আমার পাড়ার মেয়েরা – শঙ্করলাল ভট্টাচার্য

›› গল্পের অংশ বিশেষ  

…..পরিষ্কার করে বলি বরং—মার্লিনকে আমার ভীষণ ভালো লাগে। কী সুন্দর গোলাপি ফরসা রং! লাল টুকটুকে ঠোঁট! সোনালি চুল ঘাড় অব্দি গড়াচ্ছে; চোখে মেমসাহেবি চাউনি (অ্যাংলোরা মেমসায়েব বই কি!) হিলহিলে শরীর দুলিয়ে খট্খট্ হাঁটা; আর আমাকে দেখলেই একগাল হেসে ‘হাও আর ইউ, নিটু?’ সম্বোধন, সবকিছু আমাকে ভেতরে ভেতরে পাগল করে দেয়। মনে হয় ছুটে গিয়ে ওকে জাপটে ধরে একটা চুমু দিই ওর বর সিরিলের কায়দায় !

হ্যাঁ, সিরিলের এইসব চুমু আমি দেখি একেক সন্ধেয় ছাদের পড়ার ঘর ছেড়ে সামনের আলসেতে চুপচাপ দাঁড়িয়ে। প্রায় খেয়েই ফেলে যেন বউয়ের মুখটা ওই পেটুক সায়েব। আমার শরীরের ভেতরটায় কীরকম কীরকম যেন করে । মনে হয় হৃপিণ্ডটা লাফাচ্ছে। একটু একটু লজ্জা করে, বেশ মজাও পাই, আবার কীরকম একটা দুঃখও হয়।

অ্যাংলো সায়েব-মেমদের বোধহয় লজ্জাটজ্জা কম। জানলা হাট করে খুলে কেউ ওইসব করে! অবিশ্যি রাতেরবেলায় অন্ধকারে ছাদে দাঁড়িয়ে কে কী দেখল, তাতে কী আর এসে যায় ওদের?

কিন্তু আমার এসে যায়। অত সুন্দরী কারো গা থেকে একটা একটা করে কেউ জামা খুলে নিলে আমার ভয়ানক বিপদ হয়। আমার শরীর কেঁপে কেঁপে ওঠে, হাতের তালু ঘামে, মাথা, প্রায় বন্ধ হয়ে যায়, সেখানে জমা পড়া সারাদিনের পড়াশুনা কপূরের মতো উবে যায়। ভাবনা হয়, মা বা কাকা এ সব জানলে কী সব্বোনাশ! অথচ সাপুড়ের বাঁশির মতো দৃশ্যটা দুলে দুলে আমার মনের ভেতরের জেগে-ওঠা সাপটাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে। আমি জায়গা ছেড়ে নড়তেও পারি না। একেক দিন এমন মনে হয়েছে, হাঁটুর নিচ থেকে পা দুটো আমার কেউ কেটে বাদ দিয়ে দিয়েছে।

তবে সেই সন্ধ্যায় যেদিন সিরিল মার্লিনের কর্নিসটাও খুলে নিয়ে ওর ওই দুধের মতো সাদা বুকে মুখ ঘষতে লাগল, ক্রমি ভয়ের চোটে ছাদের অন্ধকার সিঁড়ি বেয়ে দুদ্দাড় করে পালিয়ে নিয়েছিলাম। যেন ভূত দেখেছি। আর পড়বি তো পড়, গিয়ে সটান রাঁধুনি বড়ঠাকুরদার সামনে। সে আমার ওই অবস্থা দেখে ভড়কেই গিয়েছিল।

আমি চিলেকোঠার পড়ার ঘরে ঢুকে মনের ভেতরের প্রোজেক্টর চালিয়ে এই দৃশ্যগুলো দেখা শুরু করব। মনের দগদগে ক্ষতের মতো দৃশ্য সব যার কিছুই ভোলা যায় না। কেরল সিরিলের জায়গায় পুরুবটা হয়ে যাব আমি । আমি তখন একটা একটা করে জামা খসাল শার্লিনের শরীর থেকে, শেষে বেরিয়ে আসবে ওর ওই দুধসাদা বুক, আর…….

…..মুখদুটো চোখের সামনে ভাসছে। আর তারপরেই ওদের দুই দিদি লালিমা আর গরিমার মুখ। আমরা শর্ট করে ডাকি লিমা আর রিমা বলে । ভাবছিলাম কে আর এরপর ওদের জন্য সুচিত্রা-উত্তমের ছবির ম্যাটিনি শোয়ের টিকিট কেটে এনে দেবে। কে ওদের জন্য পাড়ার জগুদার হোসনাইট ফাংশনের সিট্ ধরে রাখবে। কে ওদের কাছে ফুচকার পয়সা চাইবে। কে আর আমাকে ওদের বাথরুমের দরজার ফুটোর সামনে বসিয়ে বলবে, দিদিরা চান করছে। দেখবি?

আমি সেই ফুটোতে চোখ রেখে যেন স্বর্গ চলে গেলাম। লিমা আর রিমা চান করছে, একজন আরেকজনের গায়ে সাবান মাখাচ্ছে।

তখন ভোম্বল আমাকে ঠেলা মারল, সর্ সর্ আমি একটু দেখি, আমি সরতেই ভোম্বল সেখানে ফিট্ হয়ে গেল। আমি সরে এসে দেখি ভোম্বল মুখ গুঁজে সিঁড়িতে বসে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কী হল তোর আবার ? ও মুখ তুলে বলল, দিব্যি গেলে বল, এ কথা কাউকে বলবি না? আমি বললাম, কোন কথা ?

—এই যে আমরা ফুটো দিয়ে সব দেখি।

-সে কী! তোরা রোজ দেখিস নাকি?

—না তো কী? খুব ভাল্লাগে দেখতে। কী হয়েছে, নিজেরই দিদি ওরা! আমি বিজ্ঞের মতো মাথা মেয়ে সায় দিলাম, ঠিকই তো! নিজের দিদি ওরা।…..

……আমি মাথা হেঁট করে বসে রইলাম। লিমা ফের শুধোল, কী খারাপ কাজ? বল আমাকে, আমি কাউকে বলব না।

বললাম, সে তো তুমি বলবে না। কিন্তু ক্ষমা করে দেবে বলো? লিমা বলল, হ্যাঁ রে বাবা দোব। নে, দিলাম।

আমি আমতা আমতা করে বলা শুরু করলাম,—আমি ভোম্বল আর ডম্বল তোমাদের দেখেছি….

লিমা এবার রীতিমতো উদ্বিগ্ন—কী দেখেছিস আমাদের ?

–তোমাদের চান করতে দেখেছি।

গমের মতো রং লালিমার, তাতে সূর্যডোবার ছটা লাগল যেন। ও চোখদুটো বন্ধ করে বসে রইল চুপচাপ। কিন্তু আমি আর থামতে পারছি না। বলেই চলেছি, আমরা দরজার ফুটো দিয়ে তোমাকে রিমাকে সাবান মেখে খেলা করতে দেখেছি।

লিমা সব শুনেও সেই চুপ মেরে আছে। তারপর হঠাৎ আমার মাথাটা এক ঝঙ্কায় ওর মুখের কাছে টেনে নিয়ে গালে একটা চুমো দিল। দিয়ে বলল, যাঃ! কাউকে বলিস না। ক্ষমা করে দিলাম।

আমি ফের আতা আন্তা করে শুরু করলাম, আর তো তোমাদের ওভাবে দেখতে পাব না…..

লালিমা হঠাৎ ওর টেপফ্রকের পিছনের বোতামগুলো পট্পট্ করে খুলতে লাগল।

তাকিয়ে দেখেই যাচ্ছি তো দেখেই যাচ্ছি, সাধও মেটে না, কথাও ফোটে না। আর লালিমা একনজরে দেখে যাচ্ছে আমার চোখদুটো। হঠাৎ যেন একটা ঘোরের মধ্যে উঠে এসে লালিমা বলল, আমি এখান থেকে চলে গেলে তোর কষ্ট হবে?

আর আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। লিমার খোলা বুকে ঝাঁপ দিয়ে পড়ে সিরিলের ঢঙে মুখ ঘষতে ঘষতে বললাম, না না, তোমরা সবাই এভাবে ছেড়ে চলে গেলে আমি কাদের নিয়ে থাকব?

