মােহনা – হরিশংকর জলদাস

›› উপন্যাসের অংশ বিশেষ  

…..বারাঙ্গনারা সকালে একবার, সন্ধ্যায় আরবার গা-গতর ধুতে যায় কালিন্দীর জলে। পুরুষবর্জ্য শরীর থেকে সাফ করতে হয় যে তাদের শরীরের এমন কোনাে স্থান নেই, যেখানে পুরুষের হাত-ঠোট লাগে না। শরীরের ভাঁজে ভাঁজে পুরুষের ক্লেদাক্ত স্পর্শ লাগে। পর্যায়ক্রমে অনেকের ক্ষুধা মেটাতে গিয়ে বারাঙ্গনারা ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তার পরও অবসন্ন দেহ নিয়ে খদ্দেরের পাশে শুতে হয় তাদের। পুরুষবর্জ্যে বর্জ্যে বারাঙ্গনারা সয়লাব হয়ে যায়। শরীর থেকে এসব ধুয়েমুছে পরিচ্ছন্ন হতে হয়। তাই তারা ভােরে আর সাঁঝবেলায় কালিন্দীজলে অবগাহনে নামে। একবুক জলে দাড়িয়ে শরীরের আনাচে-কানাচে নরম কাপড় ঘষে। | রাতে-দিনে অতিথি আসে বারাঙ্গনাগৃহে। পুরুষের শরীরক্ষুধার কোনাে রাত-দিন নেই, সকাল-সন্ধ্যা নেই, বর্ষা-হেমন্ত নেই। শরীর চঞ্চল হলে তাদের নারীদেহ চাই-ই চাই; নরম, রসে ভরা নারীশরীর। শরীরের সঙ্গে সঙ্গে চাই রূপ-সৌষ্ঠবময়। চাই পুরুষহৃদয় নাচিয়ে দেওয়ার মতাে কটাক্ষ, কূলপ্লাবী সুগহিন অন্ধকার গহ্বর।…..

…..মােহনাও কূলপ্লাবী হয়, চণ্ডকের সান্নিধ্যে মােহনার দুকূল ভাসে। মােহনার সান্নিধ্যে চকের শরীরে ঝঙ্কার ওঠে। মােহনার চকিত নেত্রপাতে চণ্ডকের হৃদয়ের অতলতলের অন্ধকারে আলােকপাত হয়। রােদুরে ঝলসে ওঠা চকচকে ছুরির ফলার মতাে মােহনার শরীর চণ্ডকের উন্মাতাল দেহকে বিধতে থাকে, অবিরাম। মােহনার দেহ তীব্র জ্বালাজাগানিয়া, দূরভেদী ।…..

…..অতিথিদের চোখে-মুখে-দেহে একসময় দেহসুহাহাকার জেগে ওঠে। ওই ক্ষুধার মাহাত্ম্য বােঝে বারাঙ্গনারা। একটা সময়ে হাত ধরে টানে—চলাে। ভেতরে চলাে।

কোনাে কোনাে সময় ভেতবেথ থাকে। নতুন অতিথি অপেক্ষা করে আঙিনায়। ভেতর থেকে পাবারে ক্যাচকোচ বা দু-এক টুকরাে রতি-উন্মত্ত শব্দ কানে ভেসে আসেন অতিথির । নতুন অতিথির শরীর-মন চঞ্চল হয়ে ওঠে। ওই সময় দরজা হুড়কোতে খুট করে শব্দ হয়। রতিক্লান্ত অতিথি প্রশান্ত মনে বেরিয়ে আসে। একটু পরে আঁচল আর বক্ষ আবরণী ঠিক করতে করতে আসে বারাঙ্গনা। নতুন অতিথিকে বলে, কষ্ট পেয়েছ বুঝি? অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হলাে তােমাকে।’ বলতে বলতে হাত ছোঁয় অতিথির, চুলে আঙুল বােলায়। তারপর বলে, “চলাে, ভেতরে চলাে।’……

