কফিহাউসে চেঙ্গিজদা, ল্যাঙড়াদা, গুলপিসি…অ্যান্টি-হিস্ট্রির আড্ডা – মলয় রায়চৌধুরী

›› উপন্যাসের অংশ বিশেষ  

……ল্যাঙড়া তৈমুর : খোজা পাহারাদার ?

চেঙ্গিজ খান : আরে, না রে । খোজা তো তুর্কির সুলতানরা রাখতো । খোজারা ক্ষমতাশীল মানুষের হয়ে দাস হিসেবে কাজ করে , আমার তাদের দরকার হয়নি। তুর্কির সুলতানরা হারেমের পাহারাদারের কাজে খোজাদের রাখতো । এছাড়াও কর্মচারী, যোদ্ধা, গৃহস্থালির কাজ, সংগীতশিল্পী, সরকারি কাজকর্ম, ব্যক্তিগত রক্ষী ও চাকর হিসেবে খোজাদের ব্যবহার করা হতো। সুলতানরা ভাবতো খোজারা বেগমদের কাজে লাগবে না । বেগমরা কি অতো বোকা নাকি । হারেমে অতো বউ আর রাখেল রাখলে তাদের অরগ্যাজম যোগাবার কাজটা তো খোজারাই করতো।

ল্যাঙড়া তৈমুর : আমিও খোজা রাখিনি । কী দরকার ! বউ, দাসী-বাঁদি আর রাখেলদেরও তো সাধ আহ্লাদ আছে ।……

…..চেঙ্গিজ খান : খোঁড়া হয়ে অতো বউ কেমন করে রাখতিস ? তোদের আস্তিকদের তো চারটে মোটে বউ অ্যালাউড। আমি নাস্তিক মানুষ অমন নিয়ম-কানুনের হ্যাপা ছিল না । তোদের চারটে ছাড়া বাদবাকি সবাই মুত্তা ! আজকাল শুনি পট্রোডলারের জোরে সেক্স-স্টার্ভড বুড়োরা আল-হিন্দের হায়দ্রাবাদ থেকে মুত্তা কিনে নিয়ে যায় । নিজামের অনেক রাখেল বাঁদি দাসী ছিলো তো, এখন গরিব হয়ে কীই বা করবে, তাদের মেয়েদের মুত্তা করে পাঠায় !

কফিহাউসের যক্ষ : মুত্তা কী ব্যাপার স্যার ?

ল্যাঙড়া তৈমুর : মুত্তা মানে যে বউ নিকা করা নয় । শব্দটা আরবি । । আরবি ‘মুত্তা’ শব্দের মানে হলো আনন্দ। ফূর্তির জন্য এই বিয়ে। আল-হিন্দে সেই কবে থেকে বাদশা, সুলতান আর নবাবদের মধ্যে মুত্তা প্রথা চলে আসছে অথচ তুমি জানো না ? কেমন তুমি কফিহাউসের যক্ষ ! অবশ্য মুত্তার নিয়মনীতি শিয়াদের মধ্যেই বেশি প্রচলিত ছিল। মোগলরা যদিও সুন্নি, তবে চারের বেশি বেগম ছিল তাদেরও। সেই বাবরের আমল থেকেই। বাবরকে বলেছি আসতে, ওদের কাছেই ডিটেইলড স্টোরি শুনতে পাবে । বাবরের বেগমের সংখ্যা দশ । এদের মধ্যে ছয়জনই ছিল ‘মুত্তা’ বেগম। হুমায়ুনের নিকা আর মুত্তা মিলিয়ে বেগম সংখ্যা নয়। আকবরের আট।……

