কৃষ্ণ যখন প্রেমিক – প্রবােধকুমার সান্যাল

›› পৌরাণিক কাহিনী  ›› বই এর অংশ / সংক্ষেপিত  

কামনাময়ী ঊষা

……….স্বপ্নে দেখছেন তিনি এক আশ্চর্য নীলাম্বর পুরুষকে। যার সাথে মেতে উঠেছেন | অলৌকিক মৈথুনে। সেই মৈথুন জনিত আনন্দ প্রবাহিত হচ্ছে, তার যুবতী দেহের সর্বাঙ্গে। মাঝে মধ্যেই শিহরিত হচ্ছেন তিনি। স্বপ্ন ভেঙে গেলে আশাহীনতার দর্পণে নিজের হত ক্লান্ত ক্লিন্ন মুখের প্রতিচ্ছবি দেখছেন! কে এসে এমন ভাবে মধ্যরাতে আমার ঘুম ভাঙিয়ে দেয়? বাকি রাতটুকু আমাকে এক অনিশ্চিত দোলাচলের মধ্যে কাটাতে হয় ?…

……..ইতিমধ্যে তার জীবনে একটি আশ্চর্য ঘটনা ঘটে গেল। সেদিন শােনিতপুরের চৈত প্রাসাদের অন্তঃপর স্থলে একটি শিবালয়ে নিতে বসে তিনি মহাদেবের ধ্যান করছিলেন। হঠাৎ তার চোখের সামনে ভেসে উঠলাে মহাদেব লিঙ্গের রূপ রহস্য, তিনি মনে মনে প্রশ্ন করলেন—যােনি পর্বের ওপর কেন এই লিঙ্গ সংস্থাপিত হয়েছে।

এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্যে উপাস্যা উমাকে স্তব করলেন, উমা তুষ্টা হলেন ঊষার আরতি বন্দনাতে। দৈত্য দুহিতার কাছে তিনি প্রজনন রহস্য উন্মােচন করলেন।

অনিবার্য পরিণতির জন্যেই এইভাবে যােনি এবং লিঙ্গের চিরন্তন সংযােজন দরকার। তা না হলে পৃথিবীর বুক থেকে মনুষ্যজাতির ইতিহাস বিনষ্ট হয়ে যাবে। এই সুগুপ্ত জ্ঞানের অধিকারিণী হলেন ঊষা। আবার তার অন্তর কেঁদে উঠলাে! কবে তিনি ইঙ্গিত ঐ লিঙ্গটির সাক্ষাত পাবেন?

স্মিত হাস্যে পার্বতী জবাব দিলেন—বৎসে, পরিতাপ পরিত্যাগ করাে, অচিরেই। তুমি তােমার মনােমত পুরুষ প্রেমিকের সাথে মিলনে অংশ নিতে পারবে।…

…… শিহরিত হয়ে ওঠেন চিত্রলেখা। তিনি জানেন, উষার এই আত্ম উম্মােচনের ফলাফল কি হতে পারে ? চকিতে তিনি চলে যান নিদ্রামগ্না ঊষার কাছে। আবেগের আশ্লেষে তাকে আলিঙ্গন করেন। চারটি স্তনের মিলন ঘটে যায়। দুই সখী পরস্পরকে আঁকড়ে ধরে শুয়ে থাকেন।……

……….

প্রিয় সখী তুলসী

এবার আর কোন বাধা নেই। তারা স্নান করলেন। মিলিত হলেন তুলসী শঙ্খচূড়ের সাথে, মনে হলাে, শত শতাব্দীর ঘন অমানিশার সাথে বুঝি জ্যোতিষ্মতী ঊষার মিলন ঘটে গেছে।

আহা এমন রূপ? কোন মানুষের সৃষ্টি কি? আদর করে তিনি অসংখ্য অলঙ্কারে সুসজ্জিতা করলেন তুলসীকে। দিলেন রােহিনীর কুণ্ডল। রতির রত্ন অঙ্গুরীয়। বিশ্বকর্মার দ্বারা সৃষ্ট শ্রেষ্ঠ অলঙ্কার।

আপন হাতে নির্মাণ করলেন তুলসীর করবীভার। বিন্যস্ত করলেন তার গলার মালা, রচনা করলেন চন্দ্রলেখা যুক্ত পত্র-দেয়। কপালে আঁকলেন কুমকুম চিহ্ন। তাঁর ললাটদেশে প্রদান করলেন প্রদীপ কণিকার মত সিন্ধুর বিন্দু। পাদযুগলে বিন্যস্ত করলেন অলকক্তক রাগ। | এবার, আরাে বেশী অভিলাষিণী মনে হচ্ছে কি তুলসীকে? এমন নারীর সাথে নিত্য নতুন রতিক্রিয়াতে মেতে উঠতে হয়। শৃঙ্কার রসে আপ্লতা তুলসী আবেগের চোখ দুটি বন্ধ করেছেন। কামশাস্ত্রে যতগুলি আসনের কথা বলা হয়েছে, তার সবকটিকে এবার ব্যবহারিক প্রয়ােগে পরিস্ফুটিত করতে হবে।

শুরু হলাে অন্তহীন মিথুন। কখনাে মলয় পর্বতে, কখনাে অরণ্যের অভ্যন্তরে, কখনাে বা রম্যস্থানের নির্জন পুষ্প উদ্যানে। অবিরত রতি বিহারে মগ্ন থাকলেন তারা। কেটে গেল ঋতুবৈচিত্র্য। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা।

তবুও, শেষ হচ্ছে না শরীরের এই শেষহীন খেলা। তারা সর্বদা একাঙ্গ হয়ে থাকেন। প্রেমরসে বিভাের। সুধারসে পরিব্যপ্ত। কখনাে তন্দ্রা যুক্ত। কখনাে উত্তেজনায় আপ্লুত।…………

স্বপ্ন সহচরী ললিতা এবং বিশাখা

……….না, কোন পুরাণের পাতায় পাতায় তাদের কাহিনী লিপিবদ্ধ হয়নি। তারা কেউ বৈষ্ণবী পঞ্চকা নয়। তারা নয় তাপসিকা বেদবতী অথবা বিষ্ণুবল্ল তুলসী। কিন্তু আমাদের লােকায়ত সাহিত্যে আর আমাদের উৎসারিত গানে তারা বেঁচে আছে।

যেমনটি ছিল তারা, কলহাস্য প্রিয়া, প্রগলভা–। তরুণীরা যেমনটি হয়ে থাকে। আরক্তিম বদন, কৌতুক ভাষ্য সুভাতিনী, শুচিস্মিতা ও অনন্ত যৌবনের অধিকারিণী। তারা কে? তারা হলাে শ্রীকৃষ্ণের প্রিয় দুই সখীললিতা এবং বিশাখা।…..

………হায়! রূপের অভিসারে কে কাকে হারিয়ে দেবে বলতাে? একজনকে অন্যজনের | সার্থক প্রতিচ্ছবি বলা যেতে পারে কি? চিরসখ্যতা স্থাপিত হয়েছিল তােমাদের মধ্যে। তাই সর্বদা তােমাদের নামদুটি একত্রে উচ্চারিত হয়েছে।

তাদের সাথে তিনি কখন অন্যমনে মেতে উঠতেন এক আশ্চর্য খুনসুটি খেলাতে। বৈষ্ণব সাহিত্যে তার গােপিনীদের শরীর সৌষ্ঠবের নিলাজ বর্ণনা আছে। পড়তে পড়তে আমাদের গণ্ডদেশ রক্তিম বর্ণ ধারন করে।……

……..কেউবা ছিল কলহাস্য প্রিয়া, কেউবা যৌবন মদমত্ত বিলাসিনী। কেউ আবার অকারণে চোখের কোণে কামনার নীল অঞ্জন আঁকতে। কেউ ইচ্ছে করেই কাঁচুলিটা একটুখানি উন্মুক্ত করে রাখতাে। কোমল গােলাপী স্তনবৃন্তের আভা কৃষ্ণকে প্রদর্শন করাবে বলে।

অথচ তাদের নামতাে আমরা দেখতে পাইনা। এখানে এই দুই রঙ্গরসিকা প্রিয়ার উপস্থিতি।-ললিতা এবং বিশাখা। | কেন তারা এইভাবে শ্রীকৃষ্ণের হৃৎসাম্রাজ্যে অধীশ্বরী হতে পেরেছিল। অতিরিক্ত কি ছিল তাদের ?

সেই একই নারীদেহের সমাহার। নিতম্ববতী, ক্ষীণকটি, দুটি পরিপুষ্ট স্তন। চোখ থেকে ঠিকরে আসা কামনার আগুন। উন্নত নাসিকা। সমুন্নত কপােল। আলুলায়িত কেশ দাম, যা থাকে সমস্ত যুবতী মেয়ের।………

……….দুই সখীতে ঝগড়া কলহ। অবশেষে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ এসে দাঁড়িয়েছেন তাঁদের মধ্যে। | বলেছেন– কি তুচ্ছ বিষয় নিয়ে তােমরা এভাবে বৈরীতার প্রাচীর তুলে দিচ্ছাে?

তােমরা কি জানাে না আমি হলাম বহুবল্লভা। আমার যখন ইচ্ছে হবে আমি বিশাখার সাথে মেতে উঠবাে কাম খেলাতে। আবার ললিতা এসে যােগ দেবে। কখনাে কখনাে এমনটিও হতে পারে, তােমরা দুজনে মিলে আমাকে তুষ্ট করবে। এই আমি জগত সংসারের পরিপালক শ্রীকৃষ্ণ, আমার বাসনার কি কোন অন্ত আছে?

এইভাবেই দুই সখীকে শান্ত করতে বাধ্য হয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। তিনি জানেন, এভাবেই তাকে যােলাে হাজার যুবতী গােপিনীকে নিয়ে চলতে হয়। প্রত্যেকের হৃদয়ে কামের আগুন জ্বলে ওঠে। মনের আকাশে বাসনার পাখী উড়ে যায়। তাদের সকলকে সন্তুষ্ট করতে না পারলে প্রজাপতি পালক মহাত্মা হিসাবে কিভাবে চিহ্নিত হবেন তিনি?

অতএব শুরু হয় তার অন্তহীন খেলা। কখনাে দেখা যায়, অলস মধ্যাহ্নে ললিতার সাথে তিনি মেতে উঠেছেন এক শেষ না হওয়া খুনসুটির আসরে।

সহসা এই দৃশ্য চোখে পড়ে যায় শ্রীরাধিকার। স্বভাবতই কুপিতা হয় সে। হায় কি করছে কৃষ্ণ। এতে আমারই এক সহচরী। আমার চোখের অগােচরে তার সাথে মেতে উঠেছে শরীর খেলাতে।

আবার কখনাে বিশাখা এসে সেই স্থান অধিকার করে। সেও ভারী মর্মবিদায়ক দৃশ্য। অন্তত রাধিকার কাছে। রাধিকা বুঝতে পারে না, এখন কার কাছে গিয়ে সে তার মনােবেদনা জ্ঞাপন করবে। একবার ভাবে, ছুটে যাবে জগত পিতার কাছে।

পরক্ষণেই মনে হয় তার, শ্রীকৃষ্ণের কাছেই এই অন্তরের বেদনা নিবেদন করলে কেমন হয় ?

তখন শ্রীকৃষ্ণ সবেমাত্র শেষ করেছেন তার এই খেলা। একে একে অনেক গােপিনীকে শারিরীকভাবে তৃপ্ত করেছেন তিনি। তখন তিনি তাঁর নিজস্ব দোলায় বসে আছেন। মৃদু মন্দ সমীরণে সেখানে এক তরঙ্গ উঠেছে।..

……….শেষ সন্ধ্যাতে আবার ডাক পড়েছিল, শ্রীকৃষ্ণের কুঞ্জ কাননে। বনবালিকার ছদ্মবেশে সেজে উঠেছে ললিতা, বিশাখা। তারা সর্ব অঙ্গে জড়িয়েছে পুষ্পের মালা। শরীরের প্রকটিত অংশগুলিকে আরাে বেশী যৌবন দীপ্ত করে তুলতে বাধ্য হয়েছে তারা। ইদানিং অন্যান্য গােপিনীরা যে ভাবে নিলাজ অভিসারে মত্ত হয়ে উঠেছে, সেখানে এমনভাবে আরাে বেশী রূপযুবতী না হলে উপায় কি?

কৃষ্ণ সস্নেহে ডাক দিয়েছেন, কি এক মধুময় আকর্ষণ আছে—এই ডাকে। উতল বাতাস বুঝি। মনে হয় সবকিছু ছেড়ে দ্রুত চলে আসি। কখন ঐ প্রশস্ত বক্ষে আশ্রয় মিলতে পারে? কখন ঐ আঁখি থেকে পান করতে পারি বাসনার অনন্ত সুরা? তারপর অনাস্বাদিত মৈথুন আনন্দে মেতে উঠতে পারি? | কৃষ্ণ চোখ বন্ধ করেছেন। এমনটি করে থাকেন তিনি মাঝে মধ্যে। ললিতা এবং বিশাখা জানে, এখুনি প্রেমের সম্রাট শুরু করবেন তার অদ্ভুত খেলা। শিহরিতা হবে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। রক্তের কল্লোলে জাগবে প্লাবন। মাথার কোষে কোষান্তরে অদ্ভুত একটা সুরের মুছনা শুনতে পাবে তারা। রাত ঘনিয়ে আসে, তখনাে হুঁশ ফেরেনি শ্রীকৃষ্ণের। এবং দুই সহচরী, তখন তাঁর হৃদয়ের তন্ত্রীতে বাজিয়ে চলেছে এক মধুময় যুগলবন্দী সঙ্গীত।……….

