অনুবাদঃ জীমত কান্তি বন্দ্যোপাধ্যায়
উৎসঃ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ আদি-রসের গল্প
সম্পাদনাঃ সুকান্ত সেনগুপ্ত
ধােপানী না তাসারেততা বয়স্ক তাসারকে বিয়ে করল। তাসারুর পেশা ভিন্ন। সে রঞ্জক (dyer)। তবে তাসারেততা কাপড় কাচার কাজটা একেবারে ছেড়ে দেয়নি। স্বামীর ভিন্ন পেশা সত্বেও। জামাকাপড় রং করা বা কাচার ব্যাপারে ওদের ভীষণ খ্যাতি। কি লর্ড, কি কাউন্ট, ধনী নির্ধন সব ওদের খদ্দের ।
তাসারুর সঙ্গে বিয়ে হবার ছ-সাত বছর আগেই যৌবনে পদার্পন করেছে তাসারেততা। তাকে দেখতে ভােরের দীঘির জলে ঠিক একটি ফুটন্ত শালক ফুলের মত। এখন কথা হচ্ছে, এই রকম একটি সদ্য ফোটা ফুল যৌবন পেরােনাে এক ভ্রমরের কণ্ঠলগ্ন হল কেন? কুরী ফুলের লজ্জা ঘুচিয়ে তার থেকে মধু পান করবার শক্তি ঐ ভ্রমরের আর কতটুকু আছে ? যৌবনবতী নারীকে আনন্দ দেবার ও তার থেকে আনন্দ আহরণের পুরুষালি ক্ষমতা ?
তা হলে বলতে হয়, নিয়তির নিবন্ধ কে খণ্ডাতে পারে? ঠিক যে বয়সে তাসারকে বিয়ে করল তাসারেততা সেটাই হল মেয়েদের ভালবাসা দেবার বা নেবার আসল বয়স।
তাসারেততা যৌবনমদে মত্ত। কিন্তু তাসারুর পৌরষ অস্তগামী। কিন্তু তাসারেততার মনে তা নিয়ে বিশেষ কোন খেদ বা আপশােষ আছে বলেতাে মনে হয় না।
হয়তাে তাসারুর সঙ্গে ওর মনের মিল হয়েছে। কিন্তু ওর দেহ যা চায় তা ষোল আনা বােধহয় পায়না ও বয়স্ক স্বামীর কাছ থেকে। তবু এই তাসারুকে নিয়েই তাসারেততা দৈনন্দিন ঘর করণার কাজ করে। ব্যবসা দেখে। কাপড় কাচে। রঙ করে। সবদিক সামলায়।
বাইরে থেকে তাসারেতাকে সুখী বলেই মনে হয়।
তাসারেততা ফুর্তিবাজ মেয়ে। ওকে দেখলেই বােঝা যায় ও চতুর ধুর্ত। সত্যি কথা বলতে কি, আমার যতদূর মনে হয় তাসারেততা একটু ভালবাসার কাঙাল। কেউ যদি মানে কোন পুরুষ যদি একটু ভালবাসা দেখায় তাহলে ও তাকে একটু প্রশ্রয় দেয়।
কেউ কেউ সতৃষ্ণ নয়নে ওর দেহের উপরে পড়া রুপ যৌবনের দিকে তাকিয়ে থাকে চাতক পাখীর মত। কখন মেঘের জল ঝড়ে পড়বে এই আশায়। আবার কেউ কেউ ওর পিছু নেয়। যারা ওর পিছু নেয় তাদের ও নিরাশ করে না। কিছু বলে না। পিছ নিতে দেয়। এই সব কাঙালে পনা লােকদের নাকি দড়ি দিয়ে ভাল্লুক নাচ নাচাতে খেলাতে দারুন মজা লাগে ওর। ও খুব আনন্দ পায় ওদের রকম সকম দেখে।
তবে মাঝে মাঝে এমন এক একটা বেয়াড়া নাছােড়বান্দা পিছু নেয় যে তাদের এড়ানাে দায়। অনিচ্ছা থাকলেও ফাঁদে পড়তে হয়। তখন দেহের বাইরের রূপ-যৌবন সুধা বেশ কিছুটা ঘষে দিয়ে তবে মুক্তি। আগুন নিয়ে অনবরত খেলা করতে একটু আধটু কি আর ছ্যাকা লাগবে না কখনাে সখনাে। সচতুর তাসারেতাকে তখন কে যেন নির্বোধ ভ্যাবাচ্যাকা করে তােলে।
তাসারেততা মনে মনে ভাবে যাকগে। এতে আর কি হয়েছে, গায়ে গায়ে শোধ তাে কথাই আছে না দোষায় চমঘর্ষনাৎ। ঠিক মত নয় তালে কি আর সব সময় গান করা যায়। মাঝে মাঝে তাে তাল কাটবেই। গলা একটু বেসুরাে হবেই। মনের পাতায় যেটুকু কালাে দাগ লাগে সেটকু আবার. মুছে ফেলে তাসারেততা। অভ্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্যে ও সাবলীলতায়।
হায় দেহ তুমি ছাড়া নাই কেহ। এই দেহই দেখছি সব। নারী হল প্রাণরুপা প্রকৃতি। এই নারী দেহ সাক্ষাৎ অমৃত কুম্ভ। এই অমৃত কুম্ভের সন্ধানে পুরুষ, সষ্টির আদি থেকে তৎপর। এই অমৃত কুন্ডের বারি তথা-কালিদাসের ভাষায় হেমকুম্ভস্তন দুগ্ধের রসােদকের আশায় পুরুষে যুগযুগের পিয়াসী। পরিপুর্ণ একটি হেমকুম্ভস্তন যুগ নারী দেহছাপ অমৃতকুম্ভ চোখের সামনে পড়লে কোন পুরুষ বা নিশ্চেষ্ট নিষ্ক্রিয় থাকতে পারে?
