উৎস : -পরকীয়া প্রেম – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সম্পাদিত
“হেনরি ফিল্ডিং তার উপন্যাস টম জোন্স-এর জন্য সুপরিচিত, এলবার্ট ফিনি এবং সুমানা ইয়ার্ড এই উপন্যাসের নায়ক নায়িকা। এই কাহিনী তাঁর প্রারম্ভিক উপন্যাস থেকে নেওয়া। এই লেখাটি মনে করিয়ে দেয় ফিল্ডি-এর বিচিত্র ধরনের সুন্দর রসবোধ, কৌতুকপ্রিয়তা এবং স্বাভাবিক উদারতাবোধ। সুন্দরী পরিচারিকার সঙ্গসুখে এক অনাবিল তৃপ্তির স্বাদ পাওয়া, যার আনন্দময় কৌতুক মেয়েটি নিজেই অস্বীকার করতে পারে না, শরীরী মিলন তাকে সুখ প্রাপ্তির প্রচুর সুযোগ করে দিয়েছিল, সেই ক্ষণিকের যৌন অভিজ্ঞতা বারবার তার দেহ-মনে একটা নিরবিচ্ছিন্ন কৌতুহল জাগিয়ে তুলতে রাতের পর রাত..”
সব সময়েই ওর মধ্যে একটা ভয়ঙ্কর ব্যস্ততা, এ ঘর থেকে ও ঘরে, একজনের হৃদয় থেকে অন্য একজনের হৃদয়ে প্রবেশ ও প্রস্থান, এতো সব ব্যস্ততার উপলক্ষ্য তো সেই একটিই মেয়ে বেটি। সুন্দরী, তন্বী ও যুবতী, এসব ছাড়াও আরও কিছু ভালো ভালো গুণ ছিল, যা উল্লেখ না করলে ওর প্রতি ভয়ঙ্কর একটা অবিচার করা হয়ে যাবে। ওর মধ্যে ছিল একটা ভালো স্বভাবের লক্ষণ, মহত্ববোধ এবং অপরের দুঃখে সমবেদনা জাগাবার সহিষ্ণুতা ও সহনশীলতা। কিন্তু দুর্ভাগ্য এই যে, ওর দেহ-মনের বিন্যাস যে সব উষ্ণ মিশ্র ধাতুতে গড়া, তাতে আশ্রমবালিকার পবিত্রতা হয়তো বেশ সুন্দর অথচ অশুভ যা কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কিন্তু একটা সরাইখানার পরিচারিকা হিসেবে কাজ করার সময় সেখানকার আবহাওয়া এবং পরিস্থিতিতে ওর মনের সব দৃঢ়তা কেমন তাসের ঘরের মতো ভেঙে রেণু রেণু হয়ে গুড়িয়ে পড়ে, তখন ও আর নিজেকে সংযত রাখতে পারে না। বিচলিত হয়ে উঠতে বাধ্য হয়।
সরাইখানায় কত রকম চরিত্রের লোকেরই যাতায়াত, এখানে এলেই এখানকার পরিচারিকাদের এক একজন কত সহজেই না প্রেমিক হয়ে যায়, তার ওপর যদি কোনো পরিচারিকা সুন্দরী এবং বলা বাহুল্য যুবতী হয়, তাহলে তো কথাই নেই।
