অনুবাদঃ তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়
উৎসঃ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ আদি-রসের গল্প
সম্পাদনাঃ সুকান্ত সেনগুপ্ত
তপ্ত ঘর। টেবিলে টি-পট, পেয়ালা-পিরিচ-চা তৈরীর যাবতীয় উপকরণ। কাউন্ট একে একে শীত বস্ত্র ছাড়ছে। কাউন্টেস মার্গারেত একটু আগে শীতের পােষাক খুলছে। আরসির সামনে দাঁড়িয়ে সে কেশ বিন্যাশে ব্যস্ত। আয়নাতে উদ্ভাসিত হচ্ছে মার্গারেতের রুপে, যৌবন, দেহসৌষ্ঠব। মুখে তার আত্মপ্রসাদের হাসি। লুব্ধ দৃষ্টিতে কাউন্ট তাকিয়ে রয়েছে সেদিকে। বলি বলি করেও শরমে-শংকায় কথাটা বলতে পারছে না কাউন্ট। শেষে বরাত ঠুকে বলে ফেলে, কি কাণ্ডটাই না করলে আজ! জয়ের উল্লাসে গৌরকিনী মার্গারেত বলে, “তাই নাকি?”
মাগারেত দুকাপ চা ঢালল। চা পান করতে করতে কাউন্ট বলে, আজকে তুমি যা খেলা দেখালে, তাতে আমার মাথা হেট হয়ে গেছে। ফোঁস করে ওঠে মার্গারেত। ক্রোধে-বিরক্তিতে ভ্রুকুটি করে বলে সে, কেন, কী করেছি আমি? আমি কি খুবই বেসামাল হয়ে পড়েছিলাম?’—অনেক দিন থেকেই লক্ষ্য করছি কামুক বুরেলের কুদৃষ্টি পড়ছে তােমার ওপরে। আমার যে হাতপা বাঁধা, নইলে হারামজাদাটাকে একবার দেখে নিতাম।—“আহা আমার বীর পুরুষেরে! কই বছর খানেক আগেও তাে এ নিয়ে তােমায় ভাবতে দেখিনি। আর মাদাম সারভিকে নিয়ে নির্লজ্জের মতাে তুমি যখন বাড়াবাড়ি করতে তখন আমিও তােমায় কতবার বলেছি, তােমার জন্যে লজ্জায় আমি মুখ দেখাতে পারিনা। মনে আছে তুমি বলে ছিলে, ‘বিয়েটা একটা সামাজিক বাঁধন মাত্র। নীতি মেনে চলা, নিয়ন্ত্রিত জীবন, চর্চা এসবের প্রশ্নই ওঠে না। আমিও আজ স্বাধীন, স্বাধীন তুমিও। আজ আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি যে আমরা এক ঘরে বাস করেও পরস্পর পরস্পরের কাজ থেকে অনেক দুরে সরে গেছি। আমরা আমাদের একমাত্র সন্তানের দিকে চেয়ে স্বামী-স্ত্রীর অভিনয় করছি। আমি সেচ্ছাচারিণী হলেও তােমার কিছু আসে যায়না ও কথাও বলেছ তুমি। আসল কথা কি জান, মাদাম সারভির সঙ্গে তােমার যে জোর পিরিত চলছে। তার সঙ্গে রগড়ারগড়ি চলছে, আমার প্রয়ােজনীয়তা ফুরিয়েছে তাই। বাইরের লােকজন সুখী স্বামী-স্ত্রী বলে ভাবে আমাদের আর বাড়িতে আমরা পরস্পরের অজ্ঞাত, অপরিচিত। মাস দুই হলাে আর একটা নতুন উপসর্গ দেখা দিয়েছে-আমায় তুমি রীতিমত হিংসে করছ!”
—“হিংসে করব কেন? আসল কথা কি জান তােমার ঐ রগরগে রুসাল শরীর, শাঁসাল যৌবন, উচ্ছলতা আর আবেগ প্রবণতার জন্য শীঘ্রই দশ জনের সমালােচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠবে-সেজন্যই তােমায় সাবধান করে দিয়েছি মাত্র।
-“আর তুমি? তুমি কি সমালােচনার বাইরে ? আমাকে জ্ঞান দেয়ার আগে নিজেকে সংযত কর।
-অনেক কিছু দেখে, অনেক ভেবে-চিন্তে আজ তােমায় সংযত হতে -বলছি মার্গারেত। আমায় ভুল বুঝ না, লক্ষীটি।
-মাদাম সারভির সঙ্গে তােমার মাখামাখির ব্যাপারটা জানার পর থেকে আমারও অমন এক অবৈধ প্রেম সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার ইচ্ছে জেগেছিল। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এ পর্যন্ত আমার কোন প্রেমিক জুটল না।
‘ইয়ারকি মেরাে না।
—“ইয়ারকি করব কেন! আমার মনের কথাটাই আজ তােমায় বললাম। আর এটাও জেনে রেখ, প্রেমলীলা আর যৌন চর্চায় তােমার নৈপুণ্যও কম নয়।
-‘মার্গারেত, দোহাই তােমার এসব কথা আর আমায় বলো না। কেন তুমি এত নির্মম হলে প্রিয়তমা? কেন তােমার এত পরিবর্তন হলাে ?