…..ভাস্কো দা গামা : হাবশিদের বালও দারুণ হয় । যেমন ওদের মাথার চুল, তেমনই ওদের বাল । আরব কাস্টমাররা তো বালের জন্যে ওদের ধরে আনতে বলতো । তবে আপনি নাস্তিককে আস্তিকান্তরিত করার পরও তার বাল একই থাকে । পুরন্দর ভাট বোধহয় হাবশিদের আর মোগল বেগমদের বাল দেখার সুযোগ পাননি। আঠারো শতকে সারাহ বার্টম্যান নামে বাইশ বছরের এক হাবশি যুবতীকে আফরিকা থেকে কিনে ইউরোপে নিয়ে গিয়ে হটেনটট ভেনাস নাম দিয়ে এগজিবিশান করেছিল, তা জানেন কি ? চার ফিট লম্বা মেয়েটার পোঁদ তানপুরার চেয়েও অনেক উঁচু ছিল, কোঁচকানো বালে ঢাকা যোনিও বড়ো, আর মাইও বিশাল মাপের । ইউরোপীয়রা অমন পোঁদ, যোনি আর মাই আগে কখনও দ্যাখেনি । প্রায়-উলঙ্গ মেয়েটাকে দেখার জন্যে লাইন লেগে যেতো। হেনড্রিক সিজারস আর আলেকজান্ডার ডানলপ বার্টম্যানকে আফরিকা থেকে লন্ডনে নিয়ে আসে। সারাহ বার্টম্যানকে , হেনড্রিক সিজারস আর আলেকজান্ডার ডানলপ অবৈধভাবে এনেছিল দুটো আফ্রিকান ছেলের সঙ্গে, সম্ভবত কেপটাউনের দাস-বাজার থেকে । এগজিবিশান করে টাকা রোজগার করতো ওরা । তারপর ডানলপ পিক্যাডিলি সার্কাসের মিশরীয় হলে বার্টম্যানের এগজিবিশান করেছিল । ডানলপ ভেবেছিল যে লন্ডনবাসীদের অমন পোঁদ আর মাইয়ের আফ্রিকান যুবতীদের সাথে পরিচিতি না থাকায় এবং বার্টম্যানের বড় বড় নিতম্বের কারণে ও অঢেল টাকা রোজগার করতে পারবে, করেওছিল । লোকেরা মেয়েটাকে দেখতে যেতো মানুষ হিসাবে নয়, বরং প্রাকৃতিক বিশ্বের এক অংশের অদ্ভুত যৌন উদাহরণ হিসেবে।……

……ল্যাঙড়া তৈমুর : ওহ, আমার তো এরকম হয়নি, তাই জানি না । রোজই তো আলাদা একটা মেয়ের সঙ্গে শুয়েছি। একজনের সঙ্গে দিনের পর দিন চালিয়ে যাওয়াটা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না, কেমন যেন রেশনকার্ড নিয়ে রেশন তোলার মতন একঘেয়ে । যৌনতা ব্যাপারটা খোলোসা করলে ভালো হতো, জাঁ দুভালবেগম ।

জাঁ দুভাল : যৌনসঙ্গম, মানে যৌনমিলন, সঙ্গম, মৈথুন, রতিক্রিয়া, রতিমিলন; যৌন সংসর্গ, যৌন সহবাস, সহবাস এটসেটরা হলো একটি জৈবিক প্রক্রিয়া যা দ্বারা মূলত যৌনআনন্দ বা প্রজনন বা উভয় ক্রিয়ার জন্য একজন পুরুষের উত্থিত শিশ্ন একজন নারীর যোনিপথে অনুপ্রবেশ করানো ও সঞ্চালনা করাকে বোঝায়। অন্যান্য অন্তর্ভেদী যৌনসঙ্গমের মধ্যে রয়েছে পায়ুসঙ্গম, মানে লিঙ্গ দ্বারা মলদ্বারে অনুপ্রবেশ, মুখমৈথুন, অঙ্গুলিসঞ্চালন , মানে আঙ্গুল দ্বারা যৌন অনুপ্রবেশ, যৌনখেলনা ব্যবহার দ্বারা অনুপ্রবেশ, মানে বন্ধনীযুক্ত কৃত্রিম শিশ্ন । এই সব কাজকারবার মানুষেরা দুই বা তার বেশিজনের মধ্যে শারীরিক ও মানসিক অন্তরঙ্গতা জনিত পরিতোষ লাভের জন্য এবং সাধারণত মানব বন্ধনে ভূমিকা রাখতে সম্পাদিত হয়ে থাকে। যৌনসঙ্গম বা অপরাপর যৌনকর্ম কীভাবে সংজ্ঞায়িত হয় তা নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে, যা যৌনস্বাস্থ্য বিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গিগুলোর উপর প্রভাব রাখতে পারে। যদিও যৌনসঙ্গম, নির্দিষ্টভাবে মৈথুন বলতে সাধারণত শিশ্ন-জরায়ুজ অনুপ্রবেশ ও সন্তান উৎপাদনের সম্ভাব্যতাকে নির্দেশ করা হয়, এর দ্বারা সাধারণভাবে অন্তর্ভেদী মুখমৈথুন ও বিশেষত শিশ্ন-পায়ুজ সঙ্গমকেও নির্দেশ করা হয়। এটি সাধারণত যৌন অনুপ্রবেশকে নির্দেশ করে, যেখানে অননুপ্রবেশকারী যৌনতাকে “বহির্সঙ্গম” নামে নামকরণ করা হয়, কিন্তু অনুপ্রবেশকারী যৌনকর্মকে যৌনসঙ্গম হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।

