-পত্ৰক বলে।
আচার্যের মত হল : নখক্ষতের গণনা খুব কঠিন, কেননা পুরুষ কামান্ধ হয়ে বিভিন্ন ধরণের ক্ষত স্ত্রীর কোমল অঙ্গে অঙ্কিত করে এবং রতিক্রিয়ায় বিচিত্র ও নতুন নতুন পরিবর্তন আনতে থাকে। এতে কামানুরাগ বৃদ্ধি পায়। যখন ধনুর্বিদ্যা ও অন্যান্য শস্ত্রচালনাবিদ্যায় বৈচিত্র ও নৃতত্ত্বের প্রয়ােজন আছে, তখন কামযুদ্ধেই বা বিচিত্রতা ও নূতনত্ব কেন হবে না।
পরস্ত্রীর অঙ্গে নখচিস্থ অঙ্কিত করা হয় না, কেবলমাত্র গুপ্তস্থানগুলিতে স্মৃতি ও কামবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে কিছু চিন্হ সৃষ্টি করা দেয়া উচিত। নিজ গুপ্ত স্থানগুলিতে নখচিস্থদেখে স্ত্রীর প্রী পুনরায় জাগ্রত হয়। পুরুষের অঙ্গে লেগে থাকা নখচিন্হ দেখে স্ত্রীর মধ্যে কাম জাগ্রত হয়ে ওঠে।
বাহ্যরতিতে দস্তদংশন এবং নক্ষতের মত আর কোন ক্রিয়া কামকে এ্যাতে প্রবল করতে পারে না।
১১. দন্ত-দংশন
উপরের ঠোট, জিভ এবং চোখ বাদে অন্য যাবতীয় চুম্বন-যােগ্য স্থান দন্ত-দংশনের যােগ্য। অর্থাৎ ঐ স্থানগুলি দাঁত দিয়ে কামড়াবার স্থানও বটে—একথা বলা যেতে পারে।
দাঁত দিয়ে কামড়ানর চিন্থগুলি যদি মালার মত হয়ে যায়, তবে তাকে মণিমালা বলে।
ঠেটি ও কণ্ঠের মধ্যবর্তী স্থানের ত্বককে দাঁত দিয়ে একটু টেনে কামড়ে দিলে যে চিন্হ হয় তাকে বিন্দু বলে। এবং এই দংশনের বিন্দু চিন্থগুলির পংক্তিকে বিন্দুমালা বলা হয়।
বিন্দুমালা এবং মণিমালা দন্তক্ষত কপােল, বগল এবং স্তনযুগলে মানানসই লাগে। বিন্দুমালা দন্তক্ষত কপাল ও জংঘায় এঁকে দেয়া হয়ে থাকে।
স্তনদুটির উপড়ে মেঘের টুকরার মত দন্তদংশনের যে আলাদা আলাদা চিন্থগুলি হয়, তাকে খণ্ডাভ্ৰক বলে।
যদি পাশাপাশি দাঁতে কাটার অনেক লম্বা লাইন হয় ও তা বেশ চকচকে হয় তবে তাকে বরাহ চর্বিতক দন্তক্ষত বলে। নবােঢ়ার স্তন মুখে পুরে দাঁতে চাপলে, শুয়ােরের চাবানর মত অনেক দন্তক্ষত তৈরি হয়ে যায়।
দেশাচার অনুযায়ী স্ত্রীর মনমত আচরণ করে তাকে প্রসন্ন রাখা প্রয়ােজন। যে দেশের স্ত্রী সেই দেশের রীতি অনুযায়ী রতিপ্রথা গ্রহণ করলে রতিসুখ বুদ্ধি পায়, নচেৎ দ্বেষ উৎপন্ন হয়।
মধ্যদেশের রমণীগণ যারা বেশিরভাগ আর্য, তারা চুম্বন, দন্তদংশন এবং নখক্ষত পছন্দ করে না এবং এই ধরণের পুরুষদের প্রতি বিদ্বেষযুক্ত হয়।
মালব এবং কুরুক্ষেত্রের রমণীদের আলিঙ্গন, চুম্বন, নখক্ষত, দন্তদংশন ও অধর-চোষণে রুচি আছে এবং প্রহারও বেশ পছন্দ।
শশের সঙ্গে মৃগী, বৃষের সঙ্গে বড়বা এবং অশ্বের সঙ্গে হস্তিনীর সম্ভোগ সমরত-এমন সম্ভোগে নায়িকার জঙ্ঘা সংকুচিত বা বিস্তৃত করে ছড়িয়ে দেবার দরকার হয় না।
উচ্চরত ও সমরততে স্ত্রীর কামাগ্নি শান্ত হয়, পূর্ণ সম্ভোগ সুখ হয়। কিন্তু নীচরততে স্ত্রীর কামাগ্নি শান্ত হয় না এবং সে ধাতুলিঙ্গ (কৃত্রিম লিঙ্গ) ব্যবহার করে।
মৃগী নায়িকা উচ্চরত সম্ভোগে তিন প্রকার কায়দায় নিজ যােনি দ্বার বিস্তৃত করে।
১. উৎফুল্লক-নায়িকা নিজ নিতম্বের নিচে বালিশ রেখে জঙ্গায় উচু করে।
২. বিজৃম্ভিতক- নায়িকা নিজের জঙ্ঘাদ্বয় খুব উঁচু করে যােনিদ্বার বিস্তৃত করে এবং পুরুষ তেরচাভাবে রতিরত হয়।
৩. ইন্দ্রানিক-পুরুষ নায়িকার একটি জঙ্ঘা উঠিয়ে নিজের আরেক জঙ্ঘা দিয়ে স্ত্রীর অপর জকে চেপে ধরে এবং যৌন সঙ্গম করে।
সম্পুটক :- নীচরতে অর্থাৎ বড়বা-হস্তিনীর শশের সঙ্গে সহবাস ক্রিয়ায় নায়িকার সম্পুটক আসন করা দরকার। পতি-পত্নী নিজ নিজ জঙ্ঘা ছড়িয়ে দিয়ে একে অন্যে জঙ্ঘা আবৃত করলে তাকে সম্পুটক আসন বলে।
বেষ্টিতক – উপরােক্ত আসনে যদি যােনি সংকোচনের জন্য নায়িকা নিজ জঙ্ঘা দুটি পরস্পর লেপটে নেয়, তবে তাকে বেষ্টিতক আসন বলে।
বাড়বিক- সঙ্গমে নায়ক দুর্বল হলে যদি স্ত্রী তার ইন্দ্রিয়কে যােনিতে খুব কসে টেনে ভিতরে নিয়ে যায়, তবে একে বাড়বিক বলে। এই আসন অভাসে সাধ্য হয়।
ভুগ্নক – নায়িকা উভয় জঙ্ঘা উপরে উঠিয়ে অধোভাগ দিয়ে মৈথুন করালে তাকে ভুগ্নক আসন বলা হয়।
জুম্ভিতক – এই আসনে স্ত্রী পুরুষের দুই কাঁধে নিজ জঙ্ঘা স্থাপন করে এবং আগে-পিছে নড়াচড়া করে।
উৎপীড়িতক – জুম্ভিতক আসনে যদি নায়িকা নিজ যােনি সংকুচিত করে নেয়, তবে তাকে উৎপীড়িতক আসন বলে!
অর্থ পীড়িতক – যখন নায়িকা এক পা শয্যার উপর প্রসারিত করে এবং অন্য পা নায়কের কাঁধে বা কোমরে রেখে সহবাস করে।
বেণুদারিতক- নায়িকা নিজের শরীরের উপর শায়িত পতির কাঁধে কখন পা রাখে, কখন সরিয়ে নিচের শয্যায় রাখে, এই ভাবে পা বদল করে বারবার করে ,একে বলা হয় “বেদারিতক” আসন।
শুলাচিত্তক- এই আসনে নায়িকা চিত হয়ে শােয়, এক পা নায়কের কপালে রাখে। আবার শয্যার পা কপালে। এই ভাবে বারবার করলে তাকে শুলাচিত্তক আসন বলে। এর জন্য অভ্যাস প্রয়ােজন।
কার্কটক – এই আসনে রতিকালে স্ত্রী আপন জঙ্ঘা গুটিয়ে নাভি পর্যন্ত করে নেয়।
কুমার্সন – স্ত্রীর মুখে মুখ, বাহুতে বাহু, জঙ্ঘায় জঙ্ঘা এবং বক্ষস্থালে নিজের বুক সেঁটে নিয়ে যখন পুরুষ স্ত্রীকে সম্ভোগ করে তবে কে কমার্সন বলে।
পীড়িতক – রতিসময়ে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকা নায়িকা যখন নিজের উপর দিকে উঠানাে জঙ্ঘাদুটি ডান দিক-বাঁদিকে আদল-বদল করে নিষ্পেষণ করে।
পদ্মাসন- সম্ভোগ কালে স্ত্রী নিজের বাঁ পা ডান জঙ্ঘায় এবং ডান পা বাঁ জঙ্ঘার ওপর রাখে।
পরাবৃত্তক – স্ত্রী-পুরুষ সম্ভোগ কালে আলিঙ্গন করে এবং আবার স্ত্রী পতির কোলে পিছন দিকে এমনভাবে ঘুরে যায় যে পুরুষেন্দ্রিয় যােনি থেকে বেরতে পারে না। এই আসন অভ্যাসে সাধ্য।
স্থিররত – এই আসনে স্ত্রী-পুরুষ দেয়ালে ঠেস দিয়ে পরস্পরকে সম্ভোগ করে। এতে তিনটি মুদ্রা আছে। নায়িকা নিজের এক পা পুরুষের হাতে রাখে। এতে যােনিমুখ বিস্তৃত হয় এবং নায়ক সামনের দিক দিয়ে সম্ভোগ করতে পারে। নায়িকার দুই পায়ের উপর নায়ক দণ্ডায়মান অবস্থায় নিজের পা রাখে এবং নায়িকা জঙ্ঘাদ্বয় একটু ছড়িয়ে সঙ্গম করে। সামনে দাঁড়ান নায়িকার কোমরে নায়ক নিজের দু’হাত জড়িয়ে তাকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে সঙ্গম করে।
অবিলম্বিত- দেয়াল সেঁটে দাঁড়ান নায়কের গলায় দুই বাহু জড়িয়ে নায়িকা নায়কের দুই হাতের উপর বসে সঙ্গম করে এবং নিজের পা পুরুষের কোমরের চার পাশে পেঁচিয়ে এবং দেয়ালে পায়ের ধাক্কা মেরে মেরে, যেন দোলনায় দোদুল্যমান অবস্থায় সম্ভোগ করায়। নায়িকা নিজের নিতম্ব ওপর নিচে নাড়াতে থাকে। এই প্রকার কোমর নাচালে তাকে হিণ্ডোলাসন বলে।
ধেনুক- নায়িকা চারপেয়ে পশুর সমান হাত-পা জমিতে রেখে অধােমুখী হয়ে যায় এবং নায়ক ধাঁড়ের মত পিছন দিক থেকে সম্ভোগ করে।
আসাম এবং বাহনীক দেশের স্ত্রীলােকেরা অন্তঃপুরে কয়েকজন পুরুষ রাখে এবং তাদের দিয়ে নিজ কামাগ্নি শান্ত করে। এক পুরুষ নায়িকাকে নিজের কোলে নেয়, আরেকজন নিতম্ব ধরে, তৃতীয় জন সম্ভোগ করে চতুর্থ পুরুষ তার মুখ চুম্বন করা, অন্যকোন পুরুষ তার কোমর বা স্তন মর্দন করে। এইভাবে যুহু পুরুষ মিলে বারবার তার কামাগ্নি শান্ত করে। এরকম আচরণ কোন কোন বেশ্যা এবং স্বাধীনচেতা রাজ-পত্নী করে থাকে।
দক্ষিণ দেশে যখন কোন ব্যক্তি স্ত্রীকে জাপটে ধরে সম্ভোগ করে! তখন সঙ্গে সঙ্গে অধােরত বা গুহ্যদ্বার মৈথুনও করে।
পরিশেষে আচার্যের মত যেন তেন প্রকারেণ স্ত্রীর রতি-আনন্দ ও সন্তোষ উৎপাদনের জন্য যে কোন পদ্ধতি অবলম্বন করা দরকার। দেশ, রীতি, ভাব ও অনুরাগ অনুযায়ী স্ত্রীর সঙ্গে ব্যবহার ও প্রয়ােগ করা উচিত, যাতে তার প্রতি আনন্দলাভ হয় এবং প্রেম বৃদ্ধি ঘটে।
১৩. প্রহার ও সীকার
রতিকে এক মদনযুদ্ধ বলা হয় এবং প্রহার বা প্রহণন রতি ক্রিয়ার এক অঙ্গ। রতিতে স্ত্রী-পুরুষ একে অন্যকে পরাজিত করার লালসায় প্রহার করে। ভারবি কবি বলেন যে, মদনযুদ্ধে মৃদুতা ত্যাগ করে কর্কশতা গ্রহণ করা উচিত। রতিতে এটা ক্ষৰ্ম্য এবং উত্তেজনা সৃষ্টিকারী।
হাতের চেটো দিয়ে, হাতের চেটোর পেছন দিক দিয়ে, আঙুলগুলি মুঠো করে মুঠো দিয়ে স্ত্রীর পিঠ, পার্শ্ব, জঙ্ঘা, স্তনদ্বয়ের মধ্যভাগ এবং কাঁধে প্রহার করা উচিত। স্ত্রীর এই অঙ্গগুলিতে কামের নিবাস।
এই প্রহারে সম্ভোগ কলায় যে সীৎকারের মত আওয়াজ স্ত্রীর মুখ দিয়ে বেরয়, তাকে বিরুত বলে। এটা অনেক রকম হয় – হিংকার, স্তনিত, কৃজিত, রদিত, সুকৃত, দুৎকৃত এবং ফুৎকৃত।
মিলনকালে স্ত্রী পুরুষকে রতি থেকে রুখে দেবার জন্য শব্দ করে। ঐ শব্দের অর্থ তার উচ্চরণ ধ্বনি থেকে জেনে নেয়া প্রয়ােজন।
সম্ভোগকালে রমণীরা পায়রা, তােতা, ভােমরা, হাঁস ইত্যাদি পাখির মধুর কুজনের মত শব্দ করে।
নায়ক নিজ ক্রোড়ে উপবিষ্ট নায়িকার পিঠে হাত মুঠো করে মারে। প্রত্যুত্তরে নায়িকাও নায়কের পিঠে মারে এবং নায়কের মারের ফলস্বরূপ সীৎকার করতে থাকে।
নায়িকার উপর শুয়ে (উত্তান আসন) নায়ক যখন ভােগ করে, তখন নায়িকার দুই স্তনের মাঝখানে আলতাে ভাবে মারে। আরম্ভে খুব আলতাে মার মারে। যেমন যেমন ভােগের আবেগ বাড়তে থাকে প্রহারও তদনুরূপ জোরে করে এবং সম্ভোগের শেষ পর্যন্ত করতে থাকে। কপাল, জঙ্ঘাদ্বয় ও স্তন – এই গুলি প্রধান কামস্থল।
প্রস্তুতক বিধিতে আঙুলগুলি মুড়ে, সাপের ফণার মত হাতের তালু বানিয়ে মারলে নায়িকা শুরুতে ফুৎকার করে – এটা কামােদ্দীপণের লক্ষণ।
উপরেক্তি প্রহারে নিজ অন্তর্মুখ থেকে নায়িকা যে শব্দ করে, তাকে ফুৎকৃত বলে।
সম্ভোগ অন্তে ক্লান্ত হয়ে নায়িকা কাঁদে। শ্বাস নেয়। এইভাবে কান্না ও শ্বাস নেবার ফলে যে শব্দ হয় তাকে ফুৎকৃতু বলে।
নায়ক সর্বাংশ চুম্বন, আলিঙ্গন, নখক্ষত, দংশন এবং প্রহার করলে নায়িকা সীৎকার ফুৎকার ইত্যাদি করে।
সম্ভোগে নায়কের প্রহারে ভিন্ন হয়ে তাকে থামানাের জন্য নায়িকা। ‘মাঁ-ঘাঁ শব্দ করতে করতে নিশ্বাস ত্যাগ করে, কাঁদে, পাখীর মত মধুর আওয়াজ করে এবং রতির অস্তকালে নিজের অঙ্গে নায়কের নিতম্ব ও জঙ্ঘা ঠুকতে থাকে। এই ক্রিয়া নারী ততক্ষণ পর্যন্ত চালায় যতক্ষণ না পুরুষের বীর্যপাত হয়।
যুবক স্বভাবে কঠোর ও দৃষ্ট হয়ে থাকে। যুবতীরা মৃদু, ক্ষীণ ও ভীত হয়। এই জন্য পুরুষ স্বভাববশে প্রহার করে এবং স্ত্রী রােদন এবং সীৎকার করে। কিন্তু কখন কখন বিপরীত পরিণামও দেখা যায়। নায়িকা কামােন্মত্ত এবং যৌবনের শক্তিতে পরিপূর্ণ হয়ে প্রহার সহ্য করে চুপ থাকার চেয়ে স্বয়ং প্রহার করে। এইভাবে কোন কোন পুরুষ স্ত্রীলােকের মত আচরণ করে এবং এমনকি সীৎকারও করে। কিন্তু এই পরিবর্তন ক্ষণস্থায়ী এবং শেষে স্ত্রী-পুরুষ নিজ নিজ স্বাভাবিক প্রবৃত্তিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।
নায়ক স্ত্রীর বক্ষস্থলে কিল, মাথার চুলে কেঁচি দিয়ে বিলি কাটা, কপালে ছেদা করার যন্ত্রের খোঁচা, স্তন যুগলে চিমটি কাটে। এই চার প্রকার ভেদ দক্ষিণ দেশের স্ত্রীলােকের মধ্যে পাওয়া যায়।
বাৎসায়নের মতানুসারে এই উপচার ত্যাজ্য, কেননা এগুলি কষ্টদায়ক। এসব উপেক্ষা ও তিরস্কার করা উচিত।
যে দেশে যে প্রথা প্রচল, সেখানে সেই প্রথার প্রয়ােগ করা সঙ্গত। কিন্তু বাড়াবাড়ি করা উচিত নয়।
চোল দেশের রাজা কামান্ধ হয়ে চিত্রসেনা বেশ্যাকে লৌহদণ্ড দিয়ে মেয়ে ফেলে। কুন্তল দেশের শ্বেতবাহন সম্ভোগের সময় মলয়বতীকে কেচি দিয়ে মেরে ফেলে।
রতিকালে কামান্ধ হয়ে কামী খেয়াল করে না প্রহার ইত্যাদির কি পরিমাণ হবে। এইজন্য স্ত্রীর কোমলতা, কামের প্রচণ্ডতা এবং নিজের ও স্ত্রীর শক্তি বুঝে পুরুষের সম্ভোগে প্রবৃত্ত হওয়া উচিত। এটাই বুদ্ধিমত্তার লক্ষণ।
কাম সম্পকীয় রতিক্রিয়া সব স্ত্রীদের সব জায়গায় এক সমান হয় না। পুরুষের উচিত স্থান, দেশ ও কালের বিচার করে স্ত্রীর ইচ্ছানুসার তার প্রয়ােগ করে।
