উৎসঃ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ আদি-রসের গল্প
সম্পাদনাঃ সুকান্ত সেনগুপ্ত
দ্বাপর যুগে উজ্জয়িনী নগরে কান্তিমান্ , ধীমান, ধর্মপরায়ণ, প্রজারঞ্জক স্ত্রৈনাদিব্যসনে অনাসক্ত, ঔদার্য-শম-দম-ক্ষমাদি গুণের আকর শিখিধ্বজ নামে এক রাজা বাস করতেন।
শৈশবেই তাঁর পিতৃবিয়ােগ হয়েছিল। কিন্তু আন্তরিক প্রয়াসে এবং নিজ ভুজবলে দিগ্বিজয় করে মাত্র সােল বছর কয়সে পুর্ন প্রতিষ্ঠা অর্জন করে তিনি প্রবল পরাক্রান্ত সার্বভৌম নৃপতি রুপে সমলকৃত সিংহাসনে আরােহন করেছিলেন।
শীতের শেষে আবার বসন্ত এলাে। প্রসন্ন হয়ে উঠল প্রকৃতি। সঞ্চারিত হলাে বর্ণনাতীত সৌন্দর্যের ব্যাকুলতা, জড়তার কুহেলি গেল কেটে, আনন্দের মধুপাত্র হয়ে উঠল পরিগণ। গন্ধমদভরে অলস সমীরণ, সদ্যফোটা ফুলে মরের আনাগােনা আর অস্ফুট গুঞ্জন, চন্দ্রের শােভাময়ী কিরণ—সবকিছু মিলে ঘণমদির এক নেশায় চঞ্চল হয়ে উঠলেন শিখিধজ। তাঁর নব প্রাণ উচ্ছসিত হয়ে উঠল, সুখে উৎসুক যৌবন উঠল জেগে। সরাষ্ট্ররাজনন্দিনী চূড়ালার রুপে-গুণের কথা শুনে তিনি তার প্রতি অনুরক্ত হলেন।
চূড়ালা তাঁর জাগ্রত অবস্থার চিন্তা, সুপ্ত অবস্থার স্বপ্ন। রাজা ভাবতেন কবে তিনি পয়ােভারে স্তোকনম্রা তাঁর প্রেয়সীকে কুংকুম রাগে রঞ্জিত করে আশ্লেষের রােমাঞ্চ সুখ অনুভব করবেন! চূড়ালাই বা কবে উদগ্র সম্ভােগ বাসনায় পীড়িত হবেন? শৃঙ্গার রসাত্মক কথনে-বচনে শিহরিত হতাে শিখিধ্বজের যৌবন। মনের চোখে ছবি উঠত ভেসে—নারীর উম্মখিত যৌবনের। নারীর কেশবিন্যাস, সবর্ণ কলসের মতাে স্থুল স্তন, সুগঠিত নিতস্ব আর ললিত লােভন লীলা তাকে লন্ধ করত। ঘ্রাণেন্দ্রিয় চঞ্চল হতাে তার যৌবনের গন্ধে।
অবশেষে শুভ পরিণয়ের সন্ধুক্ষিত লগ্নে মিলিত হলেন শিখিধজ আর চূড়ালা। পারস্পারিক গুণের সমতায় তাঁরা সুখী হয়েছিলেন। দুধ আর জল যেমন সহজেই মিলে যায় তারাও তেমনি মিলে-মিশে একীভূত হয়ে গিয়েছিলেন। সুকর্ষিত ক্ষেত সুবৃষ্টির দাক্ষিণ্যে শস্যশ্যামল হয়ে উঠলে আকাশে মেঘের মন্থর সঞ্চারণ এবং নীচে ফসলভারে রােমাঞ্চিত কৃষিক্ষেত্র যে অপরুপ শােভা ধারণ করে সেই রকম অনির্বচনীয় সৌন্দর্যের আধার শিখিধ্বজ আর চূড়ালা। পরিণয়োত্তর প্রশান্তিতে রঞ্জিত হলাে উভয়ের চিত্ত। কদম্ব কাননে, শ্রেণীবদ্ধ চন্দন-অগরু বৃক্ষযুক্ত সুরভিত বীথিতে, স্বচ্ছ সরােবারে মণিমানিক্যখচিত সােপানে তাঁরা মিলনের আনন্দে বিহ্বল হয়ে উঠতেন। দিনের শেষে ধীরে ধীরে যখন ঘনিয়ে উঠত রাত্রির অন্ধকার, রাজস্তঃপুরের নিঃসীম নির্জনতায় দুধের ফেণার মতাে শব্দকোমল শষ্যায় শুয়ে দেহ-মিলনের আনন্দে কেপে কেপে উঠত তাদের সমস্ত শরীর।
