ভাষান্তরঃ শেখর সেনগুপ্ত
………..আমার যে শুধু ওদের ভালাে লাগে, তাই নয়, আমি ওদের যথেষ্ট সন্মানও দিয়ে থাকি। আলাে-ছায়ায় ঘুর ঘুর তাদের সঙ্গিনী ও অর্ধাঙ্গিনীরাও এক একটি ডানাকাটা পরী, যাদের ক্ষীণ কটি, ভারী নিতম্ব ও পৃথুল স্তন কখনাে বয়স বাড়তে দেয় না, যদিও চোথে অসংযত জীবন-যাপনের ছাপ, উচিত ছিল যাদের জীবনের অর্ধেকটা কোন চরিত্র সংশােধনী বিদ্যালয়ে কাটিয়ে দেওয়া।•••
মারসিঅনেস ওবারদি এইসব শ্ৰীমতীদেরই একজন। ঝিরি ঝিরি বৃষ্টির মধ্যে বর্ষাতি গায়ে এবং স্নাউচ টুপি মাথায় চাপিয়ে যখন সে তার বাগানে পায়চারি করে, দূর থেকে দেখলে তাকে হঠাৎ কোন প্রাগৈতিহাসিক গ্রীক-নায়িকা বলে ভ্রম হবে। বয়স পড়তির দিকে, যৌবনের ধরেছে ভাটার টান, তবু যা আছে যে কোন তরুণের মাথা চিবিয়ে খাবার পক্ষে যথেষ্ট। মক্ষীরাণীর মতন এক একবারে এক একটি পুরুষকে একেবারে নিঙড়ে চুষে খাবে।…..
…….গৃহকর্ত্রী খবর পেয়ে মুখে ভেলানাে হাসি ফুটিয়ে এগিয়ে এলাে এদের দু’জনের দিকে। তার ঐ হাসিকে যে কেউ নির্মল হৃদয়বৃত্তির পরিচয় বলে ধলে ধরে নিতে পারে। চমকে দেবার মতন রূপ বটে একখানা। ফ্রান্সের ইতিহাসে যে সমস্ত অনন্ত যৌবনাদের ইতিবৃত্ত আমরা পাই, এ যেন তাদেরই শেষ সংস্করণ। রাশি রাশি মেঘবরণ কুণ্ডল, যেখানে মুখ গুজে যে কোন সংসারত্যাগী পুরুষ সমস্ত যন্ত্রণা ভুলে যাবে। তার স্তন বিশাল হলেও সুদ- তপ্ত মানুষের দীর্ঘ কালাতিপাতের আধার। চর্বিহীন কোমরের পরই নিতম্ব যেন প্রতিমুহূর্তে হিল্লোলিত,-এমন নিতম্ব যার, কেয়ামতের দিন অব্দি সে কখনাে মিলনে ক্লান্তি অনুভব করবে না। শিল্পীর তুলিতে আঁকা যেন দুটি চোখ-সেখানে কারুর প্রতি উপহাস নেই, সকলকেই খুশি করবার প্রযত্ন প্রয়াস। বাশির মতন নাক—ক্রিয়াচার লগ্নে এর স্ফীতি হয়তাে আরাে সুন্দর । কণ্ঠস্বরে মনােবৃত্তিরই লীলা খেলা, বুঝি মধু নামছে চুইয়ে চুইয়ে। এমন রূপ যার, বয়সও তাকে সহজে গ্রাস করতে পারে না। আপন যৌবন সৌষ্ঠবকে সে নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে, নিজের পরিস্ফীত দৃঢ়তায় আরাে অনেকগুলি বৎসর হয়তো সে এমন মােহাবিষ্ট করে রাখবে বিভিন্ন তরুণ আগন্তুকদের।…….
……সারভিনি তার বন্ধুর হাত ধরে মৃদু ঝাঁকুনি দেয়, “তুমি এখানে নবাগত। দেখতেই পাচ্ছো, চারিদিকে মালে মালময়—কোনটা বাসি, কোনটা একেবারে তাজা টাটকা। তবে হ্যা সব মেয়েরই এক দর। উনিশবিশ নেই। বাঁ দিকে বসেছে জুয়ার আড়া। পয়সার হরির লুট!…..
……..এ যেন নিছক সামাজিক নাচের আসর নয়। নৃত্যের নাম করে হয়েছে বন্য রণভূমি। বহু নর-নারী উদ্দাম মানসিকতায় সামিল হয়েছে এর। রক্তের ডাক যখন তুঙ্গে ওঠে তখন বুঝি এরা অপরকে খাবলেখুবলে শেষ করে দিতে চায়। বিচিত্র অঙ্গভঙ্গি, প্রতিটি ঘনিষ্ঠ মুহূর্তে ঐ নাচ জন্ম দেয় কামনাকে-রক্তে আগুন ধরায়, দুটি দেহ ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠতর•••দারুণ শক্তিতে সারভিনি জোয়েতকে জাপটে ধরে আছে নিজের শরীরের সঙ্গে আহ,। কী নরম বুকের অস্পষ্ট স্পর্শ, যদি নিতম্বের কাছাকাছি হাতটা নিয়ে যাওয়া যেতো। কিন্তু জোয়েত হুশিয়ার আছে এবং ঠিক সেই কারণেই তার পদযুগল কখনাে ছন্দচ্যুত হচ্ছে না। এ নাচ যেন চলবে অনন্ত কাল ধরে, ওদের ক্লান্তি নেই, শ্রান্তি নেই। অন্য সকলে নাচ থামিয়ে এক সময় নিথর, সবিস্ময়ে দেখছে সারভিনি-জোয়েত যুগলনৃত্য।……..
……..জোয়েত থামলাে। আজ তার রূপে আরাে মাদোকতা। শাদা উলের পােশাক, হরেক অলঙ্কারে দেহ মােড়া। বক্ষআবরনীর বৈশিষ্ট্য স্তনযুগলের দৃঢ়তাকে আরাে উর্ধমুখী করেছে, ঘাড়-গলার ত্বক চিক চিক করছে। পােশাকের চেয়েও শুভ্র তার গাত্রবর্ণ, স্বর্ণাভ কেশরাশি তরঙ্গায়িত।……..
………মারসিঅনেসের আনন্দ আর ধরে না। স্বচ্ছ কালো পােশাকের অন্তরাল থেকে পরিস্ফুট তার শরীরের প্রতিটি খাঁজ লােভনীয়। ভরাট স্তনের ওপর দৃঢ়বদ্ধ কাঁচুলিতে রক্তাভ আভাস, এলায়িত কৃষ্ণকুন্তলে একটি রক্তগােলাপ। তার যত আগ্রহ সেভেলকে নিয়ে ! আর সেভেলও পুলকিত এই চিরায়ত যৌবন মূল্যবান নারীর সঙ্গ পেয়ে । সেভেল তাকে একটি নেকলেস উপহার দিতে সে তার হাত দুটোকে প্রায় বুকের ওপরই চেপে ধরলো। এবং তখন থেকেই সেভেলের রক্তে অসংখ্য, অগুণিত আগুনের ফুলকি চক্রাকারে ঘুরতে থাকে। চিন্তিত ব্যক্তির ভনিতায় গালে হাত বােলাতে বােলাতে নিজেকে সংযত রাখবার চেষ্টা করছে সেভেল। একথা সত্যি, সে তার বিশাল শরীর নিয়ে অনেককাল উপবাসী রয়েছে। তাছাড়া, নারী-সঙ্গের বিস্তৃত অভিজ্ঞতাও তার নেই। একটা অতিকায় আগ্নেয়গিরি বহন করে চলেছে, জীবন্ত আগ্নেয়গিরি -যার জ্বালামুখ থেকে যেকোন মুহূর্তে উত্তপ্ত লাভা নির্গত হতে পারে।….