বহু পরিবারের প্রধান তত্বাবধায়ক মমিয় দ্যুফাউ এর অবস্থা হােল ঠিক তাই। তাসারেততাকে দেখে।
শীতের পর।
তাসারেততা একটা খেয়া নৌকোয় নদী পার হতে রাস্তা ধরে সােজা হেটে চলেছে। তাকে কতকগুলাে কাচা জামা কাপড় পোঁছে দিতে হবে খদ্দেরদের বাড়ি, এমন সময় মসিয় দুফাউ এর শিকারী নজর পড়ল ওর ওপর। দুফাউ তখন ঐ একই রাস্তা ধরে আসছিল ফেরি ধরবার জন্য। তাসারেতার দেহের উদ্বেলিত তরঙ্গায়িত ধারাল যৌবন তাকে প্রবলভাবে আকৃষ্ট করল। বিমুগ্ধও।
নদীর পারের কাছাকাছি এক জায়গায় বসে কাজ করছিল এক বন্ধু। দুফাউ ওকে জিজ্ঞাসা করল-মেয়েটা কে, বলতে পারাে হে ?
-ঐ মেয়েটা। ওর। ওর নাম তাসারেততা। ধােপানী খুব ভাল কাপড় কাচে আর রঙ ও করে মসিয়।
-তাই নাকি! বেড়ে দেখতে তাে ?
-হা স্যার। চমৎকার।
-ওর বিয়ে হয়েছে ?
-হ্যা স্যার। ওর স্বামী বুড়াে তাসারু।
-বুড়ো?
-হ্যা মসিয়, বুড়ো। তবে একেবারে বাহাত্তুরে বড়ো নয় স্যার। আবার ঠিক ছােকরাও নয়।
-সেকি। তাতে মেয়েটা খুশি?
-হ্যা মসিয়, তাই তাে আমরা জানি।
-ওর নামে কেউ কিছু বলে না।
-না স্যার। আমি কোনদিন শুনিনি। তবে ভারি ফুর্তিবাজ মেয়ে। সব সময় নিজের আনন্দে নিজে মেতে আছে। ভারি ভালো মেয়ে সার। তাছাড়া কাজও খুব ভালাে করে।
-হ:। তাহলে তাে একে দিয়েই জামাকাপড় কাঁচাতে হয়, কি বল ?
-কাচান না স্যার। খুব ভাল হবে। ডেকে দেবাে ?
-ডাকো না।
–তাসা, তাসা। বলে ডেকে উঠল বৃদ্ধ লােকটা তাসারে তার দিকে তাকিয়ে।
ডাক নেই তাসারেততা ঘাড় ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। কাপড়ের গাঁট কোমরে নিয়ে।
বল তাসারেততার দিকে হাত ইশারা করে চাঁচল বলে উঠল। এদিকে এস তাে তাসা। মসিয় ডাকছেন।
তাসারেতা হাসতে হাসতে দুলতে দুলতে এগিয়ে এসে দাঁড়াল ওদের সামনে।
বৃদ্ধ বলল, মসিয় ডেকেছেন।
তাসারেততা তাকালাে দুফাউ এর দিকে। দুজনের দৃষ্টির সংঘাত হল। বিদুৎ চমকে উঠল দুফাউয়ের বুকের মধ্যে।
তাসারেততার দৃষ্টি পানে দুফাউয়ের দু চোখের তারা দুটো স্থির হয়ে গেল।
একটা রজকী একটা সামান্য পােপানীর দেহে যে এত যৌবন সম্পদ, চোখের নজরে যে এত জাদু থাকতে পারে, তা মসিয়ে দ্যাুফউয়ের কল্পনায় এলাে না।
অবাক হয়ে রইল মসিয়ে দুফাউ।
কথা বলতে চাইছে। কিন্তু কথা বেরচ্ছে না মুখ থেকে তারপর অকস্মাৎ বলে উঠল।
-আমার অনেক দামি দামি জামা-কাপড় আছে। তুমি কাচতে পারবে। আমি রাজবাড়ির লােক।
রাজবাড়ির লােক শুনে তাসারেততার আনন্দের আর সীমা রইল না। অদ্ভুত গ্রীবা ভঙ্গিমা করে দুই অধরের মাঝে চিকন হাসির রেখা টেনে বলল।
-আপনি রাজবাড়ির লােক। খুব ভাগ্য আমার। নিশ্চয়ই কাচবাে মসিয়। আপনার ঠিকানা। কবে যাবাে।
-তােমায় যেতে হবে না। আমিই পাঠিয়ে দেবাে। তােমার ঠিকানাটা বলল। হ্যাঁ তবে কাচা কাপড় গুলাে তুমিই পৌছে দিয়ে এসাে। কেন না আমায় পরখ করে যাচাই করে দেখে নিতে হবে তাে সে গুলাে।
—তা তাে নিশ্চয়ই। ঠিক আছে, আমিই পৌঁছে দিয়ে আসবাে কাচা কাপড়। আমার ঠিকানা হলাে পােঠিলো। সবাই আমায় চেনে। আমার নাম যাকে জিজ্ঞেস করবেন সেই বাড়ি দেখিয়ে দেবে।
-ওঃ পােঠিলোঁতে থাক তুমি। ঠিক আছে। আজ আর হবে না। কাল আমার লােক তােমার বাড়ি যাবে জামা-কাপড় নিয়ে। এই নাও আমার ঠিকানা।
বলেই দুফাউ পকেট থেকে একটি কার্ড বার করে তাসারেততার হাতে দিল। দিয়েই পর মুহুর্তে আবার বলে উঠল।
-আচ্ছা আদিউ (মোঁসিয় বিদায় আমার প্রিয়) ৰলেই দুফাউ নিজের ডান হাত দিয়ে তাসারেততার নরম চিবুক ধরে একটু নাড়া দিয়ে সেই হাত আবার নিজের ঠোটে ঠেকিয়ে সেখান থেকে বিদায় নিল।
নদীর ঘাটে তখন পারাপারের খেয়া এসে ভিড়েছে। দুফাউ উঠল গিয়ে সেই খেয়াতে। খেয়া থেকে আর একবার তাসারেততাকে দৃষ্টি দিয়ে লেহন করবার চেষ্টা করল। অনেক কষ্টে দেখতে পেল বটে। কিন্তু ওর মুখ দেখতে পেল না। দেখতে পেল ওর সুস্পষ্ট বলাকার নিতম্বের কতকাংশ। যেন এক অপুর্ব নৃত্য ভঙ্গিমায়। যেন হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকছে তাকে।
আনমনে পথ হাঁটছে তাসারেততা। হাঁটছে আর মনে মনে দুফাউ-এর সঙ্গে সদ্য পরিচয় পর্বের স্মৃতি রােমন্থন করে চলেছে। সব কথা ভেবে বেশ আনন্দ পাচ্ছে। মাঝে মাঝে আপন মনেই হেসে উঠছে।
সেদিন বাড়ি ফিরে তাসারেততা আবার নিজের ব্যবসার কাজেই মন দিল। মনে খুব আনন্দ। কেন না রাজবাড়ির লােক দুফাউ ওর কাছে কাপড় কাচাবে। তাছাড়া দুফাউ ওকে আদর করেছে। বাড়ী ফিরে পাড়াপড়শি সবার কাছে শুধু দুফাউ এর গল্প। তার প্রশংসা।
সেদিন ঠাণ্ডটা একটু বেশি। রাত বেশি নয়। কাজ করে চলেছে তাসারেততা। একজন পড়শি আর একজন পড়শিকে বলল।
-হ্যাঁ, এই ঠাণ্ডার মধ্যে তাসারেততা এখনাে কাজ করছে, কি ব্যাপার বল তাে।
ব্যাপার আর কি মনে সুখ আছে। বলল, অপর পড়শি মেয়েছেলেটা।
-সুখ। কিসের সুখ রে ভাই। কাপড় কেচে তত খেতে হয়। এতে আমার সুখ কিসের।
-তুই জানিস নে
-না, কি করে জানব?
