কামসূত্র – দেবতোষ দাশ

›› উপন্যাসের অংশ বিশেষ  

…..স্নানকক্ষে দুইজন সহায়িকা। অতিশয় যত্নে বণিককে পোশাক-মুক্ত করিতে তৎপর হইল তাহারা। বণিক কিঞ্চিৎ অস্বস্তিতে। তবে প্রাথমিক জড়তা কাটাইয়া বণিক যেন আত্মসমর্পণ করিল দুই স্নান-সহায়িকার নিকট। প্রারম্ভেই তাহারা স্নানে ব্যবহৃত চন্দনাদি, গাত্রঘর্ষণদ্রব্য, সুগন্ধীচূর্ণ, তৈল প্রভৃতি নিজ নিজ বক্ষ ও বাহুতে স্পর্শ করিয়া আশ্বস্ত করিল আসন্ন স্নান নিরাপদ। ব্যবহৃত দ্রব্যে কোনও বিষ তথা বিপদ লুক্কায়িত নাই। মৃদু হাস্যে বণিক পাল্টা আশ্বস্ত করে, যেন এমত আচরণে সে খুশি।…..

….অন্তর্বাসটুকু বাদ দিয়া সকল পোশাক মুক্ত করাইয়া যুবতীদ্বয় বণিককে বেদীতে শয়ন করাইল। স্বল্পবাস দুই তরুণীর হস্তে যেন ইন্দ্রজাল। খল হইতে আঙুলের ডগায় লেপন তুলিয়া নৈপুণ্যের সহিত চর্চিত করিল অঙ্গে। অতঃপর নরম আঙুলে মর্দন। অঙ্গমর্দনের সুখানুভূতি বণিকের দুই চোখের পাতা এক করিল।

কতক্ষণ কাটিয়া গিয়াছে জানা নাই, বণিকের সম্বিত ফিরিল হাসির শব্দ আর জলের স্পর্শে। ঈষদুষ্ণ জলে অঙ্গ প্রক্ষালন করিয়া দিল দুই তরুণী। মাঝেমধ্যেই খিলখিলাইয়া হাসিয়া উঠে তাহারা। জালিকা সহযোগে মার্জন করিয়া তুলিয়া দিল প্রলেপ। অতঃপর অতীব ঠাণ্ডা জলের ধারা আসিয়া সিক্ত করিল বণিকের শরীর। একবার ঈষদুষ্ণ, অতঃপর পুনরায় শীতলধারা।

অচিরেই দূরীভূত হয় সকল ক্লান্তি। শরীরের সকল রক্ত যেন হইয়া উঠে চঞ্চল। দুই অঙ্গসংবাহকের যৌবনস্পর্শ, নাকি এই অসাধারণ স্নান, কী যে তাহাকে এত চনমনে করিয়া তুলিল, বণিকের যেন গোচরেই আসে না। অবশ্য এই স্নানের অঙ্গই তো ওই জাদুস্পর্শ। এই দুইকে ভিন্ন করা সম্ভবই বা কীরূপে!

ক্লান্তি অপনোদনের পর পূর্ণ দৃষ্টিতে বণিক চাক্ষুষ করিল দুই সুন্দরীকে। মৃণালভুজ। কয়েতবেলের মতো গোলাকার স্তন। সেই বতুলের কেন্দ্রে লালচে কৃষ্ণবর্ণের চূচকবৃন্ত। সিক্ত ও স্বচ্ছ কাঁচুলির আড়ালে তাহারা জাগ্রত। গভীর নাভিমূল। পাতলা কটিদেশের নীচে প্রশস্ত শ্রোণিদেশ। সামান্য কটিভূষণ অগ্রাহ্য করিয়া সে-নিতম্ব যেন আহ্লাদে বিস্ফার করিতেছে। কলাগাছের ন্যায় উরু। ঝর্ণাবৎ উন্মুক্ত জঙ্ঘা।

বণিকের দৃষ্টি দেখিয়া হাস্যে ও লাস্যে ভরিয়া উঠিল দুই স্নানকন্যা। বণিক নিজেকে সংযত করিল।…..

….দুই সুন্দরীর পারস্পরিক কথোপকথনে বোঝা যায়, একজনের নাম বৃন্দা, অপরজন লীলা। লীলা অপেক্ষাকৃত নবীন, ধারে-ভারে-লাস্যে বৃন্দাই তুখোড়। যৌবন অপেক্ষাকৃত অতিরিক্ত মনোযোগ সহকারে তাহাকে প্রস্তুত করিয়াছে। তাই বলিয়া লীলার ক্ষেত্রে কিছু কার্পণ্য রহিয়াছে এমন বলা যায় না। যোগ্য সঙ্গত তাহারও।…..

….‘নারীর সকল অঙ্গই পেলব। আপনি কি কখনও নারীশরীর স্পর্শ করেননি?’ ‘কী যে বলেন! নারীশরীর স্পর্শ করব না! তবে চূচক দুটির মতো নরম আর কিছুই নয়।’ যুবকের দ্রুত উত্তর।

‘অস্থিহীন মাংসপিণ্ড পেলব তো হবেই!’ মৃদু হাসিয়া কহিল বণিক।…..

….দীপন লক্ষ করিল অনতিদূরে রন্ধনশালায় ভোজ্য প্রস্তুত হইতেছে। প্রজ্জ্বলিত দীপমালা ও চুল্লির আগুনে চকিতে দৃশ্যমান হইল দুই স্নান-সুন্দরীর অবয়ব। বৃন্দা ও লীলা। দেহভঙ্গিমা দেখিয়া ভুল হইল না। দীপনের দৃষ্টি বৃন্দার প্রতি স্থির। কাঁচুলিবন্ধনে স্তনদ্বয় উদ্যত। পীনোন্নত কহিলেই যথার্থ বর্ণনা হয়। কটিসূত্র দৃশ্যমান। তাহা হইতে বিপজ্জনক দূরত্বে কটিবস্ত্র বৃহৎ নিতম্ব মাত্র আবৃত করিয়াছে। কৃশ কটির নিম্নে এত বিপুলাকার জঘন কীভাবে, এই ভাবিয়া ঈষৎ বিস্মিত দীপন, কিছুক্ষণ চাহিয়া রহিল। নীরব অবলোকন।…..

…..ছায়ামূর্তি আলোয় আসিল। বৃন্দা।

স্নান-সুন্দরীর অপাঙ্গবীক্ষণ স্থবির করিয়া দিল দীপনকে।

এক শরীর হাসি লইয়া অগ্রসরমান বৃন্দা। প্রদীপের আলোয় সে আরও মোহময়ী। নিকটে আসিয়া সুন্দরী স্তব্ধ হইল। পরস্পর দৃষ্টি বিনিময়। কখন সে অতি নিকটে উপস্থিত হইয়াছে অনুভব করিতে পারে নাই দীপন। অনুধাবন করিল, যখন বৃন্দা স্পর্শ করিল তাহাকে। তাহার প্রশস্ত নগ্ন বক্ষের উপর বৃন্দা আপন অঙ্গুলি সঞ্চালন করিল নিবিড় ভঙ্গিতে। মস্তক আকর্ষণ করিয়া চুম্বন করিল ওষ্ঠে। ঘটনার আকস্মিকতায় দীপন তখনও অপ্রস্তুত। স্থিতি হইতে গতিতে আসিতে ব্যয় করিতেছে সময়। কিন্তু তাহাতে বৃন্দার গতিশীলতা কিঞ্চিন্মাত্র হ্রাস হইল না।

বৃন্দা কেবল গ্রীবা ঈষৎ বক্র করিয়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করিল আলোর উৎস অভিমুখে। সম্ভবত আলো তাহার গতি রুদ্ধ করিতে চেষ্টা করিতেছে। কয়েক মুহূর্তের জন্য বৃন্দার চোখ সরিল দীপনের চোখ হইতে। ইত্যবসরে নিজেকে ফিরিয়া পাইল সে। পুরুষের স্থিতি আর কতক্ষণের! বৃন্দার সম্মোহন হইতে মুহূর্তের মুক্তি তাহাকে গতি দিল। ত্বরিত গতিতে আবরণ টানিয়া লইল বৃন্দার শরীর হইতে। বক্ষবন্ধনী হইতে সদ্য মুক্ত, উৎপ্লাবিত দুই স্তন অতি আহ্লাদে করতলগত হইল দীপনের।

নগ্ন বৃন্দা চকিতে ফিরিল। মন্দস্মিতার চোখে তখন বিদ্যুৎ। কিন্তু মুহূর্ত মাত্র! এ কী, পুনরায় ওইদিকে মুখ ফিরাইতেছে কেন? অবাক দীপন লক্ষ করিল বৃন্দা পুনরায় গ্রীবা বক্র করিল ৷

অতঃপর সুন্দরী এক ফুৎকারে নিভাইয়া দিল প্রদীপ।…..