ইনিয়ে-বিনিয়ে প্রেম নিবেদন। তারপর সরাইখানায় খদ্দের হিসাবে ধরে রাখতে সময়ে-অসময়ে তাদের আদর-আবদারও সহ্য করতে হয়, শয্যাসঙ্গিনী হওয়ার জনো তাদের সনির্বন্ধ অনুরোধ রাখতেই হয়, যে মেজাজ বা মনোভাবেরই লোক হোক না কেন সে। এমনকি কখনো কখনো সামরিক বিভাগের কোনো কোনো সুন্দর সভ্য-ভব্য ভদ্রলোকের বিপজ্জনক আহ্বানে সাড়া দিতে হয় ওকে, তাকে খাতির করতে সারাটা বছর ধরে তার সঙ্গী সাড়া দিতে হয় ওকে, তাকে খাতির করতে সারাটা বছর ধরে তার সঙ্গী হতে হয় বৈকি। এসব ছাড়াও সময় সময় পথচারী, কোচওয়ান কিংবা সরাইখানার পরিচারকদের মনোরঞ্জন করতে হয় ওকে। এইসব সামরিক বাহিনীর ক্ষণিকের প্রেমিক-অতিথিরা তাদের প্রেমের অশ্রু হিসেবে ওর ওপর ব্যবহার করতে চায় চুম্বন, মিথ্যে আশার প্রলোভন, উৎকোচ প্রদান এবং প্রেমের জ্ঞান-ভাণ্ডারে যত রকম অস্ত্র আছে সবই ওর বিরুদ্ধে প্রয়োগ করতে চায় তারা।
একুশ বছরের যুবতী বোট আজ তিন বছর হল এই বিপজ্জনক অবস্থায় বাস করছে, এই সময়ে বেশ ভালোভাবেই নিজেকে সেই সব বিপদের সম্ভাবনা থেকে মুক্ত রাখতে পেরেছে। আবার এই সময়েই বেটি ওর জীবনে এমন এক ব্যক্তির পদধ্বনি শুনতে পেয়েছিল যে কিনা ওর হৃদয়ে একটা গভীর ছাপ ফেলে দিতে পেরেছিল। হ্যাঁ, অবশ্যই বেটির মধ্যে একটা অগ্নিশিখা জ্বালিয়ে দিতে পেরেছিল, যে আগুন একবার সেই প্রেমিকটিই নেভাতে পারতো। এ এক বিচিত্র প্রেমের জ্বালা। বেটি যখন ওর সেই প্রেমিক প্রবরটির জন্যে ভেতরে ভেতরে জ্বলছে, ওর হৃদয় জ্বলে-পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে, তখন বহু পুরুষ আবার ওকে না পাওয়ার জ্বালায় জ্বলে-পুড়ে মরছে। সামরিক অফিসাররা, পশ্চিমাঞ্চলে ভ্রমরত যুবকেরা, মহিলাদের নিরীহ সঙ্গীরা এমনকী কবর খননকারীরা পর্যন্ত ওর তীব্র আকর্ষণে ছটফট করতে থাকে।
অবশেষে বেটি ওর প্রথম অসুখী আবেগের প্রচণ্ডতা সম্পূর্ণভাবে কাটিয়ে ওঠার পর চিরস্থায়ীভাবে কৌমার্যব্রত গ্রহণ করার জন্যে শপথ নিল। বেটি প্রেমিকদের সমস্ত দুঃখ-কষ্ট ও যন্ত্রণা দেখেও বোবা বনেছিল দীর্ঘদিন ধরে। এভাবেই ও নিজের সতীত্ব রক্ষা করে চলছিল। এই সময় পাশেই একটা মেলায় সরাইখানার অশ্বরক্ষক জন-এর বক্তৃতা ওর ওপর দ্বিতীয়বার প্রভাব পড়ল। লোকটির মাথায় স্ট্র-হ্যাট এবং বগলে মদের একটা বোতল।
