পরকীয়া সঙ্গম – সিনক্লেয়ার লুই

›› অনুবাদ  ›› সম্পুর্ণ গল্প  ›› ১৮+  

বিশ্বের শ্রেষ্ঠ আদি-রসের গল্প

অনুবাদঃ জীমত কান্তি বন্দ্যোপাধ্যায়
উৎসঃ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ আদি-রসের গল্প
সম্পাদনাঃ সুকান্ত সেনগুপ্ত

চিপ পেওয়া এভিনিউয়ের চশমার দোকানের মালিক অরনো ভে। রঙ করা বাকা ধরণের ফ্রেমের স্মার্ট চশমা তার বিশেষত্ব। সে জনগণের পরিচিত মানুষ, গােরস্থানের মতই সুপরিচিত। মতদেহ কবর দেওয়ার জন্যে সাজানো যার কাজ, শিল্প সম্মন্ধে লেকচার দেয় যে অধ্যাপক এবং মিশনারীদের কাজের মতই চশমাওয়ালার ধৈর্য্য বা টেকনিকাল কৌশলের যথেষ্ট মূল্য দেয় না পাবলিক।

সে বড় হতে চায়। সে ভাল বক্তা। খুব হাসি খুশি। স্থানীয় যে সকল হকি টিম, স্থানীয় ক্লাব, চার্চ ও যুদ্ধ সংক্রান্ত সব প্রচেষ্টার ব্যাপারে সে জনসমক্ষে অনেক কথা বলে।

পয়তাল্লিশ বছর বয়সে তার মাথায় টাক পড়ছে। তার মুখে ও কপাল ডিমের মত চকচকে। সেই মসৃণতার মাঝখানে নিজের তৈরি হাই-বাইফোকাল চশমা- যুদ্ধে চাঁদা ওঠানাের যেকোন অনুষ্ঠানে এই মুখ দেখা যাবে।

কিন্তু তার স্ত্রী ভারগা এসবে নিলিপ্ত। সে ছোটখাট, ভীতু রােমান্টিক মেয়েমানুষ। বয়সে সে স্বামীর চেয়ে দশ বছরের ছোট। তার ভাল লাগে রঙীন সিনেমা, ছবির প্রেম এবং পাহাড়ের ওপরে শরতের কুয়াশার পটভূমিতে লেখা প্রেমের কবিতা। যা আমেরিকার খবরের কাগজে ছাপা হয়। | ভারগার আছে এক গােপন প্রেমিক, উপপতি বা বয়ফেণ্ড, যাই বলেন। সে একজন ডেন্টিস্ট, নাম ডাঃ অ্যালান সিডার। ওদের দুজনার স্বভাবে ভারি মিল। বিয়ে হলে রাজঘােটক মিল হত।

কিন্তু এখন ওরা খােলাখুলি মিশতে পারে না। স্বামীর চোখের আড়ালে আবডালে চলে ওদের মিলন খেলা। নিশীথ বেলা। গােপন বধুকে পেয়ে অ্যালানের নিশ্চয়ই ভরে যায় কোল। ওদের প্রেমের দোলনায় পরস্পর দেয় দোল। আর মানসরাজ্যে তাে পরস্পরের নিতি অভিসার। নিতি ফুলশয্যা। চোখের আড়াল কি শুধু একজনকে করলেই চলে? আরও একজন যে রয়েছে। সাক্ষাৎ রায় বাঘিনী ননদিনী, জটিলা-কুটিলা তুল্যা। অ্যালানেরও যে বিয়ে করা বউ রয়েছে বাড়িতে। নাম বারথা। যার সঙ্গে আকৃতিতে প্রকৃতিতে কোনই মিল নেই অ্যালানের। দেখতে হোঁতকা, থলথলে মােটা। স্বভাবেও কুদলে, দজ্জাল, বিশ্ব ঝগড়াটে। এই পরকীয়া প্রেমিক যুগল ভারগা ও অ্যালানের বেজায় ভয় তাকেও।

কিন্তু কথাই আছে “মিঞা বিবি রাজী তাে কেয়া করে কাজি। গরু, বাছুরে ভাব থাকলে কি জায়গার অভাব হয় দুধপানের বা দানের? ভারগা ও অ্যালান যথাক্রমে দুই ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির স্ত্রী ও স্বামী হওয়া সত্বেও পরকীয়া পীরিতের অমােঘ আকর্ষণে শ্যামের ব্যাকুল বাশীর টানে ঘরছাড়া মনা শ্রীরাধার মত গােপনে মিলিত হতে-পরস্পরের আকর্ষণীয় সার্নিধ্য উপভােগ-দেহের সুধা পান করতে বেরােতাে সময় সুযােগ মত। তারা সাধারণত সন্ধ্যারাতের আলাে আঁধারিতে অ্যালেনের গাড়িতে চড়ে চলে যেত শহর থেকে দুরে। বহুদুরে। শ্যাওলা ঢাকা মাঠের নিরালা নির্জন নিভতে। সেখানে তারা শরীরে শরীর মেলাতো। পরস্পরের দেহের অ্যানাটমির ঘনিষ্ঠ পরিচয় নিত গায়ে গায়ে। দেহের উত্তাপ বিনিময় করত। পরস্পরের কাছে নতুন করে স্বীকৃতি পেত সত্যিকারের নারীত্বের ও পুরুষত্তের। একে অন্যের সুধা আহার করত। যথাক্রমে পেলৰ ও পুরুষ ওষ্ঠের। স্পর্শকাতর নবন্তের। এ ছাড়াও তাদের মধ্যে চলত নানারকম প্রেমের খেলা। আদিম রিপুর সংহার। লাভারস ফিসট মানে ‘প্রেমিকের ভােজ’ মেটাতাে মনের সাধে। লাভারস-ফি’ও কিন্তু আদায় হত ষোল আনার জায়গায় আঠারাে আনা। অফুরন্ত আনন্দে আত্মহারা, হতবিহল হয়ে পড়ত ওরা। ভুলে যেত বাড়িতে ওরা এক একজনকে বঞ্চিত করে তার হকের পাওনা ফাঁকি দিয়ে, তা উড়ে এসে জুড়ে বসা লােককে অকাতরে বিলিয়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে মেয়েরা তাে নিজ পতির ওপরের একাধিপত্য বরং যমকে ছেড়ে দেবে তবু অন্য নারীকে কদাচ, নৈব নৈব চ। নারী হয়ে ভারগার এ হেন আরেক নারীর হকের ধন, মুখের গ্রাস ছিনিয়ে নিয়ে খাওয়া এটা কেমন?

অ্যালানের অন্য আরেক বিশিষ্ট পরিচয়—সে স্থানীয় অভিনেতৃ সংঘের সেরা অভিনেতা। তার পরকীয়া প্রেমিকা ভারগা যদিও নিজে অভিনয় করে না, সে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের পোষাক তৈরী করে। এই সুযােগে সে নাটকের মহড়ার সময় ঘােরাঘরি করে গ্রীণরুমে প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করে। অ্যালিনের বউ বারথা সিডারের মনে স্বামীর চরিত্রে ও তার পরকীয়া আসক্তিতে সন্দেহ জাগবার কারণ ঘটে না।

মিসেস বারথা সিডারের মত শয়তানি মেয়েমানুষ সত্যিই কম দেখা যায়। সে স্বামীকে সত্যি সত্যিই ঘেন্না করে। স্বামীর অভিনয়ের মেয়েলি অভ্যেস, কবিতা লেখার বদভ্যাস’, মস্ত বড় গোঁফ এবং সােনা দিয়ে দাঁত বাঁধানাের কায়দা সবকিছুই তার বেজায় অপছন্দ। সবকিছুকেই সে সদা ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করে।

সে টিটকিরি দেয় আর তার সাত বোন এবং সাত ভগ্নীপতি বাধানাে দাতে চুইংগাম চিবােতে চিবােতে শােনে যে মিসেস সিডারের মতে, প্রেমের শয্যায় মিথুন  লগ্নে সঙ্গমের আসনে তার স্বামী অ্যালি’ রমণী রমণরণে বড্ড তাড়াতাড়ি হার মেনে রণে ভঙ্গ দেয়। যুদ্ধটা তার সঙ্গে কখনােই পুরােপুরি জমে উঠতে পারে না। তার অবস্থা দাঁড়ায় ঠিক ষ্টেশনে পৌছবার আগেই ট্রেন বা এয়ারপাের্টে পৌছনাের আগে প্লেন ছেড়ে দেওয়ার মত। এমন অক্ষম পতিকে নিয়ে কোন “সক্ষম” “সোমত্ত পত্নীর মন ওঠে?

এইসব কথা বলে চেনাশোনা মেয়েমহলে বারথা প্রচুর সহানুভূতি কুড়োয়। স্বামী গলফ, এবং ব্যাকগ্যামন’ খেলতে ভালবাসে। অতএব খেলা দুটোর কোনটাই শিখতে রাজি নয় সে।

এইভাবে অনবরত খুচিয়ে স্বামীকে স্নায়বিহ্বল করে তুলত বারথা। তারপর বলতাে-তুমি খুব ঘাবড়ে গেছো মনে হচ্ছে?

ক্রশওয়ার্ডের ধাঁধা সমাধান খোঁজা অ্যালানের বাতিক। তাই নিয়েও ঠাট্টাতামাশা করে বারথা। স্ট্যাম্প জমানো আলানের আরেক সখ। তা নিয়েও ব্যঙ্গ বিদ্রপ। হাসি মস্করা। এবং শেষে অ্যালান যখন চিৎকার করে ওঠে আমায় একা থাকতে দাও। বারথা নির্বিকার মুখে বলে, ব্যাপার কি বলতাে? সামান্য ঠাট্টায় ছোটখাট কথায় এত রেগে যাচ্ছো আজকাল ? তােমার মাথাটা বােধহয় খারাপ হয়ে গেছে। পাগলের ডাক্তার দেখাও।

তারপর ঘটল সেই চরম অঘটন। বারথা একদিন ভয়ঙ্কর চেহারা ও স্বভাবের এক পিসির মত্যুর পর উত্তরাধিকারসুত্রে পেল ক্যালিফোর্ণিয়ার সাধজোধে একটা বাড়ি আর নগদ সাত হাজার ডলার। স্বামীর সঙ্গে আগেভাগে কোন পরামর্শ না করেই স্রেফ জানালো ওরা ঠাণ্ডা মিলনেসােটার বদলে ক্যালিফোর্ণিয়ার উষ্ণ আরামে থাকবে এবং সেখানেই নতুন করে প্রাকটিশ শুরু করতে হবে অ্যালানকে।

স্ত্রীকে খুন করার কথা অ্যালানের মাথায় এল। অথচ স্ত্রীর সঙ্গে ক্যালিফোর্ণিয়ায় যেতে অস্বীকার করার কথা একবারও মাথায় এলো না। অনেক আমেরিকান পুরুষই তাদের স্ত্রী ও পুলিসম্যানের পার্থক্য বােঝে না।

কিন্তু অ্যালান জানে তার পরকীয়া প্রেমিকা ভারগা’কে ছেড়ে চলে যাওয়া তার পক্ষে সাক্ষাৎ মত্যুর সামিল। সে ভারগাকে সাংকেতিক কোড়ে টেলিফোনে বললাে সুপার মার্কেট থেকে বলছি। আপনাকে তিন গােদা অ্যামপারা গান পাঠানাে হচ্ছে।

ফোনের জবাবে ভারগা বিকেল তিনটেয় তার অফিসে এসে হাজির হল। বলল, “আমরা দুজনে কি একসঙ্গে, কোথায় পালিয়ে যেতে পারি না? পারি না স্বর্গখেলনা গড়তে ধরণীতে। আমরা যদি ছােট একটা ফার্মের মালিক হই’

