যে পাপের ক্ষমা আছে – অনরে দ্য বালজ্যাক

›› অনুবাদ  ›› সম্পুর্ণ গল্প  ›› ১৮+  

বিশ্বের শ্রেষ্ঠ আদি-রসের গল্প
অনুবাদঃ মনীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
উৎসঃ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ আদি-রসের গল্প
সম্পাদনাঃ সুকান্ত সেনগুপ্ত

মেসিয়ে, ব্রূইন যৌবনকালে ছিলেন উদ্ধত স্বভাবের। লয়ার নদীর ভীরে টেসে-করবো-লে-ভুভয় দুর্গ তিনিই নির্মাণ করিয়েছিলেন। বাল্যকালে তিনি যুবতী নারীদের স্তন মর্দন করে সুখানুভব করতেন। অকারণে গােলমাল সৃষ্টি কোরে জিনিসপত্র ছুড়ে ফেলে সকলকে অতিষ্ঠ কোরে তুলতেন। তারপর যখন তিনি সম্পত্তি ও উপাধির অধিকারী হয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে উঠলেন, তখন তার উচ্ছলতার মাত্রাও গেল বেড়ে। সমাজের সঞ্জন ব্যক্তিরা এড়িয়ে চলতেন তাঁকে। বন্ধু বােলতে একদল দুধর্ষ উচ্ছৃংখল যুবক। ক্রমেই ফুরিয়ে এল তার সম্পদ। পাওনাদারের জালায় অস্থির হয়ে উঠলেন তিনি। রােসে-করবো ছাড়া আর কোন স্থাবর সম্পত্তি রইল না তাঁর, তখন ব্রূইন পরিণত হলেন ঝগড়াটে গুণ্ডায়। তার প্রতিবেশী মারমেসতিয়ের পাদরী এসব দেখে তাকে উপদেশ দিলেন, ত্রানকর্ত্তার জন্মস্থান মুসলমান রা অপবিত্র কোরছে, সেই স্থানের পবিত্রতা রক্ষার কাজে নিজেকে নিয়ােগ কোরলে ব্রূইন ভালাে কোরবেন। কারণ তাতে তার জন্যে স্বর্গর দার উন্মুক্ত থাকবে আর তিনি নিজেও অনেক সম্পদ আহরণ কোরে ধনী হয়ে উঠতে পারবেন।

উপদেশটা ভালাে লাগলাে ব্রূইনের। তিনি পাদরীর আশীর্বাদ মাথায় কোরে সুসজ্জিত হয়ে যাত্রা কোরলেন শত্রু নিধনের উদ্দেশ্যে। পাড়া প্রতিবাসীরা বস্তির নিঃস্বাস ফেলল। এশিয়া আফ্রিকায় অবিশ্বাসীদের ওপর হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের পর্যদুস্ত কোরে, নিধন কোরে অনেক যশ অর্জন কোরলেন তিনি। প্রকৃত বিশ্বাসী খ্রিস্টান এবং অনুগত যােদ্ধা বলে তারাও তাকে মেনে নিলেন। বিদেশে যথেচ্ছ স্ত্রী সংসর্গ কোরতেও দিধা করেন নি তিনি। অনেকদিন বাদে ব্রূইন দেশে ফিরলেন সােনা, মণিমুক্তো আর মূল্যবান পাথরের বােঝা নিয়ে। বেশীর ভাগ ক্রুসেডাররা যখন কুষ্ঠরোগাক্রান্ত হয়ে কপর্দকহীন অবস্থায় মলিন বেশে ক্রসেড থেকে বাড়ী ফেরেন সেখানে ব্রইন-ই একমাত্র ব্যতিক্রম। টিউনিস থেকে ফেরার পর ব্রূইনকে রাজা ফিলিপ কাউন্ট উপাধিতে ভূষিত কোরলেন। দেশের সকলেই শ্রদ্ধার চোখে দেখতে লাগল তাকে, কারণ মুসলমান শত্রু নিধন করা ছাড়াও যৌবনের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য নিজ অর্থ ব্যয় কোরে তিনি কারমে দেসলুজ গীজটি নির্মাণ করিয়ে দেন। পুরােহিত ও যাজক সম্প্রদায়ের আশীর্বাদ অজস্র ধারায় বর্ষিত হতে থাকে তাঁর ওপর। যৌবনে দুষ্ট প্রকৃতির উচ্ছৃংখল ব্যক্তিটি হয়ে উঠলেন সৎ, সংযমী ও জ্ঞানী ব্যক্তি হয়ে। অবশ্য একথাও সত্যি যে এখন শুধুমাত্র প্রকাশ করা মাত্রই তার ইচ্ছা পূরণ হয়। কারণ তিনি ধনী, একটা বৃহৎ দুর্গাধিপতি এবং রাজসম্মানে বিভষিত। তা ছাড়াও তার জমিদারীতে কোন প্রজার কোন রকম অভাব-অভিযােগ ছিল না। শুধুমাত্র কৃসীজীবি ইহুদীদের ওপর তার রাগ ছিল একটু বেশী এবং অজুহাত পেলে তাদের হত্যা করতে তিনি দিধা কোরতেন না।

এই তার বর্তমান আচরণের জন্যে সকলেরই প্রশংসার পাত্র হয়ে উঠে ছিলেন। লেভাণ্ড থেকে আনা একটা বিরাটাকৃতি সাদা ঘােড়ায় চেপে তিনি ঘুরে বেড়াতেন তার জমিদারীতে। প্রয়ােজনবােধে দুস্টের শাসন কোরতেন। ছােট ছােট ছেলেমেয়েরাও ভয় পেত না তাকে।

তার জমিদারীতে ডাকাতের উপদ্রব ছিল না। এমনকি যে বার লয়ার নদীর বানে দেশ ভেসে গেল সেবারেও মাত্র বাইশ জন ডাকাতের ফাসি হয়, আর একজন মাত্র ইহুদিকে পুড়িয়ে মারা হয়। ইহুদী ভদ্রলােক খুব ধনী ছিলেন বলেই শাস্তি ভোগ কোরতে হয়েছিল তাকে।

