আমি হাবশি বেতাল – মলয় রায়চৌধুরী

›› উপন্যাসের অংশ বিশেষ  

……এক পর্যটক জুটি কাল রাতে সমাধির ওপরে শুয়ে বেশ কয়েকবার সঙ্গম করেছিল, রাতভর।

সকালে সমাধি বলছিল, তোমরা দুজন হনিমুন করতে বেরিয়েছ তো ? কাল রাতে তোমাদের ভালোবাসাবাসির আওয়াজ শুনেছি, পরিচিত শ্বাস-প্রশ্বাস আর শব্দ ; অনেকে জুটিতে মিলে হনিমুন করতে এসে রাতটা কাটিয়ে যায় এই সবুজ অঞ্চলে, খোলা আকাশের তলায়, পূর্ণিমার আলোয়, শিশিরে ; তা চার-পাঁচ হাজারের বেশি জুটির সঙ্গমের আওয়াজ জমিয়ে রেখেছি, মাঝে-মধ্যে বাজিয়ে শুনি। তারা ক্লান্তিতে পাশাপাশি শুয়ে পড়লে তাদের বলি গল্প শোনাতে । তোমরা দুজনে শোনাও । ফিরবে তো কাল যখন পর্যটন কোম্পানির বাস তোমাদের সঙ্গী পর্যটকদের নিয়ে নিতে আসবে । তোমরা ভালোবাসাবাসির জন্যে থেকে গেলে, বুঝেছি, তোমাদের সঙ্গীদের হাসাহাসি আর মন্তব্য থেকে । আমাদের কালে এরকম ভালোবাসাবাসি ছিল না ; সম্রাটদের ছিল জেনানা, আর তাতে বিয়ে করে আনা বউ, বাঁদি, রক্ষিতা, ক্রীতদাসী, লুট-করে আনা অন্য ধর্মের আর ভাষার যুবতী, সম্রাটের ঘরে পৌঁছে দেবার খোজারা ছিল । রাজা-বাদশাদের সঙ্গে শোবার আর শোয়াবার জন্য এতো যুবতী জোগাড় হতে লাগলো যে হারেমপ্রথা শুরু করা জরুরি হয়ে উঠলো। ……

…..বাস থেকে নামবার সময় ফর্সা পর্যটক যুবতী গাইতে আরম্ভ করেছিল, ‘ইয়ে দুনিয়া পিত্তল দি…’

সমাধির বেগম বলল, ম্যাডাম, ল্যাঙটো নাচবেন না, দশ নম্বর বডিস আর জাঙিয়া পরে নিন, নয়তো বেতাল আপনাকে ল্যাঙড়া তৈমুরের হারেমে পাঠিয়ে দিতে পারে ।

সমাধির পুরুষ বলল, তোমরা সবাই আমার সমাধি ঘিরে বোসো, গাছের ছায়ায়, তোমাদের আমি হারেমের গল্প শোনাই ; আমি তো হারেমের যুগেই জন্মেছিলুম, তাই ব্যাপারটা জানি, যদিও আমার হারেম-টারেম ছিল না ; আমার অতো সময় ছিল না রোজ একজন আধচেনা মেয়ের সঙ্গে শোবার । আমি ছিলুম যোদ্ধা । সম্রাটরা অবশ্য দিনেরাতে কুড়ি-পঁচিশবার শট মারতো ।তোমরা যখন নিজের গল্প শোনাবে তখন নামটা জানিও, মনে রাখব ।…..

….. পর্যটক সানি লেওনি : আমি তো সেকথাই গান গেয়ে বলছিলুম, সবই দেহতত্ব।

বেগমবউদি : আপনি পোশাক পরে নিন, নয়তো বেতাল আপনাকে ল্যাঙড়া তৈমুরের কাছে পাঠিয়ে দেবে।

পর্যটক সানি লিওনি : বেগমবউদি, আমার দশ নম্বর ছোটো হয়, এক্সট্রা লার্জ চাই । …..

…..পর্যটক নবীন কর : অতো বেগমদের হারেমে রেখে তাদের সেক্সুয়াল লাইফ নষ্ট করার মানে হয় না। খোজারা যদি আনন্দ দিতো তো ভালোই করতো । ডিলডো জিন্দাবাদ । হারেমের টপিকটা ইনটারেস্টিঙ । …..

…..তখনকার সময়ে রাজার অনেক বউ আর উপবউ থাকবে এটাই স্বাভাবিক ছিল। নিজেদের দাস-দাসী আর বউদের বাদশা নিজের ইচ্ছেমতন ওলটাবেন-পালটাবেন-শোয়াবেন-বসাবেন সেটাও অবাক করার ব্যাপার ছিল না। হারেমে তাই সর্বাধিক গুরুত্ব পেত আমোদ-প্রমোদের ব্যবস্থা। ……