…….সেই বিশেষ জায়গায় গিয়ে তারা দেখলো, ইতিমধ্যেই সেখানে বহু প্রেমিক-প্রেমিকার সমাবেশ ঘটেছে। সব জোড়ায় জোড়ায় জড়াজড়ি করে বসে আছে, কেউ কেউ গাছের আড়ালে আলিঙ্গনাবদ্ধ অবস্থায় ধীরে ধীরে শুয়ে পড়ছে, পরস্পর পরস্পরের ঠোটে ডুব দিয়েছে, পারিপার্শ্বিকতার কথা ভুলে বিলকুল দেহের সঙ্গে লেপ্টে রেখেছে। নদীতে একাধিক পালতােলা সৌখীন নৌকা, যদিও মাঝি মাল্লার গানে বেদনাহত উপলব্ধি। যৌবন ডগমগ যুবক-যুবতীর হাঁটছে পাশাপাশি। মন উজাড় করে প্রেমালাপ চলছে তাদের। তারপর কাম যদি রাক্ষসীয় হিংস্রতা প্রাপ্ত হয়, গােপন কক্ষ ভাড়া নিতে পারবে।…………
…….অভিজাতদের একজন, যারা এখনো কাঙালী মেরে কাছারি গরম করে থাকেন। ওঁর পিছন পিছনে এক দঙ্গল মেয়েমানুষ পাল্লা দিয়ে পাছা দোলাচ্ছে।
ইতি উতি সুরাপানের আসর, পুরুষ ও নারী সমানে মদ্য পান করছে, হৈ-হুল্লোড়ে মাটি ও আকাশ কম্পমান ; কে একজন ওরই মধ্যে বেহালা বাজাচ্ছে, আর একজন ক্যানাস্তার পিটিয়ে সৃষ্টি করছে বিকট আওয়াজ। সুন্দরীরা আকণ্ঠ নেশা করে দিশেহারা, বুকের বাঁধন আলগা করে পুরুষদের দেখায় নিজেদের পুরুষ্ট স্তন, নিতম্ব দুলিয়ে দুলিয়ে পাছার বিশালতায় তাক লাগিয়ে দেয়। মাথায় জোকারের টুপি, পরণে সামান্য নেংটি -অর্ধ উলঙ্গ এক যুবক একরাশ ঘূর্ণায়মান যুবতীর সঙ্গে মহড়া দিচ্ছে। তাদের হাে-হা খিলখিল হাসিতে কানে তালা লেগে যাবার যােগাড়। আর কি সব অশ্লীল খিস্তি। সাঁতারের পােশাক পরে নর-নারীর উদ্দাম জলকেলি, জাপটাজাপটি এবং খিস্তি খেউড় !•••…
……..একা স্বর্ণাভ জোয়েতই যা দেখাচ্ছে, ফুর্তিবাজরা বুদ হয়ে যাবে। সত্যি সত্যি জলকন্যা হয়ে গেল, উপুড় হয়ে চিৎ হয়ে হিংসুটে মেয়েদের মুখ বুড়ীর মতন থমথমে করে দিলো। যখন সে দু’হাতে জলে কেটে তরতরিয়ে এগিয়ে যায়, তার অনাবৃত পিঠে সূর্যের আলাে চিক চিক করে। আবার যখন সে চিৎ সাঁতারে ভাসমান, তার পৃথুল ভেজা বুকে নীল কেলেঙ্কারি। কখনো বা সে অতিকায় মাছ—ডুব দিয়ে তলিয়ে গেল, আর ওঠেনা, ওঠেনা। এই দামাল মেয়ের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে ক্রমশই বেদম সারভিনি, সে যেন একটা মধ্যাহের পাপ গল্পের এক অসহায় সাক্ষী-নিজের অক্ষমতায় রাগ হচ্ছে তার। না, জোয়েতের দোষ নয়, আমিই বয়সের কামড়ে ক্রমশঃ ক্ষয়ে যাচ্ছি। | জলের বুকে জলপদ্মের মতন দেহ ভাসিয়ে জোয়েত তাকিয়ে আছে ঝলসানো নীল আকাশের দিকে। সারভিনি চোখ সরিয়ে নিতে পারে না, আবার তার দৃষ্টি লুব্ধ—সিক্ত চিকণ তনু, জলের কৃপায় ওর দেহের মূল্যবান রেখাগুলি অনেক স্পষ্ট। কেবল এই রূপ দিয়েই জোয়েত একদিন দুনিয়া জয় করতে পারবে-বহু কৃতিমানুষ নিঃশব্দে নতজানু হয়ে তার অনুগ্রহ চাইবে।……..
……..আর তার মা মারসিঅনেস তখন অন্যজগতে। ফুলের কেয়ারির আড়ালে সেভেলকে নিয়ে ক্রমশই তার কামনা-বাসনা বিস্তারিত। মধুর আলাপন দিয়ে শুরু, তারপর হাতে হাত রেখে তারা বসে পড়ে। সেভেল ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে, হাতে চাপ দিতে দিতে একসময় মারসিঅনেসের হাঁটুর ওপর ছােট্ট চিমটি কাটে। মারসিঅনেস চাপা স্বরে হেসে ওঠে, “ব্যারণ, তুমি বড় দুষ্টু। আমার লাগে না বুঝি ?”
“আমি তাে তােমায় আরাে অনেক বেশি কষ্ট দেবো বলে উন্মুখ হয়ে আছি” – সেভেল নিঃশ্বাসের স্বরে বললাে।
“দেখা যাবে”– কিশােরী অভিমান যেন মারসিঅনেসের গলায়। রঙিন চশমার আড়ালে সে দেখছে সেভেলের লােমশ বুক, ঝাঁকড়া চুল এবং উদ্ধত দুই ব্যস্ত বাহু। | সেভেলের রক্তে উত্তেজনা বাড়ে। দুই কান ঝা ঝা করছে। মারসিঅনেসের হাঁটুতে চক্র আঁকতে আঁকতে সে ওর জামুতে হাত রাখে, মসৃণ কাপড়ের নীচে রয়েছে যে নরম মাংসল নারী শরীর, তাকে সে অনুভবের আপ্রাণ চেষ্টা করে। এই সময় মারসিজনেস একটু উবু হয় এবং সেভেলের দৃষ্টি দিশেহারা হয় তার অটুট সৌন্দর্যের আধার দুটি স্তনকে দেখে। “তুমি-তুমি এখনাে কুমারী।” -সেভেল ফিস ফিসিয়ে ওঠে। “ও ব্যারণ।”
সেভেল আর স্থির থাকতে না পেরে ওর বুকের দিকে হাত বাড়ায় । কিন্তু ঈস্পিত লক্ষে তা আর পৌছাতে পারে না। কারণ, জোয়েতের দীর্ঘ ছায়া দু’জনের উপরই প্রলম্বিত।…..
……….সেভেল নিঃশব্দে তার হাল্কা চেয়ারটা তুলে এনে মারসিঅনেসের পাশে বসে। ধীরে ধীরে হাত বাড়ায়। মারসিজনেস তার হাত চেপে ধরে। কিছুক্ষণ হাতে হাত কচলাকচলির পর হৃষ্টপুষ্ট বুক, বুকের মােড় ও ঘূর্ণন একসময় বাঁক নেয় কোমরের দিকে, মারসিঅনেসের কোমরকে সবেগে জাপটে ধরবার সময় চেয়ার থেকে প্রায় টলে পড়ে যাচ্ছিলাে সেভেল-মারসিঅনেসই যেন সেভেলকে নিরাপদ রাখবার জন্য ওর ঘাড়ে বাহুলতা বিছিয়ে দেয়, তারপর সে যা করলাে, সেভেল ও তার জন্য ঠিক এখনই প্রস্তুত ছিল না। বহু রঙ্গভূমিতে চরে বেড়াবার সুদীর্ঘ অভিজ্ঞতা নিয়ে আস্তে আস্তে মারসিঅনেস তার দেহটাকে শিথিল করে নেমে পড়লো বা, ঝুলে নেমে এলো মেঝেতে এবং তারপর বিপন্ন সেভেলের ক্ষীণ প্রতিরােধক উপেক্ষা করে ওর দুই হাঁটুর মধ্যে মুখ গুজে দিল, শুরু হলাে তার সরু সরু আঙ্গুলগুলির সেই সব শিকারী কৌশল। সেভেল বুঝতে পারে, তার শরীরের সমস্ত রক্ত, সমস্ত শৌর্য গ্রহণ করে প্রবলতর ভূমিকায় জমজমাট হয়ে উঠছে মারসিঅনেসের অতি সােহাগের বস্তুটি। ফিসফিসিয়ে বললো, “বিদ্যুতের আলােয় আমি একে দেখবাে সােনা, আমার সােনা!”…..
……….ঐ তাে মার সৌখিন শয়নকক্ষ। খুব যত্ন নিয়ে সাজানাে। মারী আতোয়ানেৎও বােধহয় এমন বিলাস-শয্যা পছন্দ করতেন। খাটের বাজুতে ঝুলছে টাটকা শাদা ফুল, ছােট্ট টেবিলের উপর উড়ন্ত নগ্ন পরী, দেয়ালে ‘ভেনাসের জন্ম’••• গােটা বাড়িটার মধ্যে একমাত্র এই ঘরেই আলো জ্বলছে—দামী পাথর থেকে বিচ্ছুরিত নীলাভ আলো। সেই আলোয় জোয়েত দেখলে,স্বর্গীয় পরিবেশে দানবীয় কাণ্ডকারখানা। নরনারীর এমন যুদ্ধ সে কোন দিন কল্পনাও করতে পারে নি। সেভেলের নগ্ন শরীরটা আরাে বিশাল, ভয়ঙ্কর, উদ্ধত এবং অসহ। কিন্তু তার চেয়েও মারাত্মক তার বিবস্ত্র। মার শরীর নিয়ে আছাড়ি-পিছাড়ি, অসম্ভব অশ্লীল সমস্ত শব্দোচ্চারণ, তীক্ষ্ণ শীৎকার। সেভেলের শরীরটা প্রায়শই ঢেকে দিচ্ছে মারসিঅনেসের শরীরটাকে। কিন্তু এক সময় পাল্টা খেয়ে মারসিঅনেস সেভেলকে অধিকার করামাত্র জোয়েত নিজের অজ্ঞাতেই আর্তনাদ করে ওঠে : মা-গাে!…….