হিতােপদেশ – নারায়ণ

›› সম্পুর্ণ গল্প  ›› ১৮+  

বিশ্বের শ্রেষ্ঠ আদি-রসের গল্প

উৎসঃ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ আদি-রসের গল্প
সম্পাদনাঃ সুকান্ত সেনগুপ্ত

॥ এক ॥

গৌড় দেশের অন্তর্গত কৌশাম্বী নগরীতে চন্দন দাস নামে বিগত যৌবন, অর্থবান এক বণিক বাস করতেন। ঐশ্বর্যের অহমিকায় এবং কামপ্রবৃতির পরবশ হয়ে অধিক বয়সেও তিনি দারপরিগ্রহ করেছিলেন। স্ত্রীর নাম লীলাবতী। ক্রমে ক্রমে লীলাবতীর দেহে এল নবযৌবনের জোয়ার। চন্দন দাস স্ত্রীর তীব্র যৌনতৃষ্ণা দূর করতে অসমর্থ। শীতে কাঁপছে যে, জোনাকি কি তাকে তৃপ্তি দিতে পারে। ঘেমে নেয়ে উঠেছে যে, সে যেমন রোদের ছোয়ায় সন্তুষ্ট হয়না তেমনি কামের তাপ প্রশমণে যে স্বামী অপারগ তাকে পেয়ে নারীও সুখী হয় না। এ ক্ষেত্রে নারী পরপুরুষের প্রতি আকৃষ্ট হয়।

চন্দন দাস কিন্তু লীলাবতীকে অত্যন্ত ভালােবাসতেন। কথায় বলে না, বৃদ্ধের কাছে তরুণী ভার্যা প্রাণের চাইতেও বেশি প্রিয় হয়। ফোকলা কুকুর যেমন জিভ দিয়ে মাংস চাটে—ভােগও করতে পারেনা আবার ফেলতেও পারেনা, বৃদ্ধদেরও সেই একই অবস্থা।

যৌবনের প্রখর তাপে তাপিত কামাতুরা লীলাবতী এক বণিক পত্রের প্রেমে পড়ল। বিয়ের পর বাপের বাড়িতে কাটানাে, উৎসবে রকমারি লােকজনের আনাগোনায় নানা জনের সঙ্গে অবাধ মেলামেশা, কুলটা-চরিত্রহীনা রমণীদের সঙ্গে বন্ধুত্ত্ব স্থাপন, পতির বার্ধক্য আর মদ্যপান এবং স্বামী বিরহ যাতনায় নারী কুপথে যায়। নারী যে চিরচঞ্চলা দেবতাদেরও তা অবিদিত নয়। তাই সুরক্ষিত রমণীদের স্বামীরাই এ জগতে সবচেয়ে সুখী।

গরু যেমন নিত্যনতুন তৃণভূমিতে ঘাস খেয়ে বেড়ায় রমণীরাও তেমনি এক পুরুষে আসক্ত থাকতে পারে না-নতুন নতুন পুরুষের সঙ্গ কামনা করে। পরুষ হলাে আগুন আর স্ত্রী ঘিয়ে-ভরা পাত্র। কথায় বলে, নারীর ভূষণ লজ্জা-

লজ্জা আর ভয় নারীকে রক্ষা করে। একথা কিন্তু ঠিক নয়। কামপ্রবৃত্তির অনুপস্থিতিই কেবল নারীর সতীত্ব রক্ষা করতে পারে। কুমারীকে রক্ষা করেন পিতা, যুবতী স্ত্রীকে রক্ষা করেন স্বামী আর বার্ধক্যে রমণী পুত্রের অধীন কেননা নীলােক স্বাতন্ত্র্য লাভের আদৌ উপযুক্ত নয়।

লীলাবতী একদিন সুখশয্যায় বণিক পত্রের সঙ্গে যৌনলীলায় মত্ত ছিল। সহসা স্বামীকে আসতে দেখে বণিক পুত্রকে ছেড়ে সে তাড়াতাড়ি উঠে পড়ল আর স্বামীকে প্রগাঢ় আলিঙ্গনে আবদ্ধ করল। ইত্যবসরে বণিকপত্র চলে গেল। হঠাৎ লীলাবতী তার বৃদ্ধ স্বামীকে জড়িয়ে ধরল দেখে কুট্টনী (দুতী) তাে অবাক। অবশেষে সে সব কিছু বুঝল আর লীলাবতীর কাছ থেকে মােটা রকমের পুরস্কার আদায় করে ছাড়ল।

।।দুই।।

কান্যকুজের রাজা বীরসেন, তুঙ্গবল নামে এক রাজপুতকে বীরপরের শাসক রপে নিয়ােজিত করেছিলেন। তুঙ্গবল বয়সে নবীন, অর্থেরও অভাব নেই, পদমর্যাদাও রয়েছে। একদিন আপন মনে তিনি ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। এই সময় চারুদত্ত নামে এক বণিকের স্ত্রীকে দেখে কামনার আগুনে দগ্ধ হলেন তিনি। সেই রূপসীর নামটিও বড় সুন্দর-লাবণ্যবতী।

কামাসক্ত তুঙ্গবল এক দুতীকে পাঠালেন লাবণ্যবতীর কাছে। পুরুষ ততক্ষণই সুশীল, চরিত্রবান, এবং জিতেন্দ্রয় যতক্ষণ পর্যন্ত না নারীর কটাক্ষ শরে তাকে জর্জরিত হতে না হয়। তুঙ্গবলকে দেখে লাবণ্যবতীর শরীরের কামের আগুন জ্বলে উঠেছিল। দুতীকে বল সে, কি করব বল, আমার কোন উপায় নেই, সতীত্ত খােয়াতে পারব না। পতিগতপ্রাণ নারীই স্ত্রী পদবাচ্য। সতী স্ত্রী প্রতি সর্বদেবতাই তুষ্ট হন। তাই আমার স্বামীর আদেশে ছাড়া আমি কোন কাজই করতে পারব না। দুতী ফিরে গেল, তুঙ্গবলকে সবকিছুই বলল। তুঙ্গবল বললে, আমায় তুমি হাসাতে দেখছি। আমার কামপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করবার জন্যে বণিক তার লাবণ্যময়ী যুবতী স্ত্রীকে আমার হাতে সপে দেবে, এও কি সম্ভব?

দুতী বলে, ধৈর্য ধরন প্রভু। গায়ের জোরে নয়, কৌশল অবলম্বন করতে । পারলে অসম্ভবও সম্ভব হয়ে ওঠে।

দুতীর পরামর্শে তুঙ্গবল লাবণ্যবতীর স্বামীকে কর্মচারীরুপে নিযুক্ত করলেন। একদিন ভুঙ্গবল স্নান সেরে প্রসাধন দ্রব্যে উত্তমরুপে নিজের দেহকে সঞ্জিত ও সেরভিত করে চারুদত্তকে ডেকে বললেন, আজ থেকে একমাস আমি গৌরব্রত করব। প্রতি রাতে একটি যুবতী মেয়েকে আমার কাছে নিয়ে আসবে। আমি শাস্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী তার পূজা করব।

প্রভুর আদেশ মত চারু দত্তও প্রতি রাতে একটি করে যুবতী মেয়েকে নিয়ে আসে। অলক্ষ্যে দাড়িয়ে দেখে তুঙ্গবল মেয়েটিকে স্পর্শ পর্যন্ত করেন না। অনেকক্ষণ ধরে তিনি মেয়েটির পূজা করেন। শেষে তাকে মূল্যবান বস্তু, স্বর্ণালংকার এবং নানাবিধ উপহার সামগ্রী বিতরণ করেন।

অতঃপর লােভী চারুদত্ত একদিন রাতে লাবণ্যবতীকে প্রভুর কাছে সমর্পন করল। কামনার ধনকে কাছে পেয়েতুঙ্গবলের সারা দেহে রােমাঞ্চ জাগল, প্রিয়তমার যৌবনবতী শরীর চুম্বনে চুম্বনে ভরিয়ে দিলেন। আলিঙ্গন-মিলনে ঘেমে নেয়ে উঠল লাবণ্যবতী। আরামে-আনন্দে তার দু’চোখ বুজে আসছিল। সুস্মিতা লাবণ্যবতীর সভােগ-বাসনা জাগল। কোমল সিত শয্যায় শুয়ে পড়ে সে। তুঙ্গবল প্রেয়সীকে আদর করতে লাগল। এদিকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাড়িয়ে থাকে লাবণ্যবতীর স্বামী চারুদত্ত। সে দেখল তুঙ্গবল তীব্র কামলালসায় লাবণ্যবতীর যৌবনের ফসল পুরন্ত স্তন দুটিকে মর্দন করছে।

