ছোটোলোকের শেষবেলা – মলয় রায়চৌধুরী

›› প্রবন্ধর অংশ বিশেষ  

……২০০৭ সালে আমস্টারডমের ডি ওয়ালেন খালপাড়ে গাইড মিস মারিসকা মাজুরের সঙ্গে আমরা একদল বিদেশী পর্যটক বেশ্যালয় দেখতে বেরিয়েছিলুম । মারিসকা এককালে নিজেও যৌনকর্মী ছিলেন । রেড লাইট শব্দটা এই বেশ্যালয় থেকেই ছড়িয়েছে । নেপোলিয়ানের আইনি অনুমতিপ্রাপ্ত বেশ্যালয়, মানুষের চেয়েও বড়ো কাচের শোকেসে লাল আলো জ্বেলে অপেক্ষা করছেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে এসে জড়ো হওয়া যৌনকর্মীরা, রেট, সময় এবং পদ্ধতি বাঁধা ; তার বাইরে কিছু করতে চাইলে দরাদরি করতে হবে । প্রতিটি ঘরে লাল আলো । যে ঘরে নীল রঙের আলো সেঘরে অপেক্ষা করছে পুরুষ যৌনকর্মী । খালপাড়ে নানা রকমের যৌনকর্মের আর যৌনবস্তুর দোকান, ঘুরে-ঘুরে দেখলুম । চাবুক, চেস্টিটি বেল্ট, লিঙ্গের আকারের সিটঅলা সাইকেল, পর্নোগ্রাফির বই আর ফিল্ম, গাঁজা ফোঁকার দোকান, আবসাঁথ খাবার রেস্তরাঁ ইত্যাদি । দেখতে-দেখতে এগোচ্ছিলুম । হঠাৎ একজন মধ্যবয়সী হোঁচোট খেয়ে পড়ল আমাদের সামনে, ওপরে মুখ তুলে চলার ফল । মারিসকা মাজুর তাকে দুহাত ধরে টেনে তুলে দেখালেন রাস্তার ওপর ব্রোঞ্জের একটা ভাস্কর্য, অজস্র মানুষের চলার দরুণ চকচকে হয়ে গেছে । ভাস্কর্যটা হলো একজন পুরুষের ডান হাত একটি যুবতীর বাঁদিকের মাই টিপছে, ব্যাস ওইটুকুই, হাত আর একটা মাই । মারিসকা বললেন, আগে এই ভাস্করের নাম জানা যায়নি, এখন জানা গেছে ওনার নাম রব হজসন, লুকিয়ে ভোররাতে পুঁতে দিয়ে গেছেন। …..

…..পিসতুতো দাদা সেন্টুদার সঙ্গে অবিনাশ কবিরাজ লেনে গিয়েছিলুম; সেন্টুদা বলেছিল, এখানেও স্কুল ফাইনাল, বিএ, এমএ করতে-করতে এগোতে হয়, সব শিখিয়ে দেবো তোকে, নিরোধ জানিস তো নিরোধ, সঙ্গে নিয়ে আসবি, ঠোঁটে চুমু খাবি না, ওখানে চাটবি না, দিনে-দিনে আসবি, দিনে-দিনে চলে যাবি, কেউ দেখতে পাবে না, রেটও দুপুর বেলায় হাফ, তখন কেউ শ্যাম্পু করা চুল আঁচড়ায়, কেউ পায়ের নখে নেলপেলিশ লাগায়, কেউ বারান্দায় বসে হাই তোলে, দিল খুশ হয়ে যাবে, ইচ্ছে করলে তুই পায়ে নেলপালিশ লাগিয়ে দিতে পারবি, চুল আঁচড়ে দিতে পারবি, এমনকি সেক্স করার আগে যদি গিল্টি ফিল করিস তাহলে সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দিতে পারবি, কালবৈশাখির ঝড় উঠলে আহিরিটোলা ঘাটে নেমে দুজনে চান করার ভান করতে পারবি । ……

