সব কিছু ভেঙে পড়ে – হুমায়ুন আজাদ

›› উপন্যাসের অংশ বিশেষ  ›› ১৮+  

…….আমাদের কাজের মেয়ে, যে আমার থেকে অনেক বড়ো ছিলো, কদবানের বুক ভরে দুটি সবুজ পেঁপে,–সে ঘর ঝাট দিচ্ছে, তার সবুজ পেঁপে কাঁপছে, সে গোসল করে আমার সামনেই লাল গামছা দিয়ে মুছছে পেঁপে, আমি অন্ধ হয়ে যাচ্ছি। আমার অন্ধ চোখের কথা কেউ জানে না, কদবান কখনো টেরও পায় নি।…..

…..শালু ফুপুকে দেখলে আমি মাটির দিকে তাকিয়ে থাকতাম। চকচকে কালো ছিলো তার গায়ের রঙ, বুক দুটি সাংঘাতিকভাবে উঁচু, আর পেছনের দিকটা ভয়ঙ্কর; সে এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি ঝড়ের বেগে যেতো, তার বুক ঢেউয়ের মতো কাঁপতো, তার পেছনটা নৌকোর মতো দুলতো; সে গিয়ে দাঁড়াতে কারো রান্নাঘরের দরোজায়, কারো বড়ো ঘরের দরোজায়, উঁচু গলায় কথা বলতো; আবার ঝড় জাগিয়ে অন্য কোনো বাড়িতে যেতো। আমি একদিন শুনতে পাই বাবা তাকে ডাকছেন কালো শশী বলে।…..

…..শেফালি হাসান ভাইয়ের জন্যে উঠোনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। শেফালি চুল আঁচড়ে বুকের ওপর দিয়ে ছড়িয়ে দিয়েছে। হাসান ভাই যেতেই শেফালি তার হাত ধরে তাকে ঘরে নিয়ে যায়, হাসান ভাই বুঝতে পারে শেফালি কী চায় হাসান ভাইয়ের কাছে। হাসান ভাই শেফালিকে জড়িয়ে ধরে, শেফালির ব্লাউজ খুলে ফেলে, দুধে হাত দিয়ে দেখে মাখনের মতো নরম।…..

…..আম্বিয়াও সেখানে গরু চরাতে। মেয়েটা একেবারেই অন্য রকম ছিলো, ওর বাবার সাথে আমাদের বাড়ি কখনো দুধ কখনো চিংড়ি মাছ বেচতে আসতো। ওর বাবা ছিলো একেবারে বুড়ো, খালে চিংড়ি ধরে বেচতো, দুধও বেচতো; গরু চরানোর দায়িত্ব ছিলো আম্বিয়ার। কাউকে দেখলেই সে ফিকফিক করে হাসতো, ঠিকমতো কথাও বলতে পারতো না। একটা ছেঁড়া কাপড় পরতো সে, তার বুক পিঠ সবই দেখা যেতো। আমার সমান বয়সই তার, আমার বয়সের মেয়েদের বুক উঁচু হয়েছে সারা গ্রাম ভরে, তারা যত্নের সাথে বুক ঢেকে রাখছে, কিন্তু আম্বিয়ার কোনো বুক ছিলো না; তাই ঢাকার কথাও সে ভাবে নি। তার মুখটা বাঁকা। তার দিকে তাকাতেও ইচ্ছে হতো না। এক দুপুরে আমি ওই মাঠে গেছি, গিয়ে দেখি আমাদের গ্রামের কয়েকটি বড়ো বড়ো ছেলে, যাদের আমি দাদা বলি, আম্বিয়াকে কোলে করে জঙ্গলের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আম্বিয়া চিৎকার করছে না, গালি দিচ্ছে মাঝেমাঝে। তারা আম্বিয়াকে নিয়ে জঙ্গলের ভেতরে ঢুকে গেলো। আমি দাঁড়িয়ে রইলাম, কোনো চিৎকার শুনতে পেলাম না। কিছুক্ষণ পর ওই ছেলেরা আর আম্বিয়া জঙ্গলের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো। আমি ভেবেছিলাম সে কাঁদতে থাকবে, কিন্তু। দেখি সে খলখল করে হাসছে। আমাকে দেখে বললো, তুই আইলি না ক্যান, তর ইচ্ছা অয় না? সে খলখল করে হাসতে হাসতে তার গরুটাকে নতুন জায়গায় গোছর। দিতে দিতে বলে, কাইল তুইও আহিছ।…..

……সে-সন্ধ্যায় হাসান ভাইয়ের ঘরে না গেলে ভালো হতো, কিন্তু আমি যে গিয়েছিলাম এতে আমার কোনো অপরাধবোধ হয় নি; বরং মনে হয়েছে না গেলে আমি জীবনের একটি সোনালি খণ্ড হারাতাম। এমন সুন্দর একটি দৃশ্য কখনো দেখতে পেতাম না। সে-দিন ঈদের চাঁদ উঠেছিলো, আমার রক্তে ঝলক লেগেছিলো; চাঁদ ওঠার সন্ধ্যায় আমি বন্ধুদের সাথে বাড়ি বাড়ি বেড়ানোর অধিকার পেতাম। বাড়ি বাড়ি বেড়িয়ে সন্ধ্যার বেশ পরে ঘরে ফিরে দেখি বাবা নেই, মা শুয়ে আছে, ঈদের সব আয়োজন করা হয়ে গেছে, এবং আমার কিছু করার নেই। তখন আমি হাসান ভাইদের দোতলায় যাই, সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠি, হাসান ভাইয়ের ঘরের দরোজা ঠেলে ঢুকি। আমি ঢুকতেই হাসান ভাই আর কদবান মেজে থেকে লাফিয়ে ওঠে। দুজন উলঙ্গ মানুষকে লাফিয়ে উঠতে দেখে আমার খুব ভালো লেগেছিলো। হাসান ভাই তার লুঙ্গিটা ধরে খাটের ওপর উঠে দুটি বালিশ জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে। আমি দাঁড়িয়ে থাকি। কদবান তার শাড়ি আর ব্লাউজ পরার চেষ্টা করে। তার নতুন লাল শাড়ি আর ব্লাউজ থেকে একটা অদ্ভুত সুগন্ধ ভেসে আসতে থাকে আমার দিকে। কদবান শাড়ি পরতে গিয়ে বারবার ভুল করে, তার শাড়ি খসে পড়ে যেতে থাকে। তার বুকের সবুজ পেপে দুটি দেখে আমার চোখ মুগ্ধ। হয়, এই প্রথম আমি চোখের সামনে সম্পূর্ণ মুক্ত বুকের পেঁপে দেখতে পাই, কদবান কিছুতেই ব্লাউজ পরে উঠতে পারে না, পরার চেষ্টা করতেই তাঁর সবুজ পেঁপের বাগান ভয়ঙ্করভাবে কেঁপে ওঠে। কদবানের পেঁপের দিকে লক্ষ বছর ধরে আমার থাকিয়ে থাকার ইচ্ছে হয়; কিন্তু আমি বেরিয়ে আসি।…..

…..কদবানের জন্যে শোকে আমার বুক ভরে গিয়েছিলো, আমি তার ঝকঝকে কালো রঙের সৌন্দর্য দেখে দেখে বেড়ে উঠেছিলাম, তার সবুজ পেঁপে আমার চোখে রূপের বন্যা বইয়ে দিয়েছিলো। কদবানকে মনে হলে আজো আমার চোখের সামনে সবুজ পেঁপেভরা পেঁপে গাছ দুলে ওঠে।…..