আমার গলাটা ভেঙে এসেছিল। লিমা আমার মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বলল, নে ছাড়। মা-রা এসে পড়বে কোনসময় ।

মার্লিনের কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়া আমার চোখের সামনে ভাসছে। ভাসছে ডম্বল-ভোম্বলের মামার হাত ধরে কলকাতা ছেড়ে চলে যাওয়ার দৃশ্য। ভাসছে লালিমার খোলা বুক।…..

…….ও লোরেন সুইন্টানকে দেখতে লাগল, আর আমি ওকে। টুম্পাকে এভাবে কখনো দেখিনি। ফ্রকই পরে আছে, কিন্তু এক পূর্ণ যুবতীর রূপরেখা ছড়িয়ে পড়েছে সারা শরীরে। আমার নিজের তাকানোতে নিজেরই কেমন লজ্জা হতে শুরু করল। আমি ওর থেকে চোখ সরিয়ে ওর মাথার ওপর দিয়ে লোরেনকে দেখব বলে চোখ চালালাম। আর যা ভয় করেছিলাম ঠিক তাই! ঘরের জানলা হাট করে খুলে একটা ব্রা আর জাঙিয়া পরে নাচছে সুন্দরী যুবতী মেমসাহেব। আর সেইটাই পর্দার সিনেমার মতো দেখছে এই ছুঁড়ি।

আমি গর্জন করলাম, টুম্পা জানলা বন্ধ কর !

ও অম্লাল সারল্যে প্রশ্ন করল, তুমি পড়ার বাহানা করে এইসব দ্যাখো ! বললাম, পড়ার বাহানা করে দেখি না। পড়তে পড়তে দেখি। টুম্পা জানলা বন্ধ করতে করতে বলল, অসভ্য মেয়ে কোথাকার ! আমিও ছাড়বার পাত্র নাই, বললাম,- আর তুমি খুব সভ্য। পড়ার নাম করে এসে ওইসব দেখছ।

ও মুখ ভেঙচিয়ে বলল, বেশ করেছি দেখেছি। ফের দেখব। বলে

জানলা খুলতে গেল ও।

আমি তৎক্ষণাৎ হাত বাড়িয়ে ওর হাতটা চেপে ধরলাম, নাঃ!

কিন্তু এ কী! ওর গায়ে তো আগুন বইছে! ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

তোর কি জ্বর হয়েছে?

তখনো ওর উষ্ণ হাতটা আমার হাতে চাপা। ও থরথর করে কাঁপতে

কাঁপতে বলল, হ্যাঁ, ওষুধ দাও।

আমি এক ঝটকায় ওকে বুকের কাছে টেনে নিয়ে ওর ঠোটে চুমু দিলাম। ও ওর দুটো হাত দিয়ে আমার মাথাটা ওর মুখের ওপর চেপে ধরল—আই লাভ ইউ নিতুদা। আই লাভ ইউ।

আমি আস্তে আস্তে ওর বুক স্পর্শ করলাম। কি অপূর্ব অনুভূতি! ফিসফিস করে কানের কাছে মুখ নিয়ে বললাম, আলো নিভিয়ে দেব? ওর মুখ ভেসে যাচ্ছিল ঘামে। চোখ বন্ধ। বলল, দাও।

আমি লাইট নিভিয়ে ওর জামাটা খুলতে লাগলাম। ও ভয়ে ভয়ে

জিজ্ঞেস করল, এবার কী করবে তুমি? বললাম, বড়রা যা করে। ওর ভয় বোধহয় বাড়ল, জিজ্ঞেস করল; কোনো ক্ষতি হবে না তো আমার? কোত্থেকে এক অন্ধ বিশ্বাস জন্মাল আমার, বললাম, ধুর্! কিচ্ছু হবে না ।

ওর সব জামা খুলে ফেলেছি। নিজের পরনের প্যান্ট-শার্টও ছুঁড়ে ফেলেছি। ওকে জড়িয়ে ধরে সারা শরীরে আদর ঢেলে দিচ্ছি; এক অদ্ভুত পাগলামির মধ্যে ডুবে গেছি আমরা। হঠাৎ টুম্পা বলল, নিতুদা আজ থাক। আমি উদ্বিগ্ন হয়ে অপরাধীর মতো জিজ্ঞেস করলাম, কেন কী হল? ও অন্ধকারে ওর জামা খুঁজতে খুঁজতে বলল, মা বলেছিল এই ঘরটার ওপর নজর রাখবে।…..

Please follow and like us: