প্রতিপক্ষ
……..রক্তের ক্রন্দনে স্পন্দিত বুকে কেবল মাদল বাজে, কেবল বাজে। নায়ক নায়িকাকে কাছে ডাকল, হাতে হাত রাখল, মুখে মুখ রাখল, শরীরে শরীর।…….
………স্ত্রীর মৃত্যুর পর থেকেই জামাল সাহেবের বাড়িতে আছেন। সখিনার ঘরের দিকে তাঁর পা দুটো ছুটে যেতে চাচ্ছে। চোখে সখিনার বেসামাল শরীরখানাই ভাসছে। ………জামাল সাহেবের শরীরে রক্তের উত্তপ্ত আগুন হয়ে জাগছে। তিনি ভুলে গেলেন সখিনা চাকরানী।
দরজা খুলে বৃষ্টির মধ্যে প্রায় আধভেজা হয়ে কিচেনের দুয়ারে এসে টোকা দিলেন। ভেতরে মেয়ে মানুষটি যেন আগে হতে তৈরি হয়েই ছিল। হুট করে দরজা খুলে দিল। চটপট বাতি জ্বালালাে। জামাল সাহেব ভেতরে এসে ঢুকলেন। মুখের কাছে আঙুল নিয়ে ফিসফিসিয়ে বাতি নিভিয়ে দিতে বললেন। সখিনার চোখের কোণা ঝিকিয়ে উঠল। ঠোটের ডগায় হাসি খেলে গেল।…….—এই রাইতের বেলায় কীয়ের লােভে আইছেন হেত জানি। বাড়িরে ডরাইয়া কি অইবাে। যান বয়েন।’……
…………আলগােছে ঘরের কপাট জোড়া বন্ধ করে দিল। লেফাফাদুরস্ত জামাল সাহেব সখিনার ভাঙা তক্তপােষের উপর উঠে বসলেন। সখিনা আদরের স্বামীটির মত গায়ে হাত বুলিয়ে জামাল সাহেবকে শুইয়ে দিল। নির্ভাবনায় টান টান গতরখানা মেলে ধরল। বৃষ্টিতে ভেজা এঁটেল মাটির কাদার মত জামাল সাহেবের শরীরের সঙ্গে একসা হয়ে লেগে রইল। বহুদিন পর মেয়ে মানুষকে দুবাহুর মধ্যে পেয়ে জামাল সাহেব কাঙ্গালের মত ভােগ করলেন, তৃষ্ণার্তের মত পান করলেন।……..
…….বাজারের হিসেব দিতে এল সখিনা। একটু আগে গা ধুয়েছে। চুলে নারকোল তেল মেখেছে। কালাে শরীরে কালাে চুল ছাড়াছাড়াভাবে ছড়িয়ে আছে। নীল রঙের একটি শাড়িতে শরীর ঢেকেছে। তার মুখে রহস্যকুঁটিল হাসি। চোখে ওত পাতা ঝানু কুমিরের মত ঘােলাটে দৃষ্টি। ব্লাউজের ভেঁড়া অংশ দিয়ে পাতার তলায় আধপাকা পেয়ারার মত ঠাঁসা মাংসল রক্তিম শিরাল স্তনের কালাে বোটা উকি দিচ্ছে। কাপড় ঠিক করার অছিলায় সখিনা কায়দা করে জামাল সাহেবকে বুক দেখিয়ে দিল! জামাল সাহেব লজ্জায় মাথা নিচু করে। রইলেন।…..
……. নিজের ধবধবে বকের পালকের মত সাদা বিছানায় শুয়ে সখিনার শরীরের সঙ্গে শরীর মিশাতে হয়। এমনি মেয়ে মানুষ সখিনা। উঠে আসতে চাইলেও দেয় না। ক্লান্তিকে কেয়ার করে না, সংশয়ের ধার ধারে না। এমনি পাথর ফাটানাে তৃষ্ণা। প্রতি রাত আসে। দরজায় টোকা দিলে পুতুলের মতে দরজা খুলে দেয়। এদিকে ভয়ে পেটের ভাত হজম হয় না।…….
……….গভীর জলের আবর্তের মত সখিনার চোরা চোখের বাঁকা দৃষ্টি তিনি চিনেন। ভীমরুলের চাকে খোচা দেওয়ার মত পুরুষ মানুষের সমস্ত কামচেতনাকে খুঁচিয়ে তােলে সে দৃষ্টি। তার গোয়ার একরােখা ছেলে আলমগীরকে দেখলেন। ঝাপিতে পােরা গােখরাে সাপের মত উদ্যত ফণাটা নােয়াননা। নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে ছেলেকে বিচার করলেন। যে জলের গভীর আবর্তে পড়ে জাহাজ ভেঙে খান খান হয়ে যায় তেমনি সখিনার শরীরের পাক খাওয়া আবর্তের মধ্যে পড়ে তার গোঁয়ার ছেলেটি নির্জীব হয়ে পড়েছে। ছি! ছি! বাপ-বেটা দুজনকেই সখিনা তার শিকার বানিয়ে ছাড়ল?
সেদিনই ছেলেকে হলে পাঠিয়ে দিলেন। আর নিজেই সখিনাকে নিয়ে আধারাত জড়াজড়ি করে কাটিয়ে দিতে লাগলেন। কোন কথা শােনে না, কোন বারণ মানে না সখিনা। জামাল সাহেব তাঁর শিক্ষিত সম্ভ্রান্ত পৌরুষ দিয়ে সখিনার চোরা ক্ষুধা মিটাতে পারেন না। সেজন্য পালিয়ে পালিয়ে থাকতে চায়। চোখ লাল করে তাকালেই গলা চড়ায়। ইজ্জতের ভয়ে জামাল সাহেব সখিনার মুখে হাত চাপা দিতে বাধ্য হন। তখন সে কাঁদো কাঁদো গলায় গ্রামের সরলা অবলা কুমারী মেয়ের মত বলে ;
‘আপনি কেন আমার ধর্মডা নষ্ট কইরলেন।………..
………এবার মরিয়া হয়ে উঠলেন জামাল সাহেব, কিছুতেই তিনি বিশ্রী মেয়ে মানুষটাকে বুকে করে ঘুমােবেন না। মনে মনে শপথ নিলেন, তার মেছেতার দাগ ভর্তি গালে চুমাে খাবেন না। কিছুতেই না। আধারাত বাইরে কাটান। বাড়ি ফেরেন শেষ রাতে। তখন সখিনা শিকারি বেড়ালের মত এসে হাজির হয়! জড়িয়ে ধরে। ডাকিনীর মত হাসে। জামাল সাহেব না করতে পারেন না। তার শরীর নিয়ে আধারাত উল্লাস করে ডাকিনী!………