দুই দশকের দেশ গল্প সংকলন ১৯৮৩ – ২০০৩

›› গল্পের অংশ বিশেষ  ›› বই এর অংশ / সংক্ষেপিত  

কুসুমাদপি

– সন্তোষকুমার ঘােষ

……….আঁচল ভাল করে জড়িয়ে নিরালা ততক্ষণ উঠে দাড়িয়েছে। জড়ালাে বলেই ঊর্মিলার খেয়াল হল, জোড়া হেডলাইট শুধু কি গাড়িতেই! আর ও অনেক জায়গায় বাতি নিবিয়ে গা-ঢাকা দিতে চায়, দিয়ে থাকে।…….

……‘পেটের নীচে আর একটা পেট আছে জানাে না? সেটা যে, খাঁ খাঁ করছে। তারও তাে খাসা খানা চাই।’

উঁচু হয়ে উঠেছিল স্বরূপের জোড়া ভুরুর মাঝখানে যে জরুলটা থাকে, সেইটে। ঊর্মিলা বলল, “ছিঃ!’ কিসের ছিঃ আর কাকে ছিঃ। ততক্ষণে হাত বাড়িয়ে স্বরূপ উর্মিলাকে বুকের মধ্যে নিয়েছে, চওড়া বুকের মধ্যে তার সুগন্ধি মাথাটা ঠেসে, ঘষতে ঘষতে বলছে, এই বুকের রােমে যদি সত্যিই একটা জঙ্গল তৈরি হতে পারত, তবে কবে সেখানে লুকিয়ে রাখতাম আমার এই তুলতুলে নরম খরগােসটাকে। এসাে তাড়াতাড়ি।’

তারপর যত তর সইছে হাতে স্বরূপ এ্যাচকা টানে ঊর্মিলাকে খুলতে থাকল, তাতে বার বার শক্ত হয়ে উঠতে থাকল ওর শরীর। কোনও পােলট্রিতে কি এর চেয়ে দ্রুত, ব্যস্ত, অভ্যস্ত, কুশল হাতে মুরগির ছাল ছাড়ানাে হয়ে থাকে? কী জানি। আর গােয়েন্দা আঙুলে ভর দিয়ে যখন ওর জানু, উরু, কটি, বুক, গ্রীবারা ঘুরে বেড়াচ্ছে, তখন উর্মিলার চোখে ভেসে উঠছে মাংসের দোকান। আংটায় ঝােলানাে ছাল-ছাড়ানাে ভেড়া কি বকরি। যদিও গাঢ় চাপা অদ্ভুত গলায় স্বরূপ বলে চলেছে ‘প্রকাশিত হও, প্রকাশিত হও, আমি তােমাকে পুরােপুরি আবিষ্কার করি’, তবু উর্মিলার কান ঝা-ঝ। সে বারবার ফিরে যাচ্ছে সেই মাংসের দোকানটাতেই। কোনও ধৈর্যহীন খদ্দের যেন হাত বুলিয়ে বুলিয়ে ঠাউরে নিচ্ছে, কোন অংশটা সবচেয়ে মুখরােচক, গর্দান, সিনা, না রাং?…………….

 

জন্মান্তরের জগৎ

– সমরেশ বসু

…….এপ্রিলে উজলি বারাে ক্লাসের হায়ার সেকেন্ডারি পাশ করেছে। আগামী সেপ্টেম্বরে, ফিজিক্সে অনার্স নিয়ে কলেজে ঢােকবার অপেক্ষায়। এখন ওর উনিশ চলছে। ছিপছিপে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল শরীর। লম্বায় প্রায় সাড়ে পাঁচ ফুটের কাছাকাছি। এক আধ ইঞ্চি কম হতে পারে। মুখের গড়ন ঈষৎ লম্বা। ধনুকের মতাে ভুরুজোড়া অবিশ্যি প্লাক করা। উজ্জ্বল কালাে আয়ত দু চোখ টানা। টিকলাে নাক। ঈষৎ পুষ্ট ঠোট। গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যাম। ও যে অন্তর্বাস পরেনি, অন টপের দিকে তাকালেই বােঝা যায়। অন্তর্বাসে ওর অনীহার কথা হিতেশ জানেন। বুকের থেকে, ক্ষীণ কটির নীচেই ওর নিতম্বে কিঞ্চিৎ বেশি ভার নেমেছে। আঁট জিনস-এর রেখায় আর টপে ওর মেদহীন সুঠাম শরীর যেন অধরা। উচ্ছল।………

………হিতেশের উষ্ণ নিশ্বাস ওর মুখে লাগছে। ওর নিজের নিশ্বাস দ্রুত হয়ে উঠল। ও দু হাত তুলে হিতেশের বলিষ্ঠ গলা জড়িয়ে ধরল। হিতেশ ওর কোমর পিঠ বেড় দিয়ে দু হাতে আলিঙ্গন করলেন। নিবিড় করে চেপে ধরলেন বুকের ঘন সান্নিধ্যে। মুখ নামিয়ে ওর ঠোটে ঠোট স্পর্শ করলেন। উভয়ের নিবিড় গাঢ় চুম্বনে কয়েক মুহূর্ত স্তব্ধতায় কেটে গেল। কয়েক মুহূর্ত পরে দু’জনের ঠোট বিচ্ছিন্ন হল। দুজনের আবেগমথিত চোখ দু’জনকে চোখে চোখে দেখল। আবার গভীর আশ্লেষ চুম্বনে দুজনের ঠোট নিবিড়তর স্পর্শে মিলিত হল। উভয়ের উষ্ণ নিশ্বাস, পরস্পরের মুখে উত্তাপ ছড়াল। হিতেশের বাহুর বন্ধনে নিষ্পিষ্ট হল উজলি। আরও নিষ্পেষিত হওয়ার তীব্র প্রত্যাশায় উজলির বাহুর বন্ধন শক্ত হল। ঠোট আর জিভের সিক্ত রস পানে উভয়ের মত্ততা যেন বেড়ে উঠতে লাগল। এবং এক সময়ে আবার দুজনের ঠোট বিচ্ছিন্ন হল। উজলির ঠোট আরক্ত ভেজা। ওর চোখেও রক্তাভা। হিতেশ ওর গলায়, কানের পিছনে ঈষৎ দাত বসিয়ে চুম্বন করলেন। উজলির সারা শরীর শিহরিত হল। গলা থেকে একটি অস্ফুট শব্দ বেরােল, ‘আহ! | হিতেশের মুখ নেমে এল উজলির অনম্র টপের ওপরে। আবার মুহূর্তেই মুখ তুলে, ঠোট ছোয়ালেন ওর দু চোখের পাতায়। দুজনের মুখ ঘামে ভিজে উঠছে। উজলির মাথা নেমে এল হিতেশের বুকে।

ওর ফিসফিস স্বর শােনা গেল, ‘হিতেশ, আমাকে তােমার খামার বাড়ির ঘরে নিয়ে চলল। ‘উজলি! হিতেশের অস্ফুট স্বরে দ্বিধা ও বিস্ময়।

উজলি হিতেশের গলা থেকে হাত নামিয়ে তার একটি ডানা চেপে ধরল। ওর চোখ এখন আধ বােজা। আকুল আবেগে ফিসফিস স্বর কাপছে, ‘চলাে। আমাকে কষ্ট দিও না।

হিতেশের ফর্সা তামাটে মুখে রক্তচ্ছটা। চোখেও। উত্তেজনায় তার নিশ্বাস যেন রুদ্ধপ্রায়। একবার তাকালেন উজলির আধবােজা চোখের দিকে। দেখলেন ওর আপাদমস্তক। তারপরে ওর হাত ধরে বেরিয়ে গেলেন চালার বাইরে। চালার পিছনে পুব দিকেই খামার বাড়ির পাকা একতলা ঘর। সেখানে লাঙল কোদাল মই শাবল খুরপি যাবতীয় চাষের সরঞ্জাম। তারই মধ্যে একটি ডিভান একপাশে। আর একটি ইজিচেয়ার। হিতেশ উজলিকে নিয়ে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করলেন।……….

