…….আমার জন্ম। আমি হলাম আমার মেছুনি মা আর এক ভ্রাম্যমাণ ঝষির জারজ সন্তান। তখনকার দিনে আজকের মতো যানবাহনের সুবন্দোবস্ত ছিল না, কিন্তু তবু ব্রাহ্মণ সন্যাসীরা অনায়াসে সারা দেশে ঘুরে বেড়াতেন। আর অবশ্যই তারা হোটেল বুকিং নিয়ে মাথা ঘামাতেন না। যে-কোনও গৃহস্থ বাড়িতে তাদের আদর যত্তের ত্রুটি হত না। শুধু পৈতে এবং অগাধ জ্ঞানই ছিল তাদের সম্বল। গৃহস্বামীরা অনেক সময়তেই এই ভ্রাম্যমাণ সন্ন্যাসীদের খাবার এবং বিছানার সঙ্গে নিজের কন্যাকেও যৌতুক দিতেন। তখনকার দিনের গৃহস্বামীদের ভক্তির সীমা-পরিসীমা ছিল না। সন্াসীটি আতিথেয়তা গ্রহণে ক্রুটি রাখতেন না। সবই আপনার করে নিতেন করদিনের জন্য। তারপর আবার বেরিয়ে পড়তেন। নিজের পায়ের খড়ম ছাড়াও আরও কিছু চিহ্ন অবশ্যই রেখে যেতেন। ভারতবর্ষের চারিদিকে ছড়িয়ে আছে এইসব মোক্ষদানের কর্তাদের ফেলে যাওয়া পদচিহ্ন। আমিও তাদেরই একজন। আমার কোনও সংকোচ নেই। এতে আমি যারপরনাই আহুাদিত। তবে মেছুনিরা সচরাচর সন্নযাসীদের কৃপা পেত না। তাই বলতেই হয় যে আমার মা সত্যবতী ছিলেন একেবারে স্বতন্ত্র প্রকৃতির মেছুনি। সেদিন তিনি নদীতে মাছ ধরছিলেন, তার ভিজে পাতলা শাড়ির আঁচলটা কাধের একপাশে আলগোছে ফেলা ছিল। পাড়ের কাছটা উঠে গিয়ে উরু দেখা যাচ্ছিল। পরিশ্রমের কারণে গায়ে ঘেমো গন্ধ, মাছের আশটে গন্ধের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। মাছগুলি টেনে-টেনে সত্যবতী নৌকোয় তুলছিলেন। যখন সন্ন্যাসী পরাশরের দৃষ্টি তাঁর দিকে পড়ে, তিনি মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে সত্যবতীর উদ্ধত সৌন্দর্যের দিকে থাকলেন! ঘেমো-আঁশটে গন্ধকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে। “সুন্দরী নারী” পরাশর বলেন, “এসো । আমার আদর গ্রহণ করো।’ কোনও ব্রাহ্মণের এই দান কি কোনও নীচকুলের নারী উপেক্ষা করতে পারে? আমার মা কিন্তু বেহিসেবি বোকা প্রকৃতির মহিলা ছিলেন না। তিনি বললেন, “নদীর দু-ধারের লোক আমাদের দেখছে। এ অবস্থায় কী করে নিজেকে আপনার কাছে সমর্পণ করব? বাহ্মণ কামপীড়িত হলেও অর্বাচীন ছিলেন না। তিনি আগেই নদীর মধ্যে এক জনশূন্য দ্বীপের খোঁজ জানতেন। সেই দ্বীপের চারদিকে ঘন জঙ্গল। তিনি সত্যবতীকে ইঙ্গিত দিলেন নৌকো নিয়ে দ্বীপে আসতে আর নিজে সেদিকে সাতরে এগিয়ে গেলেন। সত্যবতী লজ্জায় রাঙা হয়ে পরাশরকে অনুসরণ করলেন। দ্বীপের চারিদিকে কুয়াশার আবরণ কোনওমতে তার লজ্জা নিবারণ করতে সক্ষম হল। …….
….. স্বভাবতই সত্যবতী বাধ্য নারীর মতো আজ্ঞা পালন করেছিলেন। কোনও মেয়েই ব্রাহ্মণের রোষের বলি হতে চায় না। সত্যবতী নির্বোধ ছিলেন না। তিনি খুব ভালোই বুঝতেন, একজন পিপাসু ব্রাহ্মণের কাছে নিজেকে সমর্পণ করাটা বেশ সম্মানের ব্যাপার। কবে নিজের বাবা তাকে কারুর লালসার আগুনে বলি চড়াবেন তার জন্য অপেক্ষা করার কোনও মানে হয় না। কারণ মেছুয়াদের বাড়িতে সচরাচর ব্রাহ্মণের আগমন হয় না। আবার পরাশরের মতো উচ্চপদস্থ ব্রাহ্মণের যে সত্যবতীকে বিয়ে করা সম্ভব নয়, সেটাও সবাই জানত। ‘আমি এ কাজ আগে কখনও করিনি।” সত্যবতী বলেন, “আমি কুমারী। নই। আপনার সঙ্গে সহবাসের পর আমার কী হবে বলতে পারেন? আমার সমাজে মুখ দেখাবার জায়গা থাকবে না। কেউ কি আমায় বিয়ে করবে? আমায় দয়া করুন। তীর ভ্রুভঙ্গি আর চোখের ভাষা এটাই স্পষ্ট করে দেয় যে তার শরীরে বাসনার আগুন জুলে উঠলেও মন এখনও দ্বিধাগ্রত্ত। পরাশর হাসলেন। সে হাসিতে ছিল সত্যবতীর প্রতি তার অদম্য আকর্ষণ আর অভয়। “ভয় নেই। তোমার কুমারীত্ব অটুট থাকবে । আমায় সুখ প্রদান করার পরেও কেউ বুঝতে পারবে না, তুমি তোমার কুমারীত্ব হারিয়েছ। আমি কথা দিলাম।” তীরা দুজনে তীব্রভাবে কামঘন হলেন। কথা বন্ধ হল। শুরু হল শরীরী ক্রীড়া। জনের প্রতি বিশেষ ভাবে পেলব হন। দুটি দেহের মিলনের পর তারা যখন পাশাপাশি শুয়েছিলেন, পরাশর সত্যবতীকে জিগ্যেস করেন, তার মাসিক খতুত্বাব কবে হয়েছিল। সত্যবতীর উত্তর শোনার পরে তিনি বলেন, “আমাদের মিলনের ফলস্বরূপ একটি সন্তান জন্মাবে। কিন্তু আমি আমার কথা রাখব। তোমাকে তোমার সমাজের অনুঢ়া কন্যা হিসেবে স-সম্মানে ফিরিয়ে দেব।’ পরাশর সত্যবতীকে নিয়ে তার বাবার কাছে গেলেন। সেখানে তাকে যথেষ্ট সম্মানের সঙ্গে অভ্যর্থনা দেওয়া হল। “আপনার কন্যার সঙ্গে আমার নদীতে দেখা হয়। ওর মধ্যে যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। তাই উচ্চশিক্ষা দিতে আমার দাসী করে ওকে সঙ্গে নিয়ে যেতে চাই। সত্যবতীর বিয়ের বয়স হলে, আপনার কাছে তাকে আবার ফিরিয়ে দেব। সত্যবতীর বাবা যথেষ্ঠ বুদ্ধিমান পুরুষ। মেছুয়াদের প্রধান। “আমি কী করে আশ্বস্ত হব যে সত্যব্তীর কোনও বিপদ হবে না? “আমায় সবাই চেনে এখানে । এক বছর পরে আপনার মেয়েকে আপনার কাছে ফিরিয়ে দেব, একেবারে অটুট অবস্থায় পরাশর বেশ রেগেই জবাব দিলেন। তখনকার দিনে মেছুয়ারা, তা তিনি যতই মেছুয়া সর্দার হোন না কেন, বাহ্মণদের কথার অমান্য করতেন না। সত্যবতীর বাবা, মেয়েকে এবার বিদায় জানালেন। ……
…..আমার মা আমায় এক মাসেরও কম সময় বুকের দুধ দিতে পেরেছিলেন। আমার বাবা সে সময়ে মাকে বেদ-পুরাণ ইত্যাদির শিক্ষা যথাসাধ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এর মধ্যে কিছু গুহ্য মন্ত্রও ছিল, যা থেকে সত্যবতী শিখেছিলেন কুমারীত্ব নিয়ে কিছু গোপন তত্। তিনি বাড়ি অবস্থায় আছেন পরীক্ষার পর জানা যায়। ব্রাহ্মণরা সেকালে কত কিছুই জানতেন! …..
…..বিচিত্রবীর্য তার রাত্রিকালীন আমোদপ্রমোদ নিয়েই বেশি মজে থাকতেন। গঙ্গার জাগতিক বোধ খানিকটা কম থাকায় বোধহয় ব্যাপারটা অতটা বুঝতে পারেননি। অশ্বিকা এবং অশ্বালিকা দুজনে মিলে বিচিত্রবীর্ধকে এমনিতেই কামদাহে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিল। ওই শিখরবক্ষ, কদলী-উর। এবং নিতম্বের ভারেই সে হল কুপোকাত। শেষে কামোন্মাদ হয়ে তার প্রাণটাই গেল। ….. .
……“তোমার ওপরেই আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে গঙ্গা। সত্যবতী এসে বলল, “ব্রিটিশরা হস্তিনাপুর যে-কোনওদিন নিয়ে নেবে। কিন্তু যদি তুমি তাদের বলো যে বিচিত্রবীর্ষের মৃত্যুর আগেই তার এক রানি সন্তানসম্ভবা হয়েছেন, তাহলে আমরা রক্ষা পেতে পারি। তুমি তোমার ভাইয়ের প্রতি, আমার স্বামীর প্রতি আর এই পরিবারের প্রতি তোমার দায়িত্ব পালন করো। অন্বিকা এবং অন্বালিকাকে সন্তান সুখ দাও।’ …..
…..তিনি আর গঙ্গা মিলে বিধবা দুজনের সম্মতি জোগাড় করেছিলেন। রাজপরিবারের উত্তরাধিকারের ব্যাপারে অসম্মত হওয়ার কোনও কারণ ছিল কি! কৌশলে কিছু খবর নিলাম আর আমার বাবার শিক্ষাও খুব কাজে লাগল। একটু খেটে কয়েকটি তারিখ বার করে ফেললাম যেগুলিতে আমি অশ্বিকা আর অন্বালিকাকে মাতৃত্ব প্রদান করব। শ্নান করে সেজেগুজে অশ্থিকা এক ছত্রিওয়ালা খাটে শুয়েছিল ঠিক দিনটিতে । আমিও তার ভিতরে অনায়াসে প্রবেশ করলাম। কিন্তু সে আমার চেহারা দেখেই চোখ বন্ধ করে ফেলল আর গোটা প্রক্রিয়ার সময়টা সে ভাবেই পড়ে রইল। তার অবস্থা দেখে আমার আমেরিকানদের কংগ্রেস রচনার কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। অন্বালিকা বোধহয় নিজেকে একটু বেশি আগ্রহী রেখেছিল। কিন্তু আমায় দেখে বেচারিও ভয়ে সাদা হয়ে গেল। আমার মাকে আমি বলেছিলাম যে এই মিলনের ফলম্বরূপ যে সন্তানরা জন্মাবে তারা অন্ধ এবং পাণ্ডু বর্ণ হতে বাধ্য। মা তাই অশ্বিকাকে আবার পাঠালেন। কিন্তু অশ্বিকা কায়দা করে নিজের জামাকাপড় পরিয়ে এক পরিচারিকাকে পাঠিয়েছিল। আমি ব্যাপারটা অনেক পরে বুঝতে পারি কিন্তু পরিচারিকাটিকে নিয়ে মোটেই অখুশি হইনি। সে আমার সঙ্গে সহযোগিতা করেছিল। পরদিন হস্তিনাপুর ছেড়ে চুপচাপ চলে আসি। তিনটি যোনিতে আমার বীর্যচিহ্ এঁকে দিয়ে। …..
…..পাণ্ডুর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। সে গঙ্গাজির প্রতিটি কথা উৎকর্ণ হয়ে শুনছিল। “যা শোনা যায় সেটা হল, কুত্তি প্রণয়জালে জড়িয়ে পড়েছিল নিজের অজান্তেই। হাইপেরিয়ন হেলিওস বলে একাটি বিদেশি পর্যটক তাদের রাজ্যে অতিথি হিসেবে কিছুদিন ছিলেন। তার চোখ ধাঁধানো রূপ এবং অত্যন্ত পরিশীলিত আচরণ অপরিণত কুস্তিকে তার দিকে দুর্নিবার টানে টেনে নিয়ে যায়। তাদের মধ্যেকার সম্পর্ক কতটা গভীর হয়েছিল, ঠিক জানা যায় না। তবে এটা জানা যায়, হেলিওসকে রাজপ্রাসাদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। কুত্তিও এরপর বেশ কয়েক মাসের জন্য স্বেচ্ছানির্বাসনে চলে যায়। লোকে অনেক কথা বলে যাচ্ছে কুত্তির সুনাম নষ্ট করে। …..
…..গান্ধারী হাসলেন না। এইসব ব্যাপারে তিনি লঘু হতে চান না। “কে জানে? জ্যোতিষী তো তাই বলেছেন। তবে অনেক সময় লাগবে একশো সন্তান প্রসব করতে।’ তা তো বটেই।” ধৃতরাষ্ট্রের পাশ্চাত্য শিক্ষা তাকে সহজে কোনও কিছু বিশ্বাস করা থেকে বিরত রাখে। গ্রহ-নক্ষত্র গণনার ওপর তার খুব একটা ভরসা ছিল না। হাত বাড়িয়ে সে গান্ধারীকে ছুঁতে চেষ্টা করল। এবারে সে উজ্জীবিত হয়ে উঠল। “আমরা আর অপেক্ষা করছি কেন? তার আঙুলের ছোঁয়ায় গান্ধারীর রোমাঞ্চ জাগল। সেও হেসে উঠল। দৌলনাটাও প্রবলবেগে দুলে উঠল তাদের ভালোবাসার তালে তাল রেখে। দুই নারী পুরুষের মিলনের ছায়া পড়ল দেওয়ালে। তারা তা দেখতে পেল না।….
