কর্দম মেখলা – পরশুরাম

›› পৌরাণিক কাহিনী  ›› সম্পুর্ণ গল্প  

পুস্করর সরোবরের তীরে বিশ্বামিত্র আর মেনকা কাছাকাছি বসে
আছেন। মেনকা তাঁর কেশপাশ আলুলায়িত করে কাকুই দিয়ে আঁচড়াচ্ছেন, বিশ্বামিত্র মুখে ফিরিয়ে আত্মচিন্তা করছেন।
অনেকক্ষণ নীরব থাকার পর বিশ্বামিত্র কপাল কুচকে নাক ফুলিয়ে বললেন, মেনকা, তুমি সরে যাও, তোমার চুলের তেলচিটে গন্ধ আমি সইতে পারছি না।
ভ্রুভঙ্গী করে মেনকা বললেন, তা এখন পারবে কেন। অথচ এই সেদিন পর্যন্ত আমার চুলের মধ্যে মুখ গুজেড়ে পড়ে থাকতে। চুলে কি মাখি জান? মলয়গিরিজাত নারিকেল তেলে পঞ্চাশ রকম গন্ধদ্রব্য ভিজিয়ে ধন্বন্তরী আমার জন্যে এই কেশতৈল প্রস্তুত করেছেন। এর সৌরভে দেব দানব গন্ধর্ব মানব মুগ্ধ হয়, আর তোমার তা সহ্য হচ্ছে না! মুখে হাঁড়ি করে রয়েছ কেন, মনের কথা খুলেই বল না।
বিশ্বামিত্র বললেন, তুমি মূর্খ অপ্সরা, প্রবাগণে কিছুই জান না। উত্তম গন্ধতৈলও মার্ক্সবারে সংস্পর্শে বিকৃত হয়। স্ত্রীজাতির নাকের সাড় নেই, কিন্তু অন্য লোকে দুর্গন্ধ পায়।
—এতদিন তুমি দুর্গন্ধ পাও নি কেন?
—আমার বুদ্ধিভ্রংশ হয়েছিল, লব্ধ কুক্কুরের ন্যায় পূতিগন্ধকে দিব্য সৌরভ মনে করতাম, তোমার কুটিল কালসর্প সম বেণী কুসমদাম বলে ভ্রম হত, তোমার ক্লিন্ন অশ্রুচি দেহের স্পর্শে আমার আপাদমস্তক হর্ষিত হত। সেই কদর্য মোহ এখন অপসৃত হয়েছে। মেনকা, তোমাকে আমার আর প্রয়োজন নেই, তুমি চলে যাও।
মেনকা বললেন, ছ মাসেই প্রয়োজন ফুরিয়ে গেল? আমি যখন প্রথমে তোমার এই আশ্রমে এসেছিলাম তখন আমাকে দেখেই তুমি সংযম হারিয়ে তপস্যায় জলাঞ্জলি দিয়ে লোলপে হয়েছিলে। আমি কিন্তু নিষ্কামভাবে নির্বিকার চিত্তে অপ্সরার কর্তব্য পালন করেছি, তোমার কুৎসিত জটাশ্মশ্রু, আর লোমশ বক্ষের স্পর্শ, তোমার দেহের উৎকট শার্দুলেগন্ধ সবই ঘৃণা দমন করে সয়েছি। ওহে ভূতপূর্ব কান্যকুদরাজ মহাবল বিশ্বামিত্র, বশিষ্ঠের গরু, চুরি করতে গিয়ে তুমি সসৈন্যে মার খেয়েছিলে। তখন তুমি বিলাপ করেছিলে —ধি বলং ক্ষত্রিয়বলং রহনতেজো বলং বলম্। তার পর তুমি রহর্ষি হবার জন্যে কঠোর তপস্যায় নিমগ্ন হলে। কিন্তু ইন্দ্রের আদেশে যেমনি আমি তোমার কাছে এলাম তখনই তোমার মন্ডে ঘুরে গেল, তপস্যা চুলোয় গেল, একটা অবলা অপ্সরার কাছেও আত্মরক্ষা করতে পারলে না। এখন হয়তো বুঝেছ যে, রহনতেজের বলও অপ্সরার বলের কাছে তুচ্ছ, অনেক রাজর্ষি’ মহর্ষি’ রহর্ষি আমাদের পদানত হয়েছেন। যা বলি শোন–রহর্ষি হবার সঙ্কল্প ত্যাগ করে অপ্সরা হবার জন্যে তপস্যা কর।
বিশ্বামিত্র বললেন, কটুভাষিণী, তুমি দূরে হও।
-তা হচ্ছি। আমার গর্ভে তোমার যে সন্তান আছে তার ব্যবস্থা
কি করবে?