প্রাত্যহিক রতিবিলাসের অপরিচ্ছিন্নসুখানুভূতিতে আচ্ছন্ন রাজা-রানী এক দিন উপলদ্ধি করলেন অনেক গুলি বছর গেছে কেটে-চলে যায় মরি হায় বসন্তের দিন। দিনফুরালে মহাকাল কুসুম ঝরিয়ে দেবে। মিলন-মদির নানা রঙের সেইসব দিনরাত হারিয়ে যাবে, ঝরে যাবে ফুল, উড়ে যাবে পাখি। সচ্ছিদ্র পাত্রে জল থাকে না যৌবনও তেমনি ক্রমে ক্রমে বিগলিত হয়, শিথিল হয় দেহ। সুখ নিক্ষিপ্ত তীরের মতাে ছুটে যায়। কেবল লাউ ডগার মত বৃদ্ধি পায় ভােতৃষ্ণা। আত্মজ্ঞানই সংসার যন্ত্রণা দূর করতে পারে তাই অধ্যাত্মতৰে আসক্ত হলেন শিখিধজ আর চূড়ালা। এই জগৎ দীর্ঘস্বপ্নের মতাে একমাত্র মহাসত্তা হলাে মহাচিৎ। তমােবিলাস লয়ের সাধনায় রত হলেন তাঁরা। | আত্মচিন্তায় বিভাের হলেন চূড়ালা। পূর্ণানন্দে স্পন্দিত, নন্দিত হলাে তার চিত্তনিলয়-নবােগত লতার মতো, শরতের স্বচ্ছ মেঘের মতাে শিখ সৌন্দর্যে উদভাসিত হলেন তিনি। রুপমুগ্ধ শিখিধ্বজ একদিন তাকে বললেন, ‘এ কী মােহন রুপ তােমার! প্রিয়ে, সংগােপনে তুমি কি অমৃত পান করেছ ? না কি যােগবলে লাভ করেছ অনির্বচনীয় এ রপমাধুরী ? সুস্মিতা চূড়ালা বললেন, ‘ভােগতৃষ্ণা লপ্ত হলে আর অভুক্ত ভােগে তৃপ্ত হলে, মন শান্ত হয়—দেহে শ্ৰী ফোটে।
হাস্যোজ্জ্বল শিখিধ্বজ বললেন, তুমি রাজনন্দিনী, রাণী। বিলাসব্যসনে কেটেছে তােমার দিন। আর তুমি বলছ অভুক্ত ভােগে তুমি পরিতৃপ্ত। তুমিই ভেবে দেখ তােমার এ উক্তি অসংলগ্ন কিনা। রাজার মন্তব্যে দুঃখ পেলেন চূড়ালা।
শত্রুদমনে রাজা শিখিধ্বজ একদিন বিদেশ যাত্রা করলেন। বেশ কয়েক বছর তাঁকে প্রবাস-জীবন যাপন করতে হবে। ভােগসুখ ত্যাগ করে নির্জন আশ্রয়ে সাধনায় নিমগ্ন হওয়ার সুযোেগ পেয়ে চূড়ালা আনন্দিত হলেন। দৃঢ় অভ্যাসে রাণী অণিমাদি পূর্ন ও ঐশ্বর্য প্রাপ্ত হলেন। সুক্ষ শরীরে আকাশে-পাতালে সর্বত্র যেমন খুশি অবাধে চলাফেরা করতেন তিনি। শিখিধ্বজ ফিরে এলে রাণী তাঁর সঙ্গে তত্ত্বালােচনা করতেন। কিন্তু বালককে বেদ পড়ানাের মতােই সে আলােচনা ফলপ্রসূ হয়নি।
একদিন শিখিধ্বজের বৈরাগ্যভাব দেখা দিল। তিনি সংসার ত্যাগে কৃতসংকল্প হয়ে রাণীকে ডেকে বললেন, ‘প্রিয়ে, সুখৈশ্বর্য উপভোগে ক্লান্তি এসেছে। বন গমনের স্পৃহা জেগেছে আমার। দেখ, বনবাসীরা আমার চেয়ে অনেক সুখী। রাজ্য রক্ষার চিন্তা কিংবা মুখে লােক ক্ষয়ের দুঃখ কোন কিছুই তাদের নেই। একদিন তুমি সন্ন্যাসীর ব্ৰতবন্ধ দিয়েছিলে ছিন্ন করে। আমার নবীন যৌবন প্রবল যৌন সম্ভােগেচ্ছায় তােমাকে বরণ করে নিয়েছিল। অন্ধ প্রেমসম্ভোগ আমাদের স্বাধিকারপ্রমত্ত করেছিল। আজ সুনীল বনরাজির মাঝে তােমাকে উপলদ্ধি করছি। পুষ্পস্তবক যেন তােমার যুগল স্বর্ণদুরন্ত যৌবনের পুরুত ফসল, মৃণাল যেন তােমার বাহলতা, সাদা মেঘ তােমার গৌরাঙ্গের গন্ধ মাখা রেশমি শাড়ি, বর্ণগন্ধ বিকশিত ফুলগুলি তােমার অঙ্গরাগের অকৃত্রিম উপকরণ। সুন্দরি, আমার বনগমন সংকল্পে বাধা দিও না।
চূড়ালা বললেন, ‘শাস্ত্র-নির্দিষ্ট বন গমনের বয়সে এখনও তুমি উপনীত হও নি। সর্বোপরি তুমি রাজা, প্রজা পালনের দায়িত্ব রয়েছে তােমার।
রাজা বললেন, “আমার অরণ্যাভিসারী মনকে সংযত করার শক্তি হা রয়েছি। তাই আমায় নিষেধের বেড়াজালে বেধে রেখ না। আমার অবর্তমানে তুমিই রাজ্য চালনা করবে।”
