সাপলুডো – সৌরভ মুখোপাধ্যায়

›› গল্পের অংশ বিশেষ  

…..কিছুক্ষণ চুপ করে ছিল উশ্রী। তারপর একদম সামনে, গা ঘেঁষে এসেছিল। সায়ন্তন দেখেছিল, ওর নাকের পাটা ফুলে উঠছে। তপ্ত শ্বাস এসে লাগছিল সায়ন্তনের মুখে। সায়ন্তন অল্প অল্প কাঁপছিল। হঠাৎ ওর শার্টের একটা বোতাম খুলে বুকে হাত রেখেছিল উশ্রী, ফিসফিস করে বলে উঠেছিল, “তাহলে যাওয়ার আগে আমার সব দেনা শোধ করে যা সায়ন্তন!”
প্রতিরোধের ক্ষমতা ছিল না সায়ন্তনের। উশ্রী যেন উন্মাদ হয়ে ছিল। সেদিন। বিহ্বল সায়ন্তনকে পুতুলের মতো ব্যবহার করেছিল নিজের ইচ্ছেমতো। খ্যাপা ঘোড়সওয়ারের মতো উদ্দাম আশ্লেষে উঠে বসেছিল সায়ন্তনের উপর, পিষে ফেলছিল উত্থানপতনের দুরন্ত ছন্দের তোড়ে। তীব্রতম মুহূর্তে ধনুকের মতো বেঁকে যাচ্ছিল উশ্রীর শরীর, আবার সোজা হয়ে সম-এ ফিরে আসছিল। অসহ্য সুখে গলতে শুরু করেছিল সায়ন্তনও, শুধু চরম মুহূর্তের আগে একবার ককিয়ে উঠেছিল, “উশ্রী… প্রোটেকশন নেই কিন্তু…!” উশ্রী তখন এক ঝটকায় সায়ন্তনকে উলটিয়ে নিজের শরীরের উপরে নিয়ে নিয়েছে। সায়ন্তনের পিঠে বসে যাচ্ছে ওর নখ। অন্য হাতে সায়ন্তনের চুলের মুঠিটা আঁকড়ে ধরে অস্ফুটে বলে উঠেছিল, “কিছু প্রোটেকশন দরকার নেই… আমি পরাণের সাথে খেলিব আজিকে মরণখেলা…”
নিজেকে নিঃশেষিত করে সায়ন্তন যখন উশ্রীর ঘাম-চুপচুপে শরীরটার উপর আছড়ে পড়ছে, তখন বিড়বিড় করে উশ্রী বলে চলেছে, “রিভেঞ্জ … রিভেঞ্জ…”
“কী বলছিস?”
“কিচ্ছু না…”, উশ্রী ওর চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়েছিল, “বিদেশে গিয়ে একটা ভাল দেখে মেম বিয়ে করিস কিন্তু। আর একটা কথা…”
নিজের উপর থেকে সায়ন্তনকে সরিয়ে দিতে-দিতে একটা বেডশিট টেনে নিয়েছিল উশ্রী, তারপর খুব ঠান্ডা গলায় আস্তে-আস্তে বলেছিল, “আমার সঙ্গে আর কোনও যোগাযোগ রাখবি না, কেমন?”…..

….সেমিনার শেষ করে হিমাংশু ফিরে আসার পরও ক’দিন নানা অছিলায় তাকে শরীর দেয়নি উশ্রী। পরে যেদিন একরকম জোর করেই হিমাংশু তার সঙ্গে সঙ্গম করে, ততদিনে উশ্রী নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে যে, তার গর্ভের গভীরে অঙ্কুর মেলেছে সায়ন্তনের দিয়ে- যাওয়া বীজ! নিখুঁত ভাবে কাজ করেছে তার স্কিম।
হিমাংশু বাবা হতে চলেছে! উশ্রী আজকাল তার দিকে করুণার চোখে তাকায়। গোপন সত্যিটা নিজের মনেই উপভোগ করে তারিয়ে তারিয়ে। এই তার নিজস্ব প্রতিশোধ।
রাতে আলো নেভানোর পর একটু ঘেঁষে এল হিমাংশু। উশ্রীর কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে গরম নিশ্বাস ফেলল। তারপর আলগা রাতপোশাকটা আস্তে-আস্তে ছাড়িয়ে নিল। প্রেগন্যান্সি আসার পর মিলিত হওয়ার ব্যাপারে একটু সাবধান হতে বলেছেন ডাক্তার। তার উপর, উশ্রীর এখন ইচ্ছেটা কমে গিয়েছে খুব। সে আলগা আপত্তি জানাল একটু, কিন্তু হিমাংশু শুনল না। সে আজ উদগ্রীব। উশ্রীর খোলা পিঠে তার গরম ঠোঁট ছ্যাঁকা দিতে শুরু করেছে। মাঝে মাঝে জিভের ডগা দিয়ে চেটে নিচ্ছে মাখন-নরম ত্বক। ফোর-প্লে’র ধরন দেখেই উশ্রী বুঝেছে, আজ হিমাংশুর সেই অন্য-খেলাটার দিন।
দশ আঙুলে তার সারা শরীর মথিত করছে হিমাংশু, কিন্তু উশ্রী জাগছে না ঠিকমতো। কোনও শিহরন হচ্ছে না তার। এ আদর তো তার জন্যে নিবেদিত নয়। যেন অন্যের পাওনা জমা হচ্ছে তার খাতায়। হিমাংশু চোখ বুজে রয়েছে। অসম্ভব দৃঢ় আজ তার পৌরুষ, কামনার তুঙ্গ শীর্ষে চড়ে বসেছে সে। ক্রমশ গতি বাড়িয়ে দেয় সে। গভীরে, আরও গভীরে… একটা মুখ ভাসছে তার বন্ধ চোখের মধ্যে। একটা টানটান ছিপছিপে শরীর। আহ, আহ… এই শরীরই যেন সেই শরীর… হিমাংশুর মুখ থেকে সুখের গোঙানি বেরিয়ে আসে, ফিসফিস করে নিজের মনেই একটা ছোট্ট নাম বলে ওঠে সে।
তার পরই সামলে নেয় হিমাংশু। উশ্রী যেন ওই নামটা শুনতে না পায় !
নাইটি টার মধ্যে শরীর গলাতে গলাতে উশ্রী খুব শীতল গলায় বলে, “আজ তুমি চার্জড ছিলে খুব।”
হিমাংশু পাজামার দড়ি বাঁধছিল। তাকাল একবার, উত্তর দিল না। একটু চুপ করে থেকে উশ্রী সেইরকম ঠান্ডা ভাবেই জিগ্যেস করল, “মেয়েটা কে?”
“কোন মেয়ে?” থমকে গেল হিমাংশু।
“যার কথা ভাবতে ভাবতে তুমি ইন্টারকোর্স করো…!” যেন হাতে-পায়ে প্লাস্টার অফ প্যারিস ঠেসে ঠেসে ভরে দিয়েছে কেউ, এমন ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকে হিমাংশু। উশ্রী আর কিছু বলে
না। অনেকক্ষণ পর হিমাংশু নড়ে, ড্রয়ার থেকে সিগারেট বের করে, জানলার কাছে গিয়ে সেটা ধরায়। পরপর রিং ছাড়ে তিনটে, তারপর বাইরের কালো আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে, “আমারও একটা কোয়্যারি আছে উশ্রী।”
“বলো।”
প্রায় আধমিনিট চুপ করে থাকে হিমাংশু। ফের রিং বানায়। তারপর বলে, “বাচ্চাটা কার?”…..