সরস্বতীর পায়ের কাছে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

›› উপন্যাসের অংশ বিশেষ  

……….মানিক দরজাটায় মৃদুভাবে একটা কিল মারতেই সঙ্গে সঙ্গে খুলে গেল দরজা। সেখানে এক তরুণী দাঁড়িয়ে, তার ওপরের পাটির একটা দাঁত নেই, চোখ দুটিও সামান্য ট্যারা। | সে খুব উত্তেজিতভাবে বলল, এসেছিস, এত দেরি করলি। শিগগির ভেতরে আয়। সে মানিকের হাত ধরে টেনে ভেতরে নিয়ে এল, সঙ্গে সঙ্গে দরজাটাও বন্ধ করে তুলে দিল খিল।

তারপর আবার বলল, খুব তাড়াতাড়ি সেরে নিতে হবে। খােল, সব কিছু খোেল। সে তার শাড়িটা খুলে ফেলতে লাগল, শাড়ির নীচে আর কিছু নেই।

ঘটনার আকস্মিকতায় মানিক এমনই ঘাবড়ে গেল যে, একটা ঢোঁক আটকে গেলা তার গলায়। তারপর সে বলল, এ কী, এ কী, আপনার কিছু ভুল হচ্ছে? | এ কথার কোনও গুরুত্ব না দিয়ে মেয়েটি বলল, বললাম না হাতে বেশি সময় নেই। তুই আমাকে কর, তারপর অন্য সব হবে।

মানিক বলল, না, না, না, না।

মেয়েটি বলল, আমার সারা শরীলডা জ্বলছে রে নদাই, আমি আর থাকতে পারছি না। আয়, আমারে তুই কর! তুই কথা দিয়েও এত দেরি কেন করিস রে? খােল, সব খােল, আমরা এখনই শুরু করি।

মানিক বুঝল, সে একটা মারাত্মক ভুলের জালে জড়িয়ে পড়তে যাচ্ছে। সে এই মেয়েটিকে জীবনে আগে কখনও দেখেনি, তাই কথা দেওয়ার কোনও প্রশ্নই আসে না। মেয়েটি যা চাইছে, তারও কোনও অভিজ্ঞতা নেই তার। এ বাড়িতে সে এসেছে, তাও তাে নিছক একটা চানসের ব্যাপার। সে যদি মনে মনে কুড়ির বদলে তিরিশ গােনার কথা ভাৰত, তাহলেই তাে চলে যেত তান্য বাড়িতে। আর সবচেয়ে বড় | কথা, তার নাম নদাই নয়।

মেয়েটি রমনযাতনায় যেন কাঁপছে। সে এখন পুরােপুরি নগ্ন, হাত বাড়াল মানিকের দিকে। মানিক পরে আছে ধুতি আর হলদে রঙের ফতুয়া। মেয়েটি তার ধুতির গ্রন্থি খােলার চেষ্টা করল।

মানিক বলল না, না। এসব আমি কিছুতেই করতে পারব না। আমায় মাপ করুন।

মেয়েটি এবার হিংস্র ভাবে বলল, কেন পারবি না হারামজাদা আগের দিন অত ভাল পেরেছিলি—

এর মধ্যে সে মানিকের ধুতির বাঁধন প্রায় খুলে ফেলেছে। মানিক সে জায়গা হাত ধরে চেপে ওকে আরও কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেল। সে বুঝতে পারল যে, তর্কাতর্কির বদলে এখান থেকে এক্ষুনি পালানাে ছাড়া গতি নেই।

সে কোনওক্রমে একটুক্ষণ ঝটাপটি করে মেয়েটির হাত সরিয়ে দিল, সরে এল দরজাটার কাছে। খিলটা এমন অাট হয়ে আছে যে, চেনা লােক ছাড়া কেউ সহজে খুলতে পারবে না।

নগ্ন মেয়েটি হি হি-হি করে একটা পেত্নির মতন হেসে পেছন দিকে জড়িয়ে ধরে বলল, ওরে নদাই, নদাই রে, আয় আমরা বিছানায় শুই, খুব নরম বিছানা। তিনটে পাশবালিশ | খিলটা হঠাৎ খুলেও গেল মানিকের হাতে। সে মেয়েটাকে ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে চলে এল বাইরে। তারপর সে মুক্ত হয়ে ছুটতে লাগল বড় রাস্তা দিয়ে।………

Please follow and like us:

Leave a Reply