‘অকপটেই স্বীকার করা ভালাে যে আজ আমার পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু একবারও কি ভেবে দেখেছে এর জন্যে কে দায়ী ? কেন আমি বদলে গেলাম ? কেন আমার সুকুমার বৃত্তিগুলির অপমত্যু হলাে ?
-রাগ করােনা সােনামনি, তােমার ভালাের জন্যই ব্যুরেলকে এড়িয়ে যেতে বলেছি। থাক ওসব কথা। এস, নতুন করে আবার আমরা পরস্পর পরস্পরকে ভালবাসি, আবার আমরা এক হয়ে যাই।
—“কেন হিংসে হচ্ছে বুঝি? হিংসুটে কোথাকার।
-না, আমি তােমায় হিংসে করছি না। কেবল স্মরণ করিয়ে দিতে চাইছি, অনুকম্পা কিংবা করুণার পাত্র হয়ে বেচে থাকাটাকে আন্তরিক ভাবে ঘৃণা করি আমি। ব্যুরেল ফের যদি কোন দিন তােমার দিকে কামনার দৃষ্টিতে তাকায় তাহলে মেরে তার হাড় গড়িয়ে দেব।
-আর তাহালেই সব ঝামেলা চুকে যাবে আর তুমিও আমায় ভালবাসবে, তাই না? আহা, আমার বীরপুরুষ রে।
-হ্যাঁ। তােমায় আমি ভালােবাসব। তােমার জন্যে আমি সব কিছু করতে প্রস্তুত।
—চমৎকার। কিন্তু বাধ্য হয়েই তোমাকে আজ জানাতে হচ্ছে, আমি তােমায় ভালােবাসি না।
চায়ের টেবিলের চারপাশে ঘুরছিল কাউন্ট। তার মনে হলাে মার্গারেত সত্যই রুপসী-যৌবনের জোয়ারে চনমন করছে তার সারা শরীর। কাউন্ট সহসা তার স্ত্রি মার্গারেতের কোমল গ্রীবায় চুমু দেয়। ক্রোধে অভিভুত মার্গারেত বলে উঠে ‘যার সঙ্গে তােমার সম্পর্ক চুকে গেছে, তাকে চুমু খাচ্ছ, আস্পর্ধা তােমার কম নয় ?
—অমন কথা বলাে না লক্ষীটি। তুমি জাননা তােমাকে আজ কত সুন্দর লাগছে।
—“আমার শরীরে বেশ চেকনাই হয়েছে, কি বল ?
-সত্যই তুমি নিখুত সুন্দরী। কোমল বাহুলতা, পেলব শরীর, নরম ঘাড়ে-তােমায় দেখলে দেহটা গরম হয়ে ওঠে।
‘তাহলে আমার গরম গরম সম্পত্তি দেখে ব্যুরেলের চোখ ধাঁধিয়ে যাবে কি বল ?
-ফের নােংরা কথা বলছ! বিশ্বাস কর তােমার মতাে এত রঙ, এত রুপ, এত যৌবন আর কোন মেয়ের মাঝে দেখিনি আমি।
-এত ছুক ছুক করছ যে! কি ব্যাপার ? মনে হচ্ছে অনেক দিন উপােস করে আছ ? নারীদেহ জুটছে না বুঝি? আজ তাই আমাকে দেখে এত খাই খাই করছ ?
‘মার্গারেত, তােমার আজ কি হয়েছে বলতাে? আগে তাে তুমি কোন দিন এমন অশ্লীল কথা বলতে না! এ নােংরা কথাবার্তা শিখলে কোথা থেকে ?
-কেন তােমার কাছ থেকে শিখেছি। আমি জানি তােমার চারজন মেয়েমানুষ আছে। সারভি, এক অভিনেত্রী, এক জন বেশ্যা, আর একজন কে নিশ্চয়ই বুঝেছ! থাক সে কথা! বড্ড খিদে পেয়েছে, তাই না?
-অমন করাে না মাগারেত। আমি নতুন করে আর একবার ভালাে বেসেছি তােমায়।
-আহা রে! খবরদার। আর এক পাও এগুবে না। আমায় স্পর্শ করার অধিকার পর্যন্ত হারিয়েছ তুমি। আমরা দুজনেই আজ স্বাধীন। তােমার চেয়ে সবদিক থেকে শতগুণে সেরা একটা পুরুষ আমি খুজে বের করব। আচ্ছা অমন হ্যাংলামি করছ কেন আমায় দেখে ? রাতারাতি আমি কি তােমার প্রেমিকাদের চেয়ে সুন্দরী হয়ে গেলাম ?
-হ্যা সােনামণি। বলছি তাে তােমার মত সুন্দরী আর আমার চোখে পড়েনি।
—আর তুমি তােমার মেয়েমানুষদের পেছনে জলের মতো টাকা খরচ করেছ! তুমি যাকে সবচেয়ে ভালােবাস তাকে প্রতি মাসে কত করে দিয়েছে-পাঁচ হাজার ফ্রা, কি বল? ‘
—তা হবে।
-আমাকেও ঐ পাঁচ হাজার ফ্রা দিতে হবে। তাহলে আমার শরীর নিয়ে যেমন খুশী খেলতে পারবে।
-তুমি কি পাগল হলে, মার্গারেত ?”
-আমি ঠিকই বলেছি। পাঁচ হাজার ফ্রা না পেলে আমি নিজের ঘরে গিয়ে ঢুকব।
মার্গারেত নিজের ঘরে ঢুকতে যায়। কামনাতপ্ত কাউন্টের নাকে এসে লাগে মার্গারেতের অঙ্গসৌরভ, কামনামদির এসেন্সে গন্ধ।
– এখান থেকে। আমায় শুতে দাও।
-মাগারেত, দয়া কর। আমার অধিকার থেকে আমার বঞ্চিত করাে না।
-যখন ঠিক করেছ সরবে না, তাহলে তােমার সামনেই রাতের পােষাক পরি।
মার্গারেত একে একে তার বাইরের পােষাক ছেড়ে নগ্ন হলাে। লােভনীয় ভার বাহুমূলে, নরম হাত, রমণীয় গ্রীবা। । চুল খােলার সময় মার্গারেতের পীনােন্নত স্তন দুটি দেখে কাউন্ট আর নিজেকে সামলাতে পারল না। গুটি গুটি সে এগুতে থাকে।
ঝাঁঝিয়ে ওঠে মার্গারেত, অসভ্য শয়তান। আর একটি পাও এগিয়াে না। কাউট মার্গারেতের নরম হাত দুটো জড়িয়ে ধরে তাকে চুমু খাওয়ার চেষ্টা করে। উত্তেজনায় ফেটে পড়ে মার্গারেত। এসেন্সের শিশি ছুড়ে মারে কাউটের দিকে। কাউট চিৎকার করে ওঠে, তােমার অনেক ছিনালী সহ্য করেছি, আর নয়। অবিচলিত, অকম্পিতা মার্গারেত বলে, পাঁচ হাজার ফ্রাঁ দিতে রাজী আছ। তাহলে আমার শরীর পাবে।
-না টাকা পাবে না।
-বেশ্যাদের পায়ে টাকা ঢালছ আর টাকা না দিয়ে স্ত্রীর নগ্ন শরীর পেতে চাইছ—এটা বুঝি খুব রুচিসঙ্গত কাজ হলাে ? নােংরা মেয়েদের দেহ নিয়ে খেলাটা কি তােমার সভ্যতার অঙ্গ ?
‘আমি স্বীকার করছি কাজটি নিঃসন্দেহেই অশােভন কিন্তু অর্থের বিনিময়ে স্ত্রীর সঙ্গে যৌন মিলনের চেয়ে নােংরা আর কিছু হতে পারে না।”
মার্গারেত তার নরম শয্যায় বসে মােজা খুলল। মাখনের মতাে নরম ফর্সা সুচারু দুটি নগ্ন পা, রমনীয় জানু, সুরম্ম পায়ের ডিম।
কাউন্ট বললো, ‘মার্গারেত তুমি প্রকৃতিস্ত হও, আমার প্রতি প্রসন্ন হও। অযৌক্তিক ঐ আবদার করাে না।
-“অযৌক্তিক? আমি তাে অযৌক্তিক আবদার করিনি। খিদে পেয়েছে আজ তাই আমার দেহটাকে ভােগ করতে চাইছ, এই পর্যন্ত। এদিকে আমাদের দাম্পত্য প্রেমে ফাটল ধরেছে। বাজারের মেয়েগুলোর পেছনে তুমি যদি টাকা খরচ করতে পার, তাহলে আমার পেছনে খরচ করতে সংকুচিত হচ্ছ কেন? যাক ওসব তর্কাতর্কি ছাড়। আমার টাকা চাই।
কাউন্ট এক তাড়া নােট ছুড়ে দিল মার্গারেতের দিকে। প্রীতি মার্গারেত টাকা গুগল। কাউন্ট বলে, মনে রেখ খরচের জন্য কিন্তু টাকাটা দিইনি।
মার্গারেত বলল, এখন থেকে আমায় মাসে পাঁচ হাজার ফ্রাঁ দিতে হবে। টাকা না পেলে যতই তােমার খিদে পাক না কেন, আমার দেহ পাবে না। আর আমার নিরাবরণ দেহটা যদি তােমায় পরিপূর্ণ তৃপ্তি দিতে পারে তাহলে আমার মাসোহারা বাড়াতে হবে। আর সে সময় বেশি টাকা না দিতে চাইলে বেশ্যাদের কাছে পাঠিয়ে দেব।