 

ঘরের মানুষ

– দুলেন্দ্র ভৌমিক

……….মন কেমন করা বিষন্ন এবং নিষ্ঠুর সেই গন্ধ তার মশারির মধ্যে কেমন করে চলে এল! বিপন্ন বিস্ময়ে চোখ খুলে দিব্যেন্দু দেখল রুমা তার শরীর থেকে নাইটি খুলে ফেলছে। খোঁপায় ফুলের মালা। সেই মালা খোপা থেকে ঝুলে আছে রুমার কাধ পর্যন্ত। রুমা কি জুই ছাড়া অন্য কোনও ফুলের মালা খোপায় জড়াতে পারল না? দিব্যেন্দুর মুখের ওপর রুমার শরীর ঝুকে আসছিল। দিব্যেন্দুর বুকের ওপর জুইয়ের পাপড়ি খসে খসে পড়ছে। জুইয়ের মাতাল গন্ধ, সেই সঙ্গে রুমার বুক, গলা আর বগল থেকে উঠে আসা ন’বছর আগের মুন ড্রপ-এর গন্ধ দিব্যেন্দুর চেতনার ওপর আততায়ীর মতাে ঝাপিয়ে পড়ল। রুমার মুখটা দু’হাতে সরিয়ে দিয়ে ক্লান্ত গলায় দিব্যেন্দু জিজ্ঞেস করল, “আজ গায়ে কী মেখেছ?”
রুমা কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল, “আমি মাখিনি, উর্মিদি মাখিয়ে দিয়েছে।’

অন্ধকার বিছানা জুড়ে একটা চেনা গন্ধ থইথই করছিল। দিব্যেন্দ হাত বাড়িয়ে রুমার শরীর স্পর্শ করতে গিয়ে টের পেল তার চেতনার ভেতরে যে কষ্টটা সন্ধের পর থেকে লুকিয়ে ছিল এখন সেটা সারা শরীরে নদীর ঢেউয়ের মতাে গড়িয়ে যাচ্ছে। অন্ধকারে রুমাকে দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু অনুভব করা যাচ্ছে দিব্যেন্দুর বুকের কাছে কেউ একজন আছে। তার নিঃশ্বাস দিব্যেন্দুর বুকে লাগছে। দিব্যেন্দু হাত বাড়িয়ে রুমাকে আরও কাছে টানল। চেনা গন্ধটা হঠাৎ তীব্র হয়ে ঝাপিয়ে পড়ল দিব্যেন্দুর নাকে। যেন

ঋক বােলতার হুলের মতাে। অথচ এই গন্ধের মধ্যে দিয়ে এখন, এই মহর্তে উর্মিকে পাওয়া যাচ্ছে —হয়তাে বাকি জীবনে আর কখনও পাওয়া যাবে না। দিব্যেন্দুর হাত শিথিল হয়ে এল। নিজেকে সরিয়ে নিতে নিতে টের পেল অন্ধকারেও রুমার নিঃশ্বাস ঝড়ের মতাে ফুসছে।………..

 

আদি মধ্য অন্ত

– সমরেশ বসু

……..সুপূর্ণা ঘরের বন্ধ দরজাটার দিকে একবার দেখে নিল। কারণ শৈবাল যে কেবল ওর হাতদুটো টেনে বুকের ওপর নিল, তা নয়। ওকেও টেবিলের পাশ দিয়ে বুকের অনেকটা কাছে টেনে নিল। ঈষৎ বাধা দেবার চেষ্টা করল। ফলে সবুজ বনে লাল ফুল ছাপানাে পিওর সিল্কের শাড়ির আঁচল খসল। শাড়ির সঙ্গে অভিন্ন রঙের মেশানাে জামায়, অনম্র উদ্ভিন্ন বুকের একদিক উদাস। অতি অনুজ্জ্বল ওষ্ঠরঞ্জনী মাখা পুষ্ট ঠোঁট টিপে, ওর স্বাভাবিক সরু কুটি চোখে শৈবালকে হানল। কপালের সামনে, ছাঁটাই করা নরম কালাে চুলের গােছা এসে পড়েছে প্রায় ওর দীর্ঘায়ত কালাে চোখের ওপর। কী করছ? এটা তাে তােমার অফিস ঘর বলেই জানি। দরজাটাও খােলা।…………

……সুপূর্ণা দেখল, ওর বুকে ঠেকেছে শৈবালের কপাল। পােশাকে আশাকে আর বাকচাতুর্যে যত আধুনিকই হােক, বুকের স্পর্শে একটা শিহরিত লজ্জাকে চাপা দায়। বন্ধ ঘরে তৃতীয় ব্যক্তি না থাকলেও কোনওরকমে শৈবালের হাত থেকে, একটা হাত ছাড়িয়ে, ওর মাথাটা সরিয়ে দিল।………

………সবুজ বনে লাল ফুল ছাপানাে রেশমি শাড়ির আঁচল টানল বুকে। কিন্তু যতটা টানল, ততটাই খসল। টানা চোখ, টিকলাে নাক, ঈষৎ পুষ্ট ঠোঁট, প্রায় ফরসা রং, সব মিলিয়ে ওকে রূপসী বলা যাবে কি না সন্দেহ। তবে দৃষ্টি আকর্ষণ করার সমস্তরকম রমণীয় সৌন্দর্যই ওর আছে। স্বাস্থ্যে আছে দীপ্তি। বাড়তি মেদ বলে কিছুই নেই, অথচ প্রায় দীর্ঘ শরীরের গঠন নিখুঁত।……….

 

হবা

– আবুল বাশার

………সুন্দরতম মিলন মুহূর্তেও অরুন্ধতী স্বামীকে অদ্ভুতভাবে অপমান করতে পারে। বুকের দিকে হাত উঠে এলে অরুন্ধতী ঈষৎ বিরক্তিতে সেই হাত সরিয়ে দেয়। প্রথম প্রথম সুনেত্র ব্যাপারটা বুঝতে পারে না। বুক থেকে হাত সরিয়ে দেয় কেন, কেবল মুখে লাগছে’ বলে একটা কাতরতা শােনায়, পরে একদিন সুনেত্র বােঝে, অরুন্ধতী যে কাতর হচ্ছে তা ঠিক নয়, সেটা ওর লাগছে বলার স্বভাব মাত্র। আসলে সে স্বামীর স্পর্শকে পছন্দ করছে না, পাছে বুক দ্রুত যৌবন অপচয়িত হয়ে ঢলে পড়ে। একদিন জোর করে হাত ওঠাতে গেলে অরুন্ধতী কটু গলায় বলে—চাষার মতাে কেন, বলেছি না ওইভাবে হাত দেবে না ! ওইজন্যে চাষার বউদের বুকের স্বাস্থ্য নষ্ট হয়ে যায়। দু’দিনেই নেতিয়ে আমসি হয়। বলেছি না এসব কথা?

সুনেত্র থমকায়, বােকার মতন কষ্টে হাসে, হাত টেনে নেয়। এবং ভেবে পায় না কবে অরুন্ধতী তাকে কী বলেছে। তার আচরণ যে চাষার মতন, কেন না সে বউয়ের বুকের সৌন্দর্যহানি ঘটাচ্ছে, এইটুকু ভেবেই গ্লানিতে মন ভরে যায়, সে প্রচণ্ড আহত হয়।……..

…….সেই দীর্ঘশ্বাসে একটা বিষন্নতাও ছিল, সুনেত্র অনুভব করে না। ঠিক এমন সময় অরুন্ধতীর দিদি অনসূয়া কাধে স্বাস্থ্যবতী ভ্যানিটি ঝুলন্ত, কপালের পাশে উড়ন্ত গুচ্ছ চুল, ঠোটে রং, স্লিভলেস স্যান্ডাে ব্লাউজ, ঘামে ভিতরে পাতলা কঙুলি ভিজে, একটা ফিতের মতন, ঠোটের কানাতে ঘামের ভেজা মোেম-তেল, এইসব সহ জমকালাে পাতলা ঢাকাই জামদানি পরা, পায়ে চটপটে স্লিপার এবং বুকে আলুথালু বদমায়েসি করা দামাল শিশু পিছলে পড়ছে, তাকে সামলে নামানাের পরই শাস ফেলে ‘বাবা’!……

……..অনসূয়া বলে, অসভ্য ছেলে সে কথা শুনবে না, বুকের দুধ চাইছে। সুনেত্র বলল, তাই দিন না ওকে!