-সেকি রে, পাড়াময় যে রটে গেছে
-পড়াময়? কি ব্যাপার বল তাে।
-আরে ভাই, সেই বিকেল থেকে কেবল দুফাউ আর দুফাউ।
-সেটা আবার কে।
-ওমা, দুফাউ এর নাম শুনিস নি।
-না তাে ভাই।
-তবে ই আর শহরে থাকিস নে।
—কি আছে। বল না বাবা, কে তােদের এই দুফাউ।
-রাজবাড়ির হত্তাকত্তা।
-তাতে তাসারেততার কি হলাে?
-দুফাউ এখন থেকে ওর কাছেই জামাকাপড় কাচাবে তাই ওর মনে এত আনন্দ। এত ঠাণ্ডায় ও কাজ করে চলেছে।
-বেশ তাে। পয়সা দিয়ে জামা-কাপড় কাচাবে দুফাউ। এতে তাসারেততার এত ফুর্তির কি হলাে?
-আরে ভাই তােকে বােঝানাে দায় দেখছি। বুঝতে পারছিস না, দুফাউকে ও চায়। দুফাউ ওকে আদর করেছে। ও দুফাউয়ের পীরিতে পড়েছে। এবার বুঝেছো হাদা মেয়ে।
—ও এই কথা, তা ভাল। তাহলে তো তাসারেততার এবার বরাৎ ফিরে যাবে।
-তা যেতে পারে। তাসারেততা ছুড়ির গতরের চেকনাই তাে কম নয়? দেখলে মনির মন গলে, মাথা ঘােরে।
যদি একবার নজরে পড়ে যায়, পড়ে যায় কেন, হয়ত পড়েই গেছে। যদি তাই হয় তবে আর ওকে দেখে কে?
-তা ভাল।
—ভাল বলে ভাল। ভগবান যখন যার দিকে তাকান এমনি করেই তাকান। তোর আমার তাে আর যৌবনের বালাই নেই। কাজে কাজেই ভগবান মুখে তুলে চান না।
-ঠিকই বলেছিস ভাই।
—আমি ঠিকই বলি। বেঠিক বলি না। তবে একটা কথা ভাই
-কি!
-বলি, তাের আমারও তাে একদিন যৌবন ছিল। না ছিল না।
—তা ছিল বই কি। কিন্তু ভগবান কি তাকিয়েছেন আমাদের মুখের দিকে?
-না ভাই। -তবে? একেই বলে ভাগ্য। ভাগ্য আমাদের নেই।
-আর ভাগ্য! ভাগ্য থাকলে আর এরকম হবে কেন। যাক গে। এ তাসারেততার বরাতটাই না হয় ফিরুক। হাজার হলেও তত তাসা আমাদের পড়শি। আর কিছু না হােক। অন্তত একদিন ওর কাছ থেকে ভালমন্দ খাওয়া আদায় করা যাবে।
-তা যা বলেছিস! আমাদের ঐটুকুই লাভ। বলেই দুজনে হাে হাে করে হেসে উঠল।
পরের দিন যথা সময়ে দুফাউয়ের লােক এসে জামা কাপড় দিয়ে গেল তাসারেততাকে।
তাসারেততাও দুফাউয়ের জামাকাপড় খুবই যত্নের সঙ্গেই কেচে রঙ আর ইস্তারি করে যথা সময়ে সেগুলাে নিয়ে পৌঁছে দিতে গেল নিজে দুফাউয়ের হােটেলে।
দুফাউ তখন ঘরেই ছিল। খুব জমকালাে ঘর। একটা সােফায় বসে চুরুট টানতে টানতে অনর্গল ধোয়া ছেড়ে চলেছে।
তাসারে তার কাছে দুফাউয়ের কার্ড ছিল। রুম নাম্বার দেখে সোজা হাজির হল গিয়ে দুফাউ এর ঘরে।
তাসারেততকে দেখা মাত্রই দুফাউ সােফা ছেড়ে আনন্দে লাফিয়ে উঠল। তাসারেততার হাত থেকে নিজেই জামা-কাপড় নিয়ে একটা দেরাজের মধ্যে রেখে দিয়ে আবার সোফায় বসল।
তারপর লালসালােল দৃষ্টিতে তাসারেততার দিকে তাকিয়ে ওর একটা হাত ধরে নিজের পাশে বসিয়ে ওর রুপ যৌবনের ভূয়সী প্রশংসা করতে আরম্ভ করল।
বলল—সত্যি তােমাকে খাসা দেখতে তাসারেততা। আমার খুব ভাল লেগেছে তােমাকে। বলেই তাসারেততার একটা হাত নিজের দুহাতের মধ্যে নিয়ে চটকাতে আরম্ভ করল যৌন উত্তেজনা বােধ করে। তার দেহের চাঞ্চল্য সেই সময় স্পষ্ট লক্ষ্য করা যাচ্ছিল।
এই অযাচিত ও অপ্রত্যাশিত গায়ে পড়া অশােভন আদর সােহাগে তাসারেততা প্রথমটা বেশ বিরক্তি ও অস্বস্তি বােধ করছিল। কিন্তু পরক্ষণেই তার মনের ভাব পালটে গেল। নিজের মনে মনেই বলে উঠল, যাক, তাহলে দুফাউয়ের ভাল লেগেছে আমাকে। তা লাগবে নাই বা কেন? আমি কি কিছু কমতি যাই ? আমার যৌবনের ঠ্যালা সামলানাে অনেক বার দায়। যদিও আমি সবার ঠ্যালা সামলাতে জানি। অনেকেরই দৌড় দেখেছি। বলে না মােল্লার দৌড় মসজিদ অবধি। ব্যাটাছেলের মুরোদ কত তা ভালই জানা আছে। আদালতে মামলা উঠবার আগেই মােকদ্দমা ডিসমিস অনেক তাবড় তাবড় মহাপ্রভুরই ! এক মিনিটের মরদ।