বাবর : আরে জাঁ দুভালবেগম ! পায়ুসঙ্গম তো আমি অনেক করতুম । অটোবায়োগ্রাফিতে লিখেছি ।

জাঁ দুভাল : আরও আছে, শুনুন । যৌনতা বা ইংরেজি ভাষায় সেক্স, প্রায়শই যৌনসঙ্গমের একটি সংক্ষিপ্ত ব্যবহৃত রূপ, যা দ্বারা যে কোন প্রকারের যৌনক্রিয়াকে বোঝানো হতে পারে। যেহেতু এসকল যৌনকর্মের সময়ে মানুষ যৌনবাহিত সংক্রমণের সংস্পর্শের ঝুঁকিতে থাকতে পারে, নিরাপদ যৌনচর্চার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে, যদিও অনাভেদী যৌনতায় সংক্রমণ ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যহারে হ্রাস পেয়ে থাকে।বিভিন্ন আইনি বিধিমালা যৌনসঙ্গমের সামাজিক অনুমতিপ্রদানের জন্য বিভিন্ন আইন ও রীতিনীতির মাধ্যমে বৈবাহিক রীতির প্রবর্তন, প্রচলন ও সমর্থন করেছে এবং বেশ কিছু যৌনকর্মের বিপরীতে নিষেধাজ্ঞামূলক আইনকে স্থান দিয়েছে, যেমন বিবাহপূর্ব ব্যভিচার ও বিবাহপরবর্তী পরকীয়া, পায়ুকাম, পশুকাম, ধর্ষণ, পতিতাবৃত্তি, অপ্রাপ্তবয়স্কের সঙ্গে যৌনচর্চা ও অজাচার। ধর্মীয় বিশ্বাসও যৌনসঙ্গমসহ অন্যান্য যৌনাচার বিষয়ক ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে অন্যতম ভূমিকা পালন করে, যেমন কুমারীত্ব বিষয়ক সিদ্ধান্ত, অথবা আইনি বা সরকারী নীতিমালা সম্পর্কিত বিষয়াবলি। বিভিন্ন ধর্মভেদে ও একই ধর্মের বিভিন্ন বর্গভেদে যৌনতা সম্পর্কিত ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য পরিলক্ষিত হলেও কিছু বিষয়ে অভিন্নতা রয়েছে, যেমন ব্যভিচারের নিষেধাজ্ঞা।

পাগলা তুগলক : কারেক্ট, আই অ্যাগ্রি ।

ল্যাঙড়া তৈমুর : একটু আগে ধৃতরাষ্ট্রদেব শর্মা নামে একজন জন্মান্ধ মহারাজা এসেছিলেন । ওনার যৌন অভিজ্ঞতা থেকে যা বুঝলুম, অন্ধ হলেও যৌনসঙ্গম করতে অসুবিধে হয় না । ওনার বউ গান্ধারী যখন প্রেগনেন্ট তখন ওনার সেবা করত একজন চাকরানি। তার ছোঁয়ায় ওনার সেক্স চাগিয়ে ওঠে আর সেই চাকরানিকে জড়িয়ে ধরেন। তারপর গান্ধারীর অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে চাকরানির সঙ্গে সেক্স করেন। এই সেক্সের ফলে চাকরানিও গর্ভবতী হয়। চাকরানির গর্ভে মহারাজা ধৃতরাষ্ট্রদেব শর্মার ঔরসে যুযুৎসুর জন্ম হয়। মহারাজা ধৃতরাষ্ট্রদেব শর্মার এলেম ছিল বলতে হবে ; একরাতের কাজেই প্রেগনেন্ট করে দিলেন । এখনকার ছোঁড়াছুঁড়িরা আইভিএফ করে বাচ্চা পাবার জন্যে কত্তো খরচ করে ।

জাঁ দুভাল : ওনাদের সময়ে তো যৌনরোগের ভয় ছিল না ।

ল্যাঙড়া তৈমুর : যাক বাবা, আমাদের সময়ে রোগবালাই ছিল না । তোমার ছিল নাকি ?

জাঁ দুভাল : হ্যাঁ, আমার হয়েছিল বোদলেয়ারের সিফিলিস আর গনোরিয়া থেকে, ও একগাদা মেয়ের সঙ্গে শুতো । অথচ ও আমাকেই দোষ দিয়ে বলতো যে আমি অনেকের সঙ্গে শুয়ে ওকে রোগটা ধরিয়েছি ।

ল্যাঙড়া তৈমুর : এখন আর চিন্তা কীসের : এখন তো দুজনেই মরে অমর হয়ে গেছো ।

জাঁ দুভাল : আজকাল অনেকে যৌনরোগ বাধিয়ে অমর হয়েছে । আজ্ঞে হ্যাঁ, অনেকেই যৌনরোগের জন্যে বিখ্যাত । এক নম্বর জেসিকা অ্যালবা, এই সুন্দরী হলিউড তারকার জেনাইটাল হারপিস রয়েছে যা তাঁর শরীরে সংক্রামিত হয় পার্টনার ডেরেক জেটারের থেকে। মারায়া ক্যারি, স্কারলেট জোহানসন থেকে শুরু করে হলিউডের বহু বিখ্যাত মহিলার শরীরেই যৌনরোগ সংক্রামিত করেছেন ডেরেক। দুনম্বর ভিক্টোরিয়া বেকহ্যাম, ডেভিড বেকহ্যামের পত্নী ও আক্রান্ত হার্পিসে। শোনা যায় অতীতের রকস্টার ভিক্টোরিয়া অনুগামীদের সঙ্গে যৌন মেলামেশা করেই এই রোগ ডেকে এনেছেন শরীরে।তিন নম্বর পল গগ্যাঁ, অবাধ যৌন সংসর্গ করে শেষমেশ সিফিলিসে মারা গিয়েছিলেন মাস্টার পেইন্টার পল গগ্যাঁ।চার নম্বর প্যারিস হিলটন, সুন্দরীর লাগামছাড়া জীবন তাঁর শরীরে হার্পিস সংক্রমণের কারণ। এর জন্য হিলটনদের উইল থেকে বাদ পড়েছে তাঁর নাম। পাঁচ নম্বর রবিন উইলিয়ামস, এই প্রয়াত হলিউড অভিনেতা অল্প বয়সে প্রোটেকশন ছাড়াই বহু যৌন সংসর্গ করতেন। ওঁর বিরুদ্ধে জেনাইটাল হার্পিস সংক্রমণের অভিযোগ আনেন এক মহিলা যার মীমাংসা হয় আদালতের বাইরে। ছয় নম্বর আর্থার অ্যাশ, টেনিস কিংবদন্তি আর্থার অ্যাশ মারা গিয়েছিলেন এইডসে। একবার অসুস্থতার সময়ে, চিকিৎসার গাফিলতিতে এইড্‌স সংক্রামিত রক্ত তাঁর শরীরে যায়। সাত নম্বর ম্যাজিক জনসন, চিকিৎসকের গাফিলতিতে, ইঞ্জেকশনের একই সিরিঞ্জ ব্যবহারের ফলে এই প্রতিভাবান বাস্কেটবল খেলোয়াড়ের শরীরে এইড্‌স সংক্রমণ হয়। এই নিয়েই বার্সেলোনা অলিম্পিকে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। আট নম্বর প্যামেলা অ্যান্ডারসন, স্বামীর সঙ্গে সঙ্গমের ফলে তাঁর শরীরে বাসা বেঁধেছিল হেপাটাইটিস সি। বহু বছর ধরে তিনি লড়াই করছেন এই রোগের বিরুদ্ধে। নয় নম্বরে চার্লি শিন, হলিউড তারকা চার্লি শিন নিজে ঘোষণা করেছেন তিনি এইচআইভি পজিটিভ এবং তা যৌন সংসর্গের কারণেই।…….