পরিতৃপ্তির হাসিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে লাবণ্যবতীর মুখশ্রী।

॥ তিন॥

কাঞ্চনপুরের রাজা বীরবিক্রমের জনৈক কর্মচারী এক নাপিতকে বধ্যভূমিতে নিয়ে যাওয়ার জন্যে উদ্যত হলে, এক সাধু, তাকে নিবৃত্ত করলেন। তিনি বললেন, “এর কোন দোষ নেই। শােন, আমি সব বলছি। সিংহলের রাজা জীমুতকেতুর পুত্র আমি। আমার নাম কন্দপকেতু। চতুর্দশীর রাতে মাঝ সমুদ্রে কল্পতরু আর তার নিচে মণিমাণিক্য খচিত স্বর্ণাসনে খচিত উপবিষ্টা বীণাবাদনরতা অপরুপ সুন্দরী এক তরুণীকে দেখা যাবে—একজন বণিকের মুখে এই কথা শুনে আমার কৌতুহল জাগল। আমি বণিকের সঙ্গে তার নৌকায় উঠলাম। মাঝ সমুদ্রে গিয়ে সেই তরুণীকে দেখলাম। তার যৌবনসৌন্দর্যের প্রলােভনে অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা না করেই আমি সমুদ্রে ঝাপ দিলাম। তারপর জানিনা কেমন করে এক সংবণময় দেশে গিয়ে পৌছেছিলাম। সেখানে সােনার প্রাসাদের অভ্যন্তরে, সোনার পালঙ্কে শুয়ে আছে সেই সুন্দরী। ঝলমল করছে তার সােনালী যৌবন। সখীরা পরম সমাদরে আমার সেই মােহিনী তরুণী রঙ্গমঞ্জরীর কাছে নিয়ে গেল। গান্ধবরীতিতে আমাদের বিয়ে হলাে। রঙ্গমঞ্জরীর মধুর সান্নিধ্যে আমার দিন রাতের মল্য গেল বেড়ে। তার যৌবনের গহণ বনে আমার মন গেল হারিয়ে। মিলনে-হাসিতে-খুশিতে আমার দিন কাটতে লাগল। একদিন রঙ্গমঞ্জরী আমায় বলল, আমার মাঝে তুমি, তােমার মাঝে আমি হারিয়ে গেছি। এখানের সবকিছুই তােমার। এখানে সংঘাত নেই, রয়েছে শাস্তি। রয়েছি আমি, তােমার রঙ্গমঞ্জরী। আমাকে নাও-আরাে নিবিড় করে, আরাে গভীর করে গভীরে। আমার পাত্র ভরে দাও তােমার অনিরসে। কিন্তু দোহাই তােমার দেয়ালে বর্ণরেখার ঐ চিত্রটি যেন স্পর্শ করাে না!’ শিশুদের মতাে নিষেধ না মানার একটা প্রবণতায় আমায় পেয়ে বসল। আমি ঐ ছবিটি ছুলাম। অমনি বর্ণরেখার নয়নরেখার কোমল চরণের মৃদু আঘাতে আমি আবার আমার রাজত্বে ফিরে এলাম। কিছুই আর আমার ভালাে লাগে। রঙ্গমঞ্জরীর রুপ, সধা, যৌবনের গন্ধ আমার পঞ্চেন্দ্রিয়কে চঞ্চল করে তুলল। মনে হলাে তাকে ছাড়া অর্থহীন এ জীবন। অবশেষে সন্ন্যাসী হয়ে দেশে দেশে ঘতে লাগলাম।

গত সন্ধ্যায় আমি এক গােপগহে আশ্রয় নিয়েছিলাম। গভীর রাতে গৃহকর্তা তার বন্ধুর মদের দোকান থেকে বাড়ি ফিরে তার চরিত্রহীনা যুবতী স্ত্রীকে দুতীর (কোন এক নাপিতের স্ত্রী) সঙ্গে গুজগুজ করতে দেখে রেগে গিয়ে বলে, ‘খুব রস হয়েছে না’। সে থামের সঙ্গে দড়ি দিয়ে তার স্ত্রীকে আষ্টে পন্তে বেধে রেখে শুতে গেল।