যাইহোক, এই উপলক্ষে বেটি ওর আগের প্রণয়ের ফলস্বরূপ সেরকম কোননা উত্তেজনা বা উত্তাপ অনুভব করেনি। এমনকী সেই একজন বিচক্ষণ যুবতী তার প্রেমিকের আদর ও সোহাগের নিরঙ্কুশ প্রশ্রয় থেকে আগে ভাগে টের পেয়ে গেছিল, আর এর থেকে ওর সতর্ক হওয়াটাই ওকে অশুভ প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে পেরেছিল। পরে অবশ্য বেটির মধ্যে একটা অদ্ভুত পরিবর্তন লক্ষ করা যায়, জন-এর প্রতি ওর আনুগত্য, ভালোবাসায় একটু ঘাটতি কিংবা বলা যায় অবিচলিত না থাকার দরুন, জন-এর সঙ্গে কোচওয়ান টম হুইপওয়েল এবং যখন তখন এক একজন তরুণ ভ্রমণার্থীদের অনুগ্রহ করে সে।
মিষ্টার টো-উজ কিছুদিন ধরে এই যুবতীর ওপর কুদৃষ্টি ফেলে রাখছিল। সুযোগ পেলেই ওর কানের কাছে ভালোবাসার বুলি আওড়াতে। ইনিয়ে-বিনিয়ে কখনো বা কু-প্রস্তাব দিতেও ছাড়তো না, কখনো বা জড়িয়ে ধরে ওর গাল টিপে দিত, স্তনে চাপ দিয়ে মোচড় দিত, আবার এক এক সময় ওর ঠোটে চুমু খেতে। মিসেস টো-উজের জন্যে তার সেই আবেগের প্রচণ্ডতা একটু প্রশমিত হলেও, তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে বেশী সময় লাগে না। যেমন এক জায়গায় নদীর প্রবাহিত জলের স্রোতে বাধা সৃষ্টি করলে স্বভাবতই সেই স্রোত অন্য দিকে বাঁক নিতে বাধ্য। ওদিকে মিসেস টো-উজ হয়তো উপলব্ধি করে থাকবে, অন্য নারীর প্রতি তার স্বামীর আসক্তি। এবং সম্ভবত তার মেজাজের স্বাভাবিক মিষ্টতায় স্বামীর এই অন্যায় খেলায় তেমন কোনো প্রভাবই ফেলতে পারে না, কারণ প্রতিদিন সূর্য ওঠার মতোই স্বামীর কাছে তার স্ত্রী ধ্রুব সত্য। স্ত্রী যেমন উজ্জ্বল হয়ে উঠতে, স্বামীর মনোরঞ্জনের উদ্দেশ্যে নিজেকে উষ্ণতা অনুভব করতে সমান পারদর্শিনী সে। আসলে তার সব বক্তব্যের একটাই মূল সূত্র হল, যেমন আকর্ষণে স্বামীরা পর-নারীদের প্রতি আকৃষ্ট হয় কিংবা অন্য নারী তাদের চটুল ছলাকলা দেখিয়ে পর-পুরুষদের আকর্ষণ করার ফাঁদ পেতে থাকে, সেগুলো যদি তারা নিজেরাই যে যার বাড়িতে বসে তাদের স্বামীদের দেখাবার চেষ্টা করে, মনে হয় এতে তারা ফল পেতে পারে হাতে হাতে। স্ত্রীরাই যদি স্বামীদের চাহিদা মতো অন্য নারীর অভাব পূরণ করে দিতে সক্ষম হয়, তাহলে কেনই বা তারা বহির্মুখী হতে যাবে?
