……..কৌতুকে হেসে খেলা দেখতে দেখতে যে-দিন ভয়ে ও ঘৃণায় শিউরে উঠেছিলাম, পালাতে চেয়েছিলাম সেইদিন। পালাতে গিয়ে দেখলাম, কার দুটি হাত আমাকে জড়িয়ে রেখেছে ধরে। ফিরে দেখলাম, ভালবাসা। উম্মুক্ত পীন পায়েধরে যার বাসনার উত্তাল-সমুদ্র ঢেউ আবর্তিত, ঠোটে যার পতঙ্গের ঝাপ খেয়ে পড়ার ঘুণী আকর্ষণের আগুন, চোখের আবেশে যার রক্ত-রংমহলের খােলা দরজায় এক বিচিত্র অন্ধকারের ইশারা। দেখলাম, রাণীর বাজারের মুক্তিহীন সর্বনাশী প্রেমের দুই বাহুর ভুজঙ্গে আমি বাঁধা।…..
…….সুন্দরী মেয়ে তুলসী। সুগৌরী নয়, তার চেয়েও বেশি, টোকা মারলে বুঝি রক্ত ফুটে বেরােয়, এমনি রং তুলসীর। পিঠে এলানাে সুদীর্ঘ কেশপাশ কালাে নয়, পিঙ্গল নয়, তার মাঝামাঝি। অযত্ন লাঞ্ছিত সেই চুলের নীচের দিকে কিছু জট পাকিয়েছে। রক্তরেখা ঠোট, নীল চোখ, টিকলো নাক। এই পুরনাে সেকেলে নীচু ছাদ বাড়িটার অন্ধকারে তুলসীর রূপের দীপ্তিতে যেন একটি সাপিনীর মত সর্বনাশ বয়ে বেড়ায়। সর্বনাশেরই মত তার নিঃসন্তান নিটুট শরীরের উদ্ধত ধার। কী এক অজানা অপরিচিত প্রলয়ের বাসনায় যেন তার অকূল যৌবন জ্বলছে দপ দপ করে।…….একমাত্র নাতি জগদীশের সঙ্গে জ্যোতিষশাস্ত্রী যখন সম্বন্ধ করতে চাইলেন তুলসীর, মেয়েকে দেখতে চেয়েছিলেন স্যায়তীর্থ। চোখে দেখতে পান না, তবু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন, শুনে শুনে মিলিয়ে নিয়েছিলেন সমস্ত সুলক্ষণ। আকুঞ্চিত কেশ, মণ্ডলাকার মুখ, দক্ষিণাবত’ নাভি, সুবর্ণোজ্জ্বল রং, রক্ত পদ্মের মত হাত যদি হয়, তবে সে নারীপ্রধানা পতিব্রতা হবে। অন্যথায় মুখে চন্দ্ৰপ্ৰভা, দৈহে সূর্যচ্ছটা, বিশাল চোখ, বিষফল-রক্তবর্ণ ঠোট, তুলসীর কি সেই চির-সুখবতীর রূপ আছে ? হাতে তার বহু রেখা কিংবা খুবই স্বল্প রেখা নেই তো? কিংবা হাতের রেখা কালো, গােল চোখ, রােমাবৃত স্তন, নাভিদেশ থেকে অচ্ছিন্নভাবে উদগত উর্ধদিকে বৃত্তাকারে ওঠা পিঙ্গল রােমাবলী পদভারে ধরিত্রী-কম্পিত নয় তত জ্যোতিষশাস্ত্রীর মেয়ের?……….