যাক বাবা। কিছু তাে বলা যাবে না। রাজ বাড়ির লােক। কিসে কি হয়ে যাবে। চুপ করে থাকাই ভাল। তবে যদি একবার দয়া হয় তাহলে আমার বরাত ফিরে যাবে। একথা ঠিক। চুপ করে বসে রইল তাসারেততা। কিছু আনন্দে কিছু আতঙ্কে। কিন্তু মনের মধ্যে আশা আকাংখার নানা আকাশ কুসুম স্বপ্ন গড়ে তুলতে লাগল নিমিষের মধ্যে।
দুফাউ এবার নিজের ঠোট দুটো তাসারেততার ঘাড়ের সঙ্গে ঠেকিয়ে বলল, তাসা,! তুমি এত সুন্দর। যা ভাল লেগেছে তােমাকে আমার। জামা কাপড় কাচার জন্যে তােমার ন্যায্য মজুরী তা তাে তুমি পাবেই, তা ছাড়া আরাে অনেক কিছু পাবে। অনেক। এমন জিনিস তােমায় দেব যা তুমি ভাবতেই পার নয়।
এইখানেই কথা শেষ করল দুফাউ। কিন্তু তাসা ওর ঘাড়ের ওপর বিষের কামড়ের মত একটা জালা অনুভব, করল। তাসারে তার ডান হাতটা টেনে নিয়ে দুফাউ রাখল তার বুকের মাঝখানে। চমকে উঠল তাসারেততা। ফনা তােলা ক্রশ বিষধর সাপের যেন হাত পড়ল ওর।
নরম হাতে আবার সেই বিছের কামড়। কিন্তু এবার তা জালা বলে মনে হল না তাসারেততার কাছে। মনে হল নন্দন কাননের কোন এক অমত কীট এসে ওকে দংশন করে গেল। শিরায় শিরায় এক অনির্বচনীয় সুখানুভূতি। তাসারেত বসে রইল মন্ত্রমুগ্ধের মত। ও টের পাচ্ছিল উত্তেজনায় ওরও থর। থর অবস্থা। তাই আবেগে কম্পমান। বিস্ফারিত। বেপথ দুফাউ বলল, কি তাসা, কথা বল ?
—আমি আর কি বলব মসিয়। সবই আপনার ইচ্ছে।
তা হলে আমার ইচ্ছেই তােমার ইচ্ছে তাে ?
—তা ছাড়া আর কি মসিয় । আপনি খুশি হলেই আমার আনন্দ। তাহলে এখন যা দেবার দিন।
নিশ্চয় দেব। এক্ষনি দেব। এতো দেবাে যে তুমি খুশি না হয়েই পারবে না তাসা।
–ঠিক আছে। খুশি করুন আমাকে। তার কথা শেষ হবার আগেই জোরে জাপটে ধরল তাকে দুফাউ। এই কথােপকথনের একটু পরেই দুফাউের খােদ চাপরাশি কিছু জরুরি কাগজপত্তর নিয়ে ঘরে ঢুকতে যাবে দেখে দরজা বন্ধ।
ঘরের মধ্যে একটা ডিম লাইট জলছে বটে। কিন্তু এ সময়ে দরজা বন্ধ দেখে চাপরাশি একটু অবাক হয়ে গেল। দরজায় কান পেতে কিছু বুঝবার না কিছু শুনবার চেষ্টা করল চাপরাশি।
মনে হল বন্ধ ঘরের ভেতরে বিছানার ওপর চলেছে প্রবল ধতাধস্তি। দাপাদাপি। ওলট পালট। নারী পুরুষের সেই আদিম শয্যাসংঘর্ষ নয়তাে? শব্দের ধরণ যে অনেকটা তারই মত।
চাবিগর্তে চোখ রেখে ভেতরের দৃশ্য দেখবার চেষ্টা করল চাপরাশি। কিন্তু বৃথা। শুধু শব্দটা শুনতে পেল। সেই সঙ্গে চাপা কান্না গােঙানির মত আওয়াজ কি।
অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে তারপর বিরক্ত হয়ে চলে গেল নীচে। চাপরাশির কানের পাশ দুটো গরম হয়ে হয়ে উঠল।
প্রায় আধঘণ্টা পর তাসারেততা বেরিয়ে এল দুফাউয়ের ঘর থেকে। দুফাউ তখন তাসারেততার ফেনিলােছল যৌবন সুরা পান করে মাতাল হয়ে পড়ে আছে বিছানায়। তার পাজামার দড়ি ঢিলে। কসি আলগাে চটচটে ভিজে এখানে ওখানে।
তাসারেত হােটেলের সিড়ি দিয়ে নেমে চলছে অত্যন্ত ক্ষিপ্ত ভাবে । চোখে ওর জল। মাথার চুল এলােমেলো। উস্কো খস্কো। পরণের পােষাক বিধ্বস্ত। বেসামাল। খুজলে ভেজা দাগ মিলে যাবে এখানে ওখানে। কিসের তা না বললেও চলে। ওর চেহারাটা এমন দাঁড়িয়েছে যে বলে বােঝানাে যায় না।
খেতে বসে পাতের কাছে এক চিলতে পাতি লেবকে টিপে খেলে সেটাকে যেমন দেখতে লাগে তাসারেততার চেহারাটা দেখতে এখন সেই রকমই লাগছে।
ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে কিছু রাগে, কিছু অভিমানে সিড়ি দিয়ে নামতে আরম্ভ করল তাসারেতা। সবাই অবাক হন ওর এই হাল দেখে। কিন্তু আসলে ব্যাপারটা কি তা তাে আর কেউ দেখেনি বা জানে না। | তবু কি আশ্চর্য; খবরটা মুহুর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল সারা হােটেলময়। যে তাসারেত দুফাউয়ের হাতে লাণ্ছিত হয়েছে। লােকটা নিজ ঘরের দরজা বন্ধ করে দষ্যুর মত নির্মমভাবে ইচ্ছার বিরুদ্ধে লুণ্ঠন করেছে তাসারেততার যৌবন। মিথ্যা উপহারের আশ্বাসে তাকে প্রলুব্ধ করে। যা এক্ষেত্রে এক নিদারুণ অশ্লীল বিদ্রপ বা কৌতুক ছাড়া আর কিছুই নয়।
লান্ছিত অপমানিত হয়ে হােটেল থেকে বেরিয়ে তাসারে হাজির হল গিয়ে সােজা এক জজ সাহেবের বাড়ী।
সেদিন ছুটির দিন। জজ সাহেব বাড়িতে ছিলেন না। সান্ধ্য ভ্রমনে বেরিয়েছিলাে। জজ সাহেবের চাপরাশির জিজ্ঞাসার উত্তরে তাসারেতত বলল রাজবাড়ির দুফাউ টাকা পয়সা উপহারের লােভ দেখিয়ে তার লাজ লজ্জআ মানবসম্ভ্রম সব নষ্ট করে দিয়েছে। অথচ তার জন্য একটি পয়সাও ঠেকায়নি তাকে। বলল
-এ ধরণের ব্যাপার আর একবার হয়েছিল আমার। সেটা এক পাদরির সঙ্গে। সে আমাকে অনেক টাকা দিয়েছিল। আজ এই আবাগীর বেল অনামুখাে হাড় হাভাতে চোখখেকো মিনসে আমায় ঠকালাে। আমার সব জবরদস্তি লুটে নিল একটি পাই পয়সাও না ঠেকিয়ে। কি বলব ভাই মুখে আটকাচ্ছে, মিনশে আমায়…আমাকে দিয়েও ওর……আর সব কিছু করতে বাধ্য করেছে…আমার বুক ফেটে কান্না আসছে ভাই। কি বল এরকম দুশমন এরকম হাড়ে হারামজাদা বজজাত বেতমিজ বেতমিজ লােকও থাকে। হ্যা তবে আমি যদি কোন লোককে ভালবেসে তার সঙ্গে কিছু করি তাতে কোন দোষ নেই। কেননা সেটা আমার আনন্দের ব্যাপার। কিন্তু দুফাউকে তাে আমি ভালবাসিনি। ও আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমার সঙ্গে অকাজ কুকাজ করেছে। আমাকে বলাৎকার করেছে। এরজন্য অন্তত হাজার ক্রাউন ওর দেয়া উচিত আমাকে খেসারত স্বরুপে।
এই পর্যন্ত বলেই তাসারেততা থেমে গেল! ওর চোখে এখন আর জল’ নেই…তবে মনের ব্যথার দরুণ ওর ঘনঘন নিঃশ্বাষ পড়ছে। আর বুকটা ওঠানামা করছে।
ইতিমধ্যে জজ সাহেব ঘরে ঢুকলাে। চাপরাশিকে সংকেত করতেই চাপরাশি ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। তাসারেততাকে দেখেই জজসাহেবের পঞ্চইন্দ্রিয়ের এক ইন্দ্রিয়—এই আকর্ষনীয় তরুণী নারীর আসঙ্গ-লিপসায় উত্তেজিত হয়ে উঠল।
আস্তে আস্তে তাসারেততার কাছে এগিয়ে গিয়ে ওর গায়ে গা বেয়ে দাড়াল।
তারপর নিজের নিজের ঠোঁট দুটো যতদূর সম্ভব তাসারেততার নরম ঠোঠ দুটোর কাছে নিয়ে গিয়ে ধরল। আশা, যদি তাসার অধর পাত্র থেকে কিছু শীতল দ্রাক্ষারস গড়িয়ে পড়ে নিজের অধরপত্রে।
কিন্তু তা হলো না। নেড়া বেলতলায় বারবার যায় না। তাসারে নিজেকে সামলে নিল। জজ সাহেবও সােজা হয়ে দাড়িয়ে পড়ল।
তাসারেতা বলল, আমি আপনার কাছে নালিশ জানাতে এসেছি ধর্মাবতার।
-“নালিশ? নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই। কে তােমার কি করেছে বল, আমি তাকে ফাঁসিতে ঝােলাবাে। তােমার জন্যে সব করতে পারি আমি। তবে আমাকে একটু দেখাে।
-তা দেখব জজ সাহেব। আগে আমার নালিশটাই শুনুন।
-বল বল।
-মসিয় দুফাউকে আপনি চেনেন ?
-চিনি না। তবে নাম শনেছি। কি করেছে তােমার?
-আমার সর্বনাশ করেছে।
-সর্বনাশ! সেকি! চুরি ?
—হ্যাঁ, চুরি তাে বটেই। আমি ওকে আমার জিনিস নিতে দেবাে না। কিন্তু ও চুরি করে নেয়া দুরের কথা, দ্ষ্যু বৃত্তি করেছে।
-জোর করে?
-হ্যা, জোর করে।
-সে কি করে হল? গৃহস্থ যদি সজাগ থাকে তাহলে কি কেউ চুরি কিংবা দস্যুবৃত্তি করতে পারে ?
-কেন, পিস্তল বা বন্দুক দেখিয়ে হয় না ?