পরের বছর ফসল কাটার সময় একদল মিশরীয় ভবঘুরে রেনে এসে উপস্থিত হােল। এই বেদেরা চুরিতে একেবারে সিদ্ধহস্ত। সেন্ট মার্টিনের গীজার বিস্তর ধন সম্পদ চুরি কোরে ওরা মা মেরীর জায়গায় একটা ছােট খুব দুষ্টু মিশরীয় মেয়েকে বসিয়ে রেখে গিয়েছিল। সকলেই এক বাক্যে বােলল মেয়েটাকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হােক। ব্রূইন কিন্তু প্রতিবাদ কোরলেন। তিনি বােললেন পুড়িয়ে না মেরে যদি এই সুযােগে মেয়েটিকে খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত করা হয় তাহলেই ঈশ্বর সবচেয়ে খুসী হবেন। এই দীক্ষা দানের অনুষ্ঠানে তিনি নিজেও উপস্থিত থাকবেন এবং ত্যুরেণের একজন কুমারী থাকবেন তার সঙ্গে।

মিশরীয় মেয়েটি জলন্ত আগুনের থেকে খ্রীষ্টধর্মে দীক্ষিত হওয়াই বাঞ্ছনীয় মনে কোরল এবং সারাটা জীবন সন্ন্যাসিনী হয়ে কাটাবার প্রভাবেও আপত্তি কোরল না। ব্রূইন তার কুমারী সহকারীনি হিসেবে বেছে নিল আর একজন ক্রসেডার এ্যাজলে-মিডেলের লর্ড সারাসীনদের হাতে বন্দী হয়েছিলেন এবং তার সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি কোরে সেই অর্থ মুক্তিপণ দিয়ে তাকে ফিরিয়ে আনতে হবে। এ্যাজির লেডী তাই এখন নিঃস্ব এবং কপর্দকহীন। এই দুর্দিনে তাকে সাহায্য করার জন্যেই ব্রূইন তার কন্যা ব্ল্যান্সের নাম কোরেছিলেন। ব্ল্যান্স সুন্দরী, নিস্পাপ কুমারী, তাছাড়া সে ভালাে নাচতেও পারে।

ব্রূইনের খুব ভালাে লেগেছিল এই সতের বছর বয়স্কা কুমারীকে। ওর প্রতিটি অঙ্গভঙ্গী তার দেহে কামনার আগুন জালিয়ে দিয়েছিল। তার নিজস্ব জমিদারী আর দুর্গ আছে, কিন্তু গৃহস্বামিনীর প্রয়ােজনে সে স্থির কোরল ল্যান্সকে বিয়ে কোরবে।

ব্ল্যান্স শুধু কুমারীই নয়, তার মনটাও নিস্পাপ এবং প্রেম সম্পর্কে সম্পুর্ণ অনভিজ্ঞা। মাকে কাঁদিয়ে তাকে যেতে হােল ব্রূইনের সঙ্গে সেন্ট গ্যাতিয়ের গীর্জায়। রাস্তার দুধারে অসংখ্য লোক দেখল দামী হীরা মানিক খচিত পােষাক পরা দেবীর মতাে এই সুন্দরী কন্যাকে। সেই বিবাহে সৰ্ব আদর আপ্যায়নের ব্যবস্থাও ছিল প্রচুর।

মেসিয়ের ব্রূইন জাকজমক সহকারে নববধুকে নিয়ে গেলেন নিজের দুর্গে। বৃদ্ধ ব্রূইন সারা দেহে আতর মেখে প্রথানুযায়ী কিশােরী বধুর কপালে চুমু খেলেন, তারপর সুন্দর ধবধবে সাদা বুকে। ব্রূইনের আত্মবিশ্বাস ছিল দৃঢ়। তার ধারণা ছিল রতিক্রীড়ায় তিনি দক্ষতা দেখাতে পারবেন। কিন্তু ইন্দ্রিয় শৈথিল্যের জন্য তিনি যখন দেখলেন আর বেশী অগ্রসর হওয়া সম্ভব নয় তখন পেছিয়ে গেলেন তিনি। ব্ল্যান্সের এ বিষয়ে কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। বিবাহ বােলতে তার ধারণায় ছিল জাকজমক পােযাক-পরিচ্ছদ, প্রচুর আহার্যের আয়ােজন, নাচ গান ইত্যাদি। ব্রূইন অতি সহজেই বুঝে নিলেন তার প্রেমিকা স্ত্রী বিবাহের যথার্থ অর্থ সম্পর্কে অজ্ঞ। তখন তিনি কাজের পরিবর্তে কথায় তাকে বশীভূত কোরতে সরু কোরলেন। তার সুখ সাচ্ছন্দ্যের যাতে কোন অসুবিধা না হয় সেদিকেও তীক্ষ দৃষ্টি রাখতে লাগলেন তিনি। একই শয্যায় শয়ন কোরে তিনি ভাবলেন মেয়েটি তার অক্ষমতার সুযােগে অন্য উপায়ে প্রবৃত্তি চরিতার্থ কোরতে পারে, তাই চুম্বন ইত্যাদি দিয়ে তার সব প্রবৃত্তিকে জাগিয়ে না তােলার সিদ্ধান্তই নিলেন তিনি। ব্ল্যান্সকে জানিয়েও দিলেন এখন সে জমিদারের স্ত্রী, অতএব সেইরকম গম্ভীর্য ও মর্যাদা রক্ষা কোরে চলাই তার উচিত।

‘তা কেন? সে বােলল।

‘কেন নয়।’ মনে মনে ভয় পেয়ে তিনি বােললেন, তুমি কি আমার স্ত্রী নও?

‘না’, সে উত্তর দিল। একটা সন্তান না হওয়া পর্যন্ত নয়।

‘পথে আসার সময় বিস্তির্ন ক্ষেতগুলাে দেখেছ ?

‘হ্যা’

এগুলো সবই তােমায়।

বাঃ তাহলে আমি ওখানে প্রজাপতি ধরে মজা কোরব।

এইতাে ভালাে মেয়ের মতো কথা। আর জঙ্গলগুলাে দেখেছ ?