এদিক ওদিক তাকিয়ে সবার অলক্ষ্যে তার স্তনে কনুইয়ের চাপ, নিতম্বে করপল্লবের মৃদু চাপ দিয়ে গাল টিপে আদর করে অ্যালান বলল, -“আমার বউ আমাদের ধরে ফেলবে। ওর খুড়তুত ভাই ভানাথে প্রাইভেট ডিটেকটিভ।

-হ্যাঁ, আমারও মনে হয়। ও আমাদের ধরে ফেলবে। আমরা কোনদিন সবসময় একে অন্যের কাছে থাকতে পারব না? বলল ভারগা। তার প্রেমিকের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ নিবিড় ভাবে নরম স্তনে চাপ দিয়ে। সে চেষ্টা করে অনুভব করতে তার প্রেমিকের প্রধান স্পর্শকাতর স্থানের। মাঝে মাঝে তার আরও সাধ যায় বিশাল জনতার ভিড়ে মিশে গিয়ে তার প্রেমিককে বাইরে থেকেই উত্তেজিত করে, মনে মনে এও ভাবে অ্যালান কি পারবে না তার প্রত্যুত্তর দিতে।

……অ্যালানও চুপ করে থাকে না। সুযােগের সদ্ব্যবহার সেও করে…..।

-একটা মাত্র প্রতিকার আছে। যদি তােমার ভয় না করে—

উপায়টা বুঝিয়ে বলল অ্যালান। তার প্রেমিকা পরস্ত্রী ভারগা জবাব দিল পরপুরুষ প্রণয়ী অ্যালানকে।

-না আমার ভয় করবে না গো। আমি ভয় করি না, বন্ধু, যদি থাকো আমার পাশে। যদি তুমি সদাসর্বদা আমার পাশে পাশে থাকো তবে আমি নরকেও যেতে ভয় পাই না।

তা অ্যালান পেশাদার সেতার যন্ত্রবিদ না হলেও তার কাজের হাত ভালো।

এক রবিবার বিকেলে তার বউ বারথা মায়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল। সেই সুযোেগে নিজের হােট কালচে ধূসর মােটর গাড়ীর লাগেজ কম্পার্টমেন্টে ইস্পাতের মেঝেতে একটা গর্ত করল ডাঃ অ্যালান।

লাগেজ কম্পার্টমেন্টের সঙ্গে গাড়ির ভেতরের সরাসরি যােগাযােগ আছে। একই দিকে নিজের ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের হােসপাইপটা চুরি করে নিজের গ্যারাজে লুকিয়ে রাখে অ্যালান।

ফেব্রুয়ারীর এক মঙ্গলবার সে ইগনেশিয়ান স্ট্রীটের গােল্ডেন ব্রাদার্স এর দোকান থেকে নীল রঙের নতুন একটা রেডিমেড সুট কিনলাে। ভালই ফিট করল। অদলবদলের দরকার হলাে না। দোকানদার বিকেলে সুটটা ওর বাড়ি পাঠিয়ে দেবে বলায় অ্যালান বলল-“না, কাল সকালে এখানে এসে পরবাে। আমি সবাইকে অবাক করে দিতে চাই।’

মন্টি গােল্ডেন বলল, তােমার বউয়ের এ সুটটা খুব পছন্দ হবে দেখাে। যখন তিনু সুটপরা অবস্থায় তােমাকে দেখবেন।

সাদা লিলেনের তিনটে শার্ট আর লাল একটা বাে’টাই কিনে নগদে দাম মেটাল ডেন্টিস্ট ডাঃ অ্যালান। মন্টি বলল

-ক্যাশ দেবার কি দরকার, তােমাকে ধার দিলে টাকা মারা যায় না, আমি জানি ডক।

-“সেই সুনামটা অক্ষম রাখা এই মুহুর্তে দরকার। ওর কথার ধরণে অবাক হয় মন্টি।

মন্টির দোকান ছেড়ে অ্যালান যায় এম্পােরিয়ামে। গােল্ডেন রুল ড্রাগ ষ্টোরে। কোঅপারেটিভ ডেয়ারীতে। সব জায়গায় সে নগদে টাকা দেয়। রাস্তায় স্থানীয় এক বিশিষ্ট নাগরিক বিচারক টিমবারলেন ও তার সুন্দরী স্ত্রী কে দেখে অ্যালান। জীবনে তাদের সঙ্গে সবশুদ্ধ দশটা কথাও বলেছে কিনা অ্যালানের সন্দেহ। কিন্তু তবু সে ভাবে এই এক বুদ্ধিমান ও হৃদয়বান দম্পতি। প্রেমের মূল্য কি এরা জানে।

সেদিন সন্ধ্যায়। স্ত্রী বারথাকে বলল অ্যালান,

জাননা, এক অদ্ভুত ব্যাপার হয়েছে আজ। ইউনিভার্সিটি স্কুল অব ডেনটিসটি থেকে আমায় ফোন করেছে। ট্যুরে যেতে হবে।

লং ডিসট্যান্স?

“নিশ্চয়ই।

“তাই নাকি।

স্ত্রীর গলায় বিশ্বাস যতটা, বিরক্তি তার চেয়ে বেশী।

– ডেন্টিস্টদের জন্য বিশেষ একটা রিফ্রেশার কোর্স চালু করেছে যাতে তাদের ব্যবহারিক বিদ্যাটাকে আর এক দফা ঝালিয়ে নেওয়া যায়। ওরা বলেছে, কাল আমাকে সকালে মিনিয়াপােলিস যেতে হবে এবং তিন দিন ধরে দাত বাধানোর কাজ শেখাতে হবে নতুন দন্তচিকিৎসকদের। তোমাকেও সঙ্গে যেতে হবে কিন্তু। আমাকে অবশ্য সকাল নটা থেকে রাত বারােটা অবধি কাজ করতে হবে। দুঃখিত, সঙ্গে নিয়ে গেলেও তোমায় সঙ্গ দিতে পারবাে না তেমন। এইসব স্পেশাল কোর্সে বড্ড তাড়াহুড়ো করে ওরা। তুমি না হয় একা একা সিনেমা দেখবে, নয়তো হােটেলে বসে আরাম আনন্দ করবে।

-আমি যাবাে তােমার সঙ্গে ? ঐ শর্তে? মাথা খারাপ। রক্ষে কর বাপ। ধন্যবাদ। আমি এখানেই থাকবাে। একা। কিন্তু তোমার রবিবার সকালের আগেই ফিরে আসা চাই-ই।

-“তুমি নিশ্চিন্তে থাকে। তার আগেই বাড়ি ফিরবে।

ডক্টর অ্যালান বউকে বলে গেল, সে মিনিয়াপােলিসের ফ্লোরা হোটেলে থাকবে।

কিন্তু বুধবার সকালে, যখন হালকা তুষার ঝরছে, নতুন সুট পরে গাড়ি চালিয়ে সেন্ট পলে যাওয়ার পথে অ্যালান ভাবছিল—আমার মধ্যে আসলে সত্যিকার কোন কবিত্ব শক্তি নেই। আমি বড়জোর দ্বিতীয় শ্রেণীর কবি। অতি সাধারণ। সে একটা কবিতা ভাবতে চেষ্টা করে…কিন্তু তার মাথায় আসে শুধু, আজেবাজে তিনটে মাত্র ছত্র।

—“ঝরছে তুষার, বইছে হাওয়া, সুখের খোঁজে আমার যাওয়া” সেন্ট পলে হােটেল, অরকনেসে একটা ডাবল বেডরুম ভাড়া করে সে হোটেলের ক্লাককে বােঝায় আমার বউ ট্রেনে আসছে। সতেরো মিনিটের মধ্যে তার আসার কথা।

নিরুৎসাহ ভঙ্গিতে লিফটে চড়ে ঘরে যায় ডক্টর।

উনিশ মিনিট পরে এসে হাজির হয় ভারগা ভে। তাকে পোঁছে দিয়ে যায় হােটেলের বেল বয়। ভারগার সদ্য কেনা নকল চামড়ার ব্যাগটা সে পৌছে দিয়ে যায়।

-তুমি পৌঁছে গেছ হাজব্যান্ড। ঘরটা মন্দ নয়। উদাসীন স্বরে বলে ভারগা।

তার উদাসীন স্বর এবং পুরুষটিকে হাজব্যান্ড বলা শুনেই বেলবয় বােঝে মহিলা এই পুরুষের স্ত্রী নয়, কিন্তু এই পুরুষকে সত্যিই ভালবাসে।

তার মাথার ওপর ছ’তলার ঘরে ভারগা ও অ্যালান তখন দীর্ঘদিনের উপােসী ময়ালের মত, বহু দিন বাদে টাটকা রক্তমাংসের স্বাধ পাওয়া বড় বাঘের মত আর তর সইতে না পেরে কোনমতে রুমের দরজা বন্ধ করেই পাগলের মত পরস্পরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বিছানা তােলপাড় করে…. সহ্যের বাধ ভেঙেছে-হয়েছে প্রতীক্ষার অবসান। শুরু হয় কামনা মদির অস্থির দুই হৃদয়ের পুর্ণ উপভােগ। সবর সয়না, অন্ধের মতাে একে অপরের শরীর খুজে ৱেড়ায়। এই মুহুর্তে ঘরের আসবাবপত্রগুলােও যেন লজ্জায় কুকড়ে যায় ওদের অবস্থা দেখে। কখনাে বিছানায়, কখনাে সুন্দর মসৃণ কার্পেট বিছানা মেঝেতে, কখনােও বা সােফাসেটে বয়ে চলে বাধ ভাঙা যৌবন অভিসার। একে অপরকে আপ্রাণভাবে চেষ্টা করে কাছে পাওয়ার-তাড়াতাড়িতে ভুল করে। ক্ষতি নেই। এ ঘরে কেউ নেই, শুধু অ্যালান আর ভারগা —ভারগা আর অ্যালান। যেন পৃথিবীর বুকে উম্মত্ত আকাশ তুলে দুই আদিম মানব-মানবী-আদম-আর-ইভ-নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল খাওয়ার পর …। কিংবা কোন যন্ত্রীর হাতে উচ্চগ্রাসে বাধা উত্তম তারবাদ্যযন্ত্রের সুর লহরীর মনমাতানাে ঐকতান বিস্তার। বাদকের হাত মুখ অন্য অঙ্গ কোন কিছুই নিচেষ্ট নেই। সবকিছু সমান সক্রিয়। নরনারীর আদিম শষ্যা-সংঘর্ষের দুই যােগ্য প্রতিদন্দীর এ যেন এক অনবদ্য দ্বৈরথ-বন্দর। চলল এইভাবে যেন কতযুগ কতবর্ষ, কে জানে…? কিন্তু সব কিছুরই শুরু আছে যেমন শেষও আছে তেমন। নিদেন সায়য়িক বিরতি।

ভারগা-অ্যালানের বাধা বন্ধহারা উন্মত্ত উদ্দাম পরকীয়া প্রণয়লীলা তথা সঙ্গমপর্বেরও শেষ পর্ব আসন্ন হল…শেষটা অবধারিতভাবেই দেহমিলনের সেই চরম পুলক লনে রতিতৃপ্তির ইতিহর্ষের স্তরের উল্লাসের আত্মহারা যুগলের কণ্ঠ হতে এক তীব্র উত্তেজনাশিহর শিৎকার ধনি নির্গত হয়…ওরা একে অন্যের নগ্ন দেহের পরেই ক্লান্তিতে এলিয়ে পড়ে।

এরপরও যখন তখন যেখানে সেখানে চলে যুগলের পরস্পরকে আদর সােহাগ মধুর মিলন। স্বাভাবিক-অস্বাভাবিক। প্রকৃত-বিকৃত। যেমন এট্যাচ বাথে ভারগা তার স্নানের সময় এবং অন্য সময়েও নানাভাবে খুজে ফেরে অ্যালান। বাথরুমেও তাদের যৌবন মদ মত্ত লীলা বাদ যায় না। সেখানেও নানা ভঙ্গিমায় একে অপরকে খোজে। এমন কি দুজনের মধ্যে চলে রিপুর তাড়নায় নানা বিকৃত রুচির আলিঙ্গন। এ যেন উষ্ণ প্রস্রবণে নিজেদের একে অপরের কাছে বিলিয়ে দিয়ে কামনা মদির তপ্ত নকে সিঞ্চিত করেও আশ মেটে না। শুধু চাইচাই!