১৪. বিপরীত রতি
সম্ভোগ কালে ক্লান্ত নায়ককে বিশ্রাম দেবার জন্য বা নিজ উদগ্র কাম লালসা তৃপ্তির জন্য, স্ত্রী পুরুষকে নীচে শুইয়ে, তার উপরে অবস্থান করে পুরুষের সমান আচরণ করে।
বিপরীত রতিতে নবােঢ়া নায়কের নেত্র বন্ধ করে দেয় এবং লজ্জা অনুভব করে নিজেও চোখ বন্ধ করে নেয়। সে প্রিয়তমের মুখে জিভ ঢুকিয়ে ও তার চুল মুঠো করে ধরে তাকে চুমু খায়। তরুণী এবং প্রৌঢ়া এই ধরণের কাজে লজ্জা অনুভব করে না।
বিপরীত রতি করার সময় নায়িকার চুল এলােমেলাে হয়ে যায়, দ্রুত নিশ্বাস পড়ে। মাঝে মাঝে হাসে, চুম্বন ও দন্তদংশনের জন্য নিজ স্তনযুগল স্বামীর বুকে রগড়ায়। লজ্জায় মাঝে মাঝে মাথা ঝুকিয়ে নেয় এবং নায়ককে বলে, তুমি আমাকে বলহীন মনে করে আমাকে নিচে ফেলেছিলে, এখন আমি তােমাকে নিচে ফেলে বদলা নিচ্ছি। এই কথা বলতে বলতে নায়িকা হাতের কঙ্কণের ঝনঝন কনকন শব্দ করে, নিজের বিশাল ও পুষ্ট নিতম্ব নাচিয়ে নাচিয়ে কামমদে ভরপুর ও আতুর হয়। সম্ভোগ শেষে শ্ৰাস্ত, ক্লান্ত, শান্ত ও শিথিল হয়ে যায়।
এখন মৈথুন বিধির বর্ণনা করা হচ্ছে। এর দুটি অঙ্গ – বাহ্য এবং আন্তরিক।
বাহ্য উপচার নিম্নরূপ –
প্রথমে লজ্জা দূর করতে রতিবিলাস কক্ষে শুয়ে থাকা নায়িকাকে নায়ক মধুর সম্ভাষণ করে তার নাবী বন্ধন খােলার চেষ্টা করে। নায়িকা বারণ করলে নায়ক তাকে কামােত্তেজিত করার জন্য কপােল চুম্বন করে। আবার নিজ ইন্দ্রিয় প্রহর্ষিত হলে পরে নায়িকার বগল, পীন, উরু, স্তন ইত্যাদি স্পর্শ করে তার মধ্যে কামলালসা জাগ্রত করে। যদি নায়িকা নবােঢ়া হয়, তবে নায়ক তার ভয় দূর করার জন্য তার ঘন-সন্নিবদ্ধ জঙ্গা হাত দিয়ে ফাঁক করে রগড়ায় এবং তার বিভিন্ন অঙ্গ স্পর্শ করে তাকে আশ্বস্ত ও উত্তেজিত করে, এইভাবে নবােঢ়ার সঙ্গে চার উপায় করা হয় – সায়ার গিট (নীবী) খােলা, স্পর্শ করা, হাত দিয়ে রগড়ানাে ও আলিঙ্গন করা। এরপরে তাকে চুম্বন করা কর্তব্য। যদি নায়িকা তরুণী হয় এবং সম্ভোগ করতে ভীত না হয়, তবে তাকে যথােচিত স্পর্শ, আলিঙ্গন ও চুম্বন করা হয়। এবং দৃঢ়তার সঙ্গে তাকে অঙ্গলগ্না করে নিয়ে বলপূর্বক মুখ টেনে চুম্বন করা উচিত। রতিৱত নায়িকা নিজের যে অঙ্গে নায়কের স্পর্শমাত্র চোখের তারা নাচায়, এই স্থানকে মর্দন করলে নায়িকার মধ্যে কাম জাগ্রত হয়। এই হচ্ছে যুবতীর রতি রহস্য।
চোখ বন্ধ করা, শরীর শিথিল করা, লজ্জা ত্যাগ এবং যােনি পুরুষেন্দ্রিয়ের সাথে জোরে ঘর্ষণ করা – এ সমস্ত রমণীর কামােত্তেজিত হবার লক্ষণ। রতির শেষ দিকে স্থলনের সময়। নায়িকার হাতদুটো আবেশে কাঁপে, ঘামে ভিজে যায় শরীর, পতিকে কামড়ায়, পুরুষাঙ্গকে যােনির বাইরে বেরতে দেয় না। পা দিয়ে পতিকো মারে, দুই জঞ্জঘা দিয়ে পতিকে নিষ্পেষিত করে।
স্থলনের পরে নায়িকার দেহ শ্লথ হয়ে আসে, চোখ বন্ধ হয়ে। যায়। বারবার জঙ্ঘাদ্বয় রগড়ায় এবং আকুল আবেগে সীৎকার করতে থাকে।
নায়কের উচিত সঙ্গমের আগে নিজ আঙুল দিয়ে নায়িকার ভগাংকুর রগড়ে তার যােনিপথকে শ্নিগ্ধ করে তােলা এবং এবং স্ত্রীর মধ্যে কামেচ্ছার প্রাবল্য সৃষ্টি করা।
১৫. মুখ মৈথুন
হিজড়ার দুই রূপ হয় – স্ত্রী ও পুরুষ। স্ত্রীরূপিনী হিজড়ার মধ্যে স্ত্রীর বেশভূষা, আলাপ, লীলা এবং স্ত্রীসুলভ হাব-ভাব, মৃদুতা, ভীরুতা, লজ্জা ইত্যাদি গুণ দেখা যায়। এরকম হিজড়কে দিয়ে মুখ মৈথুন করাকে ঔপরিক বলে। এই হিজড়েদের কামাঙ্গ অবিকশিত থাকে এবং এরা স্বাভাবিক যৌন সজোগ সুখ প্রাপ্তিতে অক্ষম। এরা বেশ্যার মতই ঔপরিস্টক দ্বারাই নিজ জীবিকা চালায়। – পুরুষরূপেণু হিজড়াদের স্ত্রীসুলভ গুণ থাকে না। অতএব পুরুষের কাছে পৌছতে এদের বেশ অসুবিধা হয়। এদের কামবাসনা চাপা থাকে এবং পুরুষ সংসর্গের লালসায় পুরুষের পা টিপে দেয়, গা মালিশ করে। এইভাবে নিজেদের জীবিকা চালায়।। এরা পুরুষের পা টিপতে টিপতে তার জঙ্ঘা স্পর্শ করে এবং তার লিঙ্গ প্রহর্ষিত দেখে উৎফুল্ল হয়, উখিত পুরুষেন্দ্রিয় হাত দিয়ে রগড়াতে থাকে। এবং লিঙ্গের দৃঢ়তা দেখে হাসতে থাকে। আচার্য মুখ মৈথুনের আট ভেদ বর্ণনা করেছেন, যার আলােচনা এখানে আবশ্যক নয় এবং উচিতও নয়।
কুলটা, স্বাধীনচেতা স্ত্রীলােক, দাসীরা এবং পা টিপে দেবার জন্য নিযুক্ত স্ত্রীলোেকরা ঔপরিষ্ঠক করে।
আচার্যের উপদেশ ও ঔপরিস্টক এক নীচ, কুৎসিত এবং জঘন্য কর্ম তথা ধর্মশাস্ত্র বিরুদ্ধ, অতএব এর অভ্যাস করা উচিত নয়।
আচার্য বাৎস্যায়ন বলেন : বেশ্যাগামী পুরুষের পক্ষে এটা দোষের নয়। অন্যসব ক্ষেত্রে এটা ত্যাজ্য। নিজ পত্নীর সঙ্গে এটা মহাপাপ।
কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে আচার্য বলেন যে দেশে যেমন আচার-বিচার এবং রীতি তদনুসারে কাজ করা উচিত।
নাটকের দলের নট ইত্যাদি ও অনেক বিলাসী পুরুষ যারা পরস্পরের বিশ্বাসভাজন – তারা পরস্পর ঔপরিষ্টক করে।
রাজা-মহারাজাদের অন্তঃপুরে স্ত্রীগণ একে অন্যের গুপ্ত-ইন্দ্রিয়ে ঔপরিষ্ঠক করে। কোন কোন পুরুষও স্ত্রীর গুপ্তেন্দ্রিয়ে এই কাজ করে, এই ক্রিয়া মুগ্ধ চুম্বনের মত হয়। স্ত্রী-পুরুষ যখন একে অন্যের মুখের দিকে নিজের জননেন্দ্রিয় রেখে ঔপরিষ্ঠক মৈথুন করে তাকে কাকিল বলে।
ঔপরিষ্টকে অভ্যস্ত বেশ্যারা অধস্তন সেবকদের সঙ্গে এই অপক্রিয়া করে ও করায়।
ব্রাহ্মণ, বিদ্বান, রাজা তথা সম্মানিত লােকপ্রিয় ব্যক্তিদের কখনই বেশ্যাদের সঙ্গে এই কুকর্ম করা উচিত নয়।
ঔপরিষ্টক বিধির উল্লেখ কামশাস্ত্রে মানুষের কামুক প্রবৃত্তি দেখাবার ও বােঝাবার জন্য করা হয়েছে। এর অর্থ এই নয় যে স্ত্রীপরুষ এর প্রয়ােগ করুন – এই উপদেশ দেয়া হচ্ছে। আয়ুর্বেদে কুকুরের মাংসের মহিমা লেখা হয়েছে, কিন্তু এর তাৎপর্য এই নয় যে বুদ্ধিমান মানুষ কুকুরের মাংস খাওয়া শুরু করুক।
পরিশেষে আচার্যের মত এই যে দেশ, কাল, ধর্মশাস্ত্র এবং রচিতবিচার করে মানুষ ঔপরিষ্টকের প্রয়ােগ করবে অথবা করবে না। মানুষের চিত্ত অস্থির এবং কামাতুর হলে অত্যন্ত চঞ্চল হয়ে ওঠে, অতএব কোন মানুষ কোন সময় কোথায় কি করে – তা বলা কঠিন।
১৬. রতির আরম্ভ ও শেষের কর্তব্য
রতি সদন বিস্তীর্ণ, সুসজ্জিত, সুগন্ধযুক্ত, অলঙ্কৃত, আলােকিত এবং সুরম্য হওয়া উচিত। সেথায় নানাধরণের ফুল থাকবে, আর রাখা থাকবে বীণা, সেতার ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্রা রতিসদনে যাবার আগে নায়িকার ষোল শৃঙ্গার করে নেওয়া উচিত। তার নানাবিধ অলঙ্কার, উজ্জ্বল বস্ত্র এবং সুগন্ধী প্রলেপ ধারণ করা উচিত।
নায়কের উচিত নিজ মিত্রগণ এবং সেবকের সঙ্গে রতিপ্রমােদ কক্ষে প্রবেশ করা; শৃঙ্গার করে আসা মদনোম্মত্ত সুন্দরীদের কুশল সমাচার জিজ্ঞাসা করা। মধুর আলাপ করে, মদিরা পান করিয়ে যুবতীদের প্রসন্ন করা। নায়ক-নায়িকার ডান পাশে বসে নায়িকার চুলে হাত রাখে। কাপড় স্পর্শ করে এবং নবীবন্ধন (সায়ার গিট) খােলে। সম্ভোগের জন্য সাধারণ আলিঙ্গন করে মধুর প্রেমালাপ করে এবং অশ্লীল হাসি-তামাসা করে; নৃত্যসহ অথবা নাট ছাড়াই গানবাজনা করে এবং কামশাস্ত্রের চৌষট্টি কলা বর্ণনা করে।
যখন যুবতী কাম-বিহ্বল হয়ে পড়ে, তখন কুসুম, চন্দন প্রলেপ,. পান ইত্যাদি দিয়ে বন্ধুবর্গ ও অনুচরদের সসম্মানে বিদায় করে। নিরালা হয়ে যাবার পর পূর্ববর্ণিত বিধিমত যুবতীকে আলিঙ্গন করে, যাতে সে সম্ভোগের জন্য উদ্যত হয়। এর পরে নীবী বন্ধন খােলার চেষ্টা করে।
রতি ক্রীড়ার আরম্ভে এই রকম করা প্রয়ােজন। সম্ভোগ অন্তে নায়ক-নায়িকা লজ্জিত হয়ে, একে অন্যের যেন অপরিচিত, এমনভাবে আলাদা আলাদা মূত্রত্যাগের জন্য যায়। মূত্রত্যাগ করে ফিরে নায়ক-নায়িকা পরস্পর আলিঙ্গন করে, নায়ক নায়িকাকে চন্দন লাগিয়ে দেয়। পান খাওয়ায় এবং নিজেও খাওয়ায়।
নায়ক-নায়িকা উভয়েই মিষ্টি, ফল, দুধ, নারকেল ও কমলালেবু রস ইত্যাদি পান করে। বাড়ীর ছাতে জ্যোৎস্না-প্লাবিত রাতে আসনে বসে দুজনে প্রেমময়ী মধুর আলাপ করে। কোলে শুয়ে থাকা নায়িকাকে নায়ক নক্ষত্র চেনায়। এইভাবে নায়িকাকে প্রশংসা বাক্য শুনিয়ে ও পরম্পর প্রেম-বিশ্বাসের কথােপকথন করে অনুরাগ বাড়ান হয় নায়িকার হৃদয়ে।
অনুরাগের নিম্নলিখিত প্রকারভেদ বর্তমান –
প্রথম দর্শনেই প্রেম হবার পরে প্রবাস থেকে নায়ক ফিরলে বা দীর্ঘ বিরহের পরে যে সমাগম হয় তাকে রাগবত বলে।
ধীরে ধীরে প্রেম উৎপন্ন হবার পরে যতক্ষণ পর্যন্ত সম্ভোগ না হয়, ততক্ষণ এই অনুরাগকে আচার্য ‘রাগ” বলেন।
আলিঙ্গন ইত্যাদি চৌষট্টি কলার প্রভাবে কামােন্মত্ত হয়ে বা নায়িকাকে টাকা দিয়ে সম্ভোগ করে নায়ক – যখন সে আসলে অন্য যুবতীর প্রতি প্রণয়াসক্ত। এরকম প্রেমকে কৃত্রিম রাগ বলে।
কোন পরস্ত্রীতে সদ্যোগত নায়ক শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভাবতে থাকে সে যেন তার মনে মনে আকাঙ্খিত প্রেমিকাকেই সম্ভোগ করছে। এরকম রাগকে ব্যবহিত রাগ বলে।
নিম্নজাতির দাসি ইত্যাদির সঙ্গে সম্ভোগ ক্রিয়াকে পোটারত বলে। এদের আলিঙ্গন ও চুম্বন করা উচিত নয়।
গ্রামীণ পুরুষের বেশ্যার সাথে সম্ভোগকে খলরত বলে।
শহুরে পুরুষের গ্রামীণ নারীর সঙ্গে সম্ভোগ ক্রিয়াকেও খলরত বলে।
বুদ্ধিমান যুবকের এমন যুবককে বিবাহ করা কর্তব্য যে কুলীন কন্যা, যার মাতা-পিতা জীবিত, বয়সে তিন বছরের ছােট, যার পিতৃকুল সদাচারী ও সম্পন্ন, যার বাপের বাড়ি ও মামাবাড়ি আত্মীয়-স্বজনে পরিপূর্ণ, যার সম্বন্ধীরা পরস্পরকে ভালবাসে; যে কন্যা স্বয়ং নীরােগ। যার নাক, কান, দাঁত, নখ, চুল, চোখ, স্তন বিষম ও দূষিত নয়, যে রূপবতী, সুশীলা ও সৌভাগ্যশালিনী এবং যার প্রত্যেক অঙ্গ পুষ্ট ও মনােহর। আচার্য ঘােটকমূখ বলেন-সেই কন্যাকে বিবাহ করা উচিত যাকে বিয়ে করে শান্তি পাওয়া যায় এবং বন্ধুদের নিন্দাভাজন না হতে হয়। এমন কন্যাকে কখনই বিবাহ করা উচিত নয় যে অন্য পুরুষের সংসর্গদুষ্ট!
উপরােক্ত গুণে গুণী কন্যাকে বিয়ে করার জন্য নায়কের উচিত নিজের মাতা-পিতার মাধ্যমে নায়িকার মাতা-পিতার কাছে প্রস্তাব পেশ করা। নায়কের পিতামাতা ছাড়াও নায়কের বন্ধুবর্গেরও সহায়তা করা উচিত। বন্ধুদের উচিত কন্যাপক্ষের সম্বন্ধীদের কাছে অন্য পাণিপ্রাথী নায়কদের নিন্দা করা এবং নিজেদের বন্ধু-নায়কের উচ্চ প্রশংসা করা। নায়কের কোলীন্য, ধন ও সৌভাগ্যের উত্তম বর্ণনা দান করে কন্যার মাতাকে নিজেদের মিত্র নায়কের সঙ্গে কন্যার বিবাহ দানে লালায়িত করে তােলা। বন্ধুরা জ্যোতিষীর ছদ্মবেশে কন্যার বাড়িতে গিয়ে বন্ধু নায়কের মিত্র গ্রহগণের উত্তম ফল, লগ্নফল এবং উচ্চগ্রহের বর্ণনা করে এবং কন্যার মাতাকে বলে, তাদের বন্ধু নায়কের অনেক বড় বড় ঘর থেকে বিবাহ-সম্বন্ধ আসছে। এমন ভাবে বলা উচিত যাতে কন্যার জননীর মনে ঈর্ষা উৎপন্ন হয় এবং আকৃষ্ট হয়ে সে বিবাহের অনুমতি দিয়ে দেয়। তা যখন গ্রহ, নক্ষত্র, শুভাশুভ লক্ষণ, পণ্ডিতের উপদিষ্ট ক্ষণ অনুকূল হয়, তখন কন্যাপক্ষীয়দের শাস্ত্রোক্ত মুহুর্তে কন্যাদান করে দেয়া উচিত। আচার্য ঘােটকমুখ বলেন বিবাহ নিজ ইচ্ছানুযায়ী যে কোন সময় করা উচিত নয়।
বেশি ঘুমায় বা বেশি ছটফটিয়ে ঘুরে বেড়ায় এমন কন্যাকে বিবাহ করা উচিত নয়। বেশি শােওয়া অল্পায়ু এবং বেশি কান্না করা দুর্ভাগ্যের সূচক। বেশি বাইরে বেড়ানাে অভিসারের সঙ্কেত বহন করে।
নিম্নলিখিত অবগুণযুক্তা কন্যাকে বিবাহ করা উচিত নয়ঃ শ্বেতী রােগগ্রস্তা, পুরুষাকার, যার কাঁধ ঝুঁকে গেছে, বিকট রূপ, টিপকপালী, পিতৃমৃত্যুতে শােকমগ্না, ব্যভিচারিণী, বোবা, দুষিত যােনি, হাত-পা থেকে ঘাম ঝরে, যার নাম নক্ষত্র, নদী বা বৃক্ষের নামে, যার নামের শেষ অক্ষর ‘র’ বা ‘ল’!