—তা হয় বটে।
—এটাও ঠিক সেই ধরণের ধর্মাতার।
-আচ্ছা দুফাউ তো রাজবাড়ির লােক শুনি। ওর তাে কোন অভাব নেই। পয়সা আছে নিশ্চয়ই। কিন্তু তবু তােমার ঘরে চুরি বা দত্তি করতে গেল কেন, জবরদস্তি মেয়ে মানুষের শরীর সঙ্গে ।
ওটা হলাে এক এক ধরণের ব্যাটাছেলের স্বভাব। অবলাদের উপর বলপ্রয়ােগ। গাজোরি জুলুম। মেয়েদের ইচ্ছা অনিচ্ছার তােয়াক্কা না করে তাদের সঙ্গে সহবাস। একেই আপনারা বলেন ধর্ষকামিতা না কি। দফাউয়ের মেয়ের অভাব না থাকলে হবে কি। আরাে চাই। নিত্য নতুন। কচি কচি নারী দেহ। আমার মত।
-আমি ঠিক বুঝতে পারছি না তােমার কথা। বুঝতে পারছেন না জজ সাহেব।
-না। ঠিক ঢুকছে না মাথায়। একটু বুঝিয়ে বল।
-আমাকে দেখছেন তাে ?
-তা তাে দেখছি।
-কি রকম দেখতে আমি ?
—ভারি সুন্দর।
-আমার এই শরীরটাও তাে একটা ঘর জজ সাহেব। বলুন ঠিক কি ?
নিশ্চয়ই। ঘর বইকি! এরকম ঘর আর হয় না।
-এই ঘরে দরজা ঠেলে জোর করে ঢুকে দুফাউ দস্যুপনা করেছে। শুধু তাই নয়, পাকা তস্করের মত বিদায়ের আগে কাজ হাসিলের নিশানা চিহ্ন রেখে গেছে গেরস্থ ঘরের আঙিনায়। মলমূত্র ত্যাগের মত পুরুষ শরীরের কোম্পানি নিষ্কাষণ করে আমার দেহের অন্দরে।
এইবার হাে হাে করে হেসে উঠল জজ সাহেব। ও এই ব্যাপার। এখন কি করতে হবে আমাকে?
-দুফাউয়ের ফাসি হােক, তা আমি চাইনে। তবে আমার ক্ষতিপরণ চাই।
-কি ভাবে ?
—একটি হাজার ক্রাউন। এর কম নয়। এই এক হাজারেই আমার হবে। আমি ধােপানীর কাজ ছেড়ে দিয়ে অন্য ব্যবসা করব।
-আচ্ছা দুফাউয়ের তাে বেশ পয়সা আছে শুনেছি। তায় আবার রাজবাড়ির হর্তাকর্তা।
মাথা চুলকোতে চুলকোতে মুখে নিচু করে একটু চিন্তা করল জজ সাহেব। তারপর তাসারেততার দিকে মুখ তুলে বলল ঠিক আছে। তুমি যখন বিচারই চাও তখন বিচারই হবে। তবে ঘটনাটা কিভাবে ঘটল সেটা আমার জানা দরকার। তা না হলে কেস সাজাবাে কি করে?
-তাহলে শুনুন।
-বলে যাও।
-দুফাউ ওর জামা কাপড় কাচতে পাঠিয়ে ছিল আমার কাছে। রাস্তায় ওর সঙ্গে আলাপ। আমি কাচা কাপড় পৌছে দিতে যাই ওর হোটেলে। ঘরে ঢােকা মাত্রই দুফাউ আমাকে ওর পাশে বসিয়ে খুব আদর করতে আরম্ভ করল। এই ফাঁক তালে গাল টেপা, কোমর জড়িয়ে ধরা…স্তন উরু নিতম্বে হাত রাখা… আস্তে আস্তে চাপ দেয়া এই সব আর কি। আমার রুপ যৌবনেরও খুব প্রশংসা করল।
-ঠিক করেছে। তারপর।
-তারপর বলল আমার যা ন্যায্য মজুরি তার চেয়েও অনেক কিছু বেশি দেবে আমাকে।
-তুমি রাজি হলে?
—কি করব হর। গরিব মানুষ। রাজী না হয়ে কি পারি বলন!
—তা ঠিক। তারপর দফাউ কি করল?
আমার হাত ধরে, আমার মাথার চুল ধরে খুব আদর করতে লাগল। আমার মুঠো করা নরম হাতের তেলােতে খাড়াভাবে ওর আঙ্গুল বসিয়ে খোচা মেরে ইঙ্গিতটা তাে বুঝতে পারছেন, বলে লজ্জায় মাথা নিচু করল তেসারেততা।
-তুমি কোন আপত্তি করলে না?
-না হজর।
-ঠিক আছে তারপর?
-তারপর হঠাৎ মনে হলাে আমার ঘাড়ে যেন একটা বােলতা এসে কামড়ে দিয়ে গেল।
-হাে হাে করে হেসে উঠল, জজসাহেব। তারপর হাসি থামিয়ে বলল, ঘাড়টা জলে গেল নিশ্চয়ই।
-তা একট, জলেছে বৈকি।
-তবু তুমি কিছু বললে না ?
-না। তখনাে আমি আমার ন্যায্য মজরি পাই নি।
-কেন? মজুরি দেবে না বলেছিল?
-না তা বলে নি।
—তবে ? বলেছিল আমাকে খুশি করবে।
-তুমি কি বলেছিলে ?
-আমি বললাম মসয় আপনার ইচ্ছে।
-দফাউ কি বলল? বলল তাহলে আমার ইচ্ছেই তােমার ইচ্ছে তাে।
-তুমি কি বললে?
-আমি বললাম, হ্যাঁ মসিও, তা ছাড়া আর কি।
হাে হাে করে হেসে উঠল জজ সাহেব। বলল তােমার কোন কেসই হতে পারে না। আমি তােমার কেস টেক-আপ করতে পারি না। কারণ তুমি এমনই একটা জবাব দিয়ােছ যাতে দুফাউ মনে করেছে ও যা চায় তাতে তুমি রাজি আছে। কাজেই কি করে কেস হতে পারে। আমি কি জবানবন্দি নেবাে তােমার কাছ থেকে কোর্টে । তুমি এখন যা বললে আমার কাছে। তাতে তো তুমি হেরে যাবে। বলেই আবার হাে হো করে হাসতে আরম্ভ করল জজ সাহেব।
তরল মতি তাসারেততা বলল।
আপনি হাসবেন না জজ সাহেব। আমার দিকটা একবার ভেবে দেখুন। আমি অনেক চেষ্টা করেছি নিজেকে বাঁচাবার জন্যে। কেদেছি দুফাউয়ের হাতে পায়ে ধরেছি আমাকে রেহাই দেবার জন্যে। গায়ের জোরে আমাতে উপগত হবার জন্য। কিন্তু তবু ছাড়া পাই নি।
জজ সাহেব একটা চুরুট ধরিয়ে একগাল ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বলল।
ওসব কান্নাকাটি হাতে পায়ে ধরা আসলে তােমাদের ছেনালিপনা। ও রকম না করলে ব্যাটাছেলের রােখ চাপবে কেন? যাতে দুফাউ রেগে যায়, ওর গা গরম হয়ে ওঠে, সে জন্যে তুমি ঐসব ছেনালিপনা করেছো। আসলে তােমার মনের উদ্দেশ্য খারাপ ছিল।
জজ সাহেবের কথায় তাসারেততা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেদে উঠে বলল
— না অজ সাহেব। আপনি বিশ্বাস করেন। আমার মোটেই ইচ্ছে ছিল না ওভাবে দেহ দেবার। একদম না। আমি আমার মজুরির জন্যই এসেছিলাম। দফাউ জবর-দস্তি ধর্ষণই করেছে আমায়। আমার কোমরজড়িয়ে ধরে জোর করে বিছানায় শুইয়ে দিয়েছে। আমি ওকে শােওয়া অবস্থায়ই লাথি মেরেছি। হাত কামড়ে ধরেছি। কিন্তু তাও পারি নি। ওর ইচ্ছা পুরণ করেছে। বিশ্বাস করুন জজ সাহেব আমি একটুও মিথ্যে কথা বলছি ।
-ঠিক আছে আমি তােমার কথা না হয় বিশ্বাসই করলাম। কিন্তু এর মধ্যেও একটা কথা আছে।
—বলুন কি কথা।
– দফাউ জবরদস্তি করেছে মানলাম। কিন্তু তুমি তাে খুশি হয়েছে।
-মােটেই না জজ সাহেব। আমি মােটেই খুশি হই নি। আমার বুক ফেটে কান্না পাচ্ছে। যা হবার তা তাে হয়েই গেছে। কিন্তু আমি এর বিচার চাই। এর প্রতিশােধ চাই। আর তা না হয় তাে পরে একটি হাজার ক্রাউন। তবে যদি আমার দুঃখ খোচে।
—সবই মানলাম তাসারে । কিন্তু তবু আমি তােমার কেস টেকআপ করতে পারি না। তার কারণ আমার বিশ্বাস একটা মেয়েছেলের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন পুরুষ মানুষই তাকে কোন সম্ভোগ করতে পারে না।
-এ আপনার ভুল ধারণা, জজ সাহেব। আপনি জানেন না সবল পুরুষ মানুষের কাছে মেয়েরা কত অসহায়। বিপদে পড়লেও তাই। আপনার সে সবন্ধে কোন ধারনাই নেই দেখছি। আমি আপনার পা ছুয়ে দিব্যি করে বলতে পারি আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যা ঘটবার ঘটেছে। অর্থাৎ দুফাউয়ের সাথে যৌন সংযােগ। বলেই তাসারেতা জজ সাহেবের দুটো পায়ে হাত দিতে গেল।
জজ সাহেব বলল থাক থাক। পায়ে হাত দিতে হবে না। আমি তােমার কথাই বিশ্বাস করলাম। তবু একটা কথা।
– বলুন।
-আমি তাে জজ।
-নিশ্চয়ই।
-আচ্ছা ধর, আমার এই ঘরটাই না হয় আদালত। আমি এই ঘরে বসেই তােমাকে নানা রকম ভাবে জেরাই বল, আর পরীক্ষাই বল, সব করতে পারি।
নিশ্চয়ই পারেন। তবে আমার ঐ এক হাজার ক্রাউনই চাই। এর কমে আমি কিছুতেই রাজি হব না।
-তা তুমি পাবে। আমি আদায় করে দেবাে। আগে পরীক্ষায় তাে পাশ কর।
–ঠিক আছে। আমি তৈরি।
জ্যাক। হাক ছাড়ল সাহেব চাপরাশির উদ্দেশ্যে। সঙ্গে সঙ্গে জ্যাক এসে সেলাম ঠাকে দাঁড়াল।
জজ সাহেব জ্যাকের দিকে তাকিয়ে বলল,-আমি যে বড় ছুচটা দিয়ে কোটের সব নথিপত্র সেলাই করে গেথে রাখি, সেই ছুচটা আর একগাছা টোন সুতাে নিয়ে এসাে তত জ্যাক।
ঘর থেকে আবার সেলাম জানিয়ে বেরিয়ে গেল জ্যাক। তিন মিনিটের মধ্যে ছুচ আর সুতা নিয়ে আবার এসে উপস্থিত হলাে।
জজ সাহেব জ্যাকের দিকে হাত বাড়িয়ে বলল, দাও আমাকে। জ্যাক ছুচ আর সুতো দুইই তুলে দিল জজ সাহেবের হাতে। জজ সাহেব বলল, তুমি চলে যাও। জাক চলে গেল সেলাম ঠকে।
জজ সাহেব ছুচটা নিজের হাতে রেখে আর সুতোটা তাসারে তার হাতে দিয়ে বলল, আচ্ছা তাসা। এই ছুচটা তাে বেশ বড় তাই না?
-হ্যাঁ।
—গর্তটাও এর বড় ?
-হ্যাঁ।
-তােমার হাতে সুতা আছে ?
