বেগম শাহরাজাদ বললেন-‘জাঁহাপনা, এক নওজোয়া্ন মেষপালরক ও লেড়কির কিস্সা আপনার দরবারে পেশ করছি।
আমাদের দেশের উত্তরে যে গিরিপর্বতমালা আছে তারই এক প্রান্তে এক মেষপালক বাস করতো। তার মতো ধার্মিক, সৎ এবং পরোপকারী মানুষ আর দু’টি হয় না। তার গুণপনায় মুগ্ধ হয়ে শুধু মানুষই না, বনের হিংস্র পশুরাও তাকে খুব খাতির করতো। তার পাল থেকে একটা ভেড়াও কোন দিন খোয়া যেত না।
আল্লাহ একদিন ভাবলেন, লোকটার গুণগানে দেশের মানুষ তথা পশুপাখি সবাই পঞ্চমুখ। কি ব্যাপার। এমন সৎ ধর্মপ্রাণ মানুষ এখনকার দিনে হয় নাকি। আচ্ছা একবার পরীক্ষা করেই দেখা যাক। সুতরাং তিনি বেহেস্তের এক হুরীকে পাঠিয়ে দিলেন তার কাছে।
মেষপালক তখন অসুস্থ হয়ে নিজের গুহায় শুয়ে শুয়ে আল্লাহর গুণগান করছিলো। এমন সময় সে দেখলো, একটি ফুটফুটে সুন্দর মেয়ে তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। কাজল-কালো চোখ, টুকটুকে গুলাবের মতো লাল দু’টি গাল। মুখে তার মিষ্টি মধুর হাসিযেন মুক্তো ঝরে পড়ছে। গুহার ভিতর হঠাৎ আতরের খুশবুতে ভরে গেলো। মেয়েটির দেহের সুবাস। মেষপালকের মন চনমন করে ওঠে।
–হ্যাঁ গো, মেয়ে, এখানে তুমি কি করছে? কি তোমার নাম আর পরিচয়? আমি তো তোমাকে ডাকিনি, বা ডাকার কোন প্রয়োজন বোধ করিনি—তবে কেন এসেছো এখানে?
মেয়েটি তার পাশে এসে বসলো। বললো, আমার দিকে ভালো করে তাকাও। আমি সবে ষােলয় পা দিয়েছি। আমার দেহে যৌবনের জোয়ার আসতে শুরু করেছে। এবং এখনও আমি অপাপবিদ্ধকুমারী। আমি এসেছি তোমার কাছে আমার নিজের সুখের জন্য। আমি ছুটে এসেছি, আমার যৌবনসুধা তোমাকে নিঃশেষে দান করে তৃপ্ত হতে আর সে সঙ্গে তোমাকে তৃপ্তি দিতে। আমাকে দলন, পেষণ, চুম্বন, মর্দন সহকারে সম্ভোগ কর মেহবুবা। তোমার হাত দিয়ে আমার এই সদ্য প্রস্ফূটিত স্তনযুগলকে নিঃসপেষ কর, চটকাও, তোমার জিহবা দিয়ে আমার সারা অঙ্গ লেহন কর, পান কর যৌবনের অমৃত সুধা। আমার যোনিতে তোমার জিহবা দিয়ে চুষে দাও, আমার দেহের আগুন নিভাও। তোমার পুরুষাঙ্গ দিতে আমার এই ছোট্ট যোনিকে ছিড়ে খুড়ে দাও। তুমি আমাকে গ্রহণ করে আমাকে তৃপ্ত করে এই আমার একমাত্র কামনা। শুনেছি—তুমি খুব দয়ালু। কারো অভীপ্সাই অপূর্ণ রাখে না। তাই বড় আশা নিয়ে এসেছি, আমাকেও তুমি অখুশি করে ফেরাবে না।
মেষপালক বিছানায় উঠে বসে। রাগে তার সারা শরীর কাঁপতে থাকে। বেরিয়ে যাও, এক্ষুণি এখান থেকে বেরিয়ে যাও; শয়তানী। দূর হও, আমার সামনে থেকে। তোমার মতো নষ্টচরিত্র মেয়েমানুষের মুখ দেখাও মহাপাপ। আর কখনো এপথ মাড়াবে না। যে ক’টা দিন বাঁচি একমাত্র তাঁর নামগান ছাড়া আমার আর অন্য কোনও কামনা বাসনা নাই।
মেয়েটি কিন্তু নড়ে না। বিলোল কটাক্ষ হেনে লাস্যময় ভঙ্গী করে আধো ভাষায় আশনাই করে বলে, কেন আমাকে তুমি নেবে না? আমি কি দেখতে এতই খারাপ? তুমি বুড়ো হয়েছ তাতে কি! আমি তোমার শরীরে এমন যাদু ঢুকিয়ে দেব, দেখবে কামনার আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠবে। এই যে আমার কাজল কালো হরিণীর মতো চোখ, আপেলের মতো গাল, আর পাকা আঙুরের মতো এই দু’টো ঠোট দেখে তোমার চিত্তে কি কোনও বিকারই ঘটছে না? দেখ, কি সুন্দর আমার বুক, কি সরু আমার কটি আর এই ভারি থল থল নিতম্ব দেখে তোমার মনে কি কোনও চাঞ্চল্যই জাগছে না? আস আমি তোমার শিথিল লিঙ্গকে আমার মুখে পুড়ে নেই, আমার লেহনে দেখবে তোমার লিঙ্গ আবার জেগে উঠবে। আমাকে কাছে টেনে নাও। আদর করে দেখ, তোমার হারানো যৌবন আবার ফিরে পাবে।
মেষপালক গর্জে ওঠে, ওরে শয়তানী, নরকের কীট এখান থেকে দূর হ। এ সব কথা শোনাও আমার পাপ। আর যদি না যাস, ঐ দেখ আমার লাঠি-তোর পিঠে ভাঙবো। বেলেল্লাপনার আর জায়গা খুঁজে পেলে না। আমাকে এসেছে ভােলাতে?
মেয়েটি কিন্তু তার এই রাগের কথায় কোনও কর্ণপাত করলো না। দুম করে গিয়ে তার গলাটা জড়িয়ে ধরে একটা চুম্বন করে বললো, আমি একটা ডাগর ডাসা ফল, টকটক মিষ্টি মিষ্টি। চোখে দেখে যাও-দেখবে কি মজা। আমার কুমারীত্ব তোমার হাতে তুলে দিচ্ছি। যুঁই ফুলের মতো এর খুশবু, তোমার হৃদয় ভরিয়ে দেবে।
মেষপালক ঘৃণায় নাসিক কুঞ্চিত করে বলে, ইয়া আল্লাহ, আমার সারা দেহ মন অপবিত্র হয়ে গেলো। দূর দূর-বিদেয় হ।
মেয়েটি উঠে দাঁড়ালো। কিন্তু চলে গেলো না। ধীরে ধীরে সে তার সব সাজপোশাক খুলতে থাকলো। মেষপালক আর সহ্য করতে পারে না। মেয়েটার ঐ ফুটন্ত যৌবন তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকতে থাকে।–না না-না। এ কিছুতেই হতে পারে না।
‘সত্যি এমন এক ভাব দেখাচ্ছ যেন ইয়েটিয়ে কিছুই নেই – তােমার। এমন তরতাজা আপাপবিদ্ধ কুমারী, ডাসা পেয়ারার মত টসটসে আমার বুক—চেখে দেখ একবারটি। এক কুমারী তার অমূল্য সম্পদ কুমারীত্ব তােমার হাতে তুলে দেওয়ার জন্য উসখুস করছি আর তুমি কিনা ভাল আদমি সেজে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছ। তার মুখটিতে হাত দিয়ে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে এবার বলল—শােন, এ রসের স্বাদ তাে পাওনি কোনদিন, বুঝবে কি করে? জিন্দেগীভর ‘আল্লাতান্না’আর ‘খােদাতাল্লা’ করেই নিজেকে বঞ্চিত করলে। একটিবার চেখে দেখ আমার মােল বছরের যৌবন সুধা তখন দ্বিতীয়বারের জন্যে হন্যে হয়ে ছুটোছুটি ‘দাপাদাপি করে বেড়াতে হবে, বলে দিচ্ছি।
দু’ হাতে মুখ ঢাকে সে। তার নিজের উপরে দখল বুঝি সে হারিয়ে ফেলবে। আর সে কিছুতেই চোখ মেলে দেখবে না পদ্মকলির মতো তার দেহ বল্লরী-আমার চোখের সামনে থেকে সরে যা। ওরে শয়তানী মায়াবিনী দূর হ। যুগে যুগে কালে কালে তোদের জন্যেই দুনিয়ায় এত অশান্তি। সৃষ্টির আদিকাল থেকে ভালো মানুষগুলোকে তোরাই টেনে নিয়ে গিয়েছিস জাহান্নামে। তোদের মোহে পড়ে। পীর পয়গম্বর পথভ্বষ্ট হয়ে আল্লাহর করুণা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
এই বলে মেষপালক তোয়ালে দিয়ে মুখ ঢেকে বসে রইলো।
মেয়েটি বললো, প্রাচীনকালোর মানুষের কথা বললে, তবে জেনে রোখ, পৃথিবীর সবচেয়ে গুণীজ্ঞানী মানুষদের কিন্তু আমাকে না হলে চলে না। আমিই তাদের জীবনের প্রেরণার উৎস। আমার এই রূপ-যৌবন তাদের বিভ্রান্ত তো করেই নি, বরং নতুন পথের সন্ধান দিয়েছে।
মেষপালক দু হাতে কান ঢেকে চিৎকার করে ওঠে-ওরে শয়তানী বেবুশ্যে এখনও বলছি ভাগ। তোর ছলনায় আমি ভুলছি না। তোর লোকভোলানো মিষ্টি মিষ্টি কথায় আমাকে কাবু করতে পারবি না।
তখন সেই লাস্যময়ী রমণীর কণ্ঠ শোনা গেলো, ওগো ধর্মাত্মা, তুমি তোমার পথেই অবিচল থেকে আল্লাহর নামগান করো। আমি চললাম।
এই বলে সেই হুরী অদৃশ্য হয়ে গেলো।
এই বলে শাহরাজাদ চুপ করলো। বাদশাহ শারিয়ার বলে শাহরাজাদ, তোমার কিসসা শুনে এই সিংহাসনের মায়া মোহ ছেড়ে দিয়ে আমারও ইচ্ছে করছে কোনও এক পাহাড়ের কন্দরে গিয়ে মেষ চরাই আর তাদের দুধ খেয়ে গুহার মধ্যে শুয়ে শুয়ে আল্লাহর নামগান করে জীবনটা কাটিয়ে দিই। কিন্তু তার আগে আরও কিছু জ্ঞানের কথা তোমার কাছ থেকে শুনতে চাই।