……রামায়ণ-মহাভারতের যুগেও গনিকাদের কদর ছিল। রামের অভিষেকে কুলগুরু বশিষ্ঠের নির্দেশে সজ্জিত বারাঙ্গনারা উপস্থিত ছিল। রাম বনবাসে যাবেন, নিরুপায় রাজা দশরথ পুত্রের বনবাসকালীন সময়কে সুখকর করার জন্য সারথি সুমন্ত্রকে বচনচতুরা বেশ্যাদের সঙ্গে নেওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন। চৌদ্দ বছর বনবাস শেষে রাম অযযাধ্যায় ফিরছেন, স্বর্গ থেকে অপ্সরারা রামের মনােরঞ্জনের জন্য তাঁর চারপাশে সমবেত হয়েছিল । কুরুদের সঙ্গে পাণ্ডবদের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হবে। পাণ্ডবরা প্রস্তুতি নিচ্ছে কৌরবদের বিরুদ্ধে। পাণ্ডবসেনাদের সঙ্গে যুদ্ধক্ষেত্রের উদ্দেশে রওনা দিল গণিকারা। সৈন্যদের দেহসুখেরও যে প্রয়ােজন আছে। দুর্যোধন দ্বৈতবন আক্রমণ করতে চলেছে; সঙ্গে যাচ্ছে বেশ্যা, স্তুতিপাঠক, মৃগয়াজীবী। শ্রীকৃষ্ণ আসছেন কৌরবদের কাছে হস্তিনাপুরে, শান্তি স্থাপনের উদ্দেশ্যে। রাজা ধৃতরাষ্ট্র তার অভ্যর্থনার জন্য পুত্রদের সঙ্গে বারাঙ্গনাদেরও যেতে আদেশ দিলেন। গান্ধারী গর্ভবতী হয়েছেন। ধৃতরাষ্ট্রের দেহক্ষুধা মেটাতে অক্ষম গান্ধারী। ধৃতরাষ্ট্র শূন্যশয্যায় কাতর এবং অস্থির। কোনাে অসুবিধা নেই। বাররামারা এসে গেল ধৃতরাষ্ট্রের প্রয়ােজন মেটাতে। বিরাট রাজা যুদ্ধজয়ের পর দেশে ফিরলেন, উৎসবের আয়ােজন করলেন তিনি। ওই উৎসবের প্রধান আকর্ষণ বারীরা। রামায়ণে উল্লেখ আছে, সমাজের বিলাসসামগ্রীর অন্যতম এই রূপজীবিনীরা । রাজসভায় বা ধনীগৃহে সমৃদ্ধির প্রতিমূর্তি হিসেবে বারাঙ্গনাদের গণ্য করা হতাে। মঙ্গল কামনায় বা নিজেদের শক্তিমত্তার পরিচয় জাহির করার জন্য প্রাচীনকালে রাজরাজড়া যজ্ঞ করতেন। যজ্ঞের পুরােহিতকে দক্ষিণা দিতে হতাে। শয়ে শয়ে হাজারে হাজারে নারীকে দক্ষিণা হিসেবে পুরােহিতদের প্রদান করা হতাে। বাছা বাছা রূপসীদের সঙ্গে নিত পুরােহিতরা। অন্যরা ক্রীতদাসী হিসেবে বা বেশ্যা হিসেবে লােকালয়ে, হাটে-বাজারে ছড়িয়ে পড়ত । তা ছাড়া যুদ্ধে বন্দী করে আনা হতাে মেয়েদের। রাজা-রাজন্যরা নিজেদের পছন্দমতাে কিছু মেয়েকে বেছে নিতেন নিজেদের দেহসুখের জন্য। বাকিদের ঠেলে দেওয়া হতাে বারাঙ্গনাপল্লিতে। এভাবে নগরে নগরে বারবনিতাপল্লি গড়ে উঠেছে যুগ থেকে যুগান্তরে। গঙ্গা-করতােয়াসংলগ্ন ভূমিতে বারাঙ্গনারা বহু বহু প্রাচীনকাল থেকে কামলােভীদের তৃপ্তি বই আসছে। কালিন্দীলগ্ন ডমরনগরের এই বারাঙ্গনাপল্লিটিও তা-ই বহুকাল আগে থেকে স্বদেশি এবং বিদেশি অতিথিদের আদর-আপ্পায়ন করে আসছে।……

………ডমরনগরের এই বারাঙ্গনাপল্লিজীয়রা জানে, তারা ভােগের সামগ্রী। ভােগের পর আবার ছুড়ে ফেরিও। মােহনা, কুন্তি, জানকি, অলকা, সুবর্ণা, দময়ন্তী, উর্বশী, অঙ্গনা,কোরা জানে, সমাজে তারা আদরণীয়। তবে এই বাস্তব সত্যকেও এরা ভুলে যায় না যে সমাজ-মানুষদের কাছে তাদের কদর তত দিন পর্যন্ত, যত দিন তাদের গতরে যৌবন আছে, তাদের চোখে ছলাকলার কটাক্ষ আছে, মুখে অতিথিদের মন বিদ্ধ করার বাক্যবাণ আছে। এই পল্লির বারাঙ্গনারা এ কথাটি ভালাে করে জানে যে তাদের ব্যবসার প্রধানতম মূলধন তাদের দেহ। তাই তারা স্তনের পরিচর্যা করে, অধরের পরিচর্যা করে। দর্পণের সামনে দাঁড়িয়ে কটাক্ষের ধার পরখ করে। শরীরকে চাঙা রাখার জন্য, দেহচর্মকে চেনাই করে গড়ে তােলার জন্য তারা মহুল মদ গরম করে শরীরের ভাঁজে ভাঁজে ডলে। উষ্ণ মদে গতরের ব্যথাও সারে। পুরুষেরা তাে বারাঙ্গনাদের কাছে এসে পশুতে রূপান্তরিত হয়ে যায়! তাদের হিতাহিত জ্ঞান লােপ পায়, স্থান-কাল-পাত্র ভুলে যায় তারা। চরম সুখের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তারা উন্মাদ হয়ে থাকে। পশুরও হিতাহিত জ্ঞান আছে। মিলিত হওয়ার আগে পুরুষপশুরা নারীপশুর আশপাশে ঘুরঘুর করে, তাদের মনােযােগ আকর্ষণ করার আপ্রাণ চেষ্টা করে, বিপুল আদরে-সােহাগে ভরিয়ে দিয়ে নারীপশুটিকে মিলনে সম্মত করায়। মিলনের সময়েও পশ্বাচার করার উপায় নেই। ওই সময় নারীপশুটি বেঁকে বসলে মিলনের চরম সুখ থেকে বঞ্চিত হতে হয় পুরুষপশুটিকে। এই সুখে নারীপটির পূর্ণ সম্মতি প্রয়ােজন। কিন্তু এই বারাঙ্গনাপল্লিতে নারীসম্মতির প্রয়ােজন নেই, নারীদের শারীরিক সুস্থতাও উপেক্ষিত হয় পুরুষদের কাছে। মিলনের আগে পুরুষেরা নারীশরীর বিমর্দনে মগ্ন থাকে। সেই বিমর্দন নারীটিকে সুখ দিচ্ছে, না ব্যথা দিচ্ছে—সেদিকে লক্ষ করার প্রয়ােজন অনুভব করে না অধিকাংশ অতিথি। তাই দিন শেষে বা রাত্রি অবসানে নারীরা তাদের শরীরে অশেষ ব্যথা অনুভব করতে থাকে। এ সময় বারাঙ্গনারা উষ্ণ মহুল মদের আশ্রয় নেয়।…..

…..ডমরনগরের বারাঙ্গনাপল্লির কারো যেদিন এই পেশায় হাতেখড়ি হয়, সেদিন ভােরসকালে নাপিতানি এসে নখ দিয়ে যায় । হাত-পায়ের দশ আঙুলের নখে খুর ছোঁয়াতে ছোঁয়াতে তিনি বলে, পুরুষরা যাতে তাের এই পায়ের নখে বাঁধা থাকে রামা, বেতের নখের আঁচড়ে আঁচড়ে রক্তাক্ত হয়েও যেন পুরুষরা প্রফুল্ল বােধ করে, এই কামনা মাের।।
তারপর আসে চুল বিন্যাসকারিণী। প্রৌঢ়া বারাঙ্গনা। মেয়েটির মাথায় ঘষে ঘষে সুবাসিত তেল মাখে সে। তারপর শরীর উদোম করে। উষ্ণ মহুল মদ শরীরের নানা আড়ে যত্নের সঙ্গে ডলতে থাকে। তেল এবং মদ মাখানাে শেষ ইলে মেয়েটিকে কালিন্দীতে নিয়ে যাওয়া হয়। গলাজলে দাঁড় করিয়ে গাত্রমার্জন করে অন্য বারাঙ্গনা। তারপর ভালাে করে স্নান করানাে হয় সেই অক্ষতযােনি মেয়েটিকে। ঘরে এনে পরিচ্ছন্ন বিছানার মাঝখানে বসানাে হয় তাকে। নতুন কাপড় পরানাে হয়। চোখে লাগানাে হয় গাঢ় কাজল। পায়ে লাগানাে হয় আলতা। তারপর উলুধ্বনি দিতে দিতে তার মাথায় ধানদূর্বা দেওয়া হয়। এই দিন কিশােরী বাররামাটির কদর অনেক বেশি এই পল্লিতে। ওর হাত ধরেই যে লক্ষ্মী ঢুকবে এই বারাঙ্গনাপল্লিতে।……

……চণ্ডক জানকির কাছ থেকে এই মােহনার কুমারিত্ব কিনে নিয়েছিল। উচ্চমূল্যে । প্রথম রাতে আধা পণ কড়ি দিয়ে মােহনার ঘরে ঢুকেছিল চণ্ডক। সাঁঝবেলার বিয়ের গাদার মালা তখনাে মােহনার গলায় ঝুলছিল। তাজা গাদা। একধরনের ঘােরলাগা গন্ধ ছড়াচ্ছিল গাদাগুলাে। অগুরু চন্দনের সুবাসের সঙ্গে গাঁদার গন্ধ মিশে বাতাসকে করে তুলেছিল মাদকতাময় । সেই বাতাস চকের রক্তকণিকায় ঝড় তুলেছিল, কামের ঝড়। রাতের অতিথি চণ্ডক কুমারী ফুলের মালা ছিড়তে পছন্দ করে। চক জানে, এ মালা নিছক মালা নয়, মােহনার অক্ষযযানির প্রমাণও। অক্ষতযােনিতে যুবা, প্রৌঢ়, বৃদ্ধ-কার না আগ্রহ! মদিরারক্তিম চোখে চক মােহনার ঘরে ঢুকেছিল সে রাতে। মােহনাকে বুকের ঠিক মধ্যিখানে টেনে নিয়েছিল। মােহনার গলার মালায় হাত বােলাতে বােলাতে বলেছিল, এই মালা আমার, এই মােহনা আমার । এর ঘরে আর কাউকে ঢুকতে দিয়াে না তােমরা। তারপর চিৎকার করে মত্ত কণ্ঠে বলেছিল চণ্ডক, শুনছ তুমি জানকি, এই মােহনা আজ থেকে শুধু আমার হয়ে থাকবে। কেউ এর দিকে নজর তুলবে না। কেউ যদি এর দিকে হাত বাড়ায়, তাহলে তার মৃতদেহ ভাসবে ওই কালিন্দীজলে। সেই রাত থেকে মােহনার অধিকার রইল শুধু চণ্ডকের হাতে।

আঁধার-সকালে চণ্ডক চলে গেল। বিরাট পালঙ্কের মাঝখানে পড়ে থাকল দোমড়ানাে-মমাচড়ানাে গাঁদার মালাটি। মালাবিচ্ছিন্ন অনেক গাদা বিছানার এপাশ থেকে ওপাশ পর্যন্ত ছড়ানাে। আর সেই ছড়ানাে দোমড়ানাে ফুলের মাঝখানে পড়ে থাকল মােহনা—মর্দিত, দলিত, শােষিত মােহনা। এ মােহনা এখন অক্ষতযােনির মােহনা নয়। দুপাড় ভাঙা নদী। | সকালে, আলাে ফুটি ফুটি সময়ে বড় যত্ন কুধেমাহনাকে কালিন্দীজলে স্নান করাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল । বড় ব্যাঙ্ঠতি স্তনে আর গুপ্তস্থানে। মােহনার শরীরের কোনাে আড় অস্পর্ধিতাকেনি। চণ্ডক মােহনার কচি শরীরের ভাঁজে ভাঁজে নিজের পৌরুষতের প্রমাণ রেখেছে। বারবার দলিতমথিত করেছে মােহনার সর্বাঞ্জলাজলে দাঁড়িয়ে মােহনা কঁকাচ্ছিল। কনকনে ব্যথা যে সর্বশরীরে।…..

…..বিশাখা আবার বলল, “মােরা বেঁচে গেলাম গাে। পুরুষজাতির মাঝে এই গুতােগুতির ভাব না থাকলে মােরাদের কী গতি হতাে গাে?…..বাচনি বলল, ‘যৌনতাই হচ্ছে বাস্তবতা। যৌনতা ছাড়া পৃথিবী অসার। যৌনতা আছে বলে পৃথিবীর গাছপালা, নদী-সমুদ্র-পাখপাখালি—এসবকে বড় ভালাে লাগে। নারী ও পুরুষ-উভয়ের মধ্যে কাম আছে। আমার বিবেচনায় উভয়ের মধ্যে এটি সমান প্রাবল্যে আছে। নারীরা রেখেটেকে রাখে, পুরুষেরা কামের জ্বরে উন্মাতাল হয়। ওদের কামমত্ততাকে সামাল দেওয়ার জন্য এই বারাঙ্গনাপল্পির সূচনা।…..

….‘নৌকা মাঝনদীতে যেতে না যেতে পরাশরের গম্ভীর নির্মোহ চোখ আলুলায়িত হয়ে উঠল। স্থান বদল করলেন মুনি, সত্যবতীর কাছ ঘেঁষে বসলেন। ধীবরকন্যা সত্যবতী বুদ্ধিমতী। তিনি বুঝলেন, কিছু একটা হতে যাচ্ছে। সতর্ক হলেন তিনি। অকস্মাৎ পরাশর জড়িয়ে ধরলেন সত্যবতীকে। মৎস্যরূপিণী অদ্রিকার গর্ভে জন্ম বলে সত্যবতীর শরীরে আজন্ম মাছের বিদঘুটে গন্ধ। কামান্ধ পরাশরের কাছে সত্যবতীর শরীরের দুর্গন্ধ সুগন্ধ বলে মনে হচ্ছে। সত্যবতী ওই হাড্ডিসার মুনিকে শরীর দিতে অস্বীকার করলেন।’ বলল বাচনি।

জানকি বলল, “ঠিকই তাে করেছে। শরীরে কোনাে রূপ নেই, যৌবন নেই; চেয়ে বসল কুমারী মেয়ের শরীর! ওয়াক থু।
বাচনি বলল, ‘শরীরে রূপ-যৌবন না থাকলে কী হবে, রতিক্রীড়ার বাসনা তাে আছে। কী আকুতিমিনতি সত্যবতীর : “আমি কুমারী, আমার বিয়ে
হয়নি। আমার কৌমার্য হরণ করাে না, প্রভু। কিসের প্রভু!” মুনির এককথা : “শরীর দিতে হবে, না হলে ব্রাহ্মণের বাসনা পূরণ না করার মহাপাপে পতিত হবে তুমি, রৌরব নরকে যাবে তুমি। ও হ্যা, কৌমার্যের কথা বলছিলে তুমি? আমি তােমাকে বর দিচ্ছি—তােমার শরীর থেকে মাছের গন্ধ চিরতরে চলে যাবে। বিয়ে হবে তােমার সসাগরা রাজ্যের রাজার সঙ্গে।”
মােহনা বলল, “তাে, রাজি হয়ে গেলেন সত্যবতী?’
রাজি কী করে হন? পথ ফুরাবার জন্য জোরে জোরে বৈঠা বাইতে লাগলেন সত্যবতী। পরাশর এ সময় জাপটে ধরলেন সত্যবতীকে। অবলীলায় ভােগ করলেন সত্যবতীকে। অনেকক্ষণ চুপ করে থাকে বাচনি।…..

…..জানকির কথায় কর্ণপাত না করে বাচনি মােহনাকে লক্ষ করে বলল, তােমার চোখ সুন্দর—টানা টানা চোখের কোনরক্তাভ, মণি কৃষ্ণবর্ণ । তােমার জঘন স্থুল এবং বিস্তৃত, উরু দুটি হাকিড়ের মতাে, তােমার গােল সমুন্নত স্তন দুটি তালের মতাে সুগঠিত তোমার কণ্ঠের হার, অঙ্গের গন্ধ, পরিধেয় বস্ত্র—সবই তােমার যােগপুজোধ, বৈশালি, চম্পকনগরের তাবড় তাবড় বারাঙ্গনাপল্লিতে তােমারকক্ষ বারাঙ্গনা পাওয়া ভার। চণ্ডকের পছন্দের প্রশংসা করতে হয়নি তােমাকে ভালােবেসে তােমার রূপের যােগ্য মর্যাদা দিয়েছেন।…..

…..পরদিন গােধূলিতে একজন প্রহরী এসে বলে গেল, আজ রাতে যুবরাজ চণ্ডক আসবেন, আসবেন মােহনার ঘরে। প্রহরীর সঙ্গে মােহনার সাক্ষাৎ হয়নি। সে ছিল গৃহাভ্যন্তরে—সাজ-দর্পণের সামনে। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে নিজেকে দেখছিল মােহনা। গত দিন বাচনি মাসি তার দেহসৌষ্ঠবের প্রশংসা করে গেছে। অনেক কথা বলেছে মাসি। সব কথার মধ্য থেকে এ কথাটি বারবার মনে পড়ছে—তােমার গােল সমুন্নত স্তন দুটি তালের মতাে সুগঠিত। দর্পণে নিজেকে দেখতে দেখতে বারবার চোখ যাচ্ছিল স্তনযুগলের ওপর। কপাট বন্ধ এখন। বসন সরিয়ে স্তন দুটিকে মুক্তি দিল সঙ্কল। সত্যিই তাে, তার স্তনযুগল সুগঠিত, লােভনীয় এবং উন্নত। এ আনত হয়নি । অপলক তাকিয়ে থাকল মােহনা বোঁটাসমৃদ্ধ পয়াের্ধক্টেদিকে। মন গভীর পুলকে নেচে উঠল। শরীরজুড়ে মৃদু কম্পন। নিজের সুর দিকে এর আগে কোনাে দিন এ রকম করে তাকায়নি কেন? বড় সােস হতে লাগল তার। সেই কবে মালা ছেড়ার প্রথম রাতে চণ্ডক কে কলি নিয়ে খেলেছিল। তারপর কত দিন চলে গেছে। চণ্ডক এসেছেলরবার, অনেকবার। প্রথম দিনের বেদনা পরে সুখে রূপান্তরিত হয়েছে চণ্ডকের স্পর্শে কুঁড়ি প্রস্ফুটিত পুষ্পে পরিণত হয়েছে। নিজের পয়ােধর দেখতে দেখতে মােহনার মন হঠাৎ বেদনায় ভরে উঠল । আঁচল দিয়ে বুক ঢেকে ফেলল সে। কী হবে এসব দেখে আর ডেবে? যার জন্য এই শরীর, সে তাে আসে না। এই কুচযুগল, এই রসময় দেহ—সবই অসার। ভাবতে ভাবতে মােহনার অকস্মাৎ চোখ পড়ল দেয়ালে ঝােলানাে লেখাটার ওপর।…..

……এক ঝটকায় মােহনাকে বুকে টেনে নিয়ে গাঢ় কণ্ঠে চণ্ডক আবার বলল, তাই আসতে একটু দেরি হলাে গাে।
ক্লান্ত অথচ পুলকিত দেহে দুজনে পাশাপাশি চিত হয়ে শুয়ে আছে। চকের ডান হাতটি কিছুক্ষণ আগে মর্দিত-মথিত মােহনার স্তন ছুঁয়ে আছে। দুজনে চুপচাপ।….

….রতিক্লান্ত চণ্ডক বিশাল শয্যায় শুয়ে আছে। বিবস্ত্র। ধীবরকন্যা মােহনা আজ ভীষণ তৃপ্তি দিয়েছে তাকে। মােহনার অতলে চণ্ডক আগেও ডুব দিয়েছে বহুবার, কিন্তু আজকের সুখ স্বতন্ত্র। পাশে মােহনাও অনাবৃত। সুডৌল স্তন নিয়ে চিত হয়ে শুয়ে আছে সে। মুগ্ধ চোখে তার শরীরের দিকে তাকিয়ে আছে চণ্ডক। ভাবছে—মােহনা, তুমি আমার । শুধুই আমার। আমি ছাড়া আর কারও নও তুমি।…..

Leave a Reply