-আছে জজ সাহেব।
এবার তাহলে আমি ছুচটাকে সােজা করে ধরছি। তুমি তােমার হাতের ঐ সুতাটাকে আমার হাতের এই ছুচের গর্তের মধ্যে গলিয়ে দাও তাে দেখি। যদি পার তাহলে আমি তোমার কেস টেক আপ করব। আর তা না হলে নয়।
বলেই জজ সাহেব ছ’চটাকে একেবারে সােজা করে শক্ত করে ধরে বসে রইল।
জজ সাহেব ভারি রসিক ও বহু প্রিয় ব্যক্তি। মনে মনে চিন্তা করল দেখি এই বিদ্যাধরী সুন্দরী কি করে।
তাসারে সুতাটাকে বেশ ভালাে করে পাকিয়ে নিয়ে সোজা করে যেই ছুচের গর্তের মধ্যে ঢােকাতে যাবে অমনি জজসাহেব হাত নাড়িয়ে দিল।
তাসারেততা লক্ষ্যভ্রষ্ট হল। সুতাটা ছুচের গর্তের মধ্যে না ঢুকে পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল।
এই ভাবে যতবার তাসারেততা ছুচের গর্তে সুতা পরাতে যায় ততবার জজসাহেব চালাকি করে তার লক্ষ্য করে দেয়-সুতাে ধরা হাতটা শেষ মুহুর্তে নাড়িয়ে দিয়ে আর যাতে ছুচটা ঘুরিয়ে দিয়ে। ফলে তাসারেততা হাতের সুতাের মুখ আর কিছুতেই ছুচের গর্তে ঢুকতে পায় না।
তাসারেত হয়রান হয়ে গেল। হাঁফাতে হাফাতে বলল, ঐরকম করলে আমি আর পারবাে না জজ সাহেব।
-তাহলে এবার ভেবে দেখ তাসারেতা। তুমি যদি আমার হাতের এই দু’চটার মত কায়দা করতে তাহলে মসিয় দুফাউ কিছুতেই তার উদ্দেশ্য সিদ্ধ করতে পারত না তােমায় দিয়ে। তার হাতের মতাে হাতেই ধরা থেকে যেত। তােমার সুচের গর্তে আর তার প্রবেশলাভ ঘটত না। বলল জজ সাহেব। তার মুখে দুষ্টমির হাসি।
তাসারেত বলল—আপনার ভুল ধারণা জজ সাহেব। আপনার কোন অভিজ্ঞতাই নেই। তাই একথা বলছেন।
-বলছি তাসা। তবে অভিজ্ঞতা নেই তাও ঠিক তাই বলে আমার কথ্া তুমি একেবারে ফেলে দিতে পারাে না।
-তা পারি না বটে। তবে দুফাউ যে কত বড় শয়তান তা, আপনি ধারণা করতে পারবেন না। আমি অনেকক্ষণ পর্যন্ত ওকে রুখে ছিলাম ঠিক আপনার প্রদর্শিত কৌশলে। ও আমার সঙ্গে না পেরে শেষে অন্য কায়দা ধরে।
—সেটা আবার কি?
—আপনি ছুচটা ধরে থাকুন, আমি বলছি। জজ সাহেব ছচ ধরে রইল।
ঘরে মােমের বাতি জলছিল। তাসারে সেই বাতির তলা থেকে একটু গলা মােম তুলে নিয়ে সুতার সঙ্গে পাকিয়ে সুতােটিকে খুব সােজা ও শক্ত করে তুলল। তারপর সেটা ছুচের সামনে নিয়ে গিয়ে বলতে আরম্ভ করল,-আহা, কি সুন্দর ছুচ। এই ছুচ দিয়ে কি না করা যায়। কত নকশার কাজও হয়। তবে ছুচে যদি সুতা নাই পরানাে যায় তবে সেলাই বলুন আর নকসার কাজই বলুন, কি করে সম্ভব। ছুচটা তাে ভারি পাজি। খালি ঘুরছে। না এরকম করলে কি করে হবে। এই ভাবে প্রকৃত পক্ষে দুফাই যে ভাবে তাসারেতাকে খােসামােদ করে রেখেছিল তাকে সঙ্গমে রাজী করাতে, সেই সব কথাই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলতে বলতে জজ সাহেবকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত বসিয়ে রাখল তাসারেতা।
জজ সাহেব ছুচ ঘুরিয়েই চলেছিল। এইভাবে ধরে থাকেনি কিন্তু এবার হাত ধরে যাওয়ায় হাতটা একটু স্থির করে ধরল টেবিলের ওপর। তাও মুহুর্তের জন্য।
মুুুহুর্ত হলে হবে কি ? এই মুহুর্তের মধ্যেই তাসারেততা অত্যন্ত চাতুর্যের সঙ্গে ছুচের গর্তের সুতার মুখে প্রবেশ করিয়ে সুতা পাকিয়ে দিল।
জজ সাহেব একটু বােকা বনে গিয়ে বলল “হাতটা আমার ধরে গেছে তাই।
আমার ব্যাপারটাও ঠিক আপনার এই হাতের মতই হয়েছিল জজ সাহেব। বলল তাসারেততা তার বুকে ফোলা নরম মাংস আরোও ফোলাতে ফোলাতে।
জজ সাহেব অপলক দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে রইল ঠিক একটা ধূর্ত নেকড়ের মত। কিন্তু সে সামলে নিল।
সৃষ্টির মুলে কাম। সেই কাম দুর্জয় দুর্বার। এই দুর্বার কামকেই তখনকার মত দমন করল জজ সাহেব।
এবার জজ সাহেবের বিশ্বাস হলাে যে মসিয় দুফাউ সত্যি সত্যি উপদ্রব করেছে, তাসারেততার উপর।
জজ সাহেব বলল- ঠিক আছে এখন তুমি যাও। কাল কোর্টে হাজির হবে। আমি মসিউকে ডেকে পাঠাবে। এক হাজার ক্রাউন হলেই তাে তোমার হবে।
-হ্যাঁ জজ সাহেব এর বেশী আমি চাইনা।
-ঠিক আছে। এক হাজার ক্লাউন তােমায় আদায় করে দেবাে। কিন্তু আমার মুখের দিকে একটু তাকাবে তাে?
– নিশ্চয়ই তাকাবাে জজ সাহেব। আগে আমাকে ঐ হাজার ক্রাউন পাইয়ে দিন।
-পাৰে। নিশ্চয়ই পাইয়ে দেব। এখন তাহলে তুমি যাও। কিছু ঘ্নানি, কিছু আকাংখা মনে নিয়ে জজ সাহেবের কাছ থেকে বিদায় নিল তাসারেততা।
পরের দিন যথাসময় দুজনেই কোর্টে হাজির হল। মসিয়ে দুফাউ এবং তাসারেততা। মামলার জবানিতে দুফাউয়ের হার হল। ক্ষতি পূরণ বাবদ এক হাজার ক্রাউন দিতে হল তাসারেততাকে কোর্টে বসে। এরপর লােক পরম্পরায় শােনা গেল জজ সাহেব নিজেও নাকি তাসারেতার ব্যবহারে খুশি হয়ে ওকে এক হাজার ক্রাউন দিয়েছে।