….দুই বউ নিয়ে পাণ্ডুর দিন খুব তৃপ্তিতে কাটছিল। কুত্তি তার পূর্ব কলঙ্ক সত্বেও অত্যন্ত মনোগ্রাহী বিবেচিত হল। বিশাল-বক্ষ মাদ্রী শারীরিক পরিমাপে অসঙ্গতি সত্তেও পাণ্ডুকে সম্তোগসুখে তৃপ্ত করছিল। পাণ্ডু শরীর সর্বস্ব ছিল। আর দুই বউ থাকার সবরকম আনন্দে সে আপ্লুত ছিল। সর্বদা সে সতর্ক থাকত,. যাতে বউরা সন্তানসম্ভবা হয়ে না পড়ে। ……
……কে? একদিন পাণ্ড তার দুই রানিকে নিয়ে বিছানায় উন্মত্ত অবস্থায় ছিলেন। তারা দুজন স্বামীর সম্তোগের সুখ বাড়াবার জন্য একেবারে নতুন কিছু উপায় বের করেছিল সেদিন। হঠাৎ একটা ভীষণ ব্যথা তার বুক থেকে হাতের ওপর অবধি তিরের মতো ছুটে চলল। সে বিছানায় পড়ে গেল আর বনু চেষ্টা করেও মুখে কিছু বলে উঠতে পারল না। শুরুতে রানি দুজন ভেবেছিল যে তারা বোধহয় স্বামীকে খুব উত্তেজিত করে দিতে পেরেছে, কিন্তু তার শরীরের নিন্নাঙ্গের দিকে তাকাতেই ভুলটা ধরা পড়ল। তারা ভয়ে চিৎকার করে উঠল। ……
……পাণ্ডু বেঁচে গেল সে যাত্রায়। কিন্তু সে আর তার আগের জীবনে ফিরতে পারল না। “আপনাকে কিন্তু শারীরিক সুখ থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখতে হবে যদি আপনি বাঁচতে চান। কারণ আপনার হার্ট-এর অবস্থা ভালো নয়।’ তার মানে কী? মানে মহিলা সঙ্গ করার মতো হার্টের জোর আপনার আর নেই।” এ তো খারাপ খবর!” “খুবই খারাপ। এর পরের শারীরিক মিলন আপনার জীবন শেষ করে দেবে। ভাবতে পারো গণপতি? দুটি যুবতী কামাতুর মহিলাকে বিয়ে করেও ব্রহ্মচারীর জীবনযাপন করতে হবে পাণ্ুকে! কিন্তু সে আমার, বেদব্যাসের ছেলে! তার সাজানো বাবার মতো সে অকালে মরতে চায়নি। সে কাম এবং স্ত্রীদের দিকে পিছন ফিরল। ……
…..পাণ্ডুর গল্প এখনই শেষ করা যাবে না। সে মাঝে মাঝেই গল্পগাথা মিশিয়ে তার দুই রানিকে এমন বক্তৃতা দিত যা শুনে কামসূত্রের পাতাগুলিও লজ্জায় গুটিয়ে যেত। কখনও সে মাদ্রীকে বৃহস্পতির নষ্টামির গল্প শোনাত। লজ্জায় লাল হয়ে মাদ্রী শুনত, বৃহস্পতি কেমন করে তার সন্তানসম্ভবা শালী মমতার সঙ্গে সহবাস করতে যান এবং তার ওরস মমতার জরায়ুতে প্রবেশ করবার সময় পেটের সন্তানের পায়ে গিয়ে আটকে যায়। কখনও আবার পাণ্ডু সেই ব্রাহ্মণ যুবকের গল্প বলত, যে হরিণের ছন্মবেশ ধরেছিল যথেচ্ছাচার করবে বলে। কখনও সে কুত্তিকে ব্রহ্মচর্যের মহত্ব নিয়ে জ্ঞান দিত। …..
….“বড়দের এবং শাম্ত্বের কথা মেনেই বলছি, বারোরকম উপায়ে সন্তান আনা যায়। এর মধ্যে ছয় রকমের সন্তানের উত্তরাধিকারের অধিকার রয়েছে। এক, যে সন্তান স্বাভাবিকভাবে পেটে এসেছে। দুই, স্ত্রী যখন অন্য কোনও ধার্মিক মানুষের সঙ্গে সহবাস করেছে। তিন, যখন কাউকে ভাড়া করে স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করানো হয়েছে। চার, পিতার মৃত্যুর পরে যে ছেলের জন্ম হয়েছে। পাঁচ, কুমারী মায়ের ছেলে এবং ছয়, কোনও অসতী মায়ের ছেলে। কুত্তি নির্বাক হয়ে শুনে যাচ্ছিল পাণ্ুর কথাগুলো। ……
….. আমি উত্তরাধিকারী চাই। কাউকে দত্তক নিতে পারবে না। তোমাকে সন্তান প্রসব করতে হবে।” কুস্তি ব্যাপারটা আবছা বুঝতে পারছিল। কিন্তু এসব কথা শুনতে তার মোটেই ভালো লাগছিল না। “আমি তোমার মধ্যে বীজ বপন করতে পারব না। তুমি ব্যাপারটা কী করে করবে আমি জানি না। কিন্তু এমন কোনও পুরুষ খুঁজে নাও যে আমার সমান বা আমার থেকেও বড় হবে সামাজিক সম্মানের নিরিখে কুত্তির চোখেমুখে আতঙ্ক ফুটে উঠল, “আমায় একথা বোলো না। তোমার সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পর থেকে আমি কোনও পুরুষের দিকে তাকাইনি। লোকে এমনিতেই আমায় নিয়ে কানাঘুষো করে। আবার তারা নানারকম কথা বলবে। দুজনে আরেকবার চেষ্টা করি না! ডাক্তাররা অনেক কথাই তো বলে।’ …….
……পাণ্ডু পদ্মাসনে বসে আবার বোঝাতে শুরু করলেন, আমাদের ধর্মগরন্থগুলি পড়লেই বুঝতে পারবে যে একটা সময় ছিল যখন ভারতীয় নারীদের নিজেদের প্রণয়ী খুঁজে নিতে কোনও বাধা ছিল না। এর জন্য মোটেই- তাদের অসতী ভাবা হত না। এ নিয়ে কিছু নিয়মকানুনও চালু ছিল। মুনি-ঝধিরা এই বিধান দিয়েছিলেন যে স্ত্রী তার উর্বর দিনগুলোতে স্বামীসঙ্গ করবে। অন্যান্য দিনে সে তার ইচ্ছামতো সঙ্গী চয়ন করে নিতে পারে। কেরালার নায়ার সম্প্রদায়ের মানুষ দেখে নিতেন যে স্ত্রীর ঘরে বাইরে অন্য পুরুষের চটি খুলে রাখা আছে কি না। ইদানীং আমরা সেই সব সনাতন হিন্দু প্রথা ভুলতে বসেছি। ……আমাদের পরদা প্রথা বহু প্রাচীন। আমরা অন্য সভ্যতার থেকে ঠিক-বেঠিকের পাঠ নেব কেন? এক পুরুষ এবং এক নারীর বিয়ে এবং আজীবন একনিষ্ঠ প্রেম, এ সব হল ইদানীংকালের সংস্কার। আমাকেই দ্যাখো না, আমার কি দুটো বউ নেই? পারো। এটা জেনো যে যত তুমি নিজের সভ্যতার গভীরে অবগাহন করতে পারবে, তত উদার মনের হবে।………..
…..পান্ডু ঠিক করে দিয়েছিল কোন কোন ব্যক্তি কুন্তির শয্যাসঙ্গী হবে, ৮৫ যাতে তাদের গুণাবলি ছেলেদের মধ্যে বর্তীয়। প্রথমে কুস্তীর প্রণয়সঙ্গী হলেন হাইকোর্ট-এর সর্ব কনিষ্ঠ ভারতীয় জজ। ধরে নেওয়া যাক তার নাম ধর্ম। আসল নামটা বললে অনেকের গায়ে লাগতে পারে। যদিও অনেকেই জানে নামটা। ধর্ম ছিল উচ্চবংশের সুপুরুষ । শিক্ষিত এবং সম্মানিত ব্যক্তিত্ব। সে অত্যন্ত আদর্শবাদী ছিল। কুত্তির সঙ্গে এই অবৈধ সম্পর্ক তাকে অস্বস্তিতে ফেলত। কিন্তু কুত্তি একদিন হঠাৎ তাকে ছেড়ে চলে গেল। ততদিনে অবশ্য তার গর্ভসঞ্চার হয়ে গেছে। ধর্ম তা জানত না। কুত্তির হঠাৎ চলে যাওয়াটা সে মানতে পারেনি। যে ছেলেটি জন্মাল তার চওড়া কপাল হল কোমলম্বভাব দেখে নাম রাখা হল যুধিষ্ঠির। পাণ্ডু বলে যে কুত্তির প্রসব যন্ত্রণা যখন তুঙ্গে, তখন সে দৈববাণী শুনেছিল যে এই শিশু তার সত্যনিষ্ঠা এবং ন্যায়পরায়ণতার জন্য বিখ্যাত হবে একদিন। আমার অবশ্য ধারণা, পাণ্ড রাত অবধি জর্জ ওয়াশিংটনের জীবনী পড়তে পড়তে ঢুলে পড়ে স্বপ্ন দেখেছিল।
প্রয়োজনের চেয়ে বেশিদিন কুন্তি ধর্মের বক্ষলগ্না হয়ে থাকবে, পান্ডু তো! তা চায়নি। কুত্তি নিজেও এক সঙ্গীতে বেশিদিন সন্তুষ্ট থাকার পাত্রী ছিল না। আসলে বহু সঙ্গীর দ্বারা যৌন আনন্দ, সন্তান প্রসবের মজা বহু মহিলাই পেতে চায়। সাহস হয় না। এবারের কুস্তির সঙ্গী হল মেজর বায়ু। হস্তিনাপুর প্যালেস গার্ভ-এর সামরিক প্রধান। কর্দদন পরেই অবশ্য প্যালেস গার্ড ভেঙে দিয়ে ইংরেজ সরকার রাজ্যটিকে অধিগ্রহণ করে নেয়। বায়ু বড়সড় চেহারার শক্তপোক্ত মানুষ। কিন্তু বড্ড বদমেজাজি ছিল। সে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই কুত্তির জীবনে প্রবেশ এবং প্রস্থান করল। রেখে গেল ভীম-এর বীজ। পাণ্ডুর দ্বিতীয় পুত্র। সেবাদাস মহলে ভীম-এর বীর বলে পরিচয় ছিল। তার পরিচারিকারা তাকে ভারী ভীম বলেই ডাকত। ছোট কপাল, খুদে চোখ আর জোড়া ভুরু দেখেই বোঝা যেত যে, সে তার বড় ভাইয়ের মতো পাণ্তিত্যের অধিকারী হবে না। তার মায়ের মতো সুন্দরও সে হয়নি। কিন্তু গায়ের জোরে তার সঙ্গে এটে ওঠা দীয়। তাকে মায়ের জরায়ু থেকে বার করতে গিয়ে ডাক্তারের কবজি ফ্র্যাকচার হয়ে যায়। তারপর সিজারিয়ান সেকশন করে ভীমকে বের করেন।
কুত্তি কিছুদিনের মধ্যেই ভীমকে বুকের দুধ দেওয়া বন্ধ করল। এক মিনিট দুধ খাওয়াতেই তার হাঁপ ধরে যেত। ভীমের জন্য লোহার খাট আনতে হল, দুবার সে লাথি মেরে তার কাঠের খাট ভেঙে দিয়েছিল। আয়ারা তাকে রাখতে পারত না। পুরুষ পরিচারক মোতায়েন করা হয়েছিল। সে আবার কুস্তিগির। একবার একটি আয়া ভীম-এর ভার রাখতে না পেরে তাকে হাত থেকে ফেলে দিয়েছিল একটা পাথরের ওপর। পাথরটাই গুঁড়ো হয়ে যায়। কিন্তু পাণ্ড দুটি ছেলেতে সন্তুষ্ট ছিলেন না। তিনি এমন একটি ছেলে কামনা করেন যার মধ্যে যুধিষ্ঠিরের বুদ্ধিসত্তা আর ভীমের বীরত্ব, দুইই থাকবে। পাণ্ডু যোগাসন আর ধ্যান করা শুরু করল আবার। এক পায়ে অনড় হয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা দীড়িয়ে থেকে সে ঈশ্বরদের নিজের বশে আনতে সক্ষম হল। কুত্তিকে তার সমস্ত জীবনীশক্তি বাচিয়ে রাখতে বলে, পাণ্ডু প্রার্থনা শুরু করল তৃতীয় পুত্রের জন্য। সেই সময়ে পাণ্ড এক পবিত্র ব্রাহ্মণ, দেবেন্দ্র যোগীকে নেমন্তন্ন করে নিয়ে এলেন। এই ভগবানতুল্য ব্রাহ্মণের শয্যাসঙ্গিনী হয়ে কুত্তির অনেকভাবেই লাভ হয়েছিল। অর্জন জন্মাল শেষে। একহারা চেহারা অথচ শক্ত পেশি, তীক্ষ বুদ্ধি আর ছুরির ফলার মতো চোখ, সুপুরুষ চেহারা। হাওয়ার মতো গতি ছিল তার। দৈববাণী হয়েছিল, পাণ্ডুর এই ছেলে বিষণ এবং শিবের, সষ্টা এবং ধ্বংসের-_দুজনেরই প্রিয় হবে। অর্জনের জন্ম দিয়ে পরিশ্রান্ত কুত্তিও এই দৈববাণী শুনেছিল। হিমালয়ে মুনি খষিরা এবং কারখানায় কর্মরত মানুষ আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখল।
আমি দেশদ্রোহী বক্তৃতা দিচ্ছিলাম একটা গ্রামের পঞ্চায়েতকে। আমিও শুনতে পেয়েছিলাম। সবাই আনন্দে মুখর হল। কুত্তিও স্বর্গলোকের এই মনোভাব দেখে প্রণয়লীলা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিল। সে অবাক হল পরের ওরসজাত ছেলে নিয়ে পাণ্ডুর আনন্দ দেখে। কিন্তু আবার ছেলের কথা বলতেই এবার কুত্তি রেগে গেল। “তুমি তো বলেই খালাস! তোমাকে তো আর সন্তান ধারণ করার শারীরিক অস্বস্তি ভোগ করতে হয় না। দিনের পর দিন বমি করা, বিরিয়ানি, মদ খেতে না পারা আর দোলনায় চড়তে না পারার কী কষ্ট তুমি কি জানো? সুন্দরী কুত্তি একটা সিগারেট হোল্ডারে সিগারেট ঢুকিয়ে পাণ্ডুর জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। পাণ্ডু কিছু বলার আগেই কুত্তি তার শেষ বাণটা মারল। “আমিও কিছু কিছু শাস্ত্র পড়েছি। জেনেছি, যদি কোনও মহিলা পাঁচজন পুরুষসঙ্গ করে, তাহলে সে নোংরা, যদি সে ছয়জন পুরুষ-এর সঙ্গে শোয়, তাহলে সে বেশ্যা। তুমি কি এটা জানো না পাণ্ডু বলল, “ঠিক আছে। যা তোমার ইচ্ছা তাই করো।……
……পাণ্ডু আরও কিছু বলত। কিন্তু মাদ্রী তাকে মৃদু ভর্সনা করল, “আমি অভিযোগ করছি না। কিন্তু তুমি কুত্তিকে আমার থেকে অনেক বেশি কদর করো। ভূলে যেও না, কুত্তি রাজার দত্তক নেওয়া মেয়ে, আমি কিন্তু সত্যিকারের রাজকন্যা। আমার দ্বারাও তোমার উত্তরাধিকারী পাওয়া উচিত।, পাণ্ডু শুরুতে তাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। শুধু শুধু নিজের স্ত্রীর সতীত্ব নষ্ট হতে দিতে চাইত না সে। কিন্তু পাণ্ডু এবার মত পালটাল। “ঠিক আছে মাদ্রী, তোমাকে আমি একবার মাত্র অন্য পুরুষের সঙ্গে শোওয়ার অনুমতি দেব। নইলে হস্তিনাপুরে আমি হাসির খোরাক হয়ে যাব।’ আনন্দে মাদ্রীর বিশাল বুক দুটো নিঃশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে ওঠানামা করতে থাকল। পাণ্ডুর মনটা খারাপ হয়ে গেল। সে অন্যদিকে তাকাল। মাদ্রী তার কথা রেখেছিল। সে প্রেম করেছিল এক জোড়া যমজ পুরুষের সঙ্গে। অশ্বিন আর অশ্বিন। তাদের দুজনের নামও এক এবং একসঙ্গেই তারা সব কাজ করত। মাদ্রীর সুখের সীমা রইল না। সে : অঙ্গীকার ভঙ্গ না করেও দ্বিগুণ যৌন আনন্দ উপভোগ করল। এর ফলস্বরূপ তার একটি নয়, দুটি সন্তান হল। ছেলে। পাণ্ডুর লব-কুশ নাম পছন্দ হল না, কোনও নতুনত্ব নেই। শেষে মাদ্রীর ছেলেদের নাম হল নকুল ও সহদেব। …..
………মাদ্রীকে ধরে চুম্বন করে লালসা জাগল মনে ভুলে গেল সেই ডাক্তারি বাণী মারা যাবে প্রাণ ধনে। মাদ্রী বারে বারে সাবধান করে এবার গেল হেরে পা্ড তখন জাগ্রত পশু, মত্ত কামের জেরে “তোমায় চাই এই মূহুর্তে” বলে করে চলে সহবাস মাদ্রী এবার সব কিছু ভুলে খুলে ফেলে বেশবাস ‘আরও জোরে, আরও জোরে” বলে শীৎকার করে সে জানি জানি সব, সামলাও এবার বুঝবে আমি কে” অপূর্ব! আমি তৃপ্ত, স্বামী, তোমার কথা বলো, তারপর পাগ্ুর দিকে তাকিয়ে তার সম্বিত ফিরল। কী হল তোমার? নিথর কেন? হায় হায় হায়! হে ভগবান, নিষ্ঠুর তুমি, আমায় কেন নয়?, ……..
……..বাকি সময়টা জর্জিনার উষ্ণতায় জেগে উঠত ধৃতরাষ্্র। আর সে উষ্ণতার তাপ যে ধীরে ধীরে দুজনকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেবে, তাতে আর সন্দেহে আছে কি? তারা দুজনে যখন মিলিত হত জর্জিনার নরম প্রশস্ত বিছানায়, তখন চন্দনের সুগন্ধে চারিদিক ম-ম করত। মনে হত যেন প্রকৃতিই গুঢ় অভিসন্ধি করে তাদের দুই শরীর-মনের মিলন ঘটিয়েছে। আর নিয়মিত মিলন যখন শীৎকারে, আশ্লেষে তীব্র হল, ধৃতরাষ্ট্র যখন জলপ্রপাতের উচ্ছাস টের পেল, তখন মনের আয়নায় সেই প্রপাতের রং দেখল গেরুয়া, সাদা আর সবুজ। ………
…….কিন্ত মেয়ে শুনল না যে বসন খুলে দেয়, অপলক ভীম চেয়ে রয় তার এ কী ভীষণ দায়! বুক যেন তার দুটি শঙ্খ, সরু কটিদেশ তার, চওড়া নিতশ্ব, সুঠাম উরু, মাঝে বিম্ময় অপার। ভীমের পৌরুষ জেগে উঠেছে বাঁধন মানে না আর, কিন্ত হঠাৎ দানব হাজির সেথায়, এক হুঙ্কার! “বেশ্যা মাগী” দস্যু চেঁচায় রক্তচক্ষু বিস্ফারিত, নাক দিয়ে তার আগুন ঝরে, বোনকে করবে দলিত। …….
……পাঁচটি বিয়ে পরপর পাঁচ রাত্রে অনুষ্ঠিত হল। আমার বাবা পরাশরের কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষা প্রতি রাব্রে প্রয়োগ করল দ্রৌপদী। কুমারিত্ব অক্ষুণ্ন রেখে প্রতি স্বামীর শয্যাসঙ্গিনী হল। ….
…..পাচ ভাইকে নিয়ে দ্রৌপদী সম্বন্ধীয় কিছু আইন তৈরি করলাম। দ্রৌপদীকে ভাগ করে নেওয়া তো সহজ কাজ নয়। তাই প্রত্যেকের জন্য তৈরি হল তার প্রাপ্তির তালিকা। স্বাভাবিকভাবে বড়রা কিছু বাড়তি সুযোগের অধিকারী হলেন। মাসের কয়েকটা অসুবিধের দিন দ্রৌপদীর নিজস্ব। যদি কোনো ভাই অন্য ভাইয়ের সম্তোগে বাধা দেয় তাহলে তাকে পরিবার থেকে বারো মাসের জন্য বহিষ্কার করা হবে। ……
…..এরা কঠিন পারিবারিক অনুশাসনে আবদ্ধ ছিল। এক ভাই কোনওভাবে অন্য ভাইয়ের সন্তোগ সুখের সময়তে অনুপ্রবেশ করত না। করলেই এক বছরের জন্য ঘরছাড়া হতে হবে। …….
…..অর্জুন বয়ানটা শোওয়ার ঘরে রেখেছিল। আনতে গিয়ে দেখল, যুধিষ্ঠির আর দ্রৌপদী সেখানে রতি সুখ লিণ্ত। সে কয়েক মুহূর্ত ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে ভাবল, ঘরে ঢোকা মানেই পরিবার থেকে এক বছরের জন্য বহিষ্কৃত হওয়া। আবার ঘরে না ঢোকা মানে আমাকে অমান্য করা। মনে-মনে সে বোধহয় নির্বাসন চাইছিল। অর্জুন চুপচাপ ঘরে ঢুকে কাগজটা নিয়ে বেরিয়ে গেল। দুই নগ্ন নারীপুরুষ তাকে লক্ষ্য করল না। ঘরের বাইরে যুধিষ্ঠির যখন এল, তখন অর্জন তাকে সত্যিকথা বলল। “তাহলে তোমায় এক বছরের জন্য বেরিয়ে যেতে হবে। দুঃখের কথা, কালকে তোমার দ্রৌপদীকে পাওয়ার দিন ছিল। ভীম যে নেই। কিন্তু তোমার কপাল খারাপ।” “আমার হয়ে তুমিই সঙ্গ দিও দাদা। তুমি তাকে বেশ সুখী করতে পেরেছ।” অর্জুন বলল। “এ কী কথা! আমি এমনিতেই সব ভাইদের রুটিনে কিছু বদল আনার কথা ভাবছিলাম, যাতে সবাই দ্রৌপদীকে সমানভাবে পায়। অর্জুন, তুমি তোমার ভাষা মার্জিত করো।” যুধিষ্ঠির কঠিনস্বরে বলল, শুণ্ু-উপশুণ্ডের কাহিনি ভূলে যেও না। …..
…..অর্জন তার নির্বাসনের দিনগুলো বিফলে যেতে দিল না। একদিকে সে তার কাগজের জন্য ভ্রাম্যমাণ সাংবাদিকের কাজ করল, অন্যদিকে বহু নারী সঙ্গ করল। খবরের জন্য যেখানে যেখানে সে রাত কাটিয়েছে, সেখানেই নতুন নতুন প্রেমকাহিনি রচনা হয়েছে। হরিদ্বারে গঙ্গার ধারে সে পেয়েছিল উলুপিকে। এই নাগা সুন্দরী তাকে জলের তলায় রতিক্রিয়ার আনন্দ শিখিয়েছিল। মণিপুরে সে পেয়েছিল চিত্রাঙ্গদাকে। যে নাচের বিভিন্ন মুদ্রা দিয়ে সন্তোগের আনন্দের সন্ধান দিয়েছিল। খাজুরাহো থেকে একদিকে অর্জুন খবর পাঠাল তার কাগজে। সে জানত, খাজুরাহো দেশের অন্যতম পর্যটক আকর্ষণ হয়ে উঠবে। ওখানেই সুন্দরী য়াগা অর্জ্নকে আশ্চর্য করে দিল তার ভাঙ্কর্য নিয়ে পাণ্ডিত্যের গভীরতায়। তাদের তীব্র শরীরী প্রেম মন্দিরের গায়ের ভাস্কর্যের রূপ নিল। ….
…….অর্জন সময় নষ্ট না করে গাড়ি ব্যাক করে আবার এ-গলি সে-গলি ঘুরতে লাগল। কিন্তু সুভদ্রা কই? হঠাৎ তাকে দেখতে পেল। আলো ছায়ার মাঝে হেঁটে চলেছে স্কার্ট পরা মেয়েটি। কোমর অল্প দুলছে। অর্জন সময় নষ্ট না করে জোরে চালিয়ে এগিয়ে গিয়ে দীড়াল। গাড়ির গা ঘেঁষে দীড়িয়ে রইল। যেই মেয়েটি কাছাকাছি এল, হঠাৎ লাফিয়ে পড়ে এক হাতে তার মুখ ঢেকে অন্য হাতে তাকে গাড়ির পেছনের সিটে তুলল। মেয়েটি প্রাণপণ কিল, চড়, লাথি চালাতে থাকল। অর্জুন তাকে চুমুতে ভরিয়ে দিতে দিতে বুঝল, মেয়েটি আর বাধা দিচ্ছে না। চুম্বন ফিরিয়ে দিচ্ছে। খানিকক্ষণের মধ্যেই অর্জন তার স্কার্ট তুলে ফেলে প্যান্টি নামিয়ে এতক্ষণের টানটান উত্তেজনা থেকে মুক্তি লাভ করে স্বস্তি পেল। “তোমাকে ভালোবাসি সুভদ্রা। বলে তার বুকে অর্জন মাথা রাখল। “তোমার খুব তাড়া নাঃ? আগে এইভাবে কখনও আমার হয়নি। গলাটা কর্কশ। অর্জুন-এর মনে হল, কে যেন এক বালতি বরফ জল তার গায়ে ফেলল। সে তাড়াতাড়ি গাড়ির আলো জ্বালিয়ে দিল। চল্লিশ টাকা আমার রেট। একটা হোটেলঘরে গেলেই হত! আমার নাম কামেশ্বরী। সুভদ্রা নয়।” …….
……“দুঃশাসন, তুমি দ্রৌপদীকে সাহায্য করো!” কর্ণ আবার তার সেই শয়তানের হাসিটা হাসল। দুঃশীসন এগোতেই দ্রৌপদী চিৎকার করে উঠল। নাহ! আমায় ছেড়ে দাও! ততক্ষণে তার কীচুলি খুলে দিয়ে তার স্তনদুটো সকলের সামনে অনাবৃত করে দিয়েছে দুঃশীসন। পাগুবরা চোখ বন্ধ করে দীতে দীত ঘষছে। দ্রৌপদী দুহাতে তার লজ্জা ঢেকে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। “আমাকে এত অপমান কোরো না। আমি তোমাদের ক্রীতদাসী।” চুপ করো। যার পাঁচ স্বামী তাকে ভক্ষণ করে, তার আবার কীসের মান-অপমান? কর্ণ বলে উঠল। “হে কৃষ্ণ! আমায় বাঁচাও । দ্রৌপদী আর্ত চিৎকার করে উঠল।” দুঃশাসন তার শাড়ি খুলে নিতে উদ্যত হয়েছে। তারপর এক অবিশ্বীস্য দৃশ্য দেখলাম। যতই দ্রৌপদী মাটিতে গড়ায়, তার শাড়ি তত লম্বা হয়ে যায়, দুঃশাসন টেনেই চলে। তবু দ্রৌপদীকে নগ্ন করতে পারে না।…..