…..দীপন নামের বাঙালি বণিক চিৎ হয়ে শুয়ে আছে শয্যায়। আনন্দ ও বিস্ময় যুগপৎ তাকে শয্যাশায়ী করেছে। জাদুকরী না-হয়ে যায় না এই মেয়ে! গোধূলিস্নানের সময়ই সে আন্দাজ পেয়েছিল এর ইন্দ্রজালের। সঙ্গে আছে যৌবন আর হন্তারক হাসি। কথায় কথায় বণিক জানতে পারে বৃন্দা তিব্বতের এক তান্ত্রিকের সাধিকা ছিল। তাই সে কামকলায় উত্তম পারদর্শী।

‘তুমি যে পদ্ধতি গ্রহণ করলে মিলনে এমন অভিজ্ঞতা আমি আগে পাইনি। আমায় চুপ করে বসিয়ে তোমার অঙ্গ সঞ্চালন, প্রথমে ধীরে তারপর দ্রুত, এতে কিন্তু আমার শরীর উত্তপ্ত হল।’

‘হবেই তো! সেই অগ্নিসম উত্তাপে সাধকের দেহের মধ্যে সুপ্ত কুলকুণ্ডলিনী জাগ্রত হয়। তারপর তা ধীরে ধীরে ঊর্ধ্বমুখী হয়ে শরীরের বিভিন্ন স্তর ভেদ করে ব্রহ্মতালুতে গিয়ে ঠেকে। তখন সাধকের শরীর কাঁপতে থাকে, শরীরে ঘাম হয় এবং মহাসুখ অনুভূত হয়। তখন সাধিকা আর দেহ সঞ্চালন করে না। সে থেমে থাকে। তবে সেটা ক্ষণকালের জন্য মাত্র। তারপর কুলকুণ্ডলিনী নীচের দিকে নামতে থাকে। কিন্তু যখন কুলকুণ্ডলিনী ধীরে ধীরে নীচের দিকে নামে সাধক সাধিকাকে ইশারা করে। সাধিকা আবার শুরু করে অঙ্গ সঞ্চালন।’

‘অঙ্গ সঞ্চালনের ভার সাধিকারই? সাধক স্থির থাকবে?”

‘সাধক তো সাধনায় বসেছেন! তিনি তো সাধারণ কোনও সঙ্গমে লিপ্ত হচ্ছেন না!”

‘সাধারণ নয় কেন?’

‘আমাদের সাধারণ যৌন মিলনে কাম থাকে। আমাদের সব ইন্দ্রিয় সজাগ থাকে। মিলনের

মধ্য দিয়ে আমাদের সুখ হয়। তবে বড় তফাৎ হচ্ছে, তোমার আমার রেতঃপাত হয়, সাধকের হয় না। তারপর উভয়ের শরীর ধীরে ধীরে শিথিল হয়ে আসে। রেতঃপাতেই উভয়ের শরীরের সুখপ্রাপ্তি। কিন্তু সাধকের ক্ষেত্রে তা আলাদা।’

‘কীভাবে সংবরণ করে তারা নিজেকে?’

‘সুখানুভূতির মধ্যেই সাধক ডুবে যান ধ্যানে। গভীর ধ্যানে নিমগ্ন হলে সাধিকা নিজের

পদ্মকে সাধকের কঠিনবজ্র থেকে বিমুক্ত করে আসন ত্যাগ করেন। তাঁর কাজ সমাপ্ত। সাধিকার একটাই কাজ। মিলনের মধ্য দিয়ে সাধকের শরীরে মহাশক্তি উৎপন্ন করা।’

কথা বলিতে বলিতে বৃন্দার আঙুল ক্রীড়া করিতেছে দীপনের প্রশস্ত উন্মুক্ত বক্ষে।

নিজ ওষ্ঠ দংশন করিয়া ইঙ্গিতপূর্ণ সিদ্ধান্ত মদালসার। বণিকের অন্যমনস্কতায় সে যেন কিঞ্চিৎ অপমানিত। ডান হাতের পাঁচটি অঙ্গুলি ব্যস্ত নিজস্ব ক্রীড়ায়। চওড়া বক্ষে বৃন্দা ইতস্তত ভ্রামণিক অনামিকা হঠাৎ দীপনের স্তনবৃন্তে নখরাঘাত করিল। উপর্যুপরি সেই আঁচড়ে নূতন করিয়া যেন জাগ্রত হইল বণিক। মুহূর্তে উধাও হইল শত্রুর আগমন ও আশঙ্কাজনিত দুশ্চিন্তা। বলা বাহুল্য, যাবতীয় কুণ্ঠাও। বৃন্দাকে এক ঝটিকায় চিৎ করিয়া দিল নিজের পাশে ।

ফিসফিসাইয়া কহিল, ‘এতক্ষণ সাধিকার খেলা দেখালে তো, এবার আমার খেলা দেখো!” ‘সত্যি! তুমি জান খেলতে?’ চক্ষু কপট বিস্ফারিত করিয়া, ঠোঁট উল্টাইয়া কহিল বৃন্দা৷

প্ররোচনা তাহার অঙ্গে অঙ্গে।

‘আচ্ছা, দাঁড়াও দেখাচ্ছি!”

হাসিতে হাসিতেই আত্মসমর্পণ করিল বৃন্দা। উৎফুল্ল কুচমুখ আড়াল করিয়াছে তাহার মুখমণ্ডল। চূচকাগ্রে জিহ্বা ঠেকাইল দীপন। আন্দোলিত হইল বৃন্দা। কিছুক্ষণ পর এক লহমায় আবার তাহাকে তুলিয়া কক্ষের গাত্রে ঠাসিয়া ধরিল। দক্ষিণ পা উঠিল বৃন্দার। উত্থানপদ বৃন্দার শরীরে অচিরেই প্রবেশ করিল দীপন। তখনও হাসিতেছে বৃন্দা। বজ্ৰ ও পদ্ম ক্রমশ যুগনদ্ধ ।

নিমেষে বৃন্দার হাসি পরিণত হইল শীৎকারে।……

 

……‘কিন্তু ভগবান শব্দ এল কোত্থেকে?’ কবীর প্রশ্ন করেন।

‘ভগ থেকে। ভগ এসেছে ভজ্‌ ধাতু থেকে—ভজনীয় — ঋকবেদে আছে—’

‘গুড! ভগ-এর অর্থ কী কী আছে?’ জানতে চান কবীর।

‘সূর্য্য, চন্দ্র, সৌভাগ্য, বীর্য্য, যশঃ, শ্রী, জ্ঞান–আরও আছে—প্রায় আঠের-উনিশ রকম অর্থ

‘ইম্পর্ট্যান্ট অর্থটাই তো বললে না!’ ‘কোনটা? সব মনে নেই।’ জিজ্ঞাসু ডিকে ‘ভগ মানে যোনি!’

‘হুঁ, ক্লিটোরিসকে বাংলায় বলে ভগাঙ্কুর।’

‘যার বল আছে তাকে আমরা কী বলি? বলবান। সেই নিরিখে আমরা বলতেই পারি, যার ভগ আছে সে ভগবান। তাহলে সব স্ত্রীলিঙ্গধারী জীবেরই ভগবান পদবাচ্য হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তা কি হয়েছে?’

‘বরং উল্টোটা হয়েছে। ভগবান শব্দটাই পুংলিঙ্গ শব্দ। এর স্ত্রীলিঙ্গ ভগবতী।’ ডিকে বলে। “ভগ মানে যদি যোনিই হয়, তাহলে ভগবান কী করে পুংলিঙ্গ হয়? আর সবচেয়ে চিন্তার বিষয় ঈশ্বরের মতো এত মহৎ এবং পবিত্র চরিত্রের নামকরণে প্রাচীন ভারতবাসী ভগ-এর মতো এমন তথাকথিত ইতর শব্দ জুড়তে গেল কেন?”

‘এদের কাছে গিয়ে এদের ভগ-তে নিজেদের শ্রম ও মেধা নিষেক করে!’ ডিকের সংযোজন।

‘যথার্থ বলেছ!” বাহবা কবীরের।

“নারীর ভগ-তে বীর্য বা শুক্র নিষেক করলে তখন তা যোনি, তাই তো!

“চমৎকার ধরণী! একদম ঠিক বলেছ!’

“ভগ তখন ভ্যাজাইনা—vagina এর মধ্যেও দিব্য লুকিয়ে আছে ভগ!’ ডিকে জানায়। ‘গুড!’ কবীরের চোখেমুখে ডিকের জন্য উচ্ছ্বাস। বলেন, ‘কিন্তু ভগ যদি কেবল নারীর ভ্যাজাইনা বা যোনি হত, তাহলে পুংলিঙ্গধারী ভগবান শব্দটি সৃষ্টি করতে হত না, একটিই শব্দ থাকত—ভগবতী!’

‘এখান থেকে কামসূত্রে আসছেন কীভাবে?”……

Please follow and like us: