অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচিত গল্প সংগ্রহ

›› গল্পের অংশ বিশেষ  

অনাবৃতা

…….কমল পড়ে যায় মহাবিভ্রাটে। তার কেবল মনে হয় বারবার ডুব দিয়েও সে তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ধুয়ে সাফ করতে পারেনি।

আবার ডুব?

কীরে জতু কী হল!

আঁচল ভেসে আছে।

কমল নিজের মধ্যে বোধ হয় থাকে না। সে তার সায়া শাড়ি খুলে সব বুকের মধ্যে জড়িয়ে ডুব দেয়। সেমিজটিও খুলে ফেলে। কীভাবে যে শাড়ি সায়াতে বাতাস ঢুকে থাকে এবং ডুব দিলেও শাড়িসায়া ভেসে ওঠে জলে। জতু কমলকে শুধু দেখে।

কখনও মনে হয় মাছের মতো পাখনা মেলে দিয়েছে জলে। অন্দরের পুকুর, তায় বর্ষাকাল, জল টলমল হয়ে আছে, জলের নীচে নুড়ি পাথর পর্যন্ত স্পষ্ট। স্ফটিক জলে কমল নেমে গেলে সবই দেখতে পায়। সুন্দর শরীর এবং স্তন, সবই অবাধে কমল জলের নীচে নগ্ন সৌন্দর্য সৃষ্টি করতে পারে।…….

…….কমলবউ আঁচল শরীর থেকে নামিয়ে দিল।

সেমিজ টেনে খুলে ফেলল শরীর থেকে। তারপর সায়ার ফসকা গেরো টেনে দিতেই, থর থর করে পড়ে গেল পায়ের কাছে। কমল বউ পা দিয়ে সায়াটা তুলে জলে ছুড়ে দিল। শাড়ি ব্লাউজ পা দিয়ে ঠেলে দিল জলে।

কোনও হুঁশ নেই কমলবউয়ের। হাঁসের মতো ঘাটলা থেকে জলে ঝাঁপিয়ে পড়ল। ডুব দিল। কী একটা ঘোরের মধ্যে আছে যেন।……

আজব বাতি

………জ্বাললে এক নগ্ন সুন্দরী নাচে। নিবিয়ে দিলে নগ্ন সুন্দরী অদৃশ্য হয়ে যায়। আগুন বাতাসে কাঁপলে নাচের বাহার একরকম, বাতাস না থাকলে সেই নগ্ন নারী সোজা মাথার উপর হাত তুলে দাঁড়িয়ে থাকে। তার শরীরের সব ভাঁজ এত স্পষ্ট যে-কোনো মানুষ মুহূর্তে কামুক হয়ে উঠতে পারে। আসলে কাচের ভিতর কোনও মজা আছে অথবা আগুনের প্রতিবিম্ব কোনও মায়াবি নারীর শরীর নিয়ে ভেতরে ঘোরাফেরা করে।…….

টিউলিপ ফুল

………আমি যেখানে যা কিছু দেখি কেমন অবাক হয়ে যাই। নীলচে রঙের বব করা চুল, মুখ আপেলের মতো মসৃণ, শরীরে বোধ হয় আশ্চর্য সুবাস আছে। আমার বয়েসী এই মেয়েটা এখানে আছে ভাবতে কেমন অবাক লাগে।……..আসলে আমি কী দেখছিলাম, ওর স্তন! কারণ ভারী স্তন খেলতে গিয়ে দুলে উঠছিল—ওর থাই এত মসৃণ, যেন হাত দিলে মোমের মতো পিছলে যাবে।…………

ট্রেন বে-লাইন হলে

……..বনলতার বেশবাস ঠিক নেই। আঁচলটা ওর মা কাঁধে তুলে দিয়ে বুক ঢেকে দিল। স্তনের মধ্যে রয়েছে মাতৃদুগ্ধ। বনলতা স্তন ঠিক রাখার জন্য সন্তানকে মাতৃদুগ্ধ খাওয়ায়নি। স্তন সুডোল এবং নিস্তেজ। শিরা-উপশিরা সব এখন ম্রিয়মাণ–পুরুষ আত্মীয়স্বজনের চোখে মা চায় না কন্যার এই পুষ্ট স্তন ভেসে উঠুক। এমনও হতে পারে স্তনের আছে এক আশ্চর্য গাম্ভীর্য। যা এখন যতই পরিস্ফুট হোক—বাসি ফুলের মতো অর্থহীন। বনলতা তার স্তন সম্পর্কে এ মুহূর্তে আর সচেতন নয়।……..

………এই দেখ বনলতা, আহা বসো না, ঠিকঠাক হয়ে বসো। ঘাড় একটু বাঁকাও। ঊরু সামান্য তুলে দাও। হ্যাঁ ঠিক আছে। না, না দুই উরুর ভাঁজ স্পষ্ট থাকুক। আমার বাঘিনিকে দেখতে দাও। ছবি দেখ। জংঘা এবং নাভিমূলে আছে অনন্ত রহস্য। আমরা পুরুষেরা ছুটছি, ঈশ্বরের সৃষ্টি রক্ষা হচ্ছে। বাঘিনি বললে তুমি, তুমি এত ব্যাকুল হয়ে পড়ো কেন! তুমি নিস্তেজ হয়ে পড়ো কেন?…….

থার্ড ক্লাস

…….এইরে, খুবই বুঝি বেয়াদপি হয়ে গেছে, নিতাই যে কোথায় গেল! তার হতাশ চোখ মুখ, তারপরই দেখল কুকুরটা ছেড়ে দিয়ে তিনি এদিকেই এগিয়ে আসছেন। পরনে নীলরঙের লতাপাতা আঁকা পাতলা ফিনফিনে শাড়ি, গ্রীষ্মের দাবদাহ থেকে শরীর জুড়াবার পক্ষে যথেষ্ট, হাতকাটা ব্লাউজ এবং বগল তুললে, বগলের লোমও দেখা যায়, সে নিজেই কেন জানি এই অসভ্যতা পরিহার করার জন্য কিছুটা দূরে দূরে সরে দাঁড়াবার সময় শুনল, তুমি জহর না!………

পুষ্পবর্তী

……..তখনই অন ঘর থেকে বের হয়ে এল। ফ্রক গায়ে, গামছা জড়ানো শরীরে। কারণ উঁচ স্তন খুবই তার পরিপুষ্ট, বাডে দিনে দিনে। এ-বছরের ফ্রক ও বছরে। টাইট হয়ে যায়। একজন ছাঁচড়া মানুষের সে কন্যা, চাইলেই দেবে কোত্থেকে। ফলে গামছাখানা সম্বল। গামছাখানা গায়ে জড়ানো, শরীর ঢাকা থাকে, অথবা বলা যায় আব্রু–সে বের হলেই এক লাফে উঠোন তারপর বলল, টাকা দাও।………ভাদু বলল, খিদের আর দোষ কি? উঠতি বয়সে খিদে বেশিই থাকে। তোর বাবা মোটেই বোঝে না। বলে ভাদু একটা পাঁচটাকার নোট বের করে দিতেই খপ করে ধরে ফেলল অনু। কী সুঠাম শরীর। যেন অঙ্গ তার সোনার হরিণ। পায়ের গোড়ালি থেকে জানু পর্যন্ত মসৃণ এবং পাকা বেলের মতো রং। আর জানুর ঊর্ধ্বে কী থাকে–ভাদু ভালোই টের পায়। উঠতি বয়েস যে পরমান্ন। খেতে ভারি সুস্বাদু। ………

রেলগাড়ি ঝিক ঝিক

……সে ব্রেসিয়ার চাইল একটা। খুব হাল ফ্যাসানের একটা বাকস। ওপরে জাঙ্গিয়া আর ব্রেসিয়ার পরা একটা মেয়ের ছবি। সে ছবিটার দিকে তাকিয়ে ভাবল, আজকাল মেয়েরা শাড়ি শায়ার নীচে কেউ কেউ জাঙ্গিয়া পরে। সে অবশ্য এখনও পরে দেখেনি। কলেজে পেনু বলে একটা মেয়ের সঙ্গে ওর খুব সখ্যতা। ওর অনেক পুরুষ বন্ধু। ওদের সঙ্গে সে বেশ ঘুরে বেড়ায়। ওর কথা শুনলে মনে হয়, সে কাউকে বিশ্বাস করে না।…….

সাদা বিছানা

সুদক্ষিণা মুখে ক্রিম ঘসছিল। জানালা খোলা। চৈত্রের ঝড়ো হাওয়া কদিন থেকেই বেশ জোর বইছে। কেমন সব অগোছালো করে দেয় গাছপালা, জানল বিছানার চাদর। সকালের দিকে থমকে থাকে। বেলা যত বাড়ে হাওয়ার জোর তত বাড়ে। মাঘ-ফাল্গুনে মশার উৎপাতাটা ঝড়ো হাওয়ায় এক সময় উড়িয়ে নিয়ে যায়। সন্ধ্যায় বারান্দায় বসে আকাশ দেখার অবসর মেলে। কনকেন্দু বিছানায় শুয়ে সুদক্ষিণার ক্রিম ঘসা দেখছিল। সুদক্ষিণার এগুলো সহবাসের আগেকার প্রস্তুতি। ভোজে বসার আগে কলাপাতা ধুয়ে নেওয়ার মতো। শরীরে তার এখন কেমন জ্বর জ্বর লাগছে। বোধ হয় সুদক্ষিণা আগে থেকে এ-সব করে জানিয়ে দেয়, আমি কিন্তু রেডি হচ্ছি। তুমি নিজেকে ঠিকঠাক করে নাও। আজ আমার পৃথিবী আবার নতুন হয়ে গেছে।……

……..সুদক্ষিণার মাঝে মাঝে কী হয়। সহবাসের ব্যাপারে কেমন ওর শরীরে এক ধরনের জোয়ারভাটা আছে। সুদক্ষিণা আসার পর তার এটা মনে হয়নি। কিন্তু সাত-আট বছরের অভিজ্ঞতায় এটা মনে হচ্ছে তার। মাসখানেক সুদক্ষিণার জোয়ার থাকে, মাসখানেক ভাটা চলে। পুরুষ মানুষের বোধ হয় এটা থাকে না। তার কাছে একজন নারী সব সময়ই উষ্ণতা ছড়িয়ে রাখে। তবে একই ভাবে কতদিন আর এক জানলায় বসে গভীর নীল আকাশ দেখা যায়। মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় জানলাটা বন্ধ থাক। কিন্তু জোয়ারের সময় সুদক্ষিণা, জানলাটা নিজেই খুলে দেবে। তার ভালো লাগা মন্দ লাগা নিয়ে যেন সুদক্ষিণার কিছু আসে যায় না। তখন এক ধরনের ক্লান্তিকর আকাশের নীচে সে বসে আছে এমন মনে হয়। পাশ ফিরে চুপচাপ শুয়ে থাকার চেষ্টা করেও পারে না। সুদক্ষিণা, ঠিক এক সময় না এক সময় তাকে অস্থির করে তুলবেই।

ঘরে ঢুকতেই সুদক্ষিণা বলল, দরজাটা বন্ধ করে দাও।………

…….কনকেন্দু দেখল, সুদক্ষিণা নতুন পাট ভাঙা শাড়ি পরছে। সে যে দরজাটা বন্ধ করেনি, সাজগোজের বহরে সুদক্ষিণার সেটা খেয়াল নেই। নাকে নথ পরেছে। নথ পরলে সুদক্ষিণার কাছ থেকে সে আর কিছুতেই দূরে সরে থাকতে পারে না। কিংবা, শাড়ি পেঁচিয়ে পরার সময় স্তন আলগা, সুদক্ষিণা তখন চুমো খাবার বড়ো আগ্রহ বোধ করে। চুমোর সঙ্গে রোজকার সেই অভ্যেসের কথাটাও বের হয়ে আসে—তুমি সুদক্ষিণা এখনও সুইট সিকসটিন। কবে টুয়েন্টি হবে।…….সুদক্ষিণা ব্লাউজের নীচে এবং বগলে পাউডার ছড়াচ্ছে।…….

…….সে এবার নিজেই সুদক্ষিণার বসন আলগা করে দিতে থাকল। জড়িয়ে ধরে বলল, তুমি আমার সতী লক্ষ্মী। তারপর সহবাসে মগ্ন হবার সময় ভাঙা আয়নায় দেখল, তাদের শরীর বড়ো তেড়া-বেতেড়া। এ শরীর যেন কোন এক কালে সুঠাম থাকে—ধীরে ধীরে কাল তাকে এক সময় হরণ করে নেয়।……..

অন্নপূর্ণা

……..সারাদিন আজ সে ওদিকে মাড়ায়নি। সে আজ বেশ খুশি। জানালায় তার মুখ যে যায় সেই বলে ধীরাজবাবুর পুত্রবধূ লক্ষ্মী প্রতিমা। কী সুন্দর। চোখ আছে ভদ্রলােকের। সে তখন আয়নায়, সে তখন বাথরুমে, নিজেকে দেখতে দেখতে কেমন অভিভূত হয়ে পড়ে। পুষ্ট স্তন, উরুমূলে বিজলি বাতির প্রভা, কালাে মেঘের মতাে চুলের ঢেউ, আর শরীরে আশ্চর্য সুষমা। বড়াে হতে হতে টের পেয়েছে, শরীরে একটা ফোসকা পড়লেও কষ্ট।………

…….সাঁঝবেলার আগেই ছাদ থেকে সে সবার জামা প্যান্ট শাড়ি শায়া নামিয়ে আনে। রবিবার বলে রূপক বিছানায় আটকে রেখেছিল, সারা দুপুর বিকেল সে শরীরের সর্বস্ব দিয়ে রূপকের সঙ্গে মেতেছিল—তারপর বাথরুম এবং আয়না, পাতায় আইল্যাশ, চোখের নীচে নীলাভ রঙের পালকের স্পর্শ সেরে যখন বের হয়ে এল একেবারে অপ্সরা।………

Leave a Reply