রক্তমাংস – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

›› উপন্যাসের অংশ বিশেষ  

……..-তােমার জীবনের কথা শুনতে শুনতে একটা দারুণ কৌতূহ হচ্ছে। সেইজন্য কথাটা বলেই ফেলি। তােমার বুক, যা নাকি অত্যাশ্চর্য, এক মিলিয়ানে একটা মেয়ের নাকি দেখা যায়, সেটা নিজের চোখে না দেখলে ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না। একবার দেখাবে ?

—দেখবেন ? ঝিল্লি উঠে চলে গেল পাশের ঘরে। তারপর হাতে নিয়ে এলে এক গাদা ম্যাগাজিন। সেগুলাে আমার সামনে রেখে বললো, দেখুন । আপনি নিশ্চয়ই আগেই আমার ছবি দেখেছেন কোথাও না কোথাও। না দেখে উপায় নেই। পত্রিকাগুলাে উলটে দেখতে লাগলেন লেখক। অনেক বিজ্ঞাপনেই আছে ঝিল্লির ছবি। ব্রা, প্যান্টি, পাউডার, সাবান। কয়েকটি পত্রিকার মলাটেও ওর ছবি, সেগুলি বিজ্ঞাপন নয়, আকর্ষণীয় নারী শরীর। মুখ দেখলে সত্যি চেনা যায় না।

পত্রিকাগুলাে সরিয়ে রেখে লেখক বললেন, হ্যা, ছবিগুলো বেশ ভালো নিশ্চয়ই। কিন্তু বুক সম্পর্কে বিশেষত্ব ঠিক বোঝা গেল না ।

ঝিল্লি বললাে, প্লে বয় ম্যাগাজিনটা দেখবেন সেগুলাে কিন্তু একদম ন্যুড।

না থাক। মানে, ছবিতে নয়, আমার রক্ত মাংসের বুক একবার চোখে দেখা যায় না!

-না দেখাই ভালো। কবে আপনি বলছেন যখন দেখাতে পারি। দূর থেকে ।

দূর থেকে কেন ? -কাছ থেকে দেখলে যদি আপনি ছুয়ে দেখতে চান। ছুয়ে দেখতে চাইলে সেটা খুব দোষের হবে । আমার এমনিতে তেমন লজ্জা থাকবার কথা নয়। অনেকের সামনেই বুকের জামা খুলতে হয়েছে। কিন্তু আপনি ছুতে চাইলে আমি খুবই মুস্কিলে পড়বো।

-শুধু আমি ছুতে চাইলে ?

হ্যা। কারণ, আপনি তাে রক্ত মাংসের মানুষ নন। আপনি একজন লেখক। আপনি আমার স্বপ্নের মানুষ। আপনার সঙ্গে তো এর আগেও কতদিন মনে মনে কথা বলেছি। এক হিসেবে আপনি আমার অলটার ইগাে। সেই জন্যই তো আপনার কাছে এত কথা বলতে পারছি। অন্য কারুর কাছে কি বলি? কোনােদিনই তাে বলিনি।

জানলার কাছে সরে গিয়ে দাড়িয়ে ঝিল্লি প্রথমে মাথার ওপরের উজ্জ্বল আলােটা জ্বেলে দিল, তারপর নিঃসঙ্কোচে আঁচল ফেলে, ব্লাউজ ও ব্রা খুলে ফেললাে।  লেখক একদৃষ্টে চেয়ে রইলেন। তার দু’চোখ ভরা বিস্ময়। এ রকম বাতাবী লেবুর মতন শক্ত, গোল স্তন তিনি কখনাে দেখেননি আগে। হরিশ চাওলা উপমাটা ঠিক দিয়েছিল। কুমাের মাটি দিয়ে লক্ষ্মীসরস্বতীর যে মূর্তি গড়ে, তাদের বুক এই রকম। কোনারকের সুরসুন্দরীর স্তন দুটিও অনেকটা এই জাতেরই। রক্ত-মাংসের কোনাে নারীর এরকম হয় !

তিনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, লেখকরা রক্ত-মাংসেরআনুষ হয় না ? কিন্তু আমার হতে ইচ্ছে করে খুব। 

না। আমার কাছে, আপনি তা হতে পারে না। আপনাকে  এখন যা দেখালুম, এতক্ষণ তার চেয়ে অনেককে বেশী দেখিয়েছি, অন্য কেউ যা দেখে না। আমার হৃদয় খুলে দেখিয়েছি আপনার কাছে।

—হরিশ চাওলা ঠিকই বলেছে আমার বুক অসাধারণ।

—এই বুক দিয়ে আমি আমার দাদার চিকিৎসা করেছি, এখন আমাদের সংসার চালাচ্ছি।…..

……..হঠাৎ চুপ করে গেল ঝিল্লি। দেয়ালে পিঠ দিয়ে সোজা দাড়িয়ে আছে, পাশে কাচের জানালা, সেখান থেকে দেখা যাচ্ছে শহরের আলােকমালা। এখনাে বুক আঁন টাকে নি ঝিল্লি, নগ্ন বুকের ওপর একটা হাত রাখা, চোখের দৃষ্টি অস্বাভাবিক উজ্জ্বল।

লেখকও তার চোখে চোখ রেখে নীরব রইলেন।

একটু পরে ঝিল্লি আস্তে আস্তে বললাে, আপনি আমার বুক ছুঁতে চেয়েছিলেন, কেন আমি রাজি হইনি জানেন? আপনি লেখক, আপনি ছুয়ে দেখলে ঠিকই বুঝতে পারতেন, আমার এই বুক রক্ত-মাংসের নয় । আমার বুক পাথরের তৈরি।……..

Leave a Reply