যে কন্যার প্রতি অনুরাগ জন্মে, তাকে বিবাহ করে ধর্ম, অর্থ এবং কাম প্রাপ্ত হওয়া যায়। যে কন্যার প্রতি অনুরাগ জাগে না, তাকে বিবাহ করলে পরিণাম সুখকর হয় না—এমনটি কোন কোন আচার্যের মত।
বিবাহযােগ্য কন্যার মায়ের উচিত কনেকে উৎসবময়ী সজ্জায় সজ্জিত করা, কেননা এই জগত বাজারে মানুষ প্রত্যেক বস্তুকে দেখেশুনে কিনতে চায়। কন্যাপক্ষীয়দের উচিত বরপক্ষের কর্তাব্যক্তিদের যখন নববধূ প্রথম আলিঙ্গন মেনে নেয়, তখন পতির উচিত নিজ মুখ থেকে পত্নীর মুখে পান দেয়া। যদি নায়িকা তা না গ্রহণ করে তবে পতি তাকে অনুনয়-বিনয় করে তার পায়ে মাথা রাখে, নয়ত তাকে নিজের মাথা খাবার শপথ করে। নায়ক যদি পায়ে পড়ে তবে অত্যন্ত রাগাতি বা লজ্জাশীলা স্ত্রীও বিনম্র হয়ে ওঠে। এই মত সর্বআচার্য সম্মত| নিজ মুখ থেকে নায়িকার মুখে পন দিতে দিতে নায়ক তাকে মৃদু চুম্বন করে এবং তার সঙ্গে আবার বাৰ্তালাপ করে। যদি নায়িকা কথা না বলতে চায়, কথা বলতে আগ্রহসহকারে চেষ্টা করে। সাধারণত নববধূ মাথা নেড়ে নায়কের প্রশ্নের জবাব দেয়, কিন্তু যদি নায়ক রাগ করে কথা বলে, তবে নায়িকা পুরােপুরি চুপ করে গোজ হয়ে বসে থাকে।
নায়ক নায়িকাকে বারবার জিজ্ঞাসা করে আমাকে তােমার পছন্দ কিনা, তুমি আমার সঙ্গ চাও কি না। যদি নায়িকা প্রসন্ন হয়, তবে স্বীকৃতি জানিয়ে মাথা ঝুঁকিয়ে দেবে। যদি কুপিতা হয় তবে বাকবিতণ্ডা শুরু করে দেবে।
নায়কের কর্তব্য উভয়পক্ষের সখীগণকে মধ্যস্ত রেখে নায়িকার সঙ্গে প্রেমালাপ করে। এই সময় নায়িকা মাথা নিচু করে ঠোঁট টিপে আসে। সখীদের প্রণয়মূলক হাসি-ঠাট্টা সম্মানজনক স্তর থেকে বিচ্যুত হলে, তাদের বকাঝকা করে এবং নায়ক যতই জিজ্ঞাসা করে তবু চুপ করে বসে থাকে। শেষে মুগ্ধার ভাব প্রদর্শিত করে বলে – “আমি এমনটি করি না। এই বলে পতির দিকে কটাক্ষ করে হাসতে থাকে।
এইভাবে খানিকটা পরিচিত হবার পরে নায়িকার উচিত নায়ক অনুরােধ করলে তাকে কুমকুম, চন্দনের প্রলেপ দান করা। এই সময় নায়ক কোমলভাবে নববধুর স্তন স্পর্শ করে। যদি নায়িকা বাধা দেয়, তবে নায়ক কথা বলতে বলতে আলিঙ্গন করে ও স্তন স্পর্শ করে বলে যে সে আর এমন করবে না। আবার নায়ক নায়িকার নাভিমুল স্পর্শ করে এবং তাকে কোলে বসিয়ে বেশ একটু জাপটাজাপটি করে। যদি নায়িকা আবার বাধা দেয়, তবে নায়ক তাকে কৃত্রিম ভয় দেখিয়ে বলে, “যদি তুমি আমাকে না মানাে, তবে আমি তােমার অধর, স্তন ও শরীরের অন্য অঙ্গে নখচিহ্ন বসিয়ে দেবাে, এবং নিজের শরীরেও নখচিস্থ বানিয়ে নেব, এবং তােমার সখীদের কাছে বলব? তুমি আমার শরীরে এমনতর নখের দাগ বসিয়ে দিয়েছ, তখন তুমি কি উত্তর দেবে?’ এই ভাবে ভয় দেখিয়ে নায়ক নায়িকাকে ফুসলায়।
দ্বিতীয়-তৃতীয় রাতে যখন নায়িকা আরাে বিশ্বস্ত হয়ে ওঠে, তখন তার স্তন, জংঘা ইত্যাদি সমস্ত গুপ্ত অঙ্গ স্পর্শ করে এবং চুম্বন যােগ্য অঙ্গগুলি চুম্বন করে। নববধূর উরুতে হাত রাখে, হাত বুলায়, বুলাতে বুলাতে ঊরুর সন্ধিদেশে নিয়ে যায় হাত। যদি নায়িকা মানা করে এ নায়ক বলে এতে কি অসুবিধা আছে? এরপরে আলিঙ্গন, চুম্বন ইত্যাদির সাহায্যে তাকে উত্তেজিত করে।
আবার নায়ক কিছু সময় অপেক্ষা করে নায়িকার প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করে। যদি সে মৌন থাকে (এর অর্থ দ্বীতি) তবে ওর চুলের বিনুনি খুলে দেয়। সায়ার গিট খুলে দেয়। উরুর কাপড় সরিয়ে দেয় এবং যােনিদেশে হাত লাগায়। ত্রিরাত্রিতে নায়কের এই মুখ্য কর্তব্য। এর পরের দিন নায়ক নায়িকার সঙ্গে সম্ভোগরত হয়। এর আগে ত্রিরাত্রিতে সম্ভোগ অসমীচীন।
এইভাবে যে নায়ক নববধুর অন্তরে প্রীতি বিশ্বাস ও কাম জাগ্রত করে ধৈর্যসহকারে সম্ভোগরত হয়, সে নায়িকার প্রিয় হয়। নায়িকা তার প্রতি প্রেম ও বিশ্বাস স্থাপন করে। যে নায়ক নায়িকাকে তড়িঘড়ি হঠাৎ করে সম্ভোগ করে, তার প্রতি নায়িকা বিদ্বেষপরায়ণ করে এবং সেই নায়িকার ব্যভিচারিণী হবার সম্ভাবনা থাকে। স্ত্রীকে অতিরিক্ত লজ্জাবতী মনে করে তাকে উপেক্ষাও করা উচিত নয়, কেননা লঙ্কানতা হয়ে চুপ করে থাকলেও সে মনে মনে সঙ্গোপনে রতিসুখ কামনা করে। মূলকথা, নববধু পন্তি অত্যধিক পরিমাণে তার ইচ্ছার অনুকুলে চললেও খুশি হয় না। আবার অত্যধিক প্রতিকুল আচরণেও সুখী হয় না। অতএব নায়কের নায়িকার সঙ্গে অনুকুল ও প্রতিকুলের মধ্যমার্গ গ্রহণ করা উচিত।
২০. গান্ধর্ব বিবাহ
মাতা পিতার থেকে আলাদা, ধনহীন বা ধনবান কিন্তু অকুলীন এবং বালখিল্য স্বভাবের যুবকদের যুবতীরা হেয় দৃষ্টিতে দেখে। অতএব এমন যুবকদের উচিত বিবাহের উদ্দেশ্যে বাল্যাবস্থাতেই কোন কন্যার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা করে। এবং তার মধ্যে প্রণয় সৃষ্টির চেষ্টা করা। কন্যার কাছে থাকলে, তার সঙ্গে ঘন ঘন দেখা করলে ও কথাবার্তা বললে সে অনুরক্ত হয়। এবং তখন তার সঙ্গে গান্ধর্ব বিবাহ করা ধার্মিক কৃত্য বলে স্বীকৃত হয়।
নায়ক কম বয়সের কন্যাদের সঙ্গে বিভিন্ন খেলা খেলে, যেমন ফুল তােলা, মালা গাঁথা, কাগজের ঘর বানানাে, পুতুল, দড়ি টানাটানি, গুলি খেলা, কানামাছি ভো ভো খেলা। নিজ নিজ দেশজ রীতি অনুযায়ী খেলা করা উচিত।
নায়কের উচিত বাঞ্ছিত কন্যার সখী বা ধাই-কন্যাকে নিজের বিশ্বাসভাজন করে ভােলা, এবং তার মাধ্যমের কন্যার প্রতি প্রেম নিবেদন করা। এমন মধ্যস্থ স্ত্রী নায়কের গুণাগুণ বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলে কন্যার মনকে নায়কের প্রতি আকৃষ্ট ও অনুরক্ত করে তােলে।
যে বস্তুগুলি প্রণয়িনী চায়, নায়ক সেসব এনে দেয়, যেমন, বল, হাতির দাঁত, মােমের পুতুল, মাটি বা কাচের পুতুল, শৃংগারের দ্রব্য ও অন্যান্য উপহার। কিছু কিছু উপহার নায়ক লুকিয়ে লুকিয়ে দেয়, যেমন পশুপাখীর মৈথুনরত যুগলমূত। আবার লুক্কায়িত বস্তুর ব্যাপার মামাবার কাছে ফাস করে দেবার ভয় দেখায়। যাতে লােকলাজের ভয়ে কন্যা নায়কের প্রেম প্রস্তাব স্বীকার করে নেয় এবং নতুন আকর্ষর্ক বস্তুর লােভ সামলাতে না পারে।
নায়কের কর্তব্য কন্যাকে মনােহর, রসাল কথা শােনায়, নানারকম কৌতুক ও খেলা দেখায় এবং দাই-কন্যাকে কামশাস্ত্রের চৌষট্টি কলা শেখাবার কাজে লাগায়। এবং স্বয়ং তাকে রর্তি বিজ্ঞানের শিক্ষা দেয়। প্রণয়াম্পদার কাছে সবসময় বস্ত্রালংকার পরে যায়।
উপরােক্ত পদ্ধতিতে কন্যার মনে অনুরাগ উৎপন্ন হয় এবং সে নিজ প্রেমাস্পদ পূরুষকে লাভও করতে পারে। কিন্তু কখনও কখনও এমনটি হয় না।
যুবতী বালাদের প্রসন্ন করার চেষ্টার পরে এখন যুবতী কন্যাদের হাবভাব বর্ণনা করা হচ্ছে।
অনুরক্ত যুবতীদের হাব-ভাব ও সংকেত নিম্নরূৰ্প হয়ে থাকে।
যুবতী নিজ সামনে বা নিজ প্রিয়তমের দিকে তাকায় না, যদি । চোখাচোখি হয়ে যায়, তবে লজ্জাভাব প্রকাশ করে। প্রেমিক দূরে গেলে বা আড়ালে গেলে তাকে বারম্বার দেখতে থাকে – এটা নারীর জম্মগত স্বভাব। যে কোন বাহানা করে প্রেমিককে নিজ মনােহর অঙ্গ দেখায়, প্রণয়ীর কাছে থাকতে ভালবাসে এবং এমনস্থানে দাড়িয়ে সখীদের সঙ্গে কথা বলা পছন্দ করে সেখান থেকে সে তার প্রেমিকের নজরে আসে। প্রেমিককে দেখে কোলে নেয়া বাচ্চাটিকে আলিঙ্গন ও সশব্দে চুম্বন করে, ঠোঁট কাপায়, চোখ নাচায়, চুলের বাঁধন খুলে ফেলে, আবার বাঁধে, কাচুলি-আবৃত স্তন দেখায়, কাচলি খােলে। ছল করে জঙঘার কাপড় সরিয়ে দেয়। এবং সায়ার গিট ঢিলে করে দেয়। যুবতীদের এই সব লক্ষণ দেখে বুদ্ধিমান পুরুষের বুঝে নেয়া উচিত যুবতী তার প্রতি প্রণয়-অনুরক্ত। অনুরক্ত যুবতী নিজ প্রেমিকের বন্ধুদের আপ্যায়ণ করে, তার অনুচরদের স্বামীর ন্যায় নিজের কাজে লাগায়। বস্ত্র-অলংকার পরিধান না করে প্রেমিকের সামনে কখন যায় না, প্রেমিকের উপহারের জিনিসগুলি পরম আদরে গ্রহণ করে।
যুবতীর এই সঙ্কেতগুলি লক্ষ্য করে নায়কের উচিত তাকে গান্ধর্ব বিবাহ করে নেয়া। খেলনা দিয়ে বালাদের, কামকলার সাহায্যে তরুনীদের এবং দৃঢ় বিশ্বাস জাগ্রত করে প্রৌঢ় নায়িকাকে বশ করা প্রয়ােজন।
২১. নায়িকা প্রাপ্তির উপায়
অনুরক্ত নায়িকাকে পুরুষ নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে প্রাপ্ত হয় – কথাবার্তা বলার সময় বা দূত ক্রীড়ার সময় কন্যার হাত চেপে ধরে, ফাক পেলে তাকে আলিঙ্গন করে, সম্ভোগরত পাখীদের দেখিয়ে নিজ মনােভাব প্রকট করে। নিজ কাম ব্যাকুলতা বারবার প্রকট করে বলে, ঠিক ভােমার মত এক স্ত্রীর সঙ্গে স্বপ্নে সম্ভোগ করেছি। নাটক দেখার সময় হাসি তামাশার সময় পাশে-বসা কন্যাকে স্পর্শ করে। নিজ পা দিয়ে বাঞ্ছিত কন্যার পা চাপে। যদি তখনও কন্যা চুপ করে থাকে, তবে তার জঘা ইত্যাদি সংবেদনশীল অঙ্গ স্পর্শ করে। যদি ললনা এ সমস্ত সহন না করে, নায়ক আর বেশি না এগিয়ে বারম্বার ঐ একই অঙ্গকে স্পর্শ করতে থাকে। পান-সুপারি দেয়া-নেয়ার সময় তার সঙ্গে ঠাট্টা তামাশা করে, এবং এভাবে নিজ কামেচ্ছা প্রকট করে। একান্তে তাকে স্পর্শ করে ও কথা বলতে বলতে নিজ কাম অভিলাষ প্রকট করে, কিন্তু তাকে বিরক্ত করে না।
যখন নায়ক জানতে পারে যে অমুক কন্যা তার প্রতি অনুরক্ত, তবে যে কোন ছল-ছুতাে করে তাকে নিজের বাড়িতে ডাকে ও তাকে দিয়ে মাথা টেপায়। তাকে বলে আমি রুগ্ন, তুমি ওষুধ লাগিয়ে দাও, তুমি ছাড়া কেউ এই কাজ করতে পারে না। এই ভাবে তাকে তিন রাত্রি ডাকে প্রেমিকা আবার তার মনােরঞ্জনের জন্য বাড়িতে গানবাজনা, নাটক ইত্যাদির ব্যবস্থা করে। নিজ ভাবভঙ্গী দ্বারা তাকে দর্শায় অন্য স্ত্রীলােকদের চেয়ে ভােমার প্রতি আবার প্রেম সর্বাধিক – কিন্তু মুখে কিছু বলে না। আচার্য ঘােটকমুখ বলেন যে কনা তখনই বশীভূত হয় যখন সে প্রেমীর হার্দিক ভাব জানতে পারে।
বিবাহ করার জন্য গান্ধর্ব ইত্যাদি যে বিধি কন্যার পছন্দ, পুরুষ সেই পদ্ধতিই গ্রহণ করে। সন্ধ্যাকালে বা রাতে স্ত্রীদের ভয়-সংকোচ কম হয়, এই সময় তারা প্রেমাতুর হয়, অতএব এই সময়েই নায়কের উচিত সম্ভোগের জন্য চেষ্টা করা।
নায়িকা স্বয়ং একার চেষ্টায় পুরুষের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে না। অতএব তার নিজ দাই বা সখীর সাহায্য নেয়া কর্তব্য।
নায়কের ঐ কন্যার কাছেই সম্ভোগসুখ চাওয়া উচিত, যাকে পরীক্ষা করে নায়ক জানতে পেরেছে যে ঐ কন্যা তার প্রতি প্রেমাসক্ত। এমন কন্যার কাছে প্রেম প্রার্থনা করলে সে প্রেমিককে ফেরাতে পারে না। কারণ প্রেমিকের প্রতি তার পূর্বরাগ রয়েছে।
২২. স্বয়ংবর
মাতা-পিতার আশ্রয়ে বঞ্চিত, অকুলে উৎপন্ন এবং বিবাহের জন্য অপ্রার্থিত যুবতীর নিজ বিবাহ স্বয়ং করে নেয়া উচিত। স্বয়ংবরের সময় যুবতী সুন্দর গুণবান পুরুষকে গ্রহণ করে। অথবা তাকে গ্রহণ। করে যার সঙ্গে বাল্য প্রণয় ছিল।
যে যুবা পুরুষ সম্পর্কে কন্য এটা বুঝতে পারে যে উক্ত যুবা নিজ কামুকতার কারণে আপন মাতাপিতাকে অবজ্ঞা করে তাকে বিয়ে করে নেবে, সেই যুবকের সঙ্গে কল্যা বারবার সাক্ষাৎ করে এবং মধুর ব্যবহার করে।
সখী, দাই বা মাতা জীবিত থাকলে তার মাধ্যমে প্রণয়িনী কন্যা পুরুষের কাছে পাম্প, গন্ধ ও পান নিয়ে যায়, এমন আচরণে পুরুষ প্রভাবিত হয়।
নায়িকা পা টেপা বা মাথা টেপার অছিলায় মাঝে মাঝে নায়কের সঙ্গে মিলি হয় তার মনমত আচরণ করে; কিন্তু তার কাছে বিবাহ প্রার্থনা বা প্রেম ভিক্ষা না করে, এমন করলে তাকে নায়ক তিরস্কারের দৃষ্টিতে দেখে। পুরুষ একটু জাপটাঙ্গাপটি করলে রাগারাগি না করে স্বীকার করে নেয়। নায়ক চুম্বন করলে তা গ্রহণ করে নায়িকা নিজ উদাসীনতা বা অনুরাগপুর্ণ ভাবুর্নাগুলি মনের কোণে লুকিয়ে রাখে, প্রকাশিত করে না। নায়ক সদ্যোগ প্রার্থনা করলে কঠোর হয়, তাকে বড়জোর গুপ্তাঙ্গ ছুঁতে দেয়, কিন্তু সম্ভোগ ক্রিয়া করতে সহজে রাজি হয় না। গান্ধর্ব বিবাহে সম্ভোগের অনুমতি নায়িকা তখনই দেয়, যখন সে বুঝে যায় যে এই পুরুত্ব আমার সঙ্গে যথার্থই প্রেম করে এবং বিবাহে আদৌ বিমুখ হবে না।
স্বয়ংবরায় যুবতী সমর্থ, গুণবান এবং নিজ বশীভূত পুরুষকে নির্বাচন করে বরমাল্য দান করে। অনেক স্ত্রীলােকের গুণবান স্বামীও অযােগ্য। কিন্তু স্ত্রীর বশে যে থাকে সে, এবং গুণহীন, দরিদ্র ও আলাদাভাবে জীবিকা উপার্জনশীল বর শ্রেষ্ঠ! ধনবান লােকের স্ত্রীরাও অনেক ক্ষেত্রে সুখী হয় না। যে কন্যা, নীচ, বৃদ্ধ ও প্রবাসীকে বিয়ে করে, সেও দুঃখী হয়ে থাকে। পরস্ত্রী আসক্ত, অহঙ্কারী, জুয়ারী এবং অনেক সন্তানের জনক পুরুষকে বিয়ে করেও সুখ মেলে না।
গুণের দিক থেকে সমান ও অনুরাগী পুরুষই স্বামী হিসেবে শ্রেষ্ঠ।
২৩. অসুরাদি বিবাহ
যখন নায়ক নিজ পরাগের প্রিয় প্রণয়িনীর সঙ্গে সাক্ষাৎকার করতে অসমর্থ হয়, তখন তার উচিত নিজ দাইয়ের মেয়েকে ঐ নায়িকার কাছে পাঠায়। এর উদ্দেশ্য হােল দাই-কন্যা এতাে নিখুঁত যােগ্যতার সঙ্গে বারবার নায়কের গুণের বর্ণনা নায়িকার কাছে করতে থাকবে যে কন্যার হৃদয়েও নায়কের প্রতি পূর্বরাগ সঞ্চারিত হবে। দাই-কন্যা ঐ নায়িকাকে ভয় দেখায় যে তার বড় ঘরে বিয়ে হলে সে সতীন ও স্বামী দ্বারা পরিত্যক্ত হবে। আরও বলে এই পূর্বরাগপরায়ণ নায়ক একটাই বিয়ে করবে আর ভােমরা দুজনে সুখে থাকবে। কন্যাকে এই ভয়ও দেখায় যে যদি তুমি নায়ককে স্বীকার না করাে, তবে সে তােমাকে জোর করে বিয়ে করে নেবে।
যখন নায়িকা দাইয়ের প্রস্তাব স্বীকার করে নেয়, তখন নায়কের কর্তব্য হল বেদপাঠীর ঘর থেকে অগ্নি চেয়ে নিয়ে, ধর্মশাস্ত্র অনুসারে হােম করে অগ্নি ও কন্যাকে তিনপাকে বাঁধে।
অগ্নিসাক্ষী করে বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়, তা কখন মিথ্যা হতে পারে। এই আচার্যগণের মত। নববধূকে সম্ভোগ করে নিজের ও কন্যার কুটুম্বদের বিবাহ রহস্য প্রকাশিত করে। নায়কের কর্তব্য প্রীতি ও উপহার দ্বারা নববধূর সম্বন্ধিদের প্রসন্ন করা।
যে যুবতী বিবাহের জন্য প্রস্তুত নয়, তাকে নায়ক অন্তঃপুরবাসী কুলবধুদের দ্বারা ডেকে নেয় এবং তার সাথে সম্ভোগ করার পরে বেদপাঠী ব্রাহ্মণের কাছ থেকে অগ্নি আনয়ন করে শাস্ত্রোক্ত বিধিতে বিবাহ করে।
যদি নায়িকা বিবাহ করতে না চায় তবে নায়কের উচিত নায়িকার ভাইয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করা এবং তার দ্বারা যুবতীকে ডেকে বেদপাঠী ব্রাহ্ম দ্বারা তাকে বিবাহ করা।
পর্ণিমায় যখন নায়িকা হ্রত রাখে এবং রাত্রি জাগরণ করে, তখন দাই কন্যা নায়িকাকে আঁদিনা পান করিয়ে সম্ভোগ-স্থলে কোন অছিলা। করে নিয়ে যায়, সেখানে অচেতন কন্যাকে সম্ভোগ করে তাকে ‘গান্ধর্ব বিবাহ করে এবং কন্যার সম্বন্ধিদের কাছে সব ফাঁস করে দেয়।
নায়ক নিজ বাঞ্ছিত কন্যাকে শায়িত পেয়ে সেখান থেকে দাইকন্যাকে সরিয়ে মনমােহিনী কন্যার কুমারীত্ব ভঙ্গ করে এবং গন্ধর্ব বিবাহ করে তার পরে নিজ ও কন্যার আত্মীয়স্বজনকে সব খবর জানায়।
এক স্থানে বা অন্য স্থানে গমনশীল অবস্থায় অথবা বাগানে প্রিয় যুবতীকে অপহরণ করে এবং তাকে বিবাহ করে। এই হল রাক্ষস বিবাহ।
২৪. গৃহিণীর কর্তব্য
পতিব্রতা স্ত্রীর উচিত পতিকে দেবতা মেলে তাঁর প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা, বিশ্বাস ও প্রীতি রাখে এবং তার মনমত ব্যবহার করে। তার সম্মতি অনুযায়ী গৃহ-ব্যবস্থা করে, ঘর স্বচ্ছ, সুগন্ধিত এবং পুষ্পময় করে রাখে। ঘরে যজ্ঞ, পুজা হােম ও সন্ধ্যা অনুষ্ঠান নিয়মিত অনুষ্ঠিত করে। নিজ শ্বশুর, শাশুড়ী, ননদ এবং নন্দাই ইত্যাদি স্বজনবর্গকে যথাযােগ্য আপ্যায়ন করে। বাগানে নানারকম শাক-সক্তি ও ফুল চাষ করে। ভিক্ষুণী, ব্যভিচারিণী এবং তুকতাক করে যে মহিলারা তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা গৃহিণীর পক্ষে অবিধেয়। রতিসপনকে সুসজ্জিত, সুশােভিত রাখে এবং উত্তম, উজ্জ্বল বস্ত্র পরে পতির সঙ্গে সেথায় বিচরণ করে।
পতি ঘরে ফিরলে কিছু না বলতেই তার সেবার জন্য স্বতঃস্ফুর্তভাবে প্রস্তুত থাকে। পতির পা ধয়ে দেয়। সুগহিণী পতির অত্যধিক ব্যয়প্রবণতা বা কৃপণতা – এই ধরণের যে কোন দোষ ত্রুটি সম্পর্কে পতিকে একান্তে প্রেমপূর্বক বােঝায়। সবার সামনে এই ধরণের বাক্যালাপ করলে স্বামীর অপমান হয়। কোথাও বাইরে যাবার প্রয়ােজন হলে পতির আদেশ নিয়ে ননদ ইত্যাদির সঙ্গে যায়। পতির পরে পােয় ও পতির আগে শয্যাত্যাগ করে।
কখন দরজা বা জানলায় বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে না থাকে। পরপুরুষের সঙ্গে নির্জন স্থানে কথা না বলে, পতিকে কটুবাক্য না শােনয়। একান্তে বস্ত্রালংকারে সুসজ্জিত হয়ে ও শৃঙ্গার করে পতির কাছে উপস্থিত হয়। ঘাম, দাঁতের ময়লা ও দুর্গন্ধ পতির হৃদয়ে পত্রীর শ্রেতি বিরক্তি সৃষ্টি করে সুতরাং শরীর, বেশভুষণ সুগন্ধিত ও উজ্জ্বল হওয়া উচিত।
নানা ধরণের ধাতব বাসনপত্র কিনে সংগ্রহ করা উচিত। ঘরে যাবতীয় মসলাপাতি মজুত রাখা কর্তব্য। চতুরতা, পাকবিদ্যা, স্বচ্ছতা, সেবা ইত্যাদি কাজে অগ্রণী থাকা উচিত। ঘরােয়া কথাবার্তা ও পতির সঙ্গে একান্তে যে কথাবার্তা হয় সেসব বাইরে প্রকাশ করা উচিত নয় ।
বছরের আয়ের হিসাব করে তদনুসারেই ব্যয় করে। চাষবাস, পশুপালন, গাড়ি ইত্যাদির সঠিক ব্যবস্থা রাখে। চাকরদের বেতন ইত্যাদির দিকে খেয়াল রাখা। তাদের গহস্বামীর ব্যবহৃত পুরনাে কাপড়-চোপড় রঙ করে পরার জন্য দান করে। ঘরের উদ্বৃত্ত জিনিসপত্রের সদ্ব্যবহার করে। প্রতি বন্ধুদের আপ্যায়ন ও সম্মান করে এবং শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা-যত্ন করে।
পতিব্রতা স্ত্রীর উচিত স্বল্পভাষী ও মধুরভাষী হয়, নির্লজ্জের মত হাসে, ভােগ বিলাসে অধিক আসক্তি না রাখে। সম্বন্ধিদের সঙ্গে বুদ্ধিমত্রীপূর্ণ ব্যবহার করে, পতিকে না বলে কোন বস্তু কাউকে দেয় , চাকর রাখে না এবং উৎসবে নিজ স্বামীর পূজন করে।
পতি বিদেশে গেলে পত্নীর উচিত সাধারণ গয়না পরে, উপাসনা করে। শাশুড়ীর কাছে শােয়, গুরুজনের আদেশ অনুযায়ী কাজ করে, পতির মনের মত জিনিসপত্র সঞ্চয় করে, গুছিয়ে রাখে। স্বামীর অসমাপ্ত কাজ সম্পূর্ণ করতে চেষ্টা করে, বিবাহ ও মৃত্যুশোক ছাড়া পিতৃগৃহে না যায় এবং সেখানে বেশি দির্ন না থাকে। প্রবাস থেকে প্রত্যাগত স্বামীকে পতিব্রতা স্ত্রী বাড়াবে দর্শন করে। ফুল দিয়ে দেবপূজন করে। পতিকে যথােচিত সম্মান করে পতিব্রত স্ত্রী ধর্ম, অর্থ, কাম, উচ্চস্থান ও উত্তমপতি প্রাপ্ত হয়।
স্ত্রী যদি মুখ, দুশ্চরিত্রা হয়, বারবার কন্যা সন্তানের জন্ম দেয় বা পতি লম্পট হয় তবে পুনর্বিবাহ অনুমােদনযােগ্য। এইজন্য পত্নীর উচিৎ আপন হাতের সেবা, সুশীল স্বভাব ও বুদ্ধিমত্তার দ্বারা স্বামীকে প্রসন্ন রাখা, যাতে সে দ্বিতীয়া পত্নী আনতে উম্মুখ না হয়।
যদি স্ত্রীর সন্তান না হয়, তবে স্ত্রী নিজেই স্বামীকে আবার বিবাহ করতে অনুমতি দেয়। প্রথম পত্নীর কর্তব্য হল সপত্নী নববধূকে বােনের মত ভালবাসে। পতির পছন্দসই বস্ত্র পরে, পতিকে একান্তে ভাল ভাল কথা বলে, শেখায়। সপত্নী সন্তানদের মধ্যে ইতর-বিশেষ না করে এবং তাদের বাপের বাড়ির স্বজনদের সম্মান করে।
যদি বহু পত্নী যাকে, তবে প্রত্যেকের উচিত বয়সে ছােট সপত্নীকে আদর-যত্ন করা। প্রথমা পত্নীর উচিত স্বামী যদি কোন উপপত্নীর প্রতি অত্যন্ত প্রেমাসক্ত হয়, তবে তার সঙ্গে নায়কের প্রথম প্রেমিকার ঝগড়া বাধিয়ে দেয়া এবং আবার ঐ ঝগড়া শান্ত করা। যদি পতি বিশেষ কোন স্ত্রীর প্রতি বেশি আসক্ত হয়, তবে তার অনাচারের নিন্দা স্বামীর কাছে করে। পতির সঙ্গে যে পীর ঝগড়া হয়ে গেছে, সেই পত্নীর পক্ষ অবলম্বন করে। বারম্বার ঝগড়া বাধায়, আবার নিজেই মিটিয়ে দেয়। এতে করেও যদি সপত্নীর প্রেম না কমে, ভূবে বড় পত্নীর উচিত ঐ দুই পত্নীর মিল করে দেয়।
ছােট পত্নীর কর্তব্য নিম্নরূপ –
বয়ােজ্যেষ্ঠা সপত্নীকে মায়ের সন্মান আদর করে, তার আজ্ঞা। ছাড়া টাকা-পয়সা খরচ না করে, আবশাক কাজ ভার অধীনে রাখে, এবং তার আদেশ নিয়ে স্বামীর কাছে শয়ন করে। সপত্নী সন্তানকে নিজ গর্ভজাত সন্তানের চেয়ে বেশি মন করে এবং পতি যে সম্মান ও প্রেম দান করে, তা জ্যেষ্ঠা সপত্নীর কাছে প্রফট না করে। তার প্রতি স্বামীর প্রেম/টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে। পতিকে একান্তে সেবা করে এবং তার কাছ থেকে আরাে বেশি বেশি প্রেম ও মান পাবার প্রযত্ন করে!
২৫. পূনর্ভু
যে বিধবা ধনবান ও গুণবানকে পতি রূপে পুনরায় গ্রহণ করে, নিজ গুণহীণ পতিকে ত্যাগ করে অন্য পুরুষকে বিবাহ করে বা সুখলাভ করার আশায় পরপুরুষকে বিয়ে করে নেয় – এমন স্ত্রীকে পুনর্ভু বলে।
পুনর্ভু স্ত্রীর উচিত নায়কের মনের অনুকূল কার্য করে, তার মিত্রদের আদর-আপ্যায়ন করে। রতিকালে চৌষট্টিটি কামকলার দ্বারা নায়ককে প্রসন্ন রাখে; সপত্নীদের কাজগুলি প্রসন্নচিত্তে করে, তাদের সন্তানদের লালন-পালন ষত্বপুর্বক করে, সমাজগােষ্ঠীর ঘরােয়া সভা, মদ্যপান, বাগানে ঘুরতে যাবার সময় ও উৎসবে যােগ দিতে যাবার সময় নায়ককে সঙ্গ দেয়।
দুঃখী বা অভাগী স্ত্রী, যে জন্য স্ত্রীদের দ্বারা উপেক্ষিতার উচিত সেই পত্নীর আশ্রয় গ্রহণ করা যাব প্রতিষয়কের প্রেম সবচেয়ে বেশি। তার উচিত নায়কের পুত্রদের সেবা করা এবং তার বন্ধুদের আপ্যায়িত করা। সে পূজা-পাঠ ব্রত ইত্যাদি ধর্মকর্মে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করে এবং নায়কের আত্মীয়-স্বজনকে প্রসন্ন রাখে। নায়কের প্রতি সবসময় এইভাব প্রকট করে যে আমি তােমারি প্রেমিকা। নায়কের কলহপ্রবণ সপত্নীদের নিজ মিত্র বানাবার চেষ্টা করে। যদি নায়ক কোন অন্য স্ত্রীলােকের সঙ্গে প্রেম করে, তবে সেই প্রেমিকার সঙ্গে নায়কের মিলন ঘটিয়ে দেয় বা ব্যাপারটা গােপন রাখে। উপেক্ষিতা স্ত্রীর এমন আচরণ করা উচিত যেন স্বামী, তাকে পতিব্রতা ও সচ্চরিত্রা বলে বুঝতে পারে।
২৬. অন্তঃপুর
অন্তঃপুরের বাসিন্দা পরিচারিকা ও দাসীবৃন্দা রাণীদের প্রদত্ত মালা, বস্ত্র ও সুগন্ধী প্রলেপ রাজাকে পৌঁছে দেয় এবং রাজা এগুলি সপ্রেমে স্বীকার করেন এবং নিজের ব্যবহার করা গতদিনের মালা ও বস্ত্র দাসীদের হাতে দেন। দিনের তৃতীয় প্রহরে রাজা অস্তঃপুরের সব স্ত্রীকে দর্শন দেন, তাদের সঙ্গে মধুর আলাপ ও বিনােদন করেন। এরপরে রাজা পুনর্ধ স্ত্রীদের দর্শন দান করেন, এর পরে বেশ্যা ও নটীদের সঙ্গে মিলিত হন এই সব স্ত্রীদের সঙ্গে রাজা নিজের কক্ষেই মিলিত হন।
রাজা যখন দুপুরের বিশ্রাম-শয়ন থেকে ওঠেন তখন মহত্তরিকা (যে রাজাকে নিবেদন করে ঐ দিন রাতে রাজা কোন স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হবেন) কার পালা ক্রমানুসারে এসেছে বা যার পালা এসে চলে গেছে -এই সমস্ত বিষয়ে রাজা সকাশে গিয়ে জানতে চান। ঐ সমস্ত স্ত্রীদের দাসীদের সঙ্গে নিয়ে মহত্তরিকা রাজসন্দর্শনে গমন করে। কোন স্ত্রীর সঙ্গে বাইরে রাজকার্যে যাবার ফলে মিলিত হওয়া সম্ভব হয়নি, যাদের সঙ্গে রাজার মিলন-যামিলী বাস্তবায়িত হয় নি পালা অনুসারে – এই সব বিষয় মহত্তরিকা জানতে চান। মহত্তরিকা রাজার কাছে সমাগমপ্রার্থী স্ত্রীদের সম্ভোগচিহ্নের প্রলেপ, আঙটি (বিশেষ ভাবে চিহ্নিত) ইত্যাদি উপহার সামগ্রী রেখে আসে। এর পরে রাজা কোন এক স্ত্রীর উপহার স্বীকার করেন এবং মহত্তরিকাকে জানান হয় অদ্য কোন স্ত্রীর সঙ্গমের পালা সমাগত।
অন্তঃপুরের স্ত্রীরা একাকী বাইরে যেতে পারে না এবং বাইরের স্ত্রীলােকরা অন্দরমহলে প্রবেশ করতে পারত না। কেবল ঐ সমস্ত স্ত্রীগণ ইচ্ছানুসারে আসা-যায়া করতে পারত যাদের আচরণ শুদ্ধ ও পবিত্র। অন্তঃপুরচারিনী স্ত্রীগণের কাজ খুব কষ্টদায়ক হয় না।
বহু বিবাহকারী পুরুষের উচিত নিজ পত্নীদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করা, তাদের দোষ ত্রুটির দিকে নজর রাখা, কিন্তু তাদের অপমান না করা, তাদের দোষের আলােচনা না করা। এক পত্নী আরেক পত্নীর কিছু অপকার করলে তারে ভৎসনা করে, কোন পত্নীকে গােপন কথা বলে, কোন পত্নীকে আদর ভালবাসা দিয়ে খুশি রাখে এবং রতিক্রিয়ার দ্বারা সকলকেই তৃপ্ত রাখে।
২৭. পরস্ত্রীগমন
পরস্ত্রীগমন অর্থাৎ পরস্ত্রীর সঙ্গে যৌন মিলন করা ধর্মবিরুদ্ধ কাজ। কিন্তু কিছু বিশেষ অবস্থায় এটা করা যেতে পারে, যেমন কোন পরস্ত্রীকে দেখে সম্ভোগের ইচ্ছা যদি এ্যাতােই বলব হয়ে ওঠে যে প্রাণ যায় যায় হয় সেক্ষেত্রে, বা কোন কামােন্মত্ত যুবতী যদি অতিপ্রার্থিনী (রতিসুখ কামী) হয় এবং তাকে রতি না করলে সৈ উম্মাদ রােগগ্রস্ত বা মরণােন্মুখ হয়ে যায় তবে সেক্ষেত্রেও পুরুষের তার সঙ্গে সম্ভোগ ক্রীড়া করা উচিত। কেবলমাত্র চিত্তচাঞ্চল্য হলেই পরদারগমন করা উচিত নয়।
কাম বিকারের ক্রম-তালিকায় দশটি লক্ষণ রয়েছে। যথা – চোখের নেশা ভালবাসা, মনের আসক্তি, কামনার ধন সাথীকে পাবার সংকল্প, অনিদ্রা, শরীরে দুর্বলতা, ভােগ-বিলাসে বিতৃষ্ণা, নির্লজ্জতা, পাগলামাে, হিস্টিরিয়া ও মৃত্যু।
স্ত্রীর আকুতি, লক্ষণ এবং হাবভাব থেকে বুদ্ধিমান পুরুষ প্রথমেই বুঝে নেয় অমুক স্ত্রীলােক বশে আসবে কিনা।
নিম্নপ্রকারের স্ত্রীগণ পুরুষের অধিকারে আসে না – যে শুধুমাত্র নিজ পতিকে ভালবাসে, যুবাবস্থা কেটে যাওয়ায় যার কামের প্রাবল্য কমেছে, যে দুঃখী ও রতিলালসাহীন। যে সুখের জন্য, শুধু সন্তান উৎপাদনের জন্য রতিতে প্রবৃত্ত হয়, যাদের গুপ্ত প্রণয় প্রকট হয়ে যাবার ফলে অপমানিত হবার প্রবল ভয় বর্তমান, যে মনে করে অমুকে বড়ই বেরসিক বা প্রচণ্ড কামী অথচ আমি দুর্বল মৃগীরােগী। যে এই জন্য লজ্জিত যে অমুকে আমার বন্ধুস্থানীয় এবং ঐ পুরুষ সভ্য আর আমি গোঁয়ার। পুরুষের মুখতায় উৎপন্ন গ্লানি, সখীদের দ্বারা অপমানিত হওয়ার ভয়, এই পুরুষ ‘শশ’ হবার ফলে অল্প কামুক অথচ আমি হস্তিনী, তাই যৌন আনন্দ আসবে না। এই পুরুষের শরীরে কোন রােগ আছে এই ভয়, ঘর থেকে বের করে দেয়া হবে এই ভয়, অধমের ভয়, এই আশঙ্কা – এই পুরুষটি আমার স্বামী কর্তৃক প্রেরিত এবং আমার সতীত্বের পরীক্ষা নিচ্ছে। এই সমস্ত ক্ষেত্রে স্ত্রী অধিকারে আসে না।
এই জন্য স্ত্রীলােকের সাহচর্য ও যৌন সঙ্গম অভিলাষী পুরুষের উচিত নিজের যে অভাব বা দুর্বলতার জন্য স্ত্রীলােকরা তার বশে আসছে না, সেই দুর্বলতাগুলি দূর করে বা গােপন করে রাখে এবং যথাসাধ্য স্ত্রীলােকদের সঙ্গে মেলামেশা বাড়ায়। কারণ ঘনিষ্ঠতা বাড়লে এইভাবে পরিচয় ও সংকেত হলে পরে ঐ স্ত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে।
যুবতী কন্যাদের সম্ভোগের জন্য কম প্রার্থনার প্রয়ােজন হয়, কেননা সম্ভোগের অভিজ্ঞতা না থাকার দরুন সে যৌন মিলনের জন্য উৎসুক থাকে। কিন্তু বিবাহিতা মহিলাদের সঙ্গে সম্ভোগ করার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করতে হয়, কারণ তারা সম্ভোগের অভিজ্ঞতায় অভিজ্ঞ।
যখন এমন নায়িকা নায়কের প্রতি প্রেম প্রকট করে, তখন নায়কের প্রদত্ত ভােগ বিলাসের উপহার গ্রহণ করে। যেগুলি সে (নায়ক) নিজের নখ ও দাঁত দ্বারা চিহ্নিত করে দিয়েছে। পরস্ত্রীর নানারকম ভয়, দ্বিধা থাকে, তাই পুরুষের উচিত কথাবার্তা বলে সাহস ও উৎসাহ জুগিয়ে তারা নিরানন্দ ও চিন্তাক্লিষ্ট ভাব দূর করে। এরপরে একান্তে তাকে আলিঙ্গন-চুম্বন করে ও বিভিন্ন অঙ্গ স্পর্শ করে। এর পরে সম্ভোগ প্রার্থনা করে।
-আশঙ্কাগ্ৰস্তা, সুরক্ষিত, ভয়ভীতা, যারা শ্বশুর-শাশুড়ীর সঙ্গে বসবাস করে – এমন স্ত্রীকে সম্ভোগ করার কামনা কখনই প্রতিষ্ঠা আকাঙ্ক্ষী পুরুষ নিজ অন্তরে ঠাঁই দেয় না।
প্রেমিকার মনােভাব
যদি নায়ক সম্ভোগ প্রার্থনা করে এবং পরদারা বা পরপত্নী সেই প্রার্থনা না-মঞ্জুর করে, তবে সেক্ষেত্রে নায়কের বারম্বার প্রার্থনায় সেই স্ত্রী দ্বিধায় পড়ে যায়। এই জন্যই নায়কের চেষ্টা ছাড়তে নেই। সম্ভোগ প্রার্থনা অস্বীকার করেও যদি সেই নায়িকা বস্ত্রাভূষণ ধারণ করে পুরুষের সঙ্গে একান্তে সাক্ষাৎ করে, তবে এর অর্থ হল সে নায়কের প্রতি প্রেমাসক্ত। যে স্ত্রী পুরুষের প্রতি অনুরক্ত থাকে, কিন্তু আবার দূরে চলে যায় এবং সম্ভোগ প্রস্তাব বারবার নাকচ করে দেয় – এমন স্ত্রীকে বশ করতে কঠিন মেহনত, ধৈর্য, সময় ও প্ররােচনা প্রয়ােজন হতে পারে।
যদি কোন পরস্ত্রী পরপুরুষের সম্ভোগ প্রস্তাবকে কর্কশ ভাষায় প্রত্যাখ্যান করে এবং তিরস্কার করতে থাকে, তবে এমন স্ত্রীলােককে স্বপ্নেও কামনা করা পুরুষের অনুচিত।
যে স্ত্রী পুরুষকে তীব্র তিরস্কার করে কিন্তু আবার পুরুষের প্রতি মনে মনে প্রেমও রাখে, তবে তেমন পরদারার কাছ থেকে পুরুষ প্রেম আশা করতে পারে। একান্তে দেখা করতে আসা স্ত্রী যদি পরুষের স্পর্শি সহন করে নেয়, তবে এমন স্ত্রীকে চেষ্টা করলে পাওয়া যেতে পারে। শুয়ে থাকার বাহানা করে স্ত্রী যদি পরপুরুষের নিজ শরীরে হাত রাখা মের্মে নেয় এং পায়ের উপর পা রাখলেও বাধা না দেয়, অর্বে এ হচ্ছে তার নায়কের প্রতি দুর্বলতা বা প্রেমের নিশ্চিত চিহ্ন। এমন স্ত্রীকে পরপুরুষ আলিঙ্গন ও চুম্বন করার চেষ্টা করে। যদি আলিঙ্গন করলে পরনারী ক্রোধ প্রকাশ করে, কিন্তু পরের দিন নায়কের সঙ্গে হাসিখুশি ভাবে দেখা করে, তবে এমন ব্যবহারকে অনুরাগের চিহ্ন বলে সনাক্ত করা যেতে পারে।
জোরে জোরে শ্বাস নেয়, স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে, তবে এসব নায়িকার প্রেমভাব বলে বুঝে নেয়া উচিত। দুতী নায়কের পাঠানাে উপহার সামগ্রী নায়িকাকে পৌঁছে দেয়। নায়কের কাছে ডেকে পাঠায় এবং পুনঃদর্শন দেবার অনুরােধ করে তাকে বিদায় দেয়।
দূতীর কাছে নায়কের প্রেম-বিহুলতার বর্ণনা শুনে যদি নায়িকা হাসে, কিন্তু কিছু না বলে ত এটাকে তার মৌন স্বীকৃতি বুঝে নেয়া যায়।
আচার্যের মত ভূল নায়ক-নায়িকা পরস্পর পিরচিত অপরিচিত যাই হােক না কেন, উভয় ক্ষেত্রেই দৃতী নিয়ােগ করা যথার্থ কর্তব্য।
দূতী নায়িকাকে নায়কের প্রেরিত উপহার পৌঁছে দেয়। পান, চন্দন-লেপ, পুষ্পমালা, ফুলের রেণু আর ফুলের ছােপ দেয়া ছােট বড় কাপড় – এই সব উপহারে নায়কের নখ ও দাঁতের চিহ্ন থাকা প্রয়ােজন। দূতী নায়কের প্রেরিত অলঙ্কার ও পুষ্পহার এমন মােড়কে আবৃত করে সতর্কভাবে দান করে যেন ওর মধ্যে নায়কের প্রমপত্র রাখা আছে।
এইভাবে উভয়ের মধ্যে প্রেম ও বিশ্বাস জাগ্রত করে পারস্পরিক মিলন ঘটিয়ে দেয়।
বাভ্রবীয় আচার্য বলেন নায়ক-নায়িকার প্রথম মিলনস্থল, তীর্থযাত্রা, বাগানের পথে, বিবাহ-বাসর, যজ্ঞস্থল, বিভিন্ন উৎসব, বিপত্তি, অগ্নিকাণ্ড বা মেলা ইত্যাদি স্থানে হতে পারে। গােণিকাপুত্রের মতানুসারে প্রথম সাক্ষাৎকার ভিক্ষুকী বা সন্ন্যাসীদের আশ্রমে সরলভাবেই হতে পারে। বাৎস্যায়ন বলেন – স্ত্রীলােকের বাড়িতেই মিলন সবচেয়ে সুবিধাজনক। পুরুষের উচিত লুকিয়ে আসা-যাওয়া করা। বিপদ-আপদের মােকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত থাকে। আসা যাওয়ার রাস্তাগুলি ভাল ভাবে চিনে রাখা দরকার।
কার্যভেদ অনুযায়ী নিম্নলিখিত আটপ্রকার দূতী হয় –
১. নিস্তৃষ্ঠাৰ্থ – এই দূতী নায়ক-নায়িকার প্রেমকে মদত করে এবং কৌতূহলবশত ঐ দু’জনকে একস্থানে মিলিত করে দেয়।
২. পরিমিতার্থ – যদি নায়ক-নায়িকার মধ্যে প্রেম সম্পর্ক গড়ে উঠে থাকে কিন্তু কিছু অংশ বাকি থেকে যায় তবে এমন দূতী বাকী অংশ পূর্ণ করে তাদের ইচ্ছা পূর্ণ করে।
৩. পত্রহারী – সেই দূতী যে প্রেমিক-প্রেমিকার প্রেমপত্র পরস্পরের কাছে পৌঁছে দেয় এবং তাদের সাক্ষাৎকারের স্থান ও সময়ের খবর দেয়।
৪. স্বয়ংসূর্তী – এমন স্ত্রীলােক যে নায়িকা দ্বারা তার প্রেমিকার কাছে প্রেরিত হয়েছে, কিন্তু নিজেই সেই প্রেমিকার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। সে নায়ককে বলে, আমি স্বপ্নে তােমার সাথে সম্ভোগ করেছি, নায়কের প্রতি নিজ রতি-লালসা নানা হাবভাব করে প্রকট করে। নায়কের অন্য প্রেমিকাদের প্রতি ইবা প্রকট করে। এইভাবে যে নায়িকা তাকে পাঠিয়েছে তার বাতা বর্ণনা না করে নিজের প্রেমের অভিলাষ নায়কের কাছে ব্যক্ত করে। এমন স্ত্রীকে স্বয়ংদূতী বলে। কোন কোন দূতী তার প্রেরক নায়িকার এ্যাতাে বেশি নিন্দা করে নায়কের কাছে, যে সেই পুরুষ নায়িকার প্রতি বিমুখ হয়ে ছলনাময়ী ঐ দৃর্তীর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে – এমন দুতীকেও, স্বয়ংদূতী বলে।
স্ত্রীলােকের স্বয়ংদূতী হয়ে ওঠার মত নায়কও অন্য দূতের মত কাজ করে। স্বয়ং সূতীর মতই মতন নায়কও স্বয়ংদুতে পরিণত হয় এবং নিজ কাজ সিদ্ধ করে নেয়।
৫. মুমূর্তী – যদি কোন স্ত্রী এমন পরুষের প্রতি আসক্ত হয়ে যায় যে নিজ পত্নীকে গভীরভাবে ভালবাসে, তবে তাকে পাবার জন্য। তার ভালমানুষ স্ত্রীর কাছে সখীভাবে যায়, তার সঙ্গে পরিচয় বাড়িয়ে নেয়। তারপরে ঐ সাদাসিধা স্ত্রীকে স্বামীর প্রণয় থেকে বঞ্চিত করার জন্য এবং তাদের প্রেমে ফাটল ধরাবার জন্য ঐ ভালমানুষ পত্নীকে শুঙ্গার করে এবং ঐ স্ত্রীর দেহে দাঁত ও নখচিহ্ন বসিয়ে দেয়। এতে নায়ক পরস্ত্রীর সঙ্গে অভিলাষ বুঝে ফেলে এবং অবসর খুঁজে নিয়ে তার সঙ্গে মিলিত হয়। এই ধরণের কোন কথা বলা-কওয়া না করেই কাজ সারে যারা তাদের মূদূতী বলে।
৬. মুঢ়ী – নিজের স্ত্রীর শরীরে রেখে যাওয়া শঙ্গার ও নখচিহ্নগুলি দেখে নায়ক নিজ প্রেমিকার মনােভাব বুঝে ফেলে এবং নিজ পত্নী অথাৎ মূঢ়তী দ্বারা নিজ হাবভাব ও প্রেম ঐ প্রেমিকার কাছে প্রকট করে।
৭. ভার্ষাদুতী – কোন পরস্ত্রীতে আসক্ত কোন কোন পুরুষ নিজের সাদাসিধা অৰ্ধাঙ্গিনীকে দুতী হিসেবে সেই কামনার ধন পরস্ত্রীর কাছে পাঠায়। নিজ স্ত্রীকে পাঠাবার সময় তাকে শুঙ্গার (সাজসজ্জা)। করে এবং তার শরীরে শৃঙ্গারের মাধ্যমে এমন কিছু গৃঢ় সংকেত অংকিত করে দেয় যা দেখে প্রেমিকা প্রেমিকের গৃঢ় সংকেত তথা মনােভাব বুঝে নেয়। প্রত্যুত্তরে প্রেমিকাও ঐ পুরুষের পত্নীর শরীরে শৃঙ্গারের ছলে কিছু সংকেত অংকিত করে দেয়। এইরকম ভালমানুষ স্ত্রীকে ভার্ষাদূতী বলে।
৮. বাতদুতী – নায়ক নিজ প্রেমিকার কাছে দূত বা দূতীর মাধ্যমে এমন কিছু শব্দযুক্ত বাতা পাঠায়, যার দ্বিবিধ অর্থ বার করা যায় এবং ঐ অর্থ নায়ক বা নায়িকা ছাড়া অন্য কেউ বুঝতে পারে না। এমন খবর নায়িকার সামনে দুতী আনমলাভাবে আবৃত্তি করে এবং নায়িকা তার গৃঢ় বুঝে নিতে পারে সহজে। দুতী জানতেই পারে না নায়িকার কাছে কী খবর পৌঁছে গেল! নায়িকা প্রত্যুত্তরে কোন দোঁহ, প্রবাদ বা চতুলী ছড়া দুতীর কাছে বলে, যেগুলি দূতী -নায়িকার কাছে ফিরে গিয়ে বলে এবং নায়কও তার গুঢ় অর্থ বুজে নিতে সক্ষম হয়। এইভাবে নায়ক-নায়িকার কাজ হাসিল হয়, অথচ দূতী ঐ ব্যারে/ কিছুই জানতে পারে না। এই শ্রেণীর দূতীকে বাতদৃতী বলে।
বিধবা, দাসী, ভিখারিনী, শিল্পকার, স্ত্রীলােক ও চুড়ি বিক্রেতা স্ত্রীলােক ভাল বাতদুতী বলে গণ্য হয়।
দেবার ব্যবস্থা করে দেবে। এইভাবে ভিখারিনী ঐ স্ত্রীকে অন্তঃপুরে নিয়ে যায় এবং রাজা তাকে পুরস্কৃত, সম্মানিত ও প্রসন্ন করে তার সঙ্গে সহবাস করে।
অর্থ সংকটে পড়ে যাওয়া অপরাধী রাজকৃপা-অভিলাষী, নিজ স্বজাতিদের দ্বারা উৎপীড়িত বা তাদের দণ্ডিত করার জন্য লালসা গ্রস্ত, দৌত্য কার্য করে এমন এবং যশলিঙ্গ, ইচ্ছুক পুরুষের স্ত্রীদেরও ভিখারিনী উপরােক্ত পদ্ধতিতে বলে এবং ঐভাবে রাজা তার সঙ্গে সঙ্গম করে। এ রাজার পরপত্নী সম্ভোগের উদ্দেশ্যে কোন প্রকারেই লুকিয়ে। লুকিয়ে অন্যের বাড়িতে প্রবেশ করা উচিত নয়। কোহ রাজ্যের রাজা আমীর ও কাশীরাজ জয় সেন অন্যের গৃহে তাদের স্ত্রীর সঙ্গে অভিগমন করার চেষ্টার অভিযােগে মারা পড়েন।
প্রজাদের হিতাকাঙ্খী রাজাদের কর্তব্য, কোন জাতি বা বর্ণের মধ্যে পরভার্যা গমনের কুৎসিত প্রথা প্রচার না করা। এমন করলেই রাজারা কাম-ক্রোধ ইত্যাদি শত্রুদের জয় করে শাসন করতে পারে।
৩০. অন্তঃপুরের বিলাস
অন্তঃপুরে রাজা একাই রাজত্ব করেন এবং একাই সমস্ত স্ত্রীর সাথে সম্ভোগ করেন এবং তাদের সম্ভোগ করে স্বভাবতই সকলের সম্ভোগ তৃষ্ণা মেটাতে পারেন না। অন্দর মহলের স্ত্রীরাও বাইরে যেতে পারে না এবং বাইরের পুরুষদেরও ভিতরে প্রবেশ করা নিষেধ। এইজন্য অন্তঃপুরে স্ত্রীগণ একে অপরকে পুরুষের মত সম্ভোগ করে নিজেদের কামবাসনা শান্ত করে।
এই স্ত্রীরা নিম্নলিখিত পদ্ধতি প্রয়ােগ করা –
কোন ধাইয়ের মেয়ে, সখী বা দাসীকে পুরুষের পােশাক ও অলঙ্কার পরিয়ে, পুংলিঙ্গ-এর মত বস্তু তার কোমরে বেঁধে তার সঙ্গে সম্ভোগ করে।
অন্দর মহলের অতৃপ্ত স্ত্রীরা বিশ্বস্ত দাসীদের সাহায্যে বাইরের পুরুষদের স্ত্রীবেশে অন্তঃপুরে নিয়ে আসে। ঐ স্ত্রীবেশী বহিরাগত পুরুষদের সঙ্গে সহবাস করে অন্তঃপুরচারিনীয়া।
দাসী বাইরের পুরুষদের কয়েক প্রকার প্রলােভন দেখায়, যেমনঃ দাসী বলে অন্তঃপুরের অমুক স্ত্রীর খুব প্রভাব প্রতিপত্তি। তাকে তৃপ্ত ও প্রসন্ন করে তুমি ধন্য ও সৌভাগ্যশালী হয়ে যাবে। যদি সেই নাগরিক অন্তঃপুরে যেতে ভয় পায় ত দাসী তাকে বােঝায় যে ভয় পাবার কোন কারণ নেই। মার্গ সুরক্ষিত ও নিরাপদ, রাজপ্রাসাদ বিশাল ওঁ নিরালা; রাজপুরুষেরাও প্রায়শ অন্দর মহলে থাকেন না, দ্বাররক্ষীরাও অসাধনি ও কর্তব্যে শিথিল।
শুদ্ধ হৃদয়ের নাগরিক যে বিলাসী নয়, তাকে এই কাজের জন্য বাধ্য করা উচিত নয়। সেই নাগরিকদেরই নিয়ে যাওয়া সঙ্গত যারা বিলাসী ও পরস্ত্রীগমনে অভ্যস্ত।
অন্তঃপুরে অনুপ্রবেশকারী নাগরিকের অবশ্য কর্তব্য দূতীর সঙ্গে প্রবেশ করার সময় মহলের গুপ্ত পথ ও কক্ষ, ব্যাভিচারী অন্তঃপুরিকার ধরন-ধারণ ও চালচলন এবং রাজার বাইরে যাবার কারণ সম্পর্কে বিশেষভাবে ওয়াকিবহাল হওয়া যাতে দ্বিতীয়বার সহজে অন্দরে প্রবেশ করতে পারে। তাকে রক্ষকদের চৌখ এড়িয়ে সফলতার সঙ্গে গুপ্ত পথে আসা যাওয়ার প্রতিকুলতী ও ঝুঁকির বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
নাগরিক দাসীর সাহায্য ছাড়া স্বয়ং অন্তঃপুরে প্রবেশ করতে নিম্নলিখিত বিধিগুলি গ্রহণ করে-
দ্বাররক্ষীদের সঙ্গে মিত্রতা করে নিতে হবে, যাতে তারা আসাযাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক সৃষ্টি না করে। ঐসব দ্বাররক্ষীদের সামনে তাকে এমন অভিনয় করতে হবে যেন সে অন্দর মহলের কোন পরিচারিকার প্রেম-বিরহে ভীষণ কষ্ট পাচ্ছে। এমন করলে সেই বন্ধু দারােয়ান তাকে অন্দরে যেতে হবে। অংপুরে পৌছে নায়ক ঐ স্থানে নায়িকার প্রতীক্ষা করে যে স্থানটি দূতী নির্দিষ্ট করে রেখেছে। অন্যথায় ধরা পড়ার বা নায়িকার সঙ্গে মিলন না হবার আশঙ্কা আছে। হতে পারে নায়িকা তাকে ছদ্মবেশে দেখে চিনতে পারবে না এবং ফলে নিরাশ হয়ে ফিরে যাবে। তাই নায়কের উচিত সংকেত স্থলে দণ্ডায়মান হয়ে হাবেভাবে নিজের উদ্দেশ্য প্রকাশ করতে থাকে। যদি নায়িকা কোন বিঘ্নর ফলে মিলন স্থলে আসতে না পারে, তবে নায়কের বেশিক্ষণ প্রতীক্ষা না করে ওখান থেকে চলে যেতে হবে এবং স্মৃতি রুপে নিজ আঙটি ফেলে যাবে। অথবা দেয়ালে ছবি এঁকে বা ছড়া লিখে চলে যাবে যাতে পরে নায়িকা তার আগমনের উদ্দেশ্য বুঝে নিতে পারে। কিছুদিন পরে নায়কের আবার ঐ সংকেত স্থলে যাওয়া উচিত এবং সেখানে ভাল করে দেখা উচিত যে প্রেমিকা কোন জবাবি চিহ্ন রেখে গেছে কিনা। যদি নায়িকা কোন অনুকূল সংকেত রেখে গিয়ে থাকে, তবে সে আবার মিলনের চেষ্টা করে।
পুরুষ অন্তঃপুরে পাহারাদারদের আদেশ নিয়ে প্রবেশ করে অথবা পাহারাদারের বেশে প্রবেশ করে অথবা স্ত্রীলােকের বেশ ধারণ করে ভিতরে যায়। উৎসবের সময় ভীড়ের মধ্যে সহজেই অন্তঃপুরে প্রবেশ করা যেতে পারে। এমনই সুযােগ উদ্যান যাত্রায় যাবার সময়, দ্বাররক্ষীদের পালা বদলের সময় বা কোন যাত্রায় যাওয়া আসার সময়ও পাওয়া যেতে পারে। অন্তঃপুরে যারা কাজ করে, সেই সেৰুদের বেশেও অন্দরমহলে আসা-যাওয়া করা যায়। রাজা বাইরেগেলেও অন্তঃপুরে সহজে প্রবেশ করা যায়।
অন্তঃপুরে রমণীরা একে অন্যের ও ৫ রহস্য জানে। অতএব নায়কের কর্তব্য হল প্রেমিকার আহ্বানে সেৰ্থানে গিয়ে তার সখীদের ভাব বুঝে তাদেরও সন্তুষ্ট করে। এইভাবে অন্তঃপুরের সমস্ত স্ত্রীলােকই ঐ পুরুষের সহায়ক বনে যায় এবং সে নির্ভয়ে সেখানে আসা-যাওয়া করতে পারে।
বিভিন্ন দেশের রানীগণ ও আমীর-ওমরাহের স্ত্রীরা বিভিন্ন বর্গের। পুরুষের সহবাস করে নিজ কাম-বাসনা তৃপ্ত করে। এই পুরুষদের মধ্যে রয়েছে অন্তঃপুরের রক্ষক, স্বজাতিদের কুটুম্ব, দাস, চাকর, ভৃত্য, শয্যপ্রস্তুতকারী চামর ব্যজনকারী এবং রাজপ্রাসাদে প্রাসাদ নির্মাল্য পৌঁছে দিতে আসা ব্রাহ্মণগণ।
আচার্যদের উপদেশ ও বিষয়বাসনাহীন, সদাচারী পুরুষদেরই অন্তঃপুরের রক্ষক নিযুক্ত করা দরকার এবং প্রত্যেক নাগরিকেরই সাবধানতার সঙ্গে নিজ পত্নীকে বৃক্ষা করা উচিত।
স্বামী নিজ পত্নীর চরিত্র পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে কোন স্ত্রীলোেক বা সদাচারী পুরুষকে পাঠিয়ে তার মাধ্যমে নিজ স্ত্রীকে ব্যাভিচারের প্রস্তাব দেয় এবং এর ফলে যে প্রতিক্রিয়া স্ত্রী প্রকট কয়ে, তার মাধ্যমেই স্ত্রীর চরিত্রের শুদ্ধতা -অশুদ্ধতা নির্ণয় করে।
বিবাহিত স্ত্রীর পতিত হবার কারণ নিম্নরূপ নিরঙ্কুশতা, অন্য স্ত্রীলােকদের সঙ্গে সর্বদা কথা বলা, পতির অধিকাংশ সময়ে বিদেশে থাকা, পুরুষদের অবাধে কথা বলার ও দেখা সাক্ষাৎ করার সুযােগ। পতির নপুংসকতা, পতিগৃহ থেকে অনাত্র দীর্ঘ সময় থাকা, স্বামীর প্রতি ঈর্ষাপরায়ণতা এবং কুলটাদের সঙ্গে মেলামেশা করা।
যদি এইসব কারণ দূর করা যায়, তবে সমাজ থেকে পরস্ত্রীগমন চিরতরে দূর হতে পারে। এই অধ্যায় পাঠ করে যে কোন বিদ্বান পুরুষ নিজ স্ত্রীর ছল-কপটতা সম্পর্কে অপরিচিত থাকতে পারেন না। পরস্ত্রী সম্ভোগের ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে যে কেউ চিন্তা করবে সে। এই কুৎসিত কর্মে কখনই লিপ্ত হবে না। পরস্ত্রীগমন অধ্যায়টি এইজন্যই লেখা হয়েছে যাতে পুরুষ সদা জাগরূক থেকে ধর্মপত্নীকে। রক্ষা করে এবং স্বয়ং সদাচারী জীবন যাপন করে। এই অধ্যায় রচনার উদ্দেশ্য নিশ্চয়ই এই নয় যে, সমাজে ব্যভিচারকে উৎসাহিত করা হোক।
৩১. বেশ্যাগমন
বেশ্যা পুরুষের কাছ থেকে রতিসুখ ও ধন সম্পদ পাবার জন্যই সম্ভোগ করে। যদি বেশ্যা প্রেমবশত পুরুষের সঙ্গে সম্ভোগ করে, তবে তাকে স্বাভাবিক প্রেম বলে। আর শুধু ধনপ্রাপ্তির জন্য সম্ভোগ করালে তাকে কৃত্রিম প্রেম বলে। সাধারণত বেশ্যা কৃত্রিম প্রেম করে, কিন্তু বেশ্যার কর্তব্য হল কৃত্রিম প্রেম প্রদর্শনও স্বাভাবিক প্রেমের মত করেই করা, কেননা প্রেমের অভিনয়কারী বেশ্যার প্রতি পুরুষ আসক্ত থাকে। বেশ্যার উচিত পুরুষের কাছ থেকে তাড়াতাড়ি ধন প্রার্থনা করে নিজ লোেভ প্রদর্শিত না করা এবং পুরুষের কাছ থেকে খারাপ কোয়দায় ধন আদায় করাও অকর্তব্য। বেশ্যা প্রত্যহ তার কক্ষে সাজগােজ করে বসে এবং সামনের রাস্তায় চলমান লােকজনকে নিরীক্ষণ করে। সে যানে নিজের শরীরের প্রদর্শন খুব বেশি না করে, বেশ সামলে সুমলে বসে বেশ্যার উচিত এমন সাহায্যকারী লােক রাখে, যে অন্য বেশ্যাদির কাছে যেতে তৎপর পুরুষদের থামিয়ে, তার কাছে নিয়ে আসে। এই লোকেরা বেশ্যার দালালও বটে, রক্ষকও বটে।
নিম্নলিখিত পুরুষদের সঙ্গে বেশ্যারা অধিক সম্পর্ক রাখে। এদের কাছ থেকে টাকা পয়সাও নেয় না, বরং এদের প্রসন্ন রাখে কারণ এমন পুরুষরা সুময়ে সময়ে তাদের সহায়ক হয়, যেমন কোতােয়াল, সিপাহী, বিচারক, জ্যোতিষী, ধর্মাধিকারী, সাহসী শরীর, রাজাধিকারী, বিদ্বান, চোষট্টি কামকলার শিক্ষক, দালাল, বিদূষক, বিশ্বস্ত অনুচর, মালী, গন্ধদ্রব্য বিক্রেতা, নাপিত, ধােপা এবং ভিক্ষুক!
বেশ্যারা ধনের জন্য যে সব পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে তারা হল–বাঁধনহারা স্বাধীন পুরুষ যে ধনবান এবং যার ধন উপার্জনের পথে কোন বাধা নেই, যে ধন ব্যয় করার পূর্ণ অধিকারী, যুবক, অর্থ ব্যয় করার সাহসযুক্ত, নিজেকে যে পুরুষ সুন্দর ভাবে, প্রশংসা প্রিয়, অর্ধ নপুংসক কিন্তু নিজেকে পুরুষভাবে এবং পুরুষ আখ্যা পেতে আগ্রহী, উড়নচণ্ডী বা ব্যয়প্রবণ, যাদের কথা রাজা ও উচ্চপদস্থরা মেনে চলে, বড়ােদের কথা যে শোনে না। ভাগ্যবাদী অর্থাৎ যে বিশ্বাস করে ভাগ্য থেকেই ধন মেলে সুতরাং খরচ কেন। করব না ? আলালের ঘরের দুলাল অর্থাৎ ধনী পিতামাতার একমাত্র পুত্র, অবদমিত কামবাসনা পূর্ণ সন্ন্যাসী, ধীর ও বৈদ্য।
প্রেম ও যশাকাঙক্ষী বেশ্যারা নিম্নলিখিত গুণী নায়কদের কাছে যায়–
বিদ্বান, কুলীন বংশীয় পুরুষ, কবি, বাগ্মী, শিল্প সম্পর্কে অভিজ্ঞ, প্রকট উদ্দেশ্যযুক্ত পুরুষ, উৎসাহী, নিজের চেয়ে শ্রেষ্ঠ লােকদের যে সম্মান করে, স্নেহশীল, ত্যাগী, বন্ধুবৎসল, অসাক্ষাতে যে নিন্দা করে না, ঘরােয়া আসর, সভা, নাটক, প্রহসনে রুচিশীল, নীরােগ তথা সুস্থ, সাহসী এবং শক্তিমান, যাঁড়ের সমান সুদৃঢ় দেহী, করুণাশীল, স্ত্রীদের প্রধানা ও তার প্রতি প্রীতিপরায়ণ, স্ত্রীদের বশে থাকে, স্বতন্দ্র উপার্জনশীল, দয়ালু, নিঃসংশয় তথা নির্ভয়প্রকৃতির পুরুষ এবং যে ঈর্ষাযুক্ত।
প্রেম করার যােগ্য গুণবতী বেশ্যার লক্ষণ নিম্নরূপ-রূপযৌবন, লাবণ্য এবং মধুর স্বভাব পুরুষের পুণগ্রাহী, এবং পুরুষের ধনসম্পদের প্রতি নির্লোভ, অসন্দিগ্ধচিত্ত, স্থিরচিত্তযুক্ত যে একমাত্র নায়কের প্রতি প্রেমপরায়ণা ও সশ্রদ্ধ, দেশজ ও অন্যান্য ললিত কলার অনুরাগী এবং নিজ বৃত্তিতে সন্তুষ্ট যে বেশ্যা।
বেশ্যাদের প্রয়ােজন অযোেগ্য পুরুষদের এড়িয়ে চলা। অযােগ্যপুরুষদের নিম্নরূপ লক্ষণ-~-রাজক্ষায় আক্রান্ত যার মলমুত্র দুষিত। যার মুখ থেকে দুর্গন্ধ বেরয়, নিজ পত্নীকে যে ভালবাসে, দুর্বাক বলে, কৃপণ, নির্দয়, গুরুজন কর্তৃক পরিত্যক্ত, চোর, অহঙ্কারী, বশীকরণ জানেমান অপমানে বেপরােয়া, পরধনে ঈর্ষাপরায়ণ এবং অত্যন্ত লজ্জাশীল পুরুষ। : আচার্যের মত হল নিম্নলিখিত কারণে বেশ্যা পুরুষের সঙ্গে সমাগম করে– প্রেম, ভয়, ধন, শত্রতা দূর করার জন্য, বারবার সম্ভোগে উৎপন্ন শ্রম দূর করার জন্য, খেদ দূর করার জন্য, কোন বিদ্বান ও গুণবান পুরুষের কাছ থেকে ধর্ম ও যশ লাভের লালসায়, কখন মানুষের প্রাণ রক্ষার্থে, ধর্মাত্মার সঙ্গে সমাগমে পুণ্যলাভের আশায়, সেই পুরুষের সঙ্গে যে প্রেমিক রূপে আসে, নিজ বাসনা চরিতার্থ করার জন্য।
কিন্তু বাৎস্যায়ন মুনি বলেন বেশ্যা প্রেম, ধন এবং কোন অনর্থ বা বিপদের হাত থেকে বাঁচার জন্যই রতিক্রিয়া করে। এই তিন কারণের মধ্যেই অন্যসব কারণ এসে যায়। কিন্তু উপরােক্ত যাবতীয় কারণে সম্ভোগ করালেও বেশ্যা ধনও গ্রহণ করে কারণ এটা তার পেশা।
পুরুষের প্রতি বেশ্যার কর্তব্য
পুরুষ বারবার অনুরােধ করলেও বেশ্যার শীঘ্র সহবাসের জন্য রাজি হওয়া উচিত নয়। সহজভাবেই যে লভ্য হয় যে স্ত্রী, তাকে পুরুষ নানা কারণে তিরস্কার করে। নায়কের স্বভাব এবং আর্থিক অবস্থা জানার জন্য বেশ্যা আপন অনুচরদের গুপ্তচর হিসেবে প্রেরণ করে এবং নায়কের সেবকদের কাছে থেকেই ভেতরের খবর সংগ্রহ করে। নায়কের পবিত্রতা, সামর্থ, প্রেম, দানশীলতা এবং কৃপণতা সম্পর্কে খোঁজখবর ও পরীক্ষা নেওয়া উচিত। নায়কের গুণপনা সম্পর্কে পরিচিত হবার পরে বেশ্যা ভাড় ও দালালের মাধ্যমে জানােয়ারের লড়াই দেখার বা তােতা ময়না সংবাদ শােনার অছিলায় নায়ককে ডেকে এনে তার সাথে পরিচয় করে। নায়ক ঘরে এলে কোন সুন্দর জিনিস তাকে উপহার দেয়, যার দ্বারা নায়ক প্রভাবিত হয়। আপন গৃহে নায়ককে পান, সুগন্ধী দ্রব্য ইত্যাদি দ্বারা আপ্যায়ন করে এবং তাকে যথেষ্ট সম্মান প্রদর্শন করে। ফিরে যাবার পথে নায়ককে এগিয়ে দেবার জন্য বিনােদনকারী দাসীকে সঙ্গে পাঠায় বা নিজেই দরজা পর্যন্ত তার সঙ্গে যায় নায়কের সঙ্গে মধুর কথাবার্তা বলে তাকে পান, মালী, চন্দন প্রলেপ এবং উপহার ইত্যাদি দিয়ে। তার নিজের অনুরাগ প্রকাশ করে। আপন সেবা, আদর, মান। দিয়ে তাকে প্রসন্ন করে এবং সমাগমের জন্য নিজ ভাব প্রকাশ করে।
বেশ্যার পত্নীর সমান আচরণ
একবার নায়কের সঙ্গে প্রেম সম্পর্ক হলে বেশ্যার উচিত তাকে (পুরুষকে) প্রসন্ন রাখার জন্য পতিব্রতা স্ত্রীর সমান আচরণ করে। তার কর্তব্য হল নায়ককে সর্বতােভাবে প্রসন্ন রাখা, কিন্তু কখনও তার প্রতি আসক্ত না হওয়া। উপর উপর আসক্তির ভাব প্রদর্শন করে কিন্তু নিজেকে পরের অধীন বলে বর্ণনা করে অর্থাৎ নিজ মাতা বা মাসীর অধীন।
কঠোর স্বভাবের মাসী বা মাতার অধীনে থাকার ছলছুতােয় ধন দায় করতে থাকে। মাতা যদি দেখে যে বেশ্যার নায়কের প্রতি আসক্তি রেড়ে চলেছে তবে তার উচিত কোন বাহানায় বেশ্যা অর্থাৎ নায়িকাকে সেখান থেকে সরিয়ে নেয়া। এমন সময় নায়িকা মাতার কথা মেনে নেয় এবং লজ্জা, দুঃখভাব দর্শিয়ে নায়কের কাছ থেকে উঠে চলে যায়। হঠাৎ কোন রােগের ছলছুতো করে নায়কের কাছ থেকে উঠে চলে যায়। এতে নায়কের সহানুভূতি বৃদ্ধি পায়। নায়িকার এসব বাহানার দরুন নায়ক তার কাছে বারবার আসা-যাওয়া করে।
নায়ক যদি বিরক্ত হয়ে চলে যায় তবে সে দাসীকে মালা পান। ইত্যাদি দিয়ে তার কাছে পাঠায়। নায়ক ফিরে এলে তার প্রতি নিজস্ব প্রেম ও রতি কৌশল দেখায়, তার কাছ থেকে চৌষট্টি কামকলা শেখে এবং তার প্রয়ােগ নায়কের সুখের জন্য কয়ে। একান্তে তার মনের কথা শােনে, তথানিজ মনের অভিলাষ বাক্ত করে। নিজ নাভি, জঙ্গ এবং গুপ্তাঙ্গ এমনভাবে ঢুকে যে সেসব অঙ্গের কিছু দেখা যায় না। আবার কিছুটা চোখেও পড়ে; এরফলে নায়ক কামাতুর হয়ে যায়। নায়কের দিকে মুখ করে শেয়, কখনই মুখ ফিরিয়ে শােয় না, নায়ককে গােপন অঙ্গ ছুঁতে কখনই বাধা না দেয়। তাকে চুম্বন আলিঙ্গন করার সুযােগ দান করে এবং নিজেও নায়ককে চুম্বন আলিঙ্গন করে। যদি নায়ক কোন অন্য বেশ্যার কাছে যাওয়া শুরু করে, তবে নায়িকার উচিত ছাতে দাঁড়িয়ে তাকে দেখে, এতে নায়ক লজ্জিত হয়ে অন্য জায়গায় হাওয়া ছেড়ে দেবে। সে নায়কের আনন্দে আনন্দিত, দুঃখে দুঃখী ও তার বন্ধুদের ভালবাসে ও শত্রুদের দ্বেষ করে। অনুপযুক্ত। স্থান হলেও যদি নায়ক ইচ্ছুক হয় তবে সেখানেই নায়ককে দিয়ে রমণ করায়। ক্রোধ আসলেও ক্রোধ প্রদর্শন না করে। নায়কের দেহে নিজের দেওয়া নখ ও দাঁতের চিহ্ন মজা করে অন্য নায়িকা দ্বারা কৃত চিহ্ন বলে বর্ণনা করে হিংসুটেভাব দেখায়। লজ্জাবশত মুখ থেকে না বলে বেশ্যার উচিত হাবভাবে কামাতুরতা নায়কের কাছে প্রকট করে। নায়কের যােগ্যতার বারবার প্রশংসা কের, বেশ্যার কথা নায়ক যেন চুপচাপ শুনে এবং ক্রোধ প্রকট না করে। নায়কের দ্রুত শ্বাস -প্রশ্বাস নেওয়ার ক্ষেত্রে উদাসীনতা দেখে সহানুভূতি প্রকট করে, যদি তার দুর্বলতা আসে, তবে তার দীর্ঘায়ু কামনা করে। নায়কের সামনে অন্য পুরুষের প্রশংসা করে না এবং নিজে নায়কের দোষ না ধরে। নায়কের বিরুদ্ধে কোন মিথ্যা অভিযােগ উঠলে শােক ও সহানুভূতি প্রকাশ করে, নায়ক অসুস্থ হলে বা কোন স্বজনের মৃত্যু হলে সাদা বেশ পরে। নায়কের জীবনে বাধা-বিপত্তি আসলে কান্নাকাটি করে, যদি সে দণ্ডিত হয়, তুবে রাজার কাছে টাকা গচ্ছিত রেখে তার মুক্তির চেষ্টা কায়মনোবাক্যে করে। নায়ক মুক্তি লাভ করলে শুঙ্গার ও দেবপূজন করে এবং পায়েস রান্না করে। গানে নায়কের নাম-গােত্রের উচ্চারণ করে এবং সে যদি উদাসীন হয়ে যায় তবে হাত দিয়ে তার হৃদয় ও মাথায় কোমল স্পর্শ দান করে। নায়ক শয়ন করার পরে সােয়। যদি সে বসে থাকে, তবে সেও নায়কের অঙ্কশায়িনী হয় বা কোলে বসে থাকে। নায়কের ঔরসে পুত্রলাভের বাস প্রকাশ করে। তাকে লুকিয়ে কোন সলা-পরামর্শ না করে, দেবদর্শন ইত্যাদির জন্য নায়কের সঙ্গে যায়। নায়ক যদি ‘উপবাস করে, তবে উপবাস অন্তে পানীয় আহার ও বিশ্রামের দিকে বিশেষ নজর আখে। উদ্যান, সভা, ঘরােয়া আসর এসব স্থানে নায়কের সঙ্গে যায়। নায়কের ব্যবহৃত ফুলমালা নিজে পরে এবং তার উচ্ছিষ্ট খাদ্য খায়। নায়কের উচ্চকুল, শীল, স্বভাব, সৌন্দর্য, তারুণ্য, ধনােপার্জনে কুশলতা এবং তার বন্ধুদের ভূয়সী প্রশংসা করে। ভয়াবহ সময় ও মৌসুমের পরােয়া না করেও নায়কের সূথ যায়, নায়কের সামনে ইচ্ছা প্রকাশ করে আগামী জম্মেও সে তারই প্রেমিকা যেন হয়। বেশ্যা নায়কের প্রতি কখনই জাদু, বশীকরণ ইত্যাদির প্রয়োেগ না করে, তার পত্নীর মত তার ঘরে থাকার জন্য নিজ মাতার সঙ্গে ঝগড়া করে। যদি তার মাতা নায়কের কাছ থেকে তাকে দূরে নিয়ে যায়, তবে বিষপান, গলায় দড়ি এবং অদ্বারা আত্মহত্যার ভাব প্রকাশ করে। দুতী দ্বারা নায়কের কাছে খবর পাঠায় । আমার মা আমাকে পরপুরুষের সংসর্গ করতে বাধ্য করছে, কিন্তু আপনি ছাড়া আমি। কাউকে চাই না। নায়িকা আপন মাতার আদেশ ছাড়াই অন্য পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে, দরকার হলে পরােক্ষে তার প্রতি প্রেমপ্রকট করতে থাকে।
নায়ক প্রবাসে গেলে সাধারণ বেশে থাকে, তার কুশল সমাচার জিজ্ঞাসা করতে নায়কের বাড়ি যায় নায়কের বন্ধুদের বলে যে নায়ক স্বপ্নে তার সঙ্গে সমাগম করেছে। নায়ক সম্পর্কে দুঃস্বপ্ন দেখলে তার শান্তির উপায় করে। নায়ক প্রবাস থেকে ফিরলে কাম মহােৎসব পালন করে। দেবতাদের পূজা করে ও মানসিক করু স্বস্তু নিবেদন করে।
এখানে বেশ্যার কর্তব্য সমাপ্ত হযেছে।
বেশ্যার প্রতি আসক্ত পুরুষের লক্ষণ নিম্নরূপ — যে বেশ্যার প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রেখে সন্দেহহীন হয়ে তার উপর সব কাজ ছেড়ে দেয়, তার মতে আচরণ করে, তার আজ্ঞা পালনে তৎপর থাকে এবং লিজু পরিবার ও ধন উপেক্ষা করে।
বেশ্যার প্রেম কৃত্রিম না কি স্বাভাবিক তা বােঝা খুব কঠিন। এদের মনােবৃত্তি খুব সুক্ষ্ম হয়। এরা খুব লােভী হয়। এদের হাবভাব দেখে এদের মনের কথা বােঝা খুব কঠিন। এরা পুরুষকে চাইলেও আসক্তি প্রকাশ করে না। পুরুষকে চায় বা বিরক্ত হয়ে ছেড়ে দেয়। পুরুষ কখনই বোেঝ না যে বেশ্যা আসলে প্রণয় প্রকাশ করে ধনের জন্য। এই কপট অনুরাগ থেকে পুরুষের সাবধান থাকা দরকার।
ধন প্রাপ্তির উপায় :
আচার্যের মত এই যে যদি বেশ্যার স্বাভাবিক পদ্ধতিতে ধন মেলে তবে অন্য উপায় কাজে লাগান উচিত নয়। কিন্তু বাৎস্যায়নের মত হল যে তাদের সব ধরণের কৌশল ও উপায়ে যত বেশি সম্ভব ধন উপার্জন করা উচিত। এই উপায়গুলি নিম্নরূপ : নায়কের সামনে নায়িকা বলে যে অলঙ্কার , মিষ্টি, বস্ত্র, মালা, কুমকুম, চন্দন, মদ, পান ইত্যাদির মূল্য দিতে হবে। নায়কের বিপুল ধন সম্পদের প্রশংসা করে। অজুহাত দেখায় যে ব্রত হেতু, বৃক্ষরােপণ, উদ্যান সৃজন ও দেবালয় স্থাপনের জন্য ও মিত্রদের প্রীতিভােজ ইত্যাদি কাজের জন্য টাকা প্রয়ােজন। নায়ককে বলে/তােমার গৃহ থেকে আসার সময় চোর এবং পাহারাদাররা আমার সমস্ত অলঙ্কার কেড়ে নিয়ছে, বা ঘরে অগ্নিকাণ্ড কিংবা চুরির দরুন নতুন কাপড় ও গয়নাগাঁটি কিনতে হবে। এতে টাকা প্রয়ােজন। নায়ককে বলে তােমার জন্য যে টাকা ধার করেছিলাম, সেই ধার শোধ দিতে হবে। এর জন্যে মায়ের সঙ্গে বিবাদ হয়েছে। তাই পুরাে কর্জের ‘টাকা অবিলম্বে ফেরত দিতে হবে। নায়কের কাছে বিভিন্ন শিল্পদ্রব্য চুয়! বলে উপকারকারী বন্ধুদের সাহায্য করতে হবে। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপহারের প্রতিদান হিসাবে প্রতি-উপহার দিতে হবে। ঘর মেরামত,সাফাই, ঘরের দৈনন্দিন। খরচা, গর্ভকাল, রুগ্নাবস্থা ইত্যাদি বাহানা করে টাকা-পয়সা নেয় পুরুষের কাছ থেকে। নিজ পছন্দমত গয়না ও বাসনপত্র নায়কের। সামনে কেনে। দূতের দ্বারা নায়ককে অন্য নায়িকাদের বেশি আয় আমদানির গল্প শোনায়। নায়কের জন্য যে অলঙ্কার বেচে দিয়েছে, তা আবার কোর ব্যাপারে কথা বলে; লজ্জিতুভাবে বলে, অন্য নায়িকা আমার চেয়ে বেশি টাকা আয় করে। যখন নায়ক বেশি টাকা দিতে শুরু করে, তখন এই বলে বাধা দেয় যে আগেই সে তার কাছ থেকে অনেক ধন লাভ করেছে। এই রকম কপট স্নেহে নায়ক প্রসন্ন হয়ে । আরাে উদার হয়। নায়ক যত বেশি বেশি টাকা দেয়, বেশ্যা তত বেশি। বেশি নিজের ত্যাগীভাব দেখায়। আবার বালকের মতু চপল দৃষ্টা করে বলে, যদি তুমি আমাকে অমুক জিনিসটা না এনে দাও তবে আমি তোমার কাছে আসব না।
বেশ্যার প্রতি বিরক্ত নায়কের লক্ষণ
কখন অনেক ধন দান করে, কখন খুব কম, অন্য বেশ্যার সঙ্গে। সম্পর্ক, বেশ্যার ইচ্ছার বিপরীত আচরণ করা, কথা দিয়ে আবার অন্যরকম করা, কিছু দেবার কথা দিয়ে কথা না রাখা, বেশ্যার ধন ছিনিয়ে নেওয়া, বেশি শুয়ে থাকা, বন্ধুদের সঙ্গে সংকেতে কথা বলা। বেশ্যার সহচরদের কাছে বেশ্যার গােপন কথা বলে দেওয়া। নায়কের। মধ্যে এই ধরনের বিরক্তির লক্ষণ দেখলে বেশ্যার কর্তব্য হল নায়কের ভাল ভাল জিনিসগুলির উপরে অধিকার প্রতিষ্ঠিত করে নেয়া। ঝগড়া হলে সে ধর্মাধিকারীর কাছে যায় এবং নায়কের কাছ থেকে যথাসম্ভব বেশি টাকা আদায় করে। যখন নাগরের কাছে আর ধন অবশিষ্ট থাকবে না তখন নিম্নবর্ণিত কায়দায় তাকে বার করে দেয়-পরপুরুষদের সঙ্গে বা যে পুরুষের প্রতি নায়ক বিদ্বেষপরায়ণ তার সঙ্গে প্রেম করা, * ঠোট বাঁকানাে, মাটিতে পা দীপড়ানাে, নায়কের নিন্দা করা বা তাকে অবজ্ঞা করা, শরীর স্পর্শ করতে বা চুম্বন করতে গেলে নিষেধ করা, নায়ক আলিঙ্গন করলে নিজেরকে সংকুচিত করে কাঠ হয়ে থাকা। সহবাসের সময় পা এদিকে ওদিকে ছোড়া, রতিক্রিয়া করতে করতে নায়ক ক্লান্ত হলে তাকে আবার রতির জন্য বিবশ করা। যদি নায়ক এতে অসমর্থ হয়, তবে তার পুরুষত্ব নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করা। তার কামশক্তির প্রশংসা না করা। রতি সুখের জন্য নায়কের সামনেই কোন অন ধনী নায়কের সঙ্গে যৌন মিলনে লিপ্ত হওয়া। নায়ককে নিয়ে হাসাহাসি করা, তাকে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করা, তাকে অপমান করা, ইত্যাদি উপায়ে বেশ্যা নির্ধন নায়ককে নাস্তানাবুদ করে বের করে দিতে পারে!!
এইভাবে বেশ্যার পরীক্ষা করে নায়ককে নির্বাচন করে। নিজ কৃত্রিম প্রেমে তাকে প্রসন্ন করে, নাগরের সঙ্গে বাস্তবিক প্রেম করে না এবং শেষে ভার সমস্ত ধন সম্পদ শুষে নিয়ে তাকে তাড়িয়ে দেয়।
পূর্ব পরিচিত নায়কের সঙ্গে মিলন
নিধন নায়ককে বের করে দেবার পরে, নিজ আয়ের রাস্তা করার জন্য বেশ্যার কোন পরিচিত ধনী আয়কের সঙ্গে পুনসম্বন্ধ স্থাপিত করা প্রয়ােজন। সে নায়ক হবে উদার, ধনী ও প্রেমিক তথা অন্য বেশ্যার সংসৰ্গমুক্ত। এটা বােঝার জন্য কোন পূর্ব পরিচিত নায়ককে বেশ্যা অন্য বেশদের মাধ্যমে পরীক্ষা ক্ৰতে পারে। এক্ষেত্রে ছয়রকম পরীক্ষা পদ্ধতি বয়েছে—নিজে বা অন্য বেশ্যার সাহায্যে খবর সংগ্রহ করে নিজের কাছ থেকে বা অন্য নায়িকার কাছ থেকে নায়ক আনে নিজেই চলে গিয়েছিল কিনা। অন্য বেশ্যার কাছ থেকে তাকে বার করে দেয়া হয়েছিল কিনা, অথবা এখান থেকে স্বয়ং চলে যাবার পর অন্য বেশ্যার কাছে থেকে গিয়েছিল, বা এখান থেকে বের করে দেবার পর এখন পর্ষন্ত কোন অন্য গণিকার কাছে যায় নি। বা এখন থাকে বার করে দেবার পর অন্য জায়গায় গিয়ে থিতু হয়েছে এসব তথ্য।
এমন নায়ক, যে উভয় জায়গাতেই সম্পর্ক রাখতে চায় এবং দুই পক্ষেরই গুণাবলী উপেক্ষা করতে চায়, তাকে চঞ্চল-বুদ্ধি বলে ত্যাগ করা উচিত।
যে নায়ককে দুই জায়গা থেকেই বের করা হয়েছে, অথচ স্থিরবুদ্ধি ও অন্য অধিক ধনশালী নায়ক দ্বারা তিরস্কৃত হয়েছে এবং সম্ভাবনা রয়েছে যে সে ঈর্ষার কারণে বেশি টাকা দেবে- এমন নায়ককে আপন করা উচিত। নায়ক যদি ধনী হয়েও কঞ্জস এবং অনুদার হয়, তবে তীক ত্যাগ করা উচিত।
রতিকলা বিশেষজ্ঞ পুরুষ অন্য বেশ্যার কাছে গিয়ে নিরাশ হয়ে ফিরে এসেছে এবং নিজ রতিকলার প্রভাব-প্রতিক্রিয়া জানতে ইচ্ছুক- এমন পুরুষের সঙ্গে মিলন বাঞ্ছনীয় কেননা সে বেশি বেশি। ধন দেবে।
যে অন্য বেশ্যাদের প্রতি বিরক্ত হয়ে, আগের বেশ্যার কাছে তার গুণপনা স্মরণ করে ফিরে আসে, সেও ঐ বেশ্যাকে প্রচুর টাকা পয়সা দেয়, এমনতর পুরুষকে আপন করে নেয়া উচিত।। এমন পুরুষ যে সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত, যার চিত্ত চঞ্চল, কখন এখানে আসে, কখন অন্যত্র যায়- এমন পুরুষের সঙ্গ করা উচিত নয়।
বেশ্যা যদি দেখে যে এই পুরুষকে অন্য নায়িকার কাছ থেকে বের করে দেয়া হয়েছে কিন্তু আমার প্রতি কৌশলে মুগ্ধ হয়ে অন্য কোথাও রমণ করে না, এমূর্ন পুরুষের কাছ থেকে যথেষ্ট ধনপ্রাপ্তির আশা আছে, অতএব এমন পুরুষকে গ্রহণ করা উচিত।
যদি বেশ্যার মনে হয়, অমুক পুরুষকে আমি অন্যায়ভাবে বার করে দিয়েছিলাম আর এখন সে তার প্রতিশােধ নেবার জন্য বা নিজের ধন ফিরিয়ে নেবার জন্য বা আমার বর্তমান প্রেমিককে আমার প্রতি বিমুখ করার জন্য আমার সঙ্গে পুনর্মিলন চাইছে, তবে এমন পুরুষের সঙ্গে বেশ্যায় কখনই পূনমিলিত হওয়া উচিত নয়।
যদি মনে হয় প্রথমে যে নায়ক বেশ্যার অহিত চাইত, কিন্তু সময়ের ফেরে এখন অনুরক্ত রয়েছে, এমন পুরুষ বেশ্যাকে অধিকাধিক ধন দেবে। তাই এমন পুরুষের সঙ্গে মিলন সঙ্গত।
পূর্বপরিচিত নায়ক দুই ধরনের হয়। একঃ যারা প্রথমাকে ছেড়ে অন্য নায়িকার কাছে যায়, দ্বিতীয় : যারা প্রথমাকে ছেড়ে দিয়েছে, কিন্তু অন্যের কাছে যায় নি। আচার্যের উপদেশঃ যে কারাে কাছে যায় নি তার কাছ থেকে ধনপ্রাপ্তির আশা কম, কিন্তু যে অন্য নায়িকার কাছ যায়, তার কাছ থেকে ধনলাভ হতে পারে, তাই তার সঙ্গ করা যেতে পারে। তাকে তাই অনুরােধ করা উচিত।
নায়িকার উচিত পূর্বপরিচিত নায়ক, যাকে সে তাড়িয়ে দিয়েছিল, তাকে নিম্মদি খত কারণগুলির জন্য ডেকে নেয়। যদি নায়কের জায়গা-জমি বা ব্যবসায় বিপুল ধনের আমদানি হয়। নিজ স্ত্রীকে যদি সে ত্যাগ করে থাকে বা যদি বিপত্নীক হয়, নিজের আত্মীয়-স্বজনের থেকে আলাদা হয়ে গিয়ে থাকে, তবে এই সব কারণেই সে বেশি। ধন দেবে বা এই নায়কের সঙ্গে পুনর্মিলন করে অন্য নায়কদের ফঁাসাব যে আমাকে প্রচুরতর ধন সম্পদ দেবে।
অথবা অমুক নায়ক নিজ পত্নীর প্রেমে লিপ্ত হয়ে আমাকে ত্যাগ করেছিল, আর এখন সে নিজের সেই পত্নী দ্বারাই তিরস্কৃত হয়েছে।
সুতরাং আমি ঐ নায়কের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা পুণঃ প্রতিষ্ঠিত করে তার ঘরে দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি করা এবং নিজ অপমানের প্রতিশোধ নেব।
অথবা এই নায়কের ধনী বন্ধু অন্য নায়িকার প্রতি আসক্ত হয়েছে এবং এই নায়কের মনও অস্থির হয়ে উঠছে, অতএব এই নায়ককে নিজের দিকে আকৃষ্ট করলে এর বন্ধু ও ঐ নায়িকার মধ্যে ঝগড়া। বাধিয়ে দিতে পারি, ফলস্বরুপ এই নায়ক এবং তার মিত্র আমার সঙ্গে মিলিত হবে এবং আমি এভাবে ঐ অন্য নায়িকার বিরুদ্ধে প্রতিশােধ নেব।
বেশ্যা, নিজ পূর্বপরিচিত নায়কের সঙ্গে আবার সম্বন্ধ স্থাপিত করার জন্য তার কাছে নিজের সহচর পুরুষ বা দালালকে পাঠায়, যে ঐ নায়কের কাছে গিয়ে বল যে আপনার বহিষ্কারের কারণ ছিল পায়িকার অর্থলােলুপ দৃষ্টা মা। নায়িকা ছিল নিরূপায়, সে এখনো আপনার প্রতি প্রয়াসক্ত বারবার আপনাকে স্মরণ করে। মাতার চাপে অনিচ্ছা সত্ত্বেও অন্য পুরুষদের সঙ্গে সংসর্গ রাখে। আপনার দয়া কৃতজ্ঞচিত্তে এখুর্নও স্মরণ করে। তার প্রেমের বার্তা আমি। আপনার কাছে নিয়ে এসেছি।
কোন কোন আচার্য বলেন, বেশ্যার পূর্ব পরিচিত পুরুষদের সঙ্গেই সম্বন্ধ রাখা প্রয়ােজন। কারণ তাদের আচার-ব্যবহার ভালভাবে জানা আছে। কিন্তু বাৎস্যায়ন মুনি বলেন পূর্ব পরিচিতদের থেকে আগেই টাকা শুষে নেয়া হয়েছে, তাই বেশ্যার তুন নতুন পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা প্রয়ােজন। কিন্তু পুরুষ আগের নাগর হােক বা নবীন নাগর-যাই হােক না কেন, বেশ্যার নিজের লাভ-লোকসান চিন্তা করেই তার সঙ্গে সম্পর্ক রাখা কর্তব্য।
বেশ্যার উচিৎ পূর্ব পরিচিত নায়ককে কামজালে ফাঁসিয়ে তার সঙ্গে চটজলদি সঙ্গম না করে তার থেকে টাকা টানতে থাকে এবং একই সঙ্গে নিজের প্রতি আসক্ত নায়ককেও না ছাড়ে কেননা সেত অধিকারে রয়েইছে, পূর্বপরিচিত অন্য কোথাও আবার চলেও যেতে পারে।
চতুর বেশ্যার উচিত পূর্বপরিচিত নায়কের সঙ্গে পূনর্মিলিত হবার আগে তার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের ফলে সম্ভাব্য লাভ, প্রভাব, প্রেম ও ‘মৈত্রীভাবের পরিপূর্ণ বিচার-বিশ্লেষণ করে নেয়া।
বিভিন্ন লাভ
বেশ্যার উচিত নিজের পুরুষ সংসর্গ এক পুরুষে সীমিত না রেখে কয়েক পুরুষের সঙ্গে সমাগম করে ধন উপার্জন করে। বহু পুরুষের মধ্যে সেই পুরুষটিকেই বেছে নেয়, যে সবচেয়ে বেশি ধন দানে সক্ষম। পুরুষের সঙ্গে রাত্রিসহবাসের শুল্ক নিশ্চিতভাবে স্থির করা দরকার। যদি অধিক শুল্কের কারণে পুরুষ চলে যায়, তবে পূর্তী দ্বারা তাকে ডাকিয়ে আবার কথাবার্তা বলে নিজ কাজ সিদ্ধ করে। আচার্য বাৎস্যায়ণের নির্দেশ ধল না দিয়ে যদি নায়ক শুধু বস্ত্রদান করে তবুও তার সঙ্গে অভিগমন করে নেয়া উচিত।
সােনা, রূপা, তামা, কাসা, লােহার, বাসন, চন্দন, সুগন্ধি দ্রব্য, সাফাইর জিনিস, বিছানার চাদর, থি, তেল, আনাজ, পশু যে কোন জিনিস নায়ক দান করুক না কেন, বেশ্যার তা গ্রহণ করে পুরুষকে প্রসন্ন করা উচিত।
ধনদানকারী ও প্রেমিক পুরুষদের মধ্যে বেশ্যার ধনদানকারী পুরুষই অধিক প্রিয় হয়, আচার্যের এই মত। কিন্তু বাৎস্যায়ন বলেন যে আসক্ত পুরুষ লােভী হলেও তার কাছ থেকে আদায় করা যায়। অধিকাংশ ধনবান পুরুষ উচ্চুঙ্খল হয়, তারা প্রেমিক হয় না।অতএব বেশ্যার পক্ষে ধনদাতার চেয়ে প্রেমিকই বেশি মঙ্গলকর হয়।
যে ব্যক্তি বেশ্যাকে ধন দেয় এবং নিরন্তর তার কাজ করে দেয় এর মধ্যে কাজ করে যে দেয় তার গুরুত্বই বেশি। করিৎকর্মা পুরুষ বেশ্যার জনা কাজ করে নিজেকে কৃতার্থ মনে করে। এবং আরাে কাজ করে দিতে আগ্রহ প্রকাশ করে। ধনদাতা পুরুষ ধন দিয়ে দূরে সরে যায়, সে নায়িকার উপকারের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকে না এই আচার্য বাৎস্যায়নের মত।
প্রভাবশালী পুরুষ বেশ্যার পক্ষে সবচেয়ে হিতকারী বলে গণ্য হয়। কৃতজ্ঞ ও ত্যাগী নায়কদের মধ্যে যে সবচেয়ে বেশি ধন দেয়, নায়িকা তাকেই বিশেষভাবে চায়, অনেক আচার্যের এই অভিমত। কিন্তু আচার্য বাৎস্যায়নের বক্তব্য হল যে ধনদানকারী পুরুষ বেশ্যার পূর্ব প্রেম, সেবা এবং শ্রমের মূল্য দেয় না। ধনী প্রেমী হঠাৎ রাগ করে চলে যায়, কিন্তু কৃতজ্ঞ পুরুষ পূর্ব সেবা ও শ্রম স্মরণ রাখে, সহজে বিরক্ত হয় না, বেশি দোষারােপ করে না, বেশি প্রেমও দর্শায়। না। অতএব দাতা অপেক্ষা কৃতজ্ঞ পুরুষ শ্রেষ্ঠ। বন্ধুও অনেক ধন দিতে পারে, কিন্তু সামান্য একটু কথার জন্য রেগে যায়। এই কারণে যে বেশ্যাকে উপেক্ষা করে কিন্তু বেশি টাকা দেয়—সেই বেশ্যার পক্ষে সর্বশ্রেষ্ঠ নায়ক।
বেশ্যার কাছে ঋণ প্রেমিক বসে থাকে, আর ঐ সময়েই কোন ধনবান পুরুষ প্রতীক্ষা করে, তবে বেশ্যার উচিত প্রেমিককে অনুনয় বিনয় করে সরিয়ে দেয় ও ধনবান পুরুষের সমাগম করে তার কাছ খেকে ধন সংগ্রহ করে।
আচার্যগণ বলেন ধনদাতা এবং অনিকারক পুরুষদের মধ্যে যে বেশি টাকা পয়সা দেয়, তার সঙ্গে নায়িকার সম্পর্ক রাখা প্রয়োজন। কিন্তু বাৎসায়নের মত হল ধনের জন্য বিপদের ঝুঁকি নেওয়া উচিত নয়। সাশারণ বিপত্তিরও ভয়ানক পরিণাম হতে পারে। অতএব যার দ্বারা সামান্যতম অনর্থ হবার সম্ভাবনা আছে তার সঙ্গ করে, কিন্তু যার কাছে সামান্য ধন পাবার আশা, তাকে বেশ্যা ত্যাগ করে।
বেশ্যারা তিন প্রকার হয়ে থাকে–গণিকা, রূপজীবা এবং কুম্ভক। এরা ক্রমানুসারে উত্তমা, মধ্যমা এবং অধম হয়ে থাকে।
উত্তম গণিকায় পুরুষদের কাছ থেকে প্রাপ্ত ধন দেবমন্দির, পুকুর খনন, পুল নির্মাণ, দান-পরােপকার এবং যার্থে ব্রাহ্মণকে সহস্র গােদান করতে ও পূজা আচ্ছায় ভােগ নিবেদন ইত্যাদি সৎকাজে ব্যয় করে এবং তার থেকে কিছু নিজের জন্যেও রাখে। রূপজীব্য বা মধ্যমা গণিকারী গয়না গড়ানাে, বাসন-পত্র কেনা, ঘর সাজানাে, পাস-দাসীর মাইনা, ঘরের দরকারী জিনিসপত্র এবং সাজসজ্জার প্রসাধন সামগ্রী কেনার জন্য নাগরের কাছ থেকে ধন নেয়। কুম্ভদাসী বেশ্যা সাদা কাপড়, সুগন্ধি তেল, সুগন্ধি দ্রব্য, খাদ্য সামগ্রী, তাম্বুল, সােনা ইত্যাদি ভােগ্য বস্তু সওদা করার জন্য নাগরের কাছ থেকে টাকা পয়সা নিয়ে থাকে।
কোন অন্য নায়িকার কাছ থেকে নায়ককে সরিয়ে নেবার জন্য, নায়কের সাহায্যে নিজের প্রতিষ্ঠা এবং উন্নতির জন্য, কোন খারাপ ব্যাপার হটাবার জন্য এবং নিজের কল্যাণের জন্য বেশ্যার উচিত কম টাকা দিলেও সেই পুরুষের সংসর্গ করে। যে পুরুষ অত্যন্ত প্রভাবশালী, বিপদকালে সাহায্য করতে পারে, সেই পুরুষও বাঞ্ছনীয়। যদি নায়িকা দেখে অমুক তার সংস্রব ত্যাগ করতে চলেছে, তবে যথাসাধ্য তার কাছ থেকে ধন আদায় করে নেবার চেষ্টা করে এবং সেসঙ্গে যে জিনিসের সাহায্যে স্থায়ী আয়ের ব্যবস্থা হতে পারে, যেমৰুভূমি, ব্যবসায়ের উপকরণ বা রাজদরবারে চাকরি ইত্যাদি।
যাকে ছাড়লে বিপদ এবং যার সংস্রবে উন্নতি হয়, নায়িকার প্রাণপণ চেষ্টায় তার কাছে পৌঁছে যাওয়া কর্তব্য। যে রাজপ্রিয়, কঠোর বা যার কাছ থেকে ধন বুধ কমে যেঙ্গে—এমন পুরুষদের থেকে দূরে থাকা প্রয়ােজন।
পর্যাপ্ত ধনদাতা, উৎসাহী এবং সামান্য সেবায় প্রসন্ন হয় এমন নায়কের কাছে বেশ্যার নিজের পয়সা খরচ করেও উপস্থিত হওয়া উচিত।
অর্থ, অর্থ এবং সংশয়
কখন কখন এমন হয় যে অর্থ লাভের চেষ্টা করতে গিয়ে অর্থের বদলে অনর্থই ঘটে। এর কারণ নিম্নরূপ —নায়িকার বুদ্ধির দুর্বলতা, বিরােধ করায় অক্ষমতা, অত্যন্ত প্রেম, ক্রোধ, অহংকার, প্রমাদ, গাফিলতি, মিথ্যা দম্ভ, অত্যধিক সরলতা, অন্ধবিশ্বাস, বিনাবিচারে অতিরিক্ত সাহস দেখানাে এবং দূর্ভাগ্য।
এইসব অনর্থের ফলস্বরূপ বিবিৰ্ণত ক্ষতি হয়।
ধনব্যয় করেও বিপদ থেকে মুক্ত হওয়া যায় না, আসন্ন প্রাপ্য ধন না পাওয়ার সম্ভাবনা, হাতের টা-য়র্সা হাতছাড়া হয়ে যাওয়া, অন্যদের দুর্বাক্য হজম করা, অযােগ্য পুরুষদের সঙ্গে সহবার্সে বাধ্য হওয়া, প্রাণ সংকট, চুল উঠে যাওয়া, কারাবাস, দৈহিক দণ্ড এবং দেহ ভেঙে পড়ার আশংকা।
এই জন্য যেশারি কর্তব্য হল এই ধরণের অনর্থক প্রথম থেকেই উৎপন্ন হবার সুযােগ না দেয়া। এবং অতিরিক্ত ধনলাভের অতি লােভ কখনই না করে।
ধর্ম, অর্থ ও কাম—এগুলি সুখদানকারী ত্রিবর্গ। এর বিপরীত অনর্থ, অধর্ম ও দ্বেষ– এগুলি অনর্থ ব্রিবর্গ এবং দুঃখের কারণ।
কোন পুরুষের সংসর্গে যাবার আগে, এই দুই দ্বিবর্গের ছয় বর্গের সম্পর্কেই বেশ্যা ভালভাবে চিন্তা ভাবনা করে এবং ভাল-মন্দ পরিণাম সম্পর্কে বিচার করে নিজের মনের সংশয় দূর করে। এমন যেন না। হয় যে শুধু একের জন্য ত্রিবর্গের অন্য দুই বর্গ উপেক্ষিত হয়। ত্রিবর্গের তিনটি বর্গের উৎপত্তির কারণ ও লাভ দেখে বুঝে কোন পুরুষের সঙ্গে সম্বন্ধ রাখা উচিত। ধর্ম, অর্থ ও কামের সামঞ্জস্য হলেই ‘অর্থ-ত্রিবর্গ’ সম্পূর্ণ হয়, অন্যথায় ঘটে ‘অনর্থ-বির্গ।
যে নায়কের অভিগমন করলে ধন, প্রসিদ্ধি ও প্রভাব বৃদ্ধি পায়, ভবিষ্যৎ ধন উপার্জনের রাস্তা খুলে যায়, অন্য লােকেরা সহবাস প্রার্থনা করে, এমন সম্পর্ক থেকেই ধনের অনুবন্ধ বা ক্রম আরম্ভ হয়। এমন নায়ককে উত্তম নায়ক বলা হয় এবং এমন সম্পর্ক বেশ্যার পক্ষে উচিত সম্পর্ক। কিন্তু যে পুরুষের কাছ থেকে ধন নিলেও ভবিষ্যৎ ধনলাভের রাস্তা সুগম হয় না, তবে সে সম্বন্ধ অর্থানুবন্ধের সম্পূর্ণ বিপরীত হয়। এমন ব্যক্তি যে বেশ্যাসক্ত কিন্তু দরিদ্র এবং অন্য। লােকের কাছ ধন নিয়ে বেশ্যাকে দেয়, এমন ব্যক্তির সংসর্গ করলে বেশ্যার প্রতিষ্ঠায় প্রতিবন্ধক সৃষ্টি হয়। এমন পরিস্থিতিতে কেবল ধনের জন্য নীচ ব্যক্তির সঙ্গ করলে ধন উপার্জনে হ্রাস আরম্ভ হয়ে যায়।
কখন কখন বেশ্যারা বীরপুরুষ ও রাজপুরুষদের সঙ্গে স্বয়ং নিজের টাকা খরচ করে এই আশায় সহবাস করে যে আগামী দিনের বিপদ আপদের হাত থেকে সে সুরক্ষা পাবে এবং সমাজে প্রভাব প্রতিপত্তি বাড়বে। কিন্তু প্রায়ই বেশ্যাদের এই ধরনের মনােবাসনা। পূরণ হয় না, বরং এতে টাকা খরচের রাস্তা খুলে যায় এবং অর্থের বদলে অর্থ প্রাপ্তি ঘটে। কৃপণ, কুরূপ এবং কৃতস ও ছল-কপটে দক্ষ যে পুরুষ তার সঙ্গে সমাগম করলেও বেশ্যার অভিগমন নিষ্ফল হয়ে যায়। এই রকমই প্রভাবশালী তথা রাজ-অনুগ্রহপুষ্ট বা রাজার প্রিয় ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখলেও অনর্থের অনুবন্ধ সৃষ্টি হয়।। বেশ্যার অর্থের সমানই ধর্ম এবং কামের অনুর্বােরও ব্যবস্থা করা উচিত। কোন কাম-পীড়িত গুহ ব্ৰহ্মণের সঙ্গে সহুৰ্বাস করে তার প্রাণরক্ষা করাকে বলে ধর্মানুবন্ধ, অথচ এমনি কোন ব্রাহ্মণের সঙ্গে রমণ করলে তাকে অধর্মের অনুবন্ধ বলে। প্রেমিক-ধনবান নায়কের সাথ রমণ করা হল কামানুবন্ধ। এতে রতি সুর্থ মেলে এবং ভবিষ্যত সুখের হয়। অস্থিরচিত্ত পুরুষের কামলালসা মেটানােকে দ্বৈনুবন্ধ বলে। নায়িকার উচিত কামালুবন্ধ, দ্বেষানুবন্ধ, ধর্মানুবন্ধ এবং অধর্মানুবন্ধ ইত্যাদির খেয়াল রেখে সব সংশয় নিরসন করে অভিগমন করা।
যদি সহবাসের জন্য পুরুষ সমাগমের আগেই ধন দান করেত সন্দেহের কোন কারণ নেই, যদি পরে দেয় তবেই সংশয়। নায়িকার এই ধরণের অর্থ রাখা উচিত নয়।
কামুককে নিজের দেহ দান করে ধন গ্রহণ বেশ্যার ধর্ম। যদি ঐ কামী নিধন অর্থাৎ দরিদ্র হয় তবে তাকে তাড়িয়ে দেওয়া ধর্মসঙ্গত কিনা, এই ধরণের সংশয় বেশ্যার মনে আসতে পারে। যােগ্য পুরুষ সমাগম না হলে, সেক্ষেত্রে বেশ চাকর বা নীচ পুরুষের সমাগম করলে, বেশ্যার বিচার করে দেখা প্রয়ােজন এতে দ্বেষ সৃষ্টি না হয়। কোন প্রভাবশালী বা ক্ষুদ্র ব্যক্তির সঙ্গে সম্বন্ধ স্থাপনের পূর্বে (যাকে বেশ্যা স্বয়ং চায় না) বেশ্যা ভালভাবে বিচার করে নেবে এতে অনর্থের আশঙ্কা আছে কিনা। যদি কোন পুরুষ বেশ্যার প্রেমে মরণাপন্ন হয়। এবং বেশ্যা তাকে অপছন্দ করে, তবে সেক্ষেত্রে তার চিন্তা করা উচিত যদি এই প্রেমাতুর পুরুষ মরে যায় ত অধর্ম হবে কিনা। একে ধর্ম সংশয় বলে।
যেখানে ধর্ম, অধর্ম, কাম ও দ্বেষের মিশ্রিত সংশয় ঘটে, সেখানে বেশ্যার উচিত সূক্ষ্মতম সংশয়ের ভালভাবে বিচার বিশ্লেষণ করে। সংসর্গ করে। যেমন, কোন নবাগত, যে অজ্ঞাত কুলশীল তার সঙ্গে রমণ করে অর্থ বা অনর্থ যে কোন একটা প্রাপ্ত হবার সম্ভাবনা। বেদপাঠী, সন্ন্যাসী, তপস্বী বা ব্রহ্মচারী কামপীড়িত হয়ে মরণাপন্ন হলে তবে সম্ভোগ ক্রিয়া করে তার প্রাণরক্ষা করায় ধর্ম ও অধর্ম দুইই। হতে পারে। প্রাণ বাঁচানোয় ধর্ম এবং ব্রহ্মচর্য খণ্ডনে অধর্ম। তাই এক্ষেত্রে ধর্ম ও অধর্মের সংশয় আছে।
কোন বিবিখ্যাত পুরুষের দোষ-গুণ পরীক্ষা না করেই তারসঙ্গে রমণ করা কামদ্বেষ’ হিসেবে গণ্য হয়। এটাও সংশয়যুক্ত বিষয়।
যখন বেশ্যা কোন নবাগত পুরুষের সংসর্গ করে তার থেকে ধনলাভ করে। আবার তার পূর্বেকার আসক্ত পুরুষ তাকে ধন দিয়ে চলে যাতে সে অন্য পুরুষের সঙ্গে রমণ না করে। এইভাবে বেশ্যার দুই দিক থেকে অর্থ লাভ হয়। একে পূর্ণ লাভ বলে।
এর বিপরীত ক্রমে বেশ্যা যদি স্বয়ং টাকা খরচ করে আসক্ত পুরুষ ও নব আগন্তুকের সমাগম করে তবে দুই দিক থেকেই অনর্থ হয়। নবাগসুক তাকে ছেড়ে চলে যায় আর আ: ঔ পুরুষ দ্বেষবশ বেশ্যার কাছ থেকে ধর্ম ছিনিয়ে নেয়।
যেক্ষেত্রে এমন আশঙ্কা জাগে যে নবাগত ধন দেবে কিনা ঠিক নেই, আবার পুরনাে আসক্ত পুরুষ নবাগত সমাগমের দরুণ ক্রুদ্ধ হয়ে ধন নাও দিতে পারে, সেক্ষেত্রে দুই দিক থেকেই অর্থ সংশয়। বুঝে নেয়া প্রয়ােজন।
আচার্য বাত্ৰীয়ের মত নিম্নরূপ- যে বেশ্যার নবাগতের কাছ থেকে অর্থলাভ হয় এবং আসক্ত পুরুষ প্রেমিক হওয়ার দরুন ধন দিয়ে চলে। সেক্ষেত্রে ত উভয় দিক থেকেই লাভ আর লাভ।
দু’দিক থেকেই অর্থসংশয় নিম্নলিখিত তিন অবস্থায় হয়ে থাকে—
প্রথম, নগন্তুককে টাকা দিয়ে সমাগম নিস্থল, কেননা সেই ধন বেশ্যার লােকসান হয় এবং পূর্ব পরিচিত আসক্ত নায়ক এতে ক্রদ্ধ হয়ে অনর্থ ঘটাতে পারে। দ্বিতীয়ত, নবাগস্তুকের সঙ্গে সমাগম করে তারপরে ধন মিলবে সে বিষয়ে সংশয় আছে, আবার নবাগস্তুক সমাগমের কারণে আসক্ত পুরুষ যদি সমাগম না করে, তাতেও অর্থপ্রাপ্তি বন্ধ হয়। তৃতীয়ত, বেশ্যা যখন নবাগতর সঙ্গে সমাগম করে তখন পূর্ব পরিচিত নায়ক বিরুদ্ধাচরণ করে অনিষ্ট করতে পারে। এর ফলে তার কাছ থেকে পুনর্বার ধনপ্রাপ্তির ব্যাপারে সংশয় সৃষ্টি হয়।
এই কারণেই যদি নবাগতের সঙ্গে সমাগম করলে আসক্ত পুরুষের কাছ থেকে ধনলাভ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে, তবে নবাগতের। সঙ্গে সমাগম করা উচিত নয়।
বেশ্যার উচিত এই অর্থসংশয় এবং অনর্থসংশয়ের সূক্ষ্মতম পার্থক্য সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করে তারপরেই এমন পুরুষের সাথে সমাগম করে যাতে অর্থলাভও ঘটে এবং অনাগত বড় বড় অনর্থের সম্ভাবনাও চাপা পড়ে।
বিলাসী পুরুষের অভাবে বেশ্যা নিজের স্থানের লম্পটদের সঙ্গেই সম্ভোগ করে ধনপ্রাপ্ত হতে পারে। এর জন্যে সে লম্পটদের মনে স্পর্ধা উসকে দেয়। অনেকক্ষেত্রেই বেশ্যা স্থানীয় লম্পটদের এই লালর্চ দেখায় – যে কেউ তার মনােবার্সনা পূরণ করবে তার সঙ্গেই নিজের কন্যাল সমাগম করবে। তবে বেশ্যার এই দিকে খেয়াল রাখতে হবে যে লম্পট কামুকদের সঙ্গে/সহবাস করায় বাইরে তার বদনাম ছড়াচ্ছে কি না। সঙ্গে সঙ্গে এই পরিস্থিতিতে যে অর্থ ও অনর্থ সংশয় হয় সে বিষয়ে ভালভাবে বিচার বিবেচনা করে নিতে হবে।
এখানে অর্থানৰ্থ ও সংশয়ের বিচার সমাপ্ত হল।
করিন, দাসী, কুলটা, পতিকে অপমান করে স্বাচ্ছন্দে ঘুরেবেড়ানাে রমণী যে প্রমণ করে অবাধে, নটী ও শিল্পকারীদের স্ত্রীগণ – এদের রূপজীব্য গনিকা বলে।
বেশ্যার উচিত নিজ অনুকুল উত্তম, মাধ্যম বা অধম নায়ক বেছে নেয়, তাকে ঐসন্ন করে ধনপ্রাপ্তি করে এবং তার বহিষ্কার, তার সঙ্গে পুনর্মিলন, লাভালাভের বিচার, অর্থানুবৃহ্মণ অনর্থ এবং সংশয়ের সূক্ষ্ম বিবেচনা ভালভাবে বুঝে নেয়! বেশ্যার মত আচরণকারী স্ত্রীদের জন্য এই অধ্যায়ে আদেশাবলী সংকলিত হয়েছে।
বেশ্যারা নিজ যুবতী কন্যাদের শীল (স্বভাব), রূপ, গুণের অনুরূপ বিলাসী যুবকদের ডেকে বলে ; র্যে যুবক আমাকে অমুক অমুক জিনিস এনে দেবে, তাকে আমি আমার কন্যার সঙ্গে সমাগম করতে দেব। এইভাবে তারা কন্যাদের বাজারের বিক্রয় যােৰ্গ পণ্যের মত রক্ষা করে।
বেশ্যাদের যুবতী কন্যারা নগরের তরুণ পুত্রদের সঙ্গে প্রেম সম্বন্ধ রাখে এবং সংগীত নৃত্য ইত্যাদি কলা শিক্ষার নাম করে তাদের সঙ্গে মিলিত হয়। যে যুবক কন্যার মাতাকে পর্যাপ্ত ধন দেয়, তার সঙ্গে বেশ্যা নিজ কন্যার প্রথম সমাগম করিয়ে দেয়, যতক্ষণ পর্যন্ত মা তার দাবী করা ধন পুরােপুরি না পায়, ততক্ষণ সে অন্যদের কাছে প্রকাশ করে চলে যে অমুক যুবক দাবী করা ধনের অমুক অংশ দিচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে সে এও প্রচার করে যে কন্যা এখনাে অক্ষত যােনি আছে।
ঐ যুবতী কন্যা যার সঙ্গে প্রথম সমাগম করে অর্থাৎ যার কাছে প্রথম দেহ বিক্রি করে, তার সঙ্গে বছরভর বিবাহিত স্ত্রীর সমান দিন যাপন করে এবং আবার নায়িকার সমান আচরণ করে। যদি কখন। তার কুমারীত্ব হরণকারী পুরুষ তাকে ডাকে, তবে তার উচিত অন্য পুরুষদের উপেক্ষা করে তার সঙ্গে রাত্রি কাটায়। এতে তার সৌভাগ্য। বৃদ্ধি ঘটে – এই আচার্যদের অভিমত।
৩২. ঔষধি এবং শৃঙ্গার প্রসাধন
পূর্ব প্রকরণগুলিতে প্রদত্ত উপায়গুলির দ্বারা যদি পুরুষ স্ত্রীকে আকর্ষণ করতে অসমর্থ হয়, তবে বিকল্প উপায়ের দ্বারা তার নিজেকে আকর্ষক বানান উচিত।
রতিসুখ অভিলাষী পুরুষের রূপ, গুণ, অবস্থান ও দান – এই চারটি জিনিস স্ত্রীদের আকৃষ্ট করে। এই বিশেষ গুণগুলির অভাবে স্ত্রী বা পুরুষের কৃত্রিম উপায় অবলম্বন করে নিজেকে আকর্ষণীয় করে তােলা দরকার। প্রাচীন পুস্তকগুলিতে বর্ণিত স্ত্রীদের সৌন্দর্যবৃদ্ধির বিধিগুলি নিম্নপ্রকার কামসূত্রে অনেক অলভ্য ভেষজ ও অন্যান্য ওষুধের বর্ণনা আছে। এই অধ্যায়ে শুধু সেই তথাগুলিই বর্ণিত হয়েছে যেগুলি সুলভ, সরল এবং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রসুত বলে মনে হয়।
তিল, সরিষা, বন্দি, দারু হলদী, কুঠ-এর ভিতরের অংশের মিশ্রণ লাগালে শরীরের কান্তি সােনার মত হয়। হলদী, নিম, অমলতাস, অনার শিরীষ এবং লােধ-এর ছাল মিলিয়ে লাগালে স্ত্রীলাকের সৌন্দর্যবৃদ্ধি হয়।
কালে তিল, গরেলা, হলুদ সরসে এবং জীরা – সমভাগে নিয়ে, দুধে পিসে লাগালে শরীর খুব সুন্দর হয় এবং ব্রণ, দাগ ইত্যাদি দুর হয়।
এইভাবে বচ,লােদ, ধনিয়া ও গােরােচন পিষে লাগালে ব্রণ দূর
মুলেধি, সাদা সরসে লোধের ছাল ও ভুষিহীন যবের চূর্ণের কাথ লাগালে স্ত্রী লােকেদের মুখকান্তি বিশেষ বৃদ্ধি পায়।
জায়ফলের ও দুধের মিশ্রণ (পেসাই করা) লাগালে ব্রণ বিলীন হয়ে যায়।
লাল চন্দন, মদ্রীঠ, লোধ, প্রিয়ংগুর ফুল, বটের অঙ্কুর, মসুর ও ফুঠ – এই সব পেসাই করে প্রলেপ দিলে সৌন্দর্য বাড়ে।
মাতৃসূঙ্গের ছাল যদি মুখে রেখে চোষে তবে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে অপান বায়ুর (দূষিত বায়ু) দুর্গন্ধও দুর হয়।
জায়ফল, জরিত্রী, তুলসী, কুংকম এবং কুঠ-এই সবের গুলি বানিয়ে চুসলেও মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়।
লােধের ছাল, খস, শিরীষ ও পদ্মপাতা মিলিয়ে শরীরে মালিশ করলে গ্রীষ্মকালীন ঘাম দূর হয়।
আম ও আনারসের ছাল, শাঁখের গুড়া, তেঁতুল এবং করৌর্দেএর বীজ — এই সব পিসে লেপন করলে দেহের যাবতীয় দুর্গন্ধ নাশ হয়।
পুরুষদের জন্য বাজীকরণ
যে খাদ্য পদার্থ সেবন করলে পুরুষের মৈথুন শক্তি প্রচণ্ড হয়, তাকে বাজীকরণ বলে। বাজীকরণ সেবনের সময় সংযম রাখা প্রয়োজন অন্যথায় হানি হয়।
শতাবরীর চূর্ণ দুধে মিলিয়ে পান করলে কাম শক্তি অত্যন্ত বৃদ্ধি পায় এবং পুরুষেন্দ্রিয় সতত প্ৰহষ্ট থাকে। মাছ ঘিতে ভেজে খেলেও অথবা রাত্রে ঘী ও মুলৈঠির সঙ্গে দুধ পান করলে সম্ভোগ শক্তি খুব।
গােখরু, তালমখানা, শতাবর, কোঁচের বীজ, বড় খরেন্টি ও ছােট খরেন্টির চুর্ণ বানিয়ে রাতে দুধের সাথে সেবন করলে উত্তম ফল হয়।
উরদের ধোয়া ভাল (এক ধরণের বিউলি ডাল) ঘিতে ধীরে ধীরে। ভেজে এবং গরুর দুধের সঙ্গে জ্বাল দিয়ে মধু ও ঘীয়ে মিলিয়ে খেলে মৈথুন শক্তি খুব বেড়ে যায়।।
বিদারী কন্দ, কোঁচের বীজ, মিশ্রী, মধু, ধী এবং গমের আটা মিলিয়ে জ্বাল দিয়ে খেলে কম শক্তি চাঙ্গা হয়।
স্তন শক্তি বাড়াবার জন্য নিম্মলিখিত বিধি আছে-মুরগীর ডিম ভাতের সঙ্গে আগুনের আঁচে সিদ্ধ করে, দুধে ফুটিয়ে ঘী ও মধুর সঙ্গে মিলিয়ে যাওয়া বিধেয়।
আকরকরয় শঠি, পিপল, কেসর, লেগি, লাল চন্দন, জয়িত্রী ও জায়ফল – এই সবের চর্ণ দুই ভােলা করে নিয়ে, শুদ্ধ গন্ধক ও হােগল আট মাশা করে নিয়ে এবং আফিম আট ভােলা–এই সবের মিশ্রণ করে তিন তিন রতির গোলী প্রতি করে রাত্রে দুধের সাথে সেবন করা বিধেয়।
শুদ্ধ পারা, গন্ধক, অভস্ম, লােহা ভস্ম, রূশা ও সােনার ভস্ম, সােনা মখীর ভস্ম, বংশলােচন, এবং ভোগের বীজের চূর্ণ আট আটি ভােলা নিয়ে, ভোঁগের ফোটানাে কাথের মধ্যে খুলে এক এক মাশার গােলী বানিয়ে নিয়ে রাতে দুধের সঙ্গে খাওয়া বিধেয়।
নীল ও সাদা পদ্মের পরাগরেণ, মিত্রী এবং মধু মিলিয়ে ইন্দ্রিয়ের উপরে প্রলেপ দিলে ইন্দ্রিয় স্তম্ভন হয় এবং পুরুষ সবেগে রতি করতে পারে।
এই রকমভাবে তিলের তেল, সুহাগা, মৈনসিল, পর্ণরস, কুঠ ও নােনিয়া পাতার রস—এই সবের প্রলেপ বানিয়ে সাতদিন ইন্দ্রিয়ে। লেপ দিলে ইন্দ্রিয় স্তম্ভন হয়।
পুরুষেন্দ্রিয় স্কুল, পুষ্ট ও দীর্ঘ করার উপায় নীচে দেয়া হলনাগবলা, বচ, অশ্বগন্ধা, গজলীপুল, কনেলের ফুল,- এই সবের সমান ভাগ নিয়ে মাখনে মিলিয়ে লেপ দিলে পুরুষেন্দ্রিয় খুব পুষ্ট হয়।
জটামাংসী, সিংহফল, কুঠ, শতাবরী ও অসগন্ধ এসবের সমান। মাত্রায় চুর্ণ নিয়ে তাকে চারগুণ পরিমাণ দুধের সাথে মিলিয়ে তিলতেলে অল্প আঁচে জ্বাল দিন।
এই তেল মর্দন করলে লিঙ্গ স্থল হয়। শুয়ারের চর্বি মধুতে মিশিয়ে ইন্দ্রিয়ে লেপন করলেও ইন্দ্রিয় পুষ্ট ও দীর্ঘাকার হয়ে যায়।
মধু, সৈন্ধব লবণ, এবং কবুতরের বীট – এই তিনের মিশ্রণ করে ইন্দ্রিয়ের উপরে লেপন করলে স্ত্রী সমাগমে বড় আনন্দ পাওয়া যায়। কাপনের পাতার রসে মধু মিলিয়ে ইন্দ্রিয়ে লেপন করে সমাগমের সময় স্ত্রী খুব দ্রুত রতি সুখ প্রাপ্ত হয়।
স্ত্রীদের জন্য ঔষধি
এখন স্ত্রীলােকদের জন্য কিছু বিধি বর্ণনা করা হচ্ছে আমলা বৃক্ষের ছাল দিয়ে যােনি প্রত্যহ ধুলে বৃদ্ধাও যুবতীর মত সঙ্গম করে।
পদ্ম ফুল-দলের সঙ্গে পদ্মবীজের অংশ ও মিত্রী সেবন করলে এক মাসের মধ্যে স্ত্রীগণের স্তন দৃঢ় ভুয়া মুণ্ডার কাথ তেলে জ্বাল দিয়ে শুনে লেপন করলেও একই ফল লাভ হয়।
প্রিয়ংগু, কুটকী, বচ, লজ্জাবতী লতা এবং হলদী এই সবের সমান ভাগ নিয়ে ভৈসা ও গাওয়া ধী-এর সমান সমান মাত্রা তেলের সঙ্গে জ্বাল দিয়ে দশদিন এই মিশ্রন-তৈল শুনে মর্দন করে দিলে স্তন। শক্ত হয়ে যায়।
দেবদারু ও পদ্মের কেসর-চূর্ণ এবং হলদির চুর্ণ সমান মাত্রায় মিলিয়ে স্ত্রীর যােনিতে মাখলে যােনি সংকুচিত হয়।
এই প্রকারে লােধের ছলের সাথে আখের বীজ পিসে নবপ্রসুতার যােনিতে প্রলেপ দিলে যােনি সংকুচিত হয়।
স্ত্রী যদি মাসিক হয়ে যাবার পর নাগকেসরের চূর্ণ ধ্বী বা দুধের সাথে পান করে এবং আবার সমাগম করে, তবে তিন দিনেই সে গর্ভবতী হয়।
গুরুচ ও অশ্বগন্ধা দুধে জাল দিয়ে পান করলে মাসিক ধর্ম বন্ধ হবার পরেও স্ত্রী আবার গর্ভধারণে সক্ষম হয়।
ঋতুস্নানের পরে সাদা ভটকটৈয়ার মুল দুধের সাথে পেসাই করে পান করলে গর্ভধারণ হয়।
শঠি, ছােট ভটকটৈয়া ও পীপলের চূর্ণ গাওয়া ঘি বা দুধের সাথে পান করলে স্ত্রী গর্ভধারণ করে পুত্র সন্তান প্রসব করে।
পরিশেষে আচার্য বাৎস্যায়ন বলেন, তিনি আচার্য শ্বেতকেতু, বাভ্রব্য, দত্তক, সুবর্ণনাভি, গােণদীয়, গােণিকা মুত্র, ঘােটকমুখ ও কুসুমাচার ইত্যাদির লেখা কামশাস্ত্র অধ্যয়ন-মননের পরে, ঐ সবের প্রয়ােগ অনুসরণ করে যত্নপূর্বক সংক্ষেপে এই ‘কামসূত্র রচনা করেছেন।
এই গ্রন্থের উদ্দেশ্য এই নয় যে এটি পড়ে কেবলমাত্র নিজের ইচ্ছা পূরণ করে নেয়া হােক।
যে ব্যক্তি কাম বিভানের সাচ্চা ও শুদ্ধ সিদ্ধান্তগুলির সঙ্গে পরিচিত ও যে ধর্ম-অর্থ-কাম এই ত্রিবর্গের পালন করে এবং লােকাচারের দিকেও লক্ষ্য রাখে, সে যােগীর ন্যায় নিজ ইন্দ্রিয় সমূহকে জয় করতে পারে, সে নিজ ইন্দ্রিয়-ইচ্ছার দাস হয় না এবং জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রে সফল হতে পারে।
রাজা ভর্তৃহরি যৌবনে কামকলার পূর্ণ প্রয়ােগ করেছিলেন। এর। ভিত্তিতে তিনি কামােদ্দীপক ‘শৃঙ্গার শতক’ রচনা করেছেন। পরবর্তীকালে পরিণত বয়সে রাজা ভর্তৃহরি বৈরাগ্য অবলম্বন করেন। এবং বৈরাগ্য বিদ্যার অনুশীলন করে বৈরাগ্য শতক রচনা করেন। ভর্তৃহরি শতক’ আজও পঠিত হয়। সুতরাং যে কোন ব্যক্তি সেযুগে কার্যকলার অনুশীলনান্তে পরিণত বয়সে যােগী জীবন যাপন করতে পারতেন।
ভারতীয় প্রাচীন সংস্কৃতি ও ধর্মে সংসার জীবনের তথা সমাজ জীবনের জীবন চর্যায় প্রবৃত্তি ও নিত্তি উভয় দিককেই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। নিবৃত্তি অর্থাৎ যােগই শ্রেষ্ঠ। কিন্তু প্রবৃত্তি অর্থাৎ “ভােগ’ বাসনা চরিতার্থ না হলে নিবৃত্তিমার্গে অগ্রসর হওয়া সম্ভব নয়। তাই নিবৃত্তির সঙ্গে সঙ্গে প্রবৃত্তিকেও অর্থাৎ কামভােগকেও বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তাই দেখা যায় কামশাস্ত্রের উপর গভীর অনুশীলনের প্রয়াস। কামশাস্ত্র সম্পর্কে অনেক গ্রন্থ রচনা করা হয়েছে।
কামশাস্ত্র রচনার মূল উদ্দেশ্যই হােল সংসার আশ্রম অর্থাৎ প্রবৃত্তি মার্গে চলমান জনগণকে যথাযথ ও সংযত কামভভাগের শিক্ষা দেয়া। কামানুশীলন অর্থাৎ সম্ভোগ ও অধ্যাত্ম সাধনা সংসার আশ্রমে একই সঙ্গে চলতে থাকবে। সুতরাং একথা বলা যেতে পারে বাৎস্যায়নের কামসুত্র ভারতীয় জনগণের দেহ, মন ও আত্মার পরিপূর্ণ বিকাশকেই বিষয় করে। নিছক কতগুলি যৌন উত্তেজক মাংসল লীলার বর্ণনাই এর উদ্দেশ্য নয়।
জগদগুরু, সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী শঙ্করাচার্য যখন সেযুগের গৃহী পণ্ডিত-প্রবর মণ্ডন মিশ্রের সঙ্গে যখন শাস্ত্র বিতর্কে অবতীর্ণ হন। তখন পণ্ডিতের ভার্যা সরস্বতী দেবী কামশাস্ত্র সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন করেন আচার্য শংকরকে। কিন্তু আচার্য বাল ব্রহ্মচারী হওয়ায় সেই মুহুর্তে উত্তর দিতে অসমর্থ হন এবং সরস্বতী দেবীর কাছে সময় চেয়ে নেন। দু’মাস সময় চেয়ে নিয়ে তিনি অলৌকিক পদ্ধতিতে কামশাস্ত্র সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান অর্জন করেন। এর পরে তিনি কামশাস্ত্র সম্পর্কে একটা বইও লেখেন। তারপরে সরস্বতী দেবীকে তার কামশাস্ত্রীয় প্রশ্নের উত্তর দেন এবং তর্কযুদ্ধে জয়লাভ করেন। এই প্রতীকী ঘটনায় বােঝা যায় যে ভারতবর্ষের সনাতন জীবন-চর্যায় কামশাস্ত্রকে অন্যান্য জ্ঞানগর্ভ শাস্ত্রের মতই একটি পূর্ণাঙ্গ শাস্ত্র বলে স্বীকার করা হত। আচার্য বাৎস্যায়ন রচিত ‘কামসূত্র’ তাই যথার্থই একটি ভারতীয় শাস্ত্র যা বিশ্বের দরবারেও সমাদৃত হয়েছে।