……শাহজাহান : বিশ্ব সাহিত্যের ইতিহাসে ফ্যানি হিলের মত উপন্যাস খুব কম আছে যা এত বার ছাপা হয়েছে। উনিশশো সত্তর সালের আগে উপন্যাসটার প্রকাশ আইনি স্বীকৃতি পায়নি। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে ব্রিটেন থেকে আমেরিকা, ফ্রান্স, আল-হিন্দ আর অন্যান্য বহু দেশে বইটার বেআইনি সংস্করণ ছাপা হয়েছে। প্রথম প্রকাশের ঠিক এক বছর পরে লেখক ক্লিল্যাণ্ডকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। অশ্লীলতার দায়ে ব্রিটেনের প্রিভি কাউন্সিলের সামনে তাঁকে হাজির হতে হয়। সরকারি ভাবে প্রকাশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বাজার থেকে উপন্যাসটা তুলে নেওয়া হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত অবশ্য সব অভিযোগ কাটিয়ে উঠে, ধ্রুপদি সাহিত্যের মর্যাদায় উত্তীর্ণ হয়েছে ফ্যনি হিল। পাঠক সমাজে উপন্যাসটার প্রভাব এত প্রবল ছিল যে লণ্ডনের বিশপ একবার ভূমিকম্পের জন্য বইটিকে দায়ী করেছিলেন।

ফ্যানি হিলের সব থেকে বড় বৈশিষ্ট্য, উপন্যাসটির ভাষা সম্পূর্ণ রূপে বিশুদ্ধ সাহিত্যের, কোনও ভাবেই তার গায়ে বটতলা সাহিত্যের তকমা দেগে দেওয়া যায় না। অক্ষতযোনি ফ্যানি যখন এক কুৎসিত কামুক বেশ্যাসক্ত ইংরেজকে অনুনয় করছে তাকে রেহাই দেওয়ার জন্য, তখন বিকৃত উত্তেজনার বদলে পাঠকের অন্তর ব্যথায় টনটন করে ওঠে। ‘…সে আবার আক্রমণ করছে ফ্যানিকে, জাপটে ধরছে,…উরু দুটিকে নিরাবরণ করছে… ’ – ফ্যানির এমন দুর্দশা পড়ে পাঠকের মনে কাম নয়, জেগে ওঠে করুণা, ক্রোধ ।

উপন্যাসটা মূলত ফ্যানির দুটি দীর্ঘ চিঠির উপর দাঁড়িয়ে। একটি চিঠি নিয়ে প্রথম খণ্ড, দ্বিতীয় চিঠি নিয়ে পরের খণ্ড। মাত্র চোদ্দ বছর বয়সে, বাবা-মাকে হারিয়ে, ল্যাঙ্কাশায়ারের একটি গ্রামের মেয়ে ফ্যানি, ক্রীতদাসীর চাকরির খোঁজে লণ্ডন শহরে পৌঁছয়। সেখানে তাকে ফুসলে নিয়ে যাওয়া হয় পতিতালয়ে, যেখানে তার সঙ্গে চার্লসের পরিচয় হয়। চার্লসের প্রেমে পড়ে যায় ফ্যানি। উপন্যাসের প্রথম খণ্ডের পাতায় পাতায় বর্ণিত হয়েছে চার্লস ও ফ্যানির প্রেমের সম্পর্ক। কখনও তা পৌঁছেছে কবিতার ভাষায়। ‘…চার্লস আমাকে দেখতে লাগল। আমার শরীরের সব ঐশ্বর্য তার দৃষ্টি ধীর ধীরে উপভোগ করছে। তার হাত দুটি একই সঙ্গে ব্যস্ত আমার শরীরের সর্বত্র।…আমার তাজা সুঠাম অবয়ব, আমার অঙ্গের নিজস্ব ভঙ্গি-ছন্দ, সব কিছু যেন ওকে মন্ত্রমুগ্ধ করেছে। কিন্তু এই শরীরের ওপর দিয়েই তো কিছুক্ষণ আগে আমারই উৎসাহে ঘটে গেছে ওর প্রবল প্রবাহ। এখন ও চাইছে ব্যথা ও ক্ষতর জায়গাগুলোকে মায়াময় চোখ দিয়ে দেখতে।…কিছুক্ষণ পরেই আবার নতুন উদ্যমে শুরু হল ঝড়।’