কিছুক্ষণ পরে দুতী এসে পুণরায় বলে,’ তোমার উপপতি তােমার দেহকামনায় উম্মত্ত হয়ে উঠেছে। তুমি না গেলে নির্ঘাত সে বেচারা মারা যাবে। শােকসন্তপ্ত হয়ে তাই তােমার কাছে ছুটে এলাম।

গােপবধু বলে, আমার দেহেও তাে আগুন জলছে। কিন্তু কি করব বল। দেখছ তাে আমার অবস্থা।

দুতী বললে, এক কাজ কর। আমি নিজেকে থামে বেধে রাখছি। তুমি চটজলদি তােমার তাপ মিটিয়ে ফিরে এস।

দুতী সেই নাপিতের স্ত্রী গােপবধুর বন্ধন মােচন করে নিজেকে থামের সঙ্গে বেধে রাখল। একটু পরে গােপ এসে বলে, “কি হলাে নাগরের কাছে গেলি না।

বধুকে চুপ করে থাকতে দেখে, উত্তেজিত গােপ বললে, রপের দেমাকে আমার কথার উত্তর পর্যন্ত দিচ্ছিস না। দাড়া মজা দেখাচ্ছি। গােপ একটা দা দিয়ে নিজের স্ত্রী মনে করে দুতীর নাক কেটে ঘুমুতে গেল।

মিলনাস্তিক তৃপ্তি আর শ্রান্তি নিয়ে বাড়ি ফিরল গােপিনী। দুতীর অবস্থা দেখে দুঃখ পেল। দুতী নিজে মুক্ত হয়ে, গােপিনীকে থামে বেধে নাকের টুকরাে হাতে নিয়ে চলে গেল। সকালে প্রতি দিনের মতাে নাপিত তার কাছে ক্ষৌর পাত্র চাইল। নাপাতনী শুধু ক্ষুরটা দিল। রেগে গিয়ে নাপিত ক্ষরটা ছুড়ে ফেলল। সঙ্গে সঙ্গে নাপতিনী চেচিয়ে ওঠে, “দেখ তুমি কি করেছ। আমার নাক কেটেছ।’ তারপর ‘ওমা, আমার কি হবে গাে, মিনসে আমার নাক কেটেছে’—বলে কাঁদতে কাঁদতে বিচারকের কাছে গেল নাপতিনী।

রাত্রিশেষের আলো-আঁধারিতে গােপিনী তার স্বামীকে বলে আমি যদি সত্যিই সতী হই, তাহলে আমার কাটা নাক আবার জোড় লেগে যাবে। দীপের আলােয় সেই গােপ দেখে তার স্ত্রীর নাক অক্ষতই রয়েছে। নিবেধি গােপ তার স্ত্রীর চরণে প্রণত হয়ে ক্ষমা চাইল। বললে, “তােমার মতো স্ত্রী পেয়ে, ধন্য আমার জীবন।

॥ চার ॥

যৌবনশ্রী নগরীতে একজন লােক ছিল—রথ তৈরী করে জীবিকা নির্বাহ করত সে। তার স্ত্রী ছিল কলঙ্কিণী। রথনির্মাতা বহুদিন ধরে তার স্ত্রীকে হাতে-নাতে ধরার জন্য চেষ্টা করত। কিন্তু কিছুতেই ধরতে পারত না। এক দিন সে এক মতলব আটল। স্ত্রীকে বলল সে, “বিশেষ কাজে অন্য গ্রামে যাচ্ছি আজ আর ফিরব না। সামান্য একটুখানি গিয়ে ফিরে এসে অতি সন্তর্পনে খাটের তলায় ঢুকে পড়ল সে। এদিকে তার কুলটা স্ত্রীর আর আনন্দ ধরে না। প্রেমিককে খবর পাঠাল সে, দেরি না করে চলে এস। বাড়িতে আমি একেবারে একা। তােমার জন্যে সেজে-গুজে অপেক্ষা করছি। সারা রাত আজ শুধু খেলব, আনন্দ করব। ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে তার প্রেমিক সন্ধ্যে বেলাতেই হাজির হলাে। হাস্যেলাস্যে-কলকাকলিতে তারা মিলন-রজনীতে মধুর শিহরণ অনুভব করতে লাগল। সহসা ক্রীড়াযুক্ত স্ত্রীর কোমল পদ পল্লবে খাটের তলায় গা ঢাকা দেওয়া তার স্বামীর অঙ্গের সামান্য একটু ছোঁওয়া লাগল। সুচতুরা শ্রী মুহূতেই সব কিছু বুঝে নিল। ফলে মিলনের, মদির মুহূর্তে পড়ল ছেদ। বিরক্তিতে ভরে ওঠে প্রেমিকের মন। রুক্ষ গলায় বললে সে, হঠাৎ তােমার কি হলো? এমন ঠাণ্ডা মেরে গেলে যে। আবেগে ভাটা পড়েছে—তােমাকে কেমন যেন অন্যমনস্ক লাগছে। কি ভাবছ ?

সে বলে, ‘কুমারী অবস্থায় প্রথম যাকে দেহদান করে মিলনের প্রথম রোমাঞ্চ অনুভব করেছিলাম, আমার সেই প্রাণপ্রিয় স্বামী আজ অন্য গ্রামে গেছেন। বিদেশ-বিভই জায়গা, না জানি কি কষ্টটাই না পাচ্ছেন তিনি। হয়তাে তার আশ্রয় মেলেনি, আহার জোটেনি।

তার প্রেমিক বলে, ‘স্বামীর ওপর তােমার এত টান।

রথ-নিমাতার স্ত্রী বলে, স্বামীই তাে স্ত্রীর যথার্থ অলংকার। তিনি রুঢ় আচরণ করলেও সাধবী স্ত্রী রুষ্ট হয় না। স্বামীকে যে স্ত্রী সত্যিকারের ভালােবাসে দেব-দেবীর তার প্রতি প্রীত হন। স্বামীর সঙ্গে সহমরণে স্ত্রীর অক্ষয় স্বর্গলাভ হয়। ফুলমালা এবং তাম্বুলের মতাে মাঝে মাঝে আমি তােমার সঙ্গ কামনা করি। মন স্বভাবতই চঞ্চল। তাই চাঞ্চল্যের বশেই এক এক সময়ে তােমার সঙ্গ পেলে আনন্দ পাই। দু’দণ্ড গল্প করতে কার না ভালো লাগে। স্ত্রীর কথায় নির্বোধ রথনির্মাতা নিজেকে ভাগ্যবান মনে করল আর আনন্দের আতিশয্যে তার স্ত্রী আর উপপতি সমেত খাটটিকে মাথায় তুলে নাচতে লাগল।

॥পাঁচ॥

বিক্রমপুরে এক সওদাগর বাস করত। তার নাম সমুদ্র দত্ত। সমুদ্র দত্তের স্ত্রী প্রভা গােপনে এক ভৃত্যের সঙ্গে মিলিত হতাে। বাস্তবিক নারীরা প্রিয় অপ্রিয়ের বােধ রহিত এক আশ্চর্য সষ্টি। তারা কেবল নিত্যনতুন সঙ্গী কামনা করে।

সমুদ্র দত্ত একদিন দেখলেন, যে তার স্ত্রী সেই ভৃত্যকে চুম্বন করছে। রঙ্গপ্রভাও তার স্বামীকে দেখতে পেল। সে ছুটে এসে বলল, ‘অনেক দিনই সন্দেহ করেছি আজ মুখ শুঁকে টের পেয়েছি। রােজই তােমার বিলাসী ভৃত্য কর্পুর চুরি করে খায়।

শাস্ত্রে যথার্থই উক্ত হয়েছে-পুরুষের তুলনায় স্ত্রী দ্বিগুণ বেশি আহার করে, তাদের ধীশক্তি ও উপস্থিত বুদ্ধি পুরুষের তুলনায় চারগুণ বেশি, শ্রমের ক্ষমতা ছয়গুণ অর যৌন লিপ্সা আটগুণ বেশি।

রত্নপ্রভার কথায় ভৃত্যও সঙ্গে সঙ্গে বলে ওঠে, “যেখানে কৃপণ আর সন্দেহ বাতিকগ্রস্ত প্রভুপত্নী ভৃত্যের মুখ শুকে দেখে কর্পুর খেয়েছি কিনা, সে বাড়িতে আমি আর কাজ করব না।’

বলাবাহুল্য সওদাগর তার ভৃত্যকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে পুণরায় কাজে বহাল করলেন।

One thought on “হিতােপদেশ – নারায়ণ

Leave a Reply