‘আমি একা জঙ্গলে যেতে পারব না, তােমার সঙ্গে যাব। আচ্ছা, লা পনিউজ অনেক কষ্ট কোরে আমাদের জন্যে যে মদ তেরী কোরে দিয়েছেন তার একটু দাও না আমাকে।

‘কেন প্রিয়তমা ? ওতে যে তােমার দেহে আগুন জলে উঠবে।

‘আমি তাে তাই চাই।’ বিরক্তিতে ঠোট কামড়ে বোলল ল্যান্স। আমি তােমাকে খুব তাড়াতাড়ি একটা সন্তান উপহার দিতে চাই। মদটা নাকি সেই জন্যেই তৈরী।

জমিদার মশায় বুঝলেন মেয়েটি আপাদমস্তকে কুমারী। বলিলেন, “আমার ছােট প্রিয়তমা, সে জন্যে যে ঈশ্বরের আশীর্বাদেরও প্রয়ােজন। ফসল ফলার উপযুক্ত ভুমিটাই যে প্রথমে তৈরী কোরতে হবে।

হাসতে হাসতে মেয়েটি বলল, সে রকম ভুমি কখন হবে ?

‘প্রকৃতির যখন ইচ্ছা হবে। হাসতে চেষ্টা কোরে ব্রূইন উত্তর দিলেন।

‘আচ্ছা, সে জন্যে আমাদের কি করা দরকার ?”

চিকিৎসা শাস্ত্রে যে বিধান আছে তা খুব বিপদজনক।

‘কিন্তু মা যে বললেন কাজটা সহজ।

‘সেটা নির্ভর করে বয়সের ওপর। আচ্ছা, তুমি কি আমার আস্তাবলে খুব বড় সাদা ঘােড়াটাকে দেখেছ?

‘হ্যা, ঘোড়াটা খুব সুন্দর আর শান্ত।

ঘােড়াটা আমি তােমায় দিলাম। যখন খুসী ওটাতে চড়তে পারাে তুমি।

‘তুমি খুব ভালাে লােক। আমাকে সবাই ঐ কথা বলেছিল।

এইভাবে কথাবার্তা বলার মধ্যে আর একবার ল্যান্স প্রশ্ন কোরল, আচ্ছা তুমি যে বিপদজনক চিকিৎসার কথা বােললে সেটা তাড়াতাড়ি করা যায় না?

‘না’ যায় না। তার জন্য প্রথমে আমাদের উভয়কেই ঈশ্বরের করণা লাভ কোরতে হবে, না হলে যে সন্তান জন্মাবে সে হবে পঙ্গু আর বদ। বেশীর ভাগ বাপ মাই এসব চিন্তা করে না বলেই পথিবীতে এত বাজে লোক জন্মায়।

কিন্তু আমি তাে জীবনে কোন পাপ করিনি।

না, তুমি অবশ্যই নিস্পাপ, কিন্তু আমি অনেক পাপ কোরেছি জীবনে। তারপর তিনি ওর হাত দুটো মুখের কাছে নিয়ে এসে অজস্র চুম্বন একে দিলেন, আর বিড়বিড় কোরে অনেক ভালােবাসার কথা বলতে শুরু কোরলেন। ল্যান্স খুশী হােল।

নাচ, গান শেষ হতে ব্ল্যান্স যখন ঘর থেকে বেরিয়ে গেল তার অসামান্য সৌন্দর্য দেখে কামনার আগুনে জ্বলতে লাগল ব্রূইন । কিন্তু ভগবান তাকে বাদাম খেতে দিয়েছেন তখনই যখন তার দাঁতগুলাে সব পড়ে গিয়েছে।

বিয়ের পর বেশ কিছুদিন ধরে ব্ল্যান্সকে নানা অজুহাতে দুরে রাখার চেষ্টা কোরতে লাগল। তিনি ওকে বােঝালেন তাঁর মতাে অভিজাত ব্যক্তির ব্যবহার সাধারণ লােকের মতাে হওয়া উচিত নয়। নিজেকে তিনি ব্যস্ত রাখতেন নানা কাজে। ওকেও বোঝাতেন ফেব্রুয়ারী মাসে সন্তান ধারণ কোরতে নেই। মার্চ মাসটায় বড় বেশী কাজ, এপ্রিল মাসটা খুবই খারাপ মাস, সুন্দর ছেলের জন্যে মে মাসটা উপযুক্ত বটে কিন্তু লেডি অফ এ্যাজি ফিরে না এলে তখনও কিছু হওয়া সম্ভব নয় ইত্যাদি। একদিন সন্ধ্যায় তিনি ভুল কোরে ওকে একটা বদমাসের ছেলের কথা বলতে গিয়ে বােলে ফেললেন মা বাপের পাপের ফলেই এরকম ছেলে জন্মায়।

সঙ্গে সঙ্গে ব্ল্যান্স বােলল, আহা তুমি যদি আমাকে একটা বদমায়েস ছেলেও দাও আমি তাকে নিশ্চয় ভালাে কোরে তুলতে পারব। দেখবে, তুমিও খুশী হবে তাতে।

কাউন্ট দেখলেন, তার স্ত্রী উত্তেজিত হয়ে পড়েছে। এই সময়ই একবার চেষ্টা কোরে দেখতে হয় ! সম্ভব না হলে ওর উত্তেজনা যাতে স্তিমিত হয় তাই কোরতে হবে।

“তুমি কি সত্যিই মা হতে চাও প্রিয়তমা? তিনি বললেন, “তুমি এখনও স্ত্রীর কাজই তাে শিখতে পারেনি, এই দুর্গের প্রকৃত গৃহবাসিনী হয়েও উঠতে পারােনি। ‘গর্ভে সন্তান এলেই সবকিছু শিখে নেব আমি।

অতঃপর ল্যান্স কয়েকদিন ধরে মাঠে ঘুরে বেড়াল, দৌড়ঝাঁপ কোরল হরিণ আর পাখীর সঙ্গম লক্ষ্য কোরল এবং এইভাবে নিজেকে মা হবার উপযুক্ত কোরে তােলার চেষ্টায় ব্রতী হলাে। এতে তার উত্তেজনা প্রশমিত না হয়ে বেড়েই চোলল দ্রুত গতিতে।

ব্রূইন দেখলেন তিনি নিজেই মস্ত একটা ভুল কোরেছেন। এইবার কি ভাবে চলতে হবে তা তিনি বুঝতে পারছিলেন না কিছুতেই। তিনি ওর পেছনে দৌড়াতে দৌড়তে হাঁপিয়ে পড়তেন, দম বন্ধ হয়ে আসতো তার, কিন্তু কামেন্দ্রিয় থাকতাে সেই রকম শিথিল হয়েই।