-স্বর্গবেশ্যার সন্তানের সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক থাকতে পারে না। যা করবার তুমি করবে।
–তুমি তো মহা বেদজ্ঞ আর পুরাণ। এ কথা কি জান না যে অপ্সরা কদাপি সন্তান পালন করে না? আমরা প্রসব করেই সরে পড়ি, এই হল সনাতন রীতি। অপত্যপালন জন্মদাতারই কর্তব্য, গর্ভধারিণী অপ্সরার নয়।
অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে বিশ্বামিত্র বললেন, তুমি আমার তপস্যা পণ্ড করেছ, বুদ্ধি মোহগ্রস্ত করেছ, চরিত্র কলুষিত করেছ। পাপিষ্ঠা, দূরে হও এখান থেকে, তোমার গর্ভস্থ পাপও তোমার সঙ্গে দূর হয়ে যাক। পুষ্কর সরোবরের ধার থেকে খানিকটা কাদা তুলে নিয়ে মেনকা দুই হাতে তাল পাকাতে লাগলেন।
বিশ্বামিত্র প্রশ্ন করলেন, ও আবার কি হচ্ছে?
কাদার পিণ্ড পাকিয়ে সাপের মতন লম্বা করে মেনকা বললেন, রাজর্ষি বিশ্বামিত্র, তোমার সন্তান আমি চার মাস গর্ভে বহন করেছি, আরও প্রায় পাঁচ মাস বইতে হবে। তোমার কৃতকর্মের ফল শব্ধে, আমিই বয়ে বেড়াব আর তুমি লঘুদেহে স্বচ্ছন্দে বিচরণ করবে তা হতে পারে না। তোমাকেও ভার সইতে হবে। এই নাও।
মেনকা তাঁর হাতের লম্বা কাদার পিন্ড সবেগে নিক্ষেপ করলেন। বিশ্বামিত্রের কটিদেশে তা মেখলার ন্যায় জড়িয়ে গেল।
চমকে উঠে মুখে বিকৃত করে বিশ্বামিত্র বললেন, আঃ! সেই কর্দম মেখলা টেনে খুলে ফেলবার জন্যে তিনি অনেক চেষ্টা করলেন, কিন্তু পারলেন না। তখন পুষ্করের জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে ধুয়ে ফেলবার জন্যে দুই হাত দিয়ে ঘষতে লাগলেন, কিন্তু সেই কালসর্প তুল্য মেঘলার ক্ষয় হল না, নাগপাশের ন্যায় বেষ্টন করে রইল।
হতাশ হয়ে বিশ্বামিত্র জল থেকে তাঁরে উঠে এলেন। মেনকাকে আর দেখতে পেলেন না।
বিশ্বামিত্র পুনর্বার তপস্যায় নিরত হবার চেষ্টা করলেন, কিন্তু মনোনিবেশ করতে পারলেন না, কর্দম মেখলার নিরুত্তর সংস্পর্শে তাঁর ধৈর্য নষ্ট হল, চিত্ত বিক্ষোভিত হল। তিনি আশ্রম
ত্যাগ করে আকুল হয়ে পর্যটন করতে লাগলেন, হিমাচল থেকে দক্ষিণ সমূদ্র পর্যন্ত ভ্রমণ করলেন, নানা তীর্থসলিলে অবগাহন করলেন, কিন্তু মেখলা বিগলিত হল না। এই ভাবে সাড়ে পাঁচ বৎসর কেটে গেল।
ঘুরতে ঘুরতে একদিন তিনি মালিনী নদীর তাঁবে উপস্থিত হলেন। নদীর কাকচক্ষ, তুল্য নির্মল জল দেখে তাঁর মনে একট আশার উদয় হল। উত্তরীয় তাঁরে রেখে বিশ্বামিত্র জলে নামলেন এবং অনেকক্ষণ প্রক্ষালন করলেন, কিন্তু তাঁর মেখলা পূর্ববং অক্ষয় হয়ে রইল। অবশেষে তিনি বিষণ্ন মনে জল থেকে তাঁরে উঠতে গেলেন, কিন্তু পারলেন না, পাঁকের মধ্যে তাঁর দুই পা প্রায় হটিু পর্যন্ত ডুবে গেল।
প্রাণভয়ে বিশ্বামিত্র চিৎকার করলেন। মালিনীর তটবর্তী বন- ভূমিতে তিনটি মেয়ে খেলা করছিল, একটির বয়স পাঁচ, আর দুটির সাত-আট। বিশ্বামিত্রের আর্তনাদ শুনে তারা ছুটে এল এবং নিজেরাও চিৎকার করে ডাকতে লাগল-ও পিসীমা দৌড়ে এস, কে একজন ডুবে যাচ্ছে।
পিসীমা অর্থাৎ গৌতমী লম্বা আঁকশি দিয়ে একটি প্রকাণ্ড অম্লাতক বৃক্ষ থেকে পাকা আমড়া পাড়ছিলেন। মেয়েদের ডাক শুনে ছুটে এলেন। নদীর ধারে এসে বিশ্বামিত্রকে বললেন, নড়বেন না, তা হলে আরও ডুবে যাবেন। এই আকশিটা বেশ শক্ত, পাঁকের তলা পর্যন্ত পাতে দিচ্ছি, এইটেতে ভর দিয়ে স্থির হয়ে থাকুন। এই অনু আর প্রিয়, তোরা দুজেনে দৌড়ে যা, আমি যে চাঁচাড়ির চাটাইএ শই সেইটে নিয়ে আয়।
অনু আর প্রিয় অল্পক্ষণের মধ্যে ধরাধরি করে একটা চাটাই নিয়ে এল। গৌতমী সেটা পাঁকের উপর বিছিয়ে দিয়ে বললেন, এইবারে
আস্তে আস্তে পা তুলে চাটাইএর উপর দিন, তাড়াতাড়ি করবেন না। আঁকশিটা পাঁক থেকে টেনে নিচ্ছি। এই এগিয়ে দিলাম, দু‌ হাত দিয়ে ধরনে।
আঁকশির এক দিক বিশ্বামিত্র ধরলেন, অন্য দিক গৌতমী ধরে টানতে লাগলেন, মেয়েরা তাঁর কোমর ধরে রইল। বিশ্বামিত্র ধীরে ধীরে তীরে উঠে এসে বললেন, ভদ্রে, আপনি আমার প্রাণরক্ষা করেছেন। কে আপনি দয়াময়ী? এই দেবকন্যার ন্যায় বালিকারা
কারা ?
গৌতমী বললেন, আমি মহর্ষি করের ভগিনী গৌতমী। এই অনু আর প্রিয় – অনসূয়া আর প্রিয়ংবদা, এরা এই আশ্রমবাসী পিপল আর শাম্মল ঋষির কন্যা। আর এই ছোটটি শকু – মহর্ষি’ কম্বের পালিতা দুহিতা শকুন্তলা। আমার ভ্রাতার আশ্রম এই মালিনী নদীর তীরেই। সৌমা, আপনি কে?
– আমি হতভাগ্য বিশ্বামিত্র।
-বলেন কি, রাজর্ষি বিশ্বামিত্র! আপনার এমন দুর্দশা হল
কেন ? অনু আর প্রিয় নাচতে নাচতে বলল, ওরে বিশ্বামিত্র নি এসেছে, শকুর বাবা এসেছে রে, এক্ষনি শকুকে নিয়ে যাবে রে! শকুন্তলা ভ্যাঁ করে কেদে গৌতমীকে জড়িয়ে ধরল। অনুসেয়া আর প্রিয়ংবদাকে ধমক দিয়ে গৌতমী বললেন, চুপ কর দুষ্ট মেয়েরা, কেন ছেলেমানুষকে ভয় দেখাচ্ছিস ! বিশ্বামিত্র বললেন, কী তোমার বাবা কে তা জান? শকুন্তলা বলল, আমার বাবা কন্ধ মনি, আর মা এই পিসীমা। অনসূয়া আর প্রিয়ংবদা আবার নাচতে নাচতে বলল, দূর বোকা,সব্বাই জানে আর তুই কিচ্ছু জানিস না। তোর বাবা এই বিশ্বামিত্র মানি, আর মা-
গৌতমী দুই মেয়ের পিঠে কিল মেরে বললেন, দূর হ এখান এই রাজর্ষির পরিধেয় ভিজে গেছে, তোদের বাবার কাছ থেকে এখন কাপড় চেয়ে নিয়ে আয়। আর তোদের মাকে বল,অতিথি এসেছেন, আমাদের আশ্রমেই আহার করবেন। বিশ্বামিত্র বললেন, বস্ত্রের প্রয়োজন নেই, আমার অধোবাস আপনিই শখিয়ে যাবে, আর আমার উত্তরীয় শষ্কই আছে। আপনি আহারের আয়োজন করবেন না, আমার ক্ষুধা নেই। দেবী গৌতমী, এই বালিকাকে কোথায় পেলেন !
গৌতমী নিম্নকণ্ঠে জনান্তিকে বললেন, মেনকা প্রসব করেই মালিনী নদীর তটে একে ফেলে চলে যায়। মহর্ষি কর স্নান করতে
গিয়ে দেখেন, এক ঝাঁক হংস সারস চরবাকাদি শকুন্ত পক্ষ বিস্তার করে চারদিকে ঘিরে সদ্যোজাত এই বালিকাকে রক্ষা করছে। দয়ার্দ্র
হয়ে তিনি একে আশ্রমে নিয়ে আসেন। শকুন্ত কর্তৃক আরক্ষিতা, সেজন্য আমরা নাম দিয়েছি শকুন্তলা।
বিশ্বামিত্র বললেন, কন্যা, একবারটি আমার কোলে এস।
শকুন্তলা আবার কে’দে উঠে বলল, না, যাব না, তুমি আমার বাবা নও, কব মনি আমার বাবা।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিশ্বামিত্র বললেন, ঠিক কথা। আমি তোমার পিতা নই, মেনকাও তোমার মাতা নয়, যারা তোমাকে ত্যাগ করেছিল
তাদের সঙ্গে তোমার সম্পর্ক নেই। যাঁরা তোমাকে আজন্ম পালন করেছেন তাঁদেরই তুমি কন্যা। কাঁ, তুমি কি খেলনা চাও বল, রূপোর রাজহাঁস, সোনার হরিণ, পান্না-নীলার ময়ূর-অনসূয়া ঠোঁট বে’কিয়ে বলল, ভারী তো।
আমাদের আসল হাঁস হরিণ মহর আছে। প্রিয়ংবদা বলল, আমাদের হাঁস পাকি পাকি করে, হরিণ লাফায়, ময়ূর নাচে। তোমার হাঁস হরিণ ময়ূর তা পারে ? বিশ্বামিত্র বললেন, না, শুধু ঝকমক করে। শকুন্তলা, তুমি আমার সঙ্গে চল। শত রাজকন্যা তোমার সখী হবে, সহস্র দা তোমার সেবা করবে, স্বর্ণমণ্ডিত গজদন্তের পর্যঙ্কে তুমি শোবে, দেবদলে’ভ অন্ন ব্যান মিষ্টান্ন পায়স তুমি খাবে, মণিময় চত্বরে সখীদের সঙ্গে খেলা করবে। তোমাকে আমি বিশাল রাজ্যের অধীশ্বরী করে দেব। গৌতমী বললেন, কি করে করবেন? আপনার কান্যকুজ রাজ্য তো পুত্রদের দান করে ম্বী হয়েছেন।
—তুচ্ছ কান্যকুব্জ রাজ্য আমার পত্রেরাই ভোগ করুক, তা কেড়ে
নিতে চাই না। বাহ,বলে আর তপোবলে আমি সসাগরা ধরা জয় করে আমার কন্যাকে রাজরাজেশ্বরী করব। যত দিন কুমারী থাকে তত দিন আমিই এর প্রতিত হয়ে রাজাশাসন করব। তার পর অতুলনীয় রূপবান গণবান বলবান বিদ্যাবান কোনও রাজা রাজপুত্রের হস্তে একে সম্প্রদান করে পুনর্বার তপস্যায় নিরত হব।
গৌতমী বললেন, কি বলিস শকু, যাবি এই রাজর্ষির সঙ্গে? শকুন্তলা আবার কেদে উঠে বলল, না না যাব না। গৌতমী বললেন, রাজর্ষি বিশ্বামিত্র, জন্মের পূর্বেই যাকে বর্জন করেছিলেন তার প্রতি আবার আসক্তি কেন? আপনার সংযম কিছুমাত্র নেই। বশিষ্ঠের কামধেনর লোভে আপনার ধর্মজ্ঞান লোপ পেয়েছিল, মেনকাকে দেখে আপনি উন্মত্ত হয়েছিলেন, এখন আবার তার কন্যাকে দেখে স্নেহে অভিভূত হয়েছেন। এই বালিকার কল্যাণই যদি আপনার অভীষ্ট হয় তবে একে আর উদ্বিগ্ন করছেন কেন, অব্যাহতি দিন, এর মায়া ত্যাগ করে প্রস্থান করুন। বিশ্বামিত্র বললেন, শকুন্তলা, তোমার এই পিসীমাকে যদি সলো নিয়ে যাই তা হলে তুমি যাবে তো? গৌতমী বললেন, কি যা তা বলছেন, আমি কেন আপনার সঙ্গে যাব ? —দেবী গৌতমী, আমি আপনার পাণিপ্রার্থী। আমাকে বিবাহ করে আপনি আমার কন্যার জননীর স্থান অধিকার করুন। অনসূয়া আর প্রিয়ংবদা আবার নাচতে নাচতে বলল, পিসীমার বর এসেছে রে!
গৌতমী সরোষে বললেন, বিশ্বামিত্র, আপনি উম্মাদ হয়েছেন, আপনার হিতাহিত জ্ঞান লোপ পেয়েছে। আর প্রলাপ বকবেন চলে যান এখান থেকে। বিশ্বামিত্র কাতর শুরে বললেন, শকুন্তলা, একবার আমার কোলে এস. তার পরেই আমি চলে যাব। গৌতমী বললেন, যা না শকু, একবারটি ওঁর কোলে গিয়ে বস। ভয় কি, দেখছিস তো, তোকে কত ভালবাসেন। শকুন্তলা ভয়ে ভয়ে বিশ্বামিত্রের কোলে বসল। তিনি তার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, কন্যা, সরোসরে যক্ষ রক্ষ তোমাকে রক্ষা করুন, বসুগণ তোমাকে বসমতীর ন্যায় বিস্তবর্তী করুন, ধাঁ শ্রী কীর্তি ধূতি ক্ষমা তোমাতে অধিষ্ঠান করুন– হঠাৎ শকুন্তলা লাফিয়ে উঠে বলল, ওরে পিসীমা রে! ব্যাকুল হয়ে গৌতমী বললেন, কি হল রে? বিশ্বামিত্র উঠে দাঁড়ালেন। তাঁর কদম মেঘলা খসে গিয়ে মাটিতে পড়ে কিলবিল করতে লাগল।
প্রিয়ংবদা চিৎকার করে বলল, সাপ সাপ!
অনসূয়া বলল, ঢোঁড়া সাপ !
গৌতমী বললেন, জলডুডুভ। ওই দেখ, সড়সড় করে নদীতে
নেমে যাচ্ছে।
বিশ্বামিত্র বললেন সাপ নয়। মেনকার অভিশাপ, এতকাল পরে
আমাকে নিষ্কৃতি দিয়েছে। কন্যা, তোমার পবিত্র স্পর্শে আমি শাপমুক্ত পাপমুক্ত সতাপমত হয়েছি। আশীর্বাদ করি, রাজেন্দ্রর রাজী হও, রাজচক্রবর্তী সম্রাটের জননী হও। দেবী গৌতমী, আমি যাচ্ছি, আপনাদের মঙ্গল হক, আমার আগমনের স্মৃতি আপনাদের মন থেকে লঞ্চে হয়ে যাক।