ফ্যানি হিলের মত উপন্যাস বিশ্ব সাহিত্যে খুব বেশি নেই যার ভাষা, চরিত্রায়ন ইত্যাদি সব কিছু যৌনতার বর্ণনাকে নস্যাৎ করে সামগ্রিক ভাবে ক্লিল্যান্ডের সৃষ্টিকে অনেক উঁচু আসনে বসিয়েছে। পরবর্তী কালে ক্লিল্যান্ডের লেখা আরও দুটি উপন্যাস যথাক্রমে ‘দ্য সারপ্রাইজেস অফ লাভ’ বা ‘দ্য উওম্যান অফ অনার’ কিন্তু কখনও ‘ফ্যানি হিলের’ সমান উচ্চতায় উঠতে পারেনি। আসলে লেখক ফ্যানিকে সাধারণ বেশ্যাদের তুলনায় এক অন্য অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছিলেন যেখানে ফ্যানি, তার বেশ্যালয়ের যৌনকর্মের মধ্যে ব্যর্থতা বা অনুশোচনা বা হা-হুতাশ নয়, অনুভব করে এক চরম শারীরিক আনন্দ যার সঙ্গে এক অর্থে নারীর স্বাভাবিক ও ন্যায্য শরীরি মুক্তির কথাও অব্যক্ত হয়ে থাকে যা সেই সময়ের পাশ্চাত্য সমাজে ছিল কল্পনারও বাইরে। ‘আমার সুন্দর পুরুষটি তখন যেন আমার শরীরের সঙ্গে বিচিত্র প্যাঁচে পাকে-পাকে জুড়ে আছে, যাতে আমাদের শরীরের গোপন অন্দরমহল পরস্পরকে ছুঁতে পারে।…’…..

…..ল্যাঙড়া তৈমুর : বা্হ, মাই দেখে বেড়িয়েছো কাফেরের রূপ ধরে ?

নোবিলিআত্মন : না, আমি প্রয়াগে পূর্ণকুম্ভতেও নাগা সন্ন্যাসীদের সঙ্গে ল্যাঙটোপোঁদে দৌড়ে গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়েছিলুম। নাগা সাধু দিগম্বর অখিলেশপুরীর সঙ্গে কথা বলে জেনেছি ওনাদের লিঙ্গ অকেজো করে দেওয়া হয়। তাই কোনো কামনা-বাসনা থাকে না। যারা যৌন কামনার প্রবল বেগকে সামলে নিতে পারে তারাই নাগা। উনি বললেন, সেই সিদ্ধি লাভ করে যে যৌনবাসনার বিরুদ্ধে জয়ী হয়। আল-হিন্দে এসে আমার যৌনবাসনা নষ্ট হয়ে গেছে ।

ল্যাঙড়া তৈমুর : মাই নিয়ে ভাবো মনে হয় । আকার-প্রকার নিয়ে চিন্তা করো ?

পাগলা তুগলক : আমি বলছি জনাবেআলা । আমরা এখন ভোগবাদী সমাজে বাস করি, আর কোনো চাকরি বা কাজের জন্য বুদ্ধিমতী হলেও, শারীরীক আকর্ষণ হল সফলতার একটা সিঁড়ি । সুন্দর মুখমণ্ডলের ও দৈহিক কাঠামোর নারীরা কাজের বাজারে বেশি সুযোগ পান । তবে অত্যন্ত বড়ো মাপের স্তন আবার এক্ষেত্রে ক্ষতিকারক হতে পারে, তখন শল্যচিকিৎসা করিয়ে স্তনের মাপ ছোটো করার পথ ধরতে হবে । এখনকার ফ্যাশানও হয়েছে বড়ো মাপের বর্তুল স্তন আর খাঁজ । পোশাকের ডিজাইনাররা সেইভাবেই সুন্দরীদের উপস্হাপন করেন । অত্যন্ত বড়ো মাপের বা অত্যন্ত ছোটো মাপের স্তন হলে বাজারে ব্রা পাওয়াও কঠিন হয়ে যায় । সিলিব্রিটি সংস্কৃতির জগতে ছোটো মাপের স্তন নারীজগতে ঠাট্টা-ইয়ার্কির ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় — স্তনের মাপ বাড়িয়ে তোলার এও একটা কারণ । খ্যাতি আর জনপ্রিয়তার ভোগবাদী বাজারে স্তন এখন গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র — শল্যচিকিৎসা নারীকে বহুকাল যৌবন ধরে রাখার সুযোগ করে দিয়েছে । মিডিয়া যেহেতু সেলিব্রিটিদের রোল মডেল হিসাবে তুলে ধরে, তরুণীরা তাঁদের পথ অনুকরণ করেন । পর্ন ফিল্মগুলোতে যাঁরা অভিনয় করেন তাঁদের স্তন বেশ বড়ো হয় এবং অনেকে অমন ফিল্মে অভিনয় করার জন্যও স্তনের মাপ অবিশ্বাস্যভাবে বড়ো করে তোলেন । সানফ্রানসিসকোতে বুক-খোলা মেয়েরা জুতো পালিশ করেন, বার-ডান্স করেন বুক খুলে । বিভিন্ন দেশে প্রতিবাদের জন্য নারীরা বুক খুলে দাঁড়িয়ে পড়েন । স্তনের যৌনতা একই সঙ্গে আক্রমণের অস্ত্র আবার অনুরাগের ডাক দেবার কুহক।