ব্ল্যান্স তার আকাঙ্খিত সন্তান না পাওয়ার কারণ কিছুতেই বুঝতে পারছিল না, সে দ্যাখে পথিবীতে সকলেরই সন্তান হয় অথচ তার হয় না যে কেন? মনে মনে ভাবে সন্তান হলে আমি তাকে আদর কোরব, চুমু খাব মানুষ কোরে তুলব। আমাদের বংশ রক্ষা হবে।

এই সব কথা সে বলে কাউন্ট কে। কাউন্ট বলেন, “তুমি যে এখন খুব ছোট। সন্তান প্রসব করার সময় তােমার মত্যু হতে পারে। আচছা এরকম একটা সন্তান কিনে নিলে কেমন হয় ? তোমার কোন কষ্ট. কোন যন্ত্ৰণা হবে না

আমি তাে যন্ত্রণাই চাই। তা না হলে সে তাে আর আমাদের নিজস্ব হবে না। আমার নিজের দেহের ফলই চাই আমি। গীজায় শুনেছি জ্ঞানকর্তা যীশু মা মেরীর গর্ভের ফল।

তাহলে ভগবানের কাছে সেই প্রার্থনাই জানাও।

সেই দিনই ওরা চোলল নরেদাম গীর্জায়। রাজরানীর মতাে সুসজ্জিত হয়ে শােভা যাত্রা কোরে মহা সমারােহে ওরা যাচ্ছিল।

একটা চাষীর মেয়ে তখন চলেছিল সেই রাস্তায়। শােভাযাত্রার এক জন বৃদ্ধ স্ত্রীলােককে সে জিজ্ঞাসা কোরল, রানী যাচ্ছেন নাকি?

না, বৃদ্ধটি উত্তর দিল, ইনি হচ্ছেন রকেরবৈর গৃহদামিনী পােয়াতু এবং তুরেনের জমিদারের স্ত্রী। সন্তান কামনায় ইনি যাচ্ছেন গীর্জায়।

যুবতীটি হাসতে হাসতে বােলল কেন শােভাযাত্রায় প্রথম সারিতেই সুন্দর ঐ পুরুষটি ঘােড়ায় চেপে যাচ্ছেন, উনিই তাে ওকে একটা সন্তান উপহার দিতে পারেন। তাতে মােমবাতি জ্বালার খরচটা বাচবে।

বৃদ্ধটি উত্তর দিল, ওহে খুকী, নরেদাম গীর্জার সুপুরুষ যুবক পুরোহিতরা যদি সেই সুযোেগ নেয় তাতে আমি বিস্মিত হব না। ফলটা খুব শীঘ্রই ফলবে। এই পুরােহিতদের ক্ষমতাও অনেক বেশী।

রাস্তার একটি নবযুবা মন্তব্য কোরল, ‘সন্ন্যাসিনীর দিব্যি দ্যাখাে, ঐ মসতের কাউন্ট কে, কেমন সুন্দর চেহারা। উনি খুব সহজেই মেয়েদের মন জয় কোরতে পারেন। সকলেই হাসতে শুরু কোরল, কাউন্ট অফ মসতে ইচ্ছে হচ্ছিল ওদের ফাসিতে লটকে দেন। ব্ল্যান্স বাধা দিল। 

স্যার, ওদের শাস্তি দেবেন না। ওটা ওদের মনের কথাযনয় ; তাছাড়া ফেরার পথে দেখা যাবে ওদের।

সায়ার দ্য মসরত আগ্রহভরে তাকিয়ে দেখলেন ব্র্যান্সের দিকে, সত্যিই প্রাণবন্ত মেয়ে ; একটুতেই আগুন জালানাে যায়।

ব্ল্যান্সও দেখলাে তাকে। সত্যিই সুপুরুষ। বয়স বছর তেইশ হবে। ওকে খুব ভালাে লাগলে ব্ল্যান্সের। মনে মনে সে ভালােবেসে ফেলল যুবকটিকে।

নরেদামে পৌছে ওরা গেল সেই জায়গাটায় যেখানে সন্তান কামনা কোরে প্রার্থনা জানানাে হয়। প্রথানুসারে একাই গেল সে, ব্রূইন এবং অন্য সকলে রইল বাইরে। কাউন্টের যখন পুরােহিতের দেখা পেল সে জিজ্ঞাসা কোরল, সন্তানহীনা মেয়ে এখানে কিরকম আছে? পুরােহিত মশায় উত্তর দিলেন এর জন্য দুঃখ করাে না মেয়ে, সন্তান জন্মালেই তাে গীর্জার আয় হয়।

‘আচ্ছা, আমার মতাে যুবতী মেয়ে এরকম বৃদ্ধ স্বামীর সঙ্গে আসে এখানে?

‘খুব কম।

‘তাদের সন্তান হয় ?

পুরোহিত হাসতে হাসতে বললেন, ‘অবশ্যই।

আর যাদের স্বামীরা এরকম বৃদ্ধ নন ?

কখনও সখনও।

ওঃ বুঝেছি, তাহলে জমিদার মশায়ের মতাে লােক হলে সন্তান লাভের সম্ভাবনা বেশী থাকে, তাই না?

“নিশ্চয়ই পুরােহিত মশায় জোর দিয়ে বললেন।

‘কেন ?

‘মাদাম’ ‘গম্ভীর হয়ে বােললেন পুরােহিত, বয়স কম হলে ঈশ্বরের ইচ্ছায় হয়, আর বেশী হলে মানুষকেই চেষ্টা কোরতে হয়। ব্ল্যান্স দুহাজার স্বর্ণ মুদ্রা দান করার অঙ্গীকার কোরল।

ফেরার পথে ব্রূইন বােললেন, তােমাকে খুব আনন্দিত মনে হচ্ছে।

হ্যাঁ, তাই। সে উত্তর দিল। আমি অবিলম্বেই সন্তান লাভ কোরব; কারণ যে কেউ আমাকে সাহায্য কোরতে পারে, পুরােহিত মশায় বােলেছেন, গতিয়ের কে গ্রহণ করতে।

