হরিদাসের গুপ্তকথা – ভুবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায়

›› উপন্যাসের অংশ বিশেষ  

……….গিন্নির গড়নটা একটু মাঝারি ধরণের, বর্ণটা ঈষৎ ফ্যাকাসে ও চক্ষু হটা ভাসা-ভাসা, কিন্তু একটু কোঠগত এব. কাজলের ন্যায় ঈষৎ কৃষ্ণবর্ণ রেখায় অঙ্কিত।. গিন্নির খুব ক’সে কাপড় পরা অভ্যাস, কাজেই কটীদেশ ক্ষীণ, হাত-পাগুলি গোলগাল, ঠোট দু’খানি পাতলা ও বক্ষঃস্থল বেশ উন্নত। দেখিলে বােধ হয় মা ষষ্ঠীর কৃপা হ’তে বঞ্চিত হয়েছেন, অর্থাৎ দেহ বৃক্ষে কখন কোন ফল ফলে নাই।…….

………পূৰ্বেই উক্ত হইয়াছে যে, গিন্নীর কন্যার বয়স প্রায় ১১/১২ বৎসর, নাম নিৰ্মলা। সূৰ্যকিরণ পতিল হইলে হীরক যেরূপ সমুজ্জ্বল হয়, সেইরূপ ভাবী-নৌবনের ঈষৎ ছায়ায় নিম্মলার রূপের প্রভা যেন সমধিক পরিবর্ধিত হইয়াছে ; অথচ বালিকা সুলভ চাপল্য এখন সম্পূর্ণরূপে তিরােহিত হয় নাই। বসন্তের আগমনের অনতিপূর্বে যেমন মলয় মারুত প্রবাহিত হইয়া তাহার শুভাগমন জগতে বিজ্ঞাপিত করে, তেমনি নিম্মলার যৌবনােগমের প্রারম্ভেই যুবতার নিত্যসহচরী লজ্জা আসিয়া তাহার সুকোমল দেহটি আক্রমণ করিয়াছে।বাস্তবিক পূর্ণযৌবনের সুষমা অপেক্ষা এরূপ ফুটিতন্মুখ যৌবনের সৌন্দৰ্য্য সমধিক মনােরম ও নয়নের প্রতিপ্রদ। ইহাতে যৌবনসুলভ গর্বের নাম গন্ধ নাই, কিন্তু সরলতার প্রাচুর্য আছে ; যৌবনের সেই লালসাপরিপূর্ণ কটাক্ষে প্রাণের মধ্যে তুষের আগুণ| প্রজ্জ্বলিত করে; কিন্তু কুটীলবিহীন অচঞ্চল এইরূপ কটাক্ষে হৃদয় তিন হয় ও অভূতপূর্ব আনন্দ উদয় হইয়া থাকে।……..

………..নিৰ্মলা একটু দীর্ঘাঙ্গা; কিন্তু তাতেই তাহার স্বর্গীয় সৌন্দর্য আরও পরিবর্ধিত হইয়াছে। নবীন-নীরদনিত দুর কৃষ্ণ-কেশ-কলাপ নিতম্ব চুম্বিত; বর্ণ বিশুদ্ধ সুবর্ণ অপেক্ষা সমুজ্জ্বল, কানের কোদণ্ডসন গুগল পরস্পর সংযুক্ত; কুরঙ্গনিন্দিত অকর্ণ-বিস্তৃত নয়নযুগল বেন লাবণ্যসাগরের বিকসিত পদ্ম ; রতিকান্তর কেতন স্বরূপ সুগঠন নাসিকাটি সমােন্নত, অধরদ্বয় পৰু বিশ্বসম আরক্তিম ; ফলতঃ শারদীয় শশিতুল্য সেই নিরমল বদনমণ্ডল বিধাতার শিল্পনৈপুণ্যের যে পরাকাষ্টা, তাহাতে আর অণুমাত্র সন্দেহ নাই। কণ্টক পরিপূর্ণ মৃণালের ন্যায় সুললিত বাহুযুগল তাহার সুন্দর দেহের অনুরূপ ; অঙ্গুলিগুলি চম্পকদাম সদৃশ, কটী ক্ষীণ, নিতম্বদেশ বর্ধিতােখ, কদম্ব-কোরকসম বক্ষস্থল ঈষৎ উন্নত ; যেন অভ্রভেদী পৰ্বত উৎপন্ন হইবার প্রথম স্তর পড়িয়াছে।……….

……….ফুলকুমারীর মুখখানি চাদের মতন বটে, কিন্তু অমাবস্যার ; কোটর প্রবিষ্ট সেই ছােট ছােট চোখ দুটি দেখে মনের খেদে হাতী নিবিড় বনে গিয়ে প্রবেশ ক’রেছে , কুচও লজ্জায় সুটির মধ্যে লুকাইয়া আছে। নাটি তিল ফুলের মতন নয় বটে, কিন্তু টেয়া-পাখীর ঠোটের অনুরূপ……..

……..যুগল জ্ঞাতি-বিবাদে মত্ত হইয়া পরস্পর পৃথক্ হইয়া আছে ; শ্ৰীমতার ওষ্ঠদ্বয় যেন সুদূর আফ্রিকাখণ্ড হইতে হাওলাৎ করিয়া আনিয়াছে। | ফুলকুমারীর কুচযুগ পৰ্বত শিখরের মতন উচ্চ নহে বা তা দেখিয়া কস্মিন্ কালেও কোন দাড়িম্ব বিদীর্ণ হয় নাই ; কারণ শ্ৰীমতীর পােধর যুগল নাভী-সরােবরে স্নান করিবার জন্য অনেক দিন হইল যাত্রা করিয়াছে।………..

……..এই রমণী যে মুসলমানি, তাহা তাহার কথাবার্তা শুনিয়া ও কাপড় চোপড় পরার কায়দা দেখিয়া স্পষ্ট বুঝিতে পারিলাম। বয়স প্রায় ত্রিশ কৎসরের কাছাকাছি হবে, কিন্তু সাজগােজে ধরণ ধারণে, যৌবনটাকে অতি কষ্টে ঠেকে দিয়ে রেখেছে।……….

2 thoughts on “হরিদাসের গুপ্তকথা – ভুবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায়

Leave a Reply