যোসেফের আবির্ভাবের পর থেকেই ভয়ঙ্করভাবে তাকে পছন্দ করার ভাব প্রকাশ করতে থাকে বেটি। ওর এই আকর্ষণবোধ উত্তরোত্তর বাড়তে বাড়তে একটা বিস্ফোরণ ঘটে যেতে পারে। বিস্ফোরক পদার্থে বিস্ফোরণ ঘটাবার জন্যে যেমন দেশলাই কাঠির প্রয়োজন হয়, তেমনি এই মুহুর্তে বেটির বিস্ফোরক দেহে বিস্ফোরণ ঘটাতে প্রয়োজন একজন পুরুষের, মনের মতো পুরুষ দেশলাই কাঠির মতো সেই কাজ করবে ওর দেহে অগ্নিসংযোগ করে বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্যে। আর সেই দেশলাইকাঠিটা এখানে যোসেফ। ওদিকে যোসেফেরও জায়গাটা ক্রমশই ভালো লাগছিল, এক অনাস্বাদিত আকর্ষণবোধ করছিল। সে আকর্ষণের গুঢ় অর্থ বোধহয় যোসেফ নিজেই জানতো না, তা বেটি কি করে জানবে? সব কিছুই অজানা তখন বেটির। ও তখন জানতো না কোন পথে পদক্ষেপ করতে চলেছে ও। স্রেফ মোহে, হ্যা একটা মোহের আবর্তে পড়ে ও তখন লাটুর মতো পাক খেতে চাইছিল ওর স্বপ্নের রাজকুমার যোসেফের চারপাশে। সরাইখানার পরিচারিকা হিসাবে বেটির কাজ ছিল বোর্ডারদের ঘর পরিষ্কার রাখা এবং বিছানাপত্তর গোছগাছ করা। সেদিন সেই ভয়ঙ্কর রাতটা ছিল প্রচণ্ড শীতলতম। যোসেফের বিছানাটা তখন বরফের মতো ঠাণ্ডা, তাই তার বিছানাটা গরম করতে গরম-প্যান ব্যবহার করছিল ও। যোসেফের বিছানা গরম করতে গিয়ে ভেতরে ভেতরে ও নিজেই এতই গরম হয়ে উঠছিল, এবং ওর আবেগ এমনি চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছিল, এবং এমন নিখুঁত ভাবে পরিকল্পিত হয়েছিল ওর বিনয় ও নম্রতার গুণে যে, অনেক ব্যর্থ আকার ইঙ্গিত এবং পরোক্ষ ইশারা সত্ত্বেও যোসেফ যখন সাড়া দিল না, অবশেষে ও তখন গরম-প্যানটা নিচে মেঝের ওপর ছুঁড়ে ফেলে দু’হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল যোসেফকে, ওর মধ্যে প্রচণ্ড কামনা-বাসনা, বেটির উচ্ছ্বাস তখন এমনি এক পর্যায়ে পৌঁছে গেছিল যে, যোসেফ তখন ওর কাছে যেন এক রাজপুত্তর, পৃথিবীর সেরা সুপুরুষ যাকে ও আগে কখনো দেখেনি। তাই যোসেফকে একান্তে কাছে পেতে সবকিছু করতেই প্রস্তুত, এমন কি যদি সে চায় তার সামনে সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে দাঁড়াতেও প্রস্তুত ছিল বেটি তখন। ভাবা যায় না, বিশ্বাস করা যায় না, এই সেই বেটি যে কিনা যোসেফের সঙ্গে দেখা হওয়ার আগে পর্যন্ত নিজের সতীত্ব রক্ষার্থে অবিচল ছিল, কোনো পুরুষ ওকে স্পর্শ করা দূরে থাক, কোনোরকম প্রলোভনে প্রলুব্ধ পর্যন্ত করতে পারেনি ওকে। বিচিত্র নারী, তার চেয়েও বিচিত্র বোধহয় তার মন!
ওদিকে যোসেফ কিন্তু এ সবের জন্যে একেবারেই প্রস্তুত ছিল না। বেটি যে অমন এক অভাবনীয় দৃশ্যের অবতারণা করতে পারে, সেটা ছিল তার ধারণার অতীত, কল্পনার বাইরে। সে তখন ভয়ঙ্কর বিভ্রান্ত, হতভম্ব, দ্রুত বেটির আলিঙ্গন ছিন্ন করে লাফিয়ে উঠল। তারপর ঘটনার আকস্মিকতা কাটিয়ে ওঠার পর স্পষ্টতই বেটির অমন সৃষ্টিছাড়া আচরণের বিরোধিতা করে প্রতিবাদ করতে গিয়ে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলে উঠল, একজন যুবতী মেয়েকে অমন নম্রতা, শালীনতা বিসর্জন দিতে দেখে অত্যন্ত দুঃখিত সে। এমনটি সে আশা করেনি বেটির মতো মেয়ের কাছ থেকে।
বেটির কিন্তু তাতে কোনো রকম ঐক্ষেপ নেই, যোসেফের কথাগুলো এক কান দিয়ে শুনে অপর কান দিয়ে বার করে দিল। শুধু কি তাই, ও তখন এমনি এক কঠিন জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছিল যে, সেখান থেকে পিছু হটে আসা সম্ভব নয়। এবং বেটি তখন এমনি এক অভব্য ব্যবহার করল যে বেটির অপ্রত্যাশিত প্রেম-নিবেদনে সাড়া দেবার পরিবর্তে যোসেফ ওর এমন অশালীন ব্যবহারের বিরোধীতা করে ওকে দু’হাত দিয়ে ধরে কার্যত ধাক্কা দিয়ে তার ঘর থেকে বার করে দিল। এবং ভেতর থেকে নিজের ঘরটা বন্ধ করে দিল।
যদি কোনো পুরুষের মধ্যে মানসিক দৃঢ়তা থাকে এবং তার সংযম সব সময়েই নিজের ক্ষমতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, তাহলে তার আনন্দ কত যে অপরিসীম হয় তা বোঝাতে কোনো অসুবিধে হয় না। ঠিক এই কারণেই যোসেফের দৈহিক শক্তি সব সময়েই সক্ষম থাকে বলে নিজেই প্রতিরোধ করতে পারে, যেমন সহজেই বেটির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারল। আর তাই কি বেটির মতো দুর্বল চিত্তের একজন নারী তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ করে তাকে ওর সঙ্গে সেই মিলনে লিপ্ত করতে পারল না!
এমন হতাশায় বেটি প্রচণ্ডভাবে উত্তেজিত হয়ে উঠল। দুর্বার ক্রোধ, আবেগ আর কামলালসা ওর হৃদয়টাকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। যেমন দু’টো দড়ির প্রান্ত দুটি ভিন্ন পথে প্রবাহিত হলে যা হয়। একটা মুহূর্তে যোসেফের বুকে ছুরি বসিয়ে দেবার কথা ভেবেছিল বেটি। আবার পরমুহুর্তেই তাকে নিজের দুই বাহুর মধ্যে আবদ্ধ করতে চেয়েছিল এবং চুমায় চুমায় তার ঠোট রাঙিয়ে দেবার ইচ্ছে হয়েছিল এবং পরের আবেগটা অত্যন্ত ব্যাপক। তারপর ওকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য প্রতিশোধ নেবার কথা ভাবল। কিন্তু ওর উপায় হিসাবে জলে ডুবিয়ে, গলায় ফাস দিয়ে কিংবা বিষপ্রয়োগ করার কথা ভাবছিল, তখন ওর বিক্ষিপ্ত মন কোননা সিদ্ধান্তেই উপনিত হতে পারল না।
এইরকম একটা অস্থির ভাবাবেগের মুহূর্তে আকস্মিকভাবে বেটির মনে পড়ে | গেল, ওর মনিবের বিছানা পাতা হয়নি; অতএব ও তখন সোজা জনের ঘরে চলে গেল। সেই সময় সে তখন তার টেবিলের সামনে বসে নিজের কাজ করতে ব্যস্ত ছিল। তাকে দেখা মাত্র ও তখন ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে উদ্যত হল। কিন্তু সে তখন ওকে ফিরে আসতে বলল। তারপর বেটির একটা হাত ধরে ওকে নিজের বুকের কাছে টেনে নিয়ে ওর স্তনজোড়া চটকাবার ফাকে ফাকে ওর কানের কাছে মুখ নামিয়ে এনে ফিসফিসিয়ে প্রেমের বুলি আওড়াচ্ছিল। আর এক সময় বেটিকে নিবিড় করে কাছে টেনে নিয়ে বেটির ঠোটের ওপর তার ঠোট চেপে ধরে চুমু খেতে থাকল। বেটি তখন সম্পূর্ণভাবে পরাভূত। বেটির দেহমনে আগেই আবেগ সৃষ্টি হয়েছিল। সম্ভবত এমনটিই চাইছিল ও, জন ওকে পরাভূত করুক, বলপূর্বক কৌমার্য হরণ করুক। এবং বেটি মনে মনে চাইছিল ধর্ষিতা হওয়ার জন্যে। আর তাই কি ও নিজেকে সঁপে দিল জনের কাছে, ও এখন জনের হাতের পুতুল, সে ওকে যেভাবে নাচাবে, সেভাবে ও নাচবে। সনাতন প্রথায় সে যদি বেটিকে তার নিচে না শুইয়ে বলে, তুমি আমার ওপরে শশাও, ও তাই করবে নীরবে। বেটির এখন একটাই উদ্দেশ্য যেভাবেই হোক জনকে পাওয়া, নিজের দেহকে তৃপ্ত করা, আর সেটা যদি বিপরীত বিহারে হয়, ক্ষতি কি!
জন-এর তরফ থেকে কেন এই বৈপরিত্য? আমার পাঠক-পাঠিকারা নিশ্চয়ই লক্ষ করে থাকবেন, একটু আগে বেটি যখন স্বেচ্ছায় ওর দেহের নৈবেদ্য সাজিয়ে তুলে ধরেছিল যোসেফের সামনে, সে তখন ওকে গ্রহণ করা দূরে থাক। উপরন্তু ওকে একরকম গলা ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বার করে দিয়ে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল। এ যেন বেটির মনিবের ইচ্ছা অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করে বসে থাকা। না, ঠিক তা নয়, আসলে সেই সময় মিসেস টো-উজ অভাবনীয়ভাবে তার ঘরে ঢুকে পড়ে, এবং সেই মাত্র জন তার স্ত্রী সঙ্গে মিথুন লগ্নে প্রবৃত্ত হয়, আর এটাই হল বিভ্রান্তির কারণ যা আমরা একটু আগে প্রত্যক্ষ করেছিলাম। বর্তমানে এ নিয়ে আর মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই এই কারণে যে, জন বেটিকে গ্রহণ করেছে সর্বান্তকরণে। আমাদের কাছ থেকে বিন্দুমাত্র আভাস না পেলেও আমি অনায়াসে বলে দিতে পারি যে, প্রতিটি পাঠক-পাঠিকা, সে যে ধরনেরই হোক না কেন, কিংবা তার অভিজ্ঞতা থাকুক না কেন, যদিও সে বিবাহিত নয়, সহজেই অনুমান করে নিতে পারবে। এর পরিণতি হল, জন-এর সঙ্গে মিলনে ওর স্বর্গসুখ প্রাপ্তি ঘটেছিল। তবে সেটা সম্ভব হয়েছিল তার স্ত্রীর বদান্যতার দরুণ। মিসেস টো-উজ-এর সঙ্গে তার স্বামীর বোঝাপড়া হয় এই পর্বে যে, ভবিষ্যতে জন এ ধরনের ব্যবহার আর কখনোই করবে না, অর্থাৎ পরনারীর প্রতি আসক্ত হবে না সে।
সব শেষে এখন তার এমনি একটা অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে, তার জীবনের অবশিষ্ট অধ্যায়ে দিনে একবার কি দু’বার তার শর্ত ভাঙার দায়ে প্রায়শ্চিত্য করার কথাটা মনে করিয়ে দিতে হচ্ছে তাকে। তবুও তাতে কোনোরকম ক্রুক্ষেপ বা অনুশোচনা নেই। তার মনোভাব এখন এই রকম : অপরাধ করবো আবার জরিমানা দেব, জরিমানা দিয়ে সেই অপরাধের সুখ অনেক।