নাইটিঙ্গেল পাখীর গান – গিয়ােভানি বােকাসিও

›› অনুবাদ  ›› সম্পুর্ণ গল্প  ›› ১৮+  

বিশ্বের শ্রেষ্ঠ আদি-রসের গল্প

অনুবাদঃ অবনী সাহা
উৎসঃ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ আদি-রসের গল্প
সম্পাদনাঃ সুকান্ত সেনগুপ্ত

বেশীদিনের কথা নয়। রােমানা বলে এক জায়গায় মেসের লিজিও দ্য ভ্যালবােনা নামে এক অতি সম্মানীয় ও ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি বাস করতে। যখন তিনি বার্ধক্যের প্রান্তে এসে পৌঁছেচেন, ভাগ্যক্রমে তাঁর স্ত্রী ম্যাডেনা গীয়াকোমিনা তাঁকে একটি কন্যার উপহার দিলেন। বয়স বাড়তেই সেই মেয়েটি ওই অঞ্চলের সব মেয়েকে তার সৌন্দর্য ও লাবণ্যে ছাড়িয়ে গেলাে। বাপ মায়ের একমাত্র মেয়ে। তাঁরা তাকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালবাসেন। অতিরিক্ত সতর্কতার সঙ্গে তার উপর নজর রাখতেন। তাঁদের উচ্চাশা, কোন উচ্চ বংশজাত ছেলের সঙ্গে তার বিয়ে দেবেন।

এদিকে, মেসের লিজিওর গৃহে একটি সুদর্শন চটপটে যুবকের যাতায়াত ছিলাে। নাম রিসিয়াডো ডে ম্যানারডি দ্য ব্রিটিনােরাে। মেসের লিজিও তার সঙ্গে অনেকটা সময় গল্প গুজব করে কাটাতেন। তিনি এবং তাঁর স্ত্রীর তার উপর নজরদারির কথা মনেও ভাবতেন না। কারণ তাঁরা তাকে আপন ছেলের মতাে দেখতেন।

মেয়েটির উপর যখন নজর পড়লাে, রিসিয়াডে তার অপরুপ সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হলো। মেয়েটির আভিজাত্যপূর্ণ চালচলন, মধুর সরলতাপূর্ণ ব্যবহার, তার উপর তার বিয়ের বয়স হয়েছে দেখে, সে উদভ্রান্তের মতাে মেয়েটিকে ভালবেসে ফেললাে। তার এই মনােভাব লুকোতে অনেক কষ্ট পেতে হলাে। ছেলেটি যে তার প্রেমে পড়েছে, এটা কিন্তু মেয়েটি ঠিকি ধরতে পেরেছিলাে। রিসিয়াডোর ভাগ্য ভালাে, মেয়েটি এতে ক্ষুব্ধ না হয়ে বরং একই প্রকার আগ্রহ নিয়ে তাকে ভালবাসতে লাগলাে। যদিও মেয়েটির সঙ্গে ভালবাসার কথা বলার জন্য ছােকাটি হাপিত্যেশ করে থাকতো, কিন্তু মেয়েটির কাছে এসে কেমন কেন চুপসে যেতাে।

অবশেষে একদিন এক শুভ মুহুর্তে সে সাহস সঞ্চয় করে মেয়েটিকে বললাে, ক্যাটরিনা, তােমাকে ভালবাসার জন্য, আমাকে আগে মরতে দিও না।
মেয়েটি উত্তরে বললাে, ভগবান জানেন, তােমাকে ভালবাসার জন্য, তুমি আমাকে আগে মরতে দিও না।

রিসিয়ার্ডো মেয়েটির মুখে একই উত্তর শুনে পরম আহলাদিত হলাে। উৎসাহিত হয়ে, সে তাকে বললাে, তুমি যা চাও বল, আমি তাই-ই করবো। অবশ্য যাতে আমরা দুজনেই বাঁচি তুমি সে উপায় বের করবে বল।

একথার উত্তরে মেয়েটি বললাে, রিসিয়ার্ডো, তুমি তাে জানাে আমাকে কীভাবে চোখে চোখে রাখা হয়। আর এজন্যেই আমি ভাবতে পারিনে তুমি কীভাবে আমার কাছে আসবে। তবে তুমি যদি কোন বুদ্ধি বাৎলাও, আমার উপর কোন কলংক না নিয়ে, আমি তা করতে পারি। বল আমাকে কী করতে হবে, আমি তা করব।

রিসিয়ার্ডো অনেক রকম পরিকল্পনার কথা মনে মনে ভাবলাে। তারপর হঠাৎ বললাে, আমার মিষ্টি ক্যাটরিনা তােমার জন্য একটি মাত্র পথই আমি বাৎলাতে পারি। আর তা হচ্ছে, রাতে তুমি তােমার বাবার  বাগানের দিকে ঝুকে পড়া ঝুল বারান্দায় এসাে। অথবা তার চেয়ে ভালাে হয়, যদি তুমি ওখানে শােও। যদিও ঝুলবারান্দাটা খুব উচুতে, কিন্তু আমি যদি জানি তুমি ওখানে রাত কাটাচ্ছো, আমি নিদ্বিধায় তোমার কাছে পৌছতে চেষ্টা করবাে।

ক্যাটরিনা উত্তর করলাে, ঝুলবারান্দায় উঠতে যদি তুমি সাহস পাও, তাহলে আমি নিশ্চিত সেখানে শােবার ব্যবস্থা করবাে। রিসিয়াডো তাকে প্রতিশ্রুতি দিলাে, ঠিক আছে। তারপর তারা দ্রুত একটা চুমু খেয়ে, আলাদা আলাদা পথে নিস্কান্ত হলাে।

সেটা ছিলাে মে মাসের শেষ দিক। রিসিয়ার্ডোর সঙ্গে কথােপকথনেয় পরদিন সকালে, মেয়েটি তার মায়ের কাছে অভিযোগ করতে আরম্ভ করলো, আগের রাতে সে গরমের জন্য ঘুমােতে পারেনি। মা বললেন, তুমি এ কথা বলছে বাছা। কাল রাতে এক ফোঁটা গরম ছিলোনা তাে। মায়ের কথা শুনে কাটরিনা বললাে, মা, অমি বলি ‘আমার মতে’ কথাটা যোগ করতে তাহলে ঠিক হতো। তােমার মনে রাখা উচিত উঠতি বয়সের মেয়েরা বয়স্কা মহিলাদের চেয়ে বেশী গরম বােধ করে।

মা বললেন, তা ঠিক বলেছাে ৰাছা। কিন্তু আমাকে তুমি কী করতে বল ? “আমি তােমার জন্যে তাকে গরম বা ঠাণ্ডা করতে পারিনে। ঋতু অনুসারে, যখন যে রকম আবহাওয়া, তাই তােমাকে মেনে নিতে হবে। মনে হয় আজ রাতে ঠাণ্ডা পড়বে; তুমি ভালভাবেই ঘুমুতে পারবে।

ভগবান করুন, তােমার কথা যেন সত্য হয়। বললাে ক্যাটরিনা। কিন্তু গ্রীষ্মকাল এগিয়ে আসছে, এখন রাতে ঠাণ্ডা পড়ার কথা নয়।
তাহলে, তুমি আমাদের কী করতে বল? মা জানতে চাইলেন।

যদি তুমি আর বাবা মত কর, আমি বাবার ঘরের সামনের ঝুলবারান্ধায় একটা ছােট বিছানা পাততে পারি আর নাইটিঙ্গেল পাখীর গান শুনতে শুনতে ঘুমতে পারি। ওখানে বেশ ঠাণ্ডা। আমি ঘরের চেয়ে বাইরে ভালই থাকবাে।

তার মা বললেন, ঠিক আছে বাছা, আমি তােমার বাবার সঙ্গে এ সম্পর্কে কথা বলবাে। তােমার বাবা যা ঠিক করবেন, তাই করা যাবে।
মহিলাটি তাদের আলােচনা মেসের লিজিওকে জানালেন। আর বাবা মশায়, তাঁর বয়সের জন্যই হােক, একটু খিটখিটে মেজাজের হয়ে উঠেছেন।
আ, নাইটিঙ্গেল পাখী গান গেয়ে ঘুম পাড়াবে। তিনি ঝাঁকিয়ে উঠে বললেন। এরকম বাজে আব্দার যেন আর না শুনি, বলে দিও তাকে।

একথা শুনে পরদিন রাত্রে, বাবাকে আরও উত্যক্ত করার জন্য (যেন সে খুব গরম বােধ করছে) ক্যাটরিণা নিজেই শুধু জেগে রইলাে না, অনবরত গরম লাগার নালিশ করে, তার মাকেও এক ফোঁটা ঘুমতে দিলাে না।

সুতরাং পরদিন সকালে তার মা সােজা মেসের লিজির কাছে হাজির হয়ে বললেন, দ্যাখাে কর্তা, তুমি নিশ্চয়ই তােমার মেয়েকে তেমন ভালােবাসাে না। সে ঝুল বারান্দায় ঘুমুক বা না ঘুমুক, কী আসে যায় তােমার! তােমার মেয়েটা গরমের জন্য এক মুহুর্তে দু চোখের পাতা এক করতে পারেনি। তাছাড়া, যদি একটা সােমত্ত বয়সের মেয়ে নাইটিঙ্গেল পাখীর গানে আনন্দ পায়, তাতে বিস্মিত হবার কী আছে? এ বয়সের মেয়েরা সাধারণত ঐ সব জিনিসে আকৃষ্ট হয়। এসবই তাদের স্বভাবে প্রতিফলিত হয়। স্ত্রীর কথা শুনে শেষে বাবা মত দিলেন।

বাবা মত দিয়েছেন শুনে মেয়েটি তারাতারি ঝুল বারান্দায় গিয়ে একটি বিছানা পাতল। আর ওখানে শোয়াই যখন তার মনবাসনা, সে রিসিয়ার্ডোর আসার প্রতিক্ষায় রইল।

মেসের লিজি যখন শুনতে পেলেন যে মেয়ে শুয়ে পড়েছে তিনি তার ঘর থেকে ঝুলবারান্দায় যাবার পথের দরজায় তালা লাগলেন। তারপর নিজের বিছানায় যেয়ে শুয়ে পড়লেন।

যখন আর কোন শব্দ শােনা গেলােনা, রিসিয়াডো একটা মইয়ের সাহায্যে পাচিলের উপর উঠলাে। তারপর সেখানে পাথরের পর পাথর সাজিসে অনেক কষ্টে বুল বারান্দা পর্যন্ত পৌছালাে। প্রতি মুহুর্তে পড়ে যাওয়ার একটা গুরুতর বিপদের সম্ভাবনা ছিলাে কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে অক্ষত অবস্থায় ঝুল বারান্দায় উঠলো। সেখানে মেয়েটি নিঃশব্দে তাকে পরম আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করলো। অনেক অনেক চুম্বন বিনিময়ের পর তারা দুজনে জড়াজড়ি করে শুয়ে পড়ল। সত্য বলতে কি, সারাটি রাত তারা আনন্দ ও ফুর্তিতে কাটালাে। কিছুক্ষণ বিরতির পর পর নাইটিঙ্গেল পাখীব ডাক ডাকলাে।

তাদের ফুর্তিঅফুরন্ত। কিন্তু রাত্রি ছোট। যদিও তাদের হুশ ছিলো না, যখন ঘুমিয়ে পড়লাে, তখন প্রায় ভাের হয়ে গিয়েছিলাে। আর তাদের গায়ে এক টুকরাে সুতাে পর্যন্ত ছিলাে না। আমােদ ফুর্তি করে ও নৈশতাপে তারা তখন ক্লান্ত। ক্যাটরিনা তার ডান হাত ভাঁজ করে রিসিয়ার্ডোর গলা জড়িয়ে শুয়েছিলাে। আর বাঁ হাত দিয়ে ছেলেটির শরীরের যে অংশটি ধরেছিলাে, তা মহিলা ও পুরুষদের সম্বলিত সমাবেশে উল্লেখ করা যায় না।

ভোর হলাে। কিন্তু তাদের জাগাতে পারলাে না। যখন মেসের লিজি শয্যা ত্যাগ করে উঠলেন, তখন তারা একই ভঙ্গিতে ঘুমিয়ে । মেসের লিজিয়ের মনে পড়লো তার মেয়েটি ঝুল বারান্দাতে ঘুমিয়েছিল। তিনি নিঃশব্দে দরজা খুলে আপন মনে বললেন, যাই দেখি মেয়েটা নাইটিঙ্গেল পাখীর সাহায্যে ভালাে করে ঘুমুতে পেরেছি কিনা!

প্যাসেজটুকু পেরিয়ে এসে, তিনি আলতাে ভাবে পর্দাটি তুললেন। দেখলেন রিসিয়াডো আর ক্যাটরিণা নগ্ন দেহে, নিবারণ অবস্থায় একে অন্যের বাহবন্ধনে শুয়ে ঘুমুচ্ছে। আর ভঙ্গীটি, আগে যেমনটি বলা হয়েছে তেমনটি।

সুস্পষ্টভাবে রিসিয়াডোতে চেনার পর, তিনি সেখান থেকে তিনি তাঁর শ্রীর কক্ষে চলে এলেন। তার ঘুম ভাঙিয়ে বললেন, গিন্নি, শীগগির উঠে এসে দ্যাখাে, তােমার কন্যারত্ন কেমন নাইটিঙ্গেল দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে, ওৎ পেতে তাকে ধরে ফেলেছে। আর তাকে এখনও হাতে ধরে রেখেছে।

কী বলছাে তুমি? ভদ্রমহিলা স্বামীকে জিজ্ঞেস করলেন। যদি দেখতে চাও, শীগগির এসাে। মেসের লিজিও বললেন।
মহিলাটি তাড়াতাড়ি পােষাক পরে নিঃশব্দে মেসের লিজিওর পদাঙ্ক অনুসরণ করলেন, যতক্ষণ না কন্যার শয্যার পাশে গিয়ে পৌছলেন। মশারীর পদ তােলা হলো। আর ম্যাডােনা গীয়াকোমিনা স্বচক্ষে দেখলেন, ঠিক যেমনটা তার মেয়ে নাইটিঙ্গেলকে নিবিড় আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরে আছে, যে নাইটিঙ্গেলের গান শুনতে সে আকাক্ষা করেছিলো।

ভদ্রমহিলার বুঝতে বাকি রইলাে না, রিসিয়াডো তাকে কী সাংঘাতিকভাবে প্রতারণা করেছে। তিনি চিৎকার চেচামেচি করে তাকে গালি দিতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু মেসের লিজিও তাকে বাধা দিয়ে বললেন, গিন্নি, যদি তুমি আমাকে ভালােবাসো, তাহলে জিবহা সংযত কর। আমাদের মেয়ে যখন ওকে গ্রহণ করেছে, সে ওকে রাখবেই। রিসিয়াডো একটা পয়সাওয়ালা ছােকরা এবং একটা বনেদী ঘরের সন্তান। আমরা তার যতটা ক্ষতি করতে পারি, তার চেয়ে তাকে জামাই করে নেওয়া অনেক বেশী লাভজনক। যদি সে এ বাড়ী থেকে অক্ষত দেহে বাড়ী ফিরতে চায়, তবে সর্বপ্রথম আমাদের মেয়েকে তার বিয়ে করতে হবে। তাতে সে তার নাইটিঙ্গেল পাখীকে তার নিজের খাচায় রাখতে পারবে। অন্যের খাচায় নয়।

গিন্নি বুঝলেন যা ঘটেছে তাতে তার স্বামী অযথা বিরক্ত হন নি। আরও বলেন তার মেয়ে একটি মধুর রাত্রি যাপন করে যথেষ্ট বিশ্রাম নিয়েছে এবং নাইটিঙ্গেলকে করায়ত্ত করে শান্ত হয়েছে।

বেশীক্ষণ অপেক্ষা করতে হলাে না, রিসিয়াডো জেগে উঠলাে। আর  সকাল হয়ে গেছে দেখে, সে ভয়ে মৃতপ্রায় হয়ে পড়লো। ক্যাটেরিণাকে ডেকে বললো, হায় আমার সোনা, সকাল হয়ে গেছে। আমরা ধরা পড়ে গেছি। এখন আমাদের কী উপায় হবে ?

এ কথার উত্তরে মেসের লিজিও এগিয়ে এসে, পর্দা তুলে বললেন, তুমি কী প্রত্যাশা কর?

মেসের লিজিওকে দেখে রিসিয়াডোর আত্মারাম তাে খাচা ছাড়ার উপক্রম। বিছানার সঙ্গে সেটে যেয়ে সে বললাে, দোহাই কর্তা, ঈশ্বরের নামে বলছি, আমাকে দয়া করুন। আমি জানি মৃত্যুই আমার প্রাপ্য, কারণ আমি অবিশ্বাসী বদমাস, কাজেই আপনার যা খুশী আমাকে নিয়ে করতে পারেন। কিন্তু আমি আমার প্রাণভিক্ষা চাইছি, যদি সম্ভব হয় আমাকে যেন খুন করবেন না, এই আমার একান্ত মিনতি।

মেসের লিজিও বললেন, রিসিয়াডো, তােমার উপর আমার যে স্নেহ ও বিশবাস ছিলাে, সে ক্ষেত্রে এ কাজ সম্পূর্ণ আপত্তিকর। কিন্তু যা হবার হয়েছে, তার আর ক্ষমা নেই। তােমার উচিত বয়সই তােমাকে এই মারাত্মক ভুলের পথে নিয়ে গেছে। কাজেই তােমার জীবন ও আমার সম্মান রক্ষার জন্য, আমার কিছু করার আগে, তােমাকে অবশ্যই কিছু করতে হবে। আর সেটা হচেছ, সারাজীবনের জন্য ক্যাটরিনাকে তােমার আইনগ্রাহ্য পত্নী করে নিতে হবে। এর ফলে, সে শুধু আজকের রাতের জন্যই তােমার হবে না, যতদিন সে বেচে থাকবে, একান্তভাবে তােমারই থাকবে। আর এই উপায়েই কেবল তােমার মুক্তি পেতে পারাে, আমার ক্ষমা পেতে পারো। অন্যথায় তুমি তােমার সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য প্রস্তুত হও।

যখন এই সব কথাবার্তা চলছিলাে, ক্যাটেরিণা জেগে উঠে নাইটিঙ্গেলকে ছেড়ে দিয়ে, তাড়াতাড়ি কাপড় চোপড় দিয়ে কোন রকমে নিজেকে ঢাকলাে। তারপর ডুকরে কেদে উঠে, রিসিয়াডোকে ক্ষমা করতে বাবাকে অনুরোধ করলাে। এবং যাতে তারা দীর্ঘদিন নিরাপদে ও পরম সুখে রাত্রি যাপন করতে পারে, সেজন্য বাবা যা করতে বলছেন, সেই মত করতে রিসিয়াডোকে অনুরােধ করলাে।
এ সব যুক্তি অবশ্য বাহুল্য মাত্র। কারণ একদিকে নীতি ভঙ্গের লজ্জা এবং প্রায়শ্চিত্ত করার ইচ্ছে, অন্য দিকে প্রাণ বাঁচানাের তাগিদে ( এই গভীর প্রেমের বস্তু লাভ করার আকাঙ্ক্ষার কথা উল্লেখ না করে) এক মুহুর্ত ইতস্ততঃ না করে রিসিরাভো সঙ্গে সঙ্গে মেসের লিজিও যা বলেছেন সেই মত কাজ করতে রাজি হলো।

সুতরাং মেসের লিজিও ম্যাডোনা গীরাকোমিনার কাছ থেকে বাগদান কার্যের জন্য একটা আংটি ধার করলেন এবং রিসিয়াডো ক্যাটেরিণাকে বিয়ে করলাে। আর সেখানে উপস্থিত থেকে বাপ মা দুজনেই এই বিয়ের সাক্ষী হলেন।
তারপর মেসের লিজিও এবং তার স্ত্রী সেখান থেকে সরে গেলেন। যাবার আগে বললন, যাও এবার ঘুমুও গে, তোমাদের এখন জেগে থাকার চেয়ে বিশ্রামের প্রয়ােজন বেশী।

বাপ মা চলে যেতেই, দুই ছোকরা ছোকরী আবার একে অন্যের বাহু বন্ধনে ধরা দিলাে। বলতে কি সারা রাতে তারা আধডজন বার সীমানা অতিক্রম করেছিলাে। সকালে বিছানা ছাড়ার আগে তার সঙ্গে আরও দুবার যুক্ত হলাে। প্রথম রাতে এটুকুতেই তারা ক্ষান্তি দিলো।

শয্যাত্যাগের পর রিসিয়াডো মেসের লিজিওর সঙ্গে ব্যাপারটি নিয়ে বিশদ আলােচনা করলো। কয়েকদিন পর সে এবং ক্যাটেরিণা আত্মীয় স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের সামনে সামাজিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিয়েটা পাকা করলাে। তার পর তুমল আনন্দোল্লাসের মধ্যে নববধুকে ঘরে নিয়ে এলো। সেখানে বিপুল আড়ম্বর ও মর্যাদার সঙ্গে বিবাহ-উৎসব অনুষ্ঠিত হলাে।

তারপর বহু বছর থরে নাইটিঙ্গেলকে দিনরাত্তির খাঁচায় পুরে দীর্ঘদিন তারা দুজনে সুখে ও শান্তিতে অতিবাহিত করেছিলাে।

Leave a Reply