…..আমাকে দেখে মিষ্টি করে হাসতেন তিনু আপা। আমি মাথা নিচু করে মাটির দিকে তাকাতাম, দেখতাম তার পায়ের পাতার আলোতে মাটি দুধের মতো হয়ে গেছে। তিনু আপা কখনো হাত উঁচু করে ডালিম গাছের ডাল ধরে কথা বলতেন আমার সাথে, আমি দেখতাম তার লাল ব্লাউজ উপচে ঘন দুধ গলে পড়ছে। তিনু আপা একবার আমার হাত দেখতে চেয়েছিলেন, আমি হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম, তার আঙুলগুলো আমার আঙুল আর মুঠোতে ঘন দুধের মতো জড়িয়ে যাচ্ছিলো; আমি মনে মনে চাইছিলাম তিনু আপা যেনো আমার হাত কখনো না ছাড়েন। তিনু আপার সাথে আমি এক্কাদোক্কা খেলতাম কখনো কখনো, আমি মনপ্রাণ দিয়ে খেলতাম, কিন্তু আমার খেলার থেকে তিনু আপার খেলা দেখতেই বেশি ভালো লাগতো। তিনু আপা যেভাবে চাড়া ছুঁড়তেন, তার ডান হাত যেভাবে নিচু থেকে ওপরের দিকে উঠতো, চাড়া কোনো ঘরে পড়ার পর তার ঠোঁট যেভাবে নড়তো, তাতে আমার নিশ্বাস থেমে যেতে চাইতো। সবচেয়ে সুন্দর ছিলো ঘর থেকে ঘরে তাঁর লাফিয়ে চলা। তিনি যখন ঘর থেকে ঘরে লাফিয়ে যেতেন, একটুও শব্দ হতো না; তার পা একরাশ শিউলিফুলের মতো মাটির ওপর ঝরে পড়তো, তিনু আপা মাটির ওপর শিউলি ঝরিয়ে ঝরিয়ে ঘর থেকে ঘরে লাফিয়ে যেতেন। লাফানোর সময় তার শরীরটি ঢেউয়ের মতো দুলতো, আমি চোখের সামনে দুধসাগরের ক্ষীরসাগরের ঢেউ দেখতে পেতাম; বাড়ি ফিরে ঘুমিয়ে পড়ার পরও আমার চোখে দুধসাগর ক্ষীরসাগর দুলতে থাকতো। দুধের ঢেউয়ের মতো আমার চোখে ঘুম নামতো।…..

…..আমরা কি আর কিছু করবো? রওশন তখন ব্লাউজ পরবে, লাল ব্লাউজ পরবে, ব্লাউজের ওপর দিয়ে তার গলা দেখা যাবে, তার গ্রীবা দেখা যাবে। আমি কি কখনো তার ব্লাউজ খুলবো? না, না, না; আমি কখনো তার ব্লাউজ খুলব না, রওশন কী মনে করবে, রওশন আমাকে খুব খারাপ মনে করবে; আমরা অতো খারাপ হবো না। বিয়ে হলে লোকেরা ন্যাংটো হয়ে শোয়, তারা খুব খারাপ কাজ করে, রওশন আর আমি কখনো ন্যাংটো হবো না, কোনো খারাপ কাজ করবো না; আমরা চুমো খাবো-রওশন আস্তে আমার গালে ঠোঁট ছোঁয়াবে, আমি আস্তে রওশনের গালে ঠোঁট ছোঁয়াবো, তাতেই আমাদের ঘুম এসে যাবে, আমরা পাশাপাশি ঘুমিয়ে পড়বো, জেগে উঠে দেখবো আমরা পাশাপাশি শুয়ে আছি, আমাদের একজনের হাতে আরেকজনের হাত। রওশন যদি কখনো ব্লাউজ পরতে গিয়ে পরতে না পারে, যদি আমার চোখের সামনে তার দুধ দুলে ওঠে? আমি চোখ বন্ধ করে ফেলবো, আমি অতো অসভ্য হতে পারবো না, আমরা কোনো অসভ্য কাজ করবো না, আমরা শুধু হাত ছুঁয়ে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকবো, আমরা শুধু ভালোবাসবো।….

…..কিন্তু আমরা ভোরবেলা গোসল করবো কেনো? সারারাত জেগে জেগে কথা বলতে বলতে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়বে বলে? নাকি বিয়ে করলে ভোরবেলা গোসল করতে হয় বলে? না, ওই বইটায় যে-কথা লিখেছে, সে-জন্যে? আমরা অমন কাজ কখনো করবো না। কিন্তু রওশন যদি চায়? রওশন কি অতো খারাপ হবে? রওশনের সামনে আমি কখনো কাপড় খুলতেই পারবো না, আমার ভীষণ লজ্জা লাগবে; আমি কখনো রওশনকে উলঙ্গ দেখতে পারবো না। কিন্তু রওশন যে লিখেছে, তুমিই পান করবে আমার যৌবন সুধা, তা আমি পান করবো কীভাবে? কীভাবে রওশন আমাকে পান করতে দেবে তার যৌবন সুধা? যৌবন তো আসবে আমাদের দুজনেরই, এসে যাচ্ছে দুজনেরই, কিন্তু কোথায় জমছে কোথায় জমবে সুধাঃ রওশনের সুধা কোথায় জমবে? আমার হাতে আমি দুটি কোমল গন্ধমের ভয়ঙ্কর কোমলতা অনুভব করি, যেখানে একদিন রওশন স্থাপন করেছিলো আমার হাত, সুধা কি জমবে সেখানে? তাহলে তো রওশনের অনেক সুধা জমে গেছে, সুধা তার বুক হয়ে ফুলে উঠেছে। আমি কি পান করবো ওই সুধা, ওই সুধা পান করবো আমি? আমি আর ভাবতে পারি না, আমার রক্ত এলোমেলো হয়ে যায়।…..

…….রওশন, একটি চিঠিতে লিখেছে, আমাকে তোমার কেমন লাগে, আমার মুখ তোমার কেমন লাগে, আমার ঠোঁট তোমার কেমন লাগে, আমার চুল তোমার কেমন। লাগে, আমার চিবুক তোমার কেমন লাগে, আর আর আর আর আমার আমার আমার আমার আমার আমার বুক তোমার কেমন লাগে? এটুকু পড়ে আমার চারপাশ দপ করে জ্বলে ওঠে, আমি আগুনের মধ্যে পড়ে যাই, জ্বলতে থাকি…..

…..রওশন বলছে, তুমি দেখবে না?

দেখবো, আমি বলি।

রওশনের কামিজের পেছনে স্বপ্নের ঘোরে বারবার পথ হারিয়ে ফেলতে ফেলতে। আমি হাত বুলোই; বোতামগুলোকে একেকটি সোনার তালা মনে হয়; একটি একটি করে খুলতে চেষ্টা করি আমি, আমার আঙুল কাঁপতে থাকে, সারা শরীর কাঁপতে থাকে, রওশন চোখ বুজে আছে, একটি একটি করে সিন্দুকের সোনার তালা খুলছি আমি। আমি রওশনের কামিজ টেনে নিচের দিকে নামাই, মনে হয় হাত দিয়ে আমি মেঘ সরিয়ে দিচ্ছি, আমার হাত কাঁপতে থাকে। রওশনের ধবধবে কাঁধ থেকে আমার চোখে চাঁদের বন্যার মতো মাংসের আলো ঢুকতে থাকে। রওশন একটুও নড়ে না। আমি কামিজের মেঘ টেনে আরো নিচে নামাই; আমার চোখের সামনে দুটি চাঁদ জ্বলে ওঠে, দুটি শুভ্র পদ্ম স্থির হয়ে ফুটে ওঠে। বাঁ দিকের চাঁদটিকে একটু ছোটো মনে হয় ডান। দিকের চাঁদের থেকে। মহাকালের মুখোমুখি আমি দাঁড়িয়ে আছি, আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি। আমার ছুঁতে ইচ্ছে করে ওই চাঁদ, ওই পদ্ম; কিন্তু রওশন ছুঁতে নিষেধ করেছে, আমি ছুঁই না; আমি শুধু অন্ধ চোখ দিয়ে যুগল চাঁদ যুগল পদ্ম দেখতে থাকি। আমার চামড়া ফেটে শরীরের সব দিক থেকে রক্ত ফিনকি দিয়ে বেরোতে চায়; পদ্মার ঢেউয়ের ওপর আমি একটি ছোট্ট নৌকো প্রাণপণে চেষ্টা করতে থাকি নিজেকে সমস্ত ঢেউয়ের মধ্যে স্থির করে রাখতে।

তুমি কি আমাকে দেখছো? রওশন জিজ্ঞেস করে।

দেখছি, আমি বলি, কিন্তু মনে হচ্ছে আমি কিছু দেখতে পাচ্ছি না।

তুমি কি অন্ধ হয়ে গেছো? রওশন বলে, এবং চোখ খুলে আমার মুখের দিকে তাকায়।

আমি রওশনের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি।

তোমার কি শুধু এটুকুই দেখতে ইচ্ছে করছে? রওশন বলে, আমার কিন্তু তোমাকে পুরোপুরি দেখতে ইচ্ছে করছে।

আমিও তোমাকে পুরোপুরি দেখতে চাই, আমি বলি।

রওশন চোখ বোজে, আমি রওশনের সালোয়ার মেঘের মতো টেনে সরিয়ে মেঝেতে রাখি। জ্যোত্সার বন্যায় খাট ভেসে যায়, ঘর ভরে যায়।

আমি চোখ বুজি, রওশন আমার লুঙ্গি সরিয়ে মেঝেতে রাখে।

আমরা দুজন দুজনের দিকে তাকাই।

তুমি সুন্দর, রওশন বলে।

তুমি সুন্দর, আমি বলি।

আমরা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি, কেউ কাউকে ছুঁইছি না, দেখছি একজন আরেকজনকে, দেখতে দেখতে অন্ধ হয়ে যাচ্ছি।

আমাদের শরীর নিয়ে আমরা কী করবো? আমি বলি।

আমাদের জন্যে রেখে দেবো, রওশন বলে।

সেই ভালো, আমি বলি।

রওশন বলে, তোমাকে আমার জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে।

একবার আমরা জড়িয়ে ধরি আমাদের? আমি বলি।

না, আজ নয়, আজ নয়, সেই একদিন, রওশন বলে।

রওশন সালোয়ারকামিজ পরতে থাকে; আমিও কাপড় পরি, এবং চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকি।

চোখ খোলো, রওশন বলে।…..

…..আমি ঘুমোতে পারি না, আমি ঘুমোতে জানি না; চোখ বুজলেই আমি একটি লোককে দেখতে পাই, যাকে আমি কখনো দেখি নি, লোকটি রওশনের ব্লাউজ খুলছে, আমার রক্ত জ্বলছে, দুটি লাল রঙলাগা চাঁদ বেরিয়ে পড়ছে, আমি দেখতে পাই লোকটি রওশনের লাল রঙলাগা চাঁদ ছুঁচ্ছে, কালো হাত দিয়ে রওশনের চাঁদ দুটিকে পিষছে লোকটি, আমি কেঁপে উঠি, ঘুমোতে পারি না; আমি দেখতে পাই লোকটির হাত আরো নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে, লোকটি রওশনের শাড়ি সরিয়ে দিচ্ছে কালো হাত দিয়ে, রওশন নগ্ন, লোকটি একখণ্ড মেঘ দেখতে পাচ্ছে রওশনের, মেঘের আড়ালে লোকটি সোনার খনি খুঁজছে, আমি দেখতে পাই লোকটি উলঙ্গ হচ্ছে, লোকটি রওশনের সাথে অসভ্য কাজ করছে, অমি নিঃশব্দে চিৎকার করে উঠি, একবার মনে হয় রওশন লোকটিকে সহ্য করতে পারছে না, সে বাধা দিচ্ছে লোকটিকে, আমার একটু ভালো লাগছে, কিন্তু রওশন লোকটিকে ফেরাতে পারছে না, লোকটি অসভ্য কাজ করছে, রওশন শুধু শুয়ে আছে চিৎ হয়ে, পরমুহূর্তেই আমার মনে হয়, আমি দেখতে পাই, রওশনের ভালো লাগছে; রওশন লোকটিকে চুমো খাচ্ছে, লোকটিকে রওশন জড়িয়ে ধরছে নিজের লাল রঙুলাগা দুই চাঁদের মধ্যে, লোকটি উলঙ্গ হয়ে রওশনকে পা ছড়াতে বলছে, আমি দেখতে পাই, সুখের ঘোরে পা ছড়িয়ে দিচ্ছে রওশন, লোকটি রওশনের মেঘের ভেতরে ঢুকছে, রওশন চোখ বন্ধ করে সুখে জড়িয়ে ধরছে লোকটিকে, রওশন কেমন শব্দ করছে, আমি দেখতে পাই রওশন লোকটির তালে তালে শরীর দোলাচ্ছে, রওশনের যৌবন সুধা পান করছে লোকটি, রওশন তাকে আরো সুধা পান করতে দিচ্ছে, লোকটি রওশনের যৌবন সুধা রাতভর পান করছে দিনভর পান করছে, আমি নিঃশব্দে চিৎকার করে উঠি, আমি ঘুমোতে পারি না, মনে মনে বলতে থাকি, রওশন, তুমি বলেছিলে আমিই পান করবো তোমার যৌবন সুধা, আমার সাথেই তুমি করবে অসভ্য কাজ, তুমি কথা রাখে নি, আমিও কথা রাখবো না; আমিও অসভ্য কাজ করবো, আমিও যৌবন সুধা পান করবো, তখন তুমিও ঘুমোতে পারবে না।…..

…..আমরা এক বিছানায় ঘুমোই না, আমারই এটা ভালো লাগে না; ঘুমোনার সময়, কারো একটা হাত বা পা আমার গায়ে এসে পড়লেই আমার ঘুম ভেঙে যায়, ঘুমোনার সময় আমার গায়ের ওপর বিশ্বসুন্দরীর বাহু, স্তন, জংঘাও আমার সহ্য হবে না। আমি কামপ্রেমহীন ঘুম পছন্দ করি। …..

…..অর্চি। যে এসে গেলো এটা খুবই আকস্মিক ঘটনা, কখন ঘটে যায় আমি টেরও পাই নি, ফিরোজা আর আমার মধ্যে যা ঘটতো তখন তা হতো খুবই আকস্মিক আর ক্ষণকালীন, দুজনের কেউই বুঝে উঠতে পারতাম না আমরা কিছু একটা করেছি। অবশ্য একেই, আকস্মিকতা আর ক্ষণকালীনতাকেই, আমি স্বাভাবিক ভাবতাম, এবং আমার ঘেন্নাও ধরে যাচ্ছিলো এর ওপর, তা ওঠা আর নামা ছাড়া আর কিছু ছিলো না। উত্তেজিত থাকতাম আমি সব সময়, চারপাশে আমি নারীর শরীর দেখতে পেতাম, ব্রিজগুলোর দিকে তাকালে নদীকে গভীর খাপ মনে হতো, ব্রিজকে মনে হতো বিশাল তরবারি। বারবার মনে হতো খাপ আর তরবারির মিল হচ্ছে না, দুটি উল্টোপাল্টা পড়ে আছে। ব্রিজে ওঠার সময় ট্রাকগুলো যে-শব্দ করে, তাকে আমার গভীর ক্লান্তির শব্দ মনে হতো। ফিরোজা আর আমি তখনো একই বিছানায় ঘুমোতাম, কিন্তু পরস্পরকে ছুঁতে ইচ্ছে হতো না; ফিরোজা একবার খুব হতাশ হয়ে অন্য দিকে ফিরে শুয়ে বলেছিলো, না, তুমি ঠিক মতো পারো না, আমার তা মনে হতো বারবার; কে পারে, কে পারে, এমন সব প্রশ্ন জাগতো। ওই অবস্থায়ই অর্চি এসে ব্রিজটাকে টেনে ধরে রাখে।……

…..একটি মিশমিশে কালো মেয়েকে আমার কালো আগুনের মতো মনে হতো, তার শরীর থেকে কালো শিখা উঠছে আমি দেখতে পেতাম, ফিরোজার পাশে শুয়ে আমি ওই মেয়েটিকে রাতের পর রাত জড়িয়ে ধরেছি, তার পায়ের পাতা থেকে শুরু করে তার প্রতিটি স্প্যান প্রতিটি ভিত্তিকূপ লেহন করেছি। তার দুটি পুরু ঠোঁট ছিলো, ফিরোজার তিনটি ঠোঁট জোড়া দিলেও অতোখানি হবে না; কথা বলার সময় হলদে রঙের একটি প্রচণ্ড জিভ বেরিয়ে আসতো তার মুখের ভেতর থেকে, মনে হতো একটা গোখরো বেরিয়ে আসছে তার গহ্বর থেকে। তাকে দেখলেই আমার মনে হতো একটি কয়লার পাহাড়ে আগুন লেগেছে, তার তাপ আমার মাংসে এসে লাগতো। …..

…..বিয়ের পর কিছু দিন ধরে আমি অবশ্য একটা জোকের মতো লেগেছিলাম তার শরীরে; অসভ্য। কাজের পর অসভ্য কাজ করে সাধ মিটছিলো না আমার, ফিরোজারও অনেকটা। ফিরোজার শরীরটিকে আমার কাছে একটি বিস্ময়ের মতোই লেগেছিলো, তবে প্রতিবার অসভ্য কাজ করে আমি যেনো প্রতিশোধ নিচ্ছিলাম কারো ওপর, হয়তো রওশনের। ওপর, মনে মনে বলছিলাম, দেখো, আমি এখন অসভ্য কাজ করছি, আমি ফিরোজার শরীর দেখছি, ঘূচ্ছি, তার ভেতরে যাচ্ছি, তার ওপর ঘুমিয়ে পড়ছি, রওশন তুমি এখন কোথায়! কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই ফিরোজা ক্লান্ত হয়ে পড়ে।…..

…..মাহমুদা রহমানের শরীরটিকে যেদিন আমি প্রথম সম্পূর্ণ দেখি এক অলৌকিক অনুভূতি হয় আমার, চোখের সামনে থেকে একটি পর্দা সরে যায়, আমি দেখি সুন্দরকে। এ-শরীরের সাথে জড়িত হওয়ার জন্যে আমার কি ভালোবাসা। দরকার এ-শরীরের অধিকারীকে? এমন প্রশ্ন আমার মনে জাগে; এবং মনে হতে থাকে এ-শরীর, নারীর শরীর স্বভাবতই সুন্দর, এর সাথে জড়িত হওয়ার জন্যে জন্মজন্মান্তরের। ভালোবাসা দরকার নেই, দরকার নেই কোনো পূর্ব-আবেগ, দেখামাত্রই একে ভালোবাসা যায়, জড়িত হওয়া যায় এর সাথে। আমি জড়িত হয়ে পড়ি, আমরা জড়িত হয়ে পড়ি। মাহমুদা রহমানের সাথে যদি আমার বিয়ে হতো, বা যদি তাকে এখন আমি বিয়ে করি, তাহলে আমরা পরস্পরের কাছে যা পাচ্ছি, পরস্পরকে যা দিচ্ছি, তা কি পেতাম, তা কি দিতাম, তা কি পাবো, তা কি দিতে পারবো? আমরা দুজনের কেউই বিয়ের কথা ভাবি না, দুজনেই আমরা তা পরখ করে দেখেছি।
আমি আপনার উপপত্নী, তিনি হেসে বলেন।…..