ব্রূইনের ইচ্ছে হচ্ছিল এখনই ফিরে গিয়ে পুরােহিত কে হত্যা করে, কিন্তু নিজেকে সংযত কোরল সে এই ভেবে যে তাতে ভয়ানক রকম ক্ষতি হতে পারে, তাই সে ঠিক কোরল আচবিশপের সহায়তায় সে জব্দ কোরবে পুরােহিতকে। রােস করবোর প্রাসাদ চুড়া যখন দুর থেকে দেখা গেল সে সায়ার দ্য মসরতকে আদেশ কোরল সেই খানেই বিশ্রামের ব্যবস্থা করতে। গতিয়ের কে সরিয়ে দিয়ে ব্রূইন রেনে নামের একটি চোদ্দ বছরের ছােট ছেলে আর একজন পঙ্গু বৃদ্ধকে নিয়ােগ কোরলেন ব্ল্যান্সকে দেখা শােনা করার কাজে। তার মনে হােল এই ভাবেই তিনি তার পত্নীর পবিত্রতা রক্ষা কোরতে পারবেন।

রােসে করবৌর খামার বাড়ীতে আসার পরের রবিবার ব্ল্যান্স ব্রূইনকে সঙ্গে না নিয়েই শিকারে বেরিয়ে পড়ল। লে কারনুজের জঙ্গলের কাছে তার চোখে পােড়ল একজন পররাহিত একটি মেয়েকে জোর কোরে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। জোর কদমে ঘােড়া ছুটিয়ে সে সেখানে পৌঁছে তার সঙ্গের লােকদের বােলল, “দেখাে যেন ও মেয়েটিকে মেরে না ফ্যালে। আরও কাছে এসে সে যা দেখল তাতে তার শিকার করার শখ উবে গেল। মনের অজ্ঞানতার অন্ধকার কেটে গিয়ে সেখানে ফুটে উঠল বুদ্ধির আলো। কুমারীদের কাছে এই জ্ঞান গােপন কোরে রাখা কি ঠিক? ভাবল সে।

রাতে শয্যায় শুয়ে সে বলল, ‘ব্রূইন -তুমি এতদিন আমাকে প্রতারণা কোরেছ। কারনুজের পুরােহিত মেয়েটিকে নিয়ে যা কোরল তােমারও সেইরকম করা উচিত। ‘

বৃদ্ধ ব্রূইন এইরকমই সন্দেহ কোরেছিলেন। তিনি বুঝলেন, এবার দুর্দিন ঘনিয়ে আসছে। ব্ল্যান্সের দুচোখ তখন কামনার উত্তাপে জলছে।

শান্ত ঘরে ব্রূইন বােললেন, ‘প্রিয়তমা তােমাকে স্ত্রী রুপে গ্রহণ করার সময় আমার ক্ষমতার থেকেও যেটা বেশী ছিল তা হচ্ছে আমার প্রেম। সবচেয়ে দুঃখের কথা আমার যত বল তা আমার হৃদয়ে, এই দুঃখই আমাকে ঠেলে দিচ্ছে মৃত্যু মুখে। খুব শীগগিরই তুমি মুক্তি পাবে। অন্ততঃ আমার মৃত্যু পর্যন্ত তুমি অপেক্ষা করো। আমার এই সাদা চুলের সন্মান রাখাে তুমি। বিশ্বাসঘাতকতা কোরাে না। এই রকম অবস্থায় অনেক লর্ডই তাদের স্ত্রীদের হত্যা কোরেছেন।

‘তুমি আমাকে ক্ষমা কোরবে না?

‘নাঃ, তােমাকে আমি অনেক কাছে পেয়েছি। তুমি আমার বৃদ্ধ বয়সের ফুল, আমার আত্মার আনন্দ। তােমাকে না দেখে আমি থাকতে পারি না। বৃদ্ধের চোখে জল এসে গেল।

ব্ল্যান্স অভিভুত হয়ে পড়েছিল। থাক, থাক, কেদোনা। আমি অপেক্ষাই কোরব।

লর্ড ওকে আদর কোরলেন, চুমু খেলেন, অনেক মিষ্টি কথায় সান্তনা দিলেন তাকে।

‘তুমি আমাকে এত আদর করে কিন্তু তাতে আমার মনে কোন প্রভাব পড়ে ।

ব্রূইন উঠলেন, টেবিলের ওপর থেকে একটা ছােট ছােরা তুলে নিয়ে সেটা ব্ল্যান্সের হাতে দিয়ে আবেগভরে বেললেন, প্রিয়তমা আমাকে হয় তুমি হত্যা করো, না হয় আমাকে বিশ্বাস কোরতে দাও যে আমাকে তুমি অন্ততঃ একটুখানি ভালােবাসাে।

“ঠিক আছে, ঠিক আছে, ভয় পেয়ে সে বােললে, “আমি তােমাকে খুব ভালােবাসতে চেষ্টা কোরব।

বুঝুন, যুবতী মেয়েটি কিভাবে তার বৃদ্ধ দুর্ধষর্ প্রভুর ওপর প্রভাব বিস্তার কোরল। রতি দেবীর কি অপার মহিমা। ব্রূইনকে সে প্রায় একটা পােষা গাধায় রপান্তরিত কোরে ফেলল। তার মুখ থেকে একটা কথা বেরুতেই ব্রূইন তা পালন কোরতে ক্রীতদাসের মতাে।

একদিন ব্ল্যান্স বােলল, “প্রিয়তমা ব্রূইন আমার মাথায় মাঝে মাঝে আজেবাজে চিন্তা ভীড় করে আমাকে যেন পুড়িয়ে খাক কোরে দেয় সেই চিন্তাগুলাে। প্রায়ই আমি কারনুজের সেই সন্ন্যাসীকে স্বপ্নে দেখি।

ব্রূইন উত্তর ছিলেন, এগুলাে সব শয়তানের খেলা। সন্ন্যাসী সন্ন্যাসিনীরা জানেন কিভাবে এরকম প্রলােভনের হাত থেকে উদ্ধার পাওয়া যায়। তুমি ইচ্ছে কোরলে মারমুসতিয়ের পাদরীর কাছে গিয়ে স্বীকারােক্তি কোরতে পারো। তিনি তােমাকে জানিয়ে দেবেন কিভাবে পবিত্র জীবন যাপন কোরতে হয়।

‘আমি কালই যাব। পরদিনই ব্ল্যান্স হাজির সেই মহৎ ব্যক্তিটির কাছে।

‘ঈশ্বর তােমায় রক্ষা করুন মাদাম। মৃত্যু পথযাত্রী এই বৃদ্ধের কাছে তােমার আসার কারণ?

‘সশ্রদ্ধ অভিবাদন জানিয়ে সে বােলল, আপনার মূল্যবান উপদেশের জন্যে এসেছি প্রভু। আমি আপনার কাছে পাপ স্বীকার কোরতে চাই।

ব্রূইনের সঙ্গে এই জাজকের একটা গােপন চুক্তি হয়েছিল। ভণ্ডপাদরী ওকে বেললেন, ‘একশটা শীত এই মাথার ওপর দিয়ে কেটে গিয়েছে, তাই তােমার পাপের কথা শুনতে আমি আপত্তি কোরব না। বল, তােমার সর্গ রাজ্যে প্রবেশ করার ব্যবস্থা আমি কোরে দেব।

ব্ল্যান্স বােলতে সুরু কোরল, সব কথা বলা হলে বােলল, বাবা, আমার যদি একটা সন্তান লাভের ইচ্ছে হয় সেটা কি অন্যায়। 

‘না’ যাজক বােললেন। তুমি মনে ধর্মভাব আনার চেষ্টা কোরবে, অন্যায় কাজ কিছু কোরবে না। স্বামী ছাড়া অন্য কোন পুরুষের সংসগে সন্তানন সৃষ্টি করা মহাপাপ। তাদের অসহ্য যন্ত্রণা ভােগ কোরতে হয় নরকে।

ব্ল্যান্স কানটা একটু চুলকে নিয়ে বােলল, তাহলে কুমারী মেরী কি কোরেছিলেন ?

“আহা, সেটা একটা রহস্যময় ব্যাপার।

‘রহস্য আবার কি জিনিষ ?

“সে জিনিসের ব্যাখ্যা হয় না। আর যা অসঙ্কোচে বিশ্বাস কোরে নিতে হয়।

‘তাহলে আমার পক্ষে কি এরকম একটা রহস্যের কাজ করা সম্ভব ?

‘এরকম ঘটনা মাত্র একবারই ঘটেছিল। কারণ তিনি ছিলেন ঈশ্বরের পুত্র।

বাবা, তাহলে আমি মারা যাই এইটাই ঈশ্বরের ইচ্ছা। আমি বুঝতে পারছি আমার মধ্যে কিছু নড়াচড়া কোরছে, উত্তেজিত হয়ে পড়ছি আমি, আমার মাথার ঠিক থাকছে না। এমন এক জনকে পেতে চাই আমি যার জন্যে আমি আমার লাজ-লজ্জা সব কিছু বিসর্জন দিতে পারি, দিতে পারি আমার দেহ, মন, প্রাণ।

‘মা, ঈশ্বর আমাদের অন্য প্রাণীদের থেকে পৃথক কোরে সৃস্টি কোরেছেন, আমাদের বুদ্ধি-বিবেচনা দিয়েছেন, স্বর্গ রাজ্যের সৃস্টি কোরেছেন আমাদের জন্যে। সেই জন্যেই আমাদের কামনা-বাসনাকে জয় কোরতে হবে, উপেক্ষা কোরতে হবে ঝড়ঝাপটাকে। মা মেরীর কাছে প্রার্থনা করাে, তিনিই তােমাকে রক্ষা কোরবেন। তুমি সব সময়ে গৃহ কর্মে নিযুক্ত থাকতে চেষ্টা কোরাে, কখনও অলস হয়ে কাল কাটাবে না। ‘

‘বাবা, গীর্জায় এলে আমি একমাত্র শিশু যীশুকে ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাই না।’

‘যদি তাই হয় তাহলে তুমি তাে সন্ত লুদোয়ারের মতাে অনেক উচুতে উঠে গিয়েছ। দারুণ গরমে তিনি একদিন স্বল্প বাসে আবত হয়ে গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়েছিলেন। সেই সময় একটা দুষ্ট প্রকৃতির লােক তাকে একটি সন্তান উপহার দেয়। তিনি কিছুই বুঝতেন না, ভাবতেন তাঁর পেট বড় হওয়াটা রােগ। তার জন্যে তিনি প্রায়শ্চিত্ত কোরেছিলেন, এবং লােকটিকে যখন শাস্তি দেওয়া হয় তিনি একটুও বিচলিত হন নি।

‘আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন আমিও বিচলিত হব না।

তাহলে এটা একটা তুচ্ছ পাপ। আচছা কিভাবে এরকম পাপ করা যায়, ভাবতে ভাবতে ফিরল ব্ল্যান্স । আহা, যদি চাকরটার বয়স বছর পনেরও হােত তাহলে ওকে নিয়েই আমি শুতে পারতাম।

যাবার সময় সে বার বার তাকিয়ে দেখল রেনের দিকে। ছেলেটা শিশু হলেও ওর দেহে উত্তাপ আছে।

রাতে যখন আগুনের সামনে বসে ঐ সব কথা চিন্তা কোরছিল তখন বৃদ্ধ ব্রূইন তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “কিসের কষ্ট তােমার ?”

‘আমি ভাবছিলাম, তুমি নিশ্চয়ই খুব অল্প বয়স থেকেই প্রেমের যুদ্ধে মেতে উঠেছিলে তাই এখন একেবারে অকর্মন্য হয়ে পড়েছ তাই না –

বৃদ্ধ কাউন্টের পুরনাে দিনের কথা মনে পড়তে মুখটা হাসিতে উজ্জল হয়ে উঠল। হ্যা, মাত্র সাড়ে তের বছর বয়সে আমি আমার মার পরিচারিকার লজ্জা ভেঙে দিয়েছিলাম।

ব্ল্যান্সের আর কিছু শােনার ধৈর্য্য ছিল না। তার যা জানার প্রয়োজন ছিল। তা জানা হয়ে গিয়েছে। আনন্দে ভরে উঠল ওর মনটা।