…..১৯৫০ সাল থেকেই ঠাকুমা গরমকালে কেবল একটা গামছা কোমরে জড়িয়ে উত্তরপাড়ার খণ্ডহরে ঘুরে বেড়াতেন, ভাড়াটেদের সঙ্গে গ্যাঁজাতেন, ওনার মাইদুটো শুকিয়ে আমসি হয়ে গিয়েছিল । যখনই যেতুম কিংবা ঠাকুমা পাটনায় আসতেন, বলতুম, “তোমার মাই নিয়ে খেলবো” । ঠাকুমার মাইয়ের বোঁটা দুটো দুহাতে ধরে জুড়ে ছেড়ে দিতুম আর বলতুম, “ঝমমমম”। ঠাকুমা বলতেন, যথেষ্ট বয়েস হয়েছে তোর, “এবার বে-থা কর আর বউয়ের মাই নিয়ে ঝম ঝম কর দিকিনি।” বলতুম, “বউয়ের মাই তো আর তোমার মতন হবে না যে এক বোঁটার সঙ্গে আরেক বোঁটাকে মেলাবো।” ঠাকুমা বলতেন, “আমার মাইও এককালে তোর বড়োজেঠিমার চেয়ে পেল্লাই ছিল, বুঝেছিস, তোর দাদুর কতো গর্ব হতো।” ঠাকুমা মারা যাবার চার বছর পরে বিয়ে করলুম, নয়তো ওনাকে বলতুম, আমিও আমার বউয়ের মাই নিয়ে গর্ব করি , তোমাকে দেখাতে বলব একদিন ।…..

…..রাতে শিউচন্দরদের বারদেউড়ির যে ঘরে আমাকে শুতে দিয়েছিল, হঠাৎ তার মধ্যে একজন বিহারি যুবতীকে ঠেলে দিয়ে শিউচন্দরের বাবা বললে, “লে রে ববুয়া, দেশি ঘোড়ি পর চঢ়” । মেয়েটার গন্ধে আমার হাড়-হিম করা ভয় দেখা দিল, দরোজা খুলে বললুম, যাও এক্ষুণি পালাও । ভিতু ছিলুম বেশ । যৌনকর্মে নারীও ভীতির কারণ হতে পারে ।…..

…..প্রত্যেকদিন কোনো-না-কোনো যুবতী নার্স লাঞ্চ আর ডিনার খাইয়ে যেতো, অতি যত্নে, হাসপাতালটায় মেয়েগুলোকে বলে সেবিকা । মুখের ভেতরে একজন কচি যুবতীর আঙুলের স্পর্শেই বোধহয় পনেরোদিনে চনমনে হয়ে গেলুম । মনে হতো, এদের জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকার মতন আনন্দ আর নেই, এদের সঙ্গে সেক্স করা যায় না, জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রেখে ফোঁপানো যায় ।…..

…..খেমির জন্মদিন-মৃত্যুদিন জানা হল না আমার । কুচি-খেমির মায়ের নাম ছিল বিবসনা । ভাবা যায় এরকম অতিআধুনিক নাম, যার দেহে বসন নেই ? জানি না ইনি কোন পুরাণের দেবী । আমাদের দুজনের গা গরম হয়ে ওঠে, সেই গরমের যোগফল দুজনের গায়ের গরমের তিনচার গুণ বেশি । আকাশে তারায় তারা, দেখা যায় সপ্তর্ষি মণ্ডল, দেখা যায় চাঁদ । ইমলিতলা ছাড়ার পর অমন পরিষ্কার আকাশ কোথাও পাইনি আর ; খেমি ওই আকাশ নিয়ে গেছে নিজের সঙ্গে আর দিয়ে গেছে ধোঁয়াটে ডিজেলের কারখানার চিমনির শ্বাসের আকাশ । ফিসফিস করে, খেমি অর্থাৎ মিলি : এরকম হয় বুঝি ? এই ফুলে যাচ্ছে রে, গরমও হয়ে যাচ্ছে, আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছে রে, বুক ঢিপঢিপ করছে ; তোর কিছু হচ্ছে না ? মানে এখানে নয়, যেটা ধরে আছি? মনের মধ্যে কিছু? কিংবা বুকে ? আমি হাত চালিয়ে দিতে ন্যাকড়া বাঁধা পেলুম । চাপা উত্তেজনায় বললুম, ও, নিজেরটা বেঁধে এনেছিস । কেন, চাস না যে হাত দিই ?

খেমি বা মিলি : ধ্যাৎ বোকা, এখুন ধ্যাড়ানি চলছে, কালকে খুলব, তখন যতো ইচ্ছে হাত দিস ।

খেমি বা মিলি ন্যাকড়া ঢিলে করতে হাত ঢোকালুম, কীরকম চটচটে । আমার হাতটা নিজের ফ্রকে পুঁছে খেমি বলেছিল, দেখলি তো ! কালকের দিনটা অপেক্ষা করতে পারলি না । তুই কিন্তু সত্যিই ষাঁড় । বড়বাজারে গিসলুম একবার, তখন দেখেছিলুম একটা ষাঁড় ওই করছে । একদম গোলাপি । কেন বলতো? তুই তো ফর্সা ।

পরের দিন, মিলি বা খেমি আমার বাঁ হাতের মধ্যমা আঙুলটা নিয়ে বলেছিল, এইতে রাখ, শুধু রাখবি, নাড়াবি না কিন্তু, নাড়ালে কাল থেকে অন্য জায়গায় শোবো ।

আমি আঙুলটা নাড়াতে-নাড়াতে বলেছিলুম, নাড়ালে কী হয় ?

মিলি বা খেমি আমার বোতাম-খোলা প্যান্টে হাত ঢুকিয়ে টিপে-তিপে ফোলাতে লাগল আর বলতে লাগল, এই হয়, এই হয়, এই হয়, এই হয়, এই হয়, এটা আমার এটা আমার ।

—কালকে দিনের বেলায় একটু দেখতে দিস ।

—দেখে আবার কী করবি ? চুল দেখতে চাস ?

খেমি দেখিয়েছিল, ছাদেতেই, দুপুর বেলায়, যখন সবাই ভাত খেয়ে ঝিমোচ্ছে । দেখেই বেশি ভালো লাগলো, হাত দেয়াদিয়ির চেয়ে । রগের কাছে দপদপানি ।

খেমির আগে, ইমলিতলা পাড়ায়, কুলসুম আপার সঙ্গে একই ধরনের ব্যাপারে, আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল, আমি জানতুম যে বাড়াবাড়ি করলে ছড়ে গিয়ে কষ্ট হতে পারে ; ১৯৪৯ সালে, কুলসুম আপার সঙ্গে সম্পর্কের সময়ে আমার বয়স দশ । কুলসুম আপাদের ঘরটা ছিল অন্ধকার, ছাগল হাস মুর্গিদের ঘর, তাই দেখা হয়নি, তাছাড়া উনি ছিলেন বেশ কালো । কুলসুম আপার চরিত্র আমি ব্যবহার করেছি ‘রাহুকেতু’ উপন্যাসে । ওনারা ছিলেন শিয়া মুসলমান পরিবার. ওয়াজেদ আলি শাহের পতনের পর পাটনায় পালিয়ে এসেছিলেন, বেশ গরিব হয়ে গিয়েছিলেন, একই শতচ্ছিন্ন পোশাক দিনের পর দিন, বোরখা পরতেন না কেউ, বাড়ির বউরা বিড়ি বাঁধতেন, হাসের ডিম, মুর্গির ডিম, হাস, মুর্গি, ছাগলের বাচ্চা বিক্রি করতেন । আমাদের বাড়িতে মুর্গির ডিম সেসময়ে নিষিদ্ধ ছিল বলে ওনাদের বাড়ি থেকে হাসের ডিম আনতে যেতুম । কুলসুম আপা গালিব আর ফয়েজ আহমদ ফয়েজ শোনাতে ভালোবাসতেন, আমার মতো নির্বাক মুগ্ধ শ্রোতা আর কোথায় পাবেন, যে ওনার কালো গভীর চাউনি গোল মোটা ঠোঁট গালে টোল দেখার নেশায় বুঁদ । ওনাদের বাড়িতে যে মাংস রাঁধা হচ্ছিল তার গন্ধে শ্রোতা মোহিত হয়ে খেতে চাইলে কুলসুম আপা বাটি করে এনে খাইয়েছিলেন, বলেছিলেন বাড়িতে কাউকে বলিসনি, পাড়ায় রটে যাবে । বলিনি কখনও যে গোরুর মাংস খেয়েছি । উনি জিভ দিয়ে আমার ঠোঁট পুঁছে দিয়েছিলেন । যেদিনই মাংস রান্না হয়েছে সেদিনই ব্ল্যাকমেল করেছি ঘষাঘষি খেলার আগে ।