তোতলা তুগলক : ছেলেটা মাঝখানে কথা বলা ছাড়তে পারল না ।

ভাস্কো দা গামা : আর কী জানো মাইয়ের ব্যাপারে ?

কফিহাউসের যক্ষ : স্যার, পোপ যখন পর্তুগাল আর স্পেনকে নির্দেশ দিলেন যে তারা যথাক্রমে পূর্ব আর পশ্চিম বিশ্বকে লুটপাটের জন্য ভাগাভাগি করে নিক, তার পর সমস্ত প্রাচীন সংস্কৃতি মূল থেকে ধ্বংস হয়ে গেছে — মিশরীয়, ইরানি, মেসোপটেমিয়ান, গ্রিক আর রোমান, আমেরিকার মায়া ও অ্যজটেক এবং আরও আদিম জীবন-পদ্ধতি। ভারতে তারপর আবির্ভাব হলো ইসলামি শাসকদের । নগ্নতাকে যৌন ‘পাপ’ হিসাবে দেগে দিয়েছে তারাই, এমনকী যৌনতাকেও তারা লজ্জাজনক পাপকর্ম হিসাবে চিহ্ণিত করে দিয়েছে বিভিন্ন উপনিবেশে। স্তন যেহেতু যৌন আহ্লাদ উদ্রেক করে, তাই স্তন ঢাকার চল শুরু হল তাদের আবির্ভাবের পর । অজন্তায় বুদ্ধের মা নিজের স্তন ঢেকে রাখেননি, আর তা সম্ভব হয়েছে ভারতে নগ্নতাকে লজ্জাজনক মনে করে হতো না বলে । দক্ষিণ আফ্রিকার জুলু আদিবাসদীরা এখনও স্তনকে খোলা রাখেন — প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জেকব জুমার নবম বিয়েতে তাঁর হবু স্ত্রী সমেত আগের বউরা আর কুড়িটা বাচ্চাদের মধ্যে মেয়েরা বুক খুলে নেচে ছিলেন । প্রাচীন ভারতে স্তনের সঙ্গে যেমন ফার্টিলিটির সম্পর্ক ছিল তেমনই ছিল যৌনতার । ধনী পরিবারের নারীর পরিধান ছিল উত্তরীয়, অন্তরীয় আর কোমরবন্ধ — উত্তরীয় এখনকার ওড়নির মতন যেটি দিয়ে বুক বাঁধা যেতো । অনেকে বাঁধতেন না, কেবল ঢেকে রাখতেন । মোগল বেগমরাও যে স্বচ্ছ মসলিনে ঢেকে রাখতেন তা এঁকে গেছেন মিনিয়েচার চিত্রকররা । জেনানা মহলে তাঁরা স্তনকে লুকোবার চিন্তায় ভুগতেন না তার কারণ খোজারা ছিল তাঁদের রক্ষী। কোনো কোনো বেগম, যাঁদের বিয়ে হতো না, তাঁরা স্তনে খোজাদের আদর নিতেন ।……