অনসূয়া সহসা আকাশ থেকে পাতালে পড়ে যায়। বলে, কী বলছেন আপনি? এ কি রাস্তার ভিখিরি যে বুকের দুধ খাবে? আপনি মাঝে মাঝে খুব গ্রাম্য কথাবার্তা বলেন। দীপিকা ওর বাচ্চাকে নিয়ে স্টেশনে আসতে চায় না, ফুটপাতে হাটে না, বস্তির ওদিক দিয়ে স্কুল অবদি যায় না। কারণ প্রকাশ্যে মেয়েগুলাে বুক আলগা করে বাচ্চাকে বুক চোষায়, বিশ্রী, তা-ও তাে বাচ্চার মনে ‘ইফেক্ট’ করে, করে কিনা বলুন?……..

…….অতি ক্ষীণ কৌতুকও কানে গিয়ে বিধল অনসূয়ার। বলল—যা দেখলাম, তা কি আপনাকে বােঝাতে পারব! শিশু হলে কী হয়, মুখ না চঞ্চু বুঝে পাই না। নারীর এই দেহ তাে ভাগাড় নয় সুনেত্র।

ভাগাড়? চমকে ওঠে সুনেত্র। চা চলকে পড়ে।

এমন করে চোষে আর গুঁতােয় যে বাচ্চা যে মানুষের সে কথা গায়ের জোরে বলতে হয়। আমি সহ্য করতে পারি না। মাথা ঘােরে। অথচ রাস্তার মায়েরা কী নির্বিকার। কিন্তু খুঁটিয়ে দেখলেই দেখবে নারীর মতন অসহায় কে আছে। দিয়ে যাও। কেবল দিয়ে যাও। হাড় মাংস নিংড়ে দাও। কী জ্বালা সুনেত্র আপনি বুঝবেন না। স্লিম ফিগার দাও, ফের ‘ফরেনকাউগুলাের মতন দুধ দাও। সব তাে আমরা পারব না সুনেত্র। দেহ তাে একখানাই।………

………গলগল করে ওরা গলে যেতে লাগল। পাছা ও জংঘার বা উরুতের বিশদ আলােচনা করল। অভিনেত্রী রেখার যােগ-ব্যায়ামের মুদ্রাগুলি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল ওরা। টিভিতে সাবানের ও পানীয়ের অর্ধনগ্ন জলকেলি লক্ষ করল। ওদের ভারী আনন্দ হতে লাগল। দেহে এল ভয়ানক আরাম। ওরা মাথার চুল এলিয়ে দিয়ে খাটে শুয়ে গেল। চোখ মুদে এল। ওরা বিউটি স্লিপ দিল। ওরা জেগে উঠল। দেখতে দেখতে ওরা স্বপ্নের মতাে হয়ে গেল। ওরা আর বাস্তব রইল না। শ্লথ গলায় ওরা সিনেমার মতন কথা বলতে লাগল। হারে! ও কি খুব রােখা ? না। ও কি খুব। ন্যাতানাে? না। ও কি বিকৃত? না। তবে কী ও ? ও খুব ছেলেমানুষ। বােকা। ভ্যাট! হ্যা দিদি। আমি তাের গা ছুঁয়ে বলছি। তা হলে অনেককাল ধরে রাখতে পারবি। কী ? এই যে সব কেমন টসকে দু’দিনে পানসে হয়ে যায় না? স্বামীর অত্যাচারে হয়। সেইকথা বলছি। একটু না-দুই না-দুই থাকা ভাল। সেটা যদি সংস্কার মতন হয়, তাও ভাল। তাতে ফল ভাল হয়। কী রকম হয়? এই ধর অন্য পুরুষরাও গায়ে লাগতে চায়, স্বামী তাতে হিংসে করতে শেখে, সেটাই লাভ, তখন এঁটেল মাটির মতন লেগে থাকে, পালায় না। সেটাই তাে আরাম রে! আসলে আমাদের সংকট কেউ বুঝবে না। একেক সময় মনে হয় দু’পাশে দুই শত্রুর নিয়ে শুয়ে আছি। বাপ খাব খাব করে। ছেলেও করে। দু’পক্ষই নিংড়ে নেবে। তারপর ফেলে দেবে। মাঝে একলা মেয়েমানুষ আমি কী করব?………

……….রাত্রে অরুন্ধতী সুনেত্রর আঁকার ঘরে এসে টেবিলে একটা সাদা পাতায় আঁকিবুকি লক্ষ করে ঘাড় নামিয়ে। তলায় সুনেত্রর নিজস্ব ভাষায় কতকগুলি লেখা পংক্তি চোখে পড়ে। সুনেত্র লিখেছে:

আদিম পৃথিবীর আকাশে ছিল আরও নীল। অত্যন্ত গাঢ় আর প্রসন্ন নীল। মটরশুটির ফুলের চেয়েও নীল। জীবনানন্দের কবিতার মতন নীল। সুনীল গঙ্গোর কবিতার মতন গাঙ্গেয় নীল। সেই আকাশে নীল কস্তুরী আভার চাদ উঠত। সেই চাদের নীচে বনজোছনায় রুপালি শিশিরে ঝলমল করত আর সেখানে শুয়ে থাকত মধ্যরাত্রে এক রূপসী কাজল-পরা হরিণী, গায়ে তার পয়সা ফুলের মতন চিতি গােল দাগ বড়ই মনােহর, সে জাব কাটত স্মৃতির ক্ষরণে আর পুরনাে কথা মনে করত। তার ছিল এক আশ্চর্য সঙ্গমের স্মৃতি, সেই তীব্র মিলনে নাভিতে তার সুগন্ধির জন্ম হয়। এ-ইতিহাস কেউ জানে না। বর্বর বুনাে বনমানুষের সঙ্গম-আর্তনাদে তােলপাড় বনানীর এই হরিণী একদা ভয়ে মূৰ্ছা গিয়েছিল। এই দৃশ্য দেখে সেকালের মানুষ দয়ায় আর্দ্র হয়, সে তখন যৌনবিদ্যা শেখে। বনমানুষ থেকে মানুষ আলাদা হয়ে যায়। তখন নারীর বুকে দুধে আর্দ্র করুণ স্তন প্রস্ফুটিত হয়। তা। ছিল সুগােল অমৃত ফলের মতন রাঙা, লবঙ্গ কুঁড়ির গন্ধ ছিল মিশে, তা খেয়ে পৃথিবীর মানুষের প্রথম প্রসিদ্ধ মস্তিষ্ক তৈরি হয়। তা ছিল শীতল ও অহিংস। আমি অরুন্ধতীদের ঘৃণা করি। কারণ তারা আমার কোনও কাজে লাগে না।………

………অরুন্ধতী দেখে কী বিশাল দেহ। কী প্রচণ্ড অমৃত ফলের মতন সুগােল স্তন, পরিপূর্ণ দুধে স্ফীত, নাভীর কুণ্ড কি মস্ত বিবর। তলপেট কি তীব্র পুরু। উরু কি মারাত্মক থামের মতন কিন্তু অদ্ভুত কোমল। আঙুল দিয়ে ছুঁয়ে ফেলে অরু। হঠাৎ দেখে ঘরে সুনেত্র নেই। নিজেকে ভয়ানক একা মনে হয়। অরুন্ধতী শরীরের কাপড় খুলে ফেলে। সম্পূর্ণ নগ্ন হয়। একবার নিজেকে দেখে, একবার ছবিকে। গলা শুকিয়ে ওঠে। কান্না পায়। অরুন্ধতী কেঁদে ফেলে।…….

………দেখে ইভের পায়ের তলায় কে যেন শুয়ে আছে। তাবত গায়ের কাপড় কোমরে জড়াে করা। বুকের স্তন বুকে শুকিয়ে এসেছে। গা কঙ্কালের মতন কাটা কাটা। সুনেত্র চিনতে পারে না কে এই মহিলা। প্রশ্ন করে, তুমি কে? কঙ্কাল নড়ে ওঠে। চোখ খােলে। কাদবার চেষ্টা করছে। পারছে না।………

 

অরণ্যের জীবন

– অনিল ঘড়াই

……নদী এখানে গভীর হয়ে খামচে ধরেছে পাথর, পাহাড় থেকে ঢলানি জল বেহায়ার মতাে আছড়ে পড়ছে পাথরে। রােদ শুষে নিচ্ছে জল, তবু কলকলানি থামে না জলের। মৃদু স্রোতে শাড়ির পাড় কাঁপে তিরতিরিয়ে। হাঁটু ডােবা জলে পায়ের চেটোটাও দেখতে পায় স্পষ্ট। রুপালি কোনও মাছের মতাে চেটো পাথর কামড়ে ধরেছে। গুরুবারির ওদলা বুকে হাওয়া লাগছে ফরফরিয়ে। এলাে চুল আছড়ে পড়ছে খােলা পিঠে। দু’একটা সূক্ষ্ম কালাে দাগের মতাে সেঁটে গিয়েছে পিঠে। মানুয়া হওয়ার পর থেকে তার শরীর ক্ষয়ে গিয়েছিল ক’বছর। বনের কান্দা খেয়ে আবার জৌলুস ফিরেছে চেহারায়। সােমরা রােজ বলে, মহুয়া খেতে। মহুয়া রসে শরীর সারে। সােমরার ওষুধে কাজ হয়েছে, এখন আর চুল ওঠে না গুরুবারির, চোখের কোল ভরাট হয়ে মুখটা পদ্মপাতা। দুধ আসা বুক মেটে আলুর চেয়ে ভরাট। একটু বেশি সময় মানুয়া দুধ না খেলে বুকের চারপাশটা টনটনিয়ে ওঠে, আপনা থেকে গড়িয়ে নামে শীতল ধারা। বুকের কাপড় ভিজে কষ পড়ে দুধের। হাতে কাজ না থাকলে সেই কষ-দাগের দিকে হাকরে তাকিয়ে থাকে সােমরা। তখন ভীষণ লাজ লাগে গুরুবারির, নিজের মানুষকে মনে হয় পরের মানুষ।

বুকটা ভার হয়ে উঠছিল ক্রমে ক্রমে, অস্বস্তিতে ঘাম এসে সাঁতার কাটছিল শরীরের খাঁজে খাঁজে। প্রায় ঘণ্টা দেড়েক দুধ দেয়নি মানুয়াকে, আসার সময় ছেলেটা ঘুমাচ্ছিল পিপলতলায়। গুরুবারি ভেবেছিল দুধ ধরাবে ছেলেকে কিন্তু তা আর সম্ভব হয়নি সােমরার তাগাদায়। দেরি না করে জল ভেঙে পাড়ে উঠে এল গুরুবারি, বুকের উপর আঁচল চেপে সে নিজের দিকে তাকাল। ভরাট বুক দুটোর কথা ভেবে গর্ব হল তার। হাসি পেল। মানুষও কি তাহলে মহুয়াগাছের মত ফুলে ফেঁপে ওঠে। নদীর পাড়ে হাতছানি দিয়ে ডাকে বিবাগী উদাসী মানুষকে আপন করে পাবার জন্য।……….

………সােমরা অরণ্যের ডাকে সাড়া দেয় না, শুধু মহুয়া ফুলের গন্ধ নাকে পুরাে নিয়ে গুরুবারিকে চৌপায়ায় চটকাতে থাকে পাগলের মতাে, একসময় খাটো ধুতিতে গিট দিয়ে সে উঠে বসে চৌপায়ার উপর, গুরুবারিকে তিরস্কার করে বলে, তুই তাের বেহায়া শরীলটারে ঢাক। আমারে আর নেশা ধরিয়ে দিস নে।

লজ্জিত আহত গুরুবারি আঁচল টেনে ঢাকা দেয় বুকের উপর, শঙ্খলাগা বিক্ষুব্ধ সাপের মত উদগ্র তার চাহনি— কোনওমতে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, আমি মরি তাতে তুমার কী, তুমি আমারে মেরে ফেল।…………

Leave a Reply