অপ্রাপ্ত বয়স্ক পরিচারকটির মনে কিভাবে প্রেম জাগিয়ে তুলবে সে সেই চিন্তাতেই মগ্ন রইল কিছুক্ষণ। দুপুরবেলা লর্ড ব্রূইন অভিজাত ব্যক্তিদের অনুকরনে দিবানিদ্রায় মগ্ন থাকেন। সেই সময়ে ব্ল্যান্স সাধারণত মাঠে একা একা ঘুরে বেড়ায়, দেখে অনন্যরা কি কোরছে। এখন সে স্থির কোরল সেও ঘরে থাকবে আর রেণেকে ডাকবে তাকে ধর্মগ্রন্থ পড়িয়ে শোনাবার জন্য। কথা মাত্রই কাজ। লর্ডের আরামদায়ক কেদারায় হেলান দিয়ে ঝুলন্ত পা দুটো তুলে দিলে একটু অপেক্ষাকৃত নীচু টেবিলের ওপর। পাতলা পরিচ্ছদে আবৃত তার দেহ। যৌবন উছলে পড়ছে সেই দেহে; তার সঙ্গে কামনার আগুন মিশে তাকে কোরে তুলেছে আরও আকর্ষণীয়। রেণেকে এবার ডাকল সে। ছুটে এল ছেলেটি। আমাকে কুমারী মেরীর কাহিনী পড়ে শােনাও। আদেশ পালন কোরতে সুরু কোরুল রেনে, মাদাম তখন ঘুমের ভান কোরে চোখের ওপর হাত দিয়ে শুয়ে রয়েছেন। পড়া শেষ কোরে তাকিয়ে দেখল রেণে। ছোট ছোট দুটি সুন্দর পা, নীল রঙের ভেলভেটের জুতােয় ঢাকা। রেণের ইচ্ছে হােল সুন্দর পা দুটোতে একটা চুুমু খায়; কিন্তু ভয়ে নিজেকে সংযত কোরল সে। ব্ল্যান্স অধীর হয়ে উঠল, কিন্তু না রেণে তখন ঘর ছেড়ে চলে গিয়েছে। পরদিন একই জিনিসের পুনরাবৃত্তি। এদিন ব্ল্যান্স আর একটু উচু টেবিলে পা দুটো তুলে রেখেছে পরিচ্ছদটা ঝুলে রয়েছে একটু যাতে পায়ের উপরাংশটাও দেখা যায়। রেণে পড়া শুরু কোরল, কিন্তু একটু না পড়তে পড়তেই দেখল মাদাম ঘুমিয়ে পড়েছেন। সুন্দর সুগঠিত পা দুটো দেখে তার লােভ হােল। আলতাে কোরে চুমু খেল সেই পায়ে। মাদাম জাগলেন না। হাত থেকে বইটা ইচ্ছে কোরেই ফেলল রেণে যদি ঐ শব্দে মাদামের ঘুম ভাঙে। একটু নড়লেন না তিনি। রেণে ভাবল ওর ঘাুমটা খুবই গভীর। এবার সাহস সঞ্চয় কোরে হাটুতে একটা চুমু খেল রেণে, তারপর উরুদেশে। একবার উল্লাসে একটু জোরেই বােলে উঠল সে, ‘স্বর্গের দ্বার, কিন্তু ব্ল্যান্সের ঘুম ভাঙল না। আর অগ্রসর না হয়ে সেদিন রেণে থামলাে সেখানেই। ব্ল্যান্স একান্ত হতাশ হয়েই ভাবল এই বোকা বাচ্চা ছেলেটিকে কিভাবে সুখের খেলা শেখানাে যায়।

পরদিন ভােজের আসরে পরিচারকটি ভয়ে ভয়ে এসে দাঁড়ালাে। ব্রূইন ও উপস্থিত ছিল সেখানে। রেণে বারকয়েক তাকিয়ে দেখলো মাদামের মুখের দিকে সেখানে রাগ বা বিরক্তির কোন চিহ্নই নেই। বরং তার চোখে আমন্ত্রণের আভাষ। এবার সাহস ফিরে পেলাে সে। সেদিন সন্ধ্যায় ব্রূইন অন্যদিন অপেক্ষা বেশীক্ষণ ধরেই তার নিজের ঘরে ছিলেন। রেণে ব্ল্যান্সকে খুজতে গিয়ে দেখলাে শয়ন কক্ষে ব্ল্যান্স একা ঘুমিয়ে রয়েছে। সেই মধুর সন্ধ্যায় ব্ল্যান্সকে সে তার আকাঙ্খিত মধুর স্বপ্ন দেখাল।

মনের সাধ মিটিয়ে এমনভাবে তারা উপভােগ কোরল সন্ধ্যাটা এবং প্রেমের রস এত প্রচুর পরিমাণে ঢালল রেনে যা একজন কেন কয়েকজন মেয়েই তাতে সন্তান লাভ কোরতে সক্ষম হােত। এই ভাবেই চোলল বেশ কয়েকদিন। রেনে যে শুধু বই পড়তে পারতাে তাই নয়, মেয়েদের চোখের ভাষাও সে পড়তে পারত নিপুন প্রেমিকের মতাে। তাই সব সময়ে ব্ল্যান্সের উত্তেজনা প্রশমিত হােত ঘুমের মধ্যেই।

একদিন রেনেকে ডেকে বলল ব্ল্যান্স, জান আমি যে পাপ অর্জন কোরেছি সেটা মার্জনার যােগ্য করণ আমি ঘুমিয়ে থাকি, কিন্তু তােমার পাপ মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

‘মাদাম’ এটা যদি পাপ হয় তাহলে ঈশ্বর এত লােকের পাপ রাখবেন কোথায় ?

ব্ল্যান্সহেসে ফেলল, ওর কপালে একটা চুমু খেয়ে বলল, ‘চুপ কর, দুষ্ট ছেলে, ওটা স্বর্গরাজ্যের ব্যাপার, সেখানে তুই যদি আমার সঙ্গে থাকিস তাে আমিও সবসময় থাকব তোর সঙ্গে।

‘আহ, আমার স্বর্গ এইখানেই।

‘এখন যা এখান থেকে। আমার গর্ভে সন্তান এসেছে; আর তা লুকিয়ে রাখা যাবে না। এখন পুরােহিত মশায় কি বােলবেন’ আমার স্বামীই বা কি বোলবেন ? রাগের মাথায় উনি তােমায় খুন কোরেও ফেলতে পারেন। আমি বলি কি তুই মারমুসতিয়ের যাজকের কাছে গিয়ে পাপ স্বীকার কোরে আয়।

‘আমি যদি আমাদের আনন্দের কথা ওকে বলি, তাহলে উনি আমাদের প্রেম একেবারে ঘুচিয়ে দেবেন।

ঠিক তাই। কিন্তু অন্যজগতে তাের মুখ সে আমার কাছে অনেক মূল্যবান।

‘তোমার কি তাই ইচ্ছা প্রিয়তমা?”

‘হ্যা’ উত্তর দিলে ব্ল্যান্স।

‘বেশ, তাই যাব। কিন্তু তুমি একটু ঘুমাও যাতে আমি তােমাকে বিদায় জানিয়ে যেতে পারি।

আর একবার স্বর্গসুখ ভােগ কোরে নেবে ওরা।

মারমুসতিয়ের যাজক বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলেন। তােমার পাপটা ক্ষমার অযােগ্য। তুমি তােমার প্রভুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা কোরেছ। এর জন্যে অনন্তকাল ধরে তোমাকে নরক ভােগ কোরতে হবে। এখন যাও, তোমার এই পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্যে ক্রসেডে যাও, সেখানে আমাদের ত্রাণকর্ত্তার জন্ম ভূমি যারা অপবিত্র কোরছে সেই সব অবিশ্বাসীদের হত্যা কোরে তােমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করে। সেখানে পনের বছর যুদ্ধ কোরলেই স্বর্গরাজ্যের দ্বার আবার উন্মুক্ত হবে তোমার জন্যে।

কিন্তু প্রভু, মাত্র পনের বছরেই কি যত আনন্দ আমি পেয়েছি তার অবসান হবে ?

‘ইশ্বর দয়াবান। যাও, আর পাপ কোরাে না।’ 

হতভাগ্য রেনে আবার ফিরে এলে রােসে করাবার দুর্গে। ওর প্রভু পুরােনাে অস্ত্রশস্ত্রে শান দিচ্ছিলেন। রেনে ওর সামনে এসে হাঁটু গেড়ে বোসল।

“কি ব্যাপার ?

প্রভু, আপনার অনুচরদের চলে যেতে বলুন।’ অনুচররা বিদায় হলে রেনে সব কথা খুলে বােলল ওকে, কিভাবে সে অর ঘুমন্ত প্রভু পত্নীকে উপভােগ কোয়েছে, যার ফলে তার গর্ভ সঞ্চার হয়েছে, এবং যাজক তাকে যা উপদেশ দিয়েছেন, সব কথাই বলল সে।

ব্রূইন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন। তখনই তিনি হত্যা কোরতে যাচ্ছিলেন তাকে, কিন্তু রেনে দৌড়ে পালিয়ে গেল। তারপর থেকে তাকে আর দেখা যায়নি।

এবার ব্ল্যান্স এর সঙ্গে বােঝা পড়ার জন্যে চললেন লর্ড। অনেক তর্জনগর্জন কোরলেন, কিন্তু ব্ল্যান্সের সঙ্গে তর্কে হেরে গেলেন তিনি।

‘গর্ভের মধ্যেই মত্যু হােক তােমার অবৈধ সন্তানের আমি অভিশাপ দিচ্ছি—

“থাম, থাম, আর অভিশাপ দিও না। তুমিই তাে বােলেছ আমার কাছ থেকে যা তুমি পাবে তার সব কিছুকেই তুমি ভালোবাসবে।’

ঝগড়া, অভিযােগ, পাল্টা অভিযােগ চোখের জল সব কিছুই হােল। লর্ড বােললেন, তিনি তার বিষয়-সম্পত্তি ফিরিয়ে দেবেন রাজাকে। কপাল চাপড়ালেন বারবার, কিন্তু ব্ল্যান্স নির্বিকার।

‘চাকরটা এখন কোথায়?

‘শয়তান নিয়ে গ্যাছে তাকে। ..

‘তার মানে, তুমি হত্যা কোরেছ ওকে?’ ব্ল্যান্সের মুখটা কাগজের মতাে সাদা হয়ে গেল। মুর্চ্ছা গেল সে।

ব্রূইন বুঝতে পারলেন এবার তিনি কি কোরবেন। রেনের সন্ধান করার জন্য লােক পাঠালেন তিনি। রেনে তখন অনেক দূরে। কোন সন্ধান পাওয়া গেল না তার। ব্রূইন সত্যিই ভালােবেসেছিলেন ব্ল্যান্সকে, তাই তিনি হার মানলেন। | সকলেই জানলাে ব্রূইন বৃদ্ধ হলেও এখনও সন্তান উৎপাদনের ক্ষমতা আছে তাঁর। সন্তান যথাসময়ে ভূমিষ্ঠ হােল। সুন্দর মন কেড়ে নেওয়া শিশু। ব্রূইনের সন্তান বােলেই সকলে মেনে নিল তাকে। এর কিছুদিন বাদেই ব্রইনের মৃত্যু হয় হঠাই।

ব্ল্যান্স একা একা ছেলেকে নিয়ে দিন কাটাতে থাকে। বিষয় সম্পত্তি দেখা শােনা করার কাজেও যথাশক্তি আত্মনিয়ােগ করে সে।

পনের বছর পর একদিন এক সন্ন্যাসীর আবির্ভাব হােল দুর্গে।

ব্ল্যান্স তখন ব্যস্ত ছিল অন্য কাজে। সন্ন্যাসীটি ওর ছেলেটিকে উঠোনে দেখে এগিয়ে আসে এবং ছেলেটিকে কোলে নিয়ে আদর কোরে চুমু খেয়ে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যায়।

কিছুক্ষণ পরে ব্ল্যান্স যখন ওর কথা শুনলাে তখন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস কোরল, কে এসেছিল? সে কোথায় এখন ?

অন্যান্য মেয়েরা উত্তর দিল, রাজাটিকে আদর কোয়েই তাড়াতাড়ি চলে গিয়েছেন তিনি।

‘আরে সেই তাে ওর জন্মদাতা পিতা।

কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গেই ব্ল্যান্স ঢলে পােড়ল। সকলেই দেখল প্রাণপাখী ওর দেহের খাঁচাটা ছেড়ে উড়ে গিয়েছে। দেশময় ধন্য ধন্য পড়ে গেলে এরকম সতীর মহাপ্রয়ানে।

Leave a Reply