……….

সহেলী পাঞ্চালী

…….আনন্দ আমাকে আবেগপ্রবণা করে দেয় না। এমনকি, সঙ্গোপনে উচ্চারণ করেন পাঞ্চালী, এই যে প্রতি রাতে আমি, পঞ্চ স্বামীর সাথে বিনিময় করি আমার শরীর, সেখানেও এমন কোন অনাস্বাদিত সুখ থাকে না, যা আমাকে আরাে বেশী শিহরিতা এবং স্পর্শকাতরা করে তুলবে।…..

……….কথাটা শুনতে অবাক লাগতে পারে। কিন্তু এটাই পৌরাণিক সত্য। কামিনী পাঞ্চালী পঞ্চ পুরুষের অঙ্কশায়িনী হতে বাধ্য হয়েছিলেন। বৈদিক প্রথাকে লঙঘন করতে হয়েছিল তাকে। কিন্তু মনে প্রাণে তিনি যে পুরুষকে তার ইহ জীবনের সকল স্বপ্নের দ্যোতক হিসাবে চিন্তা করেছিলেন, তিনি ঐ পুরুষােত্তম কৃষ্ণ!…..

……পালঙ্কের ছত্রি থেকে হাত সরিয়ে দিয়ে পার্থ চলে এলেন দ্রৌপদীর কাছে। তার উৰ্দ্ধবাহু স্পর্শ করলেন। চিবুক রাখলেন তাঁর মাথায়। বললেন—আজ তােমাকে ভারি সুন্দর দেখাচ্ছে—পাঞ্চালী।

এই কথা শেষ হবার সাথে সাথে পার্থ তাঁর করতল নামিয়ে আনলেন দ্রৌপদীর কটিতে। কোমর বেস্টন করে তাকে কিছুদূর টেনে নিয়ে গেলেন। চকিতে তার কপােলে হাত রাখলেন। স্ফুরিত ওষ্ঠাধারের মধুর স্পর্শের শিহরণে ভরিয়ে দিলেন দ্রৌপদীর সর্বাঙ্গে। আবেশে আঁখি পল্লব কেঁপে উঠলাে। পার্থের ওষ্ঠের সঙ্গে কেমন করে যে তার অধর একাত্ম হয়ে গেছে তা তিনি বুঝতেই পারলেন না। | পাণ্ডবদের রীতিনীতি ভঙ্গ করে এই প্রথম অর্জুন তাঁকে সােহাগে সােহগে শিহরিতা করতে চলেছেন। চোখ দুটি বন্ধ করলেন দ্রৌপদী। কেবলই মনে হচ্ছে তাঁর, তিনি বােধহয় দ্বিচারিণী। এভাবে পার্থের প্রেমে মাতােয়ারা হতে হতে হয়তাে বা আনমনে কৃষ্ণের সাথেই রতি সঞ্চার করে চলেছেন।

অভিমান হয়েছে কি? দুরন্ত বেদনার বাষ্পেচ্ছাস কি তখন পাঞ্চালীর কণ্ঠস্বরকে বিকৃত করেছে।

তিনি বলছেন-হে পার্থ, তােমার ওষ্ঠের পরশে তুমি কেন আমাকে কলুষিত করছাে? কেন আমার দেহের শুদ্ধতা হরণ করছাে তুমি?

পার্থ তখন বুঝি এক অবুঝ প্রেমিক। কিছুতেই দ্রৌপদীকে তিনি দূরে সরে যেতে দেবেন না।

পার্থ বলতে থাকেন—দ্রৌপদী, এমন করছাে কেন? তােমার এই অদ্ভুত আচরণের কোন মানে আমি বুঝতে পারছি না। | দ্রৌপদী বলতে থাকেন—তুমি এই দ্বাদশ বৎসরের মধ্যে সুভদ্রার পাণিগ্রহণ কবেছাে? চিত্রাঙ্গদার শয্যায় নিজেকে সমর্পিত করেছাে? কৌরব দুহিতাকে অঙ্কশায়িনী করে সুখ আবেশে মগ্ন ছিলে? পার্থ, কিভাবে তুমি আমাকে ভুলে গেছাে?………..

…….. রাত্রি ঘনিয়ে এসেছে। পার্থ এসে শয়ন করেছেন দ্রৌপদীর পাশে। ক্রমশঃ তার | ওষ্ঠাধর বিচরণ করছে দ্রৌপদীর গণ্ড, কপােল এলং আঁখি পল্লবে। পার্থের নিঃশ্বাসের উষ্ণতায় দ্রৌপদীর যৌবন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। মনিময় কঞ্জুলিকার বন্ধন থেকে মুক্ত | হয়ে গেল তার উন্নত দুটি শ্রীফল। পার্থের বিদ্যুৎবাহী নয়নের সামনে নিজেকে অনাবৃতা রেখে লজ্জিতা হলেন কি পাঞ্চালী?

সহসা মনে হলাে তার, এ বুঝি পার্থ নন, শ্রীকৃষ্ণ আবার ছদ্মবেশ ধারণ করেছেন।

চন্দ্রালােকে তিনি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন শিখিধারী শ্যামকে। তাঁর দৃষ্টিতে অপার তৃষ্ণার ভাষাহীন অব্যর্থতা। পার্থ রূপী শ্রীকৃষ্ণের সর্বাঙ্গ স্বেদসিক্ত হয়ে উঠেছে। স্কন্ধব্যাপী কুন্তল রাশি আলুলায়িত হয়ে এসে পড়েছে তার ললাটে।

পার্থের চঞ্চল আঙুল তখন স্পর্শ করেছে দ্রৌপদীর নাভিতট। পলকের মধ্যে তার শরীরের শেষতম আবরণ স্থানচ্যুত হয়ে নিক্ষেপিত হয়েছে শয্যাপ্রান্তে। পার্থ গভীর আলিঙ্গনে দ্রৌপদীকে নিজের স্বেদসিক্ত বক্ষপটে ধারণ করেছেন। উদ্দাম কামনার দুরন্ত উল্লাসে পার্থ চাইছেন দ্রৌপদীকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে।

দ্রৌপদী চোখ বন্ধ করলেন। কিছু ভাবার চেষ্টা করলেন। ইতিমধ্যে পার্থ আরাে কাছে এগিয়ে এসেছেন। তিনি তাঁর আঙুলের পরশ রাখছেন দ্রৌপদীর সর্বাঙ্গে। দ্বিধা-দ্বন্দ্বের অবসান হয়ে গেছে। পার্থের এই রূপ প্রত্যক্ষ করেছেন কামিনী পাঞ্চালী।…

কৃষ্ণপ্রেমিক চেতন্য

…..আমরা জানি শ্রীকৃষ্ণ যােলাে হাজার গােপিনীকে যথেচ্ছ ভােগ করতেন। এই গােপিনীরাও ছিলেন বিচরণকারিণী। শুধুমাত্র কৃষ্ণবংশের পুত্রগণ ছাড়া যাদব শ্রেষ্ঠদের অনেকেই ঐ রমণীদের প্রার্থনা করে থাকেন। যথােচিত সমাদরের সাথে তাদের সঙ্গলাভ করে থাকেন। এটিকে তখনকার সমাজে দূষণীয় বিষয় বলে ধরা হতাে না।……

…….সেদিন কৃষ্ণ রৈবতক প্রমােদ কাননে তার মহিষী এবং গণিকাদের সাথে জলকেলির সুখে মগ্ন। বাসুদেবকে ঘিরে রমণীরা ক্রীড়াকৌতুকে মরালীর মত ভেসে বেড়াচ্ছে। কেউ কৃষ্ণকে স্পর্শের জন্যে ব্যাকুলতা প্রকাশ করছে। কেউ আবার মীনের মত সন্তরণ শীলা। কেউ সুরা পানে প্রমত্তা হয়ে প্রণয় কথা উচ্চারণ করছে। কেউ বান্ধবীদের দিকে ঐটি এগিয়ে দিচ্ছে। কেউ আবার নিজেদের মধ্যেই আলিঙ্গনা বদ্ধ হয়ে বাসুদেবকে কল্পনা করছে।

বাতাস তাদের উচ্চহাস্যে মুখরিত হয়ে উঠেছে।

নারদ আরাে দেখলেন সুরা পানে উন্মত্তা রমণীদের অঙ্গের বসন বুঝি শিথিল এবং স্থলিত প্রায় হয়ে উঠেছে। নিজেদের নগ্নতা বিষয়ে তারা বিন্দুমাত্র চিন্তিত নয়। রৈবতকের এই প্রমােদ কাননে কৃষ্ণ হলেন একমাত্র পুরুষ। এখানে আর কেউ কোন ভাবেই উপস্থিত থাকতে পারেন না। এই স্থান কৃষ্ণ ছাড়া সকলের অগম্য।……..

Please follow and like us:

Leave a Reply