…..পর্যটক হাশিম উদ-দৌলা মুহম্মদ আলীবর্দী খান বাহাদুর : হারেমের টপিকটা তো বেশ চলছিল । হারেমের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর আর বাইরের লোকের পক্ষে মোগল হারেমে ঢোকা রীতিমতো কঠিন ছিল। খোজাদের ‘নাজির’ বলা হতো । প্রত্যেক বেগমের একজন করে নাজির থাকত যাকে তিনি গভীরভাবে বিশ্বাস করতেন। বেগমদের কারো কোনো জিনিসের দরকার হলে তারা হারেমের কেশিয়ারকে বলত। হারেমে ব্যবহারের জন্য আলাদা কয়েন ছিল যা বাইরে পাওয়া যেত না। হারেমের দারোগা হিসেবে নিয়োগ করা হতো প্রৌঢ়াদের । হারেমের সর্বোচ্চ পদাধিকারী মহিলা কর্মচারী ছিল ‘মহলদার’। এরা বাদশার গুপ্তচর হিসেবেও কাজ করত। মহলদারের দরুন রাজকুমারদের সঙ্গে গোলমাল বাধতো। বেচারা রাজকুমার কাউকে লাইন মেরে লুকিয়ে এক খেপ শট মেরে কেটে পড়তে চাইলেও তা পৌঁছে যেত বাদশার কানে । জাহাঙ্গির এ-ব্যাপারে ছিল ওস্তাদ। বাপের রক্ষিতাকেও লুকিয়ে শট মেরে কেটে পড়ত । উজির-আমীররা তাদের দুয়েকটা মেয়েকে মহলে ঢুকিয়ে দিতে চেষ্টা করতো আর এর জন্য হারেমের মহলদারের সাথে মিলে নানা দুরভিসন্ধির আশ্রয়ও তারা নিত। কারণ, একবার যদি মেয়েটা বাদশাকে সেক্সুয়ালি অ্যাট্রাক্ট করে, তো, ব্যাস, কেল্লা ফতে!…..

…..পর্যটক জাফর আলী খান বাহাদুর মীর মুহম্মদ জাফর আলী খান বাহাদুর : আমি পুরোনো টপিকে ফিরছি । মোগল হারেমের যেসব নারী বিখ্যাত তাদের মধ্যে নামকরা হলো বাবরের মেয়ে গুলবদন বেগম, সম্রাজ্ঞী নুরজাহান, শাহজাহানের বউদের একজন, মানে, মমতাজ মহল, দারাশিকোর বউ নাদিরা বেগম, আওরঙ্গজেব মেয়ে জেবুন্নেসা, শাহজাহানের মেয়ে রোশানারা আর জাহানারা আর বেচারা বাহাদুর শাহ জাফরের বউ জিনাত মহল। বিশেষত, নূরজাহান তো নিজের লেখা কবিতা পড়তো ;‘মুশায়েরা’ ওনার সময় থেকেই বাড়বাড়ন্ত হয়েছে । কলকাতায় জীবনানন্দ সভাগরে, নজরুল মঞ্চে, অকাদেমিতে আজকাল যে কবিতা পাঠ হয় তা নুরজাহানের কারণে । ভোজের সময় দস্তরখানের ব্যবহার, চোলি বা আধুনিক বডিসের প্রচলন, পোশাকে বোতাম, অন্তর্বাস, নৈশবেশ, কুর্তা,কামিজ আর জরির লেস চালু করেন নূরজাহান। সেক্সকে সুরভিত করার জন্যে নূরজাহানের আবিষ্কার গোলাপের আতর, ‘আতরে জাহাঙ্গীরী’। নূরজাহানের স্নানঘরে বিশাল টবে গোলাপ মধ্যে গোলাপের নির্যাস, আতর, চন্দন, হলুদ চুবিয়ে রাখার চল ছিল । বউ তো রাজ্য চালাচ্ছে, এদিকে তার বর জাহাঙ্গির মাগিবাজি করে বেড়াচ্ছে ।……

…..পর্যটক ছাতুবাবু : সমাধিবউদি, একটা কথা বলুন যে শাহজাহানের ভালোবাসাবাসিও অদ্ভুত ব্যাপার নয়কি ? বিয়ে করলেন আর্জুমান বানুকে, ওনার ছেলের বউ নুর জাহানের ভাইয়ের মেয়ে, তবে এই নাম পালটে দিলেন শাহজাহান। নাম রেখেছিলেন মমতাজ মহল। শাহজাহান উনিশের আর্জুমানকে বিয়ে করেন একুশ বছর বয়সে। শাহজাহানের যৌন চাহিদা এতো বেশি ছিল যে মমতাজের সংসার-জীবন মাত্র আঠারো বছরে শেষ হয়ে যায় । এরই মধ্যে মমতাজ চোদ্দটা বাচ্চা পয়দা করেন। অন্য বেগমদেরও শাহজাহানের যৌনখোরাক মেটাতে হতো, তার ওপর উপবউ, বাঁদি, রক্ষিতা, স্লেভগার্লরা তো ছিলই । মমতাজ ছিলেন সম্রাট শাহজাহানের দ্বিতীয় স্ত্রী। কোথাও বলা হয়েছে, মমতাজ শাহজাহানের ৩য় স্ত্রী, কোথাও বলা আছে ৪র্থ স্ত্রী। আসলে কততম স্ত্রী তা কোথাও সঠিকভাবে বলা নেই। সম্রাট শাহজাহান ও মমতাজের প্রেম কাহিনীতে বলা হয়েছে সম্রাট শাহজাহান মমতাজকে বাজারে দেখতে পান এবং প্রথম দেখাতেই মমতাজকে পছন্দ করে ফেলেন। কিন্তু এও শোনা যায় শাহজাহানের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার আগেও মমতাজের বিয়ে হয়েছিল। সম্রাট শাহজাহান মমতাজের সেই স্বামীকে হত্যা করে তারপর মমতাজকে বিয়ে করেছিল। মমতাজ মারা যাওয়ার পর শাহজাহান মমতাজের আপন ছোট বোনকে বিয়ে করেন। লোকটা বোধহয় সেক্স পারভার্ট ছিল, ওর পূর্বপুরুষ ল্যাঙড়া তৈমুরের মতন।……

Please follow and like us: