সাইকেল – বুদ্ধদেব গুহ

›› গল্পের অংশ বিশেষ  

……..কেতাে উঠে বসল বিছানাতে। যমুনা একটা কালাে আর হলুদ ডুরে শাড়ি পড়েছে। এইটেই তার সব চেয়ে ভালােবাসার শাড়ি। আর যা আছে, সই আটপৌরে। আজ বাপের বাড়ি গেসলাে বলে শায়া আর বেলাউজও পরে গেছিলাে। অন্য দিন শুধু গায়েই শাড়ি জড়িয়ে থাকে। ঘরে ঢুকেই, তাড়াতাড়ি, দরজা বন্ধ করলাে। হ্যারিক্যানের আলোটা পড়েছে যমুনার কালাে মস্ত বড় খোঁপাটাতে আর শাড়ির পেছনে। ছ’ মাসের পুরনাে বউ, তবু শালা যেন রােজ রাতেই মনে হয় আনকোরা নতুন। যমুনার গায়ে পদ্মদীঘির শাপ” গন্ধ। তার বুকের মধ্যে যখন ওর নিজের ঠোট চেপে ধরে কেতাে, তখন মনে হয় ডাগ: ডাগর পদ্ম দুটির মধ্যে থেকে পদ্মবীজই কুড়িয়ে খাচ্ছে যেন। কত সব গন্ধ, দৃশ্য; বার বার দেকে-“কেও ফুরােয় না।…..

……..ধ্যাত…। লজ্জা পেয়ে বললাে যমুনা। বলেই, যমুনা ঘরের এক কোণাতে, যেখানে দুটি হেঁড়া শাড়ির পাড়ের চাদর-ঢাকা তােরঙ্গ পর পর সাজানাে আছে, সেখানের আবছা অন্ধকারে গিয়ে দাঁড়িয়ে নিজেকে চকিতে অনাবৃত করেই বাড়িতে পরার চাঁপা রঙা একটি শাড়ি গায়ে জড়িয়ে নিলাে। উদলা গায়ে। বাদলারাতে গা-শিরশির করে উঠলাে ওর। শিরশির করে নানা কারণে।

যমুনা খাটে আসতে গড়িমসি করছিল। বিনুনি থেকে রুপােলি জরির ফিতে খুলছিল। আস্তে আস্তে। ডানদিকের বেণী থেকে ভােলা হয়েছে সবে, কেতাে একলাফে খাট থেকে নেমে ঝড়ের মত গিয়ে পড়ল তার উপর। পাঁজাকোলা করে যমুনাকে তুলে নে এসে খাটের উপর ফেলল দড়াম করে। মাটির ঘর কেঁপে উঠল যেন।

তারপর? তারপর, যাহয় তাইই… মাটির ঘর সােহাগে কাঁপতে লাগল।

যমুনার ডান বুকের উপর ডান হাত কেতাের। চাষার হাত। রুক্ষ্ম, কর্কশ, মােটা চামড়ার তেলাে। কিন্তু যমুনার শরীরে তাে এর আগে অন্য কেউই হাত দেয়নি। যমুনার এইই খুব ভালাে লাগে। কেতাে তাকে খুব ভালােবাসে। অন্তত তার শরীরটাকে। ঐ হলাে ! ওতেই। খুব খুশী যমুনা। ছােটবেলায় মা-বাবা মরা মেয়ে আদর কাকে বলে তাইই জানেনি কখনও। কোনােরকম আদরই নয়। তার কাছে শরীরের আদরও অনেক আদর। কাজকর্ম খাটাখাটুনির , মধ্যে ডুবে গিয়ে কখন কেতাের সােহাগ খাবে ঘরে গিয়ে, সেই আশায় প্রদীপের সলতের মত কাঁপে যমুনা।……

Leave a Reply