কখনও নির্জন ঘরের নিভৃতে ওরা উদাসী জীবন অভ্যাস করে। শেখায় ভারগা, কি করে চরম উত্তেজনার মাহেন্দ্রক্ষণকে প্রলম্বিত করা যায় সঙ্গমে আপাত নিস্পৃহ নিরাসন থেকে। চেষ্টা করে অ্যালান। কিন্তু তার সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয় যখন তার সামনে পেছন ফিরে দাঁড়ানাে নগ্নিকা ভারগা তার উম্মত সগৌর উন্নত বর্তুলাকার নিতম্বটা মােহশ্মরের মত আগে পিছে ডাইনে বাঁয়ে দোলাতে থাকে। অ্যালান ধীরে ধীরে উত্তেজিত হয়ে উঠে ফণাধরা ক্রদ্ধ সাপের মত শিকারের ওপর ছােবল মেরে বিষ ঢালার জন্য ফোস ফোস গর্জাতে ও আন্দোলিত হতে থাকে। ভারগাও যেন অ্যালানের কাছে হার স্বীকার করতে রাজী নয়। সেও মেতে ওঠে রতি ক্রীড়ায় উত্তেজনায় অধীর হয়ে পুর্ণ অনুভূতি লাভের হিসেব নিকেশ করে নিতে চায়। শুধু প্রতীক্ষা– চরম লগ্নের •••••

ভারগার গলা শােনা গেল-ওমা, তুমি নতুন সুট পরেছো ডালিং। ঘুরে দাড়াও তাে। বাঃ কি সুন্দর মানিয়েছে তােমায়। ঠিক ঠিক ফিট করেছে। লাল টাইটা কি সুন্দর। বাে-টাইয়ে তােমার বয়স অনেক কম মনে হয়। এসব কিনেছাে কেন? আমার জন্যে তাই না? ও ডিয়ার, ডিয়ার। তোমায় কত ভালবাসি। তুমি শুধু আমার, আমি তােমার। আমাদের দুজনার মাঝখানে আর কেউ নেই, এখন ভাবতে কত মজা কত আনন্দ তাই না?” বলে গলা জড়িয়ে আদরে চুমু খায় অ্যালানের মুখে।

“নিশ্চয়ই। তাছাড়া…এখন ও ব্যাপারে কথা বলতে চাই না…তবে ওরা যখন আমাদের খুজে পাবে, আমাদের যেন খারাপ না দেখায়। কেউ যেন না ভাবে, আমরা দু’জন সুখে ছিলাম না। তুমি, তুমি মনস্থির করেছো তাে ডার্লিং?”

—“তুমি পাশে থাকলে আমি সবকিছুর জন্যে তৈরী।

পরের দিন বিকেলে ওরা পােশাক পরে। মালপত্র প্যাক করে। লাগেজ রেখে দেয় খাটের পায়ার কাছে। বুরাের ওপরে রইল দশ ডলারের দুটো নােট। ঘরের কিছু নেয় না ভারগা। শুধু নেয় এক বােতল হইস্কি আর নতুন কবিতার সংকলন একটা পকেট বই ।

গ্যারেজের পরিচারককে এক ডলার টিপস দিয়ে অবাক করে দেয় ভারগা ও অ্যালান।

তারপর ওর ধুসর কালো গাড়িটা ছুটে চলে গেল মিসিসিপি নদীর ধারে ইন্ডিয়ান মাউণ্ডস পাকের দিকে।

হােটেল ছেড়ে আসার পর একটু কিছুক্ষণ গম্ভীর থেকে বাকি সময়টা ওরা সব কিছুতে হেসেছে। ভারগা হাঁচলেও অ্যালান হেসে বলে—এখন আর নিউ মােনিয়ার ভয় নেই।

তারপর কাছের ছােট্ট একটা রাস্তায় গাড়ী দাঁড় করায় অ্যালান। আধাে অন্ধকার। ইঞ্জিন চালু আছে। এক্সহস্ট পাইপের সঙ্গে লাগানাে হােস পাইপ, যার অন্য মুখটা এখন লাগেজ কমপার্টমেন্টের তলার ফুটোয় লাগানাে।

ভেতরে ঢুকে যায় অ্যালান। গাড়ীর ভেতরে ভারগাও বসে আছে। গাড়ি ভরে উঠেছে কার্বনমনক্সাইডের মিষ্টি অথচ মিহি গন্ধে।

হুইস্কির বােতল বার করে পুরুষ বলে-“একট, খাও, তাহলে সাহস হারাবে না

ভারগা এগিয়ে অ্যালিনকে আদর করতে করতে বলে,

-“প্রিয়তম, সাহস বজায় রাখার জন্য কোন কিছুর দরকার নেই তুমি ছাড়া। তােমার শরীরের সুন্দর এই জিনিষগুলি ছাড়া।

‘আমার আছে। আমি তােমার মত সাহসী নই ভারগা। তবুও তোমার নরম উচু বুক, নিতম্ব পুরু উরু পেলব পায়ের পাতা, তােমার রসে ভেজা নরম ঠোট এসবও আমাকে উৎসাহিত করে। উদ্দীপিত করে বৈকি। দুজনেই হাসে। মদ খায়। উভয়ের বাহু হাত অঙ্গুলি কাধ ও উপাস্থকে উত্তেজনার খোরাক যােগায়-চেতনেন্দ্রিয়গুলির পুর্ণ সদ্ব্যবহারে।…

-পুরুষ ড্যাশবাের্ডের আলাে জলে। বইটা যেন এখন সীসের মত গুরুভার। সে কনরাড আইকেনের কবিতা পড়ে শােনায় প্রিয়াকে।

স্বপ্নের নন্দন কানন থেকে তাদের ফিরিয়ে আনে এক তীব্র ও তীক্ষ্ণ শব্দ গাড়ীর জানালা ভাঙা শব্দে। ভারগার গালে চড় মারছে বারথা। অ্যালানের কাছে ব্যাক জ্যাকের ঘা মেরে তার জ্ঞান ফেরাবার চেষ্টা করে বারবার দূর সম্পর্কে ভাই, যে কিনা পেশায় ডিটেকটিভ। তার মারের চোটে অ্যালানের চোয়ালের হাড় ভাঙে।

বারথা ওকে গাড়িতে তুলে গ্র্যান্ড রিপাবলিকে নিয়ে যায়। সেবাশুশ্রষা করে ওকে সারিয়ে তােলে। ওর রােগশষ্যার পাশে বসে প্রতিবেশিনী কুটনী ও ডাইনী মেয়েদের ডেকে এনে গল্প করে।

-“তােমরা তো জানাে অ্যালান একটা মেয়ের সংগে ভেগেছিল—কিন্তু সেই মাগিটার’ সঙ্গে পরকীয়া সংগমে অপারগ হয়ে মানে এই কোন মেয়ের সঙ্গে কোন ব্যাটাছেলে রাতে এক বিছানায় শুলে যেসব কুস্তি টুস্তি করে—সেই কুস্তিতে হেরে গিয়ে লজ্জায় আত্মহত্যা করতে গেছল।”

এর পরের ঘটনা।

বারথা ভারগার প্রত্যেকটি চিঠি গাপ করে। ভারগার স্বামী অরলো ধর্মের দোহাই দিয়ে ভারগাকে ডিভাের্স করেছে। ভারগা এখন ড্রেস মেকারের ছােট্ট দোকানে কাজ করে। তার কোন চিঠি অ্যালানের কাছে পৌঁছয় না।

বারথা তার উৎসুক শ্রোত্রী বান্ধবীদের শোনায় এখন বুঝছো ওসব প্রেম প্রেম নামক কুজ্ঞান মানুষকে কোথায় নিয়ে যায়। ..

Leave a Reply