….আমি প্রথম দেবীর পদতল স্পর্শ করি, পদ্মের মতো দুটি পদতল, ওষ্ঠ দিয়ে চুম্বন করি, দেবী শিউরে ওঠেন, হয়তো কেউ এর আগে এখানে ওষ্ঠ রাখে নি; আমি তাঁর প্রতিটি পদাঙ্গুলিকে জিভ ও ওষ্ঠের সাহায্যে পুজো করতে থাকি। তিনি আমার পুজো গ্রহণ করেন। আমি ধীরে ধীরে ওষ্ঠ ও জিভ দিয়ে পুজো করতে করতে পবিত্র দুটি জানু পাই, দুটি প্রবাল দ্বীপের মতো জানু, সেখানে আমি অনেকক্ষণ বাস করি। দেবী বারবার কেঁপে উঠতে থাকেন। আমার মনে হতে থাকে। জাহাজডুবির পর আমি খড়কুটোর মতো ভাসতে ভাসতে দেবীর জানুদ্বীপে এসে আশ্রয় পেয়েছি। এক সময়, অনন্ত কাল পরে যেনো, আমি দেবীর মন্দিরের দ্বারে পৌঁছেই, ছায়াচ্ছন্ন মন্দির, বিশুদ্ধ তার জ্যামিতি, আমি মুগ্ধ হই, তার দরোজার পর দরোজার। রঙিন আভায় আমার চোখ ভরে যায়। আমি মন্দিরের দ্বারে এক পরম পুজোরীর মতো সাষ্টাঙ্গে অবনত হই, এ-দরোজা দিয়ে অনেক আদিম জন্তু প্রবেশ করেছে আর বেরিয়ে এসেছে, কোনো গোলাপ পাপড়ি পড়ে নি। আমি আমার ওষ্ঠের আর জিভের গোলাপ। ফোঁটাতে থাকি, গোলাপের পর গোলাপ ফোঁটাতে থাকি, ওষ্ঠ আর জিভ দিয়ে মন্দিরের দরোজা খুলতে থাকি, ভেসে যেতে থাকি দেবীর অনন্ত ঝরনাধারায়। পৃথিবীতে কি। তখন ভূমিকম্প হয়েছিলো, হোটেলটি কি তখন চুরমার হয়ে গিয়েছিলো? দেবী গলে সম্পূর্ণ অমৃতধারায় পরিণত হয়ে যান। আরো ওপরে, আরো ওপরে, আরো ওপরে; দেবীর যুগল চাঁদের জ্যোৎস্নায় আমার মুখ আলোকিত হয়ে ওঠে। এখন আমার সামনে সম্পূর্ণ উন্মোচিত দেবী। রওশনকে মনে পড়ছে, দেবীর চাঁদ নিয়ে আমি খেলা করি, খেলা করি, খেলা করি; দেবী আর আমি একাকার হয়ে যাই। অনন্ত ঢেউ উঠতে থাকে, মহাজগত তরঙ্গিত হয়ে উঠতে থাকে, প্লাবনে সূর্যাদতারা ডুবে যায়, দেবী আর আমি চরম অন্ধকারের জ্যোতিতে মিশে যাই।

এতো সুখ আছে, দেবী অনেকক্ষণ পর চোখ মেলে বলেন, আমি জানতাম না। দেবী লতার মতো পেচিয়ে আছেন আমাকে।….

…..তিনি বলেন, প্রথম দিন থেকেই আমার রূপের খুব প্রশংসা করছেন, বাহু গাল ঠোঁটও বাদ দিচ্ছেন না, দ্রতা করে হয়তো বুকটাকে এড়িয়ে যাচ্ছেন, খুব শুতে চেয়েছিলেন, আমি রাজি হই নি; এখন বিয়ে করেই শুতে চান।…..

……ফিরোজা কি এখন নৃতাত্ত্বিকটির বিছানায়? ফিরোজার বা স্তনটি লাফিয়ে উঠছে আমার চোখের সামনে, সেটিতে দুটি বড়ো বড়ো তিল আছে, আমার কামড়ের দাগ হয়তো মুছে গেছে। যতোই বয়স বাড়ছে ততোই সুন্দর হচ্ছে ওর স্তনযুগল।…..

….এখন হিন্দি ছবির যে-মেয়েটি নাচছে, তার বগলের লোমগুলো আমার ভালো লাগছে, ওর বগলের লোমে কে কে কে কে কে জিভ রাখে? অনন্যার বগলে কি লোম আছে? অনন্যা কি শেভ করে? বাঙালি। মেয়েগুলো শেভ করে, ওরা কোথায় শিখেছে কে জানে, বিচ্ছিরি লাগে; হয়তো অনন্যাও শেভ করে। মাহমুদা রহমান করত, দেবী করতো, ফিরোজাও করতো। আমাদের কাজের মেয়েটিও বোধ হয় করে।……

Leave a Reply