একদিন হাস-মুরগির অন্ধকার ঘরে শ্রোতার প্যান্ট খুলে নামিয়ে দিলেন, নিজের চুড়িদার নামিয়ে দিলেন আর শ্রোতাকে কষে জাপটে ধরে নিজেকে ঘষতে লাগলেন । শ্রোতার ভালো লেগেছিল বেশ, তাই রোজ যেতো, যদিও রোজ হাসের ডিম কেনার দরকার হতো না । এ-ব্যাপারেও কুলসুম আপা বলেছিলেন, তোর বাড়িতে কাউকে বলিসনি যেন । একদিন কুলসুম আপা শ্রোতাকে এতো বেশি জাপটে ধরে কাঁপতে লাগলেন যে শ্রোতার নুনু ছড়ে গেল, হাঁটতে অসুবিধা হল দুদিন । ভয়ে শ্রোতা তারপর কুলসুম আপার বাড়ি যাওয়া ছেড়ে দিয়েছিল । শ্রোতার জাঠতুতো-খুড়তুতো বোনরা ডিম কিনে আনতো । মেজজ্যাঠার ছোটো মেয়ে মনু জিগ্যেস করেছিল, “ছোড়দা, ওই কেলটে কালো কুচকুচে কুলসুমটা তুই কবে ওদের বাড়ি যাবি, জানতে চায় কেন রে ?”……

……ড়োজ্যাঠা অনেকসময়ে আমাকে সঙ্গে করে ঘরগুলোয় নিয়ে গিয়ে দেখাতেন কোনটা কার মূর্তি, কোন জিনিস কতো হাজার বছর আগেকার । একজন অপ্সরার মাই আর একজন গলাকাটা পুরুষের মূর্তির নুনু চকচকে ছিল, কেন তা জানতে দেরি হয়নি, দেখি মহিলা দর্শকরা গলাকাটা মূর্তির নুনুতে হাত দিয়ে টুক করে কেটে পড়ছে, আর একই কাজ করছে পুরুষ দর্শকরা অপ্সরার মাইতে হাত বুলিয়ে । আমি অপ্সরার মাইতে হাত দিতে পারতুম না, কেননা আমার হাত পৌঁছোত না । খেমির মাই অপ্সরাদের চেয়ে ছোটো ছিল; কুলসুম আপার মাই অপ্সরাদের চেয়ে কালো ।

বড়োজ্যাঠার টয়লেটে গিয়ে প্যান্টুলের বোতাম খুলে দেখেছিলুম, শ্বেতপাথরের গলাকাটা মূর্তির চেয়ে আমার নুনু বড়ো । গলাকাটা মূর্তি, পরে বলেছিলেন বড়োজ্যাঠা, আলেকজাণ্ডারের । শুনে বেশ ভালো লেগেছিল ; তার মানে আমিও আমার নুনু নিয়ে পৃথিবী জয় করতে যেতে পারব । খেমি যদি বেঁচে থাকত তাহলে ওর মাইও হাতের পালিশ খেয়ে অপ্সরার মতন চকচকে আর বড়ো হতো, পীনোন্নত । কিন্তু ওর তো বিয়ে হয়ে যেত, ওর বরকে লুকিয়ে খেমির মাইয়ে হাত বোলাতুম, ওর ঠোঁট চেবাতুম, তালশাঁসের মতন খেতুম । ……

……ভূবনমোহিনী রাণা একমাত্র যুবতী যে আমাকে চুমু খাবার প্রতিদানে চড় মেরেছিল, কষে চড় । ‘রাহুকেতু’ উপন্যাসে লিখেছি ঘটনাটা । ফরাসি যুবতীকে চুমু খাবার ইচ্ছে পুরো হলো না, ওদের চুমুতে ফরাসি ভাষার নাকিসুর বাজনা থাকে বলে জানিয়েছিল উলিয়াম গথ নামে এক হিপি, কাঁচা মাছের সুবাস থাকে, কাঠমাণ্ডুতে একজনও ফরাসী যুবতী হিপি পাইনি, নইলে নির্ঘাৎ চুমু খেতুম, কচি ডাবের জল খাবার মতন করে, যে ভাষার সঙ্গে পরিচয় নেই সেই ভাষার যুবতীদের যোনি থেকেও গোপন সঙ্গীত ভেসে বেড়ায়, এটা আমার অভিজ্ঞতা।……

…… স্নাতক পড়ার সময়ে সহপাঠী রাজনারায়ণ দাসের ডাকে গেলুম ওর চিলতে ঘরে, পাটনা মার্কেটের পেছনে, ঘরের আলো নিভিয়ে একটা টেলিস্কোপ দিয়ে বলল, দ্যাখো জানলা দিয়ে । দেখলুম দুজন চিনা যুবতী, ভারতীয় চিনা, পোশাক খুলে, এখন যাকে বলে, লেসবিয়ান প্রেম, তাই করছে । রাজনারায়ণ বলল, দেখলি তো, চিনা মেয়েদের স্লিট হরাইজনটাল হয়, ভারতীয় মেয়েদের মতন ভার্টিকাল নয় । আমি কেবল ওদের গোলাপি মাই আর চুলহীন যোনি দেখে উত্তেজনা সামলাচ্ছিলুম ।……

…..উচ্চবিত্ত বা মধ্যবিত্ত মুসলমান যুবতীর মুখ দেখার লোভে স্নাতক ক্লাসের বন্ধুনি ভূবনমোহিনী রাণাকে পটিয়েছিলুম, ওদের হোস্টেলে উম্মা হাবিবা নামে একজন সুন্দরী ধনী বাড়ির যুবতী আছে শুনে । উচ্চবিত্ত ছাত্রীরা সেময়ে বোরখা পরত । হোস্টেলের গেটের কাছে এসে উম্মা হাবিবা বোরখার নকাব মাথার ওপর তুলতে ওর লিপ্সটিক বোলানো ঠোঁট আর সুর্মামাখা গভীর চোখ দেখে ঘাবড়ে গিয়েছিলুম, বেশ ফর্সা, অত্যন্ত ফর্সা, বলেছিল, “দেখ লিয়া ?” আমি বলেছিলুম “জি”। আর মনে হয়েছিল, আহা, এই মেয়েটা যদি কুলসুম আপা হতো একে নির্ঘাৎ প্রেম নিবেদন করতুম, লিঙ্গের চামড়া ছিঁড়ে ফর্দাফাঁই হয়ে গেলেও ছাড়তুম না একে, মার খেলেও, দাঙ্গা হলেও, ছাড়তুম না ।……

…..সিনেমা দেখার অভ্যাস ছেড়ে যেতে লাগল, কেননা সিনেমা তো দেখতুম যৌন আবেদনের জন্যে, শ্বেতাঙ্গিনীর উরু আর ক্লিভেজের আকর্ষণে, সত্যজিৎ রায় ঋত্বিক ঘটক মৃণাল সেন আকিরো কুরোসাওয়া ফগেদেরিকো ফেলেনি রোমান পোলানস্কি ইঙ্গমার বার্গম্যান জাঁ লুক গোদার লুই বুনুয়েল ফ্রাঁসোয়া ত্রুফো ফেদেরিকো ফেলিনির জন্য নয় । সাবটাইটেল দেয়া ফিল্ম আমি দেখতে পারি না ; পড়া আর ফ্রেম দেখা আর শোনা এক সঙ্গে তিনটে ব্যাপার সম্ভব হয়নি কখনও ।

অড্রে হেপবার্ন, ব্রিজিত বার্দো আনা কারিনা মারিনা ভ্লাদি বেরুয়াদেতে লাফোঁ ক্লদ জেড জিন মোরেয়া ভেরগানো মারিয়ন কিকা মারখাম শার্লি আমাগুচি মিসা উয়েহারা অ্যানিটা একবার্গ জিউলিয়েতা মাসিনা সান্দ্রা মিলো ক্লদিও কার্দিনাল অনুক আইমি ক্যারোল বোক অ্যানজেলা মোলিনা ক্যাথারিন দেনেউভ সোফিয়া লোরেন এলিজাবেথ টেলর আরও কতো আরও কতো আরও কতো আরও কতো , তাদের ঠোঁট নড়া দেখলে আমি পায়ের ওপর পা রেখে লিঙ্গকে সামাল দিই ।

কাজলচোখ গাঢ় ভুরু মিষ্টি হাসি কাঁপানো ঠোঁট সুচিত্রা সেন সাবিত্রী দেবী সুপ্রিয়া চৌধুরী সন্ধ্যা রায় মাধবী মুখার্জি আরও কতো আরও কতো আরও কতো । নিজেকে সামাল দিই ।

স্তনের ভাঁজ কাঁচা গোলাপি ঠোঁট দীর্ঘ উরু শিফন শাড়ি মধুবালা মীনাকুমারী নিম্মি নার্গিস শ্যামা মীনা শোরে রেহানা কুলদীপ নায়ার গীতাবালি নূতন সুরাইয়া আশা পারেখ সাধনা মুমতাজ ওয়াহিদা রহমান হেলেন নলিনী জয়ন্ত বীনা রায় বৈজয়ন্তিমালা মালা রায় আরও কতো আরও কতো । নিজেকে সামাল দিই ।……

…..একদিন হ্যাশিশ ফুঁকে ট্রামে চেপে গড়িয়াহাটে নেমে সামনেই দেখি আমার প্রথমম প্রেমিকা, কাঁথাস্টিচ শাড়িতে, আমাকে দেখে চমকে সামলে নিয়ে এগিয়ে এলো । জানালো একজন স্মাগলারকে বিয়ে করেছে ; প্রথমে বলল ওর আস্তানা যাদবপুরে এইটবি বাস স্ট্যাণ্ডের পেছনে, তারপর ট্যাক্সি ডেকে ড্রাইভারটাকে বলল নিউ আলিপুর যেতে । গেলুম । রাতভর থাকলুম । স্মাগলিঙের সোনার বিসকুট দেখলুম। বিদেশী হুইস্কি খেলুম । একসঙ্গে শুলুম, কিন্তু আমার লিঙ্গ দাঁড়ালো না, অশেষ ভাগ্য, অশেষ ভাগ্য, ঠিক সময়ে লিঙ্গের প্রত্যাখ্যান । প্রেমিকার খেতাব পেলুম “এরেকটাইল ডিসফাংশানের প্রেমিক।”…..

…..জোহের আগেই জানিয়ে দিয়েছিল যে প্রথমে রাজগিরে গিয়ে সবাই জড়ো হবে দেবেন্দরের বাবার পেল্লাই বাড়িতে, সেখানে এক রাত হইচই করে কাটিয়ে পরের দিন খেলতে যাওয়া হবে নালান্দার ধ্বংসাবশেষে । তখনও নালান্দার ধ্বংসাবশেষকে এখনকার মতন সাজিয়ে তোলা হয়নি । শেফালি ঢুকে যাবে আগে, তারপর পুরো দলটা ঢুকে ওকে খোঁজার চেষ্টা করবে । যে প্রথম খুঁজে পাবে তার সঙ্গেই রাতটা কাটাবে শেফালি, দেবেন্দরের রাজগিরের বাড়ির পালঙ্কে, অন্য সবাই মদ-মাংস খেয়ে মাতলামি করবে, কিংবা গ্রাম থেকে দেবেন্দর কয়েকজন বউকে এনে রেখেছে, ওদের বাড়ির পুরুষদের রাখেল, তাদের সঙ্গে ইচ্ছে করলে শুতে পারে ।

আমি মেয়েটার কাছ থেকে যা পাবার পেয়ে গিয়েছিলুম, নালান্দার ধ্বংসাবশেষের ভেতরে ঢুকে ছায়ায় বসে রইলুম আর দেখলুম সহকর্মীদের দৌড়ঝাঁপ, শেফালিকে খুঁজতে হন্যে হয়ে দৌড়ে বেড়াচ্ছে । অভিজিৎ জিতেছিল । …..

……একজন লাল-ব্লাউজ যুবতীর হাত আমায় ভেতরে টেনে বলল, প্রতিদিন দরোজা ওব্দি আসো আর ফিরে যাও কেন ; তার টানে আর আমার হ্যাশিশাক্ত টলমলে শরীর গিয়ে পড়ল স্বাস্হ্যবতী নেপালিনীর বুকের ওপর । দেখে বুঝলুম ওটা যৌনকর্মীদের দিশি মদের ঠেক ; মদ খাবার মতন অবস্হা ছিল না, যুবতীর গায়ের গন্ধে টেকা দায়, বুকে মুখ গুঁজে একটা নেপালি টাকা দিয়ে বেরিয়ে এলুম । মোঙ্গোলয়েড তরুণীদের আমার চিরকাল ভালোলাগে । পরের দিন হুঁশ এলে ঘরটা আর খুঁজে পাইনি, গোটাকতক সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করেও ।……

…..সেইদিন রাতেই একটা স্লিপিং ব্যাগের ভেতরে টেনে নিল আমাকে জনৈকা হিপিনী, তার নাম ক্যারল নোভাক, ঢুকে গেলুম আর একে আরেকের মাথার দিকে পা করে শুয়ে পড়লুম। এটাই আমার জীবনে বিদেশিনীর প্রথম মুখমেহন । ….

…….মুম্বাইতে এসেই বাস্তব জগতকে নিংড়ে ফিকশান বের করার কায়দা আবিষ্কার করলুম । এই শহরে প্রেম এমন পর্যায়ে পৌঁছেচে যে তা মানুষ-মানুষীর পরস্পরের অবিশ্বাসের ওপর নির্ভর করে ; যতদিন দৈহিক অবিশ্বাস ততোদিন ভালোবাসা, সম্পর্কের মাঝে চাই কনডোম সুরক্ষা, প্রেমিক জানে না প্রেমিকার দেহে কোন রাক্ষস আছে, তেমনই প্রেমিকা জানে না প্রেমিকের লিঙ্গে কোন রোগের রাক্ষস ওৎ পেতে আছে ।…….