অনন্তর অস্তমনােম্মুখ সুর্যের গৈরিক আলােয় সারা আকাশটা করুণ হয়ে উঠল। শত অনুরােধেও কি এই বিদায়ী সুর্যকে নিবৃত্ত করা যায়। তেমনি রাণীর সনির্বন্ধ অনুরােধ, প্রজাদের উপরােধ সবকিছুই ব্যর্থ হলো—যে যাবার সে যাবেই! শিখিধ্বজ বনগমনের উদ্দেশ্যে নিষ্ক্রান্ত হলেন। চূড়ালাও স্বামীর অনুগামিনী হলেন। সায়াহ্নের অন্ধকার নামল অরণ্যে! দিগ্বদের লাজাঞ্জলি নিক্ষেপেই যেন আকাশে একে একে ফুটে উঠল অজস্র তারা। জ্যোৎস্নায় প্লাবিত হলাে বনভূমি। চলতে চলতে ক্লান্ত হলেন রাজা-রাণী। শিখিধ্বজের কোলে মাথা রেখে চূড়ালা নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়লেন। রাজা সন্তর্পণে নিদ্রিতা চূড়ালাকে নিজের কোল থেকে নামিয়ে রেখে পরিচারকদের ডেকে বললেন, ‘দস্যু দমনের জন্য ছদ্মবেশে আমি নগর-পরিক্রমায় বের হলাম।
শুরু হলাে রাজার পথ চলা। অতিক্রান্ত হলাে কত পথ, জনপদ, নদনদী, গিরি-নগরী। প্রতিদিন সুর্য ওঠে, দিনের শেষে পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ে।
তৃষ্ঞায় শ্রান্ত হয়ে অঞ্জলি ভরে তিনি পান করেন ঝরণার জল, ক্ষুধায় কাতর হয়ে ফলমূল খান। শেষে মঠিকামন্দিরে আশ্রয় নিলেন রাজা। সংগ্রহ করলেন তিনি ফুলের সাজি, কমণ্ডল, রুদ্রাক্ষের মালা, শীত নিবারণের জন্য কাঁথা, উপবেশনের জন্য কুশাসন।
এদিকে ব্যথা-ভারাক্রান্ত মনে চূড়ালা রাজান্তঃপুরে ফিরে গেলেন। মন কিছুটা শান্ত হলে সক্ষম দেহে তিনি আকাশচারিনী হয়ে ধ্যানমগ্ন শিখিধ্বজকে প্রত্যক্ষ করলেন, চূড়ালার চোখে অনাগত দিনের ছবিও স্পষ্ট হলাে। রাজধানীতে
প্রত্যাবর্তন করে তিনি রাজকার্য চালাতে লাগলেন। চলে গেল আঠারােটি বসন্ত। চড়লা বুঝলেন সময় হয়েছে। আবার তিনি আকাশচারিণী হলেন। সুশীল জ্যোৎস্নায় স্নাত হলেন তিনি, মন্দার-চন্দন কস্তুরী সৌরভিত বাতাস ছুঁয়ে গেল তাঁর শরীর। সিন্ধভিসারিকা তিনি, কিন্তু তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি রমণী। শিখিধ্বজের মিলন প্রত্যাশায় ব্যাকুল হলেন তিনি। ভাবলেন তিনি এতদিনের এত কৃচ্ছসাধন, আত্মচিন্তন সবই কি তবে ব্যর্থ হলাে ? যৌন সংসর্গের জন্যই কি তিনি চঞ্চল হয়েছেন ? সে সম্ভাবনা তাে আর নেই ! আজও তিনি যৌবনবতী, পীবরস্তনী। কিন্তু তাঁর বিশুদ্ধচিত্ত স্বামী তপঃক্লেশে অবসাদগ্রস্ত, শিথিল-স্নায়ু-তার সে উজ্জল-দ্যুতি আর নেই, জীর্ণ পত্রের মতাে মনে হচ্ছে তাকে।
চুড়ালা ব্রাহ্মণ-কুমারের রূপ ধরে শিখিধ্বজকে প্রকৃষ্ট বােধ দান করার জন্য পর্ণকুটির অভিমুখে অগ্রসর হলেন। তিনি রাজাকে বললেন, ‘রাজসুখ ত্যাগ করে আপনি তপশ্চরণে লিপ্ত হয়েছিলেন। আশা করি প্রার্থিত ফললাভ করেছেন।
ব্রাহ্মণ কুমারকে দেখে রাজার মনে হলাে তিনি যেন মুর্তিমান তপস্যা। রাজা বললেন, ‘মহর্ষি, আপনার পুত সান্নিধ্যে নিজেকে আজ ধন্য মনে হচ্ছে। অনুগ্রহ করে বলুন আপনি কে? কি কারণেই বা আপনি এখানে এসেছেন ?
ব্রাহ্মণ কুমার বললেন, “বিজয়লক্ষীর ভালে রাজটীকার মতাে প্ৰোজ্জল সুন্দর শুদ্ধচিত্ত নারদমুনির নাম আপনি নিশ্চয়ই শুনেছেন। একদিন তিনি স্বর্ণোজ্জল সুমেরু গুহায় জ্ঞাতৃজ্ঞেয়ত্বভেদশূণ্য হয়ে অদ্বিতীয় পরব্রহ্মে একাগ্রচিত্তে অবস্থান করছিলেন। সমাধি ভাঙলে দেবর্ষির কানে এল মধুর শিঞ্জনধ্বনি। সুমেরু গুগার কাছেই মন্দাকিনী। কৌতহলাবিষ্ট নারদ দেখলেন রম্ভা, তিলােত্তমা এবং আরও অনেক অপ্সরা নগ্ন দেহে নিঃশঙ্কচিত্তে জলক্রীড়া করছে স্বর্ণ কমলের কুঁড়ির মতাে তাদের স্তন সংস্পর্শযুক্ত হয়ে তীব্র লালসা জাগাচেছ। গিলত সােনা দিয়ে যে কোন ভাস্কর তাদের যৌবনােজ্জল উরুগুলি তৈরী করেছে। মনে হচ্ছে পদ্মগন্ধি পরিপুষ্ট ঐ ঊরুগুলি যেন অতুন দেবতার মন্দিরের সুরম্য স্তম্ভ। মন্দাকিনী রমনীয়তায় ভাস্বর কিন্তু এই সব অপ্সরার সৌষ্ঠব আর রুপমাধুরীর কাছে সে নিষ্প্রভ। নয়নলােভন অসংবৃত তাদের নিতম্ব। চিরযৌবনা অপ্সরাদের একের প্রতিচ্ছবি পড়েছে অপরের আবরণশূণ্য সুচারু অবয়বে। সুকেশিনী সেই স্বর্গ বারাঙ্গনারা পদ্মকোরকগুলি ছিন্ন করছে কেননা ঐসব পদ্ম কুড়িগুলি তাদের সংগঠিত কুচ যুগলের অনরুপ আর তাদের শরীরে সঞ্চিত রয়েছে অমতৃ। জীবমুক্ত দেবর্ষিরও চিত্তচাঞ্চল দেখা দিল। জোর করে তিনি নিজেকে সংযত করার চেষ্টা করলেন কিন্তু কামপ্রবৃত্তির পরবশ হয়ে পড়লেন তিনি। একটি স্ফটিক কুম্ভে তিনি তার বীর্য নিক্ষেপ করলেন। যথাসময়ে সেই কুম্ভ থেকেই আমার জন্ম হলাে এবং আমি কুম্ভ নামেই পরিচিত। নারদ আমায় শাস্ত্র শিক্ষা দিয়েছেন। আমি ব্ৰহ্মলােকে বাস করি। আকাশ পথে যেতে যেতে আপনাকে দেখে আপনার কাছে এলাম।’
অতঃপর কুম্ভবেশী চূড়ালা রাজা শিখিধ্বজকে জ্ঞানযােগের উপদেশ দিতে লাগলেন আর তাকে সব ত্যাগে প্রলুদ্ধ করলেন। রাজা তাঁর পুর্ণকুটীর, অশন, আসন,বসন সবকিছু, অগ্নিতে নিক্ষেপ করে আত্মাহুতির জন্য প্রস্তুত হলে কুন্ড তাঁকে নিবৃত্ত করলেন। শিখিধ্বজে মােহ অপগত হলাে, আত্মজ্ঞান লাভ করলেন তিনি। উভয়ের সম্প্রীতি বর্ধিত হলাে এবং তাঁরা অন্য এক রমণীয় বনে আশ্রয় নিলেন। রাজার আর কোন কিছুতেই কোন আকর্ষণ নেই, বিকর্ষণও নেই। অপুর্ব এক রপ মাধুরী ঘিরে রেখেছে তাঁর সারা শরীর।
এদিকে বরবর্ণিনী চূড়ালার কাম লালসা জাগল। তার মনে হলাে, যে রমণীর স্বামীসম্ভােগ-বাসনা জাগে না সে নিন্দিতা-ব্রহ্মজ্ঞানী হলেও প্রারন্ধ কর্মের উপেক্ষা জনিত পাপ তাকে স্পর্শ করে। তাই রতিক্রীড়ার আনন্দ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করি কেন? অতঃপর কুম্ভবেশধারিণী চূড়ালা শিখিধ্বজকে বললেন, “ইন্দ্রপরীর আনন্দময় এক অনুষ্ঠানে আজ আমার নিমন্ত্রণ। আমাকে তাই যেতে হবে। উৎসব শেষ হলেই ফিরে আসব। কুম্ভ ফিরে এলেন। কিন্তু তাঁর শােভন মুখটি বিষাদ-ম্নান, শ্রীহীন। শিখিধ্বজ বললেন, আপনাকে মনে হতাে বেদনার স্পর্শ লেশহীন এক সৌন্দর্য ছবি, আজ কেন আপনাকে মলিন লাগছে? কুম্ভবেশধারিণী চূড়ালা বললেন, প্রত্যাবর্তনকালে আকাশপথচারী দুর্বাসাকে দেখে বলেছিলাম—আপনাকে আজ অভিসারিকার মতাে সুন্দর লাগছে। আর যায় কোথা ! সুলভকোপা দুর্বাসা সঙ্গে সঙ্গে অভিশাপ দিলেন-দিবসে তুমি কুম্ভই থাকবে, রাত্রির আগমনে পীবরস্তনী কামিনী নারীতে পর্যবসিত হবে। বিধিনির্বন্ধে কী অস্বাচ্ছন্দ্যকর অবস্থার মাঝে পড়তে হল আমায়। আমার উষ্ঞ যৌবন, স্বর্ণকমলের মতাে স্ফীত পয়ােধর দেবকুমারদের কামার্ত করে তুলবেআমাকে নিয়ে তারা পারস্পরিক কলহে লিপ্ত হবে, ভাবতেও লজ্জা হচ্ছে। দেবর্ষিকেই বা আমি কি ভাবে নিষ্ঠূর এ অভিশাপের কথা জানাব।
উদাসী শিখিধ্বজ বললেন, ‘রুপান্তর নিয়ে মিথ্যা শােক করছেন। দেহ দুঃখ-সুখে লিপ্ত হয়, দেহী নির্লিপ্তই থাকেন।’ সুর্য অস্ত গেল। নিমীলিত হলাে পদ্ম। পাখীরা নীড়ে ফিরছে। পথিকের পথ চলা সেদিনের মতাে শেষ হলো। ঘণিয়ে এলাে সাঁঝের আধার। যাদের প্রণয়ীজনেরা ঘরে ফিরল না সেইসব বিরহিণী স্ত্রীরা কষ্ট পাচ্ছে। চক্র-বাক দম্পতিকে বিচ্ছেদব্যথা সইতে হবে। আকাশে চাঁদ উঠল। কুমুদিনী প্রস্ফুটিত হলাে। কুম্ভ সহসা চঞ্চল হয়ে উঠলেন। বললেন, সারা দেহে রোমাঞ্চ জাগছে। আমার কেশরাজি বৃদ্ধি পেয়েছে। আকাশ তারার আলােয় সজ্জিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার অলকেও ঝকঝক করছে মুক্তোর মালা। দেখ আমার বুকে ঠেলে উঠেছে উদ্ধত দুটি স্তন–যেন সৌগন্ধময় দুটি পদ্মকোরক। রঙীন কাঁচুলিতে আবৃত হচ্ছে পয়ােধরগল। এই দেখ কোমর থেকে গােড়ালি পর্যন্ত রেশমি শাড়িতে ঢেকে গেল। সুস্পষ্ট নিতম্বের ভার অনুভব করছি। আমার অঙ্গ থেকে একে একে নির্গত হচ্ছে হীরা-চুনীপান্না খচিত নানাবিধ অলংকার। পরিবর্তন আর সংবেদনের এই চমকে লজ্জা পাচ্ছি।
শিখিধজের মনও বিষাদে ভরে উঠল। এই রুপান্তর নিয়তি-নির্দিষ্ট, অন্যথা করার উপায় নেই। আড়ষ্ট হয়ে উভয়ে এক শয্যাতেই শয়ন করলেন। প্রভাতে রাতের সেই মায়াবিণী সুন্দরী পুনরায় কুন্ডের রপ পরিগ্রহ করলেন। কুম্ভবেশধারিনী চূড়ালা একদিন রাজাকে বললেন, প্রতিরাতে আমার দেহে রমণী চিহ্ন ফুটে ওঠে। আর আমরা এক শয্যাতেই শুই। আমার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে কামনার আগুন জলে ওঠে। নিজেকে নিবৃত্ত করার সাধ্য নেই আমার। দেহদানের মাধ্যমে তৃপ্তির স্বাদ পেতে চাই। সম্ভোগের মহাসুখ থেকে নিজেদের বঞ্চিত করে কি লাভ! আজ শ্রাবণী পুর্ণিমা, শুভদিন। আজ রাতে মহেন্দ্র পর্বতের প্রদীপ প্রজ্জলিত রমণীয় গুহায় যথাবিহিত পরিণয়-পর্ব শেষে আমরা মিলিত হব। রাজর্ষি রাজী হলেন।
সায়ন্তন স্নিগ্ধতায় ভরে উঠেছে চারিদিক। জ্যোৎস্না-পুলকিত মন্দাকিনী নদীতে অনাচ্ছাদিত দেহে জলক্রীড়ায় রত হলেন রাজা আর মােহিনী সেই নারী। একে অপরকে স্নান করিয়ে দিলেন। শরীর স্পর্শে উভয়েই কামার্ত হলেন।
কর্পুর কুংকুম-কম্ভরী চন্দনের অলংকারে তাঁরা সজ্জিত হলেন, ধারণ করলেন নানাবিধ অলংকার। পীনস্তনভারণতা লাজনম্রা বধু নাম নিলেন মদনিকা। অনবদ্যাঙ্গী লক্ষীর মতাে প্রতিভাত হলেন তিনি। রাজা বললেন, এ কী সুন্দর রূপ তােমার, প্রিয়ে। তােমার ফরসা গায়ে পদ্মের গন্ধ, নবীন কিশলয়ের মতাে তােমার করতল, তােমার সম্মিত মুখটি পুর্ণিমার চাঁদের মতাে মনােরম আর অধর-ওষ্ঠে লুকিয়ে আছে অমৃত।
বিবাহ বেদীর চারিদিকে রয়েছে চারটি নারিকেল, সােনার কলস মন্দাকিনীর পূত বারিধারায় পূর্ণ। সংরক্ষিত চন্দন কাঠে অগ্নি সংযােগ করা হলাে। তারা অগ্নি প্রদক্ষিণ করলেন, লাজাঞ্জলি দিলেন। মিলনানুষ্ঠান শেষে মণিময় পালংকে গন্ধপুম্প বিছানাে শয্যায় শুয়ে একে অপরের মাঝে হারিয়ে গেলেন। অনির্বচনীয় সম্ভোগানন্দে অতিবাহিত হলো রাত্রি।
প্রভাতে মদনিকা পুনরায় কুম্ভরপ ধারণ করলেন। পারস্পরিক সম্প্রীতিতে পুর্বের মতােই তারা শাস্ত্রালােচনা করলেন, ঘুরে বেড়ালেন, স্নান সেরে ফলমূল খেলেন। দিনের শেষে কুম্ভ রজনীর নর্ম-সহচরীর রূপ নিলেন আর তাঁর নিরাবরণ যৌবন মুগ্ধ করে রাজাকে। রতিশ্রমে কিন্ন-ক্লিস্ট শিখিধ্বজ নিদ্রিত হলে মদনিকাবেশিনী চূড়ালা উজ্জয়িনীতে ফিরে অমাত্যদের রাজকাৰ্য্য পরিচালনা নির্দেশ দিতেন। চূড়ালারুপে আত্মপ্রকাশ করার আগে তিনি শিখিধ্বজকে আর একবার পরীক্ষা করবেন বলে মনস্থ করলেন।
একদিন সায়াহ্নে শিখিধ্বজ মন্দাকিনী তীরে সন্ধ্যাহ্ণিক করছিলেন। চন্দ্রালােক প্লাবিত অরণ্যের অনুষঙ্গিনী মদনিকাবেশিনী মনােহারিণী চূড়ালা নিজেকে সম্যকরুপে সঞ্জিত করে যােগবলে তিনি সাশ্রী এক উপপতি সৃষ্টি করলেন এবং পুম্পশয্যায় তাঁর সঙ্গে যৌন-সঙ্গমে লিপ্ত হলেন। জপ সেরে শিখিধ্বজ মদনিকার সন্ধানে এখানে-সেখানে ঘুরতে ঘুরতে অবশেষে তাঁকে দেখতে পেলেন। যৌবনবতী মদনিকার নগ্ন শরীরে চাঁদের আলাে পড়েছে, স্বেদসিক্ত তার কপােল, সস্মিত তাঁর মুখশ্রী, দৃঢ় আলিঙ্গনে তাঁর বৃক্ষের পুস্পমাল্য পিষ্ট হয়েছে।
মদনিকাকে পরপুরুষের বাহুলগ্ন হয়ে থাকতে দেখেও শিখিধ্বজ বিন্দুমাত্র বিচলিত বা উত্তেজিত হলেন না। তাঁর মনে হলাে, এই যুবক-যুবতী দেহমিলনের আনন্দ উপভােগ করছে। আমাকে দেখলে লজ্জা পাবে। আমি বরং অন্যত্র গমন করি।
শিখিধ্বজ চলে গেলে মদনিকা সেই মায়া নাটকের অবসান ঘটিয়ে সম্ভোগ ক্লিষ্ট দেহে স্বামীর কাছে এলেন এবং লজ্জায় মুখ নীচু করে দাঁড়িয়ে রইলেন।
শিখিধ্বজ সস্নেহে বললেন,
“প্রিয়ে সাংসর্গিক আনন্দ থেকে বিরত হলে কেন ? যৌন মিলনের নিবিড় সুখানুভবে আকস্মিক ছেদ টেনে কেন তুমি চলে এলে? মিলনরত অবস্থায় তােমাদের দেখে আমার কিন্তু কোন রকম ভাবান্তর ঘটে নি। তুমি প্রত্যহ রাত্রিতে তােমার প্রণয়ী যুবকটির শয্যাসঙ্গিনী হয়ে কামেচ্ছা পূরণ কর, আমি বাধা দেব না। আমি জানি প্রভাতে কুম্ভরুপে তুমি আমার মতােই বীতরাগ, স্থিতপ্রজ্ঞ-আমার সাধন পথের নির্ভরযােগ্য সঙ্গী।
মদনিকা বলল, স্ত্রীলােক স্বভাবতঃই চঞ্চল। তাদের কামপ্রবৃত্তি পুরুষের চেয়ে আটগুণ বেশী। সন্ধ্যে নামার সঙ্গে সঙ্গেই কামাতুরা হয়ে আমি তোমার খোঁজ করছিলাম। দেখলাম মন্দাকিনী তীরে তুমি অর্চনারত। সুনীল অন্ধকারে নির্জন বনে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। এমন সময় কামুক যুবকটি আমার কাছে এসে প্রেম নিবেদন করল। সুতীক্ষ্ন দেহ কামনায় আমার তখন শরীরব্যাপী অস্থির একটা আলােড়ন চলছে। কিছুতেই আমি নিজেকে সংযত করতে পারলাম না। নারী কুমারীই হােক আর বিবাহিতাই হােক মনের মতাে পুরুষ পেলে অবশ্যই সে আত্মসমর্পণ করবে। তাই যতদিন পরপুরুষের সংস্পর্শে না এসে পড়ে ততদিনই রমনী শুদ্ধ থাকে। সংসর্গ থেকেই প্রেম জন্মায়। কান্ত, তােমাকে সবকিছুই বললাম। আমি অবলা নারী, আমায় তুমি ক্ষমা কর।
শিখিধ্বজ বললেন, ‘প্রিয়ে, পরপুরুষের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তুমি তাকে দেহ
দান করেছ। কাজেই স্ত্রীরুপে তােমায় গ্রহণ করলে নীতিগহিত অশাস্ত্রীয় কাজ করা হবে। তাই আমরা আগের মতাে মিত্রভাবাপন্ন হয়েই থাকব, কেমন ? আর বিশ্বাস কর, তােমার ওপর একটুও ক্রদ্ধ হইনি আমি।
রাজাকে রাগম্বেষ শন্য দেখে মদনিকা প্রীত হলেন। তিনি বুঝলেন শিখিধ্বজের বিষয় বাসনা দুর হয়েছে এবং চূড়ালা রুপে আত্মপ্রকাশ করলেন।
শিখিধ্বজ অবাক হয়ে তার দিকে চেয়ে রইলেন। তারপর বললেন, “তুমি কে ? আমার মনে হচ্ছে তুমিই আমার প্রিয়তমা মহিষী চূড়ালা। এখানে তুমি কি ভাবে এলে ? চড়ালা বললেন, হ্যাঁ আমিই তােমার প্রিয়তমা মহিষী চড়ালা। তােমাকে বােধ প্রদান করার জন্য ছায়ার মতাে সব সময় আমি তােমাকে অনুসরণ করেছি এবং যােগবলে আমি কুম্ভ, পরে মদনিকার রূপ পরিগ্রহ করেছিলাম। তােমাকে শেষবারের মতাে পরীক্ষা করার জন্য মায়াবলে উপপতি সৃষ্টি করে তার সঙ্গে যৌন সম্ভােগরত হয়েছিলাম। শেষ পরীক্ষায় তােমায় জয়ী হতে দেখে অকৃত্রিম শরীরে তােমার সামনে আবিভূত হয়েছি। এখন তুমি ধ্যান যােগে সব কিছু প্রত্যক্ষ কর।
শিখিধ্বজ ধ্যানস্থ হলেন এবং আনুপুর্বিক সবকিছু, প্রত্যক্ষ করলেন। তিনি বললেন, ‘প্রিয়ে, তােমার তনুদেহখানি আমার জন্যে কত ক্লেশ সহ্য করল। আমি মার্জনাপ্রার্থী। আমায় তুমি মােহবন্ধন থেকে মুক্ত করেছ। তুমি গৃহিনী, সচিব, সখা অধ্যাত্ম পথের সঙ্গিণী—তুমি আলােকতী।
চৈত্তিক প্রশান্তিতে দীপ্তিমতী চড়ালা জিজ্ঞেস করেন, ‘প্রিয়, তােমার কী ইচ্ছে ? আমরা এখন কী করব ?
রাজর্ষি শিখিধৰজ বললেন, ‘প্রিয়ে, আমি যন্ত্র মাত্র-তুমি যন্ত্ৰী। তােমার ইচ্ছাই আমার ইচ্ছা।
চড়ালা বললেন, ‘চল, আমরা আবার উজ্জয়ীনিতে ফিরে যাই। তুমি রাজা, পুণরায় সিংহাসন অলংকৃত কর। আর আমি রাণী। আমাদের ফিরে পেয়ে প্রজারা আনন্দমুখর হবে, পুণরায় সজ্জিত হবে রাজপুরী,বৈতালিক-কণ্ঠে ধ্বনিত হবে রাজার স্তুতি, নটীরা নৃত্য পরিবেশন করে মনােরঞ্জন করবে।’
রাজা বললেন, ‘উজয়িনীতেই আমরা ফিরে যাব। কিন্তু আমার একটি প্রশ্ন-স্বর্গসুখ ছেড়ে কেন তােমার রাজৈশ্বর্য ভােগের ইচ্ছে জাগল ? চড়ালা উত্তর দিলেন, আমরা এখন দুঃখ-সুখের অতীত অবস্থা প্রাপ্ত হয়েছি। কাজেই রাজ্য আর বণ—এদের মাঝে কোন প্রভেদ খুজে পাই না।
কেবল স্বভাববশত বিষয়কে আশ্রয় করে থাকতে চাই।’
রাজা বললেন, “তুমি ঠিকই বলেছ।
সুর্য উঠল। সুচনা হলাে নতুন একটা দিনের। রাজা-রাণী উজ্জয়িনীতে ফিরে এলেন। নতুন করে অভিষেক হলাে রাজার। তিনি সিংহাসনে আরােহণ করলেন। চড়ালা বললেন, ‘প্রিয় মনিসুলভ শান্ত তেজ পরিহার করে তুমি এখন রাজকার্য পরিচালনা কর। উৎসবের আনন্দে মেতে উঠল উজ্জয়িনী। সুখে-শান্তিতে দীর্ঘদিন রাজত্ব করে শিখিধ্বজ এবং চূড়ালা একই সঙ্গে দেহত্যাগ করে অরুপ লােকের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন।
টীকা ৷৷
১। সংস্কৃতি ধর্মগ্রন্থে, কাব্য-নাটক এবং কাহিনীতে স্ত্রী লােকের সম্পকে অনেক প্রতিকুল মন্তব্য করা হয়েছে। কয়েকটি উক্তি এখানে সংকলিত হলাে
মাংস, অস্থি, স্নায়ু দিয়ে নির্মিত স্ত্রী-শরীরে শােভার বিষয় কোনটি যে মানুষ তাতে মুগ্ধ হয়? [যোগি বাশিষ্ঠ ১১২১, পঞ্চাদশী ৭১৪০, যাজ্ঞ উপনিষৎ ৫]
স্ত্রী থাকলেই ভোগেচ্ছা জন্মে। যার স্ত্রী নেই ভােগেচ্ছা পুরণের স্থানও নেই। স্ত্রী ত্যাগ করলেই জগৎ ত্যাগ করা হয় এবং জগৎ ত্যাগ করলেই সুখ লাভ হয়। [যােগ ৰাশিষ্ঠ ১২১৩৪, মাৰ্য উপনিষৎ ১৪]
স্ত্রী লােকের দেহ বিচার করলে দেখা যায়, এখানে কেশ, সেখানে রক্ত প্রভৃতি। এই ধরণের দেহে যাদের রতি, তারা মানুষ নয় কুকুর। [যোগি বাশিষ্ঠ ৩৫৯৩]
নাড়ীব্রণের ক্লেশযুক্ত স্ত্রীলােকের যে অবাচ্য স্থান তাকেই সুখের মন করে বুদ্ধিভ্রমবশতঃ লােকে প্রায়ই বঞ্চিত হয়। দুর্গন্ধবিশিষ্ট দ্বিধাভিন্ন চর্মখণ্ডে যাদের আসক্তি তাদের সাহসকে ধন্য বলতে হয় ; তাদের চরণে নমস্কার। [ নারদ পরিব্রাজক উপনিষৎ ৪৩৯-৩০]
চর্ম, মাংস, রক্ত, স্নায়ু, মেদ, মজ্জা ও অস্থি সমন্বিত দেহে যাদের আসক্তি, তাদের সঙ্গে কৃমি-কীটের কোন পার্থক্য নেই। [ শ্রীমদ্ভাগবত ১১০২৭২১]
ঘৃতকুম্ভ যেমন অগ্নি সংসর্গে বিগলিত হয়, পুরুষও সেরুপ স্ত্রীলােকের সংসর্গে অভিভূত হয় ; অতএব স্ত্রীসঙ্গ বর্জন করা উচিত। [ অবত গীতা ৮২৪ ]
কোনও স্ত্রীলােককে সম্ভাষণ করবে না, পুর্বদৃষ্ট কোনও স্ত্রীলােককে স্মরণ করবে না, তাদের সম্বন্ধে কোনও কথাবার্তা বলবে না এবং তাদের লিখিত বিষয়ও পাঠ করবে না। [ নারদ পরিব্রাজক উপনিষৎ ৪৩]
অশ্বের স্বচ্ছন্দ চলন ভঙ্গি, বৈশাখী মেঘের গর্জন, স্ত্রীলােকের চরিত্র পুরুষের ভাগ্য, অবর্ষণ বা অতিবর্ষণ-মানুষ তো দুরের কথা দেবতাগণেরও দুর্জ্ঞেয় ।
ব্যাধেরা গতিমান বনের পাখিকেও ধরতে পারে, বেগবতী নদীতেও নৌকা চালান সম্ভব কিন্তু কেউই স্ত্রীলােকের চপল মনের গতি নির্ধারণে সমর্থ নয়।
স্থিতপ্রজ্ঞ মনিরাও মােহমুগ্ধ হয়ে নারী অসদভিপ্রায় বুঝতে অসমর্থ হন।
পুত-চিত্ত মুনি-ঋষিরা বলেন যে এক জনের সঙ্গে যৌন সম্ভােগ শেষ করার সঙ্গে সঙ্গেই নারী অন্য পুরুষের যৌন সংসর্গ কামনা করে।
কল্যাণ-অকল্যাণের বােধ রহিত, কুল ও জাতি নিকৃষ্ট দুষ্কর্ম লিপ্ত, অশুচি-অচ্ছত, মরণােন্মুখ ব্যক্তিকেও তারা প্রিয়তম বলে মনে করে।
অতএব কলশীলে উজ্জল ব্যক্তি সব সময়েই নারীদের শ্মশান-পুস্পের মতােই বর্জন করা উচিত।
[ ভর্তু হরে বৈরাগ্য কথা। দ্বাত্রিংশৎ-পুত্তলিকা। শ্লোক ১৪, ১৫, ১৭, ২০, ২২ ]