……পাগলা তুগলক : আমি বলছি, আমি বলছি ।মানুষই হল একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণী যার যৌন উত্তেজনার সঙ্গে স্তনের সম্পর্ক রয়েছে। সাধারণত বড়ো মাপের স্তনের প্রতি পুরুষ বেশি আকর্ষণ অনুভব করে। নারী শরীরের অন্যতম নরম অংশ হল স্তন। এই কোমলতা পুরুষকে আকর্ষণ করে। ফলে স্তন স্পর্শ করতে, মুখ দিতে, মাথা রাখতে, এমনকী নারী দুই হাতে দুটি স্তনকে পরস্পরের সঙ্গে চেপে সঙ্গমছিদ্র তৈরি করলে পুরুষ আগ্রহ বোধ করে। নারী-স্তন পুরুষের কাছে অত্যন্ত আরামদায়ক। স্তনে মাথা রেখে বিশ্রাম নেওয়া তার সুপ্রাচীন অভ্যাস। জীবজগতে একমাত্র মানুষের ক্ষেত্রে নারীর স্তন বয়সের সঙ্গে মাপে বড়ো হয়, যখন কিনা স্তন্যপায়ী পশুদের স্তনের মাপ বড়ো হয় তারা পোয়াতি হয়ে বুকে দুধ আসার পর ; বাচ্চা বড়ো হবার পর আবার আগের মতো হয়ে যায় । ঋতুর বয়সে পড়লে নারীর বুকে কেন চর্বি জমে অমন আকর্ষক পিণ্ড গড়ে ওঠে তার নানা রকম ব্যাখ্যা দিতে চেয়েছেন গবেষকরা। কিন্তু প্রধান তর্ক হল যে তা পুরুষকে আকর্ষণের জন্য প্রকৃতির অবদান । ২০১৮ সালে প্রকাশিত ‘দি কেমিস্ট্রি বিটউইন আস : লাভ, সেক্স অ্যান্ড দি সায়েন্স অব অ্যাট্রাকশান’ বইতে ল্যারি ইয়াং ও ব্রায়ান আলেকজান্ডার জানিয়েছেন যে নারীর স্তন সম্পর্কে পুরুষদের অবশেসন ঘটে যখন সে মায়ের কোলে শুয়ে দুধ খায় এবং মায়ের অক্সিটোসিন হরমোন নির্গত হয় যার দরুন স্তনের সঙ্গে পুরুষের পাকা বাঁধন তৈরি হয়ে যায়, অবচেতনায় গেঁথে যায় । পুরুষ তার সঙ্গিনীর মধ্যে সেই একই বাঁধনযোগ্যতা খোঁজে আর তার জন্য সে বড়ো মাপের স্তনের প্রতি আকৃষ্ট হয় । যারা বেশ্যালয়ে যাতায়াত করে তারাও সুন্দর মুখমণ্ডলের বদলে বর্তুল স্তন আর খাঁজের খদ্দের হয়ে ওঠে । পুরুষ যখন চোখে দেখে, ছোঁয়, মুখ দেয়, টেপে, তখন তার অবচেতনায় শৈশবের ভালোলাগা স্মৃতি কাজ করে । বড়ো মাপের স্তনের প্রতি পুরুষের আকর্যণের কারণ হল অবচেতনে তারা স্তনকে দুধের ভাঁড়ার হিসাবে দ্যাখে ; যতো বড়ো স্তন ততো বেশি দুধ । সন্তান প্রসবের পর কোনো কোনো নারীর অত্যধিক দুধ হয় যা আগেকার কালে গেলে ফেলে দেবার চল ছিল ; এখন ডাক্তাররা বলেন যে তা সংগ্রহ করে অন্যান্য শিশুদের দিতে কিংবা তা স্বামী নিজেই স্তন থেকে পান করতে পারেন ।……

…..মেয়েটা রীতিমতো চিল্লাতে চিল্লাতে বলছে,

“যখন থেকে অটোতে উঠেছি, তখন থেকে লোকটা অসভ্যতামি করার চেষ্টা করছে। আমি প্রথমে ভাবলাম এত বয়স্ক মানুষ, হয়তো ভুল করে হাত লেগে গেছে বুকে….

কিন্তু এই লোকটা ইচ্ছে করেই বারবার কনুই ঠেকাচ্ছে বুকে, আমার বাবার বয়সী একটা লোক কি অসভ্য, ছিঃ!

একটু আগে এত জোরে কনুই দিয়ে বুকে আঘাত করলো, যে আমি আর সহ্য করতে পারলাম না তাই চিল্লিয়ে উঠলাম”….

মেয়েটা এই কথাগুলো বলতে বলতে আশেপাশের প্রচুর লোকজন জোগাড় করে ফেলেছে….

সবাই হাঁ করে মেয়েটার কথা শুনছে, মেয়েটার বুকগুলো দেখছে, অথচ কেউ এগিয়ে এসে লোকটাকে দুটো থাপ্পড় মারছে না, পুলিশ ডাকছে না………

Please follow and like us: