চাঁদের গায়ে চাঁদ – তিলোত্তমা মজুমদার

›› উপন্যাসের অংশ বিশেষ  

…….একদিন গন্ধমাদন পর্বতের কাছাকাছি ধ্যান করছেন দুর্বাসা, হঠাৎ, টুং-টাং রিন-ঠিন উঃ-আঃ শব্দে তার ধ্যান ভঙ্গ হয়। চোখ মেলে দেখেন দানবরাজ বলির পুত্র এক পুংশ্চলীর সঙ্গে কামমত্ত ও অজ্ঞান। তাদের কামকেলীর শব্দেই মুনির ধ্যান ভঙ্গ হয়েছে। মুনি কুপিত হলেন, চিরকালই দুর্বাসা মুনি যা হয়ে এসেছেন, এবং ওই দুই প্রাণীকে কামলিপ্ত হওয়ার জন্য অভিশাপ দিলেন। তা দিলেন তাে দিলেন, বেশ করলেন, কিন্তু মুনির কী হল? দুর্বাসা মুনি, তাঁর ধর্মে-কর্মে ঈশ্বরভজনায় মন নেই, তিনি আবিষ্কার করলেন যে তার সঙ্গদোষ ঘটেছে। কেননা পুরাণে বলছে, জিতেন্দ্রিয় ব্যক্তিরও অসৎ সংসর্গবশতঃ সাংসার্গিক দোষ উপস্থিত হয়। তাে, তখন, সহসা মুনিবরের হৃদয়ের সুরতস্পৃহা উপস্থিত হইলে তিনি কামাতুর হইয়া তপস্যা ত্যাগপূর্বক কামিনী চিন্তা করিতে লাগিলেন। তাে বৃত্তান্ত এই। এরপর অবশ্য দুর্বাসা কন্দলী নাম্নী অন্য এক মুনিকন্যাকে বিবাহ করেন এবং আপামর জনসাধারণের মতােই খাট-বিছানায় একই খেলা খেলে কিছুটা প্রবৃত্তি নিবারণ করেন। সেই কন্দলী ছিল দারুণ ঝগড়াটে।………..

……..এই পৃথিবী সবুজ কিনা, সুন্দর কিনা, নির্মল কিনা, তাতে কী যায় আসে। যা আছে তা থাকার মধ্যে তার সার্থকতা। কিন্তু যা আছে তাকে জানার মধ্যে তার সম্পূর্ণতা। তাই এ দেহ, এই মানবদেহ, এই শরীর বড় মূল্যবান। বড় সুন্দর। বড় আদরকাড়া। তােমরা যে যার শরীরকে স্পর্শ করাে আর ভাবতে থাকো, এই আমার পা, এই আমার হাত, এই আমার নাভি, এই আমার চোখ, মুখ, নাক, মস্তক, এই আমার স্তন ও যােনি। এই আমার শরীর। একে আমি স্পর্শ করি। একে আমি অনুভব করি। একে আমি উপলব্ধি করি। কোথায় কোথায় কোথায়। আমার মস্তকে। আমার মস্তিষ্কে। আমার চেতনায়।……

……….আমি দেখি দল বাঁধা কোষেদের কলা। আমি দেখি দল বাঁধা কলাদের অঙ্গ। আমি দেখি অঙ্গ প্রতিবেশী। আমি দেখি তন্ত্র। যেনবা ছােট ছােট গাঁ তাই শহর। ছােট ছােট শহর তাই নগর। ছােট ছােট নগর তাই রাজনগর। রাজনগর, তাই মহানগর। তাই গ্রামে নগরে মহানগরে দেশ। এই দেহ এক দেশ-ভাবনা যেন। এই দেহ এক অলীক, এক রহস্য ভাবনাও যেন। এবং সমস্ত রহস্যগুলি বয়ঃসন্ধিকালে চলে যায় জনন ভূমিকায়। চলে যায় যৌনতায়। এবং যৌনতা সম্বন্ধীয় এই বােধ যদি ঈশ্বরের তৈরি হয় বা প্রকৃতির তবে তা অত্যন্ত সচেতন নির্মাণ কারণ যৌনতার মধ্যে সৃষ্টিবীজ। যৌনতায় সৃষ্টি রহস্য। তােমরা জানাে, সঙ্গম ও রতিক্রিয়ার প্রবণতার তলায় আছে স্বপ্রকাশ। আত্মপ্রকাশ। আত্ম উন্মােচন। সঙ্গম এক পার্থিব প্রক্রিয়া যাতে ধরা পড়ে অপার্থিব সঙ্গম এক আনন্দ যাতে অনন্য সৃষ্টি। দেখাে তােমরা, দেখাে, একটু গভীর করে দেখাে পরস্পর। একা হে? একা তুমি? একাকীত্ব বােধ হয়? দেখাে হে, দেখাে পরস্পর। তােমার চোখ ওকে টানে না? তােমার হাত ওকে টানে না? তােমার শরীর ওকে জড়ায়-জাপ্টায় মা একজনের ইচ্ছা জাগে না প্রবেশ করাে অন্যতে? তখনও একা লাগে?

একা? দেখাে, ভাবাে, একজন অন্যজনে গিয়েছ। একজন অন্যজনে আছ। দেখাে, আর কোনও দূরত্ব নেই। বিচ্ছেদ নেই এতটুকু। ফিভাজন নেই। এখন আর অপূর্ণ নও। অসম্পূর্ণ নও। এখন এক। দুইয়ে মিলে এক। একে একে এক। এই এককের বােধের জন্যই আলাদা হলেন নর-নারী। এককের বােধের জন্য নারী। পুরুষ হলেন। এইসব শাস্ত্রকথা নয়। এইসব বিশ্বাসের কথা। এইসব ঈশ্বরবিশ্বাসের মতাে সুন্দর ও আবেগপূর্ণ। আসলে শাস্ত্র কথা হল কামােদ্দীপনা। বােধ। তবে বলাে দেখি, শাস্ত্রে বলে, কামােদ্দীপনায় পুরুষের লিঙ্গ হয় কঠিন ও দীর্ঘ। ওপরের দিকে সামান্য বাঁকা। শাস্ত্রে বলে, নারীর যােনির ভিতরের পথও উপরের দিকে বাঁকা। যেন ওই লিঙ্গ, ওই যােনি, একে অন্যের পরিপূরক।

হে ভ্রাতা ভগিনীগণ, তােমাদের কি মনে হয় না, প্রকৃতির এ এক নিপুণ নির্মাণ! নিপুণ বটে, কিন্তু জটিলতা আছে কিছু। কী জটিলতা? শােনাে তবে। নারীর যােনিতে আছে নিমফি, বা লিবিয়া মাইনরা। নিমফির ভাঁজ দুটি ওপর দিকের যে জায়গায় মিশেছে তার নাম ক্লাইটোরিস, বহু স্নায়ুর মিলনস্থল, এই অংশটি তীব্র যৌন অনুভূতির কেন্দ্র। শাস্ত্রে বলে, পুরুষের লিঙ্গের সঙ্গে এই অংশটি চরিত্রে মেলে। কেননা ভ্রুণ অবস্থায় যে-অংশ ধীরে ধীরে পুরুষ শিশুর বেলায় লিঙ্গ হয়ে দেখা যায়, সেই অংশ থেকেই মেয়েদের ক্লাইটোরিস গড়ে ওঠে। ক্লাইটোরিস বা ক্লিটোরিস, যাই বললা, যৌনতায় এর অনন্য ভূমিকা লব্ধ হয়। এইসব মেয়ে তার কিছু জানে নাকো। জানে নাকো কাকে বলে ক্লিটোরিস, নিমফি বা ফুল হয়ে ফুটে থাকা অপূর্ব তরল। জানে না, তবু যৌনতা ধরা দেয়। সে বড় ভয়ঙ্কর। না জেনে ধরা দেয়, সে বড় চিন্তার। শুধু এক বােধ কাজ করে।……..

……..আর ছেলের বেলায়? কোনও সাবধানবাণী নেই। বলল, তােমরা বলাে, তােমাদের মধ্যে পুরুষ হয়েছ যারা, তােমাদের বয়ঃসন্ধিকালে ভীত হওনি তােমরা? গা ছমছম করেনি তােমাদের? পােশাকের নীচে নিভৃত পরিবর্তন আর নারীবােধ তােমাদের দিশেহারা করেনি? তােমাদের কেউ সাবধান করে দেয়নি, তাই, পাড়ার কোনও যৌনতাকামী দিদি কিংবা পিসি কিংবা মাসি তােমাদের কোন অছিলায় সাপটে নিয়েছে বুকে আর তােমার দম বন্ধ হয়েছে, শরীরের মধ্যে সুখের চেয়ে অধিকতর কষ্ট, কারণ, সেই নারী তােমাকে পিষে ফেলতে ফেলতে কানে কানে বলছে—কারওকে বলিস না। কারওকে বলতে নেই। সউ? মনে। থাকবে?..কারওকে বলতে নেই? কেন? তােমার মধ্যে পাপবােধ ঢক পড়ছে।…….

………—আঃ… কী করছিস! আমার লাগছে!
—এ কী! ব্রা পরে আছিস? এতক্ষণ ব্রা খােলার সময় পাসনি?
—আমার ইচ্ছে করেনি,খুলিনি! ব্যস!
—ব্রা খােল। বলেছি না রাত্তিরে ব্রা পরে থাকবি না।
—থাকব। বেশ করব। উঃ …. উ… উ…
—আবার কথা। দেখি, আমি খুলে দিই।
-না।

—কী না? আমার কাছে কীসের লজ্জা? আঁ? আমি কি ছেলে? আঁ? একটা মেয়ের কাছে আরেকটা মেয়ের কোনও লজ্জা নেই। কাল থেকে রাত আটটার পর যেন গায়ে আর ব্রা না থাকে।………

…..যেন-বা প্রেমিক কোনও প্রেমিকাকে। যেন-বা স্বামী কোনও স্ত্রীকে। দ্রুত দ্রুত পাঠ করেছিল শ্রুতি। দেখেছিল—“অসাধারণ তাের বুক দুটো। তুই কি জানিস? একদিন ‘মাধুকরী’ পড়তে পড়তে তুই বলেছিলিস তাের রুষা হতে ইচ্ছে করে। তুই জানিস না, পাগলিটা, তুই কিচ্ছু জানিস না। তুই রুষার চেয়ে সুন্দর।………

……—“আমি ঘৃণা করি নারীজন্ম এই। আমি ঘৃণা করি অপূর্ণ ক্লাইটোরিস আমার, যৌনঅঙ্গ অবস্থানে। আমার রাগ হয়, মনে হয় ভেঙে চুরে ফেলি, যখন প্রতিমাসে আমি মিন্স সামলাই। বিশ্বাস কর, বিশ্বাস কর, আমি যখন তােকে ছুঁই, চটকাই তােকে, আমি কল্পনায় নিজেকে দেখি পৃথু। পৃথু। পৃথু।……

……….আমি দেখেছি, গায়ে গা লাগিয়ে বসে আছে ওরা। আমি এলে সরে যাচ্ছে। একদিন মনে হল দেবরূপার হাত সঙ্গীতার ব্লাউজে খেলা করছিল। আমাকে দেখে হাত সরিয়ে নিল। সঙ্গীতা শাড়ি পরে। আঁচলে গা ঢেকে রাখে। দেবরূপা, আঁচলের মধ্যে দিয়ে হাত ঢুকিয়ে দেয়। বদলায়নি। একটি বিন্দুও বদলায়নি ও। ঠিক সঙ্গী জুটিয